২০০২ সালে আমি যখন ইউএন মিশনে
সিয়েরালিওন গেলাম তখন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের অনেক সুযোগ পাই। তখন আমি পিডিএফ বই
ই-বুক ব্যাপক ভাবে ইন্টারনেটে পড়ার সুযোগ পাই। প্রাথমিক অবস্থায় আমি ইন্টারনেট হতে
ডাউন লোড করে প্রিন্ট করে বইয়ের মতন বাঁধাই করে ই-বুক পড়তাম। তখন দুই একটি বাংলা বই ই-বুক পাওয়া যেত।মূলত ইংলিশ
বই ই-বুক পাওয়া যেত। কেই কেই চুরি করে নিজ নিজ ব্লগে বাংলাদেশের বিখ্যাত লেখকদের
বই অনলাইনে দিত । সে সকল বই মাঝে মাঝে পড়তাম। এক সময় কম্পিউটার স্ক্রিনে পিডিএফ বই
পড়ার অভ্যাসটা রপ্ত হয়ে গেল। মাঝে মাঝে পিডিএফ ইংরেজি বই থেকে কপি পেস্ট করে
ওয়ার্ডে কনভার্ট করে নিতাম। ওয়ার্ডে কনভার্ড করার মজাটা হল এটাকে বড় করে রিডিং
ভিউতে কম্পিউটার স্ক্রিনে বড় করে পড়া যায়। যা খুব মজাদার। এখনও আমি ইংরেজি বই ওই ভাবে পড়ার একটা অভ্যাস করে রেখেছি। বড়
বড় হরফে ওয়ার্ডের রিডিং ভিউতে পড়ার অভ্যাসটা আজো আছে। এটাই ইংরেজি বই ও বাংলা বই
এডিট ও রিভাইস করার জন্য আমার জন্য খুব মজাদার একটি ব্যবস্থা। কিছুদিন আগে প্রিন্ট
অন ডিমান্ড বা পিওডি সম্পর্কে জানতে পারি। এর আগে আমি পিডিএফ কম্পিউটারে পড়তাম। কিন্তু আমি যদি প্রিন্ট পিডিএফর প্রিন্ট করি, তবে বই পড়ার জন্য কাগজ ও কালি অপচয় হল। এটা না করে আমি সহজেই
কম্পিউটারে পড়তে পারি। এটা পাঠ্য বই না যে আমাকে বার বার করে পড়তে হবে। মুখস্থ করতে হবে। এক বা দুইবার পড়লেই হল। আর তা
ডিজিটাল ফরমেটে একটু কষ্ট হলেও প্রিন্ট করার হিউজ কষ্ট থেকে বাঁচা যায়। আমি তারপর
আর একটি বিষয় সম্পর্ক জানতে পারি। আর তা হল, পেপার লেস অফিস। পেপারলেস অফিস
আমাদের এই পৃথিবীর গাছ কাটা কমিয়ে দেয়ার জন্য ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক বই প্রিন্ট করা মানে অনেক পরিমাণ গাছ
ব্যবহার করা । তাই বই যত কমানো যাবে গাছ কাটা তত কমানো যাবে। দেখতে দেখতে আমাজনে প্রায় ৫৭% পাঠক ই-বুক পড়ে।
মানুষের মানুষিকতায় কত বড় পরিবর্তন। বই ক্যারিং অনেক সময় কমফোর্টেবল নয়। তাই ই-বুকের মাধ্যম বই পড়ুয়ারা বই পড়ে থাকে। মোবাইল
ও ট্যাব বই পড়ার আন্দদটাকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমি ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সেকেন্ড
লেফটেন্যান্ট হিসাবে কমিশন পাওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে বই ও ম্যাগাজিন
কিনতাম। খুব ভাল লাগত। তখন থেকে আমার একটা অভ্যাস ছিল, কোন বই কিনলে আমি তা প্রায়শ:ই বইয়ের ভাঁজ নতুন থাকতে থাকতেই
পড়া শেষ করে ফেলতাম। আমার আর একটা অভ্যাস ছিল ডিকশনারি বা অন্যান্য বই যেটা আমার
মনে হত আমি বার বার পড়ব বা দেখব, সেই সমস্ত বই বাদে, বাকী বই আমি নিজের কাছে রাখতাম না বিতরন করতাম। মনে হত, এই বইটা আমার সেলফে থাকলে সে বইটার ভাল ব্যবহার হল না। কাগজ ও কালি খরচ
করে একটা বই তৈরি করার পর তা একজনের ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। তা ব্যাপকভাবে
ছড়িয়ে যাওয়া উচিত। আমি একটা বই বড়জোর মাস দুয়েক আমার কাছে রাখতাম। তারপর তা বন্ধু বান্ধব যারা বই পড়তে পছন্দ করে, তাদের কে দিয়ে দিতাম। যার ফলে কখনো আমার কাছে বইয়ের কোন স্টক
ছিল না। অনেক বই কেনার পড়ও আমার বইয়ের সেলফ খালী থাকত। আজও আমি এই ধারনা ও চর্চা
নিয়ে চলছি। বই পড়ে অন্যকে উপহার দিয়ে দেই। বাসায় যা বই আছে তা বাচ্চাদের ও স্ত্রীর
কয়েকটা বই। ডিকশনারি ও রেফারেন্স বই ছাড়া আমার বাসায় আমার কোন বই নাই।
আজ অনেক দিন পর আমার কাছে মনে হয় কেন
ই-বুক ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে যায় না। আমরা কেন এত বই কিনব। কিন্তু বই টাচ করে পড়ার
জন্য হার্ড কপির ব্যতীত কোন আনন্দ নাই। তাই আজও আমদের দেশের মানুষের কাছে হার্ডকপি
বই ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে। আজো আমাদের দেশে ব্যাপক হারে বই প্রিন্ট হয়। অনেক আগে
থেকেই আমার মাথায় ঘুরত বই কেন আমি প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রিন্ট করব। বই প্রয়োজনের
অতিরিক্ত প্রিন্ট করব আর তা লাইব্রেরীতে ব্যবহার ছাড়া পড়ে থাকবে এটা কেন হবে। বই
প্রযোজন ছাড়া প্রিন্ট হবে না। গাছ কেটে কাগজ তৈরি করে বইটা তৈরি। পরিবেশ গত দিক
দিয়ে বইটার সংখ্যা বাড়ানো উচিত নয়। তবে কি করা যায়। বই ই-বুকে বেশীর ভাগ ব্যবহার করতে হবে। যারা ই-বুকে কমফরটেবল
নয় তাদের জন্য শুধু প্রিন্ট হবে। পরিবেশ রক্ষা ও গাছ রক্ষার জন্য বইয়ের প্রিন্ট
কমাতে হবে। আমি জানি লেখক ও পাবলিশারটা ক্ষেপে যাবেন। কারণ ব্যবসা কমে যাবে। আমি
বলব ই-বুক আমাজনের মত ওয়েব সাইট হতে পেমেন্টে ডাউনলোড করার প্রভিশন করতে হবে। যারা
হার্ড কপি পড়বে তাদের জন্য কয়টি বই
ডিজিটালী প্রিন্ট করে সরবরাহ করতে হবে।
“প্রিন্ট অন ডিমান্ড” বই হয়ত ছাপার
বই থেকে কিছুটা দাম বেশী পড়বে। কোয়ালিটি কিছুটা খারাপ হবে। তবুও প্রেসের প্রিন্ট
কমিয়ে গাছ কাটা কমাতে হবে । আমি আশাবাদী। পরিবেশের কথা চিন্তা করে মানুষ অপ্রয়োজনীয় বই প্রিন্ট না করে ই-বুক ব্যবহারে
মনোযোগ দিবে। কেবল মাত্র লাইব্রেরীর মত কমন জায়গার জন্য “প্রিন্ট
অন ডিমান্ড”এর মাধ্যমে বই সরবরাহের ববস্থা থাকবে।