Pages

Monday, March 31, 2014

অফিসের কাজে প্রয়োজন ডেস্কটপ কম্পিউটার নাকি নোটবুক/নেটবুক কম্পিউটার


আমাদের অফিসের কার্যক্রমের জন্য আমাদের সর্বদাই এখন কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়। একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য আমাদের নীচের সামগ্রীগুলোর প্রয়োজন।
১। মাদার বোর্ড।
২। র‍্যাম।
৩। হার্ড ডিস্ক।
৪। কেসিং।
৫। মনিটর।
৬। স্পীকার ও ওয়েব ক্যাম
৭। কীবোর্ড ও মাউস।
৮। ইউপিএস।
আপনি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন মধ্যম মানের ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য আপনাকে আনুমানিক ৩০,০০০ টাকা খরচ করতে হবে। আমরা কম্পিউটারের বাজারে দেখতে পাই নেটবুক কম্পিউটারের দাম বেশ কমে এসেছে। ল্যাপটপ কম্পিউটার পরিবহনে অনেক সুবিধা  রয়েছে। অন্যদিকে ডেস্কটপ কম্পিউটারে রয়েছে আপগ্রেড করার সুবিধা। যদিও ল্যাপটপ বা নেটবুক সীমিত আকারে আপগ্রেড করা যায়।
আমাদের অফিসগুলোতে বর্তমানে আমরা  কম্পিউটার ব্যবহার করি মূলত টাইপিং এর কাজের জন্য। সেক্ষেত্রে  ১০.৫ ইঞ্চি মনিটর যুক্ত নেটবুক গুলো অনেক বেশী উপযুক্ত। কারণ এখন নেটবুক অনেক কম দামে পাওয়া যায়। এমনকি নেটবুকগুলোতে দুই বছর ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়। সাধারণত: ডেস্কটপের পার্টস এর জন্য আমরা এক বছরের ওয়ারেন্টি পাচ্ছি। তাই ব্যবহারের বিচারে বলা যায় নেটবুক একটু বেশী কার্যকরী। নেটবুক ডেস্কটপ অপেক্ষা অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে থাকে। আমি বর্তমানে (মার্চ ২০১৪ সালে) একটি নেটবুক গত চার বছর যাবত ব্যবহার করছি। শুধুমাত্র একবার ব্যাটারি ক্রয় করতে হয়েছে। তবে সে ব্যাটারিও নষ্ট হওয়ার পিছনে রয়েছে আমার অজ্ঞতা ।একটা ভাঙ্গা মেরামত-কৃত পেন-ড্রাইভ সর্ট সার্কিট হয়ে ছিল। অত:পর সে পেন ড্রাইভ ইউএসবি পোর্টে লাগানোর সাথে সাথে আমার নেটবুকটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ব্যাটারি খুলে পুনরায় ব্যাটারি লাগিয়ে নেটবুকটি চালু করতে হয়। অতঃপর নেটবুকে আর ব্যাটারি ফুল চার্জ হয়নি। ধীরে ধীরে নেটবুকের ব্যাটারিটি ক্ষয় হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। নেটবুক বা ল্যাপটপ মুলত ইউিএসবি পোর্টের মাধ্যমেই শর্ট সার্কিটের শিকার হয়। আর একবার শর্ট সার্কিট হলে প্রথম লক্ষণ হল ব্যাটারি দীর্ঘসময়েও ফুল চার্জ হবে না। আমার নেটবুক  অধ্যবধি চার বছর প্রায় সারাদিনই চালু থাকে এবং সকল স্থানে আমার সাথে যাতায়াত করেও তা কার্যোপযোগী আছে। আমার ইচ্ছে ৫ বছর পর নেটবুকের মডেল বদল করা। এর মাঝে অবশ্য একবার সফটওয়্যার আপগ্রেড করতে হয়েছিল।
নেটবুকে সিডি রম ড্রাইভ সাধারণত থাকে না। মনিটর ছোট। কীবোর্ড ছোট বলে আলাদা কী বোর্ড ব্যবহার করলে ভাল হয়। আর নেটবুকের সংযুক্ত কীবোর্ডটি ছোট ও স্পর্শকাতর। তাই কমদামী বড় ও আলাদা কীবোর্ড ব্যবহার করলে টাইপিং সাধারণ গতিতে করা যাবে। এ ধরনের অসুবিধার পাশাপাশি সুবিধা গুলো হল, সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা নেয়া করা যায়। বিদ্যুৎ না থাকলে ইউপিএস ব্যতীত টানা ৫/৬ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায়। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি পূর্বে আলোচনা করেছি। আমরা যদি একটা ডেস্কটপের গড় ব্যবহারের স্থিতিকাল ধরে নেই পাচ্য বছর তবে একটা নেটবুক দিয়ে আমরা অনায়াসে পাঁচ বছর স্থিতিকাল আমরা পার করে দিতে পারি।
আমি একবার একটি এক্সপেরিমেন্ট চালাই। বিজিবি কুষ্টিয়ার একটি প্রাইমারী স্কুল তাদের পুরাতন ডেস্কটপের পাশাপাশি ইন্টারনেটে স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের বোর্ডের অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি নতুন মডেলের ডেস্কটপ ক্রয় করার প্রস্তাব করে। অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময় বিদ্যুৎ যাওয়া একটা সমস্যা। স্কুল তাই বেশী ব্যাক আপ দেয় সেরূপ একটি ইউপিএস এর প্রস্তাব করে। সবকিছু মিলিয়ে সর্বমোট ৩৫,০০০ টাকার প্রস্তাব আসে। তখন আমি ২২,৫০০ টাকা দিয়ে একটা ১০ ইঞ্চি মনিটর বিশিষ্ট নেটবুকের প্রস্তাব করি যা কিনা ২২,৫০০ টাকায় ক্রয় করা হয়। এর ফীড ব্যাক পরে আমি গ্রহণ করি। প্রধান শিক্ষক জানালেন, নেটবুকের ব্যবহারে তার কাজ অনেক সহজ হয়েছে। প্রশ্নপত্রের কাজ ছাত্রছাত্রীর তথ্যাদি যাচাই বাছাই সকল কাজে সকল স্থানে তিনি নেটবুকটি ব্যবহার করতে পারছেন। ডেস্কটপের বিকল্প হিসাবে নেটবুকে তিনি বেশী কাজ করতে পারছেন।
একটা প্রচারনা পত্রিকায় পড়েছিলাম তা হল এক ছাত্র এক ল্যাপটপ” তবে এখন সেটি জনপ্রিয় হব, "এক ছাত্র এক নেটবুক ( অথবা এক ট্যাবলেট পিসি / আই প্যাড সদৃশ কম্পিউটার)" ।এখন প্রায়শ:ই দেখা যায় প্রায় সকল বাচ্চাই বাবা মার মোবাইল ফোনে গেম খেলায় ব্যস্ত। অনেক বাচ্চাই বাবা মার মোবাইলে নম্বর সেফ করার মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। প্রত্যেক শিশুকে কোন না কোন ডিজিটাল ডিভাইস দেয়ার প্রচারণাও কিছুদিন পর জনপ্রিয় হতে পারে। প্রচলিত ল্যাপটপে  সাধারণত ১৪ ইঞ্চির উপরে মনিটর ও সিডি-রম ড্রাইভযুক্ত থাকে। আমি আমার ১১.৫ ইঞ্চি মনিটর বিশিষ্ট নেটবুকের সাথে এক্সটারনাল সিডিরম ব্যবহার করার জন্য ৫০০০ টাকা দিয়ে(২০১০ সালে) তা ক্রয় করি। তিনমাস পরে লক্ষ করলাম আমি সিডিরমের ব্যবহার মাত্র তিন/চার বার করেছি। বাকী কাজ অনলাইনের ডাউন লোড ও পেন ড্রাইভের মাধ্যমে সমাধা করেছি। তখন মনে হল, সিডি রমের ব্যবহার ফুরিয়ে গেছে। এখন আমরা কেবলমাত্র পেন ড্রাইভ দিয়ে সিডি রমের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামাতে পারি। সিডি রম ছাড়া অবশ্যই চলা যায়।  যা আমি গত চার বছর যাবত পেরেছি। একান্তই সিডি রমের তথ্যাদি যদি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, তবে সিডি বা ডিভিডি রম হতে তথ্যাদি কপি করে ব্যবহার করলেই চলবে। তবে তার জন্য অন্তত ১০টি কম্পিউটার বিশিষ্ট অফিসে অন্তত একটি সিডি/ডিভিডি রাইটার থাকলেই চলবে।
নেটবুক চুরি যাওয়ার মত একটা লোভনীয় সামগ্রী বটে। তাই নেটবুক অফিসে ব্যবহার করলে নিরাপত্তা মূলক কাজ হিসাবে দুইটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন হবে। প্রথমটি হল, অফিসের টেবিলের পায়ার সাথে মটর সাইকেলের মত লোহার তার দিয়ে লক করে রাখতে হবে। এ সব লক তার কম্পিউটার দোকানে ক্রয় করতে পাওয়া যায়। অন্যটা হল, নেটবুকটি সবসময় সাথে রাখা। সব সময় নেটবুকটি সাথে রাখা মনে হয় একজন অফিস সহকারীর জন্য ভাল অপশন। তাতে তার কাজের পরিধি ও সময় বেড়ে যাবে এবং তার উৎপাদনশীলতা বেড়ে যাবে।

          পরিশেষে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের চিন্তা ধারায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। ল্যাপটপ ও নেটবুক দামের নিন্মগতির কারণে এখন তা আর বিশেষ মর্যাদা নিয়ে ব্যবহারের কোন আইটেম নয় বরং অফিস সহকারীদের হাতে ডেস্কটপের পরিবর্তে নেটবুক তুলে দেয়া প্রয়োজন যা তাদের উৎপাদনশীলতা(Productivity) বাড়াবে। আমার সুপারিশ হল, ১১.৫ ইঞ্চি মনিটর বিশিষ্ট নেটবুক গুলো বেশ চমৎকার ভাবে ব্যবহার করা যায়। এতে বিদ্যুৎ খরচ ও অর্থ সাশ্রয় সম্ভব হবে ও গ্রিন হাউস এফেক্ট কম হবে। সকলের সচেতনতায় সার্বিক উন্নতি সাধিত হবে।