Pages

Friday, November 29, 2019

বাংলা‌দে‌শে বায়ু দূষনরো‌ধে প‌রি‌বেশ বান্ধব যানবাহন প্রচলন

ই‌লেক্ট্র‌িক গাড়ী, ই‌লেক্ট্র‌িক বাস ও ই‌লেক্ট্র‌িক ট্রাইসাইক্যাল প‌রি‌বেশ বান্ধব। পৃ‌থিবী ধী‌রে ধী‌রে এই কালচা‌রের দি‌কে এ‌গি‌য়ে যাচ্ছ‌ে। ত‌াহ‌লে পে‌ট্রোল কার ও ডি‌জেল কা‌রের কি অবস্থা হ‌বে। ভারত  ২০৩০ সা‌লের ম‌ধ্য‌ে অল ই‌লেক্ট্র‌িক প‌রিবহন কর‌তে চায়। প্রশ্ন হল তাহ‌লে চলমান ডি‌জেল ও প্রে‌ট্রোল কা‌রের কি হ‌বে? আ‌মি ভাবলাম আচ্ছা যখন প‌রি‌বেশবাদীরা বেশী সোচ্চার হ‌বে হাই‌ব্রিড গাড়ী ও ই‌লেক্ট্র‌িক গাড়ী চালনার জন্য তখন কিছু তথ্য জানার জন্য গুগল কর‌তে থাকলাম। অবাক হ‌য়ে দেখলাম সাধারন গাড়ী‌কে রিক্ট্র‌ো‌ফিট ক‌রে ব্যাটারী, ইডাকশন মটর ক‌ন্ট্রোলার অ্যাড ক‌রে খুব সহ‌জেই হাই‌ব্রিড করা যাচ্ছ‌ে। সিএন‌জি ও এল‌পি‌জি'র মত সাধারন কনভার্সন। ৬/৭ ঘন্টার ম‌ধ্যে সাধারন গাড়ী হাই‌ব্রিড হ‌য়ে যাচ্ছ‌ে। হয়ত বা অ‌নে‌কে বল‌বেন এ‌তে তো প‌রিপূর্ণ হাই‌ব্রিড হ‌চ্ছে না। না হোক হাই‌ব্রিড গাড়ী ৪০% জ্বালানী সাশ্রয় হওয়ার জায়গায় আর না হোক ৩০% সাশ্রয় তো হ‌চ্ছে তা‌তে বা কম কি‌সে। একটা গাড়ী কিন্তু অ‌নেক সময়  ২০ বছর বা ত‌তো‌ধিক বয়স পর্যন্ত বা তার বেশী সময় ব্যবহার করা যায়। বাংলা‌দে‌শে একটা গাড়ী ৩০ বছরও ব্যবহার হ‌তে দেখা যায়। উন্নয়নশীল দেশ ব‌লে হয়ত তা ঘট‌ছে। ধনী দেশ হ‌লে তা মো‌টেই ঘটত না। অ‌নেক দ‌েশে দশ বছর একটানা কেউ একই গাড়ী ব্যবহার ক‌রে কিনা স‌ন্দেহ। সবাই নিত্য নতুল ম‌ডে‌লের গাড়ীর দি‌কে ধা‌বিত হয়। এমনও জানা যায় গাড়ীর ম‌ডেল বদল করার জন্য অ‌নেক সময় অ‌নেক কোম্পানী তাদের পুরাতন ম‌ডেল‌ের গাড়ী নতুন অবস্থায় বা‌তিল ঘোষনা ক‌রে। মা‌ঝে মা‌ঝে এটাও শোনা যায় কোন কোন কোম্পানী তা‌দের প্রডাকশন কস্ট কমা‌নোর জন্য অ‌নেক সময় বিপুল প‌রিমান গাড়ী উৎপাদন ক‌রে ফে‌লে। প‌ড়ে হয়তবা দেখা গেল উৎপা‌দিত গাড়ী আশানুরুপ বি‌ক্রি হ‌চ্ছে না। তখন কোম্পানী তা‌দের গাড়ীর মূল্য স্থ‌ি‌তিশীল রাখার জন্য বাজা‌রে গাড়ী সরবরাহ বন্ধ রে‌খে নতুন গাড়ী ফে‌লে রে‌খেনেস্ট ক‌রে মজুদ ক‌রে বাজার স্থি‌তিশীল রা‌খে। তা যাই হোক গাড়ী মানু‌ষের চরম আগ্র‌হের জায়গা। এটা বদলা‌নোর অভ্যাস ও নিত্যনতুন ম‌ডেল‌ে যাওয়াটা বেশীর ভাগ সামর্থ্যবানরাই তাই করে। 
বাংলা‌দে‌শের জন্য প্রাযুক্ত‌িক আ‌ন্দোল‌নে শরীক হওয়ার উপায় কি?
১। আমা‌দের বাস, ট্রাক ও কার জাতীয় যত গাড়ী আ‌ছে সেগু‌লো‌কে প্রথম ধাপে হাই‌ব্রিড কর‌তে হ‌বে। হাই‌ব্রিড ছাড়া অন্য গাড়ীর আমদানী বন্ধ কর‌তে হ‌বে।
২। সমস্ত সিএন‌জি ট্যা‌ক্সি‌কে ক্রমান্ব‌য়ে হাই‌ব্রি‌ডে রুপান্তর করা এবং ভবিষৎএ সিএন‌জি'র আমদানী বন্ধ ক‌রে অল ই‌লেক্ট্র‌িক ট্যাক্স‌ি ত‌ৈরি ও আমদানী করা।
৩। সমস্ত অ‌টো‌রিক্সা‌কে আ‌রো হালকা ও অ্যা‌ফি‌শি‌য়েন্ট করার জন্য লীড অ্যা‌সিড‌ হতে লি‌থিয়াম আয়‌নে কনভার্ট করা।
৪। গ্রা‌মের রিক্সা ভ্যান ইত্যা‌দি যেগু‌লো ই‌লেক্ট্র‌িক মটর‌ে চ‌লে সেগু‌লোর সিলড এ‌সিড বা ম্যান‌টেন্যান্স ফ্রি ব্যাটারীর প‌রিবর্ত‌ে লি‌থিয়াম আয়ন ব্যাটারীর ব্যবহার করা।
৫। গ্রা‌মের শ্যা‌লো ই‌ঞ্জ‌ি‌নের ট্রলার ও অনান্য বাহনগু‌লি‌কে ধী‌রে ধী‌রে হাই‌ব্রি‌ডে রুপান্তর ক‌রে আয়ুপূর্ত‌ি ক‌রে ফেইজ আউট করা। 

‌যে কোন ই‌লেক্ট্র‌িক বাহন সমশক্ত‌ির ফু‌য়েল গাড়ী হ‌তে ২০% কম প‌রি‌বেশ দূষন ক‌রে। শহ‌রের বাতাসকে নির্মল রাখ‌তে ই‌লেক্ট্র‌িক বাহন ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই। ই‌লেক্ট্র‌িক বাহন কম প্রচ‌লিত ব‌লে প্রাথ‌মিকভা‌বে ই‌লেক্ট্র‌িক মটর আমদানী নির্ভর ব‌লে দাম বেশী হ‌বে। ত‌বে সম‌য়ের সা‌থে দাম কম‌তে থাক‌বে। লি‌থিয়াম আয়ন দি‌য়ে প্রাথ‌মিক সময় গাড়ীর দাম যত ছিল আজকাল ধী‌রে ধী‌রে দাম ক‌ম‌ছে। এমন‌কি লি‌থিয়াম আয়‌ন ব্যাটারীর দামও ধী‌রে ধী‌রে আ‌রো কম‌ছে। চার্জ ডেন‌সি‌টি বাড়‌ছে। ব্যাটারী‌তে আগুন ধরার প্রবনতা বন্ধ হ‌য়ে‌ছে। আজ তৈল বা কয়লার জেনা‌রেট‌রের বিদ্যুৎ‌তে গাড়ী চার্জ হ‌লেও বে‌শি‌দিন অ‌পেক্ষা কর‌তে হ‌বে না যখন আমরা সোলার প্যা‌নে‌লের বিদ্যুৎ দি‌য়ে সব চার্জ করব।
অপর‌দি‌কে লি‌থিয়াম আয়ন ব্যাটারী ও সোলার প্যা‌নেল দশ/‌বিশ বছর ব্যবহার ক‌রে রিসাইক্যাল করা যায় ব‌লে আ‌রো বেশী প‌রি‌বেশ বান্ধব। সারা পৃ‌থিবীর উন্নত দেশগু‌লো ধী‌রে ধী‌রে প‌রি‌বেশ বান্ধব বাহ‌নের দি‌কে এ‌গি‌য়ে যাচ্ছ‌ে। এখন আমা‌দেরও এ‌গি‌য়ে যাওয়ার সময় এ‌সে‌ছে। অন্যথায় আমরা হয়ত আ‌রো বেশী পি‌ছি‌য়ে পড়ব।

Saturday, November 23, 2019

সন্তা‌নের বি‌য়ে ও শশুর হওয়ার কর্তব্য

একজন সেনা অফিসার তার মে‌য়ে'‌কে দামী একটা কমিউনিটি সেন্টারে বি‌য়ের অনুষ্ঠান ক‌রে বি‌য়ে দিয়েছেন। প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ। এ যুগে তেমন টাকা নয়। আমার স্ত্রী বলল, দেখবা তোমার ছেলে মে‌য়ে বি‌য়ে দেয়ার সময় এর দ্বিগুণ টাকা লাগবে। মানে ৪০ লাখ টাকা। স্ত্রী'‌কে বললাম কও‌কি তাইলে তো প্রোপার্ট‌ি বিক্রি কর‌তে হইব।
আমার স্ত্রী'‌কে স্মরণ করালাম মনে আছে আমা‌দের বি‌য়ের সম‌য়ের কথা ১৯৯৭ সালে ডিসেম্বরে আমার শাশুড়ি আম্মা বললেন, তোমার শশুর আব্বা মারা যাবার আগে মেয়েদের একাউন্ট খুলে তা‌দের বি‌য়ের জন্য টাকা জমাতে শুরু ক‌রে ছিলেন, তোমার স্ত্রী'র একাউন্টে আছে তিন লাখ টাকা। এখন এটা খরচের তোমার মতামত চাচ্ছি। আমার মতামত হল, আমি আমার শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য নি‌য়ে বি‌য়ে‌তে আসব। আপনি আপনার অতিনিকট আত্মীয়‌দের দাওয়াত করবেন।‌ নিজ বাসায় আয়োজন করুন। বরযাত্রী অ‌তি সী‌মিত হ‌বে। ঢাকা‌তে আমার দাওয়াত আমি করব ও আমার আত্মীয়‌দের খাওয়াব। বেঁচে যাওয়া অর্থ আপনি আপনার পরিবারের প্র‌য়োজ‌নে খরচ করুন।
অপরদিকে আমি আরেকটা বি‌য়ে দেখলাম; অসচ্ছল পরিবারের মে‌য়ে শিক্ষিত হ‌য়ে‌ছে। শশুরবাড়ীর পক্ষ শিক্ষিত ও সচ্ছল। ধুমধাম ক‌রে বি‌য়ে না দিলে ইজ্জত থা‌কে না। বাবা ঘুরে ঘুরে সাত আট লাখ টাকা ধার ক‌রে খরচ ক‌রে মে‌য়ের বি‌য়ে দেন। মে‌য়ের বি‌য়ের ধুম ধাম হয় ঠিকই। বাবা মার হাঁড়ি তো আর চড়ে না। বাবা চো‌রের মত ঘুরে বেড়ায় পাওনাদারদের এড়িয়ে।
আমি ঢাকায় নিজ বাসার ছা‌দের উপর বি‌য়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করব নিজের টাকায়। শুধু অতি কাছের আত্মীয়‌দের দাওয়াত করব। সব ঠিক ঠাক। বড় ভাই বাধ সাধল। ঢাকার মাঝামাঝি স্থানে বি‌য়ের আয়োজন করবে। ক্যাপ্টেন সা‌হে‌বের বি‌য়ে বলে কথা। বড় ভাই চাকুরীজীবী ঢাকায় সরকারী চাকুরী ক‌রে। অনেক বন্ধু বান্ধব। আমাকে দিয়ে ঢাকায় বড়সড় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করাল। ধার কর্জ ক‌রে খরচ করাল। পড়ে দেখলাম আমার সামরিক ও ক্যাডেট কলেজ বন্ধুরা সবাই অনুপস্থিত। আর যারা উপস্থিত তা‌দের আমার অচেনা বড় ভাই‌য়ের বন্ধু বান্ধব। বি‌য়ের পাঁচ বছর পর শান্তিরক্ষী মিশন থেকে এসে ব্যাংকের ওডি আর বড় ভাই‌য়ের ঋণ শোধ করেছিলাম।
অনেক সতর্ক থাকার পরও অপরের অনুরোধে ঢেঁকি গিলে ধরা খেলাম।
এটা একটা বিরাট শিক্ষা।
এখন চিন্তা করলে মনে হয় বাসার ছা‌দের উপর অনুষ্ঠান ক‌রে তৎকালীন সম‌য়ের বিশাল অপচয় কমা‌তে পারতাম।
সন্তান‌দের বি‌য়ের খরচের জন্য আমার পরিকল্পনা অতি সহজ। ছেলেদের স্ত্রী'‌দের জন্য দশ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ক‌রে দি‌য়ে ছেলেকে ন‌মিনী করব এবং ছেলের বি‌য়ের এই দশ লাখ টাকা কাবিন হবে ও কাবিনের উসুল দেখাবে। বাকী বি‌য়ের খরচ ও অলংকার ছেলের মার ও ছেলে তা‌দের ইনকাম ও সম্পত্তি বেচা বিক্রি ক‌রে যা পা‌রে খরচ করুক। আমি নাই এর মধ্যে। ছেলের বৌ চাকুরী করলে পাবে দশ লাখ। আর চাকুরী না ক‌রে পিউর হাউজ ওয়াইফ হলে পাবে বিশ লাখ। মে‌য়ের বি‌য়ের আগে থেকেই তার নামে সঞ্চয়পত্রের মত মাসিক ইনকাম থাকবে। ছেলে মেয়েদের বি‌য়ের সময় আর্থিক নিরাপত্তা দেয়াটা জরুরী।      নতুন সংসার শুরু কর‌তে অনেক কিছু কেনা কাটা কর‌তে হয়। এখানে অনেকে বলবেন  ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বেশী হ‌য়ে যাচ্ছ‌ে না। আমি বলব আপনি  ২০লাখ টাকার অনুষ্ঠান করছেন নাম কামা‌নো ও ইজ্জত বাড়া‌নোর জন্য সেটা না ক‌রে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে নব দম্পতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তা অবশ্যই ভাল কাজ।  অতঃপর নব দম্পতির সন্তান হলে প্রত্যেক নাতি নাতনীর জন্য মা‌য়ের নামে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ টাকা ক‌রে সঞ্চয়পত্র যোগ হবে। আমরা সবাই জীবন শেষেই কেবল সম্পদ সন্তান বা উত্ত‌রো‌ধিকারী‌দের দেয়ার চিন্তা করি। কিন্তু জীবনের শেষ‌ে দেয়ার বদলে কোন বি‌নি‌য়ো‌গে রেখে মাসিক একটা আর্থিক অর্জনটা বেশী প্র‌য়োজন। নশ্বর এই  জীবনে  সম্পদ জ‌মি‌য়ে রাখার চে‌য়ে ক্রমান্বয়ে উপযুক্ত প্র‌য়োজ‌নে খরচ করাটা অনেক অনেক মংগলজনক। এটা আমার নিজ মতামত ও পরিকল্পনা। মে‌য়ের নিরাপত্তার জন্য চাকুরীর ম‌ধ্যে নেয়া ও সঞ্চয়পত্রের মত মাসিক ইনকামের ব্যবস্থা করা প্র‌য়োজন। এটা হয়তবা ছেলের বৌ বা মে‌য়ের জন্য ‌তেমন কোন টাকাই নয় এ যুগে। কিন্তু আমি নিশ্চিত,  এই  অল্প মাসিক পকেট খরচের মত টাকাটা তা‌দের বাড়তি বি‌নোদন ও স্ব‌স্থি দিবে। মে‌য়ের বি‌য়ে‌তে অপর পক্ষ কোন চাহিদা অলংকার ও যৌতুক হলে আমার পক্ষ থে‌কে ঝাঁটাপেটা হবে। যদি মে‌য়ের মা ও মে‌য়ে তাদের প্রপার্টি সেল ক‌রে আধুনিক কালের চাহিদা মিটায় তবে সেটা তা‌দের ব্যাপার। অপচয়ে ও মানুষ খাওয়া‌নো‌তে আমি নাই। অনেকে বলবেন, ছেলেদের বৌ'‌দের আর মেয়েকে সঞ্চয়পত্র ক‌রে কিভাবে এত টাকা দিবেন। ভবিষ্যতে আপনার ক্যান্সার হল, তখন বিদেশ চিকিৎসা আপনার পরিকল্পনায় পানি দিবে। এটা ঠিক। তবে সরকারী হাসপাতালে নিজের চিকিৎসা নি‌য়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যু গ্রহণ করলে পরিবারের প্রতিশ্রুত  কাজগু‌লি করা যাবে।
অনেকে বলবে, সঞ্চয়পত্র সুদ শব্দটার জন্য যারা এটা ব্যবহার কর‌বেন না তাদের জন্য ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বি‌নি‌য়োগ আ‌ছে। মূল বিষয়‌ হল মাসিক ‌যেন একটা আয় আসে । এমন‌কি দোকান ক্রয়েও বি‌নি‌য়োগ হ‌তে পা‌রে। অনেকে বলবেন, বৌ টিকল না বা মে‌য়ের স্বামী টিকল না। তাহলে কি এত বড় ঝুঁকিতে যাওয়া যাবে।
অবশ্যই‌ যাওয়া যা‌বে। কারন সংসার টিকুক না টিকুক আত্মীয়তা যেটা হল সে বিদ্যমান থাকুক মা‌সোহারা মধ্য দি‌য়ে। কল্যাণ হোক কা‌রো না কা‌রো।

Thursday, November 21, 2019

প‌রি‌বেশ বান্ধব অ্যালু‌মি‌নিয়াম ওয়ান টাইম ক‌ন্টেইনার‌ের ব্যবহার

 পবিব‌েশ বান্ধব অ্যালু‌মি‌নিয়াম ওয়ান টাইম ক‌ন্টেইনার‌ের ব্যবহার

আমার অষ্টম‌শ্রেণী পড়ুয়া ছে‌লের কা‌ছে জান‌তে চাইলাম পৃ‌থিবী‌তে অ্যালু‌মি‌নিয়া‌মের প‌রিমান কত? ছে‌লে চটপট উত্তর দিল, পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে বেশী মজুদ ধাতুর ম‌ধ্যে অ্যালু‌মি‌নিয়াম এক‌টি। প‌রে ইন্টার‌নেটে পেলাম ‌বিদ্যমান ধাতুর ম‌ধ্যে ৮.২%  অ্যালু‌মি‌নিয়াম। অপর দি‌কে এত ব্যবহা‌রের পরও আয়রন মাত্র ৫% বিদ্যমান। মা‌নে অ্যালু‌মি‌নিয়াম থে‌কে পৃ‌থিবী‌তে আয়রন বা লোহার প‌রিমান কম। ত‌বে আয়রন আক‌রিক প্রক্রিয়ায় অ্যালু‌মি‌নিয়াম থে‌কে কম খরচ হয়। ফ‌লে অ্যালু‌মি‌নিয়াম থে‌কে আয়র‌নের দাম কম ও আমরা চা‌রি‌দি‌কে আয়র‌ন বা লোহার ব্যবহার বেশী দেখ‌তে পাই। অপর দি‌কে প্র‌ক্রিয়াজাত কর‌তে খরচ বেশী ব‌লে অ্যালুম‌ি‌নিয়াম ভূপৃ‌ষ্ঠে বেশী থাকার পরও এর ব্যবহার কম। অ্যালু‌মি‌নিয়াম রিসাইক্যা‌লের প‌রিমান ৬৭% আর আয়রন রিসাইক্যাল ৫২%। অ্যালু‌মি‌নিয়াম বেশী রিসাইক্যাল হওয়ার কার‌নে তার দাম ক‌মে আস‌বে তা নি‌শ্চিত ভা‌বে বলা যায়।
"ওয়ান টাইম ইউজ" অ‌ধিক প্রচ‌লিত কিছু সামগ্রীর নাম। যা কিনা প‌রিবে‌শের বারোটা বা‌জি‌য়ে পৃ‌থিবী‌কেও "ওয়ান টাইম" ক‌রে দি‌চ্ছে। তাহ‌লে উপায় প্লাষ্টি‌কের ব্যবহার কমা‌নো আর যতটুকু প্লা‌স্টিক ব্যবহার করা হয় তা পু‌রো মাত্রায় রিসাইক্যাল করা। ত‌বেই প‌রি‌বেশ‌কে কিছুটা স্ব‌স্থি দেয়া যা‌বে। আ‌মি বরাবরই ওয়ান টাইম ব্যবহা‌রের বিপক্ষ‌ে। কিছু‌দিন আ‌গে আমার মা হাসপাতা‌লে ভর্ত‌ি হলেন, মা‌য়ের জন্য কিছু মূখ‌রোচক খাবার প্রেরণ জরুরী। টি‌ফিন ক্যা‌রিয়ার দি‌য়ে লোক মারফত খাবার পাঠা‌নো। পুনরায় টি‌ফিন ক্যা‌রিয়ার ধোয়া ফেরত আনা পু‌রো প্র‌ক্রিয়াটা চ্যা‌লে‌ঞ্জ‌িং। তখন বু‌দ্ধি আসল ওয়ান টাইম ফুড কন‌টেইনার ব্যবহার করা। অপর‌দি‌কে আ‌মি আবার ওয়ান টাইম প্লা‌স্টিক কন‌টেইনার ব্যবহা‌রের বিপক্ষ‌ে তাহ‌লে উপায় কি? উপায় আর কিছুই নয় অ্যালু‌মিনিয়াম‌ের ওয়ান টাইম কন‌টেইনার ব্যবহার করা। প্লা‌স্টিক থে‌কে অ্যালু‌মি‌নিয়াম ওয়ান টাইম বক্সগু‌লি প‌রিবেশ বান্ধব। প্লা‌স্টিক প‌চে না। ত‌বে অ্যালু‌মি‌নিয়াম ভু‌মির সা‌থে মি‌শে অ‌তি ধী‌রে ধী‌রে। মা‌টির সা‌থে রাসায়নিক বি‌ক্রিয়ায় ধীরে ধী‌রে ক্ষয়প্রাপ্ত হবে ও এক সময় ক্ষ‌দ্র ক্ষুদ্র কনা হ‌য়ে মাটি‌তে মি‌শে যা‌বে। মাটি‌তে ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়ার জন্য এটা অ‌ধিক প‌রিমান প‌রি‌বেশ বান্ধব। অ্যালু‌মি‌নিয়াম প্লা‌স্ট‌িক ওয়ানটাইম থে‌কে কিছুটা বেশী দাম হ‌লেও এর প‌রি‌বেশ বান্ধব কোয়া‌লি‌টির জন্য ডিস‌পো‌জেবল ফুড কন‌টেইনা‌রের জন্য প্লাস্ট‌িক ব্যবহার বাদ দি‌য়ে অ্যালু‌মি‌নিয়ামের ব্যবহার বাড়া‌নোটা অ‌ধিক জরুরী।  ২০১৮ সা‌লে‌র হিসাব অনুযায়ী সারা পৃ‌থিবী‌তে ৯% প্লা‌স্টিক রিসাইক্যাল হয়। অপর‌দি‌কে অ্যালু‌মি‌নিয়াম রিসাইক্যাল হয় ৬৭%। প্লা‌স্টিক ডিস‌পো‌জেবল ফুড কন‌টেইনার ব্যবহার নি‌ষিদ্ধ ক‌রে তার জায়গায় অ্যা‌লুমি‌নিয়াম কো‌টেট কাগ‌জের ফুড প্যা‌কেট, অ্যালু‌মি‌নিয়াম ক্যান, অ্যালু‌মি‌নিয়ামের নানা মা‌পের ওয়ানটাইম ক‌ন্টেইনা‌রের ব্যবহার বাড়া‌নো যে‌তে পা‌রে। প্লাস্ট‌িক দি‌য়ে যা মোড়ানো যায় তার বেশীর ভাগই অ্যালু‌মি‌নিয়াম ফয়েল দি‌য়ে মোড়া‌নো যায়। বার্গার কিং, ম্যাক‌ডোনালস, ড‌মি‌নোজ, পিৎজ‌া হাট, কেএফ‌সি ও সাবও‌য়ে এরুপ অ‌ধিকাংশ চেইন ফুড শপ প্লা‌স্টিক‌ের ব্যবহার ক‌মি‌য়ে রিসাইক্যাল কাগজ ও ওয়াক্স পেপার ব্যবহার কর‌ছে। যা তা‌দের প‌রি‌বেশ স‌চেতনার জন্য অনুসরনীয় একটা কাজ।
আ‌মি প্লা‌স্টিক ব্যাগ ও ডিস‌পো‌জেবল কন‌টেইনার কম পছন্দ ক‌রি। ‌সৌ‌দি আর‌বে 'ওমড়া হজ্জ" করার সময় দেখলাম লক্ষ লক্ষ হাজীর জন্য ব্যাপক হা‌রে প্লা‌স্টিক আর প‌লি‌থি‌নের ব্যবহার হ‌চ্ছে। মাথা কামা‌নোর জন্য বড় বড় প‌লি‌থিন গায়‌ে জ‌ড়ি‌য়ে মাথা কা‌মি‌য়ে সেই প‌লি‌থিন গার‌বেজ ব্যা‌গে ফে‌লে দি‌চ্ছে। খাবার কিন‌তে গে‌ছেন। প‌লি‌থি‌নে ব্যাগ, প্লাস্টিক ওয়ান টাইম কন‌টেইনার, ডিস‌পো‌জেবল গ্লাস ইত্যা‌দি দি‌য়ে আপনা‌কে ব্য‌তিব্যস্ত ক‌রে দি‌চ্ছে। এমন কি টে‌বি‌লে বি‌ছি‌য়ে খাওয়ার জন্য বড় ডিস‌পো‌জেবল প‌লি‌থিনও দি‌চ্ছে। আ‌মি স‌ত্যি এত এত প‌লি‌থি‌নের ব্যবহার দে‌খে আতং‌কিত ছিলাম। ধর্মীয় তীর্থস্থান ও অনান্য পর্যটন কে‌ন্দ্রগু‌লো‌তে যেখা‌নে প‌লি‌থি‌নের ব্যবহার বেশী সেসব স্থা‌নে অ্যালু‌মি‌নিয়াম ফ‌য়েল ও ডিস‌পো‌জেবল অ্যালু‌মি‌নিয়াম ক্যান এবং অ্যালু‌মি‌নিয়া‌মের কন‌টেইনার‌ের ব্যবহার বাড়া‌নো প্র‌য়োজন। কাগজ বা রিসাইক্যাল কাগ‌জের ব্যবহার বাড়া‌নো প্র‌য়োজন। যেখা‌নে তরল নি‌তে হবে সেখা‌নে অ্যালু‌মি‌নিয়াম কো‌টেট পেপার বা ওয়াক্স পেপারের ব্যবহার বাড়া‌নো যায়। মোট কথা প্লা‌স্টি‌কের শক্ত‌িশালী বিকল্প হল অ্যালু‌মি‌নিয়াম এ‌তে খরচ কিছুটা বেশী হ‌লেও প‌রি‌বেশ বান্ধব। প‌রি‌বে‌শের কথা চিন্তা ক‌রে আমরা অ্যালু‌মি‌নিয়া‌মের ব্যবহার বাড়া‌তে পা‌রি। ঘ‌রের জানালা দরজা অ্যালু‌মি‌নিয়া‌মে তৈরী হ‌চ্ছে যা দীর্ঘ মেয়াদী। ম‌রিচা প‌ড়ে না। রিসাইক্যাল করা যায়। এখন সময় এ‌সে‌ছে ব্যবহৃত অ‌নেক সামগ্রী প্লা‌স্টি‌কের প‌রিবর্ত‌ে অ্যালু‌মি‌নিয়াম দি‌য়ে ত‌ৈরী করার। হয়ত অদুর ভ‌বিষৎ এ অ্যালু‌মি‌নিয়া‌মের ব্যবহার বাড়‌বে। সেই  সা‌থে বাড়‌বে রিসাইক্যাল করার ক্ষমতা। তখন হয়তবা ৯০% অ্যালু‌মি‌নিয়াম রিসাইক্যাল করা যা‌বে।

Thursday, November 14, 2019

‌ঢাকার যানজট নিরশ‌নের কোন সমাধান আ‌ছে কি?

কোন শহ‌রের যানজট নিরশ‌নে অ‌নে‌কে ব‌লেন, মানু‌ষের হা‌তে টাকা অ‌নেক। বেশী বেশী গাড়ী কে‌নে। ট্যাক্স বাড়াও গাড়ীর দাম বাড়াও। গাড়ী কেনা নাগা‌লের বাই‌রে নাও। ত‌বেই  গাড়ী কেনা কম‌বে। গাড়ী কেনা কম‌লে রাস্তায় কম গাড়ী থাক‌বে। যানজট কম হ‌বে। রাস্তা যতটুকু সম্ভব বড় ক‌রে রাস্তায় খানা খন্দক মেরামত কর‌তে হ‌বে। বেশী বেশ‌ী আন্ডার পাস ও ওভার পাস বানা‌তে হ‌বে। ট্রা‌ফিক সিগন্যাল তু‌লে দি‌য়ে ইউলুপ ত‌ৈরী কর‌তে হ‌বে। সবই খুব কার্যকরী ব্যবস্থা। কিন্তু কতটুকু কার্যকরী। দুইতলা তিনতলা রাস্তা। আন্ডার গ্রাউন্ড পার্ক‌িং ইত্যা‌দি অ‌নেক কিছু করা যায়। আপ‌নি সব কিছুই‌ কর‌লেও য‌দি ক‌য়েক তলাবি‌শিষ্ট চ‌ার‌ লেন রাস্তা কর‌তে না পা‌রেন ত‌বে যানজট থে‌কে কোন মুক্ত‌ি নাই। তার উপর রাস্তায় গাড়ী পার্ক‌িং নি‌ষিদ্ধ কর‌তে হ‌বে। অ‌নে‌কে বল‌বেন, ঢ‌াকা শহ‌রের যানজট নিরশ‌নের উপায় আস‌লে আ‌ছে কি? স‌ত্যি বল‌তে কি ঢাকা‌কে ত্যাগ করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। রাজধানী নতুনভা‌বে কর‌তে হ‌বে। যে কোন শহ‌রের যানজ‌টের মূল কারন বেশী গাড়ী ও অপ্রতুল রাস্তা। শহ‌রের রাস্তা অপ্রতুল ও গাড়ী বেশী এবং এ কার‌নে যানজট বেশী। অপ্রতুল রাস্তা‌কে বড় করা যা‌বে কি। এটা পুরাতন শহ‌রের জন্য অ‌নেক অ‌নেক জ‌টিল ব্যাপার। নতুন শহর নতুন প‌রিকল্পনায় এটা কার্যকরী হ‌তে পা‌রে। নতুন শহ‌রের প‌রিকল্পনায় যেটা কর‌তে হ‌বে যে কোন বাড়ী বা প্র‌তিষ্ঠা‌নের সাম‌নের রাস্তা অবশ্যই দুই‌টি ছোট গাড়ী ও রিক্সা ক্রশ করার মত হ‌তে হ‌বে। বা‌নি‌জ্যিক এলাকার রাস্তা কমপক্ষ‌ে  ফোর লেন হওয়াটা বেশ জরুরী।
রাস্তা বড় কর‌লেও তার একটা সীমাবদ্ধতা আ‌ছে। কিন্তু এ‌কের পর এক অপ‌রিক‌ল্পিতভা‌বে দালান উপ‌রের দি‌কে বাড়া‌নোটা ঠিক নয়। 
আমার বাবা  ১৯৮৬ সা‌লে যখন আমা‌দের নি‌য়ে ঢাকায় আ‌সেন তখন আমরা ঢাক‌ার জুরাইন ছিলাম। রিক্সা নি‌য়ে বল‌তে গে‌লে গোটা ঢাকা শহর ঘুরতাম। পুরান ঢাকায় যে‌তে চিকন রাস্তায় জ্যাম পেতাম। আর কোথাও তেমন জ্যাম নেই। ম‌নে আ‌ছে জুরাইন এলাকায় চিকন রাস্তাগু‌লি‌তে কোন জ্যাম ছিল না। আজ ভয়নক জ্যাম। গ‌লির ভিত‌রের চিকন রাস্তাগু‌লি গাড়ী ও রিক্সার ভয়াবহ জ্যাম। কিন্তু কেন এই  অবস্থা। কারন একটাই আ‌গে ১৯৮৬ সা‌লে আমা‌দের পাড়া ও মহল্লায় কোন বাড়ী ২ ও ৩ তলার বেশী ছিল না। কদা‌চিত দুই একটা বাড়ী পাচ তলা দেখা যেত। এখন পাচতলা হল একটা দুই‌টা বাড়ী আর বেশীর ভাগই আটতলা দশতলা। ১৯৮৬ সা‌লে যা মানুষ ছিল গত ৩২ বছ‌রে ঢাকার মানুষ ম‌নে হৃয বে‌ড়ে‌ছে পাচগুন। এটা আমার চো‌খের দেখা ঘটনা। পাচগুন মানুষ বে‌ড়ে‌ছে গ‌লির রাস্তাগু‌লি একই মা‌পের আ‌ছে। তা‌তে যা হবার তাই হল, গ‌লির রাস্তা আর পাচগুন মানুষ‌কে নি‌তে পার‌ছে না। উত্তরা সরকারীভা‌বে উন্নয়ন করা আবা‌সিক এলাকা এর রাস্তাঘাট প‌রিক‌ল্পিতভা‌বে ত‌ৈরি করা। এখন সেই প‌রিকল্প‌িত উত্তরার রাস্তাও জ্যাম। কারন একটাই আ‌গে উত্তরায় ৬ তলা বাড়ীর অনুম‌তি ছিল এখন  ৮ তলা বা তার বেশী উচু করার অনুম‌তি ‌মিল‌ছে। প‌রিক‌ল্পিত রাস্তার সা‌থে ৬ তলা বাড়ীর যে সামঞ্জস্য ছিল তা অ‌তি‌রিক্ত উচু করার অনুম‌তি দেয়ায় তার চাপ পরেছে রাস্তার উপর। ট্রা‌ফিক জ্যাম কমা‌নোর প্রথম ধাপ হল, উচু দালান ক‌মি‌য়ে আনা। ঘন বস‌তি ক‌মি‌য়ে ফেলা। পার্ক‌িং এর স্থান বাড়া‌তে হ‌বে। ফ্লাইওভার ও রাস্তা ক‌য়েক স্ত‌রে কর‌তে হ‌বে। রাস্তা ও আন্ডার গ্রাউন্ড যোগা‌যোগ বাড়া‌তে হ‌বে। পাব‌লিক ট্রান্স‌পোর্ট বাড়া‌তে হ‌বে। মানুষ‌কে উন্নতমা‌নের পাব‌লিক ট্রান্স‌পোর্ট দি‌য়ে ব্য‌ক্ত‌িগত গাড়ীর ব্যবহার কমা‌তে হ‌বে। ঢাকা‌কে ব্যবসা‌য়িক শহর ক‌রে বাংলা‌দে‌শের প্রশাস‌নিক রাজধানী পদ্মা ব্রি‌জের আ‌শে পা‌শে স্থানান্ত‌রিত করা এখন সম‌য়ের দাবী। এটা করাটাও প্র‌য়োজন অন্যথায় বেশী দেরী হ‌য়ে যে‌তে পা‌রে। বর্তমান ঢাকা‌কে রক্ষা করার জন্য কোন দালান‌কে ৫/৬ তলার বেশী উপ‌রে উঠ‌তে দেয়া যা‌বে না। রাস্তাগু‌লি দুইতলা তিনতলা কর‌তে হ‌বে। সব স্থা‌নে ইউলুপ কর‌তে হ‌বে। পার্ক‌িং এর জন্য মাল্ট‌িস্টো‌রেজ ব্যবস্থা কর‌তে হ‌বে। ত‌বেই  হয়ত আমরা মোটামু‌টি বাস‌যোগ্য ঢাকার প‌থে আ‌গাতে পারব। যানজট আমা‌দের মূল্যবান সময়টা‌কে কে‌ড়ে নি‌য়ে দুর্ব‌িসহ জীবন ত‌ৈরি ক‌রে‌ছে তার লাগাম টে‌নে ধর‌তে হ‌বে। বল‌তে হ‌বে আর নয় যানজট। বাড়ীর উচ্চতা বাড়া‌তে হ‌বে। রাস্তার প্রশস্থতা ও পার্ক‌িং ব্যবস্থার উপর নির্ভর ক‌রে দালান উচু করার অনুম‌তি দি‌তে হ‌বে অন্যখায় নয়। কম উচু দালান ও সুপ‌রিসর যোগা‌যোগ ব্যবস্থা ছাড়া দুর্বিসহ যানজট ঠেকা‌নোর আর কোন উপায় আ‌ছে ব‌লে ম‌নে হয় না।

Wednesday, November 6, 2019

সফল নয় ভাল মানুষ হওয়াটা প্র‌য়োজন

ছোট ছেলেকে নি‌য়ে জেএস‌সি পরীক্ষা শেষে বাসায় নি‌য়ে ফিরছিলাম। আমা‌দের পিছন পিছন একজন ছাত্রী জেএসসি পরীক্ষা দি‌য়ে বাবার সাথে ফিরছিল। মেয়েটি তার বাবা‌কে বলছিল, বাবা জান, আমার ভাগ্যটাই খারাপ। আমার সিটের সামনেই টিচারদের বসার জায়গা। একদম সামনে আর কিছুক্ষণ পর পর টিচার বল‌তে থাকে ডানে বামে দেখলে খাতা নি‌য়ে নিব। কথা বললে খাতা নি‌য়ে নিব। অথচ দেখ পিছনে সবাই কথা বলছে। ওখানে টিচার দেখে না। ভাগ্যটাই খারাপ। এটা শো‌নে পিছন ফি‌রে মেয়েটাকে বললাম, " সফলতার চে‌য়ে ভাল মানুষ হ‌য়ে বাচাটা ভাল না? কি বল।" মেয়েটি বলে উঠল, না না, আং‌কেল কি বলছেন, বাকীরা তো কথা বলে এম‌সি‌কিউ কারেক্ট করার সু‌যোগ পেল। সমান তো হল না। আমি বললাম, দুঃখ ক‌রো না ও‌দের সফল হ‌তে দাও। এ সফলতা সাময়িক। মেয়েটি আরো কিছু বল‌তে চাচ্ছিল। বাবা বলল, থাক মা আং‌কে‌লের সাথে কথা বাড়িও না।
আমি জানি বাবা ও মে‌য়ে দুজনেই আমার কথায় বিরক্ত হ‌য়ে‌ছে। আমার ছেলে হাসছে। আমার ছেলের হাসার কারণটাও আমি জানি। আমার ছেলে জানে আমি তা‌কে কখনও এ প্রশ্ন করি না পরীক্ষা কেমন হল? আমি তা‌কে প্রশ্ন করি? সব উত্তর দিয়েছ। আমি জানি ছেলে সব উত্তর দিলে একটা ভাল নম্বর সে পাবে। কারণ সে কো‌চিং ক‌রে না। সেজন্য তার কোন সাজেশন নেই। পুরো বই সে পড়ে। রচনা কমন পড়ল কি পড়ল না তার কোন পার্থক্য নেই কারণ বই‌য়ের সব রচনা তার পড়া। যে কোন ধরনের রচনা সে লিখ‌তে পারবে । তবে যারা সাজেশন ক‌রে প্রস্তুতি নি‌য়ে লিখবে তারা পাবে ৮০% নম্বর আর সে পাবে ৬০% অথবা ৭০% নম্বর। আমি আমার জীবনে অনেক পড়তাম কখনও দাগিয়ে পড়তাম না। মাঝে মাঝে দাগা‌নো পেলে ওটা একটু বেশী পড়ে বাকী সবই পড়তাম। আমার এই  প্যাটার্ন আমার সন্তান‌দের মাঝে থাকায় আমি একটু হতাশও হ‌য়ে‌ছি কারণ এ ধরনের সব পড়ে চূড়ান্তভাবে আউট স্ট্যা‌ডিং রেজাল্ট করাটা কঠিন। আমার ছেলের কোন উত্তর ছুটে না গেলে সে ভাল স্কোর করবে কিন্তু আউটস্ট্যা‌ডিং ফলাফল করবে না।
আমি ছাত্র জীবনে পাঠ্য বই‌য়ের বাই‌রে প্রচুর বই পড়তাম এখনও পড়ি। ছেলে মে‌য়েরাও তাই হ‌য়ে‌ছে। ট্যাব‌ে ডাউনলোড ক‌রে সর্বদা বই পড়ার রিক্রিয়েশন নি‌য়ে আছে। আমার বই‌য়ের ভাষা ছিল বাংলা আর ওদেরটা হল ইংলিশ এটাই পার্থক্য। আমি যখন আমার সন্তান‌দের বলি দেখ তোমা‌দের সাইন্স পড়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার প্র‌য়োজন নেই। যেটা ভাল লাগে সেটা হও। প্রচুর পড়‌তে ও জান‌তে ভালবাস। শিক্ষক হও। ব্যারিস্টার হও।
ক্যাডেট কলেজ, মিলিটারি একাডেমী, সামরিক চাকুরী ইত্যাদি'র পর মনে হ‌য়ে‌ছে অর্থ ও বিত্ত হয়ত সুখে রাখে, প‌দোন্ন‌তি ও ক্ষমতা সুখ দেয়, আনন্দ দেয়, সন্মান দেয়। সবাই তাই চায়। কিন্তু সফলতার বিপরীতে ভাল মানুষ হওয়াটাই বেশী জরুরী। এক বাবার একজন শিক্ষক সন্তান আর এক বাবার দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজিরা দেয়া অর্থ বিত্তের মালিক সফল "সচিব পদবীর সন্তান" কোনটা ভাল। আমি হয়ত সৎ ভাবে বাঁচা "শিক্ষক সন্তান"কে বেশী পছন্দ করব। আর এক ধরনের মানুষ আমার পছন্দ যারা কর্মসংস্থান কর‌তে পা‌রে।
আসলে আমার এই ভাবনাটা  স্র‌ো‌তের বিপরীতে চিন্তা করা। আমি জানি আমি একলা নই। অনেকেই আমার মত আছে। আমার মত চিন্তা ক‌রে। সফল মানুষ থেকে ভাল মানুষ হওয়াটা অনেক ভাল। ভাল মানুষ হ‌তে চাইলে আমি নিয়মিত পড়া‌শোনা করব। আমার চিত্ত‌বি‌নোদনই তখন পড়া‌শোনা। আর পড়া‌শোনা অভ্যাস করলে এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় পাশ হবে। যেহেতু দুই নম্বরি ক‌রে সফলতার ধান্ধা নাই সেহেতু নিজের গরজে পাঠ্য বই বা ভর্তি পরীক্ষার বই পড়া হবেই। এ‌তে আউট স্ট্যান্ডিং ফলাফল না হলেও পাশ হবেই। অন্তত অতি সফল না হলেও মধ্যম মানের পরিচ্ছন্ন জীবন পাওয়া যাবে। যেহেতু কাজে কর্ম‌ে ও অর্থ‌ে সততা থাকবে তাই একটা শান্তিপূর্ণ জীবন জুটে যাব। এটাই বাস্তবতা। আমি গ্যারান্টি দি‌য়ে বল‌তে পারি সফলতা চিন্তা না ক‌রে ভাল মানুষ হওয়ার অনুশীলন যদি সন্তান‌দের দেয়া যায় তা‌তে নিজেও শান্তিতে থাকা যায়। সন্তানরাও মাথা উঁচু ক‌রে শান্তিতে বাঁচবে। ভুটানীরা রাস্ট্রীয়ভা‌বে সম্পদশালী হওয়ায় বিশ্বাস ক‌রে না সু‌খে বিশ্বাস ক‌রে। আমরা প্র‌তি‌টি প‌রিবা‌রে সফল বা সম্পদশালী হওয়ার চিন্তা বাদ দি‌য়ে ভাল মানুষ হওয়ার দি‌কে অগ্রসর হ‌লে দেশটা সুখ ও শান্ত‌িতে ভ‌রে যা‌বে।

Sunday, November 3, 2019

শহুরে জীবনে শূন্য বি‌নি‌য়ো‌গে চাষাবাদ

 ‌ছোট‌বেলা থেকেই দেখে আসছি। আমার বাবা ও মা সবজি চাষ, ফল গাছ লাগা‌নো, গরু, ছাগল, হাস, মুরগী পালন এই  কাজগু‌লি করতেন। বাবা ও মা পরিবারের চাহিদা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য হ‌তেই মিটা‌তেন। আমরা ছোট‌বেলা পেতাম বিষমুক্ত খাবার। ইঞ্জিনিয়ার বাবা যেখানে যেতেন টিএন্ড‌টি'র ওয়্যারলেস ডিপার্টমেন্টে চাকুরীর সুবাদে সরকারী কোয়ার্টার পেতেন আর আবাদ করার অনেক স্থান পেতেন। বাবা মা‌য়ের  সব কাজের মধ্যে সবজি ও ফল চাষ আমি জ্যা‌নে‌টিক্যালী পেয়েছি। নোংরা করার কারণে গরু, ছাগল ও হাস মুরগী পালন পছন্দের তালিকায় আন‌তে পারিনি তার কারণ এগু‌লোর বিষ্ঠা ত্যাগ ও নিয়মিত পরিষ্কার থাকার জন্য অনেক অনেক বেশী শ্রম দি‌তে হয়।

সবজি বাগান আমার কাছে অনেক অনেক প্রিয় কাজ। আমার মাঝে ঘুরপাক খায় শহরে বাড়ীর উপর ছাদ বাগান। গত সেপ্টেম্বর ২০১৯ আমি হে‌লিকপ্টা‌রে ঢাকা শহরের একটা অংশের উপর লো ফ্লাইং এর সু‌যোগ হয়। উত্তরার দি‌কে প্রায় ৮০% বাড়ীর উপর ছাদ বাগান দেখে আমার অনেক ভাল লেগেছে। ইউটিউব ও নানা টেলিভিশন প্রোগ্রাম ছাদ বাগান‌কে জনপ্রিয় করছে। শহুরে মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ছাদ বাগান করাটা অনেক অনেক বেশী লাভজনক।

অনেকেই  প্রায় ছাদেই  প্রায়  দুই/তিন শতাংশ জ‌মির আকা‌রে ছাদ বাগানে শাক সবজি যথেষ্ট পরিমাণে উতপাদ‌নে সক্ষম। যা দিয়ে সহজেই  পারিবারিক চাহিদা পূরণ কর‌তে পারেন। আমি অনেকেই দেখেছি ছাদ বাগানের সাথে চৌবাচ্চা বা ড্রামে মাছ চাষ কর‌তে।

তাহলে নিশ্চিত ছা‌দের উপর শাক, সবজি, মাছ, মুরগী, কো‌য়েল ও কবুতর পালন ক‌রে একটা প‌রিবা‌বের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে বিপদ হয় যৌথ মালিকানার ছাদগুলো নি‌য়ে। তাতে ছাদ বাগান করার একটা জটিলতা হ‌য়ে যায়। তবে অনেক ভাড়াটিয়াও মালিকের অনুমতি নি‌য়ে ছাদ বাগান ক‌রে। অনেকে আবার কমিউনিটির অনুমতি নি‌য়ে ছাদ বাগান ক‌রে। কয়েকদিন আগে ছাদ বাগানের গাছ কাটা ফেইস বু‌কে ভাইরাল হয়। পরিবেশবাদীরা অনেক অনেক ফল ফসলের চারা নিয়ে এগিয়ে আসে। এত‌ে আসলেই বুঝা যায় মানুষ ছাদ বাগান ও পরিবেশ রক্ষায় কত সচেতন।

সবজি হল ও ফল হল। প্রো‌টি‌নের চাহিদা কিভাবে মিটবে তার জন্য প্রয়োজন মুরগীর চাষ। ডিম পাওয়া যাবে ও মাংস পাওয়া যাবে। তবে বিপদ হল মুরগীর বিষ্ঠা। যদিও তা পরিষ্কার ক‌রে ছাদ বাগানে দেয়া যায়। ছাদ বাগানে একটা ইকো সিস্টেম করা যায়। যেমন: ঘরের সমস্ত পচনশীল বর্জ্য কন্টেইনারে পচিয়ে ছাদ বাগানে ব্যবহার করা যাবে। ছাদ বাগানের মরা পাতা মরা ডাল ইত্যাদি পচিয়ে পুনরায় ছাদ বাগানে ব্যবহার করা যায়। এখন নারিকেলের ছোবড়া ও ডাস্ট ছাদ বাগানের মা‌টি‌কে রিপ্লেস করছে। গাছের চারা বা টবের সাথে কিছু মা‌টি উঠে আসলে বাকী কম্প‌োস্ট, বাড়ীর পচনশীল দ্রব্য ও বাগানের মরা পাতা ও মরা ডাল ছত্রাক ও ব্যাক‌টে‌রিয়া নাশক দ্বারা শোধন ক‌রে কম্প‌োট ও এক ধরনের মাল‌চিং তৈরী করা যায়। যা মাটির বিকল্প। পানি ধারক।

আমার বড় বো‌নের ছাদ বাগান দেখলাম। কোন ইন‌ভেস্ট নাই। বড় সোয়া‌বি‌নের তৈলের প্লাস্টিক কন্টেইনার। এছাড়া অব্যবহৃত বা ব্যবহার অনুপ‌যোগী নানা কন্ট‌েনার দি‌য়ে সাজা‌নো তার ছাদবাগান। গাছের চারা কি? সেটাও জি‌রো ইনভেস্টমেন্ট। পুইশাক ও কলমিশাক রান্নার কাটাকুটির সময় উৎ‌ছিস্ট শক্ত ডাটা কন্টেইনারে লাগিয়েছেন। কাকরুল,করল্লা ও ট‌মে‌টো রান্নার কাটাকুটির সময় পাওয়া বিচি একইভাবে মরিচের বিচি কন্টেইনারে ফেলে বাগান। ভালই নাকি শাকসবজি খাওয়া চলছে। জান‌তে চাইলাম সার দেন কি? বলল রান্নার কাটাকুটি পচে সার। তবে পানি দি‌তে হয়। জানালেন, ছাদে কাপড় উঠানে নামা‌নোর সময় বাগানে পানি লাগলে পাইপ আছে পানি দি‌য়ে দেই। বাগানটা ভালই মনে হল। জি‌রো ইন‌ভে‌স্টের বাগান যা পাওয়া যাবে তাতেই  সন্তুষ্টি।

আমি জি‌রো ইন‌ভে‌স্টে বাগান করাটায় বেশ মজা পেলাম। আমি ৫০টা টবের বাগান শুরু ক‌রে পরিচর্যার অভাবে ফেল করেছিলাম। আরেকবার ব্যালকনী‌তে বাগানে ফেল করি তা‌তেও বি‌নি‌য়োগ মন্দ ছিল না। চাঁপাইনবাবগঞ্জে একজন‌কে মাসে দুই‌ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিচ্ছিলাম সে আমা‌কে চমৎকার বাগান ক‌রে দিয়েছিল। তবে আরো কয়েক জায়গায় বাগানের বি‌নি‌য়ো‌গে ফেল করি। আমার বড় বো‌নের জি‌রো ইন‌ভেস্ট বাগানের ভাল দিক হল কত বি‌নি‌য়োগ করলাম কত রিটার্ন পেলাম তার হিসাবটা জরুরী নয়।

জি‌রো ইন‌ভেস্ট চাষাবাদ ভাল। ছা‌দের উপর জি‌রো ইন‌ভেস্ট বাগানের পাশাপাশি লো ইন‌ভেস্ট দেশী মুরগীর বা দেশী মাছের চাষ করা যায়। পুরাতন বড় বালতিতে বাজার থেকে কম দাম‌ে ছোট কই মাছ ও ছোট শিং মাছ কিনে পরিত্যক্ত বালতিতে জিয়ল মাছ চাষ শুরু করা যায়। খাবার হিসাবে জিয়ল মাছ কেনা হলে তার থেকে বেঁছে বেঁছে  ছোট মাছগু‌লি বালতিতে বা‌য়োফ্লস্ক‌ের মাধ্যমে চাষ করা যায়। বাজা‌র থেকে ছোট সাইজের দেশী মুরগী ছাদে খাঁচায় রেখে পালন করা যায়। বড় হলে হয় ডিম পারবে নচেৎ মাংস খাওয়ার মুরগী হিসাবে পাওয়া যাবে। মাছের খাবার বা মুরগীর খাবার ঘরের ফেলে দেয়া উৎছিস্ট থেকে দেয়া যায়। রেশনের আটা চালুনি দি‌য়ে চেলে সেই ভুষি ও বেঁচে যাওয়া ভাত ইত্যাদি নানা খাবার দি‌য়ে আমার মা‌য়ের মুরগী পালন চলত। পরিশেষে বলব, আমরা একটু নজর দিলে আমাদের শহরের ছাদগু‌লিও হ‌তে পা‌রে জি‌রো বা লো ইন‌ভে‌স্টের ছাদ বাগান, ড্রামে মাছ ও খাঁচায় মুরগী পালনের এক মহা উদ্যোগ।