ভারতের গুজরাটে
২৪ এপ্রিল ২০১২ সালে ক্যানেল টপ সোলার সিস্টেমের পাইলট প্রজেক্ট উদ্ধোধন হয়। খালের উপরে সোলার প্যানেল
স্থাপনের বিষয়টি মাথার মধ্যে আসলে প্রথমে যা মনে হবে তা হল, এ ধরনের ব্যবস্থায় আমাদের সোলার প্যানেল স্থাপনের স্থান
সংকট দূর করবে।
নিন্মে এ ধরনের
সিস্টেমে যা যা সুবিধা আমার মনে হয়েছে এবং যা যা আমি ইন্টারনেট থেকে পেলাম তা সবার
জানার জন্য তুলে ধরলাম।
১। খালের উপরে সোলার প্যানেল
ঢাকনার মত স্থাপন করা হয়। ফলে অন্যান্য উন্মুক্ত স্থানের মূল্যবান
জমির অকৃষি খাতে ব্যবহার কমে যাবে।
২। খালের মূল্যবান সেচের
পানি সোলার প্যানেল দ্বারা ঢাকা থাকার কারণে পানি কম বাষ্প হবে যা কিনা মূল্যবান
সেচের পানি কম বাষ্প হওয়ার কারণে তা একটি সাশ্রয়ী ব্যবস্থা হবে।
৩। অধিকাংশ সেচের খালের
সুদীর্ঘ দূরত্ব জমির মাঝ দিয়ে যাওয়ার কারণে সূর্যালোক ভালভাবে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। কারণ জমির এলাকায় সাধারণত
বড় গাছ কম লাগানো হয় যেন জমিতে ছায়া না পড়ে।
৪। পানি আধারের উপরে সোলার
প্যানেল স্থাপন করায় খালের পানির বাষ্পীভবনের কারণে সোলার প্যানেল তুলনামুলকভাবে ঠাণ্ডা থাকে আর কম
উত্তপ্ত হওয়ার কারণে ১৫% বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশী হয়।
৫। খালের উপরেই পাওয়ার
সোর্স থাকায় সহজেই পানি খাল থেকে জমিতে পাম্প করা যাবে। তার ও আনুষঙ্গিক খরচ
কমে যাবে।
৬। খালের পার দিয়ে সোলার
প্যানেলের পাশাপাশি বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন করা যাবে। সহজেই দূরবর্তী ও দুর্গম
এলাকায় খালের উপর উৎপাদিত বিদ্যুৎ সহজেই ব্যবহার ও সরবরাহ করা যাবে।
৭। আনুমানিক ৫০ গজ প্রস্তে
এবং ৭৫০ থেকে- ১কিমি দূরত্বের মধ্যে ১ মেগাওয়াট
ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ভারতের গুজরাটের পাইলট প্রজেক্টে ৭৫০
মিটার দূরত্বের মধ্যে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে।এতে ১০০ কিমি খালের
নেটওয়ার্ক থাকলে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ভারতের গুজরাটে ১৯,০০০ কিমি খালের নেটওয়ার্কে সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিকল্পনা
চলছে।
৮। পৃথিবীব্যাপী বাড়ীর
ছাদের পাশাপাশি কবরস্থানগুলোর জমি সোলার সিস্টেম স্থাপনে ব্যবহার করার একটা ধারনা বিদ্যমান। কবর স্থানে সোলার সিস্টেম
বসানোর পরিবর্তে গাছ লাগানো অনেক বেশী পরিবেশ বান্ধব। বিশাল খাল উন্মুক্ত
থাকতে কবরস্থানকে ডিস্টার্ব করার প্রয়োজন পড়বে না।
৯। খালের প্রবহমান পানিতে
মাইক্রো হাইড্রো টারবাইন ব্যবহার করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যোগ করা সম্ভব।
১০। যেসব স্থানে বেশী বায়ু
প্রবাহ রয়েছে সেসকল স্থানে বায়ু বিদ্যুতের টারবাইন ব্যবহার করে সোলারের একই সঞ্চালন
লাইন ব্যবহার করে বায়ু বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা সম্ভব।
১১। মূল্যবান সোলার সিস্টেমের
কারণে সেচের খাল, খালের পার ইত্যাদি
যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে যাবে।
১২। খালের উপরে প্যানেল
থাকার কারণে শুকনো দিনে সহজেই খালের পানি দ্বারা সোলার প্যানেলের ধুলাবালি ধোয়া ও রক্ষণাবেক্ষণ
কম শ্রমসাধ্য হবে।
বাংলাদেশ পৃথিবীর
অন্যতম ঘনবসতির দেশ। আমাদের রয়েছে জমির চরম সংকট। এ ধরনের সংকটময় অবস্থায়
ভারতের গুজরাটের ক্যানেল টপ সিস্টেম হতে পারে আমাদের জন্য অনুসরনীয়। আমাদের দেশে খালের ধারে
গাছ গাছালী আছে। আবার কোথাও কোথাও খাল উন্মুক্তও আছে। খাল যেখানে উন্মুক্ত
আছে সেখানেই আমরা খালের উপর সোলার সিস্টেম বসাতে পারি। বাংলাদেশের সমস্ত উন্মুক্ত
খালগুলি সোলার প্যানেল দিয়ে ঢাকতে পারলে আশা করা যায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে
আরো বিদ্যুৎ সার-প্লাস করতে আমরা সক্ষম
হব।
এখন আমাদের প্রয়োজন
উদ্যোক্তা। বর্তমানে ডিজেল থেকে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন
খরচ কমে আসছে। কারণ সোলার প্যানেল এখন ওয়াট-প্রতি অনেক কমে এসেছে। যে প্যানেল ৫ বছর আগেও
ছিল ২৫০/২০০ টাকা প্রতি ওয়াটের দাম। সেই একই প্যানেল পাওয়া
যাচ্ছে ৬০/৫০ টাকায়। একসময় বিজ্ঞানীরা চিন্তা
করত কিভাবে প্যানেলের দাম ওয়াট প্রতি খরচ এক ডলারের নীচে আনা যায়। একসময় এটা স্বপ্ন থাকলেও
তা আজ বাস্তব। সোলার প্যানেল এত ব্যাপক হারে চায়না উৎপাদন
করছে যে সোলার প্যানেলের দাম তো বাড়ার সুযোগ তো নেইই বরং আরো কমতে পারে। এখন ব্যাটারির দাম কমে
গেলেই বা সাশ্রয়ী ব্যাটারি তৈরি হলেই সারা পৃথিবী ব্যাপী গ্রিন এনার্জির ব্যবহার দ্রুত
বেড়ে যাবে।
আমাদের দেশে
যারাই সৌর শক্তির সোলার প্যানেল বসাতে স্থান সংকটে ভুগছেন তারা আর দেরী না করে সরকারী
অনুমতি নিয়ে সরকারী খালের উপর সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌর বিদ্যুৎ কারখানা তৈরি করে ফেলুন।