Pages

Thursday, August 27, 2015

মধ্যবিত্তের স্যামসং গ্যালাক্সি মোবাইল

টেলিভিশনে একটা বিজ্ঞাপন আমাকে বেশ নাড়া দেয়। আর তা হল,সাধারণ চাকুরীজীবী  একজন বাবা তার মেয়ের জন্য একটি ভাল মোবাইল সেট কিনতে চান। তার জন্য মধ্যবিত্ত বাবা তার জমানো সঞ্চয় ভাঙ্গতে চান। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য দূ:খজনক একটা অনুভূতি। তবে আমার প্রশ্ন বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত মোবাইলে কি এমন কাজ করব‌ে যা কিনা স্যামসং গ্যালাক্সি মোবাইল ব্যতীত  সম্ভব নয়?
আমার মনে হয় গতির পার্থক্য ছাড়া আর কোন পার্থক্য নাই। তাহলে মধ্যবিত্ত পরিবারে ইংগিত করে এ ধরনের বিজ্ঞাপন ভুল ম্যাসেজ দেয়। মধ্যবিত্ত  পরিবারের মেয়েদের সামর্থ্য না থাকল‌েও স্যামসং  গ্যালাক্সিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করত‌েই হব‌ে। এ ধারনা হাস্যকর। অন্য অনেক কমদামী মোবাইলেও ভালভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্ভব।
আমাদের মাঝে অনেকে আছ‌ে যারা ইম‌োশনাল‌ি পরিচালিত হয়। তারা বাস্তবতা ও প্রয়‌ো‌জন দ্বারা পরিচালিত হয় না। কম্পিউটার বা ডিজিটাল  গেজেট কেনার বিষয়ে  আমার জ্ঞান হল এরূপ প্রথম‌ে  একটা কাগজ‌ে আমার ক‌ি ধরন‌ে‌র ডিজিটাল কাজ করত‌ে  হব‌ে তা লিখে  নিব। এবার হিসাবে আনব আমাদের আর্থিক সংগতি। মোবাইলের কাজের পরিধি আর আর্থিক সংগতির সমন্বয়ে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত মোবাইল সেট ক্রয় করতে পারব।
এখন আসি  বিজ্ঞাপনটির প্রসঙ্গে। মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ের কেন  স্যামসং গ্যালাক্সি ফোন প্রয়‌োজন? ইন্টারনেট ব্যবহার, ভাইবার ব্যবহার, মেইল চেক  ইত্যাদি। তব‌ে  তাক‌ে  স্যামসং গ্যালাক্সি  সিরিজের মোবাইল কিনতে  হব‌ে? এটা কেমন কথা। আমরা নিজেদের ভাব ও আভিজাত্য বাড়াতে অনেক বেশী তৎপর। তাই আমরা অনেকেই সামর্থ্যের বাইরে কাজ করি। পরে আমরা ধার, কর্জ ইত্যাদি করে সর্বস্বান্ত হই। আমাদের চাহিদাগুলো হতে হবে আমাদের সামর্থ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
স্যামসং মোবাইলে বা দামী মোবাইল কাজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে এটা আবশ্যক নয়। শখ বা আভিজাত্যের জন্য হয়তবা এটা প্রয়োজন।  আমি একটা খবরে অনেক মর্মাহত হয়েছিলাম। তা হল হংকং এ একটা ছেলে আই-ফোন কেনার জন্য নিজের কিডনি বিক্রি করে দেয়। এটা অত্যন্ত দূ:খজনক। প্রযুক্তি বিকাশের যুগে মানুষের শখ মানুষকে এত বেশী ইমোশনাল করে দেয় যে মানুষ মরাত্মক ও ভয়াবহ কাজ করতে পিছপা হত না। ছেলেটি নিরীহ বলে কিডনি বিক্রয় করেছে। দুর্দান্ত তরুণ হলে হয়ত বা মানুষ খুন করে টাকা নিত। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে তার ফ্যাশন বা  শখ মিটাতে স্যামসং গ্যালাক্সি ফোন ক্রয় করতে বাবা মাকে ঋনগ্রস্থ করে ফেললে তা সত্যিই দূ:খজনক হবে। এ ধরনের তরুণীরা বা তরুণরা মিতব্যয়ী হওয়াটা অত্যন্ত দূরহ হবে। জীবনভর ফ্যাশন সচেতন ও পারিপার্শ্বিক সামাজিক প্রতিযোগীটায় বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে।

মানুষের শখ, আবেগ ও ফ্যাশন সচেতনতা একটা ভয়াবহ বিষয়। বিশেষ করে তরুণ তরুণীরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত। তাই ১০,০০০ টাকার মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও সচ্ছল পরিবারের বন্ধু/বান্ধবের কাছে মূল্যবান গ্যালাক্সি ট্যাব দেখে অসচ্ছল পরিবারের সন্তানরা বাবা মাকে ইমোশনালী ব্ল্যাক মেইল করে সংগতির বাইরে ধার কর্জ করে দামী মোবাইলের মালিক হতে চায়। ঘরে ঘরে হয়ত এরূপ জ্বালাতন আছে। অনেকে বলবেন এটা যুগের চাহিদা। আর আমার কাছে মনে হয় এটা অপচয়। আমাদের সন্তানদের প্রয়োজন অনুযায়ী চাহিদা তৈরি করতে পারলে মধ্যবিত্ত পরিবারের পিতামাতা শান্তিতে থাকতে পারবেন। আমাদের দেশের বিজ্ঞাপন যারা প্রচার করেন তাদের সচেতনতার অভাব আছে। আমাদের সামাজিক ক্ষতিকারক কোন বিজ্ঞাপন ভাল আইডিয়া ও উন্নত নিন্মান শৈলীর হলেও প্রচার করা উচিত নয়। কারণ এ বিজ্ঞাপনে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের এ ধরনের মোবাইল ক্রয় করার জন্য পিতামাতাকে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। স্মার্ট ফোনের ব্যবহার কি এবং এটা কিভাবে কাজে লাগে? এটা এ যুগের জেনারেশনকে শেখাতে হবে না। তবে মিতব্যয়ীটা শেখানোর প্রয়োজন এর জন্য এ যুগের জেনারেশনকে সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য শেখানোর প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন ও শখ এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা প্রয়োজন। আমাদের সকলের প্রয়োজন ভাল থাকার জন্য মিতব্যয়ীতা ও বাহুল্যবিহীন জীবন ধারণ করা। এতে আছে শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য।

Thursday, August 20, 2015

বংশমূলের অকৃত্রিম টানে ফিরে চল গ্রামে

পৃথিবীর এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে নিজের গ্রাম, নিজের এলাকা, নিজের জেলা ও নিজের দেশ নিয়ে ভাবনা ও তা নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকাটা অনেকটাই অমূলক ভাবনা। সারাদেশ আমার দেশ। সারাটা পৃথিবী আমাদের পৃথিবী। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যে কাজ করুক তার বাইরে নিজ জাতি বা পূর্বসূরিদের ভাবনা না হওয়াটা অনেকটা স্বার্থপরতার সামিল। অর্থাৎ হৃদয়ে স্বজাতি ও দেশ হল মুল বিষয়। মা ও মাতৃভূমি তার প্রতি রয়েছে আমার চিরন্তন দুর্বলতা। ব্যক্তিগত আয় উন্নতির জন্য আমরা আত্মীয় পরিজন ত্যাগ করে নিজের এলাকা ত্যাগ করি। আমি মাঝে মাঝে আমার গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের চৌব্বাস গ্রামে যাই। একবার গ্রামে যাওয়ার পর আমার গ্রামের চাচাত ভাই আমাকে বলল, আমি কিভাবে গ্রামের মানুষকে ভুলে গেলাম। সে গ্রামে থেকে পাকা বাড়ী করেছে। টাইলস দিয়ে টয়লেট করেছে। মটর লাগিয়ে রানিং ওয়াটার করেছে। সুন্দর আসবাবপত্র দিয়ে গ্রামে নিজের আবাসটিকে সাজিয়ে নিয়েছে। কুমিল্লা শহরে বিটিসিএল অফিসে সে চাকুরীরত আর তার স্ত্রী গ্রামের একটা হাই স্কুলে মাস্টারি করে। কিছুদিন পূর্বে সে সিলেটে চাকুরী করে বেশ কিছুদিন হল সে কুমিল্লায় বদলী হয়ে এসেছে। এখন পৈত্রিক ভিটায় দালান করে স্থিত হয়েছে। আমি তাকে আমার জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরলাম। প্রথমত: আমি জন্মের পর হতে আমার পিতার গ্রামে আমরা ছিলাম না । পিতার চাকুরীর সুবাদে দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে থেকে ঘুরে বেরিয়েছি। তাই ভাল লাগার জেলা আমার জন্য কুমিল্লা নয়। আবার বিয়ে করার সুবাদে ও জামাই আদর পাওয়ার সুবাদে বগুড়া থাকা খাওয়া ও অবস্থানের দিক দিয়ে মন্দ মনে হয়নি। এখন আমি কুষ্টিয়াতে চাকুরী করছি। কুষ্টিয়াও আবাসনের বিচারে মন্দ নয়। আবার বিদেশে অর্থাৎ আফ্রিকায় গিয়েছি। কঙ্গো ও সিয়েরালিওনের অবস্থা আবার আমাদের দেশের থেকে ভাল নয়। সেসব দেশে থেকে আন্তর্জাতিক বাসিন্দা হওয়ার মোটেই শখ নেই। আমাদের বাংলাদেশীরা যখন জীবিকা উপার্জনের জন্য বিদেশ যায় তখন তার পরিবার থাকে বাংলাদেশে। তাই উন্নত দেশের উন্নত পরিবেশ তার জীবনে তেমন একটা রেখাপাত করে না। যদি কখনও আমরা কোন দেশে স্বপরিবারে থাকি তবে সে দেশ আমাদের জীবনে যথেষ্ট রেখাপাত করে বৈকি। তাই কখন কোথায় মানুষ তার আবাসন গড়ে নিবে এটা চিন্তা করে বের করাটা দূরহ বিষয়। আমার কাজিন যে উপদেশ মুলক বক্তৃতা দিয়েছে তার জন্ম, পড়াশোনা ও চাকুরী নিদ্দিষ্ট এলাকা কেন্দ্রিক। তাই তার চাকুরী শেষে নিজেকে স্থিত হওয়ার স্থান নির্বাচন করাটা সহজ। আমার বাবা ও মা ছিল আত্মীয় চাচাত ভাই বোন। তাদের রুট এক জায়গায় হওয়ায় রিটায়ারমেন্টের পর আমার বাবার গ্রামে ফিরে যাওয়াটা জটিল কোন বিষয় হয়নি। আমি কুমিল্লার অরিজিন ও আমার স্ত্রী বগুড়ার অরিজিন হওয়ায় মাঝে মাঝে চিন্তা করি আমার সন্তানরা কোন দিকে যাবে। চাকুরীর কারণে আমি আগাগোড়াই কুমিল্লার গ্রাম থেকে বেশ দূরেই থাকছি। সন্তানদের জটিল যাতায়তের রাস্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণ না হওয়ায় তেমন একটা গ্রামে নিতে পারিনি। হয়তবা যে খরচ করে গ্রামে নিয়ে যেতে হয় সেটা চাকুরীর নিয়মিত বেতন থেকে বের করা কষ্টকর। এর জন্য জমা টাকা ভাঙ্গতে হবে। তাই অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তৈল কিনে নিজ কারে বা ভাড়া করা গাড়ীতে প্রায় ৬০০ কি:মি: যাতায়াত করতে ইচ্ছে করে না। কেবলমাত্র বাবা ও মাকে দেখার দায়বদ্ধতা ছাড়া। অন্য দিকে আমার বড়বোন, বড়ভাই, ঢাকা থেকে প্রতিনিয়ত বাবা মাকে দেখতে বাড়ীতে যাচ্ছে। স্বল্প খরচে তাদের বেড়ানোর জায়গা হল গ্রামে গিয়ে বাবা মাকে দেখে আসা। আমার মেঝ বোন ও ছোট বোন কুমিল্লা শহরে ও নিকটবর্তী উপজেলায় থাকে বলে প্রতিনিয়ত তাদের দেখতে যাচ্ছে। চাকুরীজীবিদের জন্য দূরত্ব ও খরচ একটা বড় বিষয়। নিদ্দিষ্ট বেতনে যারা চাকুরী করে। তারা স্বীয় অবস্থানে থাকা, খাওয়া ও কাপড় চোপড়ের মান বজায় রাখতে নির্ধারিত বেতন অধিকাংশ চাকুরীজীবিরই টানা পোড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অভ্যাস আর একটা বিশাল বিষয়। আমি আজ যে জীবন ধারায় অভ্যস্ত সেটা গ্রামে পাওয়া যাবে কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ। একসময় দেশের প্রতি ভালবাসার কারণে নিজ এলাকার মানুষের প্রতি ভালবাসা উদ্বেলিত হত। এখন বাস্তবতা চিন্তা করলে মনে হয় ভৌগলিক সীমানার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। গ্লোবালাইজেশন প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে গ্রাম তো হিসাবেই নেইআমার কিছু বন্ধু বিভিন্ন দেশে চিরস্থায়ী ভাবে থাকার পরিকল্পনা করছে। কারণ তারা( স্বামী ও স্ত্রী ) ফিরতে চাইলেও উন্নত দেশের উন্নত সামাজিক নিরাপত্তায় ও ব্যবস্থায় সন্তানরা অনেক অভ্যস্ত হয়েছে। তারা দেশে বা নিজ এলাকায় পরিবার সহ বেড়ানো ব্যতীত ফেরত আসাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। দেশপ্রেম হয়তবা দেশে ফেরত এসে অবস্থান করে ভাল মন্দ কাজ করবে সে সংজ্ঞায় আমরা যেতে পারব না। অনেক চেষ্টা করলেও কুমিল্লার গ্রামে আমার সন্তানদের রাখতে পারব কিনা সন্দেহ। হয়তবা তাদের বেড়াতে নেয়া যেতে পারে। তাই জীবনের পরিকল্পনায় সন্তানদের দিয়ে গ্রামে থাকা হবে না। তবে গ্রামের নির্মল পরিবেশে স্ত্রী রাজি থাকলে সস্ত্রীক থাকা যায় । নতুবা জমির আয় রোজগার আনার জন্য ভবিষ্যতে গ্রামে যাওয়া আসা করা যাবে। তবে বছরে ১২ মাসের মধ্যে তিনমাস গ্রামে থাকলেও অনেক কিছু করার থাকবে। প্রথম কাজটা করতে হবে মিনিমাম নিজের স্ট্যান্ডার্টে গ্রামের বাসস্থানের রিনোভেশন করতে হবে। এখন গ্রামে থাকার জন্য রিনোভেশন অনেক অনেক সহজ কাজ। কারণ গ্রামেও মফ:সল শহরে ঢাকার সব নির্মাণ সামগ্রী পাওয়া যায়। রাস্তা ও যানবাহন চলাচলের অনেক উন্নতি হয়েছে। কুরিয়ার ও ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের বদৌলতে গ্রামে সুন্দর স্থাপনা করা সম্ভব। গ্রামে শহর থেকে কম খরচে সুন্দর স্থাপনা করা সম্ভব। আমাদের মত মধ্যম মানের চাকুরীজীবিদের জন্য বড় শহরে উন্নয়ন মূলক কাজ করাটা অনেক কঠিন। অনেক ধনীর ভিড়ে নিজের দানটুকু খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু গ্রামে একটা ছাত্রকে পড়ার খরচ দিলে ও একটা ল্যাপটপ বিতরণ করলে তা অন্যদের আশার আলো দিবে। গ্রামের লোকেরা তখন নিজেদের অনেক বেশি উজ্জীবিত মনে করবে। তারা আমাদের মত প্রবাসী বা দূরে অবস্থানকারীদের নিয়ে গর্ববোধ করবে। গত ২৮ এপ্রিল প্রথম আলোর খবরে দেখলাম সিলেটের একজন প্রবাসী ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে একটি ব্রিজ তৈরি করেছেন। কারণ এ প্রবাসী জেনেছেন তার দাদীকে ব্রিজটি না থাকায় সময় মত হাসপাতালে নেয়া যায়নি। এতে তার দাদী মারা যায়। প্রবাসী যখন লন্ডনে যায় তখন তার বয়স ছিল ৬ বছর। আজ অনেকদিন পর তার রক্তের সম্পর্কের শোধের একটা চেষ্টা করেছে । সে আবার ব্রিজ উদ্বোধনের উপলক্ষে ১৪ দিনের জন্য বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছে। এটাকে আমরা দেখব যেখানেই থাকুক হৃদয়ে বাংলাদেশ হিসাবে। আমাদের দেশের অনেকের সন্তানেরা পড়াশোনার জন্য বিদেশে গিয়ে সেখানেই থাকতে অভ্যস্ত হয়েছে। কিন্তু তারা কোন না কোন সময় তার পিতা ও মাতার দেশের মানুষের জন্য ভূমিকা রাখছে বা রাখার চেষ্টা করছে। অভ্যস্ততার জন্য বাংলাদেশে না থাকতে পারলেও সেই গ্লোবাল নাগরিকদের কাছে তার রুটের বা অরিজিনের জন্য কিছু করার জন্য আমরা অবশ্যই আশা করতে পারি।
আমি একজন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলাম যিনি ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অনেক দেশ ঘোরেন। কিন্তু অবকাশ যাপনের জন্য রিসোর্ট টাইপ বাংলো বানিয়েছেন প্রত্যন্ত গ্রামে। তার এ স্থাপনা সবার নজর কারে। আমি তার  এই উদ্দ্যোগে বেশ উৎসাহ দিয়েছিলাম। প্রথমত: গ্রামে মাঝে মাঝে এসে বেড়াব তারজন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করাটা তখনই যায় যখন কারো কাছে যথেষ্ট পরিমাণ সারপ্লাস টাকা থাকে। এর জন্য যথেষ্ট অব্যবহৃত বাড়তি টাকা প্রয়োজন। ঢাকা শহরে কয়েক কোটি টাকার আবাসন নিদ্দিষ্ট জায়গায় সীমিত পরিসরে বসবাস। আর গ্রামের অল্প মূল্যের জমিতে মনের খেয়াল খুশি মত সুন্দর একটা আবাসন তৈরি করলে মন্দ হয়না । বিশেষ করে শহর থেকে বেশী পরিমাণ গ্রীনারী পাওয়া যাবে। বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার মত বিস্তৃত জায়গা পাওয়া যাবে। এ ধরনের আবাসন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর নামক ইউনিয়নে দেখেছি। সৌখিন মালিক তার এ গ্রামটি তার প্রবাসী কন্যা ও তার স্বামীকে উপরন্তু তার অনেক প্রবাসী বন্ধুবান্ধবকে যথেষ্ট আকর্ষিত করতে পেরেছেন। তারা মহা আনন্দে ফারুক সাহেবের গ্রামের সেই রিসোর্টে বেড়িয়ে যাচ্ছেন।
 গ্রামের থাকাটা আমাদের সকলের কাছে অত আনন্দের নয়। তবে আর্থিকভাবে সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ যখন গ্রামে কিছু করে তখন তা আমাদের কাছে বিষয়গুলি বেশ ইতিবাচক মনে হয়। একজন ব্যক্তি তার মাকে স্মরণ করার জন্য গ্রামে যাওয়া। আর মায়ের কবরকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছেন মসজিদ, হাফিজি মাদ্রাসা ইত্যাদি। আর গ্রামে যখন আসবেন তখন পরিবারের থাকার স্থানটি যদি আরামদায়ক ও আধুনিক হয় তবে গ্রামে গিয়ে যে কষ্টটা চিন্তায় আছে তা কিন্তু হয় না।
আমার বাবার কারণে আমার গ্রামে যাওয়াটা নতুন কোন বিষয় নয়। আমার বাবা ১৯৯১ সালে রিটায়মেন্টের পর গ্রামে চলে যান আর তখন থেকে গ্রামে আছেন আর বাবা ও মার টানে আমাদেরও যেতে হয় গ্রামে। বাবা গ্রামে না থাকলে আমরা গ্রামে যেতাম কিনা এটার বিষয়ে আমার কিছু সন্দেহ রয়েছে।

যদি সামর্থ্য হয় আমারও চিন্তায় আছে গ্রামে বেশ কিছু জনহৈতষী কার্যক্রম চালু করা। গ্রামে একাধিক বার যাওয়া আসা করা। পৈতৃক সম্পত্তি গুলো গুছিয়ে নিয়ে ইনকাম জেনারেটিং করা। একটা বেড়ানোর উপযোগী আবাসন তৈরি। তবে বিলাসিতা পূর্ণ নয়। কেবলমাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি থাকার স্থান। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায়ী জনাব ফারুকের সুরম্য বাসস্থান ও অন্যান্য স্থাপনা আমাকে “বংশমূলের অকৃত্রিম টানে ফিরে চল গ্রামে” এরূপ একটা অনুপ্রেরণা দিয়েছে। অবসর যাওয়ার পরে সেই ইচ্ছা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রইলাম।

Thursday, August 13, 2015

আইপিএসের বিকল্প সোলার হোম সিস্টেম

চাকুরীর কারণে গ্রামের বাড়ীতে ঘন ঘন যাওয়া হয় না। পারিবারিক কর্তব্যে পিতামাতার দেখা সাক্ষাতের দায়িত্ব হিসাবে গ্রামে মাঝে মাঝে আমরা অনেকেই যাই। আমার গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নে। কুমিল্লা জনবহুল এলাকা। এখন প্রতিটি পরিবারে একাধিক সদস্য বিদেশে থাকে। প্রায় প্রতিটি পরিবারে কেউ না কেউ আর্মি, পুলিশ, বিজিবি ও কোন না কোন সরকারী চাকুরী করে। অধিকাংশ পরিবারের ভূসম্পত্তির কৃষি ও অন্যান্য উৎস হত গড় আয় মাসিক ২০০০০ টাকার নীচে না। পাকা বাড়ী। অনেকেই গ্রামে দুই তালা/তিনতালা করেছে। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে আমাদের সম্পূর্ণ শশীদল ইউনিয়নে একটি দোতালা বাড়ী ছিল। আজ দুইতলা ও তিনতালা বাড়ীর সংখ্যা শতাধিক। এমনকি কয়েকটি পাঁচতলা হয়েছে। কেউ কেউ বাড়ীতে এয়ার কন্ডিশন লাগিয়েছে। কেউ কেউ আবার গাড়ীও রাখছে। গত বিশ বছরে গ্রামের এ পরিবর্তন অবাক করার মত। গ্রামের বাজারে ( ইউনিয়নের থেকে ছোট বাজার) ওয়ালটনের টিভি, ফ্রিজ, এসি ও মোবাইল ফোন ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ক্যাটালগ দেখে অর্ডার দিলে যে কোন জিনিস বাড়ীতে পৌঁছে দেয়। আমার মনে পরে ১৯৭৮ সালে আমার বাবা তার পকেট রেডিও বাজানোর জন্য গ্রাম থেকে লোক পাঠিয়ে শহর থেকে পেন্সিল ব্যাটারি আনিয়ে ছিলেন। ১৯৯১/৯২ সালে গ্রামের বাজারে বেনসন সিগারেট পাওয়া যেত না। ছুটিতে যাওয়ার সময় কুমিল্লা শহর থেকে বেনসন নিয়ে গ্রামে যেতাম। আজ গ্রামে মোবাইল ফোনে অর্ডার দিলে গ্যাস সিলিন্ডার, টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ হোম ডেলিভারি দিচ্ছে। শহরে থাকলে গ্রামের পরিবর্তনগুলো অনুধাবন করা যায় না। পণ্য বিক্রি করার জন্য গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে শো রুমের ও দোকানের লোকজন মোবাইল নম্বর লেখা কার্ড দিয়ে আসছে। শুধু প্রয়োজন কলটি করা ও পণ্যটি নেয়া।
          কয়েকদিন আগেও এ পরিবর্তনটি আমার চোখে পড়েনি আর তা হল বিদ্যুৎ থাকার পরও সোলার প্যানেল লাগানো। গ্রামের বাড়ীতে পল্লী বিদ্যুৎ এর বিদ্যুৎ থাকার পরও বাড়ীতে বাড়ীতে সোলার প্যানেল লাগানো হচ্ছে। আমি আমার আত্মীয় স্বজনদের কাছে জানতে চাইলাম, আপনারা আইপিএস না কিনে সোলার হোম সিস্টেম কেন কিনলেন?
তাদের পরিষ্কার উত্তর, গাছপালা পরে তার ছিঁড়ে পল্লী বিদ্যুৎ এর লাইন ২/৩ দিনও থাকে না। এছাড়া দিনে ও রাতে নিয়মিত লোড শেডিং বিদ্যমান। তখন আইপিএস ব্যাটারি চার্জ করাই সম্ভব হয় না। তাই আইপিএস রেখেও অন্ধকারে থাকতে হয়। এর বিকল্প জেনারেটর। কিন্তু সোলার বিদ্যুৎ তারচেয়েও সাশ্রয়ী। বিদ্যুৎ থাকুক আর না থাকুক রাতে দুই/তিন ঘণ্টা সোলার লাইট নিশ্চিতভাবে জ্বালানো যায়। এছাড়া সোলার প্যানেল তিনবছর মেয়াদি স্বল্প সুদের কিস্তিতে ক্রয় করা যায়। বাড়ীতে বাড়ীতে এসে প্রতি মাসে সোলারের লোকজন মেরামত করে ও সোলারের কিস্তি নিয়ে যায়। তাই সব সময় সোলার প্যানেল চালু থাকছে। সোলার প্যানেল চালু না থাকলে কিস্তির টাকা আর দেয়া হয় না।
আইপিএস এর বিপরীতে সোলার প্যানেল ব্যবহার করায় গ্রামের লোকদের আমি সাধুবাদ জানাই। তারা প্রতি রাতে নিয়মিত লোড শেডিং এ জন্য আনুমানিক ২০/২৫ ওয়াট লোড দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে চালনা করে আনুমানিক ৬০/৭৫ ওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। যা কিনা জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে রিনিউয়েবল শক্তি হিসাবে যোগ হচ্ছে।
আমাকে একজন ব্যবহারকারী জানাল। এখন সাধারণত কেউ আর কেরোসিনের হারিকেন বা কুপি ব্যবহার করে না। বিদ্যুৎ না থাকলে চার্জার লাইট বা মোমবাতি ব্যবহার করে। চার্জার লাইটেরও আইপিএস এর মত সমস্যা। অনেক সময় চার্জ দিতে মনে থাকে না আর মনে করে চার্জ করতে না পারলেই বিপদ। আবার চার্জ করে নিলে চার্জার লাইট চলে সাধারণত দুই/তিন ঘণ্টা। যদি এর বেশী সময় বিদ্যুৎ না থাকে তবেই সমস্যা। মোমবাতির ব্যবহার করতে হয়।
তাই অনেক সময়ই দেখা যায় মাসে প্রায় একশ/দুইশ টাকার মোমবাতি লেগে যায়। সেই হিসাবে মাসিক ৩০০/৪০০ টাকা মাসিক কিস্তি দিয়ে ২৫/৪০ ওয়াটের সোলার হোম সিস্টেম ক্রয় করলে মন্দ হয় না? তিন বছর কিস্তি দিয়ে সোলার হোম সিস্টেম নিজের হয়ে যাচ্ছে। সোলার হোম সিস্টেম ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ রিপিয়ার ও মেনটেইন্যান্স করার পর সোলার প্যানেল ২০ বছরের বেশী সময় ব্যবহার করা যায়।
বর্তমানে প্রায় ২০-৩০ প্রতিষ্ঠান সোলার হোম সিস্টেম বিক্রয় করছে। তার বাংলাদেশ সরকারের ইডকলের মাধ্যমে ৪% ঋণ সহায়তা পাচ্ছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করে নিলে তা অবশ্যই দেশের জন্য ভাল । আইপিএসও অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করে ব্যাটারি চার্জ করে। তাই আইপিএস এর মাধ্যমে ব্যাটারি চাজিং করে বিদ্যুৎ মজুদ করতে অনেক টুকু বিদ্যুৎ চার্জারের হি-টিং এর মাধ্যমে খরচ ও অপচয় হয়। পুনরায় ব্যাটারি বিদ্যুৎ এসিতে কনভার্ট করে লাইট ফ্যান চালালে প্রচুর বিদ্যুৎ শক্তির অপচয় হয়। মোট কথা আইপিএস এর মাধ্যমে লাইট ফ্যান চালাতে প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। অপরদিকে সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেই বিদ্যুৎ খরচ করা হচ্ছে আর এভাবেই লোড শেডিং এ আইপিএস অপেক্ষা সোলার হোম সিস্টেম অনেক বেশী সাশ্রয়ী ও জাতীয় জিডিপি গ্রোথ এ ভূমিকা রাখবে। সবশেষে বলা যায় সোলার হোম সিস্টেম বিক্রেতারা কিস্তির মাধ্যমে আইপিএস এর বদলে সোলার সিস্টেম বাজারজাত করে একটা প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।

আর এটা মনে হয় আরো উৎসাহব্যঞ্জক হচ্ছে কারণ আইপিএস ক্রয়ে সরকার কোন ঋণ সুবিধা দিচ্ছে না। আর কোন কোম্পানীও আইপিএস সোলার সিস্টেমের মত সহজ সরল কিস্তি সুবিধা দিচ্ছে না। পরিশেষে বলব সকলে আইপিএস ক্রয় পরিহার করে বাসস্থানের জন্য সোলার হোম সিস্টেম ক্রয় করলে বাংলাদেশ রিনিউবল বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আইপিএস চার্জ বাবদ যে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হত তা সাশ্রয় হবে। বিদ্যুৎ বিল কমবে। পরিশেষে ছোট ছোট সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে করতে একসময় বড় বড় সোলার সিস্টেমের আগ্রহ বাড়বে। যেমন তিন বছরে একটা সোলার হোম সিস্টেম ক্রয় করার পর পরের তিন বছরে চলমান সিস্টেমটি বড় করার চাহিদা হবে। তাই আইপিএস না কিনে সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করাটাই হবে আধুনিক সমাধান। সরকারী স্থাপনায়ও আমরা আইপিএস ব্যবহার না করে ধীরে ধীরে সোলার হোম সিস্টেম চালু করতে পারি। আমাদের এ ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগে আমরা এগিয়ে যাব। আমরা এগুতে পারলে আমাদের সাথে দেশও এগিয়ে যাবে।

Thursday, August 6, 2015

ক্যাম্পাসের পানি ব্যবস্থাপনায় সাবমার্সিবল পাম্পের সাশ্রয়ী বিনিয়োগ

২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে আমি কুষ্টিয়া সেক্টর সদর দপ্তরে থাকাকালীন সময়ে সেখানকার পানি বিতরণ সিস্টেমে একটা ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়। এটা করা হয় মূলত বৈদ্যুতিক বিল সাশ্রয় করার জন্য। কুষ্টিয়ার সেক্টর কমান্ডার পরীক্ষামূলক কাজটির অনুমোদন দেন। সম্পূর্ণ পরীক্ষাটিতে আনুমানিক ১,৫০,০০০ টাকা খরচ হয়। তবে এর ফলাফল বিরূপ হলে সম্পূর্ণ খরচটাই বিফলে যেতে পারত। এটি একটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রজেক্ট ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, পাঁচটি মটর, দুইটি গ্রাউন্ড ট্যাংকির সম্পূর্ণ সিস্টেম বাদ দিয়ে একটি মাত্র সাবমারসিবল পাম্প ব্যবহার করে পানির বিতরণ ব্যবস্থা তৈরি করা। পরে এ পরীক্ষায় সফলতা পাওয়ায় তা পানি বিতরণের জন্য মূল ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
একটা ক্যাম্পাসে যখন পরিবারসহ আনুমানিক ১৩০০/১৪০০ লোক বসবাস করে সেখানে পানি উত্তোলনের জন্য বেশ বড় ধরনের সিস্টেম ব্যবহারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পানি উত্তোলনের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের একটা সমীক্ষা চালালাম। ডিপ টিউবওয়েল থেকে একটি ভার্টিকাল পাম্প (উপুড় করে লাগানো মটর) দিয়ে আনুমানিক ২০,০০০ লিটার ধারণ ক্ষমতার দুইটি গ্রাউন্ড রিজার্ভারে পানি দেয়া হয়। সেই দুইটি গ্রাউন্ড রিজার্ভার থেকে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের সাহায্যে পানি দালানের ছাদে তোলা হয়। প্রতিটি পাম্প হাউসে দুইটি করে পাম্প আছে। এভাবে দুইটি গ্রাউন্ড রিজার্ভারে দুইটি দুইটি করে চারটি পাম্প আছে। আমি সবগুলো পাম্পের আনুমানিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের একটা হিসাব করলাম। ভার্টিক্যাল পাম্পে আনুমানিক ২০,০০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল হয়। দুইটি রিজার্ভারের একটিতে আনুমানিক ৩০,০০০ টাকা অন্য একটি রিজার্ভারে আনুমানিক ২০,০০০ টাকা বিল হয়। তিনটি অবস্থানের পাঁচটি পাম্পে আনুমানিক ৭০,০০০ টাকা বৈদ্যুতিক বিল হচ্ছিল। অনেক হিসাব নিকাশ করে দেখা গেল পাঁচটি পাম্প ব্যবহার না করে একটিমাত্র সাবমাসিবল পাম্প ব্যবহার করে একই রকম পানি পাওয়া যাবে। তার জন্য একটি মাত্র পাম্প লাগাতে হবে। তা হল সাবমাসিবল পাম্প। সাবমার্সিবল পাম্প পানিতে থাকার কারণে পানিকে টেনে আনার জন্য কোন শক্তি খরচ করতে হয় না। অর্থাৎ সাকসনে কোন শক্তি খরচ নেই। কেবলমাত্র পানি পুশ বা থ্রো করার জন্য শক্তি ব্যয় হয়। এ কারণে সাবমার্সিবল পাম্প এনার্জি এ্যাফিসিয়েন্ট। একটা সাবমার্সিবল পাম্প শুধুমাত্র দিনে ৬ ঘণ্টা চালনা করে আনুমানিক ৬x২০=১২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। দিনে আনুমানিক ১২০x৮=৯৬০ টাকা খরচ। মাসে খরচ হল ৯৬০x৩০=২৮,৮০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ বর্তমান পাঁচ পাম্পের সিস্টেমের তুলনায় আনুমানিক প্রায় ৪১,২০০ টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। একটা ২০ কিলোওয়াটের সাবমার্সিবল পাম্পের দাম ১,৭০,০০০ টাকা ( ২০১৫ সালের মূল্য) । এ পাম্পে যদি পানির সিস্টেমে মাসে সাশ্রয় হয় ৪১,২০০  টাকা তবে আনুমানিক ৪/৫ মাস বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের টাকা দিয়েই একটা সাবমার্সিবল পাম্প ক্রয় করা যাবে।
ক্যাম্পাসের পানি বিতরণ সাধারণত বেশীর ভাগ স্থানে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের সাহায্যে করা হয়। কারণ সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের কিছু সুবিধা রয়েছে। এটা সাধারনতঃ সাবমারসিবল পাম্পের মত পানির নীচে না থাকার কারণে দাম কম। সাবমারসিবল পাম্পে ওয়াটার সীল্ড করা হয়। এটা খুবই ব্যয়বহুল প্রযুক্তি। আর এ কারণে সাবমারসিবল পাম্পের সাধারণত দাম বেশী। সাবমারসিবল পাম্প আমাদের দেশে যেখানে পানির স্তর নীচে সে সমস্ত স্থানে ব্যবহার করা হয়। তবে চুয়াডাঙ্গা বিজিবি তাদের গ্রাউন্ড রিজার্ভ ট্যাংকে অধিনায়ক পরীক্ষামূলক ভাবে হরাইজেনটাল ভাবে ব্যবহার করে সফলতার সাথে ওভারহেড ট্যাংকে পানি তুলছে। যে পানি তুলতে তাদের ৬০  হর্স পাওয়ারের ৫ ঘন্টা প্রয়োজন হত সে পানি তুলতে ২০হর্স সাবমারসিবল পাম্পের ৪ ঘণ্টা প্রয়োজন হবে। কাজেই দেখা যাছে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে যা কিনা পরীক্ষিত। যদি আপনার ক্যাম্পাসে পানির জন্য ১ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল হয় তা সাবমারসিবল পাম্প ব্যবহার করে সহজেই ৩০-৪০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
দেশের মূল্যবান বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সাথে পানি বিতরণের দক্ষ প্রযুক্তির ব্যবহার অতীব প্রয়োজন। আমরা সকলে এ বিষয়ে সচেতন হলে দেশ এগিয়ে যাবে। কারন বাংলাদেশে এখন সাবমারসিবল পাম্প প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। নষ্ট হলেও সহজে মেরামত করা যায়।