Pages

Friday, June 27, 2014

ক্যানেল টপ সোলার সিস্টেম

ভারতের গুজরাটে ২৪ এপ্রিল ২০১২ সালে ক্যানেল টপ সোলার সিস্টেমের পাইলট প্রজেক্ট উদ্ধোধন হয়। খালের উপরে সোলার প্যানেল স্থাপনের বিষয়টি মাথার মধ্যে আসলে প্রথমে যা মনে হবে তা হল, এ ধরনের ব্যবস্থায় আমাদের সোলার প্যানেল স্থাপনের স্থান সংকট দূর করবে।

নিন্মে এ ধরনের সিস্টেমে যা যা সুবিধা আমার মনে হয়েছে এবং যা যা আমি ইন্টারনেট থেকে পেলাম তা সবার জানার জন্য তুলে ধরলাম।
১। খালের উপরে সোলার প্যানেল ঢাকনার মত স্থাপন করা হয়। ফলে অন্যান্য উন্মুক্ত স্থানের মূল্যবান জমির অকৃষি খাতে ব্যবহার কমে যাবে।
২। খালের মূল্যবান সেচের পানি সোলার প্যানেল দ্বারা ঢাকা থাকার কারণে পানি কম বাষ্প  হবে যা কিনা মূল্যবান সেচের পানি কম বাষ্প হওয়ার কারণে তা একটি সাশ্রয়ী ব্যবস্থা হবে।
৩। অধিকাংশ সেচের খালের সুদীর্ঘ দূরত্ব জমির মাঝ দিয়ে যাওয়ার কারণে সূর্যালোক ভালভাবে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। কারণ জমির এলাকায় সাধারণত বড় গাছ কম লাগানো হয় যেন জমিতে ছায়া না পড়ে।
৪। পানি আধারের উপরে সোলার প্যানেল স্থাপন করায় খালের পানির বাষ্পীভবনের কারণে সোলার প্যানেল তুলনামুলকভাবে  ঠাণ্ডা থাকে আর কম উত্তপ্ত হওয়ার কারণে ১৫% বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশী হয়।
৫। খালের উপরেই পাওয়ার সোর্স থাকায় সহজেই পানি খাল থেকে  জমিতে পাম্প করা যাবে। তার ও আনুষঙ্গিক খরচ কমে যাবে।
৬। খালের পার দিয়ে সোলার প্যানেলের পাশাপাশি বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন করা যাবে। সহজেই দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকায় খালের উপর উৎপাদিত বিদ্যুৎ সহজেই ব্যবহার ও সরবরাহ করা যাবে।
৭। আনুমানিক ৫০ গজ প্রস্তে এবং ৭৫০ থেকে- ১কিমি দূরত্বের মধ্যে ১ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ভারতের গুজরাটের পাইলট প্রজেক্টে ৭৫০ মিটার দূরত্বের মধ্যে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে।এতে ১০০ কিমি খালের নেটওয়ার্ক থাকলে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ভারতের গুজরাটে ১৯,০০০ কিমি খালের নেটওয়ার্কে সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিকল্পনা চলছে।
৮। পৃথিবীব্যাপী বাড়ীর ছাদের পাশাপাশি কবরস্থানগুলোর জমি সোলার সিস্টেম স্থাপনে ব্যবহার করার একটা ধারনা বিদ্যমান। কবর স্থানে সোলার সিস্টেম বসানোর পরিবর্তে গাছ লাগানো অনেক বেশী পরিবেশ বান্ধব। বিশাল খাল উন্মুক্ত থাকতে কবরস্থানকে ডিস্টার্ব করার প্রয়োজন পড়বে না।
৯। খালের প্রবহমান পানিতে মাইক্রো হাইড্রো টারবাইন ব্যবহার করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যোগ করা সম্ভব।
১০। যেসব স্থানে বেশী বায়ু প্রবাহ রয়েছে সেসকল স্থানে বায়ু বিদ্যুতের টারবাইন ব্যবহার করে সোলারের একই সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে বায়ু বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা সম্ভব।
১১। মূল্যবান সোলার সিস্টেমের কারণে সেচের খাল, খালের পার ইত্যাদি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে যাবে।
১২। খালের উপরে প্যানেল থাকার কারণে শুকনো দিনে সহজেই খালের পানি দ্বারা সোলার প্যানেলের ধুলাবালি ধোয়া ও রক্ষণাবেক্ষণ কম শ্রমসাধ্য হবে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতির দেশ। আমাদের রয়েছে জমির চরম সংকট। এ ধরনের সংকটময় অবস্থায় ভারতের গুজরাটের ক্যানেল টপ সিস্টেম হতে পারে আমাদের জন্য অনুসরনীয়। আমাদের দেশে খালের ধারে গাছ গাছালী আছে। আবার কোথাও কোথাও খাল উন্মুক্তও আছে। খাল যেখানে উন্মুক্ত আছে সেখানেই আমরা খালের উপর সোলার সিস্টেম বসাতে পারি। বাংলাদেশের সমস্ত উন্মুক্ত খালগুলি সোলার প্যানেল দিয়ে ঢাকতে পারলে আশা করা যায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে আরো বিদ্যুৎ সার-প্লাস করতে আমরা সক্ষম হব।
এখন আমাদের প্রয়োজন উদ্যোক্তা। বর্তমানে ডিজেল থেকে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসছে। কারণ সোলার প্যানেল এখন ওয়াট-প্রতি অনেক কমে এসেছে। যে প্যানেল ৫ বছর আগেও ছিল ২৫০/২০০ টাকা প্রতি ওয়াটের দাম। সেই একই প্যানেল পাওয়া যাচ্ছে ৬০/৫০ টাকায়। একসময় বিজ্ঞানীরা চিন্তা করত কিভাবে প্যানেলের দাম ওয়াট প্রতি খরচ এক ডলারের নীচে আনা যায়। একসময় এটা স্বপ্ন থাকলেও তা আজ বাস্তব। সোলার প্যানেল এত ব্যাপক হারে চায়না উৎপাদন করছে যে সোলার প্যানেলের দাম তো বাড়ার সুযোগ তো নেইই বরং আরো কমতে পারে। এখন ব্যাটারির দাম কমে গেলেই বা সাশ্রয়ী ব্যাটারি তৈরি হলেই সারা পৃথিবী ব্যাপী গ্রিন এনার্জির ব্যবহার দ্রুত বেড়ে যাবে।

আমাদের দেশে যারাই সৌর শক্তির সোলার প্যানেল বসাতে স্থান সংকটে ভুগছেন তারা আর দেরী না করে সরকারী অনুমতি নিয়ে সরকারী খালের উপর সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌর বিদ্যুৎ কারখানা তৈরি করে ফেলুন।

Friday, June 20, 2014

রিকশা ও সাইকেল কতটুকু পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত

আমার একজন সহকর্মী ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করার পর রিকশার বিষয়ে তার মতামত হল। আমাদের দেশে রিকশার কারণে আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিশেষ করে মহিলারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ চারিদিকে রিকশার পর্যাপ্ততা থাকার কারণে মহিলারা ১০০ গজও হাটতে চান না। তাই ঘরের বাইরে কাজে গিয়ে আমাদের দেশের মহিলারা যদি ২০/৩০ মিনিট হেটে প্রতিনিয়ত বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনা নেয়া ও বাজার সদাই করার কাজগুলি করতে পারতেন তবে মধ্যবিত্তদের মধ্যে ওভার ওয়েটের কারণে ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশার রোগগুলি অনেক কম হত। যদিও মহিলাদের অধিকাংশরাই গৃহ স্থলীতে ছেলেদের তুলনায় অনেক অনেক বেশী পরিশ্রম করে। রিকশা বা বাইসাইকেল পরিবেশ বান্ধব। তবে সাইকেল পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্য সম্মত। কারণ যিনি সাইকেল চালাতে অভ্যস্ত তিনি অবশ্যই কর্মস্থলে যাওয়া আসার দীর্ঘ সময় সাইকেল চালিয়ে থাকেন বিধায় তিনি অনুশীলনের সুফল পান। ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন এবং অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। রিকশা যে চালান তার জন্য রিকশা চালনা স্বাস্থ্য সম্মত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও শারীরিকভাবে অতিরিক্ত চাপ দিয়ে রিকশা চালালে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।  অতিরিক্ত চাপ দিয়ে রিকশা চালনার জন্য হাড় ক্ষয়, মেরুদণ্ডের ক্ষতি ইত্যাদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে থাকে।
          আমাদের দেশে বেশীরভাগ মানুষই  যত্র তত্র গাড়ী পার্কিং করে। যদি পার্কিং এর কাজটা সবাই সঠিকস্থানে যথাযথভাবে করত তবে আমাদের সমাজের উচ্চবিত্তদের কিছুটা হাটার সুযোগ হত। নিদিষ্ট স্থানে পার্কিং করে কিছুদূর হেটে যেতে হবে আমরা এ কষ্টটুকু করতে চাই না। আমরা চাই যেখানে আমার কাজ সেখানেই থামতে এবং পার্কিং করতে। এতে অন্যদের যে সমস্যা হয় সেটা মাথার মধ্যে রাখি না।
রিকশা বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশের জন্য বেকারদের কর্মসংস্থান করার একটা বিশাল সুযোগ রেখেছে। শহরে গ্রামে গঞ্জে কাউকে না খেয়ে দিন পার করতে হয়না। একটা রিকশা বা ভ্যান নিয়ে বের হলেই হল। গ্রামের রিকশাওয়ালারা ভিআইপি টাইপের। আমাকে বাবা মার জন্য গ্রামের বাড়ীতে যেতে হয়, সেহেতু আমি দেখেছি । গ্রামের রিকশা নির্দিষ্ট সময়ে চাইলে রিকশাওয়ালাকে বাড়ীতে যেয়ে খবর দিতে হয় আর এখন মোবাইলে কল করতে হয়। রিকশা/ভ্যান চালনা হল অল টাইম জব। এখন রিকশা ভ্যান চালনার জন্য আবার ব্যাটারি চালিত মটর রিকশার সাথে যোগ হচ্ছে। এটা একটা ভাল ব্যবস্থা এতে অতিরিক্ত পরিশ্রমের চাপ থেকে রিকশাওয়ালাদের কষ্ট লাঘব হবে।
          এখন প্রশ্ন হল, রিকশার ব্যবহার আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। কারণ কাছাকাছি দূরত্বও আমরা না হেটে রিকশায় যাচ্ছি। তবে এ ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির চিন্তা আমরা না করে বরং সম্পূর্ণ বিষয়গুলি একটা নির্দিষ্ট নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করলেই চলবে। রিকশা পার্কিং হবে নির্দিষ্ট স্থানে। অবশ্যই রাস্তা ব্লক করে নয়। এতে রিকশায় আরোহণের জন্য আমাদেরকে কিছুনা কিছু পথ হাটার প্রয়োজন পড়বে। বেশী গতির গাড়ী আর কম গতির গাড়ী এক রাস্তায় না চালিয়ে আলাদা লেনের ব্যবস্থা করলে তা অনেক ভাল হবে। আর এটা হলে রিকশা বিরোধী আন্দোলন থেকেই অনেকে সরে আসবেন।
রিকশা বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থায় নিন্মবর্নিত কারণে থাকা প্রয়োজন:
১। রিকশা বেকার সমস্যার কিছুটা প্রশমিত করে। কেউ কোন কাজ না পেলে যে কোন মানুষ রিকশা চালিয়ে বাচতে পারে।
২। রিকশা পরিবেশ বান্ধব। মনে করুন, দেশে যদি ১০ লক্ষ রিকশা থাকে তবে তা ১০ লক্ষ গাড়ীর জ্বালানী বাঁচাচ্ছে। রিকশার পাশাপাশি ভিয়েতনামের মত আমরা সাইকেল চালনায় সাধারণ মানুষদের উৎসাহিত করা যায়। সাইকেল পরিবেশ বান্ধব ও স্বাস্থ্য সম্মত।
৩। রিকশার মূল্য ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। একটা যেন তেন গাড়ীর মূল্য দিয়ে ২০/২৫ টি রিকশা ক্রয় সম্ভব। এতে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ হচ্ছে।
৪। রিকশার মটর লাগিয়ে কায়িক পরিশ্রম কিছু লাঘব করার পাশাপাশি রিকশাওয়ালার আরও বেশী আয় রোজকার বাড়াতে পারে।
উপরের পয়েন্ট ছাড়াও আরো অনেক অপকারী বিষয় আপনাদের নজরে আসতে পারে:
১। আমাদের দেশে রাস্তা প্রশস্ত নয় বলে রিকশার মত ধীর যান ট্রাফিক জ্যামের কারণ হিসাবে ধরা হয়।
২। আধুনিক ও উন্নত যুগে মানুষ মানুষকে কায়িক পরিশ্রম করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এটা দাস প্রথার একধরনের অমানবিক রূপ।
পক্ষে বিপক্ষে যত বিষয় থাকুক না কেন দুইটি কারণে রিকশার ব্যবহার চলতে পারে একটি হল: পরিবেশ বান্ধব ও অন্য বিষয়টি হল সুলভ কর্মসংস্থান।
তবে ব্যাটারি দিয়ে চালালে তখন পরিবেশ বান্ধব আর থাকছে না। কারণ ব্যাটারি চার্জ করতে যে বিদ্যুৎ খরচ হয় তা কয়লা, ফসিল তৈল বা গ্যাস পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে আর এতে বায়ুমণ্ডলে পরোক্ষভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। তবে সোলার ব্যবস্থা থেকে ব্যাটারি চার্জ করতে পারলে ব্যাটারি চালিত রিকশাও পরিবেশ বান্ধব করা সম্ভব।

পরিশেষে রিকশা তোলার বিরুদ্ধে আন্দোলন না করে রিকশা বান্ধব পরিবেশ করার ব্যবস্থা করাই হবে উত্তম। জোর করে রিকশা তোলার প্রয়োজন নেই। যেদিন বাংলাদেশের মানুষের আর্থিকভাবে উন্নত পর্যায়ে যাবে সেদিন পার্ক ও চিত্তবিনোদন কেন্দ্রে বিনোদন ব্যতীত রিকশা খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরিবেশ বান্ধব রিকশা তুলে দেয়ার অন্দোলনে না গিয়ে আমরা বরং সেদিন গুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।

Wednesday, June 18, 2014

ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনা

আমার  আর্থিক ব্যবস্থাপনা আমি কখনোই যুতসই ভাবে করতে পারিনি। আমি অনেক পরিকল্পনা করি ঠিকই কিন্তু আমার খরচের হাতটা স্থির রাখতে পারি না। আর্থিক ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করতে যে পরিমাণ ধৈর্য ধারণ করতে হয় সে পরিমাণ ধৈর্য আমার কখনোই ছিল না।
মাঝে মাঝে মনে হয় ক্যান্টিনে, রেস্ট হাউস ইত্যাদি খরচ যত কম বকেয়া করে করা যায় ততই মঙ্গল। বকেয়া খরচের প্রধান সমস্যা হল খরচের হিসাবের লাগাম ধরা যায় না। যারা বকেয়া পরিহার করে নগদে ক্রয় করতে পারে তারাই বুদ্ধিমান।
উন্নতির সবচেয়ে বড় শর্ত হল আয়ের থেকে ব্যয় কম করতে হবে। আয়ের থেকে ব্যয় কম করে জমাতে পারলেই কেবল উন্নতি করা যায়। আয়ের থেকে ব্যয় কম করতে হবে আর কিছুটা জমাতে হবে। আমেরিকার প্রেক্ষাপটে তারা কমপক্ষে ১০% জমানোটা যথাযথ মনে করে। আমরা সব সময় অন্যকে অনুসরণ করতে চাই। ধার কর্জ করে চাকচিক্য করে আমরা তৃপ্তি পেতে চাইএর থেকেও আমি কোনও ব্যতিক্রম নই। আমার প্রথম জীবনে বেহিসাবি খরচের মধ্য পরিবারকে দেয়া, ছুটিতে বেড়িয়ে খরচ করা। যেটা হয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের কেউ চাকুরী পেলে সে মনে করে স্বর্গ হাতে পেল। আর যদি জীবনে অতৃপ্তি থাকে তবে তো কথাই নেই। বাজেট কমানো বা খরচের রাশ টেনে ধরা অনেক বড় অনুশীলনের বিষয়।
এ অনুশীলনটি পরিবারের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অর্জন করা সম্ভব। পরিকল্পনা ছাড়া হটাৎ করে কেনাকাটা করা উচিত নয়। সবচেয়ে সর্বনাশা হল, বাচ্চাদের আবদার। ছোট বাচ্চারা কখনোই  হিসাব অনুযায়ী আচরণ করে না। প্রায়শ:ই তারা পিতামাতাকে বিপাকে ফেলার মত আচরণ করে। পরিকল্পনা করে গেলেন আপনি ২০০০ টাকায় কেনাকাটা সারবেন। হুট করে একটা খেলনা ও খাবার আইটেম বগলদাবা করে বসল। আপনি কোনক্রমেই অতিরিক্ত ১০০০ টাকা পরিশোধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তখন নিজের ইজ্জত বাচাতে আপনি আপনার ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতে বাধ্য হন অথবা তাৎক্ষনিক লোণ করতে বাধ্য হন।
আবেগ ও ভালবাসা প্রায়শই আমাদের এত বেশী ইমোশনাল বা আবেগপ্রবণ করে ফেলে এতে আমরা শাসনে শক্ত হতে পারিনা। বর্তমান যুগে বাচ্চাদের মারধর করা একদম নিষেধ তাতে ভালোর চেয়ে মন্দ হয় বেশী। এতে অনেক শিশুর কথা না শোনার মাত্রা এত বেড়ে যায়। তখন মনে হয় আগের পদ্ধতিতে মারধর করলে হয়ত ভাল হত। মাঝে মাঝে ধমকেও বাচ্চারা এত রিএক্ট করে তখন অবাক লাগে। সেসময় নিজেদের অতীত বিষয়গুলো মেলালে একটু অবাক হতে হয়। এ ধরনের ইমোশনাল সমস্যা বর্তমান সময় থেকে আগে বেশী ছিল কিনা মনে করতে পারছিনা।
উন্নতির প্রথম শর্ত হল আয় থেকে ব্যয় কমাতে হবে। যদি তিন-বেলা খাওয়ার সামর্থ্য না থাকে তবে দুইবেলায় খাবারের বিল কমিয়ে আনতে হবে। সস্তা খাবারের জন্য প্রাণীজ প্রোটিনের পরিবর্তে উদ্ভিদজাত প্রোটিনের ব্যবহার বাড়ালে খাবারের বাজেট কমবে। মোট কথা আয় থেকে ব্যয় কমিয়ে রাখতে হবে। কোন কিছুই বাকীতে( ক্রেডিটে) কেনা যাবে না। ওভার ড্র করা যাবে না।
তবে একটা বিষয়ে মনে হয় আমি আমার বাবার ধৈর্যের ও বিচক্ষণতার প্রশংসা না করে পারছিনা যিনি ছয় সন্তানের পরিবার চমৎকারভাবে সামাল দিয়েছেন। আজকে আমি তিন সন্তানের পরিবারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসাবে খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
আমি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসাবে চাকুরী-কালীন সময়ে একটা বিষয় লক্ষ করেছি তা হল সেনাবাহিনীতে আমরা অধিকাংশ সদস্যই আমাদের প্রায় সমস্ত খরচই আমরা ক্রেডিটে করি। আর আমাদের এ বকেয়া থাকার কারণে যারা অধিক সচেতন কেবল তারাই হয়তবা নিজের হিসাবের মধ্যে চলতে পারেন। অধিকাংশই আমরা বেতনের মধ্যে চলতে পারিনা। আলটিমেটলি টিএ/ডিএ ইত্যাদি বাড়তি আয় কিআর আমরা যদি একদম শক্তভাবে চিন্তা করে নেই অবশ্যই আমি নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচে চলব তা অবশ্যই করা সম্ভব। মূলত আমাদের সাংসারিক খরচ বিশেষ করে খাওয়া খরচ আমরা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। অনেক সময় সন্তানের পড়াশোনা বা ইত্যাদি খরচ ইচ্ছে করলেও কমানো যায় না। যেমন: একজন মালী যার মাসিক বেতন ও অন্যান্য উৎস মিলিয়ে আয় ১৫০০০ টাকা। সে তার এক মেয়েকে মেডিক্যাল কলেজে পড়াচ্ছে। এখন মেয়ের পিছনে কম করে ৫০০০ টাকা খরচ করলে তার অন্য সন্তান,স্ত্রী ও নিজ খরচ বাকী ১০০০০ টাকায় চালাতে হচ্ছে। যদিও এধরনের সাধ্যের বাইরে সুযোগ সৃষ্টি হলে আমাদের সন্তানদের জন্য আমরা প্রভিডেন্ট ফান্ড, জমি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি হতে বাড়তি ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা নিতে হয়। কারণ মেধাবী সন্তানের ভাল পরিবেশে পড়াশোনা করানোটাও একটা বিশাল ইনভেস্ট।
তাহলে যে কোন চাকুরী বা উপার্জনে একটা লক্ষ্য স্থির করে চলতে হবে। আমার জীবনে আবেগ প্রবণ হয়ে জীবনে বিভিন্ন সময় ওডি করে বেতনের বিশাল অংশ ওডি,র সুদ হিসাবে ব্যাংক কর্তনে চলে যেত। আর ঋণের একটা মহা আর্বতে জীবন আবর্তিত হতে থাকত। দুইটি জাতি সংঘ মিশনের টাকা দিয়ে ঋণ শোধ হয় কিন্তু উন্নতির ধারা ব্যাহত হয়। মরার উপর খরার ঘা হল পেনশন কমুটেশনের উপর ২০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে শেয়ার মার্কেটে খাটানো যা ছিল আরো ধ্বংসাত্মক।
আমার এই ৪৩ বছর বয়সে খরচের বিপরীতে পরিবারের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা একটা বিশাল বিষয়। এরূপ একটা যুদ্ধ আমি করেছিলাম। তা হল শেয়ার মার্কেটে ধরাশায়ী হয়ে। তখন বেতনের অর্ধেক টাকা দিয়ে কিভাবে পরিবারের খরচের চালানো যায় তার জন্য যুদ্ধ করা। এত খরচ কমাতে না পারলেও অনেকটুকু কমাতে পেরেছিলাম। পারিবারিক খরচ কমানো একটা বিশাল যুদ্ধ। এ যুদ্ধে পরিবারের সকলে জড়িত থাকে বলে যুদ্ধটা ভয়াবহ। এখন আবার একটা যুদ্ধ করতে চাচ্ছি তা হল বেতনের আয়ের মধ্যে জীবনধারণ করা। এ যুদ্ধটা করছি ঢাকা শহরের বাইরে থেকে যদি বেতনের টাকায় চলতে না পারি তবে তা ভয়াবহ বিষয়। আর চাকুরীর পূর্ণ বেতন প্রাপ্তির সময় আছে মাত্র ৯ বছর। এ ৯ বছর যদি বেতনের খরচের মধ্য চলার অভ্যাস করতে পারি, তবে সামনের জীবন যুদ্ধটা সহজ হবে।

এখন হয়তোবা অনেকে দ্বিমত করবেন। বেতনের টাকার পুরোটা জমাব আর বাড়তি টাকায় সংসার চালাব। এটা অবশ্য চাকুরীজীবীদের সৎ চিন্তাধারার পথ নয়। আমাদের মন্ত্রটা এরূপ হতে হবে যেন বেতনের অর্থে নিজের জীবন ও জীবিকা চালিত করব। আর কিঞ্চিত বেশী উপার্জন (অবশ্যই সৎ পথে) করতে পারলে তা সঞ্চয় করব। এভাবে হয়ত সততার জীবন নির্বিঘ্ন হবে।

Saturday, June 14, 2014

এলইডি স্ট্রীট লাইট হবে দেশের জন্য সাশ্রয়ী বিনিয়োগ

জুন ২০১৪ প্রথম সপ্তাহে  বাসে করে চট্টগ্রাম হতে ঢাকা আসছিলাম। সকাল আনুমানিক ৪টায় বাসটি যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার দিয়ে যাচ্ছিল তখন আলোর তীব্রতায় আমার ঘুম ভাঙ্গে। চোখ খুলে দেখতে পাই সারি সারি লাইট পোষ্টের উজ্জ্বল আলো। লাইটগুলোর দিকে তাকিয়ে চিনতে পারলাম। এলইডি লাইট। অনেক গুলো ছোট ছোট এলইডি লাইটের সমন্বয়ে উজ্জ্বল আলোবিশিষ্ট  ফ্লাড লাইট। এরূপ আলো আছে হাতির ঝিল প্রজেক্টে। এ লাইটগুলো উঁচু উঁচু পিলারে লাগানো দেখে আমার মাঝে যে আনন্দটা আসল সেটার কারণ অন্তত পাঁচ বছর  এ লাইটগুলোকে এত উপরে উঠে আর বদলাতে হবে না। আর যদি ড্রাইভারলেছ এলইডি লাইট হয় তবে আরও অধিক সময় এই লাইটগুলো নষ্ট হবে না। ড্রাইভার লেছ এলইডি হল, এলইডি লাইটগুলোকে এমনভাবে সেট করা যাতে এলইডি লাইট জ্বালানোর জন্য ভোল্টেজ কমানো বা বাড়ানোর জন্য কোন সার্কিট ব্যবহার হয় না এবং এলইডি গুলোকে সিরিজে দীর্ঘ সারিতে সংযোগ করা হয়। এলইডি লাইটের আয়ু যদি হয় ৫০,০০০ ঘণ্টা তবে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে জ্বললে সর্বমোট স্থিতি হবে ৫০,০০০/১২ ঘণ্টা/৩৬৫ দিন=১১ বছর। যদি অর্ধেক আয়ু ধরা হলে ৫ বছর একটানা চালু থাকবে ভাবতেই অবাক লাগে। এখনও আমরা দেখতে পাই চারিদিকে শহরের সরকারী স্থাপনার লাইট একবার নষ্ট হলে তা বদল করার জন্য কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। তবে আগে আমরা দেখতাম ফিলামেন্ট লাইট খুব ঘন ঘন বদল করতে হত। তারপর এনার্জি সেভিং লাইট। এ লাইটগুলি বাহিরের পরিবেশে মোটামুটি চলে যাচ্ছিল একবার লাগালে ঝড়/বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে কমপক্ষে এক বছরের উপরে পার হচ্ছিল। আর এবারকার এলইডি লাইট পাঁচ বছর কমপক্ষে। এটা ভাবতেই অবাক হতে হচ্ছে। উঁচু পোষ্টে লাইট লাগানোর পর পাঁচ বছর নিশ্চিন্ত থাকা।
এলইডি লাইটের মূল্য এনার্জি সেভিং লাইট হতে দ্বিগুণ হলেও আমরা বেশ কিছু সুবিধা পাচ্ছি তা হল নিন্মরুপ।
১। এলইডি লাইটের আয়ু এনার্জি সেভিং লাইট হতে প্রায় তিনগুণ।
২। কম বিদ্যুৎ এ অধিক আলো পাওয়া যায়।
৩। ড্রাইভার-লেস এলইডি ব্যবহারে লাইটের ওয়াট আরও সাশ্রয়ী হয় এবং সার্কিটের কারণে লাইটে ব্রেক-ডাউন আরো কমে যায়।
৫। লাইটের ওয়াট কম হওয়ার কারণে কম অ্যাম্পিয়ারের তার ব্যবহার করে খরচ কমানো যাবে।
একটি বিষয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ আর তা হল রিসাইক্যাল। কারণ সিএফএল লাইটে থাকে মার্কারি বা পারদ যা কিনা নবায়নযোগ্য নয় ও বিষাক্ত আইটেম। পারদ ক্রমাগত লাইট থেকে ভূমিতেই সকলে নির্গত করে। আর এভাবে ভূমি দূষণ বেড়ে যায়। এলইডি লাইটে এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত আছে। এটা সম্পূর্ণ রিসাইক্যাল করা যাবে।
এলইডি বর্তমানে সারফেস মাউন্টেড সার্কিটের মধ্যে হওয়ায় এলইডির আকারও আনুপাতিক ভাবে ছোট হয়েছে এবং রিসাইক্যাল যুক্ত মালামালও কম পরিমাণে ব্যবহ্রত হচ্ছে।
          কিছুদিন আগে আমরা ঢাকা চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলক ভাবে সোলার পাওয়ার লাইট স্থাপন করতে আমরা দেখছি। বড় বড় প্যানেল নিয়ে পোষ্টগুলোতে লাইট জ্বলছিল। সম্পূর্ণ বিষয়টি পরীক্ষাধীন পাইলট প্রজেক্ট ছিল। পরবর্তীতে এ প্রজেক্টটি ফলপ্রসূ হয়নি। ধুলোবালি জমে সোলার প্যানেল থেকে যথাযথভাবে লাইটের ব্যাটারি চার্জ হচ্ছিল না। ব্যাটারি যথেষ্ট পরিমাণ চার্জ না হওয়ায় লাইটগুলো সারারাত জ্বলতে পারছিল না। দেখা গেল পরীক্ষামূলক প্রজেক্টটি সম্পূর্ণ ফেল করে।
          বর্ষাকালে হয়তবা সোলার প্যানেল অটোমেটিক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাবে তাই বর্ষাকালে সোলার প্যানেল ব্যবহারে প্যানেল পরিষ্কারের প্রয়োজন নেই। যদিও সৌর প্যানেল ধুয়া মোছা করার জন্য পরিকল্পনায় রাখা হয় না। কিন্তু বাস্তবতা হল যেখানে ধুলা বালির প্রবাহ বেশী এবং খুব সহজে সোলার প্যানেল ধুলা ও বালিতে ঢেকে যায় সেখানে সোলার প্যানেল ময়লামুক্ত না করলে সৌর চার্জ বিঘ্নিত হবে। মনে হয় অনেক উপরে না তুলে ৩/৪ ফুট উচ্চতায় অর্থাৎ সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করার মত উচ্চতায় সোলার প্যানেল স্থাপন করা হলে তা ভাল হবে। আর বড় বড় পিলারের উপর সোলার সেট না করে ২০/৩০ টি পিলারের প্যানেল একস্থানে সেট করে সেখান থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাটারি ব্যাংক স্থাপন করে সোলার পাওয়ার ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল আসবে। শহরের ধুলোবালি ও ধুয়ার রাস্তায় এটা হতে পারে সহজ ও সাশ্রয়ী সমাধান। তবে গ্রামীণ পরিবেশ ও কম ধুলাবালি এলাকায় সোলার প্যানেল পিলারের উপরে স্থাপন করা যেতে পারে।

          প্রয়োজনে সোলার লাইট ব্যবহার সাশ্রয়ী না হলেও মানব কল্যানে সোলার লাইট বেশী দামী হলেও অফ গ্রীড এলাকায় ব্যবহার হতে পারে। তবে শহরাঞ্চলে এর ব্যবহার সাশ্রয়ী হবে না। তবে গ্রীড লাইনের বিদ্যুত যথাযথ ভাবে থাকলে সোলার লাইটের পরিবর্তে এলইডি লাইটের ব্যবহার হবে অনেক বেশী সাশ্রয়ী। এটা দেশের জন্য সাশ্রয়ী বিনিয়োগ।

Thursday, June 12, 2014

ইচ্ছে করে অনেক কিছু

আমার আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছে ছিলনা কখনো। আমার ইচ্ছে গুলো অন্য দশজন থেকে আলাদা। এ ইচ্ছেগুলোর মধ্যে নেই দামী গাড়ী, বিলাসবহুল বাড়ী ও বিলাসবহুল খাদ্য গ্রহণ। আমি নন এসি বাসে যেমন আরামে ভ্রমণ করতে পারি, তেমনি মা বাবার গ্রামের টিনের ঘরে একই আরামে ঘুমোতে পারি, দামী হোটেলে যেভাবে  খেতে পারি তেমনি আমার গ্রামের গরীব আত্মীয়ের বাড়ীতেও তেমনি তৃপ্তিতে খেতে পারি। আমার স্বভাবগত এ ধরনের ভিন্নতা আমার স্ত্রীর চোখে আরো প্রকট হয়ে ধরা পড়ে। এবং সব সময় একটা কথা বলে তোমার প্রেস্টিজ জ্ঞান একদম নেই। যেখানে সেখানে খেতে পার, যেখানে সেখানে থাকতে পার “গাড়ী” আমার কাছে যাতায়তের বাহন প্রেস্টিজ ইস্যু নয়। যেন তেন নিরাপদ ও ত্রুটিমুক্ত বাহন হলেই চলে। আমি প্রায় ৯৫% সহকর্মীর সাথে আলোচনায় জেনেছি তারা ও সমাজ বিশ্বাস করে গাড়ী স্ট্যাটাসের প্রতীক এটা দামী হওয়াটা বাঞ্চনীয়। অথচ আমার ভাবনাটা সকলের চেয়ে আলাদা। আমি সচরাচর ১০ মিনিট হাটার রাস্তা হলে কখনোই গাড়ী ভ্রমণে আগ্রহী নই। এতে অবশ্য আমার ওবিস পরিবার আমার উপর ক্ষেপে যায়। সবাই যাচ্ছে গাড়ীতে তুমি আমাদের হাঁটিয়ে নিবে কেন। আমি বুঝতে পারি এখানেও আমি অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম। আসলে প্রেস্টিজটা সাংঘাতিক জিনিস এতে ৫০ গজ দূরে মসজিদে বা ৫০ গজ দুরে অফিসে যেতে হলেও পাইক পেয়াদাসহ গাড়ীতে না গেলে প্রেস্টিজ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবার লোকবলসহ গাড়ীটা বাসার সামনে আধ ঘণ্টা দাড়িয়ে না থাকলে এবং সকলের দৃষ্টিগোচর না হলে প্রেস্টিজ বাড়ে না এবং ক্ষমতাধর প্রমাণিত হয় না। অথচ বোকার মত আমি চিন্তা করি কেবল চুরি করলে আর অনৈতিক কাজ করলে প্রেস্টিজ পাংচার হতে পারে। আমার এ ধারনাটা সত্যি ভুল। কারণ সমগোত্রীয় থেকে ভিন্নতর সাধারণ জীবন যাপনেও প্রেস্টিজ পাংচার হতে পারে। যা অন্য কর্তা ব্যক্তিদের তুলনায় সাদামাটা জীবনযাপনে আমি সে পাংচারটা করে যাচ্ছি। চুরি বা অনৈতিক কাজের সাথে প্রেস্টিজের সম্পর্ক নেই। প্রেস্টিজ হল লৌকিক বিষয় এর সাথে মূলত: টাকা ও ক্ষমতার সম্পর্ক। চুরি করে অর্থ বানিয়ে প্রেস্টিজটা বরং আরো বাড়ানো যায়। শুধু জানতে হবে প্রেস্টিজ বাড়ানোর টেকনিক। আমাদের সকলকে  দিনরাত প্রেস্টিজ রক্ষার্থে এত কষ্ট করতে হয় যা আমাদের সৃজনশীলতা বা উৎপাদনশীলতাকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করে থাকে।
          ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় চিন্তা করতাম “জনকল্যাণ মূলক” কাজ করব। তখনও আমার এই ফানি টাইপ চিন্তা ভাবনায় অন্যদের হাসির খোরাক হতাম। অতঃপর চাকুরী-কালীন সময় দেখলাম আমার মানুষের প্রতি দয়ালু আচরণ আর ভাল ব্যবহার আমার চরিত্রের দুর্বলতর দিক হিসাবে আমার ঊর্ধ্বতনদের কাছে চিন্থিত হচ্ছে। তবে কিছু সংখ্যক সুবিধাবাদী ব্যতীত আমার দয়ালু গুনটির জন্য অন্যান্য অনেক মানুষের ভালবাসা পেয়েছি ও পাচ্ছি।
          চাকুরীজীবনে “কর্তা ভাব” ও “আওয়াজ দিয়ে” চলতে না পারায় প্রেস্টিজ রক্ষা করাটা দূরহ হল। তখন ভাবনার জগতে হাজি মো: মহসিন টাইপকাজগুলি করার ইচ্ছে জাগল। দাদা কৃষক হওয়ার বদৌলতে গ্রামে অনেক আত্মীয়কে যাকাত ও দান করার মহা উতসব শুরু করলাম। যা হোক সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে চলছিল। এখন প্রেস্টিজের আরেক যুদ্ধে পরে গেলাম। চারপাশে অনেকেই বিদেশ যাচ্ছে । সন্তান ও পরিবার বিদেশ যেতে চায়। এখানেও আমি অন্যদের থেকে আলাদা। নয়ত আমার মাথায় কেন আসবে চিকিৎসা ছাড়া বা কর্ম ছাড়া বিদেশ যাওয়াটা অপচয়। আমি আনন্দ ভ্রমণের টাকা দিয়ে আমার একটি দরিদ্র আত্মীয়কে সচ্ছলতা দিতে পারি। আমার টাকায় আমি নিজ আনন্দ ভ্রমণে যাব সেটাই স্বাভাবিক। আমি জানি অনেক পরহেজগার লোকও আমার মত স্বীয় স্বার্থ বিরোধী চিন্তা করবে না। এধরনের ভ্রমণ শেষে আমার স্ত্রী ও বাচ্চারা তাদের প্রতিবেশীদের কাছে প্রেস্টিজটা কত বাড়াতে পারত। অথচ এখানেও আমি বাগড়া দিচ্ছি। ইউরোপিয়ান দেশের মত আমার সন্তানরা যদি কাজ করে পয়সা জমিয়ে বিদেশ যেতে পারত সেটা ভাল হত। অবশ্য কোচিং চালানো বা টিউশন করিয়ে আমার সন্তানরা কিছু উপার্জন করতে পারে তবে আমি উৎসাহিত করব। কারণ নিজে উপার্জন করার অভ্যাস করা ভাল। নিজের উপার্জনে নিজের শখ মিটানো অত্যন্ত আনন্দদায়ক। যা আমি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর কিছুদিন টিউশনি করে সে আনন্দটা পেয়েছি।
আমার ইচ্ছের সাথে আমার অর্জনগুলো কখনই এগিয়ে যায়নি। কারণ, আমার ইচ্ছেগুলো কখনোই অন্য দশজনের মত ছিলনা এগুলো ছিল ব্যতিক্রম। এখনও আমি মনে প্রাণে চাই আমার সন্তানগুলো যেন আমার স্ত্রীর মত বাস্তববাদী হয়। অন্যথায় এদের জীবন আমারই মত ব্যর্থতায় কাটতে পারে।
          তবে আমি সম্পূর্ণ নিরাশাবাদী নই আমার স্বপ্নগুলো নিয়ে। শুধু কষ্ট পাই, আমার চিন্তা চেতনা আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মত হলে আমার প্রফেশনাল ও আর্থিক দুই দিকেই অনেক অনেক বেশী উন্নতি করতে পারতামআমি ঠিক জানিনা কবে কিভাবে আমার ইচ্ছের কাজগুলো করতে পারব।
আমার ইচ্ছেগুলো শেয়ার করলাম:
১। মানব সভ্যতা রক্ষাকারী সবুজ আন্দোলনে অংশ নিতে পারা (যেমন: রাসায়নিক ব্যবহার বিহীন কৃষি, সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ,জলবিদ্যুৎ ও ফসিল জ্বালানীর সাশ্রয়ী ব্যবহার)।
২। বিবেকের শক্তিতে দৃঢ় মানব সমাজ গড়ে তোলার কাজে সহযোগিতা করা।
৩। অবহেলিত ও বঞ্ছিতদের আর্থিক সহযোগিতা করা (গ্রিন শক্তি ব্যবহারে জীবিকা তৈরি,কম্পিউটার ব্যবহার বা অন্য কোন কারিগরি কাজ শিখে বেকারত্ব দূরীকরণ)।

এখন আমার চাকুরী-কালীন সময় হয়ত ইচ্ছে গুলো থাকবে লেখনীতে ও পরিকল্পনায়। হয়তবা কিছু কিছু শুরু করতে পারব। এতে যে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আমার প্রয়োজন তাতে আমার সন্তানদের খরচের স্বাচ্ছন্দ্যের সীমাকে সীমিত করে কষ্ট দিতে হবে। তাদের উত্তরোধিকারের সম্পদ সীমিত করতে হবে। তবুও মহত ইচ্ছেগুলো বাস্তবায়ন না করলে আমি যে আমার মনকে প্রবোধ দিতে পারব না। কারন আমি আর দশটা মানুষের মত স্বাভাবিক চিন্তাধারার নই। আর কষ্টের মধ্যে সন্তানরা মানুষ হলে তারা মাটি ও মানুষের কাছাকাছি থাকবে বলেই আমার ধারনা। এখানেও আমার চিন্তাগুলো অন্যদের থেকে আলাদা। দীর্ঘ ৪৩ বছরে আমার ভাবনা চিন্তাগুলো আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মত করতে পারিনি। তা আর পরিবর্তনের চেষ্টা না করে ইচ্ছেগুলো বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়াটাই ভাল। হয়তবা আর্থিক সংকটের ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে হবে। সকলের দোয়া চাই।


Comments and Opinion sent via Group Mail on this Write Up

Akbar' via রজত বন্ধন 

Sarkar.....
Kothin...... Philosophy ... Why didn't u write that earlier... 
Dosto... Do u mind if I dedicate this article to Arik....

Akbar...
Sent from my iPhone

Moshfequel Alam Talukder malam72@gmail.com/ 12 June 2014 20:31
Keep moving friend,  Tareq.
 Rahat Zaman 
Very honest, humane thoughts and well articulated, Tareq. 

My father served in the army for 35 years and I remember he went through the same challenges, high walls of obstructions but always with a positive motivation and courage. Being his eldest child I pretty much saw my parents hardship, sacrifice to raise three of their children. Trust me it was hard and there was no UN missions either. :-)

Keep it up my friend. 
Wish you all the best. 
Salam and cheers 
Rahat (MCC)
San Francisco, California 

Keep it up

Sent from my iPhone

Mohammad A Rahman 
Tareq, I must appreciate that your words are a wonderful presentation of inner feelings. I believe they are very much alike with the thoughts of many others.  Keep moving.
Arif/MCC

Dr. Wazed Ali 
Carry on, Dosto. Almighty Allah be always with you. / Wazed/ CCR9
Masum Rashed Kazi 
Dear Tareq,
Accept my salute. Good to know you as one of those few who have  not forgotten the source of food that we were fed in our student life and one of fewer who tries to repay the debt.
Abdullah Al Mamun mamun4185@gmail.com
অন্যদের থেকে আলাদা...বেতিক্ক্রম ইত্যাদি বার বার আসাটা বাদে ঠিক আছে.........
নুরুজ্জামান ZAMAN 
Dosto 
Alhamdulillah osadharon . Musa (asm) doa korten Allah SWT amake bhao kisu korara sugug dao . Pray to him he will make it possible inshallah. 
I follow you my prayer remains.
With warmest salams 
zmn-arty
send from SYMPHONY
 Ahmed Abu Insaf 
Dear Sarkar,

I Love your writing ...

But I hate your public display of "Fristration" ... 
We all chose our way - good, bad, ugly or whatever,  you do not have the right to judge ... That makes me and I am sure many others Angry ! 

I Like your dream for bigger and more meaningful life...

Regards, A Insaf
'Akbar' via রজত বন্ধন rojotbondhon@googlegroups.com
Insaf...
Take that easy..... Sarker  is practicing to write which he explained earlier as well....
Mane bolte chai : topic tato kharap Lekhe nai...  
Sarker joto tuku lozza dieche tar cheye beshi tui Sarker ke lozza dili... 
R Sarker : before publishing any article in course mail get that vetted  
By me 1st...,
Akbar...
Sent from my iPhone

Asif Reza 
Sharkar
Cheer up dosto. It was gr8 to know u better with this write up. May Allah help u fulfill your dreams.
Asif Reza 
sayeed mahmudul hasan' via রজত বন্ধন 
অনেক দিন পর কোর্স মাইল গরম হইল সরকার তুই এই রকম আরও একটা ছাড় লেখার সমালোচনা না থাকলে লেখক হওয়া যায় না তুই লেখে আনন্দ পাবি আর আমরা সমালোচনা করে আনন্দ পাব এভাবেই তুই একদিন বিশিষ্ট লেখক হবি আর আমরা লেজ বিশিষ্ট সমালোচক হব.....................

Sayeed Mahmudul Hasan

sayeed mahmudul hasan' via রজত বন্ধন rojotbondhon@googlegroups.com
Dear Insaf 

I love your writing ............and Sarkar's as well. কি করি বল তো? এইটা তো পোডিয়াম ~ গ্যালারী হয়ে গেল........................!

Sayeed Mahmudul Hasan

Shahriyar 
Dear course mates,

First of all, I liked Sarkar's writing.. Second of all, I liked other comments from course mates as well. Last but all, I think, every body liked everybody's opinion if not publicly; definitely secretly. That's why we r course mates. Cheers to everyone. 

Shahriyar. 

Saifullah Belal belal4194@gmail.com

What a philosophy???? by shahriyar8453. I liked ur openion. Toree diya hobee.......chalaia ja.
Cheers.....


Md Ashraful Islam 
What you do it must be logical,practical and as your heart desires.Be fine.kind regards ashraf

'salahuddin' via রজত বন্ধন 
Onak din pora litachi......
Saifullah belal ki jane..........Saifullah saharier er moner abosta

 Saifullah Belal 
Part of life. Shob iccha puron hoy na as sarkar said. Alhamdulillah for iccha puron so far.

A,.M.M. shahnewaz' via BCC Excadet89 
This is how we should lead our life..but can,t. I firmly believe , if not 100% for today , this ideology brings a little change to a three single pers today, then spread over more three pers and so on and will bring change to all. Let us be real human being.

A,.M.M. shahnewaz' via BCC Excadet89 
tarek, tor matha kharap hoise,egula kono sutho chinta na,tor pcychiatrist dekhano darkar.

moinul261' via BCC Excadet89 
Masum thik koichosh