Pages

Thursday, March 29, 2018

নন ফিকশন বনেদী প্রবন্ধ লেখকদের হাল হকিকত


নন ফিকশন প্রবন্ধ লেখকরা সাধারণত বনেদী লেখক হন। তা‌দের পাঠক কম। কিন্তু তা‌দের ক‌মিট‌মেন্ট তুলনামূলকভা‌বে বেশী। তা‌দের অনেক পড়‌তে হয়। সামাজিক সমস্যা গু‌লো নিরূপণ কর‌তে হয়। সমস্যার গভীরে যেত‌ে হয়। নিজে নিজে রিসার্চ কর‌তে হয়। বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা কর‌তে হয়। পুরো প্রক্রিয়াটা সময় সাপেক্ষ। ফলাফল "নন ফিকশন" বই‌য়ের পাঠক কম। বিক্রি কম। লেখক‌ের অনুপ্রেরণা কম। তবে প্রবন্ধকারের আতলামী বই বিক্রয় না হলেও বন্ধ হবে না। কারণ আতলামী একটা অভ্যাস। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় প্রবন্ধকার হওয়া বাদ দি‌য়ে প্রেমের উপন্যাস লেখক হ‌য়ে যাই। অন্তত মানুষ‌কে অনেক আনন্দ দি‌তে পারব। রোমান্ট‌িক রোমান্ট‌িক ছোট গল্প লিখ‌তে থাকি। মনটা রোমান্ট‌িক থাকবে পাঠক ও পাঠিকা বাড়বে। অথবা লক্ষ কবির মাঝে কিছু উদ্দাম কবিতা নি‌য়ে‌ ঝাঁপি‌য়ে পড়ি অথবা পৃথিবীর বেস্ট সেলার থ্রিলারগু‌লো মূখ‌রোচক ক‌রে বাংলা ভাষায় উপস্থাপন করি। বাজা‌রে ভাল চলবে। এগু‌লো হল সাময়িক অসংলগ্ন ভাবনা। মূল ভাবনাটা হল আমি আমিই। আমি "নন ফিকশন" প্রবন্ধ লেখক। সেদিন আমার ড্রাইভার বলল, স্যার, আমি আপনার "স্বনির্বা‌চিত কলাম" বই‌টির সব লেখা পড়েছি।
আমি ভাল ফিল করলাম।
তোমার অনুভূতি কি?
"স্যার, আপনি আমা‌দের জীবনের নানা সমস্যা এত সহজ সমাধান দিয়েছেন। আমার খুব ভাল লেগেছে। আমি আপনা‌কে আরো সামাজিক সমস্যা দিচ্ছি যা আপনি লিখ‌তে পারেন।" আমার ড্রাইভার আরো বলল, "আপনার লেখা পড়ার পর আমার চিন্তা ভাবনা ও জানার আগ্রহ বেড়ে গেছে"।
আমি মনে মনে ধন্য মনে করলাম। আমার লেখাগু‌লোর সমাজের নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বেশী আকর্ষণ করবে সন্দেহ নেই। আমার বই‌য়ের" ফ্লাট কেনার ফর্মুলা" ও "ফুল ফলের পরিবর্তে রোগী‌দের নগদ টাকা আশীর্বাদ দেয়া" আটির্ক্যাল দু‌টি ব্যাপক আলো‌চিত হওয়ার পর আর প্রতিনিয়ত বই বিক্রি অব্যাহত থাকায় মনে হল "নন ফিকশন" বই কাটতির চ্যালেঞ্জটা কমছে।
কারণ আমি প্রচার বিমুখ মানুষ ও বিজ্ঞাপন মুক্ত মানুষ। ছোট্ট ক‌রে ছ‌বিসহ আমার বই‌য়ের বিজ্ঞাপন দিতে খরচ হবে প্রায় দশ হাজার টাকা। যা দি‌য়ে প্রায় ২০০ বই আমি বিভিন্ন লাইব্রেরীতে দি‌তে পারছি। প্রকাশক এই যুক্তিতে হার মেনে বলল "আপনি আপনার মতই থাকুন"।
আসলে আমরা আমা‌দের মত থাকার মধ্যেই আনন্দ আছে।
নন ফিকশন বইয়ের আবার বিজ্ঞাপনটা বেশ জটিল। সিনেমার থ্রিলারের মত ক্লাইম্যাক্স দিয়ে গল্প ও উপন্যাসের কিছু অংশ তুলে ধরলে পাঠককে জাগ্রত করা যায়। কারণ পাঠক বিনোদনের জন্য বই যখন পড়ে তখন গল্প ও উপন্যাস লেখক অনেকটা লেখকের নাম ও পরিচয় গুরুত্ব না দিয়ে পড়ে থাকে কারণ পাঠক জানে গল্প ও উপন্যাসে কিছু না কিছু জীবনধর্মী বিনোদন থাকবে। তাই গল্প উপন্যাস পড়ার জন্য পাঠককে আকর্ষন করার জন্য তেমন একটা কসরত লেখক বা প্রকাশককে করতে হয় না।
তবে নন ফিকশন বইয়ের ফ্লাপ কাভার ও সূচীতে বিষয় ভিত্তিক আলোচ্য সূচী পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে। আমি আমার প্রথম বই স্বনির্বাচিত কলামনাম দেয়ার পর অনেক পাঠক আমাকে বললেন নামটা হয়ে গেছে গতানুগতিক। স্বনির্বাচিত কবিতা, স্বনির্বাচিত গল্প, নির্বাচিত কলাম এগুলো বাজারে প্রচলিত নাম। এর থেকে বেরুতে হবে। নন ফিকশন রাইটারদের লেখার নামটি অনেক অনেক গুরুত্ব বহন করে। সাতকাহনআর একটুখানি উষ্ণতার জন্যদুইটি উপন্যাসের দুইটি নামের দুই রকম আনন্দময় পাঠ নির্দেশ করে তবু পাঠক কাছে টানার জন্য উপন্যাসের নাম দুটো চমৎকার।
নন ফিকশন বইয়ে চাপটারে চাপটারে বোল্ড করে কিছু চুম্বক অংশ উদ্দীপক দিলে পাঠক পড়তে আগ্রহী হতে পারে। বইটি যেহেতু আনন্দ অপেক্ষা জানা ও সমস্যা সমাধানমূলক তাই এই বিষয়ে কিছু তথ্য ব্যাক কাভারে রাখতে হবে। আমাদের দেশে ব্যাক কাভার সাধারণত খালী থাকতে দেখা যায়। ব্যাক কভারের ও ফ্লাপের রাইট আপ পাঠক পড়ে এবং এর মধ্যে নন ফিকশন বইটি কেন পড়বে এবং তাতে লাভ কি তা তুলে ধরতে হবে।
নন ফিকশন বই সাধারনত সমঝদার ও বয়সী লোকজন বেশী পড়ে থাকে। তাই নতুন ও ইয়াং পাঠককে এই ধরনের বইয়ে কাছে টানার জন্য টপিকগুলো ইয়াংদের উপযোগী রাখতে হবে। পরিশেষে আশা করি ইয়াংরাও নন ফিকশন বই পড়বে ও আনন্দ পাবে তেমন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। এতেই আমরা প্রবন্ধ লেখকরা সফল হব।

Friday, March 23, 2018

"সপুংশক লেখক" বা টাকা দিয়ে বই ছাপানো লেখক


আমি লেখকদের সাথে কথা বললে প্রকাশক বই ছাপাতে টাকা নিয়েছে কিনা তা জানতে চাই। যার বই আছে তাকেই প্রশ্নটা করি। যারা টাকা দিয়েছে তারা লজ্জায় মেনে নেয় তারা টাকা দিয়েছে। যাদের বই প্রকাশকরা বিনা পয়সায় ছাপিয়েছে তাদের ভাব বা গর্ব আলাদা। এমন ভাব প্রকাশকরা তাদের পা ধরে বসে থাকে। হায়রে লেখক। হায়রে প্রকাশক। আমার প্রথম বই প্রকাশকের প্যাচে পড়ে টাকা খরচ করে ছাপিয়ে আমি সত্যি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি নিজের টাকায় বই না ছাপালে প্রকাশনা শিল্পের এই গ্রে এরিয়াগুলো জানতাম না। টাকা খরচ করে বই ছাপানোর কারণে  আমি বাংলাদেশের জন্য নতুন প্রকাশনার ধারনা প্রবর্তন করতে পারছি।
আমি একজন লেখকের সাথে কথা বললাম। সে জানাল তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশ পাওয়ার পর তা  পুরস্কার পেয়ে গেল। তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তারপর প্রকাশকরা আর পত্রিকাওয়ালা তার পিছনে লাইনে আছে। তিনি লিখে কুলাতে পারছেন না। ভয়ানক সফল লেখক। আর একজন লেখক পেলাম তিনি আমার ফেইস  বুক পোস্টের মধ্যে এ্যাড দিলেন তার বইয়ের। মহা বিরক্তিকর। তাকে ইনবক্স করে জানতে চাইলাম, আপনার বই বের করতে প্রকাশক কত নিল। তিনি দম্ভের সাথে বললেন, কেন টাকা দিব। আমার লেখা যাচাই বাছাই করে নওরোজ কিতাবিস্থান বই ছাপিয়েছে। যাদের রয়েছে যুগের পর যুগ অভিজ্ঞতা। তিনি তার লেখার উচ্চ মর্গতা নিয়ে কথা বললেন। আর একজন আন্তরিক লেখক তার বইটা দেখালেন। তিনি  জানালেন তার  ফেস বুক জনপ্রিয়তাকে কনসিডার করে প্রকাশক বিনে পয়সায় তার বইটি প্রকাশ করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। যাদের বই প্রকাশকরা বিনে পয়সায় ছাপাচ্ছেন তারা স্বাভাবিক কারণে অত্যন্ত উচুমার্গের লেখক ভাবতে থাকেন। অনেক গর্ব। তাদের সাথে কথা না বললে বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন। অনেকটা সফল ক্রিকেটারের মত। সেঞ্চুরি করার করার পরের হাল হকিকত। প্রকাশককে টাকা দিয়ে বই ছাপিয়েছে বলতে সবাই লজ্জা পায়। কেমন যেন অপরাধী অপরাধী মনে করে। আমি ব্যতিক্রম । বড় গলায় বলছি। আমার সাহিত্যের মান ভাল না। প্রকাশক বিনে পয়সায় ছাপতে চায়নি তাই টাকা দিয়ে বই ছাপিয়েছি।
এতে আমি লজ্জা পাচ্ছি না । কারণ লেখার মান সবার সমান হবে না। বানান ভুল থাকবে। লেখনীতে সাহিত্য কম থাকবে। কিন্তু সাহিত্য ভাষা যত কমই থাকুন না কেন। ভাল বিষয় বস্তু হৃদয়গ্রহিী হয়। এটা আমি বড় গলায় বলতে পারি। আমার সেনা জীবনের নেতৃত্বের প্রথমে শিখেছি তোমার ভাষার প্রকাশটা হরে এরূপ, যেন তোমার অধীনের মানুষগুলো বুঝতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি সেদিন থেকে আমি বাংলায় সাহিত্য হারিয়ে ফেলেছি। ভাষা হয়ে গেছে সাদামাটা। সাহিত্যের রসাল ভাবটা অনুপস্থিত। সকলে যেন বুঝতে পারে আমার উপস্থাপনা ও কথা, এমন ভাবেই আমি উপস্থাপনা করি। এভাবেই লিখতে অভ্যস্ত হচ্ছি। আমাকে কয়েকজন বলল, আমি নাকি কঠিন কথা সহজ ভাবে বলি। এটার কারণ হল আমার কথায় সাহিত্য নাই। সকল কথা কথ্য ভাষায় বলি ও লিখি। আমার সাহিত্য প্রকাশকদের চলবে না। এটা চলবে ফেইস বুক আর ব্লগে। আর চলবে শিশু সাহিত্যে। সাহিত্যিক হওয়ার ইচ্ছে যোগ্যতা বা বাসনা আমার কোন কালে ছিল না। আমার আগ্রহ ছিল কোনটা ভাল ও কোনটা মন্দ তা নিয়ে বলা বা লেখা। তাইতো গল্প, উপন্যাস ও কবিতা লিখতে চেষ্টা করিনি। কারণ রোমান্টিকতা দিয়ে নায়িকার চুলের বর্ণনার সাহিত্য, আমার জন্য বড়ই জটিল। সেজন্য স্ত্রীর কাছে আমি একজন চরম অরোমান্টিক  মানুষ। তাই নন রোমান্টিক ও নন ফিকশন লেখা ছাড়া উপায় নাই। বাংলা একাডেমীর মোটা মোটা দুই বাংলা ডিকশেনারী দেখে আর অভ্র সফটওয়্যার ব্যবহার করে বানান ঠিক করি। আমি চার জন উন্নত ও ডিমান্ডিং লেখকের সাথে কথা বলে বুঝলাম লেখাটা আমার কাজ নয়। পেমেন্টে আর কয়দিন বই প্রকাশ করব। ৪০ হাজার টাকায় ১০০০ বই ছাপালাম। ৫০০টি বই সৌজন্য কপি বিতরণ করলাম। ৪৩০টি বই বিক্রি করে  খরচের টাকাটা পুরো তুলে ফেললাম। লাভের ৭০টি বই ধীরে ধীরে বিক্রি করছি। এদিকে দ্বিতীয় বই রেডি। টাকাও রেডি। আমার সাপ্তাহিক  আর্টিক্যাল যা লেখা আছে তা দিয়ে চার ফর্মার সাত খণ্ড বই বের করা যাবে। আমি নিজের টাকায় বই বের করছি নিজে বিক্রি করছি। বিতরণ করছি। প্রথম প্রথম বই বিক্রি করতে লজ্জা লাগত। এখন দেখলাম লজ্জা লাগছে না। কারণ উন্নত দেশে প্রতিনিয়ত সেলফ পাবলিকেশন বাড়ছে ও জনপ্রিয় হচ্ছে। এতে লেখকের লাভ বেশী। প্রকাশক নামক মধ্যসত্বভোগী নাই। ইউরোপ ও আমেরিকার সেলফ পাবলিশ লেখকরা আমাদের দেশের লেখকদের মত মুখ লুকায় না। ওরা গর্বিত হয়। কারণ সে সেলফ পাবলিশ করছে ও বেশী টাকা কামাচ্ছে। প্রকাশক নামের কেউ তার মেধা দ্বারা অর্জিত টাকায় ভাগ বসাচ্ছে না। প্রকাশক ১০০০ বই বিক্রি করে যে টাকা দেয়, সেলফ পাবলিশ করে ১০০ বইয়ে লেখকরা  সেই টাকা তুলতে পারে। এতে লেখকদের লাভ বাড়ছে। লেখকরা একটু কষ্ট করে সময় বের করে সেলফ পাবলিশে এগিয়ে আসছে। সেলফ পাবলিশ লেখকরা একেকজন একেকটা উদ্যোক্তা। শুধু মাত্র লাভ বেশী থাকার কারণে আমাজনে সেলফ পাবলিশ লেখকের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে। ই-বুক আর "প্রিন্ট বুক অন ডিমান্ড" সেলফ পাবলিশ লেখকদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে নন ফিকশন লেখকরা বেশী উপকৃত হচ্ছে। প্রক্রিয়াটি আর্থিক ভাবে লেখকদের লাভবান করছে। তাই সেলফ পাবলিশ লজ্জার কিছু নাই। সেলফ পাবলিশ করেছি বলে আমার লেখার মান ভাল হল না। এটা একটা ফানি বিষয়। আমার কাছে মনে হয় লেখার ভাষা ঠিক করার জন্য অনেক পেইড সম্পাদক আছে।তাদের দিয়ে পেমেন্টে সাহিত্য সংযোজন সম্ভব। এটা অনেকটা হায়ার করা উপস্থাপক বা প্রেজেন্টারের মত। তাই লেখার ভাষা ঠিক করার থেকেও বিষয় বস্তু বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সুন্দর গুছিয়ে কথা বলা বক্তার অন্তঃসার শূন্য বক্তব্য কিন্তু শুনি। আবার অনেক গ্রামীণ টানে কথা বলা লোকের চমৎকার বিষয় বস্তুর উপস্থাপনাও শুনি। উন্নত লেখক আর অনুন্নত লেখকদের আমরা মজা করে বলতে পারি "ব্রাহ্মণ  লেখক" আর "নমশূদ্র লেখক"। এ  বিভাজনে আমি যেতে চাই না। "বই কথা বলবে, আমি কেমন লেখক" এটাও মানতে পারি না। লক্ষ বইয়ের ভিতর আপনি মাইক না বাজালে আপনার বই চলবে না। এটা বাস্তব কথা। যে যাই বলুন, বই একটা "পণ্য" বা প্রোডাক্ট। এটা পণ্যের মতই বিক্রি করতে হবে। লজ্জার কারণ নাই।
নমশূদ্র লেখকদেরও লজ্জা পাওয়ার কোন কারণ নেই। আপনি নমশূদ্র লেখক হয়ে যদি অনেক পাঠক পান তবে দু:খ করার কিছু নাই। পাঠক যদি আপনি বেশী তৈরি করতে পারেন তবেই আপনি সফল। আমি বলব, প্রকাশক বাদ দিন। পাঠক আর বইয়ের বিষয় বস্তুর জোর থাকলে প্রকাশক লাগে না। যেমন: কোমড়ে জোর থাকলে প্রিয়ার জন্য গার্ড বসাতে হয়না। তাই বিষয় বস্তু ভাল হলে ও আর আপনার উদ্যোক্তার মানসিকতা থাকলে প্রকাশক না হলেও চলে। চাষি বাজারে চাষিরা যেভাবে ডাইরেক্ট নিজের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে তেমনি আপনি আপনার বইটি ডাইরক্টি বিক্রি করবেন। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, মার্কটোয়েন নিজের বই নিজে ছাপাতেন ও বিক্রি করতেন। তিনি তার সময়কার সবচেয়ে ধনী ও সফল লেখক ছিলেন। আমাজন বেস্ট সেলারের বেশীর ভাগ বইই এখন সেলফ পাবলিশড। আমি নিজে একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ। আমার সাথে অনেক সহায়তাকারী আছে। আমি মনে করি আমি নিজেই সেলফ পাবলিশিং এ বিপ্লব ঘটাতে পারব ইনশাল্লাহ।
সেদিন হয়ত বেশী দূরে নয় যেদিন সেলফ পাবলিশ লেখকরা লজ্জায় মুখ লুকাবে না। বরং প্রকাশকের টাকা দিয়ে যারা বই ছাপিয়ে প্রকাশকের সো কল সন্মানী বা "দয়া করে যা দেয়" তা নিয়ে চলছেন সে সমস্ত লেখকরা লজ্জা পাবে। সেলফ পাবলিশ লেখকরা বলবে, দেখ! আমার টাকা আছে। আমি সেলফ পাবলিশ করেছি আমি অন্যের টাকায় বই ছাপাই না। অন্যের দান খয়রাতে চলি না। নিজের টাকায় বই ছাপাই। নিজের প্রোডাক্ট নিজে বিক্রি করি। আমি নিজে উদ্যোক্তা "নপুংসক" নই। এভাবেই আমি গোটা বাংলাদেশের "ব্রাহ্মণ লেখক" আর "হরিজন লেখক"এর মধ্যে পার্থক্যটা কমাতে পারব। সেলফ পাবলিশ বা "সপুংশক লেখক" এরূপ নতুন আইডিয়াতে যেতে পারব। আর বেশী দুরে নয় যেদিন সেলফ পাবলিশ লেখকরা শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারকে বলবে" আই এম এ সেলফ পাবলিশ রাইটার। আই এম আরনিং টেন লাক টাকা পার মান্থ হোয়াট এবাউট ইউ"।
পরিশেষে বলব পরনির্ভরতা পরিহার করে চলুন লেখক হিসাবে আমরা আমাদের বই "সেলফ পাবলিশ" করি।

Thursday, March 22, 2018

বাংলাদেশে পিডিএফ বইয়ের প্রচলন


বাংলাদেশে পি‌ডিএফ বা অনলাইন বই কি চলবে। অনেকের মত আমারও ধারনা ছিল, চলবে না।
আমার ধারনা বদল হ‌য়ে‌ছে। প্রথমে সুইডেন প্রবাসী আমার ক্যাডেট কলেজ বন্ধু আমার কাছে আমার বই “স্বনির্বা‌চিত কলাম,১ম খণ্ড”এর ই-বুক ভার্সন চায়। আমি প্রকাশক থেকে সর্বশেষ এডি‌টেড বই‌য়ের সফটক‌পিটা নেই। তারপর ফর্ম‌েটিং এর কিছু ঠিক ঠাক ক‌রে পি‌ডিএফ বইটি ইমেইলে বন্ধু‌কে পাঠাই। বন্ধু জানাল, ফন্ট ঠিক নাই। তারপর ফন্ট ঠিক করার যুদ্ধ কর‌ে সফল হলাম। আবার সৌ‌দি প্রবাসী, চায়না প্রবাসী দুইজন পি‌ডিএফ চাইল। একজন প্রবাসী আবার বাংলাদেশে অবস্থানরত মা‌য়ের মাধ্যমে বিকাশের করে ৬০ টাকা পাঠা‌তে চাইলেন। হার্ডকপি বইয়ের দাম ১০০ টাকা বইয়ের বেসিক খরচ ৪০ টাকা। তাই পিডিএফ এ ৬০ টাকা দিবেন চিন্তা করলেন। একজন যুবক বাংলাদেশে আছে। সে পি‌ডিএফ চাইল। আমি তা‌কে বললাম, তুমি বাংলাদেশে আছ। তুমি বই নি‌তে পার। পি‌ডিএফ নিবে কেন। সে জানাল পি‌ডিএফ পড়‌তে  তার ভাল লাগে। মোবাইলে পড়া যায়। পরে সে বিকাশে পেমেন্ট পাঠাল। বইয়ের দাম ১০০ টাকা বেসিক দাম ৪০ টাকা বাদে দাম ৬০ টাকা হল। বাংলাদেশের প্রকাশকরা ৩০% ডিসকাউন্ট দেয় সেই হিসাবে আরো ৩০ টাকা কম তাহলে পিডিএফ দাম ৩০ টাকা। আরো ৫ টাকা আমার পক্ষ থেকে কম ২৫ টাকা। পৃথিবী ব্যাপী পি‌ডিএফ বই ব্যাপক মার্কেট পাচ্ছে। আমাজন হ‌তে পেমেন্টে পি‌ডিএফ বই ক্রয় করা যাচ্ছে। আবার "প্রিন্ট বুক অন ডিমান্ডে"র মাধ্যমে বই প্রিন্ট করা যাচ্ছ‌ে। পি‌ডিএফ থেকেও হার্ডকপি বই করা যাচ্ছে।
বাংলা বই‌য়ের পি‌ডিএফ ভার্সন পড়াটা শহর ও গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছ‌ে। কয়েকদিন আগে ছেলেদের বললাম একুশে বই মেলায় তোমরা বই কিনবে কিনা। তারা বলল কিনব। তবে ডিজিটাল ফরমেটই ভাল। ইয়ং জেনারেশন সাড়ে পাঁচ বা ছয় ইঞ্চি ডিসপ্লের মোবাইলে বই পড়তে পাড়ছে। তাহলে সকল বইয়ের হার্ডকপি থেকে প্রথমেই পি‌ডিএফ ভার্সন করা প্রয়োজন। কারন পিডিএফ থেকে প্রিন্ট অন ডিমান্ডের মাধ্যম হার্ড কপি করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের পাবলিশাররা তারা বিজয়ে অভস্থ্য। ইউনিকোড অভ্যস্ত নয়। তাই বিজয় থেকে ইউনিকোডে নেয়ার প্রয়োজন হয়। ইউনিকোডে নিকষ ফন্টে কাজটা করা যেতে পারে। নিকষ ফন্টটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অফিশিয়াল ফন্ট। এটা বিজয় সুতনীর মত প্রফেশনাল লুক দেয়। অবশ্য বিজয়ে ইউনিকোড রয়েছে। যদিও প্রেসগুলি বিজয় ব্যতীত অন্যভাবে অভ্যস্ত নয়। এমনকি অনেক প্রেসে ইউনিকোডে ডকুমেন্ট করলে তা বিজয়ে করভার্ট করতে বলে। কারন প্রুফ রিডিংএ তারা বিজয়ে অভ্যস্ত। “সেলফ পাবলিসিং কনসেপ্ট” ও “প্রিন্ট বুক অন ডিমান্ড”এর জন্য বইয়ের পিডিএফ ভার্সন করাটা অতি জরুরী।

আপনার বই আছে। আপনি আপনার বইয়ের সফটকপি বিজয়ে থাকলে তা ইউনিকোডে কনভার্ট করে নিন। পিডিএফ কাউকে আপনি পেমেন্টে দিলে তার ব্যবহার সীমিত করার জন্য পাসওয়ার্ড দিতে পারেন। আপনি নিজেই অফিস ২০১৬ এর মাধ্যমে সেভ এজ পিডিএফ কমান্ড করে পাসওয়ার্ডসহ পিডিএফ ভার্সন করতে পারেন। যখন কেউ পিডিএফ চাইবে আপনি ভিন্ন ভিন্ন পাসওয়ার্ড দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে পিডিএফ বই দিতে পারেন। পিডিএফ করার সময় ডকুমেন্টে কে পিডিএফ কিনেছে তার ঠিকানা,ফোন নম্বর ও ইমেইল দিয়ে পিডিএফ করে দিতে পারেন। তাতে অবশ্য অনলাইনে আপলোড ও অনধিকার ব্যবহার কম হবে।
কোন বই প্রকাশনার শুরুতে পিডিএফ করলে প্রিন্ট অন ডিমান্ডের প্রক্রিয়ায় যখন যত কপি তা করা যাবে। বাংলাদেশের প্রকাশকরা আমাজন, ক্রিয়েটস্পেস, লুলু ইত্যাদির আদলে বইয়ের অনলাইন প্রকাশনা করতে পারেন আর আমার মত সেলফ পাবলিশ লেখকরা গ্রাহকদের ইমেইল বা অন্য কোনভাবে পাসওয়ার্ড দিয়ে পেমেন্ট পিডিএফ ফাইল পাঠতে পারেন।
পিডিএফ পাবলিকেশন এখন সময়ের চাহিদা। এটা না হলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা পিডিএফ ভার্সন চাইত না আর আমকেও পিডিএফ ভার্সন বানাতে হত না। দেশেও চাহিদা হচ্ছে। তবে অনেকে ধারনা করছেন পিডিএফ ভার্সন হার্ডকপি বিক্রি কমিয়ে দিবে। তবে হার্ডকপি বিক্রি বেশী কমবে না। অল্প কমবে। অনেক পাঠক পিডিএফ অপেক্ষা হার্ডকপি বেশী পছন্দ করেন।

Thursday, March 15, 2018

ডিজিটাল যুগে বইয়ের মুদ্রণ কমা‌নো ও পরিবেশ রক্ষা

আপনি শহরের কোন লাইব্রেরী‌তে যান দেখবেন লক্ষাধিক বই আছে। প্রতিদিন পাঁচ ছয় জন পাঠক আসে। অথচ আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগেও লাইব্রেরীতে প্রচুর মানুষ দেখা যেত। অনেক বই আছে বছরের পর বছর কেউ পড়ে না। অনেক লাইব্রেরী‌তে প্রতিবছর সরকারীভাবে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বরাদ্ধ থা‌কে। নতুন বই কেনা হয়। নতুন বই কেনার পর অনেকে বই উল্টিয়েই দে‌খে না। পড়া তো দূরে থাক। আগে মানুষের সময় ছিল। মানুষ বই পড়ত। এখন মানুষ বই খুব কম পড়ে। কোন কিছু জান‌তে হলে গুগল থেকে তথ্য নেয়। আমরা কোন তথ্য জানার জন্য গোটা বই উল্টাতাম। এখন আর তা কর‌তে হয় না। গুগল সব তথ্য দি‌য়ে দেয়। প্রায় সেই সাথে  সাথে অডিও ভিজুয়াল ইউটিউব লিংকসহ। ফলে ছাপা‌নো বইয়ের প্রয়োজন কমে গেছে। ছাপা‌নো বই‌ পড়া কমে গেছে। যদি ডিমান্ড কমে থা‌কে তবে আমাদের সাপ্লাই কমিয়ে দি‌তে হবে। তাহলে বই ছাপা‌নোর কাজটা আমরা ডিজিটাল ক‌রে ফেল‌তে পারি। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটা দৈনিক পত্রিকা ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর থেকে প্রিন্ট হচ্ছে। একই ভাবে অনলাইন আর্কাইভ থেকে পাঠকের ডিমান্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি‌টি জেলা বা উপজেলা থেকে বই বের হ‌তে পা‌রে। সেখানেই প্রিন্ট হবে। সেখান থেকে চাহিদাকারীর কাছে চলে যাবে। এতে আমরা চাহিদার বাইরেই অপ্রয়োজনীয় বই‌য়ের প্রিন্ট বন্ধ কর‌তে পারব। প্রতি‌টি লাইব্রেরী পাঠক থেকে চাহিদা নি‌য়ে‌ বই প্রিন্ট ক‌রে দিবে। ডিজিটাল বই অনলাইনে সব সময় মজুদ থাকবে। মোবাইল ডিভাইস, কম্পিউটার ও ল্যাপটপে যখন যার ইচ্ছে  পড়‌তে পারবে। শুধু বই করার প্রয়োজন হলে ঢাকা নীল ক্ষেতের মত কম্পিউটার ও রঙ্গিন প্রিন্টার নি‌য়ে‌ পার্টি প্রস্তুত থাকবে। চাহিদা অনুযায়ী প্রিন্ট ক‌রে হোম ডেলিভারি দিবে। গতানুগতিক প্রিন্টিং  থেকে খরচ বেশী গেলেও এতে আমরা অপ্রয়োজনীয় বই‌য়ের প্রিন্টিং কমা‌তে পারব।
বইয়ের বিক্রি বাড়ানোটা অনেকটা অসম্ভব। মানুষ ডিজিটাল ফরমেটে বই পড়তে দিনে দিনে দক্ষ হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে আছে আগে আমি মোবাইল বা কম্পিউটারে বই পড়তে আগ্রহী ছিলাম না। কাগজের বই পড়তে অনেক কমফোর্ট লাগত। ধীরে ধীরে ফেইসবুক মোবাইলে পত্রিকা পড়তে পড়তে ডিজিটাল ফরমেট অনেকটা প্রয়োজনীয় উপাদান হয়ে গেছে। এখন বরং কাগজের বই থেকে ফন্ট সাইজ বড় ছোট করার কারণে মোবাইলে পড়াটা এখন মন্দ নয়। অন্য লাইন পত্রিকাগুলো মোবাইলে ব্যাপকভাবে পড়া হচ্ছে। কলাম আকারে বড় ফন্টে ডিজিটাল বই পড়তে মন্দ নয়। আবার বাজারে নতুন পুরাতন প্রায় সকল বই পিডিএফ ফরমেটে আছে। আমরা যদি ডিজিটাল ফরমেটে পড়তে অভ্যস্ত হই তবে কেন আমরা প্রিন্ট বই রাখব। টাকা ডিজিটালই ট্রান্সফার হচ্ছে তবুও সিনিয়র সিটিজেনরা কাগজের টাকা পছন্দ করবে। যদি স্মার্ট ফোনের বদৌলতে গ্রামে গঞ্জে সকল ছেলে মেয়ে মোবাইলে ম্যাসেজ পড়া, তথ্য পড়া ইত্যাদিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তবুও স্কুল ও কলেজে বইয়ের অনুশীলন থাকবে। হয়ত বৃদ্ধ বয়সে বই আমরা বেশী পছন্দ করব। আমরা অবশ্য বাজারে দেখতে পাই বই এখন আগের চেয়ে কম প্রিন্ট হচ্ছে। এই প্রিন্টটা কখনো ৫০০ বা ১০০০ কপি আকারে প্রিন্ট হয়। আমরা এই প্রিন্টটাকে প্রেসে না রেখে স্থানীয় ভাবে চিন্তা করতে পারি। এই কারণে পত্রিকার মত বিভিন্ন স্থান হতে প্রিন্টিং ভাবনা। এতে বই সরাসরি এক স্থান হতে অন্য স্থানে পাঠানোর খরচ কমে যাবে। দিনকে দিন রঙ্গিন প্রিন্টের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখনকার প্রিন্টারে রঙ্গিন প্রিন্ট প্রায় প্রফেশনাল প্রিন্টের কাছাকাছি
আমার প্রস্তাবে বই প্রিন্ট হবে উপজেলা পর্যায়ে। ঢাকায় প্রিন্ট হবে আর তা সারা দেশে পরিবহন করা হবে। অনলাইন আর্কাইভ থাকবে। সেই আর্কাইভ থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বই ছাপানো হবে। অনর্থক কোন বই ছাপানো হবে না। এতে পাঠকের কাছে একটা চয়েস থাকবে। হয় তিনি ডিজিটাল ফরমেটে পড়বেন। অন্যথায় প্রিন্ট করে পড়বেন। প্রতিটি উপজেলায় ডিজিটাল লাইব্রেরি ও প্রিন্টিং স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রিন্টার ও আধুনিক বই বাধাই করার ব্যবস্থাদি।

আমার এই পদ্ধতিটিতে অনেক প্রকাশক নিজেদের আধুনিকায়নের জন্য কাজে লাগাতে পারবেন বলে আমি মনে করি।

Thursday, March 8, 2018

উদীয়মান লেখকদের লেখনী উন্নয়ন ও প্রচারণায় জন্য উদীয়মান লেখক ফোরাম


যারা উদীয়মান লেখক তারা দিন রাত কবিতার পংক্তি চিন্তা করে। কবিতা লেখে। গল্প লেখে। কখনোও কখনো উপন্যাস লেখারও চেষ্টা করে থাকে। তাদের সবার স্বপ্ন থাকে বই প্রকাশ করা। জাতীয় পর্যায়ে যাওয়া। সবাই যেন জানতে পারে। সবাই যেন লেখক হিসাবে তাকে চিনে। সবাই হয়ত এক ভাবে আগাতে পারে না। কেউ দ্রুত ভাল সাহিত্যিক হয়ে যায়। কেউ হয়ত ধীরে ধীরে আগায়। কেউ হয়তবা কিছু লেখা লেখি করে অন্য প্রফেশনে চলে যায়।
সবাই তাদের কাজের প্রতিফলন হিসাবে বই ছাপাতে চায়। এজন্য তারা বিভিন্ন লেখকের কাছে যায়। যারা বই প্রকাশ করেছে। তাদের পরামর্শ নেয়। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক পত্রিকা পিডিএফ ফরমেটে বাজারে পাওয়া যায়। পিডিএফ ভার্শন অনলাইনে ক্রয় করা যায়। এখন অনেক পাঠক আছেন তারা কেবল মোবাইল বা ট্যাবে বই পড়েন। এই ধরনের পাঠকের জন্য পিডিএফ ভার্সনে বই রাখতে হবে। বরং তারা হার্ড কপি বই সাথে বহন বিরক্ত মনে করে। তথাপিও হার্ড কপি বই এখনও আমাদের বাংলাদেশের লেখকদের স্বপ্ন। হয়ত আরও দশ বছর আমরা হার্ড কপি বই পছন্দ করব। তারপর আমরাও আমেরিকান বা ইউরোপিয়ানদের মত ধীরে ধীরে ডিজিটাল ফরমেটে চলে যাব।
যতদিনে আমরা ডিজিটাল ফরমেটে না যাচ্ছি আমাদের বই প্রকাশ চলতে থাকবে। বই প্রকাশনা করতে একজন প্রকাশকের বেশ মূলধনের প্রয়োজন হয়। সকল প্রকাশক আবার ব্যবসা সফল না। বেশীর ভাগ প্রকাশকই তাদের পুঁজি ও ব্যবসা ঠিক রাখতে নোট, গাইড ও এইচএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত বই প্রকাশনা করে বেচে থাকে। এভাবে বাংলাদেশ হাজার হাজার প্রকাশক নিজেদের লাইভ সাপোর্ট নিয়ে বেচে আছে। যে সব প্রকাশক লাইভ সাপোর্ট নিয়ে বেচে থাকে তারা আবার নতুন লেখককে কিভাবে সাপোর্ট দিবে। তাদের কাছে কোন পাণ্ডুলিপি নিয়ে গেলে সাধারণত দেখা যায় পাণ্ডুলিপিটি পড়ে ছাপানোর উপযোগী কিনা সেটা বিচার করার কোন ব্যবস্থা নেই। তারা যেটা করে এডিটিং এর নাম করিয়ে লেখক থেকে পয়সা নিয়ে কিছু পেশাদার লোকদের দিয়ে লেখাটি চেক করিয়ে নেয়। পেশাদার এডিটর লেখাটি দেখে প্রকাশককে এক ধরনের মূল্যায়ন দেয় তা মূলত: ব্যবসায়িক মূল্যায়ন। বইটি বাজারে কেমন চলতে পারে। বই টি কতটুকু চলতে পারে। এই হিসাবের উপর নির্ভর করে তারা নতুন লেখকদের সাধারণত পুরোটাই পেমেন্ট করিয়ে ছাড়ে। ইউরোপ আমেরিকার মত আমাদের দেশে কোন প্রকাশনা অনলাইন ভার্সন রিলিজ করে বলে আমার জানা নাই। এই অনলাইন ভার্সনের সাথে আবার অডিও বই রিলিজ করা হয়। এভাবে প্রসারটা হয়।
প্রতিটি ধাপে পয়সা খরচ হয়। প্রকাশকরা নতুন লেখকদের জন্য কোন রিস্ক নেন না। ব্যবসা অসফল বা সফল হওয়ার দায়িত্বটা ছেড়ে দেয় লেখকের কাছে। লেখক নিজের পকেটের টাকা খরচ করে খায়েশ মিটায়। এতে কেউ সফল হয়। কেউ হয় না।
সকল উদীয়মান লেখকরা জীবনের প্রতিষ্ঠার শুরুতে কি সেই সব প্রকাশক ব্যতীত কোন ফোরাম করতে পারে। সেই ফোরামে উদীয়মান  লেখকরা যোগ দিবে। তারা সমস্ত জেলা/উপজেলায় ছড়িয়ে থাকবে। তারা তাদের অবস্থান থেকে তাদের লেখা শেয়ার করতে থাকবে। তাদের কার্যক্রম হবে ভার্চুয়াল অফিস ও ভার্চুয়াল লাইব্রেরীর মাধ্যমে। তারা তাদের লেখাগুলো ফোরামের ব্লগের মাধ্যমে শেয়ার করবে। সেখানে তাদের লেখাগুলো লেখক ফোরামের লেখকরা পড়বে। তারা একটা মতামত দিবে। উন্নয়নের জন্য দিক নির্দেশনা দিবে। ফোরামের কোন সদস্য ভলান্টারী কোন লেখা এডিটিং করে দিবে।  এডিটিং এর পর তা আবার উদীয়মান লেখকের কাছে যাবে। লেখক গ্রহণযোগ্য এডিটিং নিয়ে তার বই চূড়ান্তভাবে পিডিএফ ভার্সন করবে। স্থানীয় কম্পোজারের সহায়তায় সে কম্পোজ করবে বা ফোরামের কারো ভালান্টারী সহায়তা বা পেমেন্টে কাজটা করবে। পিডিএফ ভার্সন ডাউন লোডের জন্য ওয়েব সাইটে থাকবে। সকল ফোরাম মেম্বার বা অন্য পাঠকরা সেই ওয়েব সাইট হতে পেমেন্টে পিডিএফ ফাইল ডাইন লোড করবে। কোন কোন ফেরাম মেম্বার ডাউন লোড করবে তার তালিকা প্রদর্শিত থাকবে। লেখক পেমেন্টে ডাউন লোড করার পর টাকাটা তার একাউন্টে জমা হবে প্রাথমিক পুঁজি হিসাবে।
এই পুঁজি দিয়ে লেখকের হার্ড কপির ভার্সন মেলার জন্য বা পাঠক চাহিদার উপর প্রিন্ট করে দেয়া হবে।

এটায় সমাজের বিত্তবান থেকে ডোনেশন গ্রহণ করার ব্যবস্থা  থাকবে। এমনকি ভাল বইগুলির জন্য ডোনারের বিঞ্জপ্তি দেয়া হবে। ফোরামের লেখকদের তাদের এলাকা বা উপজেলা হতে পাঠক লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব থাকবে।
এই ধরনের ভার্চুয়াল অফিস কোন স্থাপনা ছাড়া অনলাইনে মেনটেইন করা যায়। এতে পুরো প্রক্রিয়ায় তেমন কোন খরচ পড়বে না। এভাবে দ্রুত একজন নব্য লেখককে প্রফেশনাল লেখক তৈরি করে দেয়া যাবে। লেখক একটা শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে। সে ক্রমান্বয়ে লেখনীর উন্নয়ন করতে পারবে। লেখার উন্নয়নে দিক নির্দেশনা পাবে সবার সহযোগিতা পাবে। এই ফোরাম ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভার্চুয়ালী সারা দেশের সমস্ত উপজেলায় ও পরবর্তীতে ইউনিয়ন পর্যায়ে কানেকটেড থাকবে। এই ফোরামের মূল লক্ষ হল একটা নব্য লেখকের টাকা খরচ না করিয়ে তার বই প্রকাশনায় সহযোগিতা করা। নব্য লেখকদের নিজের টাকায় বই প্রকাশের মত হয়রানীমূলক অবস্থা থেকে পরিত্রাণ করা।

Thursday, March 1, 2018

উদীয়মান লেখক ফোরাম


বাংলাদেশের শতকরা ৯৮% উদীয়মান লেখক নিজের টাকায় বই ছাপায়। এটা হল বাস্তবতা। কারণ প্রকাশক বই বিক্রয় করতে পারে না। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে যত বইয়ের লাইব্রেরী আছে তাদের কাছে স্কুল কলেজের পাঠ্য বই, নোট ও গাইড বই ছাড়া আর কোন বইয়ের বিক্রয় বা বিপণন হয় কিনা সন্দেহ। রেফারেন্স বা স্টোরী বুক এখন কমই বিক্রয় হয়। এই বিক্রয় কি আর বাড়ানো যাবে। আমি আশাবাদী নই। কারণ ডিজিটাল অগ্রগতি আমাদের মেনে নিতে হবে। অনেক দেশের হার্ড কপি ভার্সন লস দিতে দিতে এক সময় বন্ধ হয়ে গেছে। আমি নিজেও বেশ কয়েক বছর কোন পত্রিকা ক্রয় করছি না। অনলাইন বা ডিজিটাল ফরমেটে পড়ছি। এটাই হয়ত আধুনিক কালচার। এই কালচার থেকে বের হওয়ার উপায় নাই। আমাদের নতুন অবস্থার সাথে তাল খাইয়ে নিতে হবে। তাই প্রয়োজন উদীয়মান লেখক ফোরাম। একজন উদীয়মান লেখকের প্রথম সাপোর্ট হল তার জন্য লস না হয় সেটা বিবেচনায় আনা। কিছু আর্থিক ইনসেন্টিভ দেয়া। যদিও লেখকদের বইয়ের সাইজ নির্দিষ্ট করা সমীচীন নয় তথাপিও কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ সম্ভব হলে ছোট ভাবে শুরু করাটা মন্দ নয়। নীচে উদীয়মান লেখকদের সাজেস্টেট একটা আকৃতি দেয়া হল।
১। বই চার বা আট ফর্মা।
২। মূল্য হতে পারে ১০০/১৫০/২০০ টাকা
৩। বোর্ড  বাধাই
৪। অফসেট

উদীয়মান লেখক ফোরামটা কিভাবে চালনা করা যেতে পারে। তার জন্য কিছু সাজেশন নীচে তুলে ধরলাম:
১। প্রতি উপজেলায় লেখক বের করতে হবে।
২। প্রতি লেখকের দুইটি করে বই প্রতি উপজেলায় বিক্রয়ের ব্যবস্থা করবে।
৩। এক লেখক অন্য লেখকের লেখনী উন্নয়ন করবেন ও মান উন্নত করবেন।
৪। একজন অন্যজনের লেখা সম্পাদনা করে দিবেন।
৫। প্রচ্ছদ আইডিয়া ও প্রচ্ছদ কম্পোজ করে নিবে এই জন্য উদীয়মান লেখক ফোরাম চাহিদা করবে। লেখকদের লিংক আপে সেই  চাহিদা অনুযায়ী প্রচ্ছদ শিল্পী হান্ট করা যাবে।
৫। প্রত্যেকটা বই ওয়ার্ড ফাইলে কম্পোজ করে তা পিডিএফ ফাইল ফরমেট করা হবে।
৬। পিডিএফ প্রিন্ট ও কাভারের জন্য রঙ্গিন প্রিন্টের সহায়তা নিবে ও বই বাধাই হবে।
৭। প্রতিটি উপজেলার উদীয়মান লেখকরা একটি করে বই লাইব্রেরীতে প্রদর্শনের জন্য রাখবে।
৮। উদীয়মান লেখকের বই পিডিএফ ভার্সন ও হার্ড কপি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনীতে বিনা পয়সায় ছাপানোর চেষ্টা চালানো হবে। যদি অন্য কোন প্রকাশক বিনে পয়সায় ছাপাতে রাজি না হয় তবে নব্য লেখক ফোরাম সেই বই প্রকাশনার দায়িত্ব নিবে।
৯। নব্য লেখক ফোরাম অন্য প্রকাশনা দ্বারা রিজেক্টেড লেখকদের বই প্রথমে মান উন্নয়নের জন্য প্রফেশনাল সম্পাদকের কাছে দিবে। সেখানে লেখার মান উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালানো হবে।
১০। প্রফেশনাল দ্বারা সম্পাদনার পর লেখককে প্রি বুকিং করে বইয়ের সংখ্যা নিরূপণ করে নিতে বলা হবে। বইয়ের সংখ্যা চূড়ান্ত করার পর বই প্রিন্ট করা হবে। এখানে বইয়ের প্রি বুকিং গুরুত্ব পূর্ণ হবে। কারণ লেখক যেন বেশী বই ছাপিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয় তা লক্ষ রাখা হবে। বই যেন অবিক্রীত না থাকে সেটা লক্ষ রাখা হবে।
১১। নব্য লেখকের সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয় যেটা করা হবে তা হল বইয়ের নেটওয়ার্ক মার্কেটিং। প্রতিটি উপজেলায় অন্তত দুইটি করে বই বিক্রির জন্য উদীয়মান লেখকরা দায়িত্ব নিবে।

উদীয়মান লেখকদের করনীয়:
উদীয়মান লেখক ফোরা‌মের লেখক‌দের করনীয়:
১। উদীয়মান লেখকরা তা‌দের পরিচিত কারা কারা বই নিয়মিত পড়েন তার তালিকা তৈরি করবে। কারা কারা কি ধরনের লেখা পড়েন তার তালিকা রাখবেন।
২। কারা কারা তার বই কিনতে আগ্রহী তার তালিকা রাখবে।
৩। নতুন লেখকরা নিজ উপজেলায় বা জেলায় এক বা একাধিক লাইব্রেরীর শপের সাথে যোগা‌যোগ করবে যা‌দের মাধ্যমে নতুন লেখক‌দের বই প্রচার ও বিপণন করা যায়।
৩। নব্য লেখকরা জন্মদিন ও বি‌য়ে জাতীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে তার নিজের প্রকাশিত বই বা উদীয়মান লেখক ফোরা‌মের বই উপহার দিবে। কারণ যে কেউ বাজা‌রে গেলে নামী/দামী লেখকের বই কিনে। সাধারণত নতুন লেখকের বই কেউ কিনে না। তাই সামাজিক দাওয়াতের যেখানেই গিফট দেয়া হবে সেখানে নতুন লেখকরা উদীয়মান লেখক ফোরা‌মের বই গিফট দিবে।
৪। উদীয়মান ফোর‌মের লেখকরা পরস্পর পরস্পরের বই‌ পড়বে। পরস্পর পরস্পরের বই‌য়ের মান উন্নয়নের জন্য গোপনীয়তার সাথে ক্রিটিকস করবে।
৫। উদীয়মান লেখকরা পরস্পর পরস্পরের  লেখা সম্পাদনের  দায়িত্ব নিবে।
৬। কেউ ভাল প্রচ্ছদ কর‌তে পারলে অন্য‌দের প্রচ্ছদ কর‌তে সহায়তা করতে হবে।
৭। কেউ কম্পোজ জানলেও উদীয়মান লেখক‌দের মধ্যে পরস্পর সহ‌যোগীতা করবে।
৮। উদীয়মান লেখক ফোরা‌মের কার্যক্রম প্রাথমিক ভাবে ভার্চুয়ালী সামাজিক যোগা‌যোগ বিভিন্ন এ্যাপের মাধ্য‌মে করা হবে।