২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি হতে ২০১৬ জানুয়ারি মাস পর্যন্ত
আমি অনেক অনেক রচনা লিখতে পেরেছিলাম। আমার শব্দের উৎপাদনশীলতা বেশী ছিল। এর আগে
প্রায় সাত/আটমাস আবার আমি কিছু লিখতে পারিনি। উৎপাদন শীলতা বা মুক্ত চিন্তার মধ্যে
টেনশন বা অস্থিরতা একটা ভয়াবহ সমস্যা। আমি নিজে টেনশন কম করি। তবে অন্য কেউ চাইলে
আমার মাঝে টেনশন বা অস্থিরতা অহেতুক দিয়ে দিতে পারে। এটা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি
না। আর এটা পারে আমি মানুষের কটূক্তি আর খারাপ ব্যবহার দুইটিকে ভয় পাই। কারণ আমি
নিজে খারাপ ব্যবহার করতে পারি না বলে অন্যদের কটূক্তি আর খারাপ ব্যবহার আমার মাঝে
বিশাল পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করে। অনেকেরই অন্যদের সাথে কারণে অকারণে খারাপ
ব্যবহার করার অভ্যাস আছে। তাদের অন্যের কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার বা কটূক্তি শুনলে
তাদের তেমন একটা প্রভাব বিস্তার করে না।
আমার অভিঞ্জতায় দেখলাম মানুষ মূলত টেনশন বা সমস্যা
সৃষ্টি করে অহেতুক কিছু পরিবর্তন আনতে গিয়ে। এই পরিবর্তনগুলো হল আগে যেভাবে চলছিল
তা ভাল হলে ভিন্ন কিছু করা। নিজের কৃতিত্ব জাহির করার জন্য নতুন নতুন আইডিয়া জাহির
করা। তারা মূলত কাজটি কিভাবে গতিশীল বা ভালভাবে সম্পন্ন করা যায় সেটা চায় না।
তাদের মাথার মধ্যে থাকে কেমনে অন্যদের চেয়ে আলাদা হওয়া যায়। তাদের এই ক্যামনে
অন্যদের থেকে আলাদা হওয়া যায় তা রক্ষা করতে গিয়ে অধীনস্থদের নাভি:শ্বাস উঠে যায়।
তারা জানে সাময়িক সময়ে যতটুকু পারা যায় পয়েন্ট কামিয়ে নিয়ে কেটে পড়া। এর জন্য
অন্যদের ছুটি থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়ে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত বা অশান্তি হল তা
বিবেচনায় আনে না। আমরা অনেকেই আছি নিজেদের ব্যক্তিগত প্রমোশন বা উন্নতির জন্য এত
বেশী তৎপর থাকি তার জন্য আর কয়জন চাপে শুয়ে পড়ল তা বিবেচনায় আনি না। একবার একজন
বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি পড়েছিলাম আমরা সবাই প্রতিযোগীতায় লিপ্ত কখন থামতে হবে
জানি না,
সবাই ছুটে চলেছে। তবে বুদ্ধিমানরা আবার থেমে দম নেয় ও নিজেকে
রি-চার্জ করে নেয়। আমি যখন প্রতিযোগীতায় লিপ্ত তখন আমার অধীনস্থরা না চাইলেও আমার
দৌড়ের সাথে না দৌড়াক অন্তত জোরে হাটতে হবে। এইরূপ কিছু মাস জোরে হাটা, কিছু মাস দৌড়ানো আবার আস্তে হাটা ইত্যাদি নিশ্চিতভাবে কষ্টকর। তবে উত্তর
আছে। একবার একটা উক্তি শুনেছিলাম “সরকারী বস কয়েকমাস পর পর বদলে অধীনস্থদের
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ্যাডজাষ্ট করতে করতে জীবনে অশান্তি আসে”। সামরিক ও
বেসামরিকের মধ্যে একটা প্রধান পার্থক্য হল সামরিক ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত রিলেশন ভাল
মন্দ এটা গুরুত্ব না দিয়ে কাজের বিষয়টি
গুরুত্ব দেন। অন্যদিকে বেসামরিকরা বার বার ব্যক্তিগত রিলেশন নতুন নতুন ব্যক্তির
সাথে রক্ষা করতে গিয়ে হয়রান হয়ে যায়। অবশ্য এটা চিরাচরিত ভাবে সত্যি যে, যে ব্যক্তিরা নিজেদের কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাদের বসের
পরিবর্তনে তেমন একটা সমস্যা হয় না। সমস্যা তখনই হয়, যখন দক্ষ
ব্যক্তিরা যেভাবে অভ্যস্ত সেভাবে কাজটা করতে না পারা। দক্ষ ব্যক্তি দক্ষতা পেয়েছে
কারণ কাজের মধ্যে কিছু সহজ সরল সমাধান সে বের করে কাজটাকে সহজ করে নিয়েছে। আর তা
বের করেছে তার দীর্ঘ দিনের অভিঞ্জতা থেকে। নতুন বস এসে যদি দক্ষ ব্যক্তিকে অদক্ষ
রাস্তায় কাজ করাতে থাকে তখন দক্ষ ব্যক্তির দক্ষতা কমে যাবে ও অসন্তোষ বেড়ে যাবে।
আর এভাবে নতুন বস নতুন পরিবেশ দক্ষদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটাকে অন্যভাবেও আমরা
বিবেচনায় আনতে পারি। একটা প্রতিষ্ঠান দুর্বল পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হতে
হতে হঠাত সবল পরিচালনা পর্ষদ আসলে সবাই অধিক পরিমাণ কাজ ও নতুন ভাবে চাপের মধ্যে
পড়ে। এটা স্বাভাবিক। মানুষ দীর্ঘদিন যদি চাপযুক্ত পরিবেশে থাকে তাতেই সে অভ্যস্ত
হয়ে যায়। আবার চাপ হীন কর্মহীন পরিবেশেও মানুষ অভস্থ্য হয়ে যায়। শুধু সময়ের
ব্যাপার। যে কোন পরিবেশেই মানুষ টিকে যেতে পারে।
টেনশন ও অস্থিরতা থেকে আমাদের সর্বদা বাইরে থাকতে হবে।
টেনশন ও অস্থিরতা আমাদের শেষ করতে হবে। এর মধ্য থাকা চলবে না। আপাতত সহজ সমাধান হল
কথা না বলা ও ধৈর্য ধারণ করা। কারণ এই
পৃথিবীর সবকিছুই পরিবর্তনশীল।