Pages

Wednesday, November 6, 2019

সফল নয় ভাল মানুষ হওয়াটা প্র‌য়োজন

ছোট ছেলেকে নি‌য়ে জেএস‌সি পরীক্ষা শেষে বাসায় নি‌য়ে ফিরছিলাম। আমা‌দের পিছন পিছন একজন ছাত্রী জেএসসি পরীক্ষা দি‌য়ে বাবার সাথে ফিরছিল। মেয়েটি তার বাবা‌কে বলছিল, বাবা জান, আমার ভাগ্যটাই খারাপ। আমার সিটের সামনেই টিচারদের বসার জায়গা। একদম সামনে আর কিছুক্ষণ পর পর টিচার বল‌তে থাকে ডানে বামে দেখলে খাতা নি‌য়ে নিব। কথা বললে খাতা নি‌য়ে নিব। অথচ দেখ পিছনে সবাই কথা বলছে। ওখানে টিচার দেখে না। ভাগ্যটাই খারাপ। এটা শো‌নে পিছন ফি‌রে মেয়েটাকে বললাম, " সফলতার চে‌য়ে ভাল মানুষ হ‌য়ে বাচাটা ভাল না? কি বল।" মেয়েটি বলে উঠল, না না, আং‌কেল কি বলছেন, বাকীরা তো কথা বলে এম‌সি‌কিউ কারেক্ট করার সু‌যোগ পেল। সমান তো হল না। আমি বললাম, দুঃখ ক‌রো না ও‌দের সফল হ‌তে দাও। এ সফলতা সাময়িক। মেয়েটি আরো কিছু বল‌তে চাচ্ছিল। বাবা বলল, থাক মা আং‌কে‌লের সাথে কথা বাড়িও না।
আমি জানি বাবা ও মে‌য়ে দুজনেই আমার কথায় বিরক্ত হ‌য়ে‌ছে। আমার ছেলে হাসছে। আমার ছেলের হাসার কারণটাও আমি জানি। আমার ছেলে জানে আমি তা‌কে কখনও এ প্রশ্ন করি না পরীক্ষা কেমন হল? আমি তা‌কে প্রশ্ন করি? সব উত্তর দিয়েছ। আমি জানি ছেলে সব উত্তর দিলে একটা ভাল নম্বর সে পাবে। কারণ সে কো‌চিং ক‌রে না। সেজন্য তার কোন সাজেশন নেই। পুরো বই সে পড়ে। রচনা কমন পড়ল কি পড়ল না তার কোন পার্থক্য নেই কারণ বই‌য়ের সব রচনা তার পড়া। যে কোন ধরনের রচনা সে লিখ‌তে পারবে । তবে যারা সাজেশন ক‌রে প্রস্তুতি নি‌য়ে লিখবে তারা পাবে ৮০% নম্বর আর সে পাবে ৬০% অথবা ৭০% নম্বর। আমি আমার জীবনে অনেক পড়তাম কখনও দাগিয়ে পড়তাম না। মাঝে মাঝে দাগা‌নো পেলে ওটা একটু বেশী পড়ে বাকী সবই পড়তাম। আমার এই  প্যাটার্ন আমার সন্তান‌দের মাঝে থাকায় আমি একটু হতাশও হ‌য়ে‌ছি কারণ এ ধরনের সব পড়ে চূড়ান্তভাবে আউট স্ট্যা‌ডিং রেজাল্ট করাটা কঠিন। আমার ছেলের কোন উত্তর ছুটে না গেলে সে ভাল স্কোর করবে কিন্তু আউটস্ট্যা‌ডিং ফলাফল করবে না।
আমি ছাত্র জীবনে পাঠ্য বই‌য়ের বাই‌রে প্রচুর বই পড়তাম এখনও পড়ি। ছেলে মে‌য়েরাও তাই হ‌য়ে‌ছে। ট্যাব‌ে ডাউনলোড ক‌রে সর্বদা বই পড়ার রিক্রিয়েশন নি‌য়ে আছে। আমার বই‌য়ের ভাষা ছিল বাংলা আর ওদেরটা হল ইংলিশ এটাই পার্থক্য। আমি যখন আমার সন্তান‌দের বলি দেখ তোমা‌দের সাইন্স পড়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্র‌য়োজন নেই। যেটা ভাল লাগে সেটা হও। প্রচুর পড়‌তে ও জান‌তে ভালবাস। শিক্ষক হও। ব্যারিস্টার হও।
ক্যাডেট কলেজ, মিলিটারি একাডেমী, সামরিক চাকুরী ইত্যাদি'র পর মনে হ‌য়ে‌ছে অর্থ ও বিত্ত হয়ত সুখে রাখে, প‌দোন্ন‌তি ও ক্ষমতা সুখ দেয়, আনন্দ দেয়, সন্মান দেয়। সবাই তাই চায়। কিন্তু সফলতার বিপরীতে ভাল মানুষ হওয়াটাই বেশী জরুরী। এক বাবার একজন শিক্ষক সন্তান আর এক বাবার দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজিরা দেয়া অর্থ বিত্তের মালিক সফল "সচিব পদবীর সন্তান" কোনটা ভাল। আমি হয়ত সৎ ভাবে বাঁচা "শিক্ষক সন্তান"কে বেশী পছন্দ করব। আর এক ধরনের মানুষ আমার পছন্দ যারা কর্মসংস্থান কর‌তে পা‌রে।
আসলে আমার এই ভাবনাটা  স্র‌ো‌তের বিপরীতে চিন্তা করা। আমি জানি আমি একলা নই। অনেকেই আমার মত আছে। আমার মত চিন্তা ক‌রে। সফল মানুষ থেকে ভাল মানুষ হওয়াটা অনেক ভাল। ভাল মানুষ হ‌তে চাইলে আমি নিয়মিত পড়া‌শোনা করব। আমার চিত্ত‌বি‌নোদনই তখন পড়া‌শোনা। আর পড়া‌শোনা অভ্যাস করলে এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় পাশ হবে। যেহেতু দুই নম্বরি ক‌রে সফলতার ধান্ধা নাই সেহেতু নিজের গরজে পাঠ্য বই বা ভর্তি পরীক্ষার বই পড়া হবেই। এ‌তে আউট স্ট্যান্ডিং ফলাফল না হলেও পাশ হবেই। অন্তত অতি সফল না হলেও মধ্যম মানের পরিচ্ছন্ন জীবন পাওয়া যাবে। যেহেতু কাজে কর্ম‌ে ও অর্থ‌ে সততা থাকবে তাই একটা শান্তিপূর্ণ জীবন জুটে যাব। এটাই বাস্তবতা। আমি গ্যারান্টি দি‌য়ে বল‌তে পারি সফলতা চিন্তা না ক‌রে ভাল মানুষ হওয়ার অনুশীলন যদি সন্তান‌দের দেয়া যায় তা‌তে নিজেও শান্তিতে থাকা যায়। সন্তানরাও মাথা উঁচু ক‌রে শান্তিতে বাঁচবে। ভুটানীরা রাস্ট্রীয়ভা‌বে সম্পদশালী হওয়ায় বিশ্বাস ক‌রে না সু‌খে বিশ্বাস ক‌রে। আমরা প্র‌তি‌টি প‌রিবা‌রে সফল বা সম্পদশালী হওয়ার চিন্তা বাদ দি‌য়ে ভাল মানুষ হওয়ার দি‌কে অগ্রসর হ‌লে দেশটা সুখ ও শান্ত‌িতে ভ‌রে যা‌বে।

No comments:

Post a Comment