আজ থেকে প্রায় ৮/১০
বছর আগে ক্যাবল টিভিতে ডিশটিভি, এয়ারটেল, ভিডিওকন
ইত্যাদি ডাইরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) টিভির
বিঞ্জাপন দেখে দেখে ভাবতাম কবে আমাদের দেশেও এগুলো আসবে আমাদের বাংলাদেশের চ্যানেল
নিয়ে। এটা অনেক দেরীতে হলেও আমাদের দেশে ডিটিএইচ চালু হয়েছে। বাংলাদেশের
প্রতিষ্ঠান এটা চালু করেছে। ২০১৪ সালে স্মার্ট টিভি কেনার পর থেকেই পরিষ্কার ও
ঝকঝকে ছবি দেখার জন্য ডিটিএইচ খোজ করছিলাম। আমাদের অনেক সৌখিন ব্যক্তিরা স্মার্ট
টিভিতে এইচডিএমআই ক্যাবল(অডিও ও ভিডিও ইনপুটের মত ইউএসবি ক্যাবলের অনুরুপ উন্নত
ইনপুট ডিভাইস)দিয়ে অনেক আগে থেকেই হয়ত পেমেন্টে ভারতীয় চ্যানেল দেখতেন। ভারতের ডিটিএইচ
এর মার্কেট বেশ প্রসারিত ও প্রতিযোগিতা সম্পন্ন।
যদিও পোস্টিং এর
চাকুরী তথাপিও আমার দুই ছেলের আগ্রহের কারণে বিশেষ করে বিভিন্ন খেলা দেখার ছুতায়
আমাকে বাংলাদেশের নতুন চালু হওয়া ডিটিএইচ কেনার আর্জি করে। আমার অনেক দিনের শখ
স্মার্ট টিভিতে পরিষ্কার ছবি ও শব্দে টিভি দেখা। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় ক্যাবল
অপারেটররা যতই ভাল কানেকশন দেয় না কেন তাতে সমস্যা থেকেই যায়। এছাড়া মাঝে মাঝে
ক্যাবল কাটা যাওয়ার কারণে ডিশ লাইন বন্ধ থাকে। কুষ্টিয়ার মিরপুরে ১৫০ টাকা মাসে
দিয়ে বাসায় ডিশ লাইন দেখছি। রিয়াল ভিউ ডিটিএইচতে ৩০০ টাকা দিতে হবে। এককালীন ৭৫০০
টাকা খরচ। অনেক বড় খরচের ধাক্কা। তবে সমস্ত খরচ পুষিয়ে যায় যখন ঝকঝকে ছবি ও
পরিষ্কার শব্দে মনটা ভরে যায়। একবার ডিটিএইচতে পরিষ্কার ছবি ও শব্দে অভ্যাস হলে
পরে সাধারণ ক্যাবল টিভি দেখাটা কষ্টকর। এইচডি চ্যানেলগুলো অসাধারণ দেখা যায়।
টিভি চ্যানেলের
ট্রান্সমিশন এত ভাল মনে হয় ঢাকা ব্যতীত অন্য কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। ঢাকার
অপারেটররা সেটটপ বক্স দেয়া শুরু করেছে ভাল ছবি দেখার জন্য। তবে সেটটপ বক্স তিন
হাজার পাঁচশত টাকায় কিনে মাসে মাসে ৩০০ টাকা খরচ করার চেয়ে আরো কিছু টাকা খরচ করে
ছোট ডিশ লাগিয়ে নিয়ে ডিটিএইচ ব্যবহার করাটা একটা ভাল আইডিয়া হতে পারে। ক্যাবল অপারেটরদের
মেনটেন্যান্সগত সমস্যা থাকে আর তদুপরি তারা সহজে অভিযোগ নেয়না বা লাইন ভাল রাখতে
সদা প্রস্তুত নয়। এই হিসাবে ছোট ডিশ ঝড় বৃষ্টিতে তেমন উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
ডিশটা না উল্টালে বাকী কোন কিছুই নষ্ট হওয়ার নয়। ক্যাবলের সেটটপ বক্সের মত এটিও
ভালই চলবে।
ভারত সরকার বেশ
কয়েকমাস হল (২০১৬ সালের মার্চ/এপ্রিল) ক্যাবল টিভি অপারেটরদের জন্য সেটটপ বক্স
বাধ্যতামূলক করেছে। এটার মূল কারণ হতে পারে যথাযথ ভাবে সরকারের রেভিনিউ পাওয়া।
সেটটপ বক্সের সার্ভারে সব তথ্য থাকে। তাই ক্যাবল অপারেটরের লাইন সংখ্যা ও সরকার
কর্তৃক ভ্যাট আদায় করাটা সহজ এবং ক্যাবল অপারেটররা আইটি ও ভ্যাট ফাকি দিতে পারে
না। আমাদের দেশে কয়েক বছর পর এগুলো চালু হবে তা নি:সন্দেহে বলা যায়। তবে যতদিন
পর্যন্ত না অন্যান্য সেটটপ বক্স চালু হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের ডিটিএইচ
রিয়েল ভিউ লাগানোর আইডিয়াটা মন্দ নয়। যারা ঢাকার বাইরে চাকুরী বা অন্য কোন কারণে
অবস্থান করেন তাদের জন্য ডিটিএইচ অনন্য একটি অপশন।
২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল
পর্যন্ত আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকাকালীন ক্যাবল টিভির ২৫/৩০ টি চ্যানেল দিয়ে
ক্যাবল লাইন করে নিয়েছিলাম। তখন ভাল চ্যানেল ও পে চ্যানেল দেখাটা ছিল বিশাল খরচের
ধাক্কা। ৩০০ টাকা মাসিক দিয়ে এখন শতাধিক চ্যানেল দেখা সম্ভব। এতে দেশী সকল
চ্যানেলের পাশাপাশি অগণিত পে চ্যানেল পাওয়া যাচ্ছে। এখন যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম
বা অন্য কোন রিমোট স্থানে চাকুরী করে তাদের জন্য বাংলাদেশের রিয়াল ভিউ ডিটিএইচ ভাল
সমাধান। বাংলাদেশের সকল স্থানে মোবাইল নেটওয়ার্কের কারণে থ্রিজি ইন্টারনেট কানেকশন
পৌঁছে গেছে। এখন রিয়াল ভিউ এর মাধ্যমে রাজধানী বা বড় শহরের মত ক্যাবল টিভির
চ্যানেলও পৌঁছে গেল। ঢাকার বাইরে চাকুরী বা সেটল হতে আর কোন বাধা থাকল না। এখন
রাজধানীর বাইরে প্রয়োজন ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল। সেটাও এক/দুই যুগের
মধ্যে পাওয়া যাবে। আমি আশাবাদী।
আমার মনে হয় আরো
কিছু কোম্পানিকে ডিটিএইচের লাইসেন্স প্রদান করা প্রয়োজন। তাহলে প্রতিযোগিতা থাকবে
এবং গ্রাহকরা ভাল সার্ভিস পাবে। একটি কোম্পানি মনোপলী করে ব্যবসা করলে গ্রাহকদের
স্বার্থ রক্ষা হবে না। রিয়াল ভিউ এর ওয়েব সাইট থেকে এদের বিষয়ে অনেক কিছু জানা
যাবে। “Realvubd”
লিখে সার্চ দেয়া যেতে পারে। অথবা ভিজিট করতে পারেন: https://realvubd.com
রিয়াল ভিউ সেটটপ
বক্স ও এলএনবি আরো উন্নত হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেক জেলায় এদের ডিলার থাকা প্রয়োজন।
কারণ প্রতি জেলায় এখনও ডিশের সামগ্রী বিক্রতা আছে। তাদের ডিলারশীপ দেয়া প্রয়োজন।
আমি কুষ্টিয়াতে লাগানোর জন্য নিকটবর্তী জেলা রাজবাড়ী থেকে লোক এনে লাগাতে হয়েছে।
এতে দুর থেকে লোক আনার ভাড়ার খরচ ও খাবার খরচ দিতে হয়। সেনাবাহিনী ও বিজিবিতে
অনেকেই রিমোট ক্যাম্পে থাকে। রিমোট ক্যাম্পে লাগাতে হলে নিজস্ব টেকনিশিয়ানদের
ট্রেনিং দিলে তারাই সংযোগ দিতে পারবে। অন্যথায় ডিশ বসানোর জন্য বেশ কিছু টাকা খরচ
করে ফেলতে হবে। এই সিস্টেমের মাসিক বিল ৩০০ টাকা প্রিপেইড মোবাইলের মত মাসের
প্রথমে পরিশোধ করতে হয়।
সেটটপ বক্সটিতে কোন
অনুষ্ঠান সময়মত দেখতে না পারলে পেন ড্রাইভে রেকর্ড করে পরে দেখা যায়। এই অপশনটি
আমার জন্য বেশ কাজে লেগেছে। কোন কারণে বাইরে গেলে নির্দিষ্ট চ্যানেলে রেকর্ড চালু
করে যাই। ৮ জিবি পেন ড্রাইভে প্রায় ৫ ঘণ্টা ব্যাপী এইচডি চ্যানেল রেকর্ড করা যায়।
এর সেটটপ বক্সটি ১২ ভোল্টে চলায় সোলার সিস্টেম বা ১২ ভোল্টের যে কোন ব্যাটারি দিয়ে
চালানো যাবে। রিমোট ও নন গ্রিড এলাকায় এলইডি টিভির সাথে ১২ ভোল্টের ব্যাটারি দিয়ে এই ডিটিএইচ সহজে ব্যবহার করা যাবে। একটা সমস্যা
আছে অল্প বৃষ্টিতে ছবি আসে বেশী বৃষ্টি হলে ছবি আসে না। এটা এটা বড় সমস্যা নয় কারণ
আমাদের দেশের মুষলধারে বৃষ্টি দীর্ঘ সময় থাকে না।
পরিশেষে আমার কাছে
নতুন হিসাবে এর পারফরমেন্স অনেক ভাল মনে হয়েছে। আশা করি অনুন্নত ও দূগর্ম এলাকার
জনগোষ্ঠীর জন্য চমৎকার একটি ব্যবস্থা হবে। বদলীর চাকুরী যারা করেন তাদের জন্য
উন্নত ছবি ও শব্দের চ্যানেল পাওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া গেল। বদলীর সাথে সাথে ডিশ আর
সেটটপ বক্স সাথে রাখলেই হল। আমার এ লেখাটি আশা করছি দূগর্ম এলাকায় অবস্থানকারীদের
উপকারে আসবে।