কোন শহরের যানজট নিরশনে অনেকে বলেন, মানুষের হাতে টাকা অনেক। বেশী বেশী গাড়ী কেনে। ট্যাক্স বাড়াও গাড়ীর দাম বাড়াও। গাড়ী কেনা নাগালের বাইরে নাও। তবেই গাড়ী কেনা কমবে। গাড়ী কেনা কমলে রাস্তায় কম গাড়ী থাকবে। যানজট কম হবে। রাস্তা যতটুকু সম্ভব বড় করে রাস্তায় খানা খন্দক মেরামত করতে হবে। বেশী বেশী আন্ডার পাস ও ওভার পাস বানাতে হবে। ট্রাফিক সিগন্যাল তুলে দিয়ে ইউলুপ তৈরী করতে হবে। সবই খুব কার্যকরী ব্যবস্থা। কিন্তু কতটুকু কার্যকরী। দুইতলা তিনতলা রাস্তা। আন্ডার গ্রাউন্ড পার্কিং ইত্যাদি অনেক কিছু করা যায়। আপনি সব কিছুই করলেও যদি কয়েক তলাবিশিষ্ট চার লেন রাস্তা করতে না পারেন তবে যানজট থেকে কোন মুক্তি নাই। তার উপর রাস্তায় গাড়ী পার্কিং নিষিদ্ধ করতে হবে। অনেকে বলবেন, ঢাকা শহরের যানজট নিরশনের উপায় আসলে আছে কি? সত্যি বলতে কি ঢাকাকে ত্যাগ করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। রাজধানী নতুনভাবে করতে হবে। যে কোন শহরের যানজটের মূল কারন বেশী গাড়ী ও অপ্রতুল রাস্তা। শহরের রাস্তা অপ্রতুল ও গাড়ী বেশী এবং এ কারনে যানজট বেশী। অপ্রতুল রাস্তাকে বড় করা যাবে কি। এটা পুরাতন শহরের জন্য অনেক অনেক জটিল ব্যাপার। নতুন শহর নতুন পরিকল্পনায় এটা কার্যকরী হতে পারে। নতুন শহরের পরিকল্পনায় যেটা করতে হবে যে কোন বাড়ী বা প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা অবশ্যই দুইটি ছোট গাড়ী ও রিক্সা ক্রশ করার মত হতে হবে। বানিজ্যিক এলাকার রাস্তা কমপক্ষে ফোর লেন হওয়াটা বেশ জরুরী।
রাস্তা বড় করলেও তার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু একের পর এক অপরিকল্পিতভাবে দালান উপরের দিকে বাড়ানোটা ঠিক নয়।
আমার বাবা ১৯৮৬ সালে যখন আমাদের নিয়ে ঢাকায় আসেন তখন আমরা ঢাকার জুরাইন ছিলাম। রিক্সা নিয়ে বলতে গেলে গোটা ঢাকা শহর ঘুরতাম। পুরান ঢাকায় যেতে চিকন রাস্তায় জ্যাম পেতাম। আর কোথাও তেমন জ্যাম নেই। মনে আছে জুরাইন এলাকায় চিকন রাস্তাগুলিতে কোন জ্যাম ছিল না। আজ ভয়নক জ্যাম। গলির ভিতরের চিকন রাস্তাগুলি গাড়ী ও রিক্সার ভয়াবহ জ্যাম। কিন্তু কেন এই অবস্থা। কারন একটাই আগে ১৯৮৬ সালে আমাদের পাড়া ও মহল্লায় কোন বাড়ী ২ ও ৩ তলার বেশী ছিল না। কদাচিত দুই একটা বাড়ী পাচ তলা দেখা যেত। এখন পাচতলা হল একটা দুইটা বাড়ী আর বেশীর ভাগই আটতলা দশতলা। ১৯৮৬ সালে যা মানুষ ছিল গত ৩২ বছরে ঢাকার মানুষ মনে হৃয বেড়েছে পাচগুন। এটা আমার চোখের দেখা ঘটনা। পাচগুন মানুষ বেড়েছে গলির রাস্তাগুলি একই মাপের আছে। তাতে যা হবার তাই হল, গলির রাস্তা আর পাচগুন মানুষকে নিতে পারছে না। উত্তরা সরকারীভাবে উন্নয়ন করা আবাসিক এলাকা এর রাস্তাঘাট পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা। এখন সেই পরিকল্পিত উত্তরার রাস্তাও জ্যাম। কারন একটাই আগে উত্তরায় ৬ তলা বাড়ীর অনুমতি ছিল এখন ৮ তলা বা তার বেশী উচু করার অনুমতি মিলছে। পরিকল্পিত রাস্তার সাথে ৬ তলা বাড়ীর যে সামঞ্জস্য ছিল তা অতিরিক্ত উচু করার অনুমতি দেয়ায় তার চাপ পরেছে রাস্তার উপর। ট্রাফিক জ্যাম কমানোর প্রথম ধাপ হল, উচু দালান কমিয়ে আনা। ঘন বসতি কমিয়ে ফেলা। পার্কিং এর স্থান বাড়াতে হবে। ফ্লাইওভার ও রাস্তা কয়েক স্তরে করতে হবে। রাস্তা ও আন্ডার গ্রাউন্ড যোগাযোগ বাড়াতে হবে। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাড়াতে হবে। মানুষকে উন্নতমানের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ীর ব্যবহার কমাতে হবে। ঢাকাকে ব্যবসায়িক শহর করে বাংলাদেশের প্রশাসনিক রাজধানী পদ্মা ব্রিজের আশে পাশে স্থানান্তরিত করা এখন সময়ের দাবী। এটা করাটাও প্রয়োজন অন্যথায় বেশী দেরী হয়ে যেতে পারে। বর্তমান ঢাকাকে রক্ষা করার জন্য কোন দালানকে ৫/৬ তলার বেশী উপরে উঠতে দেয়া যাবে না। রাস্তাগুলি দুইতলা তিনতলা করতে হবে। সব স্থানে ইউলুপ করতে হবে। পার্কিং এর জন্য মাল্টিস্টোরেজ ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই হয়ত আমরা মোটামুটি বাসযোগ্য ঢাকার পথে আগাতে পারব। যানজট আমাদের মূল্যবান সময়টাকে কেড়ে নিয়ে দুর্বিসহ জীবন তৈরি করেছে তার লাগাম টেনে ধরতে হবে। বলতে হবে আর নয় যানজট। বাড়ীর উচ্চতা বাড়াতে হবে। রাস্তার প্রশস্থতা ও পার্কিং ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে দালান উচু করার অনুমতি দিতে হবে অন্যখায় নয়। কম উচু দালান ও সুপরিসর যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া দুর্বিসহ যানজট ঠেকানোর আর কোন উপায় আছে বলে মনে হয় না।
No comments:
Post a Comment