Pages

Thursday, October 27, 2016

দেশের গাড়ীগুলো পরিবেশ বান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ীতে রূপান্তর করা প্রয়োজন

সারা পৃথিবীতে বৈদ্যুতিক গাড়ী ব্যবহার একটা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আমেরিকার অনেক শহর, চীনের অনেক শিল্প নগরী ধোয়ায় ঢেকে আছে, সেসব শহরে অতি দ্রুত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নি:গমন কমাতে হবে। শহর গুলোতে বাতাসে ৫১% দূষণ হয় গাড়ীর ধোয়া হতে। বাংলাদেশের রাজশাহী ব্যাটারির গাড়ীর ব্যবহার উৎসাহিত করে ও অনেক গাছ পালা লাগিয়ে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল দূষণ কমানোর জন্য বিশ্বের সকল শহরের মধ্যে ১ম স্থানটি অর্জন করেছে। যারা স্বীয় চেষ্টায় পরিবেশের দূষণ রোধ করতে পেরেছে। বাংলাদেশের একটা সিটি কর্পোরেশন পৃথিবীর বুকে ১ম অবস্থানে আছে। আমাদের এই উদাহরণ পৃথিবীর বড় বড় শহর গুলির জন্য অনুকরণীয়।

বাংলাদেশের ঢাকা শহরে অতিদ্রুত তৈলের গাড়ী বর্জন করে ইলেকট্রিক সিস্টেমে ট্রেন, মেট্রো, বাস ,কার ও অটো রিক্সা ব্যাপকভাবে প্রসারিত করা প্রয়োজন। সরকারী কোন ট্রান্সপোর্ট ইলেকট্রিক সিস্টেম ব্যতীত পরিকল্পনা করা অনুচিত। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশই ২০২০ থেকে ২০৩০ এর মধ্যে তৈলের গাড়ী হটানোর পরিকল্পনা করেছে। সবাইকে ইলেকট্রিক কার চালনায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষের কাছে সেই দিন এটা জনপ্রিয়তা পাবে যেদিন এটার মূল্য কমে আসবে। হাইব্রিড গাড়ীতে থাকে  সাধারণ পেট্রোল ইঞ্জিন আর সাথে যোগ হয় ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক মটর। যারা অল্প দূরত্বে ভ্রমণ করেন ও কেবলমাত্র শহরে গাড়ী চালান তারা ইন্টারনাল কম্বারসন ইঞ্জিন বা আইসি ইঞ্জিন বাদ দিতে পারেন। শুধুমাত্র ব্যাটারি দিয়ে গাড়ী তৈরি করে নিতে পারেন। হাইব্রিডের গাড়ীর মধ্যে আছে মূলত: দুই ধরনের। প্যারালাল ও সিরিজ বা প্লান ইন হাইব্রিড। প্যারালাল হাইব্রিড যখন বেশী শক্তি প্রয়োজন তখন চলবে তৈলে আর যখন গতি কম তখন চলবে ব্যাটারিতে। আবার গাড়ীর গতি কমালে ও ব্রেক চাপলে সেই শক্তি পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ব্যাটারিতে জমা হবে। এতে প্রায় ১০% বিদ্যুৎ রিজেনারেশন ব্রেক সিস্টেম থেকে পাওয়া যাবে। অপরদিকে সিরিজ হাইব্রিড প্রধানত চলবে চার্জকৃত ব্যাটারিতে। যখন ব্যাটারির চার্জ শেষ হবে তখন তার তৈলে চালিত জেনারেটর চালু হবে। যা কিনা গাড়ীর মটরে বিদ্যুৎ দিয়ে গাড়ী চালাবে ও ব্যাটারি চার্জ করবে।
চীন এখনও ইলেকট্রিক কার তৈরি করে ব্যাপক হারে নিজ দেশের বাজার সয়লাব করতে পারেনি। তাই আমরা ব্যাপক হারে চাইনিজ ইলেকট্রিক কার বাজারে দেখছি না। আমরা যে হারে চাইনিজ ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা দেখছি সেই হারে বৈদ্যুতিক কার চায়না আমাদের দেশে পাঠায়নি। চায়না ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের সমস্ত কার ইলেকট্রিক করে ফেলবে। ইলেকট্রিক কারের উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি এখনো আমেরিকার মধ্যেই মূলত: সীমাবদ্ধ। শ্রীঘই সমস্ত পৃথিবীতে বৈদ্যুতিক কারের বিস্ফোরণ হবে। ভারত ব্যাপক হারে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে যখন বৈদ্যুতিক গাড়ী চালু হওয়ার পরে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি প্যাকের দাম ছিল প্রায় কিলোওয়াট প্রতি ১০০০ ডলারের উপর। এই মূল্য ২০১৫/২০১৬ সালে এসে ২০০ ডলার পার কিলোওয়াট এসেছে। এটা দেখা যাবে ১০০ ডলার পার কিলোওয়াট মূল্যে চলে আসলেও আশ্চর্য হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ীর চাহিদা বাড়লে ব্যাটারির উৎপাদন বাড়বে ও মূল্য কমবে। বৈদ্যুতিক ব্যাটারি সম্পূর্ণ রিসাইক্যাল করা যাবে। অনুরূপ ভাবে গাড়ীর প্রতিটি জিনিষ রিসাইক্যাল আইটেম দিয়ে তৈরি এবং পুনরায় রিসাইক্যাল করা যাবে। এভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ীর আইডিয়ার সাথে সাথে একে আরো পরিবেশ বান্ধব ভাবে চিন্তা করা হয়েছে। একটা তৈলের জ্বালানীর গাড়ীকে বৈদ্যুতিক গাড়ীতে রূপান্তর করতে আমাদের প্রয়োজন হবে চার্জ কন্ট্রোলার, ব্যাটারি, ইনভার্টর (যদি এসি মটর হয়), শক্তিশালী মটর। আমাদের সকল গাড়ীতে কিন্তু স্টার্টর মটর আছে। আমাদের প্রয়োজন হবে এর চেয়ে বড় মাপের মটর। আমাদের গাড়ীতে ব্যাটারি আছে। প্রয়োজন হবে এর চেয়ে বেশী শক্তির একাধিক ব্যাটারি।
এখন আসি গাড়ীর জ্বালানী খরচ। একটা গাড়ী যদি ১০০ কিমি রেঞ্জের হয় তাহলে এতে ১৭/১৮ কিলোওয়াটের ব্যাটারির প্রয়োজন হবে। বর্তমান বাজার দরে এর দাম ৩৫০০ ডলারের নীচে হবে অর্থাৎ টাকায় দাম হবে ২৮০০০০ টাকা। এই  ব্যাটারির প্যাক দিয়ে যাতায়ত করা যাবে আনুমানিক ২৩০০০০ কি:মি। সারা বছর গাড়ীর জন্য বিদ্যুৎ চার্জে আমেরিকানরা বিদ্যুৎ বিল দেয় ২৫০ ডলারের মত। এতে ব্যাটারির পূর্ণ লাইফ চালাতে ৬ বছরে ১৫০০ ডলার বিদ্যুৎ খরচ ধরা যায়। সর্বমোট খরচ ৫০০০ ডলার বা ৪,০০,০০০ টাকা। তাহলে কিলোমিটার প্রতি খরচ ৪,০০,০০০ ভাগ ২,৩০,০০০=১.৭ টাকা। অপরদিকে সিএনজিতে খরচ যায় কি:মি: প্রতি ৪ টাকা। তৈলে খরচ প্রায় ১০ টাকা। একটা ব্যাটারির লাইফ টাইমে পেট্রোল থেকে সাশ্রয় ১০-১.৭=৮.৩ টাকা। তাহলে ব্যাটারির সম্পূর্ণ লাইফ (৬-১০ বছরে) টাইমে সাশ্রয়/লাভ=১৯,০৯,০০০ টাকা। আর্থিক লাভ হতে বেশী লাভ হল এটা পরিবেশ বান্ধব। গাড়ীর সমস্ত কিছু রিসাইক্যাল করা যাবে। বিশেষ করে ব্যাটারি ১০০% রিসাইক্যাল করা যাবে।
আমাদের এত লাভের হিসাব পেলে আমরা নিশ্চয়ই ব্যাটারি গাড়ী কিনে ফেলব। আমাদের যাদের পুরাতন গাড়ী আছে তারা কি করব। এত ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন নেই। আশা করি আর বছর পাঁচেকের মধ্যে আমাদের দেশের বুদ্ধিমান লোকেরা আমাদের সাধারণ গাড়ীগুলোকে ব্যাটারি গাড়ীতে কনভার্ট করে ফেলবে। প্রথমে তারা অটো রিক্সার মতো এসিড ব্যাটারি সামনে পিছনে বসিয়ে নিবে। এতে চার পাঁচ বছর ব্যবহার করা যাবে। সামনে যখন লিথিয়াম আয়ন বা কার্বন ব্যাটারির আরো সাশ্রয়ী দাম হবে তখন গাড়ীতে লিথিয়াম আয়ন দিয়ে কনভার্ট করা যাবে। একসময় আমরা কম কার্বন নি:স্মরণকারী সাশ্রয়ী প্রাকৃতিক গ্যাসে আমাদের গাড়ীগুলো রূপান্তর করে নিয়েছিলাম। এখন সময় এসেছে আমরা ধীরে ধীরে ব্যাটারিতে রূপান্তর করব। তারপর আমরা আমাদের বাড়ীতে আর কর্মস্থলে সোলার প্যানেল আর সূর্যের আলো না থাকলে সে সমস্ত গাড়ী বিদ্যুতে চার্জ করব। আমরা বিদ্যুৎ দিয়ে সবকিছু চালনা করব। তেমনি বিদ্যুৎ তৈরি করব নবায়ন যোগ্য জ্বালানী হতে।

সময় সবকিছু বলে দিবে। আমি পরিবেশ সচেতন ও প্রযুক্তি প্রেমিক বলে আগে আগে বৈদ্যুতিক গাড়ীর বিষয়টি অবতারণা করলাম। এটা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে। শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার একসময় আমরা সবাই বৈদ্যুতিক গাড়ী ব্যবহার করব। এখনই বৈদ্যুতিক গাড়ীর রেসিং কার তৈরি হয়েছে। গতিতে কম্প্রোমাইজ করা হয়নি। ব্যাটারির গাড়ীতেও আরামদায়ক এসি থাকছে। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে অর্থাৎ আজ থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বেচে থাকলে আমিও একটা বৈদ্যুতিক কারের মালিক হওয়ার পরিকল্পনা করছি। আপনার বৈদ্যুতিক কারে চরম অপছন্দ থাকলেও আপনি আমার ১০ থেকে ১৫ বছর পরে এগুলো কিনবেন। কারণ আপনি আপনার অপরিচ্ছন্ন তৈলের গাড়ীর পার্টস আর বাজারে পাবেন না। আসুন যারা সামর্থবান আছেন এখনই পরিকল্পনা করুন আপনার গাড়ীটিকে বৈদ্যুতিক গাড়ীতে রূপান্তর করতে। পরিবেশ বাদ্ধব বিধায় এতেই আমাদের সকলের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

Thursday, October 20, 2016

জ্বালানী সাশ্রয়ী ছোট ইনভার্টার জেনারেটর

বৈদ্যুতিক লোড শেডিং এ জন্য অনেক সময় আইপিএস যথাযথ সময় ব্যাকআপ না দিতে পারলে আমাদের জেনারেটর প্রয়োজন হয়। সকল সংস্থা যারাই অফিসের বাইরে কোন কাজ করেন তাদেরই জেনারেটর প্রযোজন হয়। সেনাবাহিনীর অনুশীলন ও অন্যান্য ক্যাম্পিং এর জন্য জেনারেটর প্রয়োজন হয়। কিছুদিন আগেও ক্যাম্পিং এর কিছু লাইট জ্বালানোর জন্য প্রয়োজন হত কমপক্ষে পাঁচ কেভি জেনারেটর। বর্তমানে সাশ্রয়ী এলইডি লাইট ও অন্যান্য সাশ্রয়ী প্রযুক্তির কারনে কমশক্তির জেনারেটর দিয়ে আমরা অনেক কাজ করতে পারব।

যে কোন জেনারেটর ২২০ ভোল্ট ও ৫০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখার জন্য ৩৬০০ আরপিএম এ ঘুরতে থাকে। ইনভার্টার জেনারেটর লোড অনুযায়ী ২৫% পর্যন্ত মুল ক্যাপাসিটির আরপিএম এ ঘুরতে পারে। এতে প্রচুর জ্বালানী সাশ্রয় হয়। ইনভার্টার জেনারেটর প্রায় ৪০% জ্বালানী সাশ্রয় করতে পারে। সাধারণত এতে কোন ফ্লাই হুইল ব্যবহার করা হয় না। পিস্টন থেকে জেনারেটর সরাসরি ড্রাইভ পায়। এতে প্রাথমিকভাবে অপরিশোধিত এসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। এই এসি বিদ্যুতটি যথেষ্ট পরিমাণ ভাল নয়। ভোল্টেজ উঠানামা করে ও ফ্রিকোয়েন্সিও পরিবর্তিত হয়। এখন এই অপরিচ্ছন্ন এসি বিদ্যুতকে রেক্টিফায়ার দিয়ে ডিসি করা হয়। উৎপন্ন ডিসিকে মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে ফ্রিকোয়েন্সি ও ভোল্ট যথাযথভাবে স্থির করে বিশুদ্ধ ২২০ ভোল্ট ও ৫০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। আর ডিসি থেকে এসিতে রূপান্তরের এই প্রক্রিয়াটির নামই মূলত ইনভাটিং। এ কারণেই এরূপ জেনারেটরের নাম হয়েছে ইনভার্টার জেনারেটর।
ইনভার্টার জেনারেটর লোডের উপর ভিত্তি করে আরপিএম এর কম বেশী হয় আর এটাই হল এই জেনারেটরের সবচেয়ে স্মার্ট দিক। লোডের কমবেশি করে জেনারেটরের থ্রটল নিয়ন্ত্রণ করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক সার্কিট।

ইনভার্টার জেনারেটর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানি ৪০০০ ওয়াটের বেশী তৈরি করেনি। তবে মজার বিষয় হল বেশী ওয়াটের প্রয়োজন হলে দুইটি জেনারেটর প্যারালাল সংযোগ দিয়ে লোড ৮ কেভি করা যাবে। ৪০০০  ওয়াটের বেশী ইনভার্টর জেনারেটর তৈরি না  করার পিছনে যে কারণ থাকতে পারে তা হল সাধারণ বা ননইনভার্টার জেনারেটর বেশী ক্যাপাসিটির হলে তা সাধারণত জ্বালানী এফিশিয়ন্টে হয়। যত বড় জেনারেটর হবে তত বেশী জ্বালানীর কিলোওয়াট প্রতি খরচ কম হবে। তাই বড় মাপের ইনভার্টারের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। ৪০০০ ওয়াট ইনভার্টার জেনারেটর কিন্তু ব্যবহারের জন্য কম নয়।
৪০০০ ওয়াট জেনারেটরে কি কি সামগ্রী চালানো যাবে:
১। ১.৫ টনের ইনভার্টর এসি: ১৫০০ ওয়াট।
২। একটি রিফ্রিজিরেটর: ৩০০ ওয়াট।
৩।  এনার্জি এফিশিয়েন্ট ৫টি সিলিং ফ্যান: ৬৫ গুন ৫= ৩২৫ ওয়াট।
৪। স্মার্ট টিভি: ১২৫ ওয়াট
৫। ল্যাপটপ কম্পিউটার: ৫০ ওয়াট।
৬। এলইডি লাইট ৭০টি/মোবাইল চার্জার/রাউটার ইত্যাদি=৭০ গুন ১০=৭০০ ওয়াট।
৭। ইনভার্টর মাইক্রোওয়েভ ওভেন/আয়রন/ ইনভার্টর ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি চালানো: ৫০০/৭০০ ওয়াট।
৮। আরো অন্য কিছু চালানো যাবে এসি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে।
৯। সর্বমোট: ৪০০০ ওয়াট।

ইনভার্টার প্রযুক্তির গৃহ স্থলীর বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার করে অনেক অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়। উপরে ৪০০০ ওয়াটের হিসাব দিলেও  একসাথে এত ব্যবহার কখনোই হবে না। তাই ১০০০ ওয়াট এক ধরনের জ্বালানী খরচ হবে। ২০০০ ওয়াটে আর একটু বেশী এবং ৩০০০ ওয়াটে প্রায় সম্পূর্ণ শক্তির জ্বালানী খরচ হবে। এই এধরনের ওয়াটের কম বেশীর জন্য জ্বালানী ব্যবহারেরও তারতম্য হতে থাকবে।

আমাদের বাংলাদেশের আর কয়েক বছর পর ক্যাম্পিং এর জন্য বিদ্যুতের অভাব হবে না। কারণ গ্রামের আনাচে কানাচে এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে তবু বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা অন্য কোন কারণে হাতের পাঁচ হিসাবে ইনভার্টার জেনারেটর খুবই উপকারী একটি সামগ্রী হবে তা নি:সন্দেহে বলা যায়।

এধরনের জেনারেটর বিয়ে বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা যাবে। একটি জেনারেটরের শক্তি পর্যাপ্ত না হলে আরো একটি একই শক্তির জেনারেটর সমান্তরাল ভাবে সংযোগ দিয়ে শক্তি বাড়ানো যাবে। জেনারেটরের এ ফিচারটি অত্যন্ত ভাল এবং কার্যকরী। সারা পৃথিবী চলছে এখন কার্বনমুক্ত জ্বালানী থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ইনভার্টার জেনারেটর জ্বালানী সাশ্রয় করে কার্বন নি:স্মরণ কমাতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে। হয়ত বেশীদিন দূরে নয় যখন আমরা পরিবেশের বিবেচনায় জ্বালানী সাশ্রয়ী ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সামগ্রী ব্যবহার করে আমরা সকলে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখব।

Thursday, October 13, 2016

সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি শতভাগ রিসাইক্যাল যোগ্য গ্রীন এনার্জি

আমি অনেকের সাথে গ্রিন এনার্জি নিয়ে আলোচনায় প্রায়ই কয়েকটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। প্রথম প্রশ্ন। সোলার প্যানেল তৈরি করতে অনেক বিদ্যুৎ ও তাপ প্রয়োজন হয়। সেই বিদ্যুৎ ও তাপ ফসিল ফুয়েল হতে আমাদের নিতে হয়। প্রথমত আমরা সৌর প্যানেল তৈরির সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সোলার বা নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎস হতে নিতে পারি। তেমনি সিলিকন গলিয়ে প্যানেল বানানোর ফার্নেসও আমরা সোলার কণসেনট্রেটরের মাধ্যমে পেতে পারি। তাই সোলার তৈরির প্রতিটি পর্বেই আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানী ও সৌরশক্তির ব্যবহার করতে পারব। এখন আসি সোলার প্যানেলের আয়ু। সোলার প্যানেলে সাধারণত ২০/২৫ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি দেয়া হয়। কিন্তু পৃথিবীতে ৬০ বছরের প্রাচীনতম সোলার প্যানেল এখনও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর উপরে বায়ুমণ্ডলে স্থাপিত অনেক স্যাটেলাইট দীর্ঘদিন (আনুমানিক ৫০/৬০ বছর)ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে। হয়ত আরো অনেক অনেক বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাবে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে সৌর প্যানেলগুলো বছরের পর বছর অল্প অল্প করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হারাতে থাকবে। তথাপিও ৫০ বছর পরেও এগুলো সন্তোষজনক মানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। আমাদের অনেক ইলেক্ট্রনিক দ্রব্যাদি দুই বছর ওয়ারেন্টি থাকলেও তা অনেক সময় তিন চার বছর অর্থাৎ ওয়ারেন্টির দ্বিগুণ লাইফ টাইম পার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ২৫ বছর দেয়া ওয়ারেন্টি থাকলে তা দ্বিগুণ সময় সহজেই পার করতে পারবে। যদি ৫০ বছর সোলার প্যানেল বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তবে তা বিশাল অর্জন। যদি ১০০০ ওয়াটের প্যানেল এখনকার দামে ওয়াট প্রতি ৬০ টাকা খরচ করি তবে ১০০০ ওয়াট এর মূল্য হবে ৬০০০০ টাকা। প্রতিদিন সর্বনিন্ম ৪ ঘণ্টা( অনেক সময় ৬/৭ ঘণ্টা পাওয়া যাবে) বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তবে এক দিনে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ হবে ৪ গুন ৫ টাকা ( আমাদের দেশে এক কিলোওয়াট বিদ্যুতের গড় মূল্য ৫ টাকা)=২০ টাকা। তবে ৩৬৫ দিনে হবে ৩৬৫ গুন ২০ টাকা=৭৩০০ টাকা। ৫০ বছরে হবে ৭৩০০ গুন ৫০=৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ধরা ৫ টাকা বিদ্যুৎ বিল ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে তাতে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার বেশী অর্জন সম্ভব। প্রায় ৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা লাভ হবে। সোলার প্যানেল সম্পূর্ণ রিসাইক্যাল করা যায়। রিসাইক্যাল করে প্রায় ৯৫% সিলিকন, কপার, সীসা ও এলুমিনিয়াম ইত্যাদি রিসাইক্যাল করানো সম্ভব। সোলার প্যানেল আমরা পুনরায় ৯৫% রিকভার করে পরিবেশের ক্ষতি হওয়া থেকে মুক্ত করতে পারি। নি: সন্দেহে সোলার প্যানেল আসলেই গ্রিন এনার্জি এতে কোন দ্বিমত বা বিতর্ক নেই।
এখন আসি ব্যাটারির বিষয়ে। অনেকের মত আমিও জানতাম ব্যাটারি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।  কিন্তু ব্যাটারির রিসাইক্যাল বিষয়ে কিছু স্টাডি করে দেখলাম। ব্যাটারি পরিবেশের জন্য মোটেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ব্যাটারি তৈরির প্লান্টটি হতে পারে সম্পূর্ণরূপে রিনিউয়েবল এনার্জি নির্ভর তাহলে ব্যাটারি তৈরির জন্য পরোক্ষভাবে আমরা পরিবেশের ক্ষতি করব না। এবার আসি রিসাইক্যালের জন্য প্লান্টটিও আমরা রিনিউবল এনার্জি নির্ভর করে নিব। রিসাইক্যালের ব্যাটারির প্লাস্টিককে আলাদা করে তা গলিয়ে পুনরায় ব্যাটারির প্লাস্টিক কেসিং বানানো সম্ভব। ব্যাটারির এসিড লবণ মিশ্রিত করে ডিএসিডিক করে  পরিশোধন করে ভূমিতে পরিচ্ছন্ন পানি হিসাবে মুক্ত করা সম্ভব। ব্যাটারি শীশা ও কপার গলিয়ে পুনরায় ব্যাটারির প্লেট বানানোর কাজে লাগানো যায়। অপরদিকে নিকেড ব্যাটারি ও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বর্তমানে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ইলেকট্রিক গ্যাজেটে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা যায়। এগুলো সবই চমৎকারভাবে রিসাইক্যাল করা যাবে।

সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি এগুলোর বিষয়ে যাদের ধারনা আছে এগুলো তৈরিতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।  ব্যবহার শেষে এগুলো দ্বারা ভূমি দূষণ হচ্ছে। এ ধারনায় যারা ছিলেন তারা নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট হতে পেরেছেন। সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি নবায়নযোগ্য জ্বালানী  ব্যবহার করে উৎপাদন করা সম্ভব। এগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করে পুনরায় রিসাইক্যাল করা সম্ভব। রিসাইক্যালে ৯৫% রিকভারী সম্ভব। সবার শেষে অবশ্যই সোলার প্যানেল ও ব্যাটারিকে সম্পূর্ণ গ্রিনে এনার্জির তকমা দিতেই হবে এবং আমরা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারি। ব্যবহার শেষে ডানে বামে ফেলে না দিয়ে রিসাইক্যাল ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে  দিলে পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা কমাতে পারি। তদুপরি আমরাও পরিবেশ সচেতনতার প্রমাণ দিতে পারি।

Thursday, October 6, 2016

ফসলী জমিতে ফসলের সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন

নবায়নযোগ্য জ্বালানী নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করা হল আমার একটি অভ্যাস। এই অভ্যাসের কারণে কয়েকদিন আগে  ইন্টারনেট হতে কিছু তথ্য পেয়ে আমার বেশ আনন্দ হয়েছে। বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ। কৃষিনির্ভর দেশ। স্বাধীনতার পর অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমরা কৃষিতে স্বনির্ভরতার দিকে অগ্রসর হয়েছি। ২০১৪ সালের পর থেকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে হাঁটছি। আর তখনই আমাদের সামনে একটি অদ্ভুত আবেদন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো হতে। আর তা হল কোন ফসিল ফুয়েল জ্বালানী নয় সৌর শক্তি থেকে বিদ্যুৎ তৈরি। বিদ্যুৎ তৈরি করতে জমি প্রয়োজন। আমরা ছোট দেশে জমি পাব কোথায়।

এ বিষয়ে জাপানের কিছু কৃষি বিজ্ঞানী ১৯৯৪ সাল থেকে অনেক ভাবে গভেষনা করে জমিতে সোলার  প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটা পদ্ধতি বের করে। পদ্ধতিটা হল, তারা প্রমাণ পায় জমিতে ৩২ শতাংশ অংশ ফাকা ফাকা করে ঢেকে দিলে জমির ফসলের কোন ক্ষতি হয় না। উৎপাদন ব্যাহত হয়না। এর জন্য তারা প্রতি পাঁচ মিটারে ২/৩ হতে এক মিটার প্রশস্ত প্যানেল সাজেস্ট করে। লম্বা দেড় মিটার প্রস্থ ২/৩ মিটার প্যানেল আড়াআড়িভাবে এক মিটার দুরে দুরে সেট করা যায়। এতে ৩২ পারসেন্টের কম স্থান সোলার প্যানেলে আবরিত হবে। প্যানেলগুলি ১০ ফুট উপরে সেট করা প্রয়োজন। ১০ ফুট উপরে ফাকে ফাকে সোলার প্যানেল সেট করলে দিনের বিভিন্ন সময় সূর্যের দিক পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে প্যানেলের ফাঁক দিয়ে সৌর আলো তাপ নীচে গাছে পৌঁছাবে ও গাছের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে।

সৌর প্যানেলগুলো ১০ ফুট উচ্চতায় মাচা আকারে বসাতে হবে। তবে জাপান কৃষি অধিদপ্তর আবার একটা শর্ত দিয়েছে মাচার পিলারগুলোর বেইজ পাকা করা যাবে না। ঝড় ও বাতাসের তীব্রতা থেকে মুক্ত রাখার জন্য যতদূর প্রয়োজন গভীর করা যেতে পারে। জাপানী বিঞ্জানীরা দুই ফুট গভীরে বসিয়ে ১০ ফুট উপরে ৩ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে পিলার গুলো বানিয়ে নিয়েছে। তারা মাচাটা এমনভাবে তৈরি করে নিয়েছে এবং প্যানেলগুলো সেট করেছে যাতে দিনের বিভিন্ন সময় সৌর আলোর দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘুরানো যায়। পিলারের উচ্চতা ও পিলার থেকে পিলারের দূরত্ব এমনভাবে সেট করা হয়েছে যাতে ট্রাক্টর ও হারবেস্টর এর ভিতর দিয়ে সমস্যা ছাড়া চালনা করা যায়। জাপানের রৌদ্রের সাধারণ তাপমাত্রা অপেক্ষা আমাদের দেশে তাপ বেশী তাই এই ব্যবস্থা আমাদের দেশে করলে জমি সান বার্ন কম হবে। জমির পানি ও রস কম বাষ্পীভূত হবে। এতে জমি বেশী পরিমাণে উর্বর থাকবে। পানি কম দেয়া লাগবে। ফসলের উৎপাদন বাড়বে। জমির উপরে ৩০/৩২% ছায়া থাকায় কৃষিকাজ করতে কৃষক কম সান বার্ন হবে। প্যানেলের ছায়ায় থেকে থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী সময় কাজ করতে পারবে। কৃষক কম পরিশ্রান্ত হবে বেশী পরিমাণ উৎপাদনশীল থাকবে।

জাপানের কৃষকরা এর নাম দিয়েছে সোলার শেয়ারিং। জাপানের কৃষি কাজে সরকার বরাবর ভর্তুকি দিয়ে আসছে। তথাপি বর্তমান ও আধুনিক জেনারেশনের কৃষিকাজে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তার একমাত্র কারণ কৃষিকাজে অন্যান্য শিল্প কারখানা থেকে আয় রোজগার কম। কিন্তু সোলার শেয়ারিং জাপানের যুব সমাজকে কৃষিতে ফেরত আনবে বলে মনে করা যায়। জাপানে এক বিঘা জমিতে  ফসল থেকে সাধারণত আয় আসে ১ লক্ষ ইয়েন। ১ ইয়েন আমাদের এক টাকার কাছাকাছি (০.৭৭ টাকা) অপর দিকে সৌরবিদ্যুত এর আয় ১ লক্ষ ৬০ হাজার ইয়েন। এক বিঘা জমি হতে বছরে সর্বমোট ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা কৃষক পাচ্ছে । যা কিনা তার ফসলের আয় হতে ১.৬ ভাগ বেশী। এখানে আর একটি বিষয় আছে জাপানে বেসরকারি ব্যক্তি বর্গের কাছ থেকে সরকার ৪২ ইয়েন দামে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ক্রয় করে। আমাদের দেশে সরকার সবোর্চ্চ ১৫ টাকা রেটে পিংকিং পাওয়ারের ডিজেল জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করে থাকে। অবশ্য বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সুলভ মূল্যে ৩ টাকা হতে ৮ টাকার মধ্যে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে বিদ্যুৎ বিক্রয় করে থাকে। ফলে আমাদেরে দেশ অপেক্ষা জাপানে জমির উপর বিদ্যুৎ বিক্রয় করা অনেক লাভজনক।

বাংলাদেশের মত ঘনবসতির দেশে জাপানের এই উদাহরণটি বেশ গুরুত্ব পেতে পারে। কারণ আমাদের মূল্যবান জমিগুলি সোলার শেয়ারিং এর কাজে ব্যবহার করলে কৃষক যেমন লাভবান হবে আমাদের দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে অনেকদূর এগিয়ে যাবে।