Pages

Thursday, November 29, 2018

উত্তরাধিকারীদের জন্য চাকুরী ভাল না ব্যবসা


আমি আজ চাকুরী করছি। সরকারী চাকুরী। সন্তোষজনক বেতন ও সুযোগ সুবিধা। আমি যখন অবসর নিব। আমার সন্তানের কি হবে। তাকেও পড়তে হবে। চাকুরীর জন্য যুদ্ধ করতে হবে। আমার ছোট ভাই ব্যবসা করে তার সন্তানও পড়াশোনা করে। তার সন্তানও চাইলে ছোট ভাইয়ের ব্যবসাটি ধরতে পারে বা চাকুরী করতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত আমার সন্তানের মত দ্বারে দ্বারে চাকুরীর জন্য যেতে হবে না। কারন ব্যবসায়ী ছোট ভাইয়ের সন্তান যাই করুক উত্তরাধিকারী হিসাবে আয় নিশ্চিত। এটা হল ব্যবসায়ীদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। তাহলে চাকুরীজীবীদের জীবনের নিরাপত্তা হয়ত ব্যবসা থেকে কিছু বেশী। ব্যবসা আজ ভাল, কাল মন্দ। সর্বদা একটা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যায়। তবে কষ্ট করে ব্যবসায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারলে ও ক্রমাগত ব্যবসাটি সময়ের সাথে উপযোগী করে নিতে পারলে জেনারেশনের পর জেনারেশন নিরাপদ হয়ে যায়। জেনারেশনকে আর চাকুরীর জন্য সময় ও যৌবনের মূল্যবান শক্তি নষ্ট করতে হয় না। একজন বিসিএস করা জাঁদরেল সচিবের ছেলে হয়তবা প্রাইভেট কোম্পানিতে ক্লার্ক আর অফিসার এর মাঝামাঝি এক্সিকিউটিভ নামের স্বঘোষিত অফিসার পদে চাকুরী করতে হচ্ছে। কিন্তু একটা কোম্পানির মালিকের যেন তেন ইন্টারমিডিয়েট বা গ্রাজুয়েশন করা ছেলে মেয়ে বাবার কোম্পানির এমডি বা ডাইরেক্টর হয়ে যাচ্ছে। একসময় জাঁদরেল চেয়ারম্যান হয়ে যাচ্ছে। এ এক চমৎকার কর্মসংস্থান। এ ধরনের কর্মসংস্থানের কাছে জাঁদরেল সচিব বা যে কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ফেল করে যাবে। অথচ সন্তান থাকলে তার প্রতিষ্ঠাতা সবচেয়ে জরুরী। চাকুরীতে যত জাঁদরেল লোকই হোক, যত বেতন পাক, সে ফেল করবে যেন তেন ব্যবসায়ীর কাছে। কারণ একটা সাধারণ ব্যবসায়ী জানে কিছু কাজ না পাক, তার উত্তরাধিকারীরা তার ব্যবসা ধরে অন্তত তার মত জীবন যাপন করতে পারবে। চিন্তা কম। সুযোগ বেশী। নিরাপদ বেশী। তাহলে আমাদের মত চাকুরীজীবীদের উপায় কি। একটা উপায় আছে প্রতিষ্ঠান তৈরী ও সন্তানদের সেখানে প্রতিষ্ঠা করা। অনেক সচিব বা চাকুরীদের সন্তানকে দেখেছি বাবার সহায়তায় নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। এটা কিন্তু মন্দ ধারনা নয়। বরং এর মাধ্যমে জেনারেশনের পর জেনারেশনের কর্ম সংস্থান তৈরী করা যায়। যে কোন ভাবে চিন্তা করি না কেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই টেকসই ব্যবস্থা। ব্যবসায় অনেক রিস্ক ও অনেক উত্থান পতন আছে। যদি সন্তানরা ছোটবেলা থেকেই শিখতে পারে তবে তা বড়ই কার্যকরী হবে।
প্রফেসর ইউনুস তাঁর অনেক অনেক লেকচারে বলেছেন মানুষ ক্রিয়েটিভ। তারা উদ্যোক্তা হওয়ার জিন নি‌য়ে জন্ম গ্রহণ ক‌রে। তাদের মাঝে ধী‌রে ধী‌রে সমাজ ও পারিপার্শ্বিকতা তা‌কে দাসত্ব শিখায়। সমাজের বুদ্ধিমান মানুষ সমাজের কম অগ্রসরমান মানুষ‌কে দাসে পরিণত ক‌রে। তার সাথে যোগ হয় আর্থিক অবস্থান। এটা মানুষ‌কে দুর্বল ক‌রে ফেলে। মানুষ আর্থিক নিরাপত্তা পে‌তে সমাজের দাসত্ব মেনে নি‌তে থা‌কে। দাসত্বের ভদ্ররুপ হল চাকুরী। সুতরাং চাকুরীর নিরাপত্তা শুধু নিজের জীবদ্দশা পর্যন্ত। সন্তান‌দের নিরাপত্তা সে দি‌তে পা‌রে না। চাকুরের সন্তান চাকু‌রে হওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা তদবির কর‌তে থা‌কে। কখনও সফল হয়। কখনও সফল হয় না। হা‌তে গোনা অল্প কিছু চাকুরীজীবীর সন্তান হয়ত ব্যবসায়ী হয়। চাকুরীরা ব্যবসার অনিরাপদ কিন্তু স্বাধীন জীবন‌কে ভয় পায়। নিদিষ্ট ইনকাম তা‌দের কষ্টকর মনে হলেও মনে দেয় প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। ইচ্ছে হলে কাজ করব নয়ত করব না। বা এমন ব্যবস্থা করব যেন ঘুমিয়ে থাকলেও টাকা প্রাপ্তি হয় মূলত এটাই হল ব্যবসায়ীর কাজের ধরন।
পরিশেষে বলব, নিজের ভবিষ্যৎ বংশধর‌দের নিরাপত্তার জন্য ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান ও কোন কাজের স্কিল সন্তান‌দের মাঝে প্রসারিত করাটা অনেক প্রয়োজন।
একজন এয়ার কন্ডিশন, ফ্রিজ ও অন্যান্য কারিগরি কাজে দক্ষ সে চাকুরী পেলেও কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার শখ ও দক্ষতার কাজ‌টি সর্বদা চালু রাখ‌তে পা‌রে এমনকি তার বংশধর‌দের জন্য সু‌যোগ সৃষ্টি করে রাখ‌তে পা‌রে যেন, তার পরের প্রজন্ম কোন স্ক‌িল, দক্ষতা ও প্রতিষ্ঠান নি‌য়ে নিরাপদ হ‌তে পা‌রে। পরিশেষে বলব, চাকুরী নয়, উদ্যোক্তা হওয়াটাই সবচেয়ে ভাল পন্থা।

Thursday, November 22, 2018

মানুষের আশার প্রতিফলনে দেশের নেতৃত্ব


পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক পদ্ধতি হল গণতন্ত্র। রাশিয়ার সমাজতন্ত্র খতমের পর সেটা প্রমাণিত। অপর দিকে ইসলাম পুঁজিবাদী সমাজ বর্জন না করে যাকাত ও মানবীয় ব্যবস্থার দিক নির্দেশনা দিয়ে গণতন্ত্রের বিরোধ করেনি।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকল মানুষ ভোটের অধিকারের মাধ্যমে তার আশার প্রতিফলন রাখতে চায়। সেটা কি গণতান্ত্রিক ভোটের মাধ্যমে হয়? প্রতিটা মানুষের ভোটের মূল্যমান ঠিক থাকে? থাকে না। যদি থাকত, ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটা আসত না। পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশে এটা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নানা ইঞ্জিনিয়ারিং। উন্নত দেশের মধ্যে আমেরিকায় গণতন্ত্র আছে। সেখানেও মানুষের ভোট বেশী পেয়েও নাকি হিলারি নির্বাচিত হয়নি। কারণ তাদের সিস্টেমে স্থানে স্থানে জয়লাভ করতে হবে। টোটাল ভোটে নয়। কোথাও বেশী ভোটে জয়লাভ আবার কোথাও অল্প ব্যবধানে হারা। এই ধরনের সিস্টেম আসলে নির্ধারণ করা অতন্ত্য কষ্টকর যে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
বাংলাদেশে কোন দলের মনে করি শতকরা ৪০/৪৫ ভাগ ভোট আছে। তবুও তারা সরকার গঠন করতে না পারার ঝুঁকিতে থাকবে। আবার কোন দলের শতকরা ৩০/৩৫ ভাগ জনপ্রিয়তা নিয়েও সরকার গঠন করতে পাররে। এটাই ইঞ্জিনিয়ারিং। যদি এটা হয়, তবে সেই গণতন্ত্র আসলে কারোর জন্যই ভাল নয়। গণতন্ত্র যদি প্রকৃত অর্থেই থাকতে হয়, তবে সকল ভোটারের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। কোন এলাকার কেউ নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন তার ব্যক্তিগত ইমেজে। কিন্তু তা কি হচ্ছে। প্রার্থী নির্বাচিত হচ্ছে দলের কারণে। দলে আবার তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন একটা বাণিজ্যের কারণে। এটা কি গণতন্ত্রের জন্য ভাল। মোটেই না। যারা পলিটিকাল সাইন্স পড়ে তারা হয়ত রাজনৈতিক বিষয়ের অদ্যপান্ত জানবেন। তবে আমার মত একজন সাধারণ লেখক এটা জানি। বর্তমান সিস্টেমগুলো ভাল হচ্ছে না। এতে সীমাবদ্ধতা আছে। অসন্তোষ আছে।
এটা কি এমন হতে পারে, সমস্ত নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা নিজেদের মত নমিনেশন নিবে। এখন মনে করি, কুমিল্লা নির্বাচনী এলাকা-১ পাঁচজন প্রার্থী হল। দুইলাখ ভোটের মধ্যে ৬০ ভাগ কাস্ট হল। ১,৬০,০০০ ভোট। এখন মনে করি নির্বাচিত প্রার্থীদের ক=৭০,০০০ খ=৫০,০০০০ গ=১৫,০০০ ঘ=১০,০০০ ঙ=৫,০০০।
প্রার্থীদের মধ্যে ক মনে করি এক্স পার্টি। আর খ,,ঘ ও ঙ এই চারটি হল ওয়াই পার্টির। এখন দেখুন, এক্স পার্টি প্রার্থীর ভোট হল ৭০ হাজার যা একজন প্রার্থী দিয়েছে। অপর দিকে ওয়াই পার্টির চারজন মিলে পেল ৮০ হাজার। এবার দেখুন এমপি এক্স পার্টির লোক নির্বাচিত হলেও পার্টির ভোট বেশী হবে ওয়াই পার্টির। এখন এমন হতে পারে এক্স পার্টির এমপি বেশী হলেও সরকার গঠন সেই করবে, যার ভোট বেশী। হয়তবা ওয়াই পার্টিসরকার গঠন করল। সেই দলের প্রধান হবেন, সরকার প্রধান। মন্ত্রীরা হবে দলীয় ভোট সংখ্যার উপর ভিত্তি করে। এতে জনগণের ভোটের প্রকৃত মূল্যায়ন হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য, পার্টির মধ্যে গণতন্ত্র না থাকা  ইত্যাদি সমস্যা দূর হবে। যারা নির্বাচিত হবে তারা পার্টির ইঞ্জিনিয়ারিঙের উপর নির্ভর করতে হবে না। তারা প্রার্থী হবে পার্টির নাম ডিক্লেয়ার দিয়ে বা স্বতন্ত্র হিসাবে। যার ফলে একাধিক প্রার্থী আসবে একই দল থেকে।
আমি যেটা বর্ণনা করলাম, এতে কোন দল কোন প্রার্থীকে নিয়ে ব্যস্ত হবে না। এখন প্রার্থী নির্বাচন করে পার্টি প্রধানরা। ফলে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী হয় না। কিন্তু পার্টির ব্যানারে পাশ করে যায়, কিন্তু জনপ্রিয় হওয়া যায় না। আমার আইডিয়ায় সকল প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে নিজের ইমেজ ও জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে পাশ করবে। অপর দিকে একাধিক প্রার্থী দিয়ে ভোট ভাগ হয়ে যাবে এই চিন্তার কোন কারণ নাই। সকল প্রার্থীর সকল ভোটই তখন দলের জন্য মূল্যবান। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যারা পাশ করেনি কিন্তু ভোট পেয়েছে তারা যখন ফলাফল হওয়ার পর বিভিন্ন পার্টিতে যোগ দিবে। তাদের ভোটও কাজে লাগবে।
খেয়াল করে দেখুন, এতে সকল প্রার্থী ব্যস্ত হবে পার্টির তাঁবেদারি না করে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হতে। আবার পার্টি সরকার গঠন করে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রার্থীর উপর নির্ভর না করে সার্বিক ভোট বাড়াতে চেষ্টা করবে। ইমেজ বাড়াতে চেষ্টা করবে। দলে দলে কোন্দল কমে যাবে। মারামারি কমে যাবে। আগে অনেক জটিল হিসাব হলেও এখন মূহুর্তের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বলতে পারবে কোন প্রার্থী কত ভোট পেল ও কোন দল কত ভোট পেল একটা মাত্র ক্লিক। অপর দিকে পার্টি প্রধানের জনপ্রিয় একাধিক প্রার্থীর মধ্যে বাছাই করার প্রয়োজন হচ্ছে না। জনগণ ভোটের মাধ্যমে বাছাই করে দিচ্ছে। ক্ষমতা বিহীন দলগুলো অনর্থক সমস্যা করবে না। কারণ তাদের ভোট অনুযায়ী তারা মন্ত্রিত্ব ও অন্যান্য ক্ষমতায় থাকবে। তাই সাধারণ জনগণ যোগ্যকে ভোট দিলে সে যেই পার্টিরই হোক তার একটা সুযোগ থাকবে মন্ত্রী হওয়ার। এভাবে চমৎকার একটা ভারসাম্য আসবে। এটা হয়ত থিংক ট্যাংকরা ভেবে দেখতে পারেন।

Friday, November 16, 2018

বর্তমান দামী খাবার


ছোট‌বেলা দেখতাম বাবার কাছে গ্রামের অভাব ও অনটনে পড়া কেউ কেউ পড়া‌শোনার জন্য আর্থিক সাহায্য চাইতে আসত। তাদের অনেকে সন্তান নি‌য়ে বলত, সন্তান অনেক পড়া‌শোনা ক‌রে সেই  অনুযায়ী মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ খাওয়া‌তে পা‌রে না। কলের বিবর্তনে আজ আমরা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছি। আজ পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া ঘরে ঘ‌রে খায়। ডিম অনেক অনেক উৎপাদন হয়। কোন পরিবারের বাচ্চারা ডিম ভাগ ক‌রে খায় জানা নেই। বয়লার মুরগীর ব‌দৌল‌তে মাংসের ঘাটতি নেই। দুধ উৎপাদন বাড়ছে। হয়ত দুধ তেমন না পেলেও দুগ্ধজাত পণ্যের অভাব নেই।
বিপদ হল ভাজা পোড়া ও মিষ্টি আইটেমে বাজার সয়লাব। তাই কোন দরিদ্র পিতামাতাও বাচ্চা‌দের মুরগী, মাছ ও ডিম থেকে বঞ্চিত করছে না। রাস্তা ঘাটে অধিক ওজনকারী বাচ্চার সংখ্যা বাড়ছে। খাবারের দাম কমেছে। উচ্চ ক্যালরির খাবার এখন অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। আপনি ধরুন পাঁচটি  গরম ভাজা পুরি খেয়ে ফেললেন। পাঁচটি গরম গরম জিলাপি খেয়ে ফেললেন, কি পরিমাণ ক্যালরি নি‌য়ে ফেললেন, ডাই‌টে‌শিয়ানরা হিসাব ক‌রে হয়রান হ‌য়ে যাবে। আপনি বিশ টাকায় দু‌টি বড় বড় সাগর কলা খেয়ে ফেললেন। কম পরিশ্রমী মানুষ সারাদিনের অর্ধেক ক্যালরি ওই দুইটি কলায়ই পেয়ে যাবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রচারণার যুগে হাই ক্যালরি ফুল আর হাই ক্যালরি ফ্যাটযুক্ত খাবার আজ দামী হলেও শিক্ষিত ধনী‌দের কাছে পরিত্যাজ্য আজ ধনীরা খুঁজে লো ফ্যাট ও‌ লো ক্যালরি ফুড। তারা জানে এসি গাড়ী, এসি বাড়ী ও কায়িক প‌রিশ্রমবিহীন জীবন তা‌দের হাই ক্যালরি ফুড ও হাই ফ্যাট ফুড তাদের জীবন সংকীর্ণ ক‌রে দিবে। তাই পেট ভরবে গা‌য়ে কম লাগবে সেই  খাবারগু‌লি ধনীরা খোজ করেন। একটা হাই ক্যালরি কলা খাওয়ার চে‌য়ে এক কেজি ড্রাগন ফল খাওয়াটা ধনী‌দের কাছে বেশী আগ্রহের। অথচ একটা কলার দাম দশ টাকা আর এক কেজি ড্রাগন ফলের দাম ৫০০/৬০০ টাকা। এক কেজি আলু অনেক ক্যালরি দিবে দাম  ২০ টাকা। অপরদিকে এক কেজি মাশরুম অনেক পুষ্টি দিবে দাম ১০০০ টাকা। তাই পুষ্টি আগে ক্যালরি পরে। মোটা ঠেকা‌নোটা মূল ব্যাপার। আজ মজাদার খাবার কায়িক পরিশ্রমকারী দরিদ্রের দখলে। পানসে, তৈল কম, চিনি কম ও লবণ কম খাবার ধনীর ভাগ্যে। আজ কোন দরিদ্র বলবে না যে, টাকা নাই। ছেলে মেয়েকে ডিম দুধ খাওয়া‌তে পারিনা।
খাদ্যের চাহিদার এই ধরনের পরিবর্তনে অবাক হতে হয়। হয়তবা ২০/২৫ বছর আগে ঘি ভাজা প‌রোটা ও ঘির তৈরি নানা আইটেম ছাড়া ধনীর ব্রেক ফাস্ট কল্পনা করা যেত না। আজ ধনীর প্লেটে ওরস, কন‌ফ্লে‌ক্সের মত ফাইবার রিচ খাবার। ধনীর ডাই‌টে‌শিয়ানরা হয়রান হ‌য়ে যায়, লো ফ্যাট ও লো ক্যালরি খাবার বের কর‌ার জন্য। লো ফ্যাট ও লো ক্যালরি খাবার আজ অনেক অনেক বেশী চাহিদা সম্পন্ন ও দামী।
তিন তারা ও পাঁচ তারা হো‌টেলগু‌লো মাশরুম, ক্যাপ‌সি কাম, বেবি কর্ণ ইত্যাদি ছাড়া কারী কল্পনা কর‌তে পা‌রে না। অথচ খাবার গুলি উচ্চ ক্যালরি বা উচ্চ ফ্যাট-যুক্ত নয়। অপরদিকে উচ্চমূল্যের অলিভওয়েল দি‌য়ে সমস্ত রান্না ক‌রে দিবে। বিল যদিও আকাশচূম্ভী। তবুও ধনীর জন্য কুছপ‌রোয়া নেহি। ভারী শরীর ও ক্ষতিকারক ‌রোগ থেকে বাচাটা জরুরী। ধনী‌দের ডাই‌টে‌শিয়ানরা না হয় বেঁছে বেঁছে উচ্চমূল্যে পুষ্টিকর খাবার বের ক‌রে দিচ্ছে বা অনুপ্রাণিত করছে। কিন্তু মধ্যম আ‌য়ের দোকানদা‌রের কি হবে। দিনের বেশীরভাগ সময় কায়িক পরিশ্রম কম ক‌রে দোকানদারী করছেন। তিনি হয়তবা ধনী‌দের মত দামী মেনু‌তে যাচ্ছ‌েন না। তিনি খাচ্ছেন পেঁয়াজু, লুচি ও জিলাপির মত মূখ‌রোচক খাবার। এই  খাবারগু‌লো দাম কম ও ওজন বাড়ায়। তবে কায়িক পরিশ্রমীরা এরুপ খাবার বেশী খেলেও পরিশ্রম ক‌রে তা ঝাড়িয়ে ফেলে। গা‌য়ে রাখ‌তে দেয় না।
বর্তমানকালে পুষ্টিকর খাবার দামী ও কমদামী দু‌টোই আছে। খাবার বাছাই কর‌তে হবে লাইফ স্টাইল ও পরিশ্রমের প্যাটার্ন অনুযায়ী। আজকাল মা‌য়েরা বাচ্চা‌দের বাটার, চিজ ও ভাজা পোড়া অনেক আইটেম খাওয়ায়। কিন্তু বেশীর ভাগই মায়েরা বাচ্চা‌রা কতটুকু পরিশ্রম করছে তার উপর মেনুটা নির্ধারণ করেন না। যা অতি জরুরী। নতুবা বাচ্চারাও ধী‌রে ধী‌রে মোটা হ‌য়ে অকেজো হ‌তে থাকবে। সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারেও হাই ফ্যাট ও হাই ক্যালরি খাবার অধিক গ্রহনের ফলে সাধারন পরিবারেও মোটা মানুষের সঙখ্যা বাড়ছে। তাই অল্প পরিশ্রমী মানুষের উচ্চ ফ্যাট ও উচ্চ ক্যালরির খাবার পরিহার করাটা অতি জরুরি। হয়ত ধীরে ধীরে মানুষ সচেতন হবে ও সমাজে পরিবর্তন আসবে।


Wednesday, November 7, 2018

প্রাইভেট ক্লিনিক প্রাইভেট কাজ কারবার


আমি আমার নিকটাত্মীয়‌কে একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করিয়েছিলাম। স্বাভাবিক কারণে আত্মীয়া‌কে দেখা ও সেবা করার জন্য নিয়মিত ক্লিনিকটিতে যে‌তে থাকলাম। মাঝে মাঝে ঔষধ কেনা ও এটা ওটার ব্যবস্থা করার মত খুচ‌রো কাজ করে সহায়তা করলাম। ক্লিনিকটি জেলা শহরের প্রায় ২০/২২ বছর পুরানো। আমার সরকারী চিকিৎসার সুযোগ থাকায় আমি ক্লিনিকের পদ্ধতির সাথে পরিচিত নই। অনেক ক্লিনিক আছে ওয়ান স্টপ সেন্টার টাইপ। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আপনাকে ঘাটে ঘাটে ঘুরতে হয় এখানে সবকিছু অটোমেটিক। প্রথমত কোন রোগী আসার সাথে সাথে স্ট্রেচার বা হুইল চেয়ারে করে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নেয়া এবং ক্লিনিকের ওয়ার্ডে নেয়ার জন্য কিছু ইয়ং ছেলেদের ক্লিনিকরে দরজায় থাকবে। রোগী আসার সাথে সাথে তারা তাড়াহুড়ো করে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। তারপর ডাক্তারের কাছ থেকে ক্লিনিকের বেডে বা কেবিনে নিয়ে যাবে। প্রথম দেখায় আপনি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করবেন। কিছুক্ষণ পর আপনার ভুল ভাঙবে যখন আপনার কাছে স্ট্রেচারে রোগী উঠানো ও নামানো বাবত ৫০০/১০০০ টাকা দাবী করে বসবে। আপনার কাছে অযৌক্তিক মনে হলেও আপনাকে মানতে হবে। কারণ আপনার রুগীকে উঠানামা  করিয়েছে। অনেকটা নতুন জামাইয়ের হাত ধোয়ানোর মত। আপনি না চাইলেও আপনাকে হাত ধোয়ানো হবে বা টাকা নেয়া হবে। আপনি ধরে ধরে রোগীকে তুলতে পারলেও তাকে  হুইল চেয়ারে বসানো হবে বা স্ট্রেচারে করে আনা হবে এবং আপনার কাছে বিল দাবী করা হবে। যেটার সাথে ক্লিনিকের বিল জড়িত নয়। এমনকি অনেক ক্লিনিকের চাকুরীরত লোকদের বাইরে ক্লিনিককে উল্টো চাঁদা দিয়ে ওরা রোগী উঠানো নামানোর কাজ করে থাকে। অথচ এটা ক্লিনিকের সেবার আবশ্যক অংশ হতে পারত। তা না হয়ে রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের একটা মাধ্যম বলা যায়। অনেক ধনীরা হাসিমুখে টাকাটা দেন। অনেক সাধারণ মানুষের কাছে এটা চাপ মনে হবে।
এরপর আসা যাক ক্লিনিকের রুম ঝাড়ু দেয়া বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা। অনেক ক্লিনিক আছে কোন ঝাড়ুদার রাখে না। রোগীরা চাইলে তাড়া আসে ঝাড়ু দেয়। রোগীরা পয়সা দেয়। চুক্তিভিত্তিক রোগীর সাথে পেমেন্টে কাজ। রোগী সামর্থ্যবান হলে সেবা পাবে অন্যথায় রোগীর বন্দোবস্ত। তবে প্রায় সকল ক্লিনিকের কয়েকজন স্থায়ী ক্লিনার থাকে। তারা সামগ্রিক ভাবে কেবিনের বাইরের ক্লিনিকে কাজ করে। অনেক ক্লিনিকে আছে রোগী ছাড়ায়ে নেয়ার সময় ক্লিনিকের সমস্ত ক্লিনারকে মোটা অংকের একটা টাকা তারা এক সাথে দাবী করে ও রোগীকে তা দিতে হয়। আবার নার্স ও অন্যান্য স্টাফরাও রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় করে। বিশেষ করে বাচ্চা হওয়া মায়েদের জন্য জনে জনে মিষ্টি খাওয়ানোর একটা রেওয়াজ তারা রেখেছে। এই মিষ্টির খরচটা আবার টাকায় দিতে হয় কষ্ট করে মিষ্টি কেনার প্রয়োজন নেই।

দেশের সমস্ত ক্লিনিক বিশাল বিশাল বিল ধরিয়ে রোগীর গলা কাটছে তারপর যোগ হয় স্ট্রেচার বেয়ারার বিল ও অন্যান্য ব্যক্তি বিশেষের বিল। এটা থেকে মুক্তির উপায় হয়ত কোন একদিন ডাক্তাররা বা হাসপাতাল পরিচালকরা বের করতে পারবে।

ক্লিনিকগুলির নীচে ঔষধের দোকান থা‌কে। এরা ঔষধের দাম বেশী নেয়, এতে সন্দেহ নেই। তবে ভাল বিষয় হল, রিক্সা ভাড়া বা গাড়ী ভাড়া ক‌রে দূরে যে‌তে হচ্ছে না। এটা খারাপ বিষয় নয়। বিপত্তিটা হয় তখনই যখন এরা বড়াবা‌ড়ি রকম বেশী দাম নেয়।

প্রাইভেট ক্লিনিক সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক সীমাবদ্ধতা‌কে দূর করেছে। এটা সঠিক। অস্থায়ী শ্রমিক ও দালাল ইত্যাদি শ্রেণী তৈরি করছে। যা ভাল লক্ষণ নয়। চিকিৎসার সেবাগু‌লো রাষ্ট্রীয়ভাবে যত সুসংহত করা যাবে, সাধারণ মানুষ তত উপকৃত হবে। প্রতিটি ক্লিনিকে অনেক মানুষ আসেতা‌দের সুচিকিৎসা প্রয়োজন। তবে কোন ক্লিনিক সমাজের জন্য খারাপ থেকে ভালটাই বেশী ক‌রে। তাই ক্লিনিক বন্ধ না ক‌রে নিয়ন্ত্রণ জরুরী। প্রথম নিয়ন্ত্রণ; রোগী উঠা‌নো নামা‌নো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ক্লিনিকের বিলের অংশ বা ক্লিনিকের সেবার অংশ হওয়া প্রয়োজন। বাচ্চা হ‌লে মিষ্টি খাওয়া‌নোর প্রাক‌টিস ক্লিনিকে না থাকাই ভাল। যদি এগু‌লো বন্ধ করা না যায়, তাহলে রেগু‌লেট কর‌তে হবে। রোগী‌কে উঠা‌নো নামা‌নোর খরচ ঝুলিয়ে দেয়া যে‌তে পা‌রে। রোগীর কেবিন  প্রতিবার পরিষ্কারের জন্য নিদিষ্ট বিল নির্ধারণ করা যে‌তে পা‌রে। ক্লিনিকের মেডিসিন কত শতাংশ বেশী দাম রাখবে তাও রোগী‌কে অবগত কর‌তে পা‌রে। এত‌ে‌ রোগীর অ্যা‌টে‌ডেন্টরা ঔষধের দামের স্বচ্ছ ধারনা পাবে ও প্রয়োজ‌নে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য তারা বাইরের ফার্মেসি থেকে ক্রয় কর‌তে পারবে। তাই ক্লিনিকের আওতাধীন ফার্ম‌েসীগু‌লো‌তে নিয়ন্ত্রন প্রয়োজন। ক্লিনিক সমাজের অনেক উপকার করছে। কর্মসংস্থান করছে। তাই ক্লিনিকগুলো মান নিয়ন্ত্রন করে জনসেবার বাড়ানোর ব্যবস্থা করাটা অতি জরুরী।