ইন্টারনেট ও ইমেইল ব্যাপক প্রর্বতনের পর থেকে আমরা ই গভর্নেস
শব্দটির সাথে পরিচিত হই। পৃথিবীর উন্নত
দেশগুলি ই গভর্নেসে ব্যাপকভাবে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশের অগ্রসর তেমনিভাবে হচ্ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে অনলাইন তথ্য প্রবাহের ব্যাপক
বিস্তার ঘটেছে। ২০১৫ সালের
শেষ প্রহরে যখন আমি লিখছি এ সময়কার সরকার ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রগুলি চালু করে বাংলাদেশে
অনলাইন তথ্য প্রবাহে ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটা রোল মডেল হিসাবে
প্রকাশ পেয়েছে। কোন তথ্য জানার
জন্য এখন আর গ্রামের মানুষকে শহরে আসতে হয় না আর শহরের মানুষকে আর গ্রামে যেতে হয় না। একবার আমার বড়ভাই একটা গুরুত্বপূর্ণ জমির কাগজ আমাকে দেখার জন্য
কুমিল্লার গ্রাম থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাতে চাইল। আমি বললাম গ্রামের বাজারের কম্পিউটার দোকানে যান। কাগজটি স্ক্যান করুন। ইমেইল করুন। যদিও এখন স্পাটর্ফোনে ছবি তুলে ভাইবারের মাধ্যমে পাঠানো যায়। সরকারী কোন ফরম সংগ্রহ করার জন্য টাকা খরচ করে অফিসে অফিসে ঘুরে
অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ফরম সংগ্রহ করতে হত। এখন ইউনিয়ন
তথ্য কেন্দ্র বা যে কোন কম্পিউটার দোকান থেকে ফরম সংগ্রহ করা যায়। আমি ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে Bangladesh.gov.bd এই
ওয়েব সাইটি নিয়ে সাত/আট দিনের একটা তথ্য জানার তল্লাশি অভিযান
চালালাম। তথ্য তল্লাশি
অভিযান শেষে আমি যার পর নাই মুগ্ধ। বাংলাদেশের
প্রায় ছয় সহস্রাধিক ওয়েবসাইটে যেতে আমাদের মনে রাখতে হবে একটি ঠিকানা। আর তা হল বাংলাদেশ ডট গভ ডট বিডি। আমার গত কয়েকদিনে এমনভাবে ঠিকানাটি গেঁথে গেছে যা আমি সহজে ভুলব
না। পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকি হৃদয়ে আছে
“Bangladesh.gov.bd”ওয়েব সাইটি। মজার ব্যাপার হল এই ঠিকানাটি মনে রাখলেই আপনার কাছে বাংলাদেশ সরকারের
অনলাইনে দেয়া দেয়া আছে এরূপ কোন তথ্য বের করতে আর কোন সমস্যা থাকবে না। কোন না কোন লিংকে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত তথ্য পেয়ে যাবেন। এই বিশাল তথ্য ভাণ্ডার যেহেতু বাংলায় তাই গুগলে বাংলা ইউনিকোডে
সার্চ দিয়ে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত তথ্য পেয়ে যাবেন। এই ওয়েবসাইটের ইনডেক্সটা সাজানো হয়েছে সাবলীল ভাবে এতে সহজেই কাঙ্ক্ষিত
তথ্যে পৌঁছানো যায়। যেন আমার বাড়ী
শশীদল ইউনিয়নে যেতে ড্রপ ডাউনে ফ্লো চার্ট হল:
চট্রগ্রাম>কুমিল্লা>ব্রাহ্মণপাড়া>শশীদল
এভাবে আমরা যে কোন ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে যেতে পারি।
বাংলাদেশের যে কোন জিওগ্রাফিক এলাকার ওয়েব সাইট আমরা বাংলাদেশ
ডট গভ ডট বিডি ওয়েবসাইট হতে ড্রপ ডাউন মেনুর মাধ্যমে যেতে পারি।
বাংলাদেশের সমস্ত দপ্তর সমুহের ওয়েব সাইট সুন্দরভাবে ইনডেস্ক
করা আছে। মন্ত্রণালয়েরও
ওয়েবসাইটগুলি ক্রমান্বয়ে একটার পর একটা দেখা যাবে।
সরকারী সেবার মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল তথ্য পাওয়া। এই তথ্য অত্যন্ত সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এটা নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে। ইগর্ভনেসের প্রাথমিক ধাপ অতিক্রমণে এটা অনেক অনেক কার্যকরী ভূমিকা
রাখবে বলে ধারনা করা যায়। সেবা পাওয়ার
বিষয়গুলিও আইকনের মাধ্যমে ওয়েবসাইটতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সরকারী যে কোন ওয়েব সাইটে এই মূল ওয়েব সাইটি থেকে যাওয়া
যাবে।
এই সাইটির অধীনে প্রায় সমস্ত ওয়েবসাইটগুলোই মোবাইল বান্ধব। সহজেই সমস্ত ওয়েবসাইট স্মার্টফোনে খোলা যায় ও দেখা যায়। তবে যেগুলো এখনো মোবাইল বান্ধব নয় তাও শীঘ্রই মোবাইল বান্ধব হয়ে
যাবে।
বাংলাদেশের সরকারী ওয়েব সাইটের মধ্যে ফরমস ওয়েব সাইটটি বেশ
গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে ফরম
সংগ্রহ করা সরকারী সেবা প্রার্থী যে কারো জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বেশীরভাগ ডিপার্টমেন্টে ই-টেন্ডারিং
চালু হয়েছে। এছাড়া ট্রেজারি চালান চেক করা, জন্ম নিবন্ধন চেক করা
ও অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদনের মত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে
করা যায়। ই-গর্ভনেন্স
প্রতিষ্ঠার এটা একটা ভাল দিক। দেরীতে হলেও
বাংলাদেশের সরকারী সংস্থাগুলো উন্নত দেশের মত তথ্য
প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে একটা বিষয় নিশ্চিতভাবে বলা যায় ভারতের ইউনিয়ন পর্যায়ে বাংলাদেশের
মত ইন্টারনেট সেবা ও সেখানে অনলাইন প্রকাশনা এখনও হয়নি। সেই হিসাবে আমাদের অনেক রিমোট ইউনিয়নগুলি সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে তাদের ইউনিয়নের
তথ্য কেন্দ্রগুলি চালু রেখেছে। শুধু চালু রেখে
কেবল তাই নয় তথ্য কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা সেসব ওয়েবসাইট দিনের পর দিন হালনাগাদ করছে। নতুন নতুন তথ্য সংযুক্ত করছে। পৃথিবীর কম দেশই একই মোড়কে এত ওয়েব সাইট আনতে পেরেছে। সেই বিবেচনায় বর্তমান সময়ে অধিষ্ঠিত সরকার বেশ বড় একটি অবদান রেখেছে।