Pages

Tuesday, June 30, 2015

আইন যতো আইন ( Law All Law)

আমি বিজিবি সার্চ দিতে গিয়ে হঠাত একটা ব্যক্তিগত ভাবে নির্মিত ওয়ার্ডপ্রেসের ব্লগ সার্চে আসে।
ঠিকানা নিন্মরুপ:


মজার বিষয় হল এতে এমন কোন আইনী রেফারেন্স নেই যা কিনা পাওয়া যাবে না। আমি একটি অবাক হয়েছি সেনা আইন আর বিজিবি আইনটি পেয়ে। কিন্তু ব্লগে তা আপলোড করেনি বরং লিংক করেছে। যে লিংকটি এসেছে বাংলাদেশ সরকারের আইন মন্ত্রনালয়ের ওয়েব সাইট থেকে। আমি সামরিক আইন বা এমবিএমএল ওয়েব সাইটে পেয়ে অবাক হয়েছি।



বিজিবি আইন ২০১০ ও আইন মন্ত্রনালয়ের ওয়েব সাইটে উন্মুক্ত আছে। সে যাক গে সেনাবাহিনীর কোন অপরাধে কি সাজা এটা সিভিলিয়ানরা জেনে যাচ্ছে। লাভ ক্ষতি জেনে লাভ নেই কারন সরকারের আইনমন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে আছে।


তবে আমার মনে হয়। বিষয়টা অত খারাপ হয়নি। আমাদের বন্ধুরা যারা বিচারকের ভূমিকায় আছেন তারা লিংকটি থেকে অনেক সময়  এমবিএমএল হাতের কাছে না পেলেও ওয়েব সাইট থেকে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে সহযোগীতা নিতে পারবেন।

Thursday, June 25, 2015

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব্জি ভ্যান

আমাদের কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করে থাকে। তাদের উৎপাদন প্রায়শই ফলপ্রসূ হয় না। ফসল উৎপাদনে তারা কম দাম পায়। অনেক সময় তাদের খরচই উঠে না। যদিও আজকাল কৃষকরা যাই উৎপাদন করুক তা মৌসুমের বাইরে সময়ে করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অবশ্য এতে কৃষকের ক্ষতি কমে আসে কারণ শীতে ফুলকপি বেশ বড় আকারে পাওয়া যায়। একটা কেজি ওজনের ফুলকপি ১০/১৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। আবার গ্রীষ্মের অমৌসমে ২৫০ গ্রামের ছোট্ট ফুলকপি দাম ২০/৩০ টাকা হতে দেখা যায়। তাই দেখা যাচ্ছে অসময়ে কৃষক সব্জি উৎপাদন করে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সাপ্লাই চেইনে একটা সুষম বণ্টন করতে পারে। সারা বছর ফুলকপি চাষ করে বরং শীতকালে কম পরিমাণে ফুলকপি চাষ করে শীতকালে সরবরাহ কমিয়ে ফুলকপির মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।
         কৃষক সারা বছর উৎপাদন করে সরবরাহ সুষম করে, প্রয়োজনের বেশী সরবরাহ হ্রাস করে, মূল্য স্থিতি রেখে, আমরা কৃষকের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি। তবে কৃষির সরবরাহ সুষম করলেও ফসলের সরবরাহ বাজারজাত প্রক্রিয়ায় অপচয় কমিয়ে আনতে পারলে কৃষক ভোক্তা উভয়েই লাভবান হতে পারবে। প্রথম যে বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হল কোন অবস্থায় সব্জি পচতে দেয়া যাবে না। অতঃপর সব্জি বিষ মুক্ত প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে তিন/চার দিন পর্যন্ত বিক্রয় করলে সব্জি সতেজ রাখতে হবে। অবিক্রীত সব্জি পচনের ভাব হলে তা শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে অথবা ক্যান বা  এয়ার টাইট কনটেইনারে একবছরের জন্য সংরক্ষণ করা যাবে। সব্জি কেটে প্রসেস করে হালকা সিদ্ধ করে জীবাণুমুক্ত করে ডিপ ফ্রিজিং করে সংরক্ষণ বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যারা ব্যস্ততার জন্য প্রসেসজ সব্জি ক্রয় করে তাদের জন্য উপকারে আসবে। দেখা যাচ্ছে একটু উদ্যোগী হয়ে সকল পর্যায়ে ব্যবস্থা নিলে আমরা সব্জির উৎপাদন পরবর্তী সব্জির অপচয় শূন্য পর্যায়ে আনতে পারব। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ সুষম সম্পূর্ণ অপচয় রোধ হওয়ার কারণে ভাল লাভ করতে পারবে। সব্জি প্রক্রিয়াজাত বাজারজাত করে বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হবে। আমাদের দেশে  ফসল তোলার মৌসুমে এমন অবস্থা হয় যে, ফসলের মূল্য এত কম থাকে লেবার খরচ দিয়ে ফসল তোলা লাভজনক থাকে না। তাই কৃষকের ফসল মাঠে প্যাকেট করে প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে পরিশ্রমী কৃষকরা তাদের আর্থিক বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।



ভোক্তা পর্যায়ে লাভ হবে। ভোক্তাকে আর অধিক দামে ক্রয় করতে হবে না। স্থিতিশীল মূল্যে সব্জি ক্রয় করতে পারবে। ব্যস্ত ভোক্তারা সহনীয় মূল্যে প্রসেসজ সব্জি ক্রয় করতে পারবে।
         সব্জির পচন হতে বাঁচিয়ে কিভাবে আমরা প্রসেস করতে পারি তার উপর আলোচনা করা যাক। নীচে সব্জি জমি থেকে বাজারে পৌছা পর্যন্ত কার্যক্রমগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হল:
১. সব্জি জমি থেকে তোলার পর তা পরিষ্কার করার প্রয়োজন পরে। অর্থাৎ জীবাণু নাশক পরিষ্কার পানি দ্বারা ধৌত করা। অর্থাৎ ব্লিচিং পাউডার যুক্ত পানি দ্বারা ধৌত করে নেয়া যেতে পারে।
২. সব্জির আকার আয়তন অনুযায়ী বাছাই করা। এটা প্যাকেট মূল্য নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত কাজে লাগবে।
৩. ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য একবারে ওজন করে ছোট ছোট প্যাকেট করা।
৪. ভোক্তার কাছে নিয়ে সব্জি ভ্যানের মধ্যে থরে থরে সাজায়ে নিতে হবে সরাসরি আনলোড করে বিক্রয় করা,এই প্রক্রিয়ায় একবার লোড একবার আনলোড হচ্ছে। অন্যথায় জমি থেকে সব্জি লেবার দিয়ে বহন করে বাজারে নিয়ে তারপর পুনরায় বাজার থেকে বড় ট্রাকে লোড। ট্রাক আবার পূর্ণ করে শহরে নিয়ে আনলোড। শহরে আনলোড করে পুনরায় খুচরা বিক্রেতাদের লোড আনলোড।  ধরনের লোড আনলোডে সময়, লেবার অর্থ সবকিছুই বেশী লাগে। এতে কৃষক পর্যায়ের সব্জির দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকে। এটা এমন একটা ব্যবস্থা হবে একবারই লোড হবে এবং বাজারে বিক্রয়ের সময় একবারে আনলোড হবে।
৫. একবার সব্জি ভ্যানে সব্জি লোড হলে তা গ্রাহকদের কাছে বিক্রয় করার সময় ক্রমাগত আনলোড হবে এবং এটা হবে চলমান দোকান। ওজন করে প্যাকেট করা সব্জি সরাসরি বিক্রয় হতে থাকবে। প্যাকেটিং সামগ্রী হতে পারে পাটের ব্যাগ বা অন্য কোন কমদামী বিকল্প। পলিথিন ব্যবহার না করাই ভাল হবে। যদি পলিথিন ব্যবহার করা হয় তবে তা গ্রাহককে না দিয়ে শীতাতপ ভ্যানে রেখে রি-ইউজ করা যেতে পারে।এমনও হতে পারে ভ্যানের রাখা প্যাকেট গ্রাহকের সব্জির ব্যাগে আনলোড করে পুনরায় সব্জির প্যাকেটগুলো ভ্যানের তাকে ব্যবহার করা যাবে।
৬. ভ্যানের তাপমাত্রায় সব্জি অন্তত সাতদিন রাখা যায় সেইভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ভ্যানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র সাধারণভাবে বাইরে হতে বিদ্যুৎ সংযোগে চলবে অন্যথায় চলমান অবস্থায় বা বিদ্যুৎ বিহীন স্থানে জেনারেটরে চলবে।
৭. সব্জি যেন শুকিয়ে না যায় তার জন্য সব্জি ভ্যানের মধ্যে আর্দ্রতার মাত্রা কৃত্রিম উপায়ে ঠিক রাখতে হবে।
৮. সব্জি ধোয়া, বাছাই করা, ওজন করা প্যাকেট করা ইত্যাদি সব্জি ভ্যানটি জমিতে নিয়ে অথবা গ্রামে নিয়ে করতে পারলে সহজে লেবার পাওয়া যাবে।  ছাড়াও গ্রামের অনেক নারী শ্রমিকও অংশগ্রহণ করতে পারবে।
৯. সব্জির ভ্যানটি ফ্রিজার ভ্যানের মত হলে ওর দাম অনেক বেড়ে যাবে। রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেড়ে যাবে। ইঞ্জিন ছাড়া টেনে নেয়ার মত (টোয়ড) ভ্যান হলে ভাল হবে। যে কোন জমিতে বা বাজারে যে কোন গাড়ী দিয়ে টেনে নেয়া যাবে। যতদিন খুশি রাখা যাবে। জমি বা গ্রামের বাজারে লোডিং আনলোডের অনির্দিষ্ট সময় রাখা যাবে। আর লোড/আনলোড হয়ে গেলে পুনরায় যে কোন গন্তব্যে যে কোন বাহনে (নসিমন কিরমন সহ) টেনে নেয়া যাবে। আবার বেশী বড় আকারে করা যাবে না কারণ লোডিং আনলোডিং বেশী সময় লাগবে। / টনের মধ্যে হলেই চলতে পারে। তবে বড় বড় শহরে ভ্রমণকারী ভ্যান গুলো বড় হতে পারে।ছোট শহরের গুলো ছোট হবে।


১০. একটা ভ্যানে শাক সব্জি ফল ইত্যাদি সবকিছুই থাকতে পারে যেন দ্রুত সবকিছুই বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রয় হয়ে যায়।
১১. সব্জি / দিন ভাল রাখার ব্যবস্থা থাকায় কম দামে বিক্রয় না করে ন্যায্য মূল্যে বেশী সময় অপেক্ষা করে কৃষক বিক্রয় করতে পারবে। একান্তই ন্যায্য মূল্য বিক্রয় করতে না পারলে সব্জি হাফ বয়েল ফ্রিজিং বা শুকিয়ে প্রসেস করা ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এতে সব্জি পচে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
সব্জি ভ্যানের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা গেল। এখন আসি এর এ্যাকসন প্লানে। রহিম মিয়া গ্রামের সচ্ছল কৃষক। তার গ্রামের আরো দশজন কৃষককে নিয়ে সে পাঁচ লক্ষ টাকায় দুইটি সব্জি ভ্যান তৈরি করল। ভ্যানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আছে একটি ডিপ  ফ্রিজ আছে। একটি ভ্যান গ্রামে থাকে অন্যটি শহরের বাজারে থাকে। গ্রামে থাকা ভ্যানটি দশ কৃষকের পরিবারের সদস্যরা এক হয়ে বিভিন্ন প্রকার সব্জি জীবাণুমুক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে, বাছাই করে, ওজন করে প্যাকেট করে। পরে বিভিন্ন রকম প্যাকেট সব্জিগুলো সব্জি ভ্যানে সাজিয়ে রাখে। ভ্যানের ডীপ ফ্রিজে কৃষকের উৎপাদিত দুধ, পুকুরের মাছ, প্রসেস করা মুরগী নিয়ে যাবে।  ছাড়া অবিক্রীত সব্জি হাফ বয়েল করে ফ্রিজারে থাকবে। কৃষক তার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব্জির ভ্যান সব্জিতে পূর্ণ হলে নসিমন, করিমন বা ট্রাক্টর দিয়ে টেনে শহরের বাজারে চলে যাবে। শহরের বাজারে ইতিপূর্বে থাকা ভ্যানটির অবিক্রীত কিছু সামগ্রী নতুন সব্জি ভ্যানে রেখে খালি ভ্যান পুনরায় পূর্ণ করার জন্য গ্রামে ফেরত আসবে। আর যদি অবিক্রীত সব্জি বেশী পরিমাণে থাকে তবে তা পুনরায় গ্রামে ফেরত আসবে হাফ বয়েল করে ফ্রিজিং করার জন্য।
 শহরের বাজারে সব্জি ভ্যান থেকে সব্জি,শাক, মৌসুমি ফল, ফ্রুজেন সব্জি, ফ্রুজেন দুধ ইত্যাদি বিক্রয়ের জন্য মজুদ থাকবে। কৃষকের প্রতিনিধি বিক্রয়ের জন্য শহরের বাজারে থাকবে অথবা বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা দায়িত্ব নিবে।

আমার ধারনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব্জি ভ্যান পদ্ধতি চালু হলে ফসল কম নষ্ট হবে, কৃষক ন্যায্য মূল্য পাবে।এতে কৃষকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে। সব্জি পচে অপচয় রোধ হওয়ার কারণে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে সর্বদা পরিচ্ছন্ন মান সম্পন্ন সামগ্রী পাবে।  ধরনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব্জি ভ্যান এনজিওরা ক্ষুদ্র লোণের মাধ্যমে চালু করতে পারে। আবার ব্যবসায়ীরা কৃষকদের দৈনিক হিসাবে ভাড়ায় খাটাতে পারবে। আমার ধারনাটি হয়তবা সময় সুযোগ পেলে আমি ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করতে পারব। এখনও যদি কেউ আমার আইডিয়াটি বাস্তবায়ন করতে চায় তবে তাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া থাকল। “কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবেএটাই হোক আমাদের ঈপ্সিত লক্ষ।

Thursday, June 18, 2015

ক্রোকারিজ যখন শোপিস

আমরা ছোটবেলা থেকে আমাদের নিজেদের আত্মীয় স্বজনকে শোকেসের মধ্যে সারি সারি কাচের ও চীনামাটির ক্রোকারিজ ও কাটলারিজ সাজিয়ে রাখতে দেখেছি। আমার পরিবারে এমন অনেক ক্রোকারিজ ছিল যা সবসময় সাজানোই থাকত। কোনদিন ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। আগে ড্রইংরুমে ক্রোকারিজ সাজানো থাকত। এখন ক্রোকারিজ সাজানো হয় ডাইনিং স্পেসে। বিশেষ ধরনের কাচের আলমারিতে। এখনও গ্রামে গন্জ্ঞে বসার ঘরে ক্রোকারীজ সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। আর বিশেষ অতিথি গেলে অতিথির সামনেই সেই সব বিশেষ ক্রোকারীজ বের করে তাদের জানানো হয় যে, তারা এই পরিবারের বিশেষভাবে সম্মানিত অতিথি। আমি মাঝে মাঝে গ্রামে এ ধরনের দৃশ্য দেখে বেশ মজা পাই। আমি সেনাবাহিনীর  একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার স্টাফ অফিসার থাকাকালীন সময়ে তিনি একবার গল্প করেছিলেন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার স্ত্রীর অনেক বেশী শখ ক্রোকারীজ কেনা। মার্কেটে আন কমন ক্রোকারীজ দেখলেই তার সেটা ক্রয় করতে হবেই। উক্ত অফিসার প্রায়ই তার স্ত্রীকে বলতেন, “তোমার ক্রোকারীজগুলো কবে ব্যবহার হবে। নাকি শুধুই শো পিস হিসাবে থাকবে। শুধু সাজিয়ে রাখা আর মোছামোছি করতে করতে জীবন শেষ”।  তার স্ত্রী প্রতি উত্তরে বলত, “দেখেনিও বড় গেস্ট এলে এটা ব্যবহার করব”। তারপর তিনি বড় গেস্টের অপেক্ষায় থাকেন। বাসায় বন্ধু বান্ধব যেই গেস্টই আসুক মেস ও রেস্ট হাউজের ক্রোকারীজে খাওয়া দাওয়া হয়। কিন্তু বিশেষ ক্রোকারীজ আর ব্যবহার হয় না। একসময় সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ভাবলেন, হয়ত সন্তানদের বিয়ে শাদী হলে তাদের শশুর বাড়ীর আত্মীয় স্বজনের জন্য বিশেষ বিশেষ ক্রোকারীজগুলি ব্যবহার হবে। কিন্তু তার যেহেতু একমাত্র ছেলে রয়েছে তাই ছেলের বউকে খাওয়ানোর জন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার স্ত্রী সেই ক্রোকারীজ ব্যবহার করবেন কিনা সেটা তিনি সন্দেহ করছেন। কারণ বাঙ্গালী শাশুড়িরা জামাই আদর যতটুকু আগ্রহের সাথে করেন, বউ আদর তত আগ্রহের সাথে করেন না। সর্বশেষ তিনি এই ধারনায় উপনীত হলেন তার স্ত্রীর দীর্ঘদিন কষ্ট করে জমানো ক্রোকারিজ হয়তবা তাদের জীবদ্দশায় ব্যবহার না হলেও পরবর্তী প্রজন্মের কাজে লাগতে পারে। তবে ডিজাইন ও রুচির প্রতিনিয়ত পরিবর্তনে পরবর্তী জেনারেশন হয়তবা ব্যবহার না করে স্মৃতি হিসাবেই রাখবে । যেমন আমার দাদীর কাছ পাওয়া ক্রোকারীজ আমাদের আধুনিক ক্রোকারীজের তুলনায় বেশ ফানি মনে হত এবং এগুলো স্মৃতি হিসাবেই রাখা হত। এভাবে পৃথিবীর কোটি কোটি বাসস্থানে ক্রোকারীজ ব্যবহার না হয়ে শোপিস বা শখের জিনিষ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। আমি আমার বিবাহিত জীবনের প্রথম থেকেই ক্রোকারিজ যেন ক্রয় না করে তার জন্য স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ করতাম। আমি বিয়ের পর উপহারগুলি হিসাব করে দেখলাম। আমি আমার বাসায় সাধারণত ২৪ জন অতিথি নিজস্ব ক্রোকারীজে সামাল দিতে পারি। তাই সেই পরিমাণ ক্রোকারিজ রাখলেই চলে। বাকীগুলো আমি আমার ভাই ও বোনদের দিয়েছিলাম। এরপর যখনই বাসস্থানে অতিথিদের দাওয়াত করেছি মেস/ রেস্ট হাউস/ ডেকোরেটরের কাছ থেকে ভাড়া না নিয়ে নিজের ক্রোকারীজ দিয়ে অতিথি পার করে যাচ্ছি। বছরে হয়তবা ১০/১২ দিন বিশেষ অতিথি আপ্যায়নের জন্য অনেক অনেক খরচ করে কেনা ক্রোকারীজ জমিয়ে না রেখে ব্যবহার করা ভাল। নিত্য নতুন ভাল লাগার ক্রোকারীজ কিনে নিজেরা খাদ্য গ্রহণ করলেও নিজেদের ভাল লাগবে। পৃথিবীতে যে কোন মূল্যবান জিনিষ শোপিস করে রাখা যত না আনন্দ, তার চেয়ে তা ব্যবহার করে আরো বেশী তৃপ্তি ও আনন্দ পাওয়া যায়।

ইমোশনাল হয়ে বা শখে অনেকেই প্রচুর পরিমাণে ক্রোকারিজ কিনে। আবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে উপহার হিসাবে পায়। অনেকে বেশী ক্রোকারীজ পেলে প্যাকেট সহ সেসব অতিরিক্ত ক্রোকারিজ ও কাটলারিজ রেখে দেয়। যা পুনরায় রি-প্যাক করে দাওয়াত খেতে কাজে লাগে। আবার অনেকে অতিরিক্তগুলো বিতরণ করেন। এটাও বেশ ভাল কাজ। অন্তত অহেতুক ব্যবহার না করে শোপিস করার মানে হয় না। তবে আবারও বলে রাখা ভাল। যাদের  ক্রোকারিজ ক্রয় করা ও সাজিয়ে রাখা হবি, তারা আমার এ লেখায় কষ্ট পাবেন না। তারা একটা কাজ করতে পারেন। তা হল। সুন্দর সুন্দর ক্রোকারিজ কিনবেন। ব্যবহার করবেন। নিকট আত্মীয়দের বিতরণ করবেন। বিশাল আকারে সংগ্রহ না করে বরং পুরানো ধাঁচের গুলি ছবি তুলে রেখে আত্মীয়দের বিলিয়ে দিলে আনন্দ পাবেন। অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ক্রোকারিজ ও কাটলারিজ ক্রয়ও একটা অপচয়। এটা না করে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কাজে আমরা তা ব্যয় করতে পারি। যে কোন কিছুর অতিরিক্ত করাও অপচয়। আর অপচয় যে কারো জন্য ক্ষতিকর। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্রোকারিজ কেনাও মূলত অপচয়। আমরা অহেতুক অপচয় এড়িয়ে চলতে অবশ্যই চেষ্টা করব। আশা করি অতিরিক্ত ক্রোকারিজ না কিনে তার থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাল কাজ আছে যা আমরা করতে পারব। সেটাই হবে মঙ্গল।

Thursday, June 11, 2015

সংসার জীবনের অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো

সামরিক সদস্যরা একটা বিশেষ শর্তের বয়স পূর্তির পর বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। যেহেতু বিয়ের আগে বেশ কয়েক বছর অবিবাহিত থাকেন, সেহেতু সংসার জীবন শুরু করতেই অনেক দ্রব্যাদির চাহিদা থাকে। তবে অনেক দ্রব্যের চাহিদা থাকে ইমোশনাল। আমাদের সমস্ত দ্রব্যাদি যে আমাদের সমানভাবে প্রয়োজন পড়বে তা কিন্তু নয়। সাংসারিক জীবনে খাট, বিছানা, ডাইনিং টেবিল ও ডাইনিং চেয়ার সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। রান্না ঘরে রান্না শুরুর সাথে সাথে দুইটি জিনিস চাকুরীজীবীদের জন্য অত্যন্ত জরুরী তা হল রিফ্রিজিরেটর ও মাইক্রোওয়েভ ওভেন। অনেকে ফ্রিজ ও মাইক্রোওয়েভ ক্রয় করতে দেরি করে। এটা প্রথম সাংসারিক জীবনে অনেক কাজের চাপ কমায় ও অপচয় রোধ করে। আমার এ লেখাটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির সন্তানদের চাকুরীর শুরু ও বিয়ে করার পরবর্তী যে সাংসারিক চাপ ও আর্থিক চাপ নিয়ে অগ্রসর হয় তার উপর অভিজ্ঞতার আলোকে আমার জীবন থেকে লেখা। তবে যাদের অর্থ বিত্ত আছে এবং যারা একেবারে সমস্ত প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা সম্পূর্ণ করতে পারেন। তাদের জন্য এ লেখাটা ঠিক মন:পূত নাও হতে পারে। যেমন: যাদের সংগতি ভাল আছে তারা প্রথমেই বলবে, প্রথমে প্রয়োজন একটা ভাল মটর সাইক্যাল বা  প্রাইভেট কার। যেটা আরামদায়ক হবে যেন নির্বিঘ্নে মাইলের পর মাইল ঘুরে বেড়ানো যাবে। প্রথম অবস্থায় ফ্রিজ ও ওভেন প্রয়োজন নেই। কারণ নববিবাহিত দম্পতি বিভিন্ন জায়গায় বেড়াবে ও হোটেলে থাকবে। এভাবেই হয়ত দীর্ঘ সময় কেটে যাবে তারপর অন্যান্য চিন্তা ভাবনা। এটা অর্থ বিত্ত পরিবারের ধ্যান ধারনায় থাকলেও কৃষকের সন্তান বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সবে মাত্র বিসিএস অফিসার হয়েছে বা চাকুরী পেয়েছে তার জন্যই আমার এ লেখনী। আমার ছয় ভাইবোনের পরিবারে সদস্য হিসাবে আমি চাকুরী পাওয়ার পর পরিবারের চাহিদা ও চাপ না থাকার পরও শখে শখে সাদা কালো টেলিভিশন পরিবর্তন করে নতুন রঙ্গিন টিভি কিনে দেই। বাড়ী সাজানোর অন্যান্য খরচের সহায়তা প্রদান করি। পরিবারের সদস্যদের নানা রকম উপহার দিতে দিতে শূন্য হয়ে যায় আমার বিয়ের পূর্বের তহবিল। এছাড়া দীর্ঘদিন প্রেম করার জন্য একস্থান হতে আরেক স্থানে গতিশীল ভাবে দৌড়ঝাঁপ দিয়ে টাকা পয়সা সব শূন্যের কোঠায় উঠে যায়। যখন বিয়ে করি তখন ব্যাংকে লোণ মাত্র ৬০,০০০ টাকা। বাবা মা ও পরিবারের সহায়তায় বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ চালাতে পারলেও বিয়ে পরবর্তী আর কোন টাকা নেই। তবে আমার একটা ডিপিএস ও ডিএসওপি মিলে সঞ্চয় ছিল ১,৫০,০০০ টাকা। অর্থাৎ পুরোপুরি মাইনাস ছিলাম না। আমার চেয়ে যারা বেশী কেয়ারফুল সহকর্মী ছিল তারা কিন্তু বিয়ের পূর্বে ব্যাচেলার জীবনের সঞ্চয়েই যথেষ্ট পরিমাণ অগ্রগামী ছিল। যেমন আমার একজন সমৃদ্ধশালী সিনিয়ারের কাছে শুনেছিলাম। তিনি তার বিয়ের আগের বছর ব্যাচেলার অবস্থায় ছুটিতে খরচ না করে একটা রিফ্রিজিরেটর ক্রয় করে ফেলেছিলেন। ব্যাচেলার অবস্থায় বিয়ের পূর্বে সঞ্চয়ে অগ্রগামী বেশী বুদ্ধিমান । তারা হয়তবা আমার পরিকল্পনায় চেয়ে উন্নত পরিকল্পনা বাতলাতে পারবেন। তারা নিজেরাই নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন।
আমার মত যারা খরুচে   সাধারণ মানুষ আছেন তারা আমার অভিজ্ঞতাগুলো জেনে নিতে পারেন। আমি ও আমার স্ত্রী মিলে যখন কুক হাউজ স্টার্ট করি তখন আমার স্ত্রী তার রান্নার গাইড হিসাবে রান্নার বই আর মায়ের কাছে ফোনের উপর নির্ভরশীল ছিল। তখনও আমরা ফ্রিজ কিনিনি। একটা কাজের ছেলে (ব্যাটম্যান) ছিল সে আমার স্ত্রীর ফর্দ অনুযায়ী বাজার নিয়ে আসত। আমার স্ত্রী তিনজনের জন্য রান্না করত কিন্তু দেখা যেত মাঝে মাঝে খাবার উদ্বৃত্ত হত। এছাড়া ফ্রিজ না থাকার কারণে প্রতিদিন বাজার লাগত। এতে কাজের লোকের মারিং কাটিং ও যাতায়াত ভাড়ায় অপচয় হত। আর ফ্রিজ থাকলে বাজার সপ্তাহে একদিন নিজে দেখে শুনে করলেই হত। ফ্রিজ না থাকার জন্য যে যে লোকসানগুলি হত তালিকা নীচে দিলাম:
১. ঘন ঘন বাজার করতে হয় ও নিজে বাজার করতে না পারার কারণে প্রতিদিনের বাজারে যাতায়ত ভাড়া ও অন্যকে দিয়ে বাজার করালে মারিং ও কাটিং এ অপচয় হয়।
২. খাবার বেশী রান্না হয়ে অপচয় হয়।
৩. দুইবেলা কাজের চাপ কমানোর জন্য দুপুর ও রাতের বেলায় একই রকম মেনু পরিকল্পনা করতে হয়।
আমার স্ত্রীকে নিয়ে সংসার শুরু করার প্রায় তিনমাস আমার ফ্রিজ ছিল না। এতে আমার মনে হচ্ছিল গড়ে প্রতি মাসে আমার ১০০০/১২০০ টাকা অপচয় হচ্ছিল (১৯৯৭ সালে)। তাই হিসাব করে দেখলাম কিস্তিতে ফ্রিজ কিনলেও অপচয়ের রোধ করে তা দিয়েই কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব। তাই সংসার শুরু করার প্রথম দিন থেকেই টিভি না থাকলেও ফ্রিজটা প্রয়োজন। ফ্রিজের টাকা না থাকলেও কিস্তিতে ক্রয় করাটা জরুরী। আর বড় ডীপের কমপক্ষে ১২ সিএফটি ফ্রিজ নিলেই হবে। আমি র‍্যাংগস কোম্পানির ১২ সিএফটি ফ্রিজ গত ১৮ বছর যাবত ব্যবহার করছি সমস্যা ছাড়াই। এই ফ্রিজটি প্রথম দেখে আমার কোর্স-মেট তৎকালীন ক্যাপ্টেন বারী। সে নিজে কিনে এবং তার একই মডেলের ফ্রিজ আমিও কিনি। সামনের দিনগুলোতে অবশ্য সেনাজীবন থেকে সিভিল জীবন শুরু করার সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ দিয়ে এটি বদল করার বিষয়ে মনস্থির করে রেখেছি। সাধারণত চাকুরী পাওয়ার পর ব্যাচেলার জীবনে সবাই একটা টিভি কিনে ফেলে। তাই সাংসারিক জীবনে প্রথম আইটেম হল ফ্রিজ,  এমনকি পালঙ্ক বা দামী খাট বাদ দিয়ে স্বল্প মূল্যের খাটে থেকেও ফ্রিজ কেনাটা প্রয়োজনীয়। কারণ ফ্রিজ আপনার অপচয় রোধ করে মিতব্যয়ী হতে সহায়তা করবে। আর যেহেতু ভাল কোয়ালিটির দেশী ফ্রিজ কম দামে ও কিস্তিতে পাওয়া যাচ্ছে তখন আর চিন্তা নেই। আমাদের বাংলাদেশের লোড শেডিং এর অবস্থায় দামী “নো ফ্রস্ট” কিনে লাভ নেই বরং কমদামী ফ্রস্ট কেনা ভাল। কারণ ২০/২২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলেও সমস্যা নেই। শুধুমাত্র লোডশেডিং এ ফ্রিজের দরজা না খুললেই হল। আমি অনেক চাকুরীজীবী সাংসারিকের সাথে কথা বলেছি। বেশিরভাগই মতামত দিয়েছেন, সংসার জীবনের প্রথম আইটেম হবে ফ্রিজ। অবশ্য কেউ কেউ মটর সাইকেল বা গাড়ীর পক্ষে মতামত দেন। তবে যিনি সাংসারিক জীবনে প্রথমেই গাড়ী কিনতে পারেন বা গাড়ী আছে তাদের ফ্রিজ কেনার অগ্রগন্যতা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী সংসার শুরু করার প্রথম সামগ্রীটি হওয়া প্রয়োজন রিফ্রিজিরেটর।
সংসার জীবনে স্বস্থি ও অপচয় কমানোর অপর আইটেমটি হতে পারে মাইক্রোওয়েভ ওভেন। এটাতে অনেকে হয়ত একমত নাও হতে পারেন। তবে যে সমস্ত পরিবার মাইক্রোওয়েভ ওয়েব ওভেন ব্যবহারে অভ্যস্ত তারা এটার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবেন। আমি সংসার শুরু করার প্রায় দীর্ঘ তিন বছর পর আমার মালয়েশিয়া ফেরত একজন আত্মীয়া একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন গিফট করার পর আমি ও আমার স্ত্রী তখন প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম এর প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা। এখন পর্যন্ত সেই ওভেন ব্যবহার করে যাচ্ছি। নষ্ট হলে হয়তবা নতুন কোন মডেল ক্রয় করব। মাইক্রোওয়েভ পাওয়ার পূর্বে খাবার গরম করার জন্য যে পরিমাণ  কষ্ট করা লাগত তা লাঘব হল। যেমন যে কোন খাবার গরম করতে হলে তা পুনরায় অন্য একটি পাত্রে নিয়ে গরম করতে হয়। এতে অন্য একটি পাত্র ধোয়া ও পরিষ্কারের চাপ হয়। অথচ মাইক্রোওয়েভ ওভেনে একই পাত্রে গরম করে খাওয়া যায়। এটা এত বিশাল এক সুবিধা যা কিনা বিদ্যুৎ, পানি ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি কায়িক পরিশ্রম কমায়। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি হল এটা চাকুরীজীবীদের জন্য তাদের মূল্যবান সময় সাশ্রয় করে। যারা পারিবারিক সূত্রে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করেননি তাদের জন্য এ উদাহরণ তুলে ধরলাম। আপনি রাতে বাসায় ফিরলেন। আপনি ইতিমধ্যেই ফ্রিজ ক্রয় করেছেন। আপনার ফ্রিজে রান্না করা আছে ভাত, ডাল, সব্জি ও গরুর গোশত। এখন আপনি একটা প্লেটে ভাত ও সব্জি পরিমাণ মত নিয়ে নিলেন আর দুইটি বাটিতে পরিমাণ মত গোশত ও ডাল নিয়ে বাকী আইটেম ফ্রিজে তুলে নিলেন। এখন আপনার প্রয়োজন মোতাবেক মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করায় আপনার সময় ও বিদ্যুৎ খরচ কম হল। আর গ্যাসের চুলা বা স্টোভ না জ্বালানোর কারণে আপনার জ্বালানী খরচ লাগল না। কেবলমাত্র কয়েক মিনিটের জন্য অত্যন্ত অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হল। এছাড়া একই খাবার প্লেটে ভাত ও সব্জি গরম করার কারণে সময় ও গরম করার জন্য ব্যবহৃত পাত্র ধোয়ার জন্য পানি, সাবান, সময় ও কায়িক পরিশ্রম থেকে রক্ষা পাওয়া গেল। তাই সাংসারিক জীবনে ফ্রিজের পরের গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যটি হল মাইক্রোওয়েভ ওভেন। যা সংগতি না থাকলেও কিস্তিতে ক্রয় করাটা জরুরী। মাইক্রোওয়েভ ওভেন পাত্রকে গরম না করে শুধুমাত্র খাদ্য কণাকে উদ্দীপ্ত করে খাবার গরম করায় এটা খুবই এনার্জি সাশ্রয়ী। একটা মাঝারী মাপের ফ্যামিলিকে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের জন্য একমাসে ১০০ টাকার বেশী বাড়তি ইলেকট্রিক বিল দিতে হবে না। যদি এ কাজটি সিলিন্ডার গ্যাসে ব্যবহার করা হত তবে আনুমানিক ৫০০ টাকার বেশী গ্যাসের খরচ হত। এছাড়া মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরমও চুলা থেকে তাড়াতাড়ি হয়।
এরপরের প্রয়োজনীয় আইটেমটি হতে পারে ওয়াশিং মেশিন ও তার পরবর্তী আইটেমটি হতে পারে ডিশ ওয়াসার। তবে এগুলো হুট হাট করে না কেনাই ভাল। এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। আমি দশ বছর ব্যবহার করার পর ওয়াশিং মেশিন ও ডিশ ওয়াসার অনেক কয়বার মেরামত করে ব্যবহার করে শেষ মেষ আমার ওয়াশিং মেশিনটি ম্যাকানিককে বিনামূল্যে দান করে  দিয়েছি। ডিশ ওয়াসারও শীঘ্রই একইভাবে কার্যক্রম শেষ করতে হবে। কারণ ইন্টারনেটে অনেক ঘাটাঘাটি করে দেখলাম ওয়াশিং মেশিন ও ডিশ ওয়াসারের ফিনারেল ১০/১২ বছরের মধ্যেই হয়ে থাকে । তবে কেউ সৌখিন ভাবে ব্যবহার করলে সেটা ভিন্ন কথা। ইন্টারনেটে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী দুইটি মেশিনের সময় শেষ। তবে আমি বলব কাজের লোক একান্তই না পাওয়া গেলে মেশিনগুলো ক্রয় ঠিক আছে। আমি ডিশ ওয়াসার ও ওয়াশিং মেশিন কেনার পর ছয় মাস কাজের লোক ছাড়া চলতে পেরেছিলাম। অতঃপর ঠিকই কাজের লোক লেগেছে এবং ডিশ ওয়াসার ও ওয়াশিং মেশিন সোপিস হয়েছে। তারপর কাজের লোক কখনও অনুপস্থিত থাকলে  যন্ত্রপাতিগুলি ব্যবহৃত হয়েছে। আর এভাবে যন্ত্রগুলি তাদের বার্ধক্যে উপনীত হয়। এগুলি কখনোই কারো অগ্রগন্যতার তালিকায় থাকার প্রয়োজন নেই। তবে কারো সোপিস হিসাবে রাখা ও টাকা পয়সা যথেষ্ট ভাল কাজে খরচ করার ব্যবস্থা না থাকলে এগুলো কেনা যেতে পারে। কারণ এগুলো কখনও কখনও ভালই কাজে দেয় ও টেনশন কমায়। কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিনটা প্রয়োজনীয় কিন্তু জরুরী নয়। তবে বর্তমানে ৫০,০০০ টাকা খরচ করে সম্পূর্ণ অটো ওয়াশিং মেশিন কিনে অপচয় না করে ১২/১৩ হাজারে ম্যানুয়াল মেশিন কেনা যেতে পারে। বৃষ্টির দিনে স্পিন করে নেয়া বা কাজের লোকের অনুপস্থিত দিনগুলোতে কাজে লাগবে। ম্যানুয়াল মেশিনগুলি সহজে রিপিয়ার করা যায়। এমনকি জেলা ও উপজেলার ম্যাকানিকরা রিপিয়ার করতে পারে।

পরিশেষে আমাদের কনিষ্ঠ সহকর্মীদের আমার জীবনের আলোকে সাংসারিক দ্রব্যের অগ্রাধিকারের যে তালিকা দিলাম আশা করি তারা উপকৃত হবেন।


Thursday, June 4, 2015

বৈদ্যুতিক কাজে মূল্যবান তামার তারের পরিবর্তে সাশ্রয়ী এলুমিনিয়াম তারের ব্যবহার

আমার কর্মস্থলের প্রতিষ্ঠানে একবার একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান আসল কিছু পোড়া তার নিয়ে। জানাল, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনের বিদ্যুৎ লাইনটি শর্ট সার্কিট হয়ে পুড়ে গেছে। আমি দেখলাম তারটি তামার তৈরি চিকন তার। আমি ইলেক্ট্রিশিয়ানকে ভাল কোয়ালিটির তার দিয়ে সংযোগ দিতে বললাম। যা খরচ হবে তার হিসাব করতে বললাম। কারণ ক্যান্টিনে দুইটি রিফ্রিজিরেটর ও মাইক্রোওয়েভ চলমান আছে। ইলেক্ট্রিশিয়ান ১৬,০০০ টাকার দুই কয়েল তামার তার ক্রয়ের হিসাব নিয়ে হাজির হল। তামার তার ও ভাল কোম্পানির তার। হঠাৎ আমার মনে হল গ্রামে গঞ্জে দেখতে পাওয়া যায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি এলুমিনিয়ামের তার দিয়ে পিলার থেকে মিটার পর্যন্ত লাইন টেনে দেয়। পিলারের সরবরাহের তার থেকে অপেক্ষাকৃত এগুলো চিকন তার। আমি তাদের জানালাম। ১৬,০০০ টাকার তার কিনতে চাইনা। এলুমিনিয়ামের তার কিনে পিলার থেকে ক্যান্টিনের সংযোগ দিতে চাইলাম। ইলেক্ট্রিশিয়ানকে বাজারে পাঠালাম। আনুমানিক চার হাজার টাকায় এক কয়েল জোড়া তারের একটি ইনসুলেটর ও অন্যটি ইনসুলেটর ছাড়া পরস্পর প্যাঁচানো তার কিনে নিয়ে হাজির হল। দেখা যাচ্ছে এলুমিনিয়ামের তারটি তামার তারের তুলনায় দাম মাত্র চারভাগের একভাগ। বেশ সুন্দর ভাবে পল্লী-বিদ্যুতের লাইনের পিলার হতে ইলেক্ট্রিশিয়ান লাইন টেনে দিল। মিটার দিয়ে ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ পাওয়া গেল। দুইটি ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন সহ সমস্ত সামগ্রী যথারীতি চলতে লাগল সমস্যা ছাড়াই। ইলেক্ট্রিশিয়ান সহ আরো কিছু অভিজ্ঞ লোকজন বলেছিল তামার তার অপেক্ষা এলুমিনিয়ামের তারে ভোল্টেজ বেশী ড্রপ হয়। আমি এ বিষয়ে ইন্টারনেট একটু ঘাটাঘাটি করে যা বুঝলাম এলুমিনিয়ামের তারের ভোল্টেজ ড্রপ ঠেকাতে তামার তার অপেক্ষা দ্বিগুণ আয়তনের ক্রশ-সেকশনের এলুমিনিয়ামের তার হলেই সমস্যা মিটে যাবে। আর তামার তারের দ্বিগুণ মোটা এলুমিনিয়ামের তার তামার তারের প্রায় চার ভাগের একভাগ দামে পাওয়া যায়। বর্তমানকালে ব্যাপক পরিমাণে তামার তার ব্যবহার হওয়ায় ও বিশাল চাহিদা থাকায় তামার তারের দাম অনেক বেশী। তামার তারের খরচ কমানোর এবং দামী তামার তারের চুরি যাওয়া রোধ করার জন্য বাংলাদেশের পল্লী বিদ্যুতায়ন সমিতি দীর্ঘদিন ধরেই স্বল্প মূল্যের এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহার করে আসছে। তবে ইলেক্ট্রিশিয়ানদের মধ্যে এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহারে অনীহা রয়েছে। অথচ যেখানে তারের পুরুত্ব নিয়ে কোন সমস্যা নেই সে সমস্ত ক্ষেত্রে তামার তারের পরিবর্তে স্বল্প মূল্যের এলুমিনিয়ামের তারের ব্যবহার হবে অগ্রগণ্য। মেইন লাইন থেকে এক কয়েল বা ১০০ গজের মধ্যে নিশ্চিন্তে এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহার করা যায়। আর একবার মসজিদের এসি কানেকশনের তামার তার নষ্ট হওয়ার পর আমি নির্বিঘ্নে এলুমিনিয়ামের তার লাগিয়ে দিলাম।


ইন্টারনেটে এ বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে দেখলাম। ইউরোপের অনেক দেশে বাসা বাড়ীর ওয়্যারিং এর কাজেও এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহার হচ্ছে। আভ্যন্তরীণ কাজ বিশেষ করে ফ্লাক্সিবল তামার তার ব্যতীত অন্যান্য সকল বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহার করতে পারি। আমার কাছে মনে হয় মোটাসোটা তার দিয়ে বেশ শক্তভাবেই ওয়্যারিং এর কাজ করা যাবে। সোলার বিদ্যুৎ এর মাইক্রোগ্রিড বা ন্যানো-গ্রিড তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা যদি ২৪ ভোল্ট এর উপর অন্তত ৪৮ ভোল্টের লাইন তৈরি করতে পারলে সেসমস্ত গ্রিড লাইন এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহার করা যাবে। খরচ সাশ্রয়ের কোন কার্যক্রম হলেই আমরা এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহার করতে পারি। এলুমিনিয়ামের তার সাধারণত কম চুরি হয়। তার কারণ তামার তার থেকে কম দাম। আমাদের দেশে এলুমিনিয়ামের তারের ব্যবহারও তামার তার থেকে কম। আমি একজন পিডিবি,র বিএসসি এ্যাক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে তামার তারের পরিবর্তে এলুমিনিয়ামের তারের ব্যবহার নিয়ে জানতে চাইলাম। তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ইলেকট্রিক লাইনের ক্ষেত্রে যে এলুমিনিয়াম তার ব্যবহার হয় তা তিনি জানেন না। আমি তাকে বললাম, পল্লী-বিদ্যুতের সমস্ত লাইনে ও বিতরণ ব্যবস্থায় এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহার হচ্ছে। তিনি বেশ আগ্রহ প্রকাশ করলেন এ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য।


যে কোন ক্যাম্পাসের চারিদিকে মেইন লাইন টানার কাজে সহজেই এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহার করতে পারি। সিকিউরিটি লাইন টানা বা বহিরাংগনের যেকোনো কাজে এ এলুমিনিয়ামের তার অতুলনীয়। বাইরে একটা সিকিউরিটি লাইট লাগানো প্রয়োজন। তখন চিকন তামার তার লাগানোর পরিবর্তে একই দামে এলুমিনিয়ামের মোটাসোটা তার ব্যবহার অনেক বেশী সাশ্রয়ী। এলুমিনিয়ামের তার মোটা বলে এর ইনসুলেটরও তামার চিকন তারের ইনসুলেটর থেকে মোটা। মেইন লাইন থেকে বিভিন্ন স্থাপনায় তামার তারের মাধ্যমে সংযোগ দিলে খরচ কমে যাবে। তামার তার আভ্যন্তরীণ বিশেষ ব্যবহার ছাড়া বাইরের সমস্ত কানেকশন আমরা তামার তারের পরিবর্তে এলুমিনিয়ামের মাধ্যমে করতে পারব। তবে তামার তারের পরিবর্তে এলুমিনিয়ামের তার ব্যবহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল এলুমিনিয়ামের তার তামার তার হতে প্রায় ৬০-৭০% কম দামে বাজারে পাওয়া যায়। যা সত্যিকার অর্থে বিশাল সাশ্রয়। আর দাম কম আয়তনে বেশী হওয়ার কারণে কম চুরি যাবে। কম নষ্ট হবে। যেন তেন ভাবে ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশের বিআরবি ও আরো অনেক কোম্পানি এলুমিনিয়ামের তার তৈরি ও বিক্রয় করছে। সাধারণত D-..2,3,7,8,10,12,18.. ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি আমরা সকলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি ভৌত কাঠামো তৈরিতে তামা বর্জন করে এলুমিনিয়াম ব্যবহার বৃদ্ধি করে আরও সাশ্রয়ী হতে পারব।
------------------------------------------------------------------------------------
ইমেইলে প্রাপ্ত আমার বন্ধুদের মতামত নীচে দেয়া হল:
Copper wiring is a prime target here as well. One of my kids school gym did not have electricity for a week when thieves stole the copper wires. What's also frustrating was that since school was going thru budget cuts in 2011, we parents had to raise funds to fix the issue. Did not know this alternative. Hopefully no more copper wires will get stolen, but thanks for letting us know how to get it done cheap.

Zia Islam
Winnetka, CA 91306
Mobile : +1-818-518-5784

Mohammad A Rahman 
Hi Tareq,

I am impressed to see your interest on various electrical topics.

Attached are two documents. The first one shows pros and cons of copper and aluminum conductors. The second one from Canadian Electric Code shows ampacities for both copper and aluminium conductor. 

I see that your office is in Mirpur, Kushtia. There is a thana named Bharamara not too far from Mirpur happens to be my birthplace. Anyway, I read all your writings. Interest me as an electrical engineer. Keep going. 

All the best.

Arif/MCC-89
Electrical Engineer
Saskatoon, Canada.