Pages

Thursday, May 28, 2015

কয়েকটি আধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি

২০১০ সালের পর থেকে আমার মত প্রযুক্তি প্রেমিকরা কয়েকটি শব্দ বেশী শুনছে বা ব্যবহার করছে, সেই শব্দগুলো হল এলইডি বা লাইট ইমিটিং ডায়োড, এসএমপিএস,ব্রাশলেছ ডিসি মটর বা বিএলডিসিইনডাকশন কুক টপ এবং ইনভার্টর এসি ও ফ্রিজ। ২০০০ সালের পর সারা পৃথিবী ব্যাপী ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমানোর জন্য ব্যাপক আওয়াজ উঠে। তখন ফসিল ফুয়েলের ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধি মানুষকে চিন্তিত করে। ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমাতে হবে সকলের মাঝে এর কার্যক্রম চলতে থাকে। তখন বায়ো ফুয়েল ও ইথানল আলোচনায় আসে। এগুলো রি্নিউবল হলেও কার্বন নি:স্মরনমুক্ত নয়। কার্বন নিগমন কমানো ও গ্রিন হাউস এফেক্ট মানুষকে অনেক অনেক বেশী চিন্তিত করে। ২০০০ সালের পর থেকে পট পরিবর্তন হতে থাকে। মানুষ অনেক বেশী এনার্জি সচেতন হয়। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি একের পর এক আসতে থাকে। বাল্ব বা কাচের গোল লাইট পরিবর্তন হয়ে সিএলএফ লাইট বাজারে আসতে থাকে। এতে ৬০ % থেকে ৮০% বিদ্যুত সাশ্রয় হয়। যা কিনা বিদ্যুৎ উতপাদন ঘাটতি ও বিদ্যুতের চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে। রিনিউএবল এনার্জি এসময় সকলের নজর কারে। কিন্তু সোলার প্যানেলের ওয়াট প্রতি মূল্য তখনও ডলারের উপরেই থাকে। সম্প্রতি ২০১২ সালের পর চীনাদের সোলার প্যানেলের ব্যাপক উতপাদনের ফলে সোলার প্যানেলের দাম স্মরনকালের সর্বনিন্ম পর্যায়ে অর্থাৎ ওয়াট প্রতি এক ডলারের নীচে চলে আসে। ২০১২ সালের পর থেকে সৌর শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে আন্দোলনটা আরো বেগবান হয় কারণ ব্যাটারি ছাড়া সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বর্তমান বৈদ্যুতিক কারেন্টের ইউনিট প্রতি খরচ থেকেও কম। ব্যাপক পরিমাণে ফসিল ফুয়েল জ্বালানোর পর বৈশ্বয়িক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে পৃথিবীর উপকূল এলাকাগুলো প্লাবিত হবে এটা বেশ বড় রকম শঙ্কা। আর এ শঙ্কায় সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারে ব্যাপকতা এসেছে। আমাদের সিভিলাইজেশন বিদ্যুতের সাথে এত সু-দৃঢ়ভাবে আছে যে বিদ্যুৎ একটি অপরিহার্য উপাদান।
বিদ্যুতের ব্যবহারে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হল রাতের অন্ধকার দূর করতে বাতি জ্বালানো। বাতি জ্বালানোর কাচের স্বচ্ছ ফিলামেন্টের পর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য পারদ বাষ্পের লাইট যা সিএফএল নামে পরিচিত। এতে থাকে ক্ষতিকর মারকারি বা পারদ। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে মানুষ এ প্রযুক্তি ব্যাপকভাবেই ব্যবহার করতে থাকে। এদিকে আর একটি আবিষ্কারে পাল্টে যায় দৃশ্যপট আর তা হল নীল রংয়ের আলোর লাইট ইমিটিং ডায়োডের আবিষ্কার। জাপানের নাকামোরা ১৯৯৩ সালে নীল এলইডি আবিষ্কার করে বিশ্বের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইটিং প্রযুক্তির নবযুগের সূচনা করে। দীর্ঘদিন যাবত লাল, হলুদ ও সবুজ লাইট ইমিটিং ডায়োড আবিষ্কার হয়েছিল। কিন্তু আর একটি মৌলিক রং আবিষ্কার বাকী ছিল আর তা হল নীল রংয়ের এলইডি লাইট। নীল এলইডি লাইটের আবিষ্কার সাদা এলইডি লাইটের পথ পরিষ্কার করে দিল। শুধু তাই নয়। বড় বড় এলইডি বিলবোর্ড তৈরি সহজ হল। হয়তবা সেদিনটি আর বেশিদূরে নয় এলসিডি টিভি সম্পূর্ণভাবে এলইডি স্ক্রিনেই চলবে। এলসিডি জাদুঘরে চলে যাবে। বর্তমানে সীমিত আকারে ওএলইডি নামে পরিচিত হলেও ভবিষ্যতে  সম্পূর্ণভাবে এলইডি টেকনোলজির উপর নির্ভর করেই চলতে থাকবে। এখন সাধারণত্ব এলইডি টিভি হিসাবে আমরা জানি তা মূলত: এলসিডি টিভি এবং ব্যাক-লাইট এলইডি। হয়তবা সামনের সময়গুলি ওএলইডি এর জয়জয়কারের সময় হবে। এটি হল বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী তবে সুলভ নয়। এগুলোর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলে সুলভ হতে বাধ্য। এই এলইডির স্থায়িত্ব কমপক্ষে ৫০,০০০ ঘণ্টা । সাধারণভাবে ১,০০,০০০ ঘণ্টাও অনেক ক্ষেত্রে আশা করা যায়। বয়স হিসাবে কমপক্ষে দশ বছর। ফলে এখন দাম বেশী হলে দীর্ঘ মেয়াদে সাশ্রয়ী প্রযুক্তি।
এসএমপিএস অনেক পুরাতন টেকনোলজি। এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। প্রথম দিকে কর্ডলেছ ফোন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি যে কোন ডিসি গ্যাজেট এসি থেকে ডিসি পাওয়ারে চলাতে গেলেই ভারী ভারী তারের কুণ্ডলীর এ্যাডপটার লাগাতে হত। এখন আপনার হাতের ৫ ভোল্টের ও ১৫০ থেকে ৩০০ মিলি ওয়াটের এ্যাডাপটার ভারী ভারী তারের কুন্ডলী ব্যবহার না করে অত্যন্ত হালকা পাতলা সার্কিটের মাধ্যমে এ্যাডাপটার/চার্জার বানানো হচ্ছে। মোবাইল চার্জারটি খুললেই আমরা বেশ হালকা পাতলা জটিল সার্কিট দেখতে পাব। আগের মত তারের কুণ্ডলীর ভারী ভারী কয়েল দেখতে পাবনা। এতে এসি হতে ডিসি এ্যাডাপটার ছোট আকারের হালকা হয়েছে। ভোল্টেজ ইনপুট রেন্জ্ঞ বেড়েছে। যেমন ১০০ হতে ৩০০ ভোল্ট ইত্যাদি। এসএমপিএস সার্কিট অত্যন্ত অল্প পরিসরে ও হালকা অথচ জটিল সার্কিটের মাধ্যমে বেশী ভোল্টেজ রেন্জ্ঞ, বেশী এ্যাম্পিয়ার যুক্ত চার্জার বানানো সম্ভব। কম্পিউটারের মাদার বোর্ড, বিভিন্ন ড্রাইভ ও বিভিন্ন কার্ডে ৫ ভোল্ট ও ১২ ভোল্ট সরবরাহের প্রয়োজন হয়। আর এ্যাম্পিয়ারের হিসাবেও যথেষ্ট পরিমাণ কারেন্ট প্রবাহিত করতে হয়। এসএমপিএস সার্কিট এই জটিল পাওয়ার সাপ্লাইকে সহজ করেছে, সেইসাথে এসি থেকে ডিসি কনভারসনে যথেষ্ট পরিমান পাওয়ার লস কমিয়ে দেয়। এটাকে নির্ধিদ্বায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি বলা যায়।
ব্রাশলেছ ডিসি মটর। যারা সাইন্স পরছেন তার নিশ্চয়ই ডায়নামো ও মটর কিভাবে কাজ করে জানেন। মটরের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কয়েল বা তারের কুন্ডলী। এ তারের কুণ্ডলীটা মটরের ভিতরে ঘুরতে থাকে। ঘূর্ণমান কুন্ডলীতে বিদ্যুৎ কিভাবে দেয়া যায়। তার জন্য কার্বনের নরম পরিবাহী পদার্থের ব্রাশ ব্যবহার করা হয়। যা ক্রমাগত ভাবে ঘূর্ণনের সাথে ক্ষয় হতে থাকে। সুতরাং নির্দিষ্ট সময় শেষে ব্রাশ বদল করতে হবে। ঘর্ষণের ফলে শব্দ উৎপাদন হবে। ঘর্ষণের কারণে ঘূর্ণ্যমান লস হওয়ায় বিদ্যুৎ বেশী খরচ হবে। ঘর্ষণ ও ঘূর্ণায়মান থাকায় কিছু শক্তি তাপ আকারে খরচ হবে। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা বুঝতে পারছি মটরের এই ব্রাশটা তুলে দিতে পারলে উপকার কিন্তু অনেক। এতে ঘর্ষণের কারণে ক্ষয় প্রাপ্ত ব্রাশ বদল করতে হবে না। মটরের লাইফ বেড়ে যাবে। ঘর্ষণের কারণে শব্দ নাই। তাই শব্দহীন মটর তৈরি হবে। ঘর্ষণ জনিত কারণে তাপ উৎপাদন হয়ে  পাওয়ার লস না হওয়ায় বিদ্যুৎ খরচ কম হবে। ঘর্ষণ সৃষ্টিকারী ব্রাশ না থাকায় দ্রুতগতির মটর বানানো সহজ। ব্রাশ-লেস মটর সাধারণত্ব ডিসিতেই বেশী তৈরি হচ্ছে। তবে সীমিত আকারে এসি ব্রাশ-লেস মটরও পাওয়া যাচ্ছে। ইলেকট্রিক রিক্সা, ইজি-বাইক, গলফ কার , ইলেকট্রিক স্কুটি, কম্পিউটারের বিভিন্ন মটর ইত্যাদি কাজে ব্যাপক আকারে ব্রাশ-লেস ইলেকট্রিক মটর ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়েছে। হয়ত আর কিছুদিন পর কেহই আর ব্রাশ মটর তৈরি করবে না। ব্রাশ-লেস ডিসি মটর সংক্ষেপে তা বিএলডিসি(BLDC) নামে পরিচিত। বিএলডিসি মটর ব্যবহার করলে সনাতন মটর থেকে কমপক্ষে ১০-৩০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। তাই বিএলডিসি মটর হল একটা সাশ্রয়ী প্রযুক্তি।ব্রাশলেছ শুধুমাত্র মটরে আছে তা নয় বর্তমানে জেনারেটর ও অল্টারনেটরও ব্রাশলেছ হচ্ছে। ব্রাশলেছ হলে সাথে সাথে কয়েকটি এফিসিয়েন্সি আমরা পেয়ে যাই। তা হল ব্রাশ টাইপ থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও অল্টারনেটরের ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদনশীল। শব্দ কম। দীর্ঘস্থায়ী। কমপক্ষে ১০ বছর টিকে যাবে।
এবার আসি ইনডাকশনে। সাইন্সের ছাত্ররা ইনডাকশন শব্দই অনেক অনেক শুনেছেন। এখন ইনডাকশন শব্দটি বেশ চালু আছে বৈদ্যুতিক চুলার জন্য। আগুন জ্বলছে না। হিটারের মত কয়েল লাল হচ্ছে না অথচ খাবার রান্না হচ্ছে। অনেকে তাই নাম দিয়েছেন ম্যাজিক চুলা। ম্যাজিক চুলা জ্বালানী সাশ্রয়ী চুলা হিসাবে নাম কামিয়েছে। গ্যাসের চুলা এ্যাফিসিয়েন্সি হল ৪৪%, অন্যান্য ইলেকট্রিক চুলার এফিসিয়েন্সী হল ৭৪% আর এ চুলার এ্যাফিসিয়েন্সি হল ৮৪% এর ও বেশী। তবে গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ তৈরির লস আবার ৫০ থেকে ৭০%, আবার সাপ্লাই লাইনে বিদ্যুতের লস আছে। সে হিসাবে গ্যাসকে বিদ্যুতে রুপান্তর না করে সরাসরি সাপ্লাই লাইনের মাধ্যমে চুলায় ব্যবহার করলে গ্যাস ইলেকট্রিক চুলা থেকে বেশী এনার্জি এফিশিয়েন্ট। ইনডাকশন চুলার ভিতরে বড় সর তারের কুন্ঠলী বা কয়েল আছে। এ কয়েলের মধ্যদিয়ে কারেন্ট গেলে তা চুম্বুকের একটি এলাকা বা বলয় তৈরি করে। এই এলাকাটি চুলার উপরে কাচের বা সিরামিক উপর দিয়ে মার্ক করা থাকে। এ মার্কের উপর লোহার তৈরি যে কোন পাত্র দিলেই পাত্রের সাথে চৌম্বকীয় আকর্ষণে তাপ সৃষ্টি করে। এ তাপ পাত্রকে উত্তপ্ত করে সরাসরি খাবারকে গরম করে। ফলে দেখা যায় যে কোন খাবার অন্যান্য হিটার বা কয়েল জাতীয় চুলা থেকে দ্রুত উত্তপ্ত হয় ও সময় কম লাগে। এছাড়া চুল্লীর নির্ধারিত স্থানে পাত্র দিলে চুলা অন হবে অন্যথায় নয়। পাত্র তুলে নিলে চুলা সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়। এভাবেই অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। তাপমাত্রা কমবেশি করা যায়। যেমন পানি গরম করতে ২০০০ ওয়াট। তৈলে ভাজাভুজি করতে ২৩০ ওয়াট, রুটি তৈরি করতে ৩০০ ওয়াট ইত্যাদি ইত্যাদি বিদ্যুৎ খরচ। এভাবে বিভিন্ন ওয়াটে ব্যবহার হওয়ায় বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। আমাকে একজন ব্যবহারকারী আলাদা মিটার লাগিয়ে দুইটি চুলার একমাসের খরচের হিসাব দিয়েছিল। তার আট সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের জন্য একমাসে দুই ইনডাকশন চুলায় বিদ্যুৎ খরচ ৪৫০ টাকা। অর্থাৎ এ খরচ গ্যাসের সংযোগ হতে সাশ্রয়ী। গ্যাস সিলিন্ডার হতে সাশ্রয়ী। হিটার ব্যবহার হতেও সাশ্রয়ী। তবে মাইক্রোওয়েভ থেকে কম সাশ্রয়ী। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও নিরাপদ হওয়ার জন্য যেসব এলাকায় সাপ্লাই গ্যাস সংযোগ নেই সেসব এলাকায় ক্রমান্বয়ে ইনডাকশন চুলা গুলি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বাজারে ইনডাকশন গীজারও আছে যা কিনা প্রচলিত গীজার থেকে ৩০% বিদ্যুত সাশ্রয়ী।
ইনভার্টর টাইপ এসির আর একটি চালু শব্দ। বৈদ্যুতিক সামগ্রীর মধ্যে এসি অনেক বেশী বিদ্যুৎ খরচ করে।একটা এয়ার কন্ডিশনে কমপ্রেসর, ফ্যান ও কনডেনসার আছে। এ গুলোতে মূলত তিনটি মটর আছে। তিনটি মটর বিএলডিসি টাইপ হলে এসির পাওয়ারকে কনভার্ট করে ডিসি করে ব্যবহার করতে হবে। ডিসি পাওয়ার ব্যবহার করে ভেরিয়েবল স্পীডের কমপ্রেসর তৈরি করা সম্ভব। সাধারণ এসিতে কমপ্রেসর তাপ-নিয়ন্ত্রিত থামোর্স্ট্যাট দ্বারা একবার অন করা হলে তাপ কমে গেলে কমপ্রেসর বন্ধ হয়ে যায়। আবার পুনরায় তাপ বেড়ে গেলে কমপ্রেসর অন হয়ে যায়। এভাবে তাপ কমা বৃদ্ধির সাথে এসির কমপ্রেসর অন ও অফ হতে থাকে। ইনভার্টর এসিতে কমপ্রেসর সম্পূর্ণ অফ না হয়ে ক্রমাগত চলতে থাকে অত্যন্ত কম গতিতে। তাপমাত্রার কমবেশির সাথে কমপ্রেসের গতির বাড়া কমা চলতে থাকে। এভাবে প্রয়োজন অনুযায়ী কমবেশি চলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। এছাড়া এসির অন্য ফ্যানগুলি বিএলডিসি মটর ব্যবহার করায় তাতেও অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। ইনভার্টর এসি প্রায় ৫০-৬০% বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। তাই ব্যক্তিগত ও বাসাবাড়িতে অধিক ব্যবহৃত স্থানে ইনভার্টর এসি অনেক বেশী উপযোগী। এখন ইনভার্টর এসি ও সাধারণ এসির মধ্যে বর্তমানে ইভারটার এসি বেশী দাম হলেও সেই দিন আর বেশী দূরে নয় যখন কোম্পানিগুলো শুধু ইনভার্টর এসিই কেবল তৈরি করবে।

           আমার এই সুদীর্ঘ বর্ণনায় আপনাদের যদি আধুনিক কালে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করাতেই পারি তবে ই এ লেখাটি সার্থক হবে।

Thursday, May 21, 2015

ফরমালিন বিহীন জীয়ল মাছ


ঢাকার অভিজাত ডিপার্টমেন্টাল দোকানে বড় বড় একুরিয়ামে জীয়ল মাছ বা জ্যান্ত মাছ দেখা যায়। জ্যান্ত মাছ কেনায় সবচেয়ে বড় লাভ হয় ভেজালমুক্ত এবং ফরমালিন মুক্ত মাছ খাওয়া যায়। ঢাকার অভিজাত এলাকায় অনেকেই উচ্চ মূল্যে জীয়ল মাছ কিনে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। অথচ প্রায়ই হাটতে গিয়ে দেখি কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকার সাধারণ মানুষ জ্যান্ত মাছই বেশী কিনছে। কারণ, ঢাকার চেয়ে অনেক কম দামে জীয়ল মাছ সবসময়ই সাধারণ মানুষ  কিনতে পারছে। আমি ময়মনসিংহ ও বগুড়ায় মাঝে মাঝে জীয়ল মাছ বা জ্যান্ত মাছ বাজারে পেলে কিনতাম(২০০৬-৭ ও ২০১০-১২ সাল)। বেশ চড়া দামেই ক্রয় করতাম। তাজা বা জ্যান্ত মাছ কেনার আনন্দটাই আলাদা। পচা মাছ কেনার জন্য বাসায় বকা খাওয়ার ভয় নেই। ফরমালিন নিয়েও ভয় নেই। আমি প্রায়শই যখন বিকালবেলা কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকায় হাটা হাটি করি তখন জ্যান্ত মাছ বিক্রয়ের দৃশ্য আমাকে আনন্দ দেয়। এখানে দেখতে পাই একটা চারকোনা পানি ভর্তি ট্রেতে প্রায় সকল মাছ ওয়ালাই জীয়ল মাছ বিক্রয় করছে। মরা মাছ বিক্রয় হয় হাতে গোনা। তাও আবার মাছ পানিতে জ্যান্ত থাকতে থাকতে দীর্ঘ সময় থেকে পানির গরম বা নানা কারণে কিছু মাছ মরে । এছাড়া সকল ব্যবসায়ী তারা জ্যান্ত মাছ বিক্রয় করার চেষ্টা চালায়। আমি আমার বিচরণ এলাকা কুষ্টিয়া , মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোর এলাকায় বিভিন্ন কারণে ভ্রমণ করার সময় সকল রাস্তার পাশে প্রায় সকল মাছই টিনের বড় ট্রেতে পানির মধ্যে রেখে জ্যান্ত মাছ বিক্রয় করতে দেখি। এটা সত্যিই চমৎকার একটি ব্যবস্থা। আমরা যেখানে ফরমালিন আতংকে আতংকগ্রস্থ তখন মাছওয়ালাদের এ উদ্যোগ আমাদের অনেক অনেক বেশী ভরসা দিচ্ছে তা আমরা হলফ করে বলতে পারি।
          আমি একবার আমাদের বিজিবি ক্যাম্পাসের কিছু মাছ বাহিরের লোকের কাছে বিক্রয় করি। সাধারণত সকল মাছ সবাইকে ভাগ করে দেয়া হয়। কখনও বেশী বেশী মাছ ধরা পড়লে বাইরে কিছু মাছ বিক্রয় করা হয়। এরূপ বিক্রয় যোগ্য মাছ সকাল বেলায় জেলেরা ধরে। আমি জানতে চাইলাম কখন তারা মাছ নিবে। তখন জানতে পারলাম, মাছ ধরার পর পর তারা সমস্ত মাছ পানির উপরে না তুলে জাল দিয়ে পুকুরে রেখে দিয়েছে। পুকুরের জাল থেকে দ্রুত তুলে মাছগুলো মেপে আর একটি পানিতে ডুবানো জালের খাঁচায় বা হাপুড়ে মাছগুলো জিইয়ে রেখেছে। তারপর যখন বাজারের সময় হল তখন মাছগুলো বড় বড় পানি ভর্তি ড্রামে রেখে নসিমন বা করিমনে করে বাজারে রওয়ানা দিল। বাজারে গিয়ে ড্রামের জীয়ল মাছ প্রয়োজন মোতাবেক টিনের পানি ভর্ত্তি ট্রেতে বিক্রয়ের জন্য তুলে রাখছে। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সাপ্তাহিক মংগলবাড়ীয়া বাজারের  মাছগুলো সাধারণত বিক্রয় স্থানের সন্নিকটে জিকে প্রজেক্টের ক্যানেলের পানিতে জালের খাঁচায় ডুবানো। সেখান থেকে প্রয়োজন মোতাবেক বিক্রয়ের জন্য তুলে নিচ্ছে।

অনেক জায়গায় আমরা আগে দেখতাম বড় বড় বাঁশের ঝাকায় মাছ রেখে বিক্রয় করত। এখনকার পানিপূর্ন ট্রেতে মাছ বিক্রয়ের এই টেকনিকটিকে আধুনিক বলা যায়। কারণ মাছ পানিশূন্য রেখে বেশি সময় রাখা যায় না। বরফ ছাড়া পানিতে জিইয়ে রেখে মাছকে দীর্ঘ দিন রাখা যাচ্ছে। আমার এখনও মনে আছে ছোটবেলায় দেখতাম গ্রামের বাড়ী থেকে পানিতে ভর্তি হাড়িতে করে শিং, মাগুর, কৈ ও টাকি মাছ আনা হত। এ মাছগুলো হাড়িতে বা পাত্রে জীয়ল রেখে দীর্ঘদিন খাওয়া যেত। বাসায় ফ্রিজ না থাকলেও কোন অসুবিধা ছিল না। এ মাছগুলো পাত্র থেকে জ্যান্ত তুলে কেটে কুটে রান্না করে চমৎকার ফ্রেস মাছ পাওয়া যেত। আমি হয়ত আমার বিচরণের পাঁচটি জেলার কথা বললাম। আমার মনে হয় এখন বাংলাদেশের প্রায় স্থানেই জীয়ল মাছ বিক্রয়ের কালচার শুরু হয়েছে। এটা একটা চমৎকার সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য পচনশীল মাছের তরতাজা ভাবে লাভজনক বিক্রয় পদ্ধতি। মাছ জিয়ল রাখার কারণে ব্যবসায়ীদের অবিক্রিত জীয়ল মাছ তাদের টেনশন কমিয়েছে। অন্যথায় মাছের পচনরোধে নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকতে হত। মাছ দীর্ঘসময় জীয়ল রাখার জন্য জেলেদের এ প্রচেষ্টায় সাধুবাদ জানাতে হয়। আমার মনে হয় একবার কোন বাজারে জীয়ল মাছের কেনাকাটা শুরু হলে মরা মাছ কেনা ও বিক্রয় কমে যাবে। মরা মাছ তখন কেবলমাত্র শুটকি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হবে।

Thursday, May 14, 2015

মসজিদের প্রটোকল


২০১৪ সালে আমি কুষ্টিয়া শহরের পৌরসভার এক ইফতার পার্টিতে দাওয়াত পাই। ইফতারের পর তাদের নামাজের ব্যবস্থা না থাকায় নিকটস্থ পুলিশ লাইন মসজিদে যাই। মসজিদে লোক সমাগম তেমন হয়নি। আমি এবং আরেকজন অফিসার সামনে যেতেই ইমাম বললেন, দুইটি বিছানো জায়নামাজের জায়গায় যেন না দাড়াই। এসপি ও এডিশনাল এসপি এর জন্য রিজার্ভ। পরে অবশ্য  দুই কর্মকর্তার কেউ আসেনি। মজার ব্যাপার হল সেই ইমাম জায়নামাজ দুইটি তুলে নেয়। কারণ হয়তবা অন্য কেহ সেই স্পেশাল জায়নামাজগুলো ময়লা না করে। জায়নামাজ তুলে রিজার্ভ স্থান ছেড়ে দেয় আম জনতার জন্য। পুলিশের মসজিদে এ ধরনের রিজার্ভ খটকা লাগলেও আমাদের সেনা বাহিনীর মসজিদ প্রটোকল আরো মজাদার। সেনা মসজিদে আগে রীতিমত কার্পেট দিয়ে ওয়াকওয়ে তৈরি করে রাখা হত। জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা না আসা পর্যন্ত আম জনতা মাঝের রাস্তার কার্পেটে বসার অনুমতি ছিল না। সামনে রিজার্ভ স্থান রাখা থাকত। মজার বিষয় হল মসজিদের জায়গা ইয়ার্কমার্ক রাখাটা সেনাবাহিনীর বাইরেও বেশ চালু আছে । কুষ্টিয়া ডিসি অফিসের মসজিদে দেখলাম ডিসি ও এডিসিদের জন্য জায়গা নির্ধারিত। আলাদা জায়নামাজ। ইমাম স্থানগুলি সংরক্ষণ করেন। তারা না আসলেই কেবল অন্যরা বসতে পারেন। একটা ব্যক্তি মালিকানাধীন মসজিদে দেখলাম মালিকের জন্য মসজিদে স্থান নির্ধারিত। আমার ক্যাডেট কলেজে পড়াকালীন দেখতাম অধ্যক্ষের জন্য স্থান নির্ধারিত। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে দেখলাম অধ্যক্ষের জন্য স্থান নির্ধারিত। মসজিদ প্রটোকলে নিয়োজিত নিযুক্তি ধারী ব্যক্তিরা তড়িঘড়ি করে নামাজ শেষ করে “সী অফ” করার জন্য প্রস্তুত থাকে। অনেকে আবার মসজিদে “রিসিভ” করার জন্য বেশ সময় ধরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করে থাকেন।
মসজিদ প্রটোকলের জন্য আমি আমার একজন কমান্ডারকে দেখেছিলাম আন্দোলন মুখী হতে। অবসর প্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুব, ৪৭ পিএমএ লংকোর্স। তিনি ১৯৯৬-৯৭ সালে আর্টিলারি সেন্টারে কমান্ড্যান্ট থাকাকালীন সময়ে সাধারণত মসজিদে হেটে আসতেন। কারণ মসজিদে হেটে আসলে প্রতি কদমে সোয়াব পাওয়া যায়। তিনি যখন আসতেন ঠিক সে সময় কাতার যেখানে ছিল সেখানে বসতেন। কাউকে নির্ধারিত জায়গা রাখতে দিতেন না। কাতার ক্রস করে সামনে বসতেন না। আমি তার নামটি উল্লেখ করলাম এ জন্য যে, তিনি মসজিদের প্রটোকলের চরম বিরোধিতা করতেন। তার আদর্শ দীর্ঘদিন অনুসরণ করেছি। যখন যেখানে কাতার থাকে সেখানে বসতাম। অন্যদের ক্রস করে আগে যেতাম না। পড়ে অবশ্য বিজিবিতে এসে দেখি হিসাব কিতাব আলাদা।
আমি একজন মেজর জেনারেলকে জানি তিনি সবসময় ঈদের নামাজের কাতারে একদম পিছনে দাঁড়াতেন। তিনি অন্যান্য নামাজেও বিভিন্ন স্থানে বসতেন। নির্ধারিত স্থানে বসতেন না। তবে একজন দুইজন ব্যতিক্রম ধর্মী ছাড়া প্রায় সবাই আমরা মসজিদের প্রটোকল গ্রহণ করি। একজন জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তাকে দেখলাম একটু ব্যতিক্রম তিনি আবার প্রথম কাতারে বসার জন্য  সবার আগে এসে বসে যেতেন । যেন অন্যদের অতিক্রম করে আসতে না হয়। অন্য একজনকে দেখলাম তিনি আবার জায়গা দুভাগ করে রাস্তা তৈরির বিপক্ষে। তিনি এসে যেখানে স্থান পাবেন বসবেন ও সুন্নত পড়বেন। কাউকে ক্রস করে কাতারের সামনে যান না। শুধুমাত্র ফরজ পড়ার সময় যখন সবাই দাড়ায় তখন তিনি সামনের কাতারে চলে আসেন। তিনি “রিসিপসন”/ “সী অফ” ইত্যাদি গ্রহণ করেন না। তবে নামাজ শেষে অফিসারদের নিয়ে মসজিদের নিকটবর্তী পুকুর পাড়ে ৩০/৪০ মিনিটের আড্ডায় বসতেন। নামাজের আগে লাঞ্চ না করলে নামাজ শেষে আড্ডায় যোগ দিয়ে খিদায় পেট চো চো করে।  সেই আড্ডায় কোন অফিসার জয়েন না করলে মাইন্ড করতেন। তিনি অবশ্য হেটে মসজিদে যাতায়াত করতেন। ময়মনসিংহের একটা স্টেশন মসজিদ ছিল তা সিএমএইচের সামনে। মসজিদটি আমার কাছে ভাল লাগত কারণ মসজিদটি ছিল প্রটোকল বিহীন। যখন যে আসত সেখানেই বসত। কুষ্টিয়ার বিজিবি মসজিদে  প্রথমে আমি নিজেকে পূর্ববর্তী অনেকের অনুসরণে কাতারের সামনে না গিয়ে পিছনে বসা শুরু করি। একদিন খোতবা শুরু হয়েছে। অনেক কর্মকর্তারা সামনে চলে গেছেন। মাঝের রাস্তাটি প্রায় বন্ধ। হটাত একটা গুঁতা খেলাম। সরেন সরেন সিও সাহেব আসতেছে। মুহূর্তেই কাতার চিচিংফাঁক হয়ে রাস্তা হয়ে গেল। অধিনায়ক ধীরে সুস্থে তার ছেলেকে নিয়ে সামনের নির্ধারিত স্থানে চলে গেলেন। এভাবে দুইদিন গুঁতা খাওয়ার পর পরের শুক্রবার বেশ আগে মসজিদে চলে যাই ও সামনের কাতারে বসি। যেন অনেককে ক্রস করে সামনে আসতে না হয়। এখন আবার একটা পদ্ধতি নিলাম। ছেলেদের বললাম, “তোমরা পিছনে বস। আমি সামনে যাই”। ছেলেরা আবার পিছনের সারিতে বসে “এই সরে বস। কথা বলছিস কেন?” ইত্যাদি শুনে মন খারাপ। এখনকার সময়ে আমাদের বাচ্চারা আবার অন্যদের কাছ থেকে তুই তোকারী শুনতে অভ্যস্ত নয়। পরে ছেলেদের নিয়ে আগে এসে প্রথম কাতারে বসতে শুরু করলাম। সেনা মসজিদের বিভিন্ন প্রটোকল দেখে সত্যি খুবই মজাদার অভিজ্ঞতা হয়েছে। আরেকটা মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তা হল তারাবির সময়। জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তার জন্য সামনে ছোট একটি টুল রাখা। তাতে মিনারেল ওয়াটার, ডাবের পানি,তসবি, চার্জার লাইট, টুপি, তসবি ইত্যাদি বিশেষভাবে সাজিয়ে রাখা। বিষয়টি অতি সাধারণ কিন্তু মসজিদে আলাদা ভাবে নির্ধারিত  ভাবে ব্যবস্থাটা দৃষ্টি কটু। আরেকটা বিষয় আমাকে মজা দিয়েছে তা হল প্রটোকল মেইটেইন করার জন্য জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তাকে ৫০/৬০ গজ দূরে মসজিদে যাওয়ার জন্য গাড়ীর ব্যবহার। চালক/রানার গাড়ী সমেত বাসার সামনে অপেক্ষমাণ। গাড়ীতে উঠার ১০/১৫ সেকেন্ড পর মসজিদের সামনে গাড়ী থামে। তখন সেখানে গার্ড পুলিশ, সিনিয়র এনসিও, সিনিয়র জেসিও রিসিভ করে। অথচ শুধু মাত্র প্রটোকল মেনটেইন করার জন্য কর্মকর্তাকে ৫০ গজ দুরে যাওয়ার জন্য গাড়ীতে ভ্রমণ করতে হয়।

মসজিদ প্রটোকল হয়ত সব জায়গায় মেনটেইন করা হয়। সৌদি আরবেও হয়তবা বাদশাহদের জন্য বা সভাসদদের জন্য স্থান নির্ধারণ করা থাকে। তাই প্রটোকল হয়তবা প্রয়োজনীয়। তবে আমার মনে হয় এরূপ প্রটোকল হলে ভাল হত যদি জ্যৈষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা  মসজিদের ইমামতি গ্রহণ করতেন। খোতবার আকারে ছোট বক্তৃতা দিতেন ও ইমামতি করতেন। আমি নিশ্চিত আমাদের সেনা মসজিদের ইমামরা অনেক হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে মসজিদে জ্যৈষ্ঠদের প্রতি প্রদর্শিত প্রটোকল হাদিসের আলোকে সহি প্রমাণ করতে পারবেন। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত আল্লার ঘরে ইমাম ছাড়া আর কোন প্রটোকল নেই। সেখানে সবার প্রটোকল সমান। যেহেতু ইমামরা সাধারণত চাকুরী করেন অথবা কারো বিশেষ দানের উপর নির্ভরশীল। সেখানে তারা সে সমস্ত প্রটোকল নিজের অজান্তে প্রশ্রয় দেয় ও মান্য করে। আরো কষ্টকর হয় যখন দেখা যায় মসজিদেও প্রধান অতিথির আগমনের জন্য নামাজ বিলম্ব হয়। দু:খজনক। আমাদের ইমামরা যেদিন যথাযথভাবে নিজের মর্যার্দা ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে পারবেন এবং সবাইকে যথাযথ প্রেষণা দিতে পারবেন সেদিন এ ধরনের প্রটোকল দুর হবে। ভবিষ্যতে সব মসজিদ যেন প্রটোকল মুক্ত হয় আমরা সে আশা করতে পারি। পরিশেষে বলা যায় জ্যৈষ্ঠ ও সম্মানিত ব্যক্তির জন্য মসজিদের প্রথম কাতারে স্থান নির্ধারিত থাকতেই পারে কিন্তু তা নিয়ে যেন অধীনস্থরা বাড়াবাড়ি করে না ফেলে সেটা লক্ষ রাখাটা অত্যন্ত জরুরী।


------------------------------------------------------------

আমার লেখাটি বন্ধুদের গ্রুপ মেইলে পাঠালে তাদের প্রতিক্রিয়া দেয়া হল:

Akbar
Ha ha... True..

Akbar...

sabbir

Interesting and meaningful..Bhalo laglo dost...

Best, Sabbir

Zabed Sultan
Dear Tarek,
Assalamualaikum
I find you are keen observer.
What's the guideline about it in Islam? I am not sure but I have heard it used to practised in Arab also. Regards.

'sayeed mahmudul hasan' 
মসজিদে মুরুব্বীদেরকে সামনে বসতে দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার শিষ্টাচার শুরু থেকেই সার্ব্জনীন ভাবে গ্রহনযোগ্য, গৃহীত এবং স্বীকৃত। মুসলমানদের জন্য মসজিদ হল ওই কমিউনিটির পার্লামেন্ট, তাই প্রটোকল অনুযায়ি ওই সমাজের মুরুব্বী এবং গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদেরকেই সামনে বসতে দেয়াটা শিষ্টাচার। আমরা নিশ্চই চিন্তা করতে পারিনা যে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে যখন আসবেন তখন যেখানে জায়গা পাবেন তখন সেখানে বসবেন!। আমরা অনেক সময় ভুলে ইসলামের চর্চাকে শুধুই অন্য সকল ধর্মের সঙ্গে তুলনা করে ভাবতে পছন্দ করি। এই চর্চাগুলো সমাজ ব্যবস্থা পরিচালন এবং সঞ্চালনের অংশ, যা অন্য ধর্মাবলম্বীরা সমাজ ব্যবস্থা থেকে ধর্মকে আলাদা করে ফেলেছে। 
আর যারা (Under commands/ community managers) সব সময় ভালো চর্চাকে আরো বেশী ভালো দেখানোর চর্চা করেন  এবং সম্মানিত-জনেরা সম্মানকে নিজের অধিকার মনে করেন এবং ভালো চর্চাকে নিজের মত ব্যবহার করেন তাঁদেরকে দিয়ে সঠিকটা বিচার করা মুশকিল! আমরা বলতে পারি সামাজিক শিষ্টাচারের সুস্থ চর্চা করার মানুষ দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। সত্যিকারের ভালটা সব সময়ের জন্যই ভাল। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন।

আমার প্রতিউত্তর:
মাহমুদুল,
অনেক অনেক ধন্যবাদ। মূল্যবান মতামত দেয়ার জন্য।
আমি আমার ইউনিট আরটিদের সাথে আলোচনা করে তোমার মত উত্তর পেয়েছি। আর বেসামরিক ইমামদের সাথে অলোচনা করে অন্যরকম উত্তর পেয়েছি। তাদের বক্তব্য আল্লার ঘরে সবার সমান অধিকার। যখন যে আসবেন সেখানে বসবেন। স্থান নিদ্দিষ্ট করে, তার জন্য রাস্তা করে রাখার নিয়ম নেই। তবে জনমতের ডিমান্ড অনুযায়ী অতিথিরা বা সন্মানিত ব্যক্তিদের অনেক সময় ঈমামরা সামনে ডাকেন। রাজত্ব, বাদশাহী, প্রটোকল, কমান্ড, সন্মান ও প্রতিপত্তির বহি:প্রকাশ মসজিদ এলাকায় অনেকেই কম করেন। যা কিনা সাম্যতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন হয়। মসজিদ প্রটোকল নিতেন না, যেমন আমি উদাহরন দিয়েছি ব্রিগে: জেনারেল (অব:) এ কে মাহবুব ও মেজর জেনারেল (অব:) মুজাহিদ (সাধারনত জামাতে পিছনে বসতেন)। এরা কিন্তু অতবেশী ব্যর্থ নয়, হয়ত বা আমাদের অনেকের চেয়ে বেশী সন্মান ও পতিপত্তি পাননি। কিন্তু তারা আমার মত দুই একজনকে ভাল বিষয় শিখিয়েছেন। আর এজন্যই আমার এ লেখা। হয়ত বেশী দিন দূরে নয়। আমাদের মাঝে কেউ কেউ সব্বোচ্চ র‍্যাংক পরিধান করে সাধারনের মাঝে কর্মে অসাধারন হবেন।
আমরা কেউই প্রচলিত নিয়মের বাইরে যেতে পারিনা। আমার এ লেখা শুধু দীর্ঘ অভিজ্ঞতার মজাদার অনুভুতি শেয়ার করা। শুধুমাত্র মজা করার জন্য লেখা। কারন কমান্ড হত ব্যক্তিগত স্টাইল। আর সেনা স্থাপনার মসজিদ হল কমান্ডেরই অংশ। তাই প্রটোকল অবধারিত। আমি আগেই বলেছি। একসময় কাতারের মাঝে লাল গালিচা দিয়ে প্রধান কর্মকর্তার প্রটোকল দেয়া হত। এটা থেকে আমরা সরে এসেছি। যে কোন কমান্ড পুনরায় এটা চালু করতে পারে। কারন আরটিরা সাপোর্ট দিবে। অন্যায় কিছু নেই। আমরা যত কম প্রটোকল নিয়ে নামাজে আসব। ততবেশী মসজিদের সাম্যতা বজায় রাখব।
আমি একজন অধিনায়ককে পেয়েছিলাম, তিনি একেক জামাতে একেকজন চতুর্থ শ্রেনীকে পাশে নিয়ে নামাজ পড়তেন। তবে এগুলো হল লোক দেখানো বাড়াবাড়ি। পরিশেষে আমি আবারও বলব, আমাদের যারা কমান্ডে আছে তারা তাদের যেমন প্রয়োজন প্রটোকল অবশ্যই নিবে। কারন অনেক কষ্ট ও সাধনায় তারা কমান্ড পেয়েছে।
আমার লেখাটি মূলত অভিজ্ঞতার আলোকে মজা করার জন্য লেখা। কিছুটা মজা দিতে পারলে ভাল লাগবে।
sayed9090@gmail.com

Assalam friends. 
Good reading indeed. Wanted to contribute to the good discussion based on my little understanding. 

Masjid used to be the center of social (even state) activities during early stage in Islam, while 5 times prayer had always been the prime purpose. 

We know that companions used to compete each other to occupy the first row in masjid (during prayer) due to huge rewards mentioned by our Prophet (saw). Muslim Leader was always the Imam to lead prayers, for whom a place was designated. Other than that someone who can assist the Imam during prayer. if needed like correcting/reminding during Qirat/Tilawah should stand closer to Imam. 

This sounds more logical to me. 

Arabs & Saudis (influenced by the Kings) have brought lot of red carpet practices in their society (including masjids) that are well established in many Muslim countries too. This is unfortunate!

Please don't treat this as Fatwa/Rulings, it's my own view and you should have yours. 

Warmest regards,
Sayed

Yousuf (ইউসুফ) 
"আমার লেখাটি মূলত অভিজ্ঞতার আলোকে মজা করার জন্য লেখা কিছুটা মজা দিতে পারলে ভাল লাগবে।" 

- ভাই সরকার, মজা দেওয়া বা মজা পাওয়ার জন্য মসজিদ কে মনে হয় না আনলেও হইত। 'মজার' জন্য অনেক টপিক আছে। এই বিষয়টা মজার না বরং এ থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। এখানে শরীয়ত বা হাদিসের কোন রেফারেন্সের আলোকে আলোচনা করলে লাভ হইত।
আমার উত্তর:
ইউসুফ আসসালামুআলাইকুম,
অনেক দিন পর তোমার রেসপনস্ দেখে খুশি হলাম। “মজা করার বিষয়টি মসজিদ নয়”। প্রটোকল। জৈষ্ঠ্য কর্মকর্তা একজন বসছেন কাতারের পিছনে আবার কেউ বসছেন সামনে নির্ধারিত স্থানে। কেউ কাতারের মাঝে যাওয়ার রাস্তা রাখতে নিষেধ করছেন। কেই বা রাস্তা রাখাটা আশা করছেন। এটা নিশ্চয়ই মজাদার বিষয়। এর মাঝে ফতোয়া না খুজে কমান্ড যেটা চায় সেটা করাই উত্তম নয়কি। কারন পক্ষে/বিপক্ষে শক্তিশালী লজিক আছে।
“হুম শান্তি। সকলের সকল প্রাণী ঝগড়া বিবাদ ভুলে ষুখে থাকুক”


Ahmed Abu Insaf

Dear Sarkar,

Interesting topic ...

Some overdo their power 
Some overdo their humbleness 
Both are greedy...

I feel - If people requesting you front row, honor their request ..
Don't support special place to be vacant / keeping special Jaynamaz/ red carpet  ... 

Rgds, A Insaf


 
'Akbar'
Insaf..
Bah.... U wrote excellent..,
Sarkars one was: la jabab...

Hasan imam 
Dear, Assalamulaikum.
I suppose there is no scope to justify your own thought/ idea in Islam where Sahi Hadit and Verses from Holy Quran exists.
I shall go with the points fwd by Sayeed.
There is no protocol in the Mosque.
People coming earlier should occupy the front row to earn more Sawab.
We shouldn't try to be smart to Almighty Allah by sacrificing our scope of earning more Sawab. Likewise, we should not try to offer full FAROZ during journey where our Prophet( pbuh) used to shorten the prayer.
Obeying is SMART.

Abdullah Al Maksus

Sarkar,
Lekha valo hoise
Mojao hoilo abar lesson o paowa gelo
Tumi chalai jao, Bondhu.

Maksus

আমার উত্তর:
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি জু’আর দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়সে যেন একটি উট কুরবানী করলদ্বিতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানী করলতৃতীয় সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানী করল। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। আর পঞ্চম সময়ে যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্যতখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।” (বুখারীঃ ৮৮১ইফা ৮৩৭আধুনিক ৮৩০)
"যে ব্যাক্তি আদব রক্ষা করে জুম’আর সালাত আদায় করে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সমান সওয়াব লিখা হয়।"
আউস বিন আউস আস সাকাফী (রাঃ) থেকে বর্ণিতরাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “জুমা’আর দিন যে ব্যাক্তি গোসল করায় (অর্থাৎ সহবাস করেফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করেপূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করেপায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোন কিছুতে আরোহণ করে নয়)ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসেমনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনেকোন কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে নাসে ব্যাক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।” (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯৫৪১৬২১৮)

আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন আমরা যখন মসজিদে যাই তখন সেখানে তিন ধরনের মানুষ দেখতে পাইযা হুজুর (সা:) এর নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়:
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জুম’আর সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। (ক) এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করেতারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না। (খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুম’আয় হাজির হয় সেখানে দু’আ মুনাজাত করেফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না। (গ) তৃতীয় প্রকার লোক হল যারা জুম’আয় হাজির হয়চুপচাপ থাকেমনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনেকারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় নাকাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুম’আর মধ্যবর্তী ৭ দিন সহ আরও তিনদিন যোগ করে মোট দশ দিনের গুনাহ খাতা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।” (আবু দাউদঃ ১১১৩)



Thursday, May 7, 2015

এনার্জি এ্যাফিশিয়েন্ট ৪৮ ভোল্ট ডিসি ও ২২০ ভোল্ট দ্বৈত লাইন

এসি বিদ্যুৎ আর ডিসি বিদ্যুৎ দুই ধরনের বিদ্যুতের ব্যবহার আমরা প্রতিনিয়ত করছি। এনার্জি এ্যাফিশিয়েন্ট সিএলএফ লাইট বা বর্তমানে চালু কৃত এলইডি লাইট আমরা ডিসি এসি যে কোন বিদ্যুতেই ব্যবহার করতে পারি। এনার্জি এ্যাফিসিয়েন্ট( সিএলএফ) লাইট যখন বাজরে আসল তখন দেখা গেল তাতে ইলেকট্রনিক্স সার্কিট ব্যবহার করা হয়েছে। কোন ডিভাইস বা যন্ত্রে যখনই ইলেকট্রনিক্স সার্কিট ব্যবহার হয় তখনই এসি হতে কনভারসন করে ডিসি বিদ্যুতের ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। এখন এনার্জি এ্যাফিসিয়েন্ট( সিএলএফলাইটের থেকেও আরো এ্যাফিশিয়েন্ট লাইট বেরিয়েছে আর তা হল এলইডি লাইট। এনার্জি লাইট থেকে ৩০ থেকে ৫০% এফিশিয়েন্সি পাওয়া যাচ্ছে। এই এলইডি লাইট মূলত: ছোট ছোট অনেক লাইটের (লাইট ইমিটিং ডায়োডসমাহার আর এই ছোট লাইটগুলো অল্প বিদ্যুৎ এ চলে। যেহেতু অল্প বিদ্যুৎ ও ডিসিতে এলইডি লাইটগুলো জ্বলে তাই এসি উচ্চ ভোল্টে এগুলো চালাতে হলে এসি হতে লো ভোল্টেজ ডিসিতে কনভার্ট করতে হয়। আর কনভার্টের ক্ষেত্রে যত বেশী কম কনভারসন তত বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয়। সোলারের সেল লো ভোল্টেজ ডিসি বিদ্যুৎ তৈরি করে। সেই সেলগুলো সিরিজ প্যারালাল করে আমরা নির্দিষ্ট ভোল্টেজ ও ওয়াটেজ এর বিদ্যুৎ পাই।
অপরদিকে লো ওয়াটের ব্রাশলেছ ডিসি মটর চালু হয়েছে। যাকে বলা হয় বিএলডিসি মটর। এখন সিলিং ফ্যান বের হয়েছে যা ডিসি পাওয়ারে চলবে। এসব ফ্যান হয়তবা তুফানের মত ঝড়ো গতিতে ঘুরবে না। কিন্তু এটা ঘুরবে মাধ্যম গতিতে আর এতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে এসি বৈদ্যুতিক পাখার চার ভাগের এক ভাগ। যেখানে এসি বৈদ্যুতিক পাখা ৮০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে আর সেখানে ডিসি বৈদ্যুতিক পাখা খরচ করে মাত্র ২০ ওয়াট। অন্য একটা বড় সাশ্রয় হল যখন এসি ফ্যান অর্ধেক গতি বা তার কম গতিতে চালানো হয় তখন বিদ্যুৎ ব্যবহার বা খরচের তেমন কোন তারতম্য হয় না। কিন্তু ডিসি পাখার ক্ষেত্রে এ বিদ্যুৎ অর্ধেক কমালে বিদ্যুৎ খরচও অর্ধেক হয়ে যায়। এভাবে সার্বিক ভাবে ডিসি বৈদ্যুতিক ফ্যান অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।

আমি ইন্টারনেট হতে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখে একটা আইডিয়া পেয়েছিলাম। বেশ কিছুদিন আগে দেখেছিলাম তাই ভিডিও ও তার লিংক আমার সংরক্ষণে নাই। আইডিয়াটা হল আমরা আমাদের গ্রিড লাইনে দুই ধরনের ওয়ারিং করতে পারি একটি হল ৪৮ ভোল্ট ডিসি আর অপরটি হল ২২০ ভোল্ট ভোল্ট এসি। এই ৪৮ ভোল্ট ডিসি পাওয়ার ব্যবহার হবে ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিট, লাইট ও ফ্যানের জন্য। আর ২২০ ভোল্ট এসি ব্যবহৃত হবে এসি, ফ্রিজ ও টিভি ইত্যাদি চালনা করার জন্য। হেভি ওয়াটের লোড বা এসি লাইনগুলোর ওয়্যারিং হতে পারে বাসা বাড়ির দেয়ালের নীচের দিকে যেখানে ফ্রিজ ও ইত্যাদি থ্রি পিন সকেট লাগানো হয়। অন্যদিকে দেয়ালের উপরের দিকের ওয়ারিংগুলো হতে পারে ডিসি ৪৮ ভোল্ট বা ১২ ভোল্ট। হিসাব করে দেখা গেছে ডিসি ৪৮ ভোল্টর লাইনে আমরা নিন্মবর্নিত দ্রব্যাদি চালাতে পারি:
. এলইডি টিউব লাইট ৫টি x২০ ওয়াট=১০০ ওয়াট
. ফ্যান তিনটি =৩টি x ২০ ওয়াট=৬০
. বাথরুমের ও অন্যান্য লাইট=৮টি x ৫ ওয়াট=৪০
. ল্যাপটপ একটি ৪০ ওয়াট
. এলইডি টিভি ৬০ ওয়াট
. মোবাইল চার্জার, রাউটার, সুইচ ও অন্যান্য ইলেক্টনিক্স গেজেট ১০০ ওয়াট
.রিজার্ভ ১০০ ওয়াট
. সর্বমোট: ৫০০ ওয়াট
এই ৫০০ওয়াট বিদ্যুৎ বৈদ্যুতিক লাইনে লাগাতার থাকবে কখনও লোড শেডিং এর আওতাভুক্ত হবে না। অন্য দিকে এসি ২২০ ভোল্ট লাইনে এসি, ফ্রিজ, কুকার, ওয়াশিং মেশিন, ডিশ ওয়াসার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ইত্যাদি যাবতীয় হেভি লোড চলবে। এই এসি লাইন প্রয়োজন মোতাবেক লোড শেডিং এর  মধ্যে থাকবে।
সর্বদা ৫০০ ওয়াট ৪৮ ভোল্ট বিদ্যুৎ পাওয়া তা কিন্তু বিশাল ব্যাপার। ফ্যানের বিষয়ে বিএলডিসি সিলিং ফ্যান অনেক জোরে বাতাস না দিলেও তাও স্বস্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
দ্বৈত লাইনের ক্ষেত্রে আমরা ৪৮ ভোল্ট বেছে নিয়েছি কারণ ৪৮ ভোল্ট লাইন বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য অনেক বেশী সুবিধা দিবে। অপরদিকে বহুল ব্যবহৃত ১২ ভোল্ট ট্রান্সমিশন ভাল নয়। ২০/৩০ ফুট দুরে বিদ্যুৎ নিতেই ভোল্টেজ ড্রপ হয়। মোটা তার লাগে। তাই মোটামুটি চিকন তার দিয়ে ৪৮ ভোল্টে বিদ্যুৎ পরিবহন করানো যাবে।  আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ৪৮ ভোল্টে কমদামী এলুমিনিয়াম তার দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা যাবে। এর জন্য মূল্যবান তামার তার ব্যবহার না করলেও চলবে।
৪৮ ভোল্ট ডিসি পাওয়ার গ্রিড লাইন থেকে বাসায় আসবে। আর গ্রিডের পাওয়ার হতে পারে ১০০০ বা ৩৬০ ভোল্ট ডিসি। এই ডিসি সাব স্টেশনের এসি বিদ্যুৎ থেকে রেক্টিফায়ারের মাধ্যমে কনভার্ট করে অতিরিক্ত ফেজ লাইন হিসাবে প্রবাহিত থাকবে। এ লাইনে আলাদা মিটার হবে। দ্বৈত লাইনের ট্রান্সমিশন হবে এলাকা ভিত্তিক হয়ত ২০ টি বাড়ীর জন্য একটি ১০ কিলোওয়াট ডিসি-ডিসি কনভার্টর বসানো হবে। ১০০/২০০ কিলোওয়াটের জন্য একটি সাব স্টেশন থাকবে।

দ্বৈত লাইনের উপকারিতা হল বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য সর্বদা লোড শেডিং ছাড়া বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা প্রায় কঠিন একটি কাজ। আবার বিদ্যুতের লোডের বিচারে আমরা দেখতে পাই লো ভোল্টেজ লোড আর হাই ভোল্টেজ লোড। আমরা হাই ও লো ভোল্টেজ লোড আলাদা করতে পারলে আমরা যে উপকারটা পাব তা হল আমরা খুব সহজে লো ভোল্টেজের জন্য সোলার পাওয়ার সংযোগ দিতে পারব। এমনকি আমরা এমন ব্যবস্থা করতে পারি যাতে ৪৮ ভোল্ট ডিসি বিদ্যুৎ সরাসরি সোলার প্যানেল থেকে যুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ এর ডিমান্ড কমিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অন্যদের দিতে পারবে। আমেরিকায় লো ভোল্টেজ লাইনে স্ট্যান্ডার্ড ২৪ ভোল্ট পরিকল্পনা করেছে। অপর দিকে ভারত ৪৮ ভোল্টর গ্রিড লাইন পরিকল্পনা করেছে। আমেরিকানরা ৪৮ ভোল্টের প্রবাহ রিস্ক মনে করছে তাই তারা ২৪ ভোল্ট লো ভোল্টেজ লোডে ব্যবহার করছে। বর্তমান যুগে লো ভোল্টেজ লোডে সোলার পাওয়ার সহজেই যোগ করে অনেক বেশী এ্যাফিসিয়েন্ট তৈরি করা যায়। এসি কারেন্টের গ্রিড টাই সিস্টেমে অনেক বেশী কনভার্সনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর এ ব্যবস্থায় সোলার পাওয়ার সরাসরি লো ভোল্টেজ গ্রিডে দিয়ে অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়। আমার এ প্রস্তাবটি হয়তবা অনেক বেশী আগে চিন্তা করে ফেলেছি। হয়তবা ২০৫০ সালের দিকে এ ধরনের  ধারনা ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হতে থাকবে।