সারা পৃথিবীতে
বৈদ্যুতিক গাড়ী ব্যবহার একটা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আমেরিকার অনেক শহর, চীনের
অনেক শিল্প নগরী ধোয়ায় ঢেকে আছে, সেসব শহরে অতি দ্রুত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের
নি:গমন কমাতে হবে। শহর গুলোতে বাতাসে ৫১% দূষণ হয় গাড়ীর ধোয়া হতে। বাংলাদেশের
রাজশাহী ব্যাটারির গাড়ীর ব্যবহার উৎসাহিত করে ও অনেক গাছ পালা লাগিয়ে ২০১৬ সালের
প্রথম দিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল দূষণ কমানোর জন্য বিশ্বের সকল শহরের মধ্যে ১ম
স্থানটি অর্জন করেছে। যারা স্বীয় চেষ্টায় পরিবেশের দূষণ রোধ করতে পেরেছে।
বাংলাদেশের একটা সিটি কর্পোরেশন পৃথিবীর বুকে ১ম অবস্থানে আছে। আমাদের এই উদাহরণ
পৃথিবীর বড় বড় শহর গুলির জন্য অনুকরণীয়।
বাংলাদেশের ঢাকা
শহরে অতিদ্রুত তৈলের গাড়ী বর্জন করে ইলেকট্রিক সিস্টেমে ট্রেন, মেট্রো,
বাস ,কার ও অটো রিক্সা ব্যাপকভাবে প্রসারিত
করা প্রয়োজন। সরকারী কোন ট্রান্সপোর্ট ইলেকট্রিক সিস্টেম ব্যতীত পরিকল্পনা করা
অনুচিত। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশই ২০২০ থেকে ২০৩০ এর মধ্যে তৈলের গাড়ী হটানোর
পরিকল্পনা করেছে। সবাইকে ইলেকট্রিক কার চালনায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আমাদের দেশের
মানুষের কাছে সেই দিন এটা জনপ্রিয়তা পাবে যেদিন এটার মূল্য কমে আসবে। হাইব্রিড
গাড়ীতে থাকে সাধারণ পেট্রোল ইঞ্জিন আর
সাথে যোগ হয় ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক মটর। যারা অল্প দূরত্বে ভ্রমণ করেন ও কেবলমাত্র
শহরে গাড়ী চালান তারা ইন্টারনাল কম্বারসন ইঞ্জিন বা আইসি ইঞ্জিন বাদ দিতে পারেন।
শুধুমাত্র ব্যাটারি দিয়ে গাড়ী তৈরি করে নিতে পারেন। হাইব্রিডের গাড়ীর মধ্যে আছে
মূলত: দুই ধরনের। প্যারালাল ও সিরিজ বা প্লান ইন হাইব্রিড। প্যারালাল হাইব্রিড যখন
বেশী শক্তি প্রয়োজন তখন চলবে তৈলে আর যখন গতি কম তখন চলবে ব্যাটারিতে। আবার গাড়ীর
গতি কমালে ও ব্রেক চাপলে সেই শক্তি পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ব্যাটারিতে জমা হবে।
এতে প্রায় ১০% বিদ্যুৎ রিজেনারেশন ব্রেক সিস্টেম থেকে পাওয়া যাবে। অপরদিকে সিরিজ
হাইব্রিড প্রধানত চলবে চার্জকৃত ব্যাটারিতে। যখন ব্যাটারির চার্জ শেষ হবে তখন তার
তৈলে চালিত জেনারেটর চালু হবে। যা কিনা গাড়ীর মটরে বিদ্যুৎ দিয়ে গাড়ী চালাবে ও
ব্যাটারি চার্জ করবে।
চীন এখনও ইলেকট্রিক
কার তৈরি করে ব্যাপক হারে নিজ দেশের বাজার সয়লাব করতে পারেনি। তাই আমরা ব্যাপক
হারে চাইনিজ ইলেকট্রিক কার বাজারে দেখছি না। আমরা যে হারে চাইনিজ ব্যাটারি চালিত
অটো রিক্সা দেখছি সেই হারে বৈদ্যুতিক কার চায়না আমাদের দেশে পাঠায়নি। চায়না ২০৩০
সালের মধ্যে তাদের সমস্ত কার ইলেকট্রিক করে ফেলবে। ইলেকট্রিক কারের উন্নত ও আধুনিক
প্রযুক্তি এখনো আমেরিকার মধ্যেই মূলত: সীমাবদ্ধ। শ্রীঘই সমস্ত পৃথিবীতে বৈদ্যুতিক
কারের বিস্ফোরণ হবে। ভারত ব্যাপক হারে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে যখন বৈদ্যুতিক গাড়ী
চালু হওয়ার পরে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি প্যাকের দাম ছিল প্রায় কিলোওয়াট প্রতি ১০০০
ডলারের উপর। এই মূল্য ২০১৫/২০১৬ সালে এসে ২০০ ডলার পার কিলোওয়াট এসেছে। এটা দেখা
যাবে ১০০ ডলার পার কিলোওয়াট মূল্যে চলে আসলেও আশ্চর্য হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ
বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ীর চাহিদা বাড়লে ব্যাটারির উৎপাদন বাড়বে ও মূল্য কমবে।
বৈদ্যুতিক ব্যাটারি সম্পূর্ণ রিসাইক্যাল করা যাবে। অনুরূপ ভাবে গাড়ীর প্রতিটি
জিনিষ রিসাইক্যাল আইটেম দিয়ে তৈরি এবং পুনরায় রিসাইক্যাল করা যাবে। এভাবে
বৈদ্যুতিক গাড়ীর আইডিয়ার সাথে সাথে একে আরো পরিবেশ বান্ধব ভাবে চিন্তা করা হয়েছে।
একটা তৈলের জ্বালানীর গাড়ীকে বৈদ্যুতিক গাড়ীতে রূপান্তর করতে আমাদের প্রয়োজন হবে
চার্জ কন্ট্রোলার, ব্যাটারি, ইনভার্টর
(যদি এসি মটর হয়), শক্তিশালী মটর। আমাদের সকল গাড়ীতে কিন্তু
স্টার্টর মটর আছে। আমাদের প্রয়োজন হবে এর চেয়ে বড় মাপের মটর। আমাদের গাড়ীতে
ব্যাটারি আছে। প্রয়োজন হবে এর চেয়ে বেশী শক্তির একাধিক ব্যাটারি।
এখন আসি গাড়ীর
জ্বালানী খরচ। একটা গাড়ী যদি ১০০ কিমি রেঞ্জের হয় তাহলে এতে ১৭/১৮ কিলোওয়াটের
ব্যাটারির প্রয়োজন হবে। বর্তমান বাজার দরে এর দাম ৩৫০০ ডলারের নীচে হবে অর্থাৎ
টাকায় দাম হবে ২৮০০০০ টাকা। এই ব্যাটারির
প্যাক দিয়ে যাতায়ত করা যাবে আনুমানিক ২৩০০০০ কি:মি। সারা বছর গাড়ীর জন্য বিদ্যুৎ
চার্জে আমেরিকানরা বিদ্যুৎ বিল দেয় ২৫০ ডলারের মত। এতে ব্যাটারির পূর্ণ লাইফ
চালাতে ৬ বছরে ১৫০০ ডলার বিদ্যুৎ খরচ ধরা যায়। সর্বমোট খরচ ৫০০০ ডলার বা ৪,০০,০০০ টাকা। তাহলে কিলোমিটার প্রতি খরচ ৪,০০,০০০ ভাগ ২,৩০,০০০=১.৭ টাকা।
অপরদিকে সিএনজিতে খরচ যায় কি:মি: প্রতি ৪ টাকা। তৈলে খরচ প্রায় ১০ টাকা। একটা
ব্যাটারির লাইফ টাইমে পেট্রোল থেকে সাশ্রয় ১০-১.৭=৮.৩ টাকা। তাহলে ব্যাটারির
সম্পূর্ণ লাইফ (৬-১০ বছরে) টাইমে সাশ্রয়/লাভ=১৯,০৯,০০০ টাকা। আর্থিক লাভ হতে বেশী লাভ হল এটা পরিবেশ বান্ধব। গাড়ীর সমস্ত
কিছু রিসাইক্যাল করা যাবে। বিশেষ করে ব্যাটারি ১০০% রিসাইক্যাল করা যাবে।
আমাদের এত লাভের
হিসাব পেলে আমরা নিশ্চয়ই ব্যাটারি গাড়ী কিনে ফেলব। আমাদের যাদের পুরাতন গাড়ী আছে
তারা কি করব। এত ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন নেই। আশা করি আর বছর পাঁচেকের মধ্যে আমাদের
দেশের বুদ্ধিমান লোকেরা আমাদের সাধারণ গাড়ীগুলোকে ব্যাটারি গাড়ীতে কনভার্ট করে
ফেলবে। প্রথমে তারা অটো রিক্সার মতো এসিড ব্যাটারি সামনে পিছনে বসিয়ে নিবে। এতে
চার পাঁচ বছর ব্যবহার করা যাবে। সামনে যখন লিথিয়াম আয়ন বা কার্বন ব্যাটারির আরো সাশ্রয়ী
দাম হবে তখন গাড়ীতে লিথিয়াম আয়ন দিয়ে কনভার্ট করা যাবে। একসময় আমরা কম কার্বন
নি:স্মরণকারী সাশ্রয়ী প্রাকৃতিক গ্যাসে আমাদের গাড়ীগুলো রূপান্তর করে নিয়েছিলাম।
এখন সময় এসেছে আমরা ধীরে ধীরে ব্যাটারিতে রূপান্তর করব। তারপর আমরা আমাদের বাড়ীতে
আর কর্মস্থলে সোলার প্যানেল আর সূর্যের আলো না থাকলে সে সমস্ত গাড়ী বিদ্যুতে চার্জ
করব। আমরা বিদ্যুৎ দিয়ে সবকিছু চালনা করব। তেমনি বিদ্যুৎ তৈরি করব নবায়ন যোগ্য
জ্বালানী হতে।
সময় সবকিছু বলে
দিবে। আমি পরিবেশ সচেতন ও প্রযুক্তি প্রেমিক বলে আগে আগে বৈদ্যুতিক গাড়ীর বিষয়টি
অবতারণা করলাম। এটা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে। শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার
একসময় আমরা সবাই বৈদ্যুতিক গাড়ী ব্যবহার করব। এখনই বৈদ্যুতিক গাড়ীর রেসিং কার তৈরি
হয়েছে। গতিতে কম্প্রোমাইজ করা হয়নি। ব্যাটারির গাড়ীতেও আরামদায়ক এসি থাকছে।
ইনশাল্লাহ ২০২১ সালের মধ্যে অর্থাৎ আজ থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বেচে থাকলে আমিও একটা
বৈদ্যুতিক কারের মালিক হওয়ার পরিকল্পনা করছি। আপনার বৈদ্যুতিক কারে চরম অপছন্দ
থাকলেও আপনি আমার ১০ থেকে ১৫ বছর পরে এগুলো কিনবেন। কারণ আপনি আপনার অপরিচ্ছন্ন
তৈলের গাড়ীর পার্টস আর বাজারে পাবেন না। আসুন যারা সামর্থবান আছেন এখনই পরিকল্পনা
করুন আপনার গাড়ীটিকে বৈদ্যুতিক গাড়ীতে রূপান্তর করতে। পরিবেশ বাদ্ধব বিধায় এতেই
আমাদের সকলের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে।