নন ফিকশন প্রবন্ধ লেখকরা সাধারণত
বনেদী লেখক হন। তাদের পাঠক কম। কিন্তু তাদের কমিটমেন্ট তুলনামূলকভাবে বেশী।
তাদের অনেক পড়তে হয়। সামাজিক সমস্যা গুলো নিরূপণ করতে হয়। সমস্যার গভীরে যেতে
হয়। নিজে নিজে রিসার্চ করতে হয়। বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করতে হয়। পুরো
প্রক্রিয়াটা সময় সাপেক্ষ। ফলাফল "নন ফিকশন" বইয়ের পাঠক কম। বিক্রি কম।
লেখকের অনুপ্রেরণা কম। তবে প্রবন্ধকারের আতলামী বই বিক্রয় না হলেও বন্ধ হবে না।
কারণ আতলামী একটা অভ্যাস। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় প্রবন্ধকার হওয়া বাদ দিয়ে প্রেমের
উপন্যাস লেখক হয়ে যাই। অন্তত মানুষকে অনেক আনন্দ দিতে পারব। রোমান্টিক
রোমান্টিক ছোট গল্প লিখতে থাকি। মনটা রোমান্টিক থাকবে পাঠক ও পাঠিকা বাড়বে।
অথবা লক্ষ কবির মাঝে কিছু উদ্দাম কবিতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি অথবা পৃথিবীর বেস্ট
সেলার থ্রিলারগুলো মূখরোচক করে বাংলা ভাষায় উপস্থাপন করি। বাজারে ভাল চলবে।
এগুলো হল সাময়িক অসংলগ্ন ভাবনা। মূল ভাবনাটা হল আমি আমিই। আমি "নন
ফিকশন" প্রবন্ধ লেখক। সেদিন আমার ড্রাইভার বলল, স্যার, আমি আপনার "স্বনির্বাচিত
কলাম" বইটির সব লেখা পড়েছি।
আমি ভাল ফিল করলাম।
তোমার অনুভূতি কি?
"স্যার, আপনি আমাদের জীবনের নানা সমস্যা এত সহজ সমাধান দিয়েছেন। আমার খুব ভাল লেগেছে।
আমি আপনাকে আরো সামাজিক সমস্যা দিচ্ছি যা আপনি লিখতে পারেন।" আমার
ড্রাইভার আরো বলল, "আপনার লেখা পড়ার পর
আমার চিন্তা ভাবনা ও জানার আগ্রহ বেড়ে গেছে"।
আমি মনে মনে ধন্য মনে করলাম। আমার
লেখাগুলোর সমাজের নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বেশী আকর্ষণ করবে সন্দেহ নেই।
আমার বইয়ের" ফ্লাট কেনার ফর্মুলা" ও "ফুল ফলের পরিবর্তে রোগীদের
নগদ টাকা আশীর্বাদ দেয়া" আটির্ক্যাল দুটি ব্যাপক আলোচিত হওয়ার পর আর প্রতিনিয়ত
বই বিক্রি অব্যাহত থাকায় মনে হল "নন ফিকশন" বই কাটতির চ্যালেঞ্জটা কমছে।
কারণ আমি প্রচার বিমুখ মানুষ ও
বিজ্ঞাপন মুক্ত মানুষ। ছোট্ট করে ছবিসহ আমার বইয়ের বিজ্ঞাপন দিতে খরচ হবে
প্রায় দশ হাজার টাকা। যা দিয়ে প্রায় ২০০ বই আমি বিভিন্ন লাইব্রেরীতে দিতে পারছি।
প্রকাশক এই যুক্তিতে হার মেনে বলল "আপনি আপনার মতই থাকুন"।
আসলে আমরা আমাদের মত থাকার মধ্যেই
আনন্দ আছে।
নন ফিকশন বইয়ের আবার বিজ্ঞাপনটা
বেশ জটিল। সিনেমার থ্রিলারের মত ক্লাইম্যাক্স দিয়ে গল্প ও উপন্যাসের কিছু অংশ তুলে
ধরলে পাঠককে জাগ্রত করা যায়। কারণ পাঠক বিনোদনের জন্য বই যখন পড়ে তখন গল্প ও
উপন্যাস লেখক অনেকটা লেখকের নাম ও পরিচয় গুরুত্ব না দিয়ে পড়ে থাকে কারণ পাঠক জানে
গল্প ও উপন্যাসে কিছু না কিছু জীবনধর্মী বিনোদন থাকবে। তাই গল্প উপন্যাস পড়ার জন্য
পাঠককে আকর্ষন করার জন্য তেমন একটা কসরত লেখক বা প্রকাশককে করতে হয় না।
তবে নন ফিকশন বইয়ের ফ্লাপ কাভার ও
সূচীতে বিষয় ভিত্তিক আলোচ্য সূচী পরিষ্কার করে তুলে ধরতে হবে। আমি আমার প্রথম বই “স্বনির্বাচিত কলাম” নাম দেয়ার পর অনেক পাঠক আমাকে
বললেন নামটা হয়ে গেছে গতানুগতিক। স্বনির্বাচিত কবিতা, স্বনির্বাচিত গল্প, নির্বাচিত কলাম এগুলো বাজারে
প্রচলিত নাম। এর থেকে বেরুতে হবে। নন ফিকশন রাইটারদের লেখার নামটি অনেক অনেক
গুরুত্ব বহন করে। “সাতকাহন” আর “একটুখানি উষ্ণতার জন্য” দুইটি উপন্যাসের দুইটি নামের দুই
রকম আনন্দময় পাঠ নির্দেশ করে তবু পাঠক কাছে টানার জন্য উপন্যাসের নাম দুটো চমৎকার।
নন ফিকশন বইয়ে চাপটারে চাপটারে
বোল্ড করে কিছু চুম্বক অংশ উদ্দীপক দিলে পাঠক পড়তে আগ্রহী হতে পারে। বইটি যেহেতু
আনন্দ অপেক্ষা জানা ও সমস্যা সমাধানমূলক তাই এই বিষয়ে কিছু তথ্য ব্যাক কাভারে
রাখতে হবে। আমাদের দেশে ব্যাক কাভার সাধারণত খালী থাকতে দেখা যায়। ব্যাক কভারের ও
ফ্লাপের রাইট আপ পাঠক পড়ে এবং এর মধ্যে নন ফিকশন বইটি কেন পড়বে এবং তাতে লাভ কি তা
তুলে ধরতে হবে।
নন ফিকশন বই সাধারনত সমঝদার ও বয়সী
লোকজন বেশী পড়ে থাকে। তাই নতুন ও ইয়াং পাঠককে এই ধরনের বইয়ে কাছে টানার জন্য
টপিকগুলো ইয়াংদের উপযোগী রাখতে হবে। পরিশেষে আশা করি ইয়াংরাও নন ফিকশন বই পড়বে ও
আনন্দ পাবে তেমন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। এতেই আমরা প্রবন্ধ লেখকরা সফল হব।