সম্প্রতি চীন থেকে বাংলাদেশে কারখানা
ও বিভিন্ন কাজে প্রিফেব ঘর অনেক আমদানি হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি
মিশনে এ ধরনের চাইনিজ প্রিফেব বাসস্থান ব্যবহার
শুরু করেছে। এগুলো দুইটি টিনের লেয়ারের প্যানেল। এগুলোর উভয় দিকে টিন আর
মাঝে ফোম দেয়া। স্যান্ডউইচের আদলে রয়েছে বলে প্রিফেবের প্যানেলগুলোর নাম
স্যান্ডউইচ প্যানেল। দুইপাশের টিনের স্যান্ডউইচ প্যানেলের টিন দুই লেয়ারের ও শক্ত
কোটিংএর রং লাগানো। মাঝের লেয়ারের ফোম থাকে তা স্যান্ডউইচ প্যানেলের ঘরের মধ্যে
বাহিরের তাপ আসতে বাধা দেয়। অপরদিকে ভিতরের এসির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত রুমের ঠাণ্ডা
বাইরের গরম আবহাওয়ার সংস্পর্শে আসতে না পাড়ায় এই প্যানেলগুলো দিয়েই তৈরি প্রিফেব
বাসস্থানগুলো আরামদায়ক। জাতিসংঘে যারা কর্মরত তারা প্রিফেব হাউজে থাকতে বেশ অভ্যস্ত।
সুন্দর ও ঝকঝকে তকতকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশের বেশ মনোমুগ্ধকর এই বাসাগুলো। এগুলো খুব
দ্রুত বসানো যায়। এগুলো স্থাপনে সবোর্চ্চ একমাসের সময়ের প্রয়োজন হয়। কেবলমাত্র কয়েকটি খুঁটি ইট বা
ব্লকের মাধ্যমে তৈরি করে তার উপর প্রিফেব হাউসগুলো বসানো যায়। প্রয়োজনে দ্রুত অপসারণও করা যায়। এক স্থান হতে
অন্য স্থানে নিয়ে ব্যবহার করা যায়। আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশ সরকার গ্রামের
স্থাপনাসমূহ যা কিনা শহর থেকে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত, সেখানে পাকা বাড়িঘর তৈরি
না করে অস্থায়ী প্রিফেব হাউস তৈরি করাই উত্তম। যেমন সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক, কমিউনিটি সেন্টার, পুলিশ বক্স, গার্ড হাউস
ইত্যাদি। এছাড়া আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের নানা ছোট বড় স্থাপনা প্রিফেব
আকারে তৈরি করা যায়। অনেক সময় দেখা যায় অনেক সরকারী স্থাপনা যথেষ্ট খরচ করে তৈরি করা হয়। পরে
দেখা যায় সে সব স্থাপনা আর ব্যবহার হয় না। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কুষ্টিয়া- মেহেরপুরের রাস্তা
দিয়ে যাওয়ার সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক গুলো অব্যবহৃত দালান বা
কেয়ার্টার দেখা যায়। এর কারণ হল প্রাথমিকভাবে সকল ডাক্তারদের জন্য কেয়ার্টার তৈরি
করা হয়। অথচ এক দুইজন অনাথ ডাক্তার ছাড়া সবাই শহরে থাকে। শহর থেকে আসা যাওয়া করে
সাধারণত অফিস করে থাকে। এটা সাধারণত ব্যক্তিগত সুবিধা অসুবিধার ব্যাপার। আলোচনার
বিষয় নয়। কারণ সকল ডাক্তার পরিবার নিয়ে উপজেলায় থাকতে পারবে এটা চিন্তায় আনাটাই
বোকামি। তাহলে প্রশ্ন আসে, অতিরিক্ত বাসস্থান কেন তৈরি করল। এর বিপরীতে বলা যায় এটা হল
কনস্ট্রাকশনের জন্য প্যাকেজ। তাদের প্যাকেজে প্রয়োজন লাগুক আর না লাগুক সব দালান বানাতে হবে। অনেক সময় দাতা দেশগুলোর
হাসপাতাল বা দাতব্য প্যাকেজে এধরনের অপ্রয়োজনীয় দালান দেয়। যা ভিক্ষা হিসাবে
সরকারের গিলতে হয়। এতে অপ্রয়োজনীয় দালান তৈরী করে মুল্যবান ভূমির অপচয় হয়। আবার যত
কাজ তত টাকা। এটা হল পরিকল্পনাবিদ ও নিন্মার্নকারিদের লাভ। কোন স্থানে
বিপুল পরিমাণ কর্মকর্তার বাসা আছে। সেগুলো ব্যবহার হয় না। আবার অন্য দিকে নিন্ম
গ্রেডের অনেকের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও তাদের বাসার ঘাটতি থাকে। যে স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সের কথা বললাম, এখানে যদি এমন
করা হত। কেবল হাসপাতালটি তৈরি করা হত। কেয়ার্টার গুলোর কয়েকটি প্রিফেব তৈরি
করার পরে বেশ কয়েক বছরের ক্রমাগত চাহিদা পূরণ করার পরে জানা যেত বা বোঝা যেত মূলত
কয়টি বাসস্থান প্রয়োজন। সে অনুযায়ী চাহিদা মাফিক দালান তৈরি করা হলে দেশে কোন
সরকারী দালান অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত হত না। অনেক সময় এমন হয় দালান নতুন হওয়ার পর
পরই তা পরিত্যক্ত হয়। সত্যি দূ:খজনক। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এভাবেই সরকারী টাকায়
হাজারো অব্যবহৃত দালান তৈরি হত না। সরকারী অনেক দালান দেখা যায় এগুলো পরিত্যক্ত
ও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। অথচ এগুলো প্রিফেব করে তৈরি করে নিলে সরকারের এত অপচয়
হত না। প্রিফেব ব্যবহৃত না হলে তা স্থানান্তরিত করা যায়। অপর দিকে দালান
পরিত্যক্ত হলে তা ভেৃংগে ফেলতে প্রয়োজন অনেক বড় বাজেট। তাই দালান পরিত্যক্ত
হওয়ার পরও বাজেটের অভাবে দালান ভাঙ্গা হয় না। ধীরে ধীরে সে স্থানটি সাপ ও জন্তু
জানোয়ারের আস্তানায় পরিণত হয়। দালান ভাঙ্গা না হওয়ার কারণে সেই জমিটিও অব্যবহৃত
থেকে যায়।
একজন ৯নং গ্রেডের ( বিসিএস
সম্পন্নকারী) উপরে বেতন ভুক্ত সরকারী চাকুরে সাধারণত ১৫০০/১৬০০ স্কয়ার ফুটের
বাসস্থানে থাকেন। বর্তমান বাজার দরে খরচ হবে ২০০০ টাকা প্রতি স্কয়ার ফিট। ঐ দরে ১৬০০ গুণন ২০০০=৩২০০০০০ অর্থাৎ ৩২
লক্ষ টাকা ফ্লাটটি তৈরি করতে খরচ হবে। অপরদিকে প্রিফেবে খরচ হবে ৬০০ টাকা স্কয়ার
ফিটের মত। এতে ১৫০০ স্কয়ার ফিটে ( প্রিফেব ঘরের দেয়াল ১ ইঞ্চির মত তাই বাসস্থানের
আয়তন কমানো যায় ) খরচ ১৫০০ গুণন ৬০০ বা রাউন্ড ফিগার নয় লক্ষ টাকা। সরকারের
বাসস্থান প্রতি ২৩ লক্ষ টাকা সাশ্রয়। মনে করুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন
ডাক্তারের জন্য বাসস্থান তৈরী করা বাবদ খরচ হল ৩২ লক্ষ গুণন ২০ =৬ কোটি চল্লিশ
লক্ষ টাকা। অপর দিকে চার জন ডাক্তার যারা
থাকেন তাদের জন্য চারটি প্রিফেব খরচ ৪ গুণন ৯ লক্ষ টাকা = ৩৬ লক্ষ টাকা। এতে
সরকারের ৬ কোটি ৪ লক্ষ টাকাই সাশ্রয় হবে। দেখা যাচ্ছে প্রিফেব করে আমরা সরকারী
বিপুল টাকা সাশ্রয় করতে পারি। পাশাপাশি আমরা যেসমস্ত লাভ পাব তা হল প্রয়োজন না হলে
যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে প্রিফেব স্থানান্তরিত করা যাবে। অনায়াসে ১৫/২০ বছর
ব্যবহার করা যাবে। দালানের মত প্রিফেবে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নাই। রং করার প্রয়োজন
নাই। লাইফ ওভার হলে বদল করলেই হল। সরকারী যারা পলিসি মেকার আছেন তারা আমার এ
প্রস্তাব ভেবে দেখবেন। প্রথমে এ সংক্রান্ত পাইলট প্রজেক্টও করা যেতে পারে।