Pages

Thursday, September 24, 2015

সপরিবার বনাম পৃথক পরিবার

বিবাহিত জীবনের ১৮ বছর (২০১৫ সাল অবধি) বদলী বহুল জটিল চাকুরী জীবনে সপরিবার থাকতে থাকতে ভয় পাই কবে পৃথক পরিবার হতে হয়। হয়তবা বড় সন্তানের এইচএসসির পর ভাল কোন স্থানে ভর্তি হতে না পরলে সমস্যা শুরু হয়ে যাবে। পৃথক পরিবার হওয়ার ঘণ্টা বেজে যাবে। দীর্ঘদিন পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে ও বাংলাদেশের আনাচে কানাচে চাকুরী করেছি। ঢাকায় কখনও চাকরীর সৌভাগ্য না হলেও ঢাকায় চাকুরীর চিন্তা করছি না। একটা মাত্র ভয়ে আর তা হল সন্তানরা একবার রাজধানীর জীবনের মজা পেলে রাজধানী ছেড়ে বের হতে চাইবে না। তখন পৃথক পরিবার কপালে জুটবে। চাকুরীর সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে পরিবার নিয়ে থাকাটা হল বিশাল সেকরিফাইজ ও কষ্টকর একটা কাজ। আমি হয়তবা পরিবারকে  এক জায়গায়  রেখে আমি অন্য স্থানে চাকুরী করলে বড় আনন্দে কাটাতে পারতাম। একসাথে থাকলে ছোট শহরে অনেক কষ্ট হয়। সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। পাহাড়ে থাকতে সন্তানদের ম্যালেরিয়া হয়েছে। তারপরও পার্বত্য চট্টগ্রামে সপরিবারে থেকেছি। আমার স্ত্রী জন্ম ও পড়াশোনা ইত্যাদির কারণে ঢাকায় কখনো বসবাস করেনি। এর ফলে সে বরং ঢাকাকে ভয় পায়। আর এটা আমার জন্য একটি ভাল দিক ।  আমার ঢাকায় বাড়ী থাকলেও ট্রাফিক জ্যাম আর খোলামেলা না থাকার কারণে আমি ঢাকা ভয় পাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্মকর্তাদের পৃথক পরিবারের মূল কারণ ভবিষ্যতে রাজধানীতে সেটেলড হওয়ার ইচ্ছা। যেহেতু ভবিষ্যতে রাজধানীতে সেটেলড হবে তাই সন্তানদের পড়াশোনার জন্য পূর্বেই ঢাকাতে স্থির হয়ে যাওয়া ভাল।  যুগ যুগ ধরে সন্তানদের পড়াশোনার জন্য পিতামাতা নিজের জীবন যৌবন বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের নিয়ে মা একদিকে আর বাবা অন্যদিকে অবস্থান করছে। আমি তাদের সেকরিফাইজকে সাধুবাদ জানাই।
আমি একবার এক বন্ধুর সংস্পর্শে আসলাম। সে বন্ধু তার প্রথম সন্তানের ৫/৬ বছর থেকে পৃথক পরিবারে চলে যেতে হয়েছে। কারণ সন্তান অনেক মেধাবী হওয়ায় স্কলাসটিকার মত উন্নত প্রতিষ্ঠানে চান্স পেয়েছিল। অথচ বিয়ের পরবর্তী  এই সময়গুলোতে আমরা অনেকেই স্ত্রী ও পরিবার থেকে পৃথক হওয়া কল্পনা করতে পরিনি। সন্তানদের উন্নত পরিবেশে পড়াশোনা করানোর জন্য এই ত্যাগকে স্যালুট করতে হয়। হয়ত স্কলাশটিকার মত উন্নত প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে সেই সব সন্তানরা দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে বা উন্নত দেশের উন্নত প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে মধ্যবিত্ত বাবা মার মূর্খ উজ্জ্বল করবে।
আমার এই সুদীর্ঘ চাকুরী জীবনে যেহেতু গত ১৮ বছর বিভিন্ন সেনানিবাসে ১৩ বার বাসা বদল করে চাকুরী করে এসেছি। সেহেতু আমার অনেক অনেক পরিবারের সাথে জানাশোনা হয়েছে। পৃথক পরিবার হওয়ার যেসব কারণ চিন্হিত করা যায়:
১. স্বামী ও স্ত্রী দুইজন চাকুরীজীবী।
২. ঘন ঘন বদলী ও বাচ্চাদের স্কুল বদল।
৩. সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা।
৪. সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোর কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে আবদ্ধ থাকা। তবে ইদানীং কিছু কিছু বিভাগীয় শহরে ইংলিশ মিডিয়াম চালু হয়েছে।
৫. এছাড়াও উন্নত জীবন, অধিক পরিমাণ বন্ধুবান্ধব প্রাপ্তি, সম্পদ রক্ষা, অসুস্থ নিকট আত্মীয়, নিজ বাসস্থানে থেকে সরকারী বাড়ী ভাড়া সাশ্রয় ইত্যাদি কারণে চাকুরীজীবীরা পৃথক পরিবার বেছে নেয়।
৬. স্ত্রী বা স্বামী বিদেশে থাকার কারণে।
৭. ছেলেমেয়ের পড়াশোনা শেষ বা ছেলে মেয়ে হোস্টেলে থাকে তখন সপরিবারের সুযোগ থাকলেও দীর্ঘজীবন পৃথক পরিবার থাকতে থাকতে অনেকে পরে সপরিবারে থাকার সুযোগ থাকার পরও পরিবারের সাথে বনিবনা হওয়ার সমস্যা মনে করে পুনরায় পৃথক পরিবার থাকতে পছন্দ করে।
৮. পরিবারের সদস্যদের দুরারোগ্য ব্যাধি থাকায় রাজধানীর বাইরে চিকিৎসা না পাওয়ার সম্ভাবনায় পৃথক পরিবার হয়।
উপরের কারণগুলো হল মূলত পৃথক পরিবার থাকার করন। এগুলো সাধারণ সচ্ছল পরিবারের সমস্যা। অন্যদিকে অনেকের রাজধানী বা বড় শহরে স্বামী বা স্ত্রীর পোস্টিং থাকলেও খরচ কমানোর জন্য ঢাকা বা বড় শহরে না থেকে ছোট শহরে বা গ্রামে পরিবার রাখে। উপার্জন কম চাকুরীজীবীরা অর্থের কারণে রাজধানী বা বড় শহরে পরিবার সাথে রাখতে ব্যর্থ হয়।
          পৃথক পরিবারের কারণ যাই হোক, আমার ক্ষেত্রে যা হয়েছে, কেবলমাত্র আমার অদম্য ইচ্ছে ও স্ত্রী ঢাকা বেইজ না হওয়ার কারণে আমি ১৮ বছর যাবত সপরিবার বিভিন্ন সেনানিবাসে থাকতে পেরেছি। আমার স্ত্রী ঢাকা বেইজ আর ঢাকায় পড়ুয়া হলেই আমি পরিবার নিয়ে ঢাকার বাইরে পার্বত্য এলাকা আর মফ:স্বল শহরের সরকারী কোয়াটারে থাকতে পারতাম না। আমার স্ত্রী কোন না কোন বাহানায় রাজধানীতে আস্তানা গেড়ে বসত।
যারা সপরিবারে থাকে। বিশেষ করে  আমার মত মধ্যম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের অনেক বড় বড় সেকরিফাইজ করতে হয়। প্রথমত: সন্তানদের গ্রামে গঞ্জের নিন্মমানের স্কুলে পড়াতে হয়। সন্তানরা উন্নতমানের কোচিং থেকে বঞ্চিত হয়। উন্নতমানের উন্নত উচ্চারণের ইংরেজি শিক্ষকের অভাব। নিন্মমানের সরকারী বাসস্থানে থাকতে হয়। ঢাকায় থাকলে হয়ত মন পছন্দ নিজের বা আরো উন্নত ভাড়া ফ্লাটের বাড়ীতে থাকার সুযোগ হত। উন্নত ও মন পছন্দ ফার্নিচার হতে বঞ্চিত হতে হয়। অর্জিত অর্থ খরচের সুযোগ কম হয়। সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে হয়। চাইলেই আনন্দ করার জন্য উন্নত পরিবেশ পাওয়া যায় না। এত সমস্যার পরও কেবলমাত্র অতিরিক্ত পারিবারিক মায়ার কারণে আমার মত অনেকের পৃথক পরিবারে ভয় লাগে। সপরিবারে গ্রামে গঞ্জে থাকাটা সত্যিই কষ্টকর। পৃথক পরিবারে রাজধানীতে থাকা যত আনন্দের সপরিবারে চাকুরীর সাথে ঢাকার বাইরে থাকায় অত্যন্ত কষ্ট ও চরম স্বার্থ ত্যাগ করতে হয়। স্বাভাবিকভাবে কারো নিউইয়র্কে থাকার সুযোগ থাকলে কেন সে আফ্রিকায় থাকবে। তেমনি করো রাজধানীতে থাকার বিন্দুমাত্র সুযোগ থাকলে সে মফ:স্বল শহরে থাকবে না। কোন না কোন কারণ বের করে পৃথক পরিবার হয়ে স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা রাজধানীতে থাকবে। পৃথক পরিবার হওয়ার জন্য স্ত্রী ও সন্তানদেরই সাধারণত বেশী চাপ থাকে। কারণ বড় পরিবেশ ও চাকচিক্যময় শহরে থাকতেই তারাই বেশী পছন্দ করবে ।
একবার আমার এক উপরের কর্মকর্তা একজনের আলোচনায় বললেন, একজন কর্মকর্তা নিদ্দিষ্ট জেলায় বছরের পর বছর সপরিবারে কাটিয়ে দিচ্ছে। কোন পোস্টিং নাই। বড়ই আনন্দে আছে । আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললাম। একজন ব্যক্তি স্ত্রীর চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় না গিয়ে ছোট শহরে চাকুরী করে সেকরিফাইজ করছে। এটাকে আমরা প্রশংসা হিসাবেই দেখব। যদি সেই ব্যক্তি রাজধানীতে স্বামী স্ত্রী একসাথে চাকুরী করত ও দীর্ঘদিন থাকত তবে হয়তবা তা আমরা বিশেষ সুবিধা হিসাবে মনে করতে পারতাম। মফ:স্বল এলাকায় স্ত্রী সন্তানাদি নিয়ে বছরের পর বছর রাজধানীর দিকে ধাবিত না হয়ে সেকরিফাইজ করছে। সেজন্য সে ধন্যবাদ প্রাপ্য।
আমার চাকুরীজীবনে একবার একজন উপরস্থ কর্মকর্তাকে পেলাম তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সপরিবারে দুই বছর ছিলেন এবং সন্তানদের উপজেলার স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সেই কর্মকর্তা অন্য এক জায়গায় পোস্টিং এসেছিলেন তিনমাস পর ছেলের এইচএসসি পরীক্ষা। ছেলেকে বোর্ড চেঞ্জ করিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। তবু সপরিবারে থাকলেন। আমি সারাজীবন সেই কর্মকর্তার প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সপরিবারে বসবাস করার ধরনটি আমার পছন্দনীয় ছিল এবং আমি তা অনুসরণ করেছি। অনেক কষ্ট হয়েছে। কিছুদিন পর পর বাসা বদল এবং স্কুল বদল। ঘন ঘন বাসা বদলের জন্য একটা টেকনিক আমি এ্যাপ্লাই করেছি। আর তা হল কোন ফার্নিচার তৈরি না করে সরকারী ফার্নিচারে চলা। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারী অনুমতি ক্রমে কম দামে ফার্নিচার বানানোর সুযোগ থাকলেও সে সুযোগ বদলীর চাকুরীর জন্য কাজে লাগাইনি। তবে কষ্ট করে বাসা বদল করে ও স্কুল বদল করে পরিবার সাথে সাথে রাখায় একটা লাভ হয়েছে  তা হল প্রতি সপ্তাহে উইক এন্ড বা অন্য ছুটি ছাটার দৌড়াদোড়ি থেকে মুক্ত ছিলাম। এটাও একটা বিশাল বড় প্রাপ্তি। যদি একবছরের ৫০ টা উইক এন্ডে ছুটি যাই তবে রাজধানীতে আসা যাওয়া সহ ৫০x১২ ঘণ্টা =৬০০ ঘণ্টা গাড়ীতে থাকতে হয়েছে, আর এই ৬০০ ঘণ্টা চাকার উপর না থেকে বাসায় থাকলে কমপক্ষে ১০০ আর্টিক্যাল লেখা সম্ভব। সপরিবারে থাকার কারণে ২৫ বছর চাকুরী শেষে সেদিন হিসাব মিলিয়ে দেখতে পাই ১৫ মাস অর্জিত ছুটি বকেয়া রয়েছে।
পরিশেষে আর কথা না বাড়িয়ে আলোচনার ইতি টানছি। অবশ্যই সপরিবারে থাকা পৃথক পরিবার থেকে ভাল। এতে ভালর দিকটাই বেশী। সপরিবারে থাকাটা কিন্তু সহজ নয়। অনেক কষ্ট ও সেক্রিফাইজের বিষয় জড়িত। পৃথক পরিবারে থাকাটা অনেক সহজ সমাধান। ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী আমরা সপরিবারে থাকার চেষ্টা করব সেটাই মঙ্গলজনক।




Thursday, September 17, 2015

স্থানীয় ভাবে বৈদ্যুতিক পিলার তৈরির মাধ্যমে অর্থ-সাশ্রয়

পল্লী বিদ্যুৎ বা পিডিবি এর বিস্তৃত বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা বাংলাদেশে রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ এর পিলার বা খাম্বায় রয়েছে বিশাল একটা বাণিজ্য। বাংলাদেশের গ্রাম ও ইউনিয়ন গুলোতে এখন ঢালাই ও সিমেন্টের কাজের ব্যাপক বিস্তৃতি রয়েছে। এখন যদি আপনি একটা বৈদ্যুতিক খাম্বার জন্য ২৫০০ টাকা খাম্বার উৎপাদিত মূল্যের চারভাগের একভাগ যাতায়াত ভাড়ায় ব্যয় করেন তা আর্থিক ভাবে মোটেই সাশ্রয়ী নয়। এ খাম্বা একস্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহনের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত লং ভেইক্যাল রয়েছে। এগুলো আবার নির্ধারিত রাস্তা ব্যতীত সকল স্থানে যেতে পারে না। এমন একটা অবস্থায় আমার কাছে মনে হল, এটা কি স্থানীয় ভাবে তৈরি সম্ভব? আমি সাধারণ একজন প্রযুক্তি প্রেমিক হিসাবে বলব। এটা সাধারণ ভাবে আরো শক্তিশালী ও দৃঢ়ভাবে তৈরী করা সম্ভব। প্রয়োজনে এর জন্য একদল দক্ষ কারিগর তৈরি করে নেয়া যাবে যারা কিনা একস্থান হতে অন্য স্থানে গমন করে খাম্বা তৈরি করে দিবে। তবে হয়তবা ফিনিশিং এর দিক দিয়ে একটু পিছিয়ে পড়তে পারে। তবে ফিনিশিং তেমন জরুরী নয়। উৎপাদন খরচ ও বিতরণ ব্যবস্থা গতিশীল করাটা জরুরী। খাম্বা পিলার স্থানীয়ভাবে তৈরি করাটার আইডিয়ার প্রথম কারণ কাঁচামাল চারিদিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ফিনিশিং এর জন্য চারভাগের একভাগ উৎপাদন খরচ যাতায়াত হিসাবে ব্যয় করারটা যুক্তিযুক্ত নয়। তবে কেভি লাইনের বড় বড় পিলার পরিকল্পনা না করে ২২০ ভোল্টের সিঙ্গেল লাইনের পিলার কম উঁচুগুলি অতি সহজেই স্থানীয়ভাবে তৈরি করাটা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী। এগুলোকে সাধারণত ফিডার লাইন বলে। ফিডার লাইনের পিলার স্থানীয়ভাবে তৈরি করাটা সহজ ও সাশ্রয়ী হতে। তারজন্য শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক মিস্ত্রিকে দক্ষ করে নিতে হবে। যেন তারা গ্রামে গঞ্জের যে কোন পরিবেশে গিয়ে পিলার তৈরি করে নিতে পারে। ২০১৫ সালে যখন গ্রামে গঞ্জে মিস্ত্রিরা ৩/৪ তলা দালান অবলীলায় তৈরি করে ফেলছে এক্ষেত্রে তাদের দিয়ে ২৫/৩০ ফুট পিলার তৈরি বড় কোন বিষয় নয়। আর একবার স্থানীয়ভাবে তৈরি পিলারের আর এন্ড ডি শুরু হলে তা ক্রমাগত উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। স্থানীয়ভাবে পিলার তৈরির জন্য বিভিন্ন ছাচ বা খাঁচা ক্রমাগত উন্নয়ন হতে থাকবে। ২০১৫ সালে পল্লি বিদ্যুৎ একটা সাধারণ মাপের খাম্বার দাম হল ১০৩০০ টাকা আর তার পরিবহন ব্যয় হল ২৫০০ টাকা। তাই দেখা যায় সর্বমোট ১২৮০০ টাকা দিয়ে ফ্যাক্টরির সরবরাহকৃত পিলার বা খাম্বার দাম পড়ে। ফলে এর থেকে ভাল কিছু এই দামে স্থানীয়ভাবে তৈরি করা সম্ভব হবে।
পিলার স্থানীয়ভাবে তৈরি হলে পিলার প্রাপ্তির জন্য যে দীর্ঘসূত্রিতার প্রয়োজন হয় তার লাঘব হবে। পিলার সহজে পাওয়া গেলে বৈদ্যুতিক সংযোগ অনেক দ্রুত হবে। অনেক সময় পিলার নষ্ট হলে বা ভেঙ্গে গেলে নতুন পিলার আনতে সময় লাগে। এতে গ্রাম অঞ্চলের গ্রাহকরা সপ্তাহ বা মাসাধিকাল পিলারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যদি স্থানীয়ভাবে পিলার তৈরি করা যায় তবে নির্ধারিত মিস্ত্রীরা দুই তিনদিনের মধ্যে পিলার তৈরি করে সংযোগ দিতে পারবে। এভাবে পুরো ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গতিশীল হবে। ফ্যাক্টরিতে পিলার তৈরি করে তা বড় বড় গাড়ীতে সরবরাহ করার চেয়ে গ্রামে গঞ্জে ছোট ছোট মিস্ত্রী দ্বারা কুটির শিল্প সৃষ্টি করা হলে গ্রামে গ্রামে পিলার তৈরির ছোট ছোট শিল্প গড়ে উঠবে এবং স্থানীয় মিস্ত্রীদের আয় রোজগারের জন্য নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।

২০১২ ও ২০১৩ সালে আমার জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী মিশনে কঙ্গোর বুনিয়া শহরের বিদ্যুৎ বিতরণের পাইলন গুলো দেখে আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। আনুমানিক ২০/২৫ ফুট উঁচু তারা বৈদ্যুতিক পিলার তৈরি করেছে বিভিন্ন মাপের পাইপ ও এঙ্গেল ঝালাই করে। রেল রাস্তার লোহার লাইন গুলো। ট্রাকের লম্বা লোহার কাঠামো ঝালাই করে তৈরি। অর্থাৎ বৈদ্যুতিক পিলার গুলো স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা একেকটি একেক রকম। পিলার কোন সৌন্দর্য দিতে পারছে না। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোন সমস্যা হচ্ছে না। সেখানকার প্রতিবেশী দেশ হতে পিলার আনতে যে খরচ তা হয় সে খরচ হয়ত বা তাদের বাজেটে বরাদ্ধ নেই তাই এই ব্যবস্থা। আবার গরীব দেশ হওয়ার কারণে তাদের জননিরাপত্তা নিয়ে কেউ চিন্তা করে না। এর ফলে যেন তেন পদ্ধতিতে বৈদ্যুতিক লাইন টানা হচ্ছে। আমার এ পরিকল্পনায় বা আইডিয়ায় প্রথমত বোদ্ধারা নিরাপত্তার বিষয়ে ও মান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাগড়া দিবেন। যতই বাগড়া দেন, এই মান নিয়ন্ত্রণ আমার পরিকল্পনায় অবশ্যই রক্ষা করা হবে। মূলত: স্থানীয়ভাবে ট্রেনিং প্রাপ্ত মিস্ত্রীরাই তাদের তৈরিকৃত পিলারের মান নিয়ন্ত্রণ করবে। যেমনভাবে হাটে বাজারে গ্রামে ও গঞ্জে স্থানীয়ভাবে ঘরের পিলার টয়লেটের রিং তৈরী করে  তেমনি স্থানীয় পিলার তৈরি আমাদের বৈদ্যুতিক বিতরণ ব্যবস্থায় অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। এতে আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কর্ম সংস্থান বৃদ্ধি পাবে।


------------------------------------------------------------------------------------------------------
Mohammad Hossain' via Ex-cadets'89
Dosto Tareq,

It sounds like you have lot more projects idea which yet to share with us. Why don't you come to our next get together after Eid ul Azha (date and time yet to declared) to share all your projects profile.

In another note did you saw any mail in ExCadet'89 group what I sent out stating to build foundation among ourselves. As you are doing research on various issues, so you can do a comprehensive home work and let us know the future consequences (only ExCadet'89 group) on ExCadet'89 Foundation to help on emergency issues among us. Hope to see you soon.

Keep continue sending your new ideas.

Cheers,


Zakir
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

'shahidul Islam' via Ex-cadets'89
Very good idea. Eagarly waiting to learn.

Shahidul/PCC

Thursday, September 10, 2015

স্মার্ট টিভির স্মার্ট টেকনোলজি বাচ্চাদের স্মার্ট করছে

আমি বাচ্চাদের হাই টেক ব্যবহারের যে ফিরিস্তি দিব তা আমার সমকক্ষ সবার ঘরে ঘরে ঘটছে। আমার সন্তান বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নয় বরং এরা রাজধানী ঢাকার বাইরের গ্রামে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিক।  গ্রামে থাকার কারণে ঢাকা বা দেশের বাইরের বাচ্চাদের থেকে পিছিয়ে থাকলেও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে হাই-টেক জ্ঞানগুলি এরা বেশ ভাল ভাবেই রপ্ত করছে। আমি গত ছয়মাস আগে স্যামসং ৪০ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি কিনি। সাধারণত আগে কোন ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেট কিনলে সেই গ্যাজেটের সমস্ত ব্যবহার আয়ত্তে আনার জন্য নিজে দিনরাত সময় ব্যয় করতাম। অথচ স্মার্ট টিভি কেনার পর আমি আর এটার পিছনে সময় খরচ করে স্মার্ট হতে ইচ্ছে করল না। আমার টানা পূরণের মধ্যে দুই ছেলে ইন্টারনেট ঘেঁটে স্মার্ট টিভি কেনার বায়না ধরল। যেহেতু সাধারণ একটা এলইডি টিভি ছিল তাই দ্বিতীয় টিভি কিনতে আমি মোটেই আগ্রহী ছিলাম না। কারণ মাত্র ৬/৭ বছর ব্যবহার করে আত্মীয় স্বজনদের মাঝে পুরাতন টিভিটি বিতরণ করায় আগ্রহী ছিলাম না। তারা স্মার্ট টিভির স্মার্ট কাজ করার বায়না ধরল। আমি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে কম্পিউটারকে গুরুত্ব দেই। ইন্টারনেটের ভিডিও দেখার জন্য আলাদা টিভি আমার কাছে কখনোই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। তাদের মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তার সঞ্চয় খালি করে স্মার্ট টিভি কিনতে সক্ষম হল। তাও আবার অনলাইন অর্ডার করে হোম ডেলিভারি নিয়ে।
স্মার্ট টিভিটি কেনার পর এটার বিভিন্ন অপশন নিয়ে আমার দুই ছেলে বেশ ব্যস্ত হয়ে পরে। প্রথমে তারা শুরু করল কম্পিউটার থেকে ডাউন-লোড করে  পেন ড্রাইভের মাধ্যমে ভিডিও চালানো। বর্তমানে অধিকাংশ ননস্মার্ট টিভিতেও পেন ড্রাইভ হতে ভিডিও দেখার অপশন গুলো আছে। তারপর তাদের অনুশীলনের বিষয় হল স্মার্ট টিভির মেইন অপশন। আর তা হল ওয়াই ফাই ব্যবহার করা। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে এডিএসএল মোডেমের রাউটার ব্যবহার করে প্রায় নিশ্চিত ১.৫ এমবিবিএস গতির ইন্টারনেট পাচ্ছি। ভিডিও দেখার জন্য যথেষ্ট ভাল সংযোগ। ওয়াই ফাই ব্যবহার করে  স্মার্ট টিভিতে ইন্টারনেট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে দেখলাম ওরা ওদের মাকে টিভিতে অনলাইন পত্রিকা খুলে দিয়ে বেশ সহায়তা করছে। রান্নার ভিডিও গুলো ইউটিউব থেকে দেখাচ্ছে। টিভি রিমোট থেকে মনে হল কর্ড-লেস মাউস ব্যবহার করলে স্মার্ট টিভিতে ইন্টারনেট ভালভাবে ব্যবহার করা যায়। আমারও মাঝে মাঝে দুই একটি কোয়েরি করতে টিভির ইন্টারনেট বেশ কাজে লাগল কারণ সবসময় ল্যাপটপ নিয়ে বসতে ইচ্ছে করে না। তাই মোবাইল ও টিভির ইন্টারনেট মাঝে মাঝে কাজে দেয়। ইউটিউব দেখাটা বেশ মজাদার। স্পেশালি এইচডি ভিডিওগুলি চমৎকার ভাবে দেখা যায়। এটা আমার ছোট মেয়ের রাইম ও বাড়বি মুভি দেখায় বেশ কাজে লাগছে। কম্পিউটারের ছোট স্ক্রিন থেকে টিভির বড় স্ক্রিনে ভালভাবে দেখা যায়। আমিও মাঝে মাঝে ইউটিউব দেখায় যোগ দেই। বিশেষ করে চাষাবাদের ভিডিও আমার বেশ ভাল লাগে। রেকর্ডকৃত টকশো গুলি দেখা যায়। গ্রাম এলাকায় প্রায়শই ক্যাবলের লাইনে সমস্যা হয়। তখন অনলাইন টিভি বেশ কাজে দেয়। আমার দুই ছেলের সাইক্যাল রেস, কার রেস ও ক্লাবের ফুটবল লাইভ খেলাগুলো অনলাইনে দেখতে তাদের বেশ কাজে লাগছে। দুই ভাই মিলে  স্যামসং স্মার্ট টিভির আ্যাপস বা সফটওয়্যার পূর্নাংগ ব্যবহার শুরু করেছে। যেমন যে কোন মুভি বা ভিডিও কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে সরাসরি স্মার্ট টিভিতে ওয়াই ফাই এর সাহায্যে চালানো যাচ্ছে। টিভি কার্ড ছাড়াই  স্মার্ট টিভির সাহায্যে টিভির প্রোগ্রাম  ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে দেখা যাচ্ছে। এর জন্য স্মার্ট টিভির নিদ্দিষ্ট অ্যাপসটি ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে ইন্সটল করলেই হল।  স্মার্ট ফোন থেকে পুরো টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। এমনকি মোবাইলের ফটো অর্থাৎ মোবাইলের স্ক্রিনে যা আসে তা টিভির বড় স্ক্রিনে শেয়ার করা যাচ্ছে। মোবাইল ব্যবহার করে মোবাইলকে রিমোট হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে টিভির চ্যানেলও বদলানো যায়। আবার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে ভিডিও ফাইল চালানো যায়। যা কিনা টিভিতেও সরাসরি সংযোগ ছাড়া  চালানো যায়। শুধুমাত্র সবগুলো ডিভাইস একই রাউটারের ওয়াই ফাই নেটওয়ার্কে থাকতে হবে। সাধারণত একটা রাইটার দিয়ে ২০০০  বর্গফুটের বাসা কাভার করা যাবে। বাসাটি এর বেশী বড় হলে একাধিক রাউটারের প্রয়োজন হতে পারে।
 আমার ছেলের একটা পেন-ড্রাইভ ছিল। কয়েকদিন আগে হারিয়ে ফেলে। কয়েকদিন আগে জানতে চাইলাম তার আর পেন ড্রাইভের প্রয়োজন কিনা। সে বলল ওয়াই ফাই দিয়ে সব ডিভাইস যুক্ত থাকায় তার আর পেন-ড্রাইভ প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ প্যান ড্রাইভ বা মোবাইল ড্রাইভে ছবি কপি করে টিভির পিছনে ইউএসবিতে  লাগিয়ে আর দেখতে হবে না। টিভি টিভির জায়গায় আর কম্পিউটার থাকবে তার জায়গায়। এগুলোকে রাখতে হবে ওয়াই ফাই রেঞ্জের মধ্যে। কম্পিউটার আর টিভির মধ্যে যোগাযোগটা হবে ওয়াই ফাই লিংকের মাধ্যমে।
প্রতিটি স্মার্ট  টিভির  সাধারণত অ্যাপস  স্টোর  আছে। যেমনটা আছে স্যামসং স্মার্ট টিভির জন্য। যেখান  থেকে অনেক প্রয়োজনীয় অ্যাপস  ডাউনলোড করা যায়। সেই সাথে নতুন নতুন অপশন যোগ করা যায়।  স্মার্ট টিভিতে ইউএসবি মোবাইল হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করে টিভি প্রোগাম রেকর্ড করা যায়। তবে টাইম প্রোগাম সেট করে রেকর্ড করার অপশনটি ওরা বের করতে পারেনি। স্মার্ট টিভির প্রোগাম কম্পিউটারে চালিয়ে তা স্ক্রিন ক্যাপচার ভিডিও সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভিডিও কপি করতে সক্ষম হয়েছে। নিজের ৪৫ বছরে এসে (সেপ্টেম্বর ২০১৫)  সন্তানদের এ ধরনের প্রযুক্তির  স্মার্ট ব্যবহার বেশ ভাল লাগছে। আমরা ছোট থাকতে বড় রেডিও ছেড়ে ট্রানজিষ্টর রেডিও নিয়ে ঘুরতাম। ওয়াক-ম্যানে গান শুনতাম। ভিসিডিতে ছবি দেখতাম আমাদের ছোটবেলার সেই প্রযুক্তিগুলো তখন আমাদের জন্য স্মার্ট প্রযুক্তি। সামর্থ্যবানরা দেশের বাইরে থেকে আনিয়ে সনি বা অন্যান্য কোম্পানির সেট ব্যবহার করত। আর আমরা টাকা জমিয়ে চায়না প্রডাক্ট কিনতাম। তারপর আসল সিডি ডিভিডি। আজ ওয়াই ফাই ইন্টারনেটে ঝেটিয়ে বিদায় দেয়া হচ্ছে সিডি ও ডিভিডি। ওয়াই ফাই ও ইন্টারনেটের ব্যান্ড উইথ বাড়ার সাথে সাথে সংযোগ সহজলভ্য হওয়ায় পেন ড্রাইভ ও মোবাইল ড্রাইভের ব্যবহার কমে যাছে। ক্লাউডের স্টোরেজ বেড়ে যাচ্ছে। ক্লাউডের ও অনলাইনের ব্যবহার করে আমাদের সন্তানদের কাছে সিডি/ডিভিডি, পেন-ড্রাইভ ইত্যাদি সবই বাতিল হয়ে যাচ্ছে। সমস্যা একটাই ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হলে তাদের অবস্থা হয় দেখার মত।

          প্রযুক্তির এই বিবর্তনগুলো আমাদের অলক্ষ্যেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু নৈতিক শিক্ষায় আমাদের সন্তানদের এগিয়ে নিয়ে আমরা তাদের প্রযুক্তির খারাপ দিক গুলো থেকে দূরে রাখতে পারি।

Thursday, September 3, 2015

ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার ও সামাজিক উন্নয়ন

আমি আগস্ট ২০১৫ এর প্রথম সপ্তাহে অনেকদিন পর আমার গ্রামে‌র বাড়ীত‌ে  বেড়াতে যাই। গ্রামে যাওয়ার পর আসে পাশে‌র এলাকা গুল‌োতে বেড়াতে  যাই। বেড়ানোর এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কসবা উপজেলা, নয়নপুর বাজার, ক‌েল্লাপাথর, সালদা গ্যাস ফিল্ড ইত্যাদি। আমি সাধারণত বেড়ান‌োর  জন্য রিক্সা নিয়ে বে‌র হই। এটা  আমার দীর্ঘ  দিনের অভ্যাস। আমি য‌ে কোন নতুন স্থান‌ে আসল‌ে রিক্সায় উঠ‌ে ধীরে  ধীরে ঘুরত‌ে থাকি। আমারও  অনেক শহর বাসীর  মত এক/দুই বছর পর পর গ্রাম‌ে যাওয়া পড়ে। ঢাকা, কুমিল্লা ও বগুড়া এ তিনটি শহরে নিজ বাড়ী ও আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে প্রায়ই যাওয়া আসা করি। আমার পছন্দের কাজ হল অনেক দিন পর পর যেহেতু ছুটি আসি তাই অন্য গাড়ী বাদ দিয়ে রিক্সার মত ধীর যানে শহর ও পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনগুলো দেখতে দেখতে বেড়াতে থাকি। বাস থেকে নেমে সাধারণত রিক্সা নেই অনেক দূর হলেও তাই করি। শুধু পরিবর্তন ও উন্নয়ন গুলি দেখাই আমার রিক্সা সফরের উদ্দেশ্য। এই ধীর বাহনে  উঠ‌ে আমি  ভ্রমণরত স্থান‌‌ের  পরির্বতন গুল‌ো  বুঝত‌ে  বা অনুধাবন করত‌ে  চেষ্টা করি।
একদিন রিক্সা  নিয়ে গ্রামে‌র বাড়ী কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের দেউস গ্রাম হত‌ে  কসবা উপজেলা শহর দেখার জন্য ব‌‌ের  হই। যা কিনা আনুমানিক ১২ কি:মি দূরে। আমি যে রিক্সাতে  উঠেছি  সে‌ট‌ি মটর লাগান‌ো রিক্সা। আমি রিকশাওয়ালার কাছ‌ে জানত‌ে পারলাম।  রিক্সাটির  মালিকানা  তার। স‌ে বাইশ হাজার টাকা দিয়ে  রিক্সা কিনেছে। আর তা কিনেছে স্থানীয় সমবায় থেকে  ক্ষুদ্র  ঋণ  নিয়ে। আমি জানতে পারলাম রিক্সা ভাড়ায় নিলে দিনের জমা হয় ১৫০ টাকা। রিক্সার মালিককে যাবতীয় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করতে হবে। ১৫০ টাকা দৈনিক দিয়ে মাসে আয় ৪৫০০ টাকা হলেও মালিকদের রিক্সা ক্রয় করে তা পোষায় না। বর্তমানে গ্রাম এলাকায় রিক্সার মালিক শ্রেণী বিলুপ্ত হয়েছে। এটা দারিদ্র বিমোচনে অবশ্যই ভাল দিক। কারণ রিক্সা কেউ ভাড়া নিয়ে চালালে রিক্সার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেড়ে যায়। এছাড়া ছয়মাস পর পর ব্যাটারি বদল করে মোটরের রিক্সা চালাতে হয়। তাই রিক্সা কিনে ভাড়ায় খাটালে মালিকদের রিক্সায় তেমন লাভ নেই। রিকশাওয়ালা জানাল যারাই রিক্সা চালাচ্ছে কেউই দৈনিক ভাড়া নিয়ে রিক্সা চালায় না। গ্রামে এটা একটা বড় পরিবর্তন। রিক্সা যারা বানায় সেসব দোকানে গিয়ে বললেই হল আমি রিক্সা কিস্তিতে কিনতে চাই। আর সাথে সাথে ক্ষুদ্র ঋণের এনজিওরা এসে হাজির। তারা তিন/ চার হাজার টাকা ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা সাপ্তাহিক কিস্তিতে রিক্সা কিনে দিচ্ছে। সাধারণত ছয় মাস হতে এক বছর কিস্তি দিলে রিক্সার মালিক হয়ে যাচ্ছে। যে টাকায় মালিকের ভাড়ায় রিক্সা চালাত সেই জমার টাকায় মোটর রিক্সা হয়ে যাচ্ছে। এরই ফলে কিছুদিন আগেও রিক্সা কিনে ভাড়া দিলেও এখন গ্রামাঞ্চলে কাউকে রিক্সা কিনে ভাড়া দিতে তেমন একটা দেখা যায় না। সময় পাল্টিয়েছে। এখন জমা টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় রিক্সা না চালিয়ে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তির মাধ্যমে মালিকানায় রিক্সা চালাচ্ছে আধুনিক রিক্সা চালকরা। এটা একটা বিশাল পরিবর্তন। গ্রামে আবার ক্ষুদ্র ঋণের তেমন সমস্যা নয়। এনজিও এর মাঠ কর্মীরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে ঋণ দিয়ে আসে। গ্রামে সকলেরই বলা যায় জমি আছে ঘর আছে। যাদের জমি নাই তাদেরও দেখা যায় নদীর পাড়ে খালের পাড়ে রেল রাস্তার ধারে খাস মালিকানার জায়গায় ঘর আছে। যাদেরই স্থায়ী ঘর আছে বা স্থায়ী ঠিকানা আছে তারাই এনজিওদের ভিআইপি কাস্টমার। গ্রামের মানুষের বর্তমানে ক্ষুদ্র ঋণের প্রাপ্তির অভাব নাই। শুধু মাত্র ঋণ পরিশোধে অভাব রয়েছে। শুধু মুখে ইচ্ছে করলেই হল। কাগজ নিয়ে লোক হাজির। টিপসই দিয়ে ঋণের টাকা নগদে প্রদান করে যাচ্ছে। একই ভাবে সপ্তাহ শেষ বা মাস শেষে কিস্তির টাকা নেয়ার জন্য দরজায় মাঠ কর্মী নগদে টাকা নেয়ার জন্য হাজিরচমৎকার হোম সার্ভিস। নি:সন্দেহে ইনকাম জেনারেটিং এ এই ক্ষুদ্র ঋণ অনেক অনেক বেশী ভূমিকা রাখছে। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠে দূ:খজনক অধ্যায়ও রয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সর্বস্বান্ত হওয়া ও আত্মহত্যার মত অনেক ঘটনাও রয়েছে।

এই ক্ষুদ্র ঋণ সহজলভ্য হলেও এটা রিস্ক ম্যানেজমেন্টের কোন অপশন নাই। ক্ষুদ্র ঋণে ধরা খেলে জীবন শেষ। আমার আলোচিত রিকশাওয়ালার কাছে জানতে চাইলাম সে যদি এ রিক্সা নিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়, তবে সে কিভাবে এ ঋণ পরিশোধ করবে। তার সহজ স্বাভাবিক উত্তর আল্লাহ দেখবেন। সে দূর্ঘটনার বিষয়ে ভাবতে নারাজ। যখন ঘটে তখন দেখা যাবে। দুর্ঘটনায় কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে এনজিও তার রিক্সা নিয়ে নিবে এবং অন্য কারো কাছে বিক্রয় করে দিবে। তার দেয়া সর্বমোট পরিশোধিত টাকা তার লস হবে। কত সহজ সমাধান। দুর্ঘটনা পরবর্তীতে সুস্থতা সাপেক্ষে পুনরায় কিস্তি নিয়ে রিক্সা ক্রয় করবে। জীবন পুনরায় চলমান হবে। জীবনের এত সহজ হিসাব ভাবতে সত্যি ভাল লাগে। রিকশাওয়ালাদের সমাধান সহজ হলেও আমরা সচেতন মানুষ এ সহজ সমাধান মেনে নেয়া উচিত নয়। এনজিওদের উচিত থার্ড পার্টি বীমা কোম্পানির সাহায্যে কিস্তি গ্রহণকারী ঝুঁকিপূর্ণ পেশার লোকদের বীমা করানো। যাতে পরিশ্রমী মানুষগুলোর জীবন দুর্ঘটনায়ও উত্তরণের সংগ্রামটি সহজ ও স্বাভাবিক হয়। ক্ষুদ্র ঋণ যথাযথ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট করে ব্যবহার করতে পারলে এই ঋণে মানুষের র্দূগতি কমে সুদিন আসবে। আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায় রইলাম