Pages

Thursday, June 30, 2016

অনেক পঙ্গুর উপার্জনের বাহন ব্যাটরী চালিত রিক্সা

আমি কুষ্টিয়ায় সাইকেলের দোকানে  ব্যাটারী চালিত ভ্যান গাড়ীর মটর খুঁজতে গেলাম। কারণ এধরনের মটর দিয়ে আমার একটা গভেষনার শখ জাগল আর তা ছিল। মটরকে ব্যাটারি দিয়ে চালনা করে বাগানে পানি দেয়া, আবার সেই ব্যাটারিকে সোলার প্যানেল দিয়ে চার্জ করা। আমি দোকানদারের সাথে রিক্সা ভ্যানের মটর, মূল্য ও ওয়ারেন্টি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এক পর্যায়ে দোকানদার বলল, আমরা এ ধরনের মালামাল তেমন একটা বিক্রি করি না। মাঝে মাঝে কেউ চাপ সৃষ্টি করে চাহিদা করলে চেনা জানা মানুষদের জন্য এনে দেই। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা নিয়ে এত লুকোচুরি কেন। সে জানাল, মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকজন মটর ভ্যান জব্দ করে ভেঙ্গে দেয়। সে আমাকে প্রশ্ন করল, এটা পরিবেশ বান্ধব, ধোয়া হয় না, এটা ব্যবহারে বাধা কোথায়? আমি তাকে জানালাম, এটার ব্যাটারি চার্জ করতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে আর সেই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে তৈল, কয়লা ও গ্যাস পুড়িয়ে। এটার ব্যাটারি তৈরি করতেও তৈল গ্যাস পোড়াতে হয়েছে। ফলে দেখা যায় এটা পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ এর জন্য বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড নি:স্বরন করছে ( কারণ তৈল, গ্যাস ও কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে), রিক্সা ভ্যানের ব্যাটারি সোলার প্যানেল থেকে চার্জ করা গেলে এটাকে পরিবেশ বান্ধব বলা যেত। আমাদের দেশে মনে হয় ব্যাটারি চালিত রিক্সাগুলো আজ অবৈধ ও অনুপযুক্ত হওয়ার একমাত্র কারণ অটো রিক্সাগুলো সাপ্লাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চার্জ দেয়া হয় সে কারণে। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরো শক্তিশালী হলে মনে হয় আমরা এ ধরনের ব্যাটারি চালিত বাহনগুলির বিরুদ্ধে কথা বলাতাম না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ২০৪০ সালে সমস্ত গাড়ী ইলেকট্রিক করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। অথচ আমরা আমাদের উপকারী ভ্যানগুলি নিষিদ্ধ করছি। জুন মাসে বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত একটি পত্রিকার বেশ কয়েকটি মানুষের ছবি দিয়ে লেখা ছিল পঙ্গুত্ব সত্ত্বেও তারা ব্যাটারি রিক্সা চালিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা উপার্জন করছে। সে টাকা দিয়ে আবার স্ত্রী সন্তানকে লালন পালন করছে। সেখানে আমাদের অবস্থান ব্যাটারি রিক্সার বিপক্ষে। আমাদের দেশে সোলার বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে আমরা অধিক পরিমাণ নবায়ন যোগ্য জ্বালানী আমরা আমাদের গ্রিডে যোগ করতে পারি। আমাদের দেশে মাঝে মাঝে মধ্যরাতেও লোড সেদিন হয়। আমি বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি রাতে ইজি বাইকের ব্যাটারি চার্জ দেয়ার কারণে রাত ১২টার পরেও অফ পিক আওয়ারে মাঝে মাঝে লোড সেদিন দিতে হয়।

ইজি বাইক ও ব্যাটারি রিক্সায় এখন কোন লাইসেন্স দেয়া হয় না। কারণ এগুলো বিদ্যুৎ নষ্ট করে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় এদের লাইসেন্সের আওতায় আনা প্রয়োজন। তাদের কাছ থেকে চারটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি চার্জ করার জন্য কমপক্ষে ৪০০ ওয়াটের প্যানেলের টাকা বিদ্যুৎ ব্যবহারের লাইসেন্সরে শর্ত হিসাবে নেয়া যেতে পারে। সরকার সমস্ত ইজি বাইক ও ব্যাটারি রিক্সার এককালীন টাকা দিয়ে সোলার পাওয়ার প্লান্ট তৈরি করতে পারে। সেই সোলার প্লান্ট দিনের অন্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস করবে ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বাড়াবে। আর এতে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি ইজি বাইক ও ব্যাটারি রিক্সা দিয়ে বিদ্যুৎ খেকো বাহনগুলো সবুজ বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও বড় বড় সোলার চার্জিং স্টেশনও বানিয়ে এধরনের ব্যাটারি চালিত গাড়ীগুলো ব্যবহার করা যাবে। ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিক্সা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ইজিবাইক বাংলাদেশের সীমিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বলে সমস্যা। এছাড়া এই বাহনে মূলত নিরাপত্তাগত আর কোন সমস্যা আছে বলে জানা নাই। কারণ প্রায় সকল উন্নয়নশীল দেশেই চায়না হতে সরবরাহকৃত ইজিবাইক গুলো চলছে। অপরদিকে ব্যাটারি চালিত রিক্সার বড় সমস্যা হল পায়ে চালানো রিক্সাতে মটর চালিয়ে এটা গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। মনে হয় ভারসাম্যহীন অবস্থা। আমি একাধিকার গ্রামে যাতায়ত করেছি তেমন ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়নি। আমার কাছে মনে হয় মটর সাইক্যাল থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ। মনে হয় এর চেয়ে মটর সাইক্যাল অধিক এক্সিডেন্ট করে থাকে। ব্যাটারি চালিত রিক্সা বা ভ্যানগাড়ি যদি গতির জন্য এক্সিডেন্ট করে থাকে। এ বিষয়ে যদি পরিসংখ্যান থাকে তবে এর গতি কমানো ও ব্রেকিং সিস্টেম উন্নয়ন করে লাইসেন্স দিয়ে রাস্তায় চালানো যেতে পারে। গ্রামের রাস্তায় হাতে গোনা কদাচিৎ দুই একটি পায়ে চালিত রিক্সা দেখা যায়। এছাড়া অধিকাংশই ব্যাটারি চালিত রিক্সা। আমি গ্রামের রিক্সা ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, পায়ে চালিত রিক্সা ব্যাটারি ও মটর রিক্সা থেকে কম বিনিয়োগ করে ব্যবহার করা যায় তদুপরি ব্যাটারি চালিত রিক্সার বিদ্যুৎ বিল আছে। তবে কিভাবে ব্যাটারি রিক্সা লাভজনক। সে উত্তর দিয়েছিল, এ যুগে মানুষ পায়ে চালিত রিক্সায় আস্তে আস্তে যাতায়ত করতে চায় না। দ্রুততায় অভ্যস্ত হয়েছে। ব্যাটারি রিক্সায় শারীরিক পরিশ্রম কম হওয়ায় পায়ে চালিত রিক্সা থেকে দ্বিগুণ ও বেশী দূরে খেপ মারা যায় তাই আয় বেশী। আমাদের দেশের বিদ্যুতের টান পড়ায় আমরা একে পরিবেশ বান্ধব না বলে এর অনেক দোষ ত্রুটি বের করে অনুপযোগী মনে করে বিরূপ অবস্থার মধ্যে রাখছি। বাস্তবতা হল সাধারণ মানুষ এ ধরনের বাহনে এত অভ্যস্ত হয়েছে এটাকে দূর করা বিশাল চ্যালেঞ্জ। এগুলোকে প্রতিস্থাপন করার জন্য বিদেশ থেকে অনেক টাকা খরচ করে অটো ট্যাক্সি বা ট্যাক্সি ক্যাব আমদানি করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এ মুহূর্তে এতটা সামর্থ্যের মধ্যে আসেনি। এক সময় সামর্থ্য হলে ঘরে ঘরে প্রাইভেট কার থাকবে ও রাস্তায় ট্যাক্সি ক্যাব থাকবে। সেই দিনগুলো আর বেশী দূরে নয়। এখন আমাদের প্রয়োজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, রিক্সা ও ভ্যান গুলো গভেষনা করে এর নিরাপত্তা ও ব্রেকিং সিস্টেম জোরদার করা। সাধারণ রিক্সা ও ভ্যানে প্রয়োজনে চালকদের মটর সাইকেলের মত হেলমেট পরিধান করানো যেতে পারে। যাত্রীদের সীট বেল্ট থাকতে পারে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ করানো যেতে পারে। হয়তবা একযুগ পরে এদেশের অনেক কারই ইলেকট্রিক বা হাইব্রিড হয়ে যাবে। এ সময় নিরীহ ও উদ্যমী মানুষদের গতি নিয়ে আসা এই বাহনগুলো অপসারণের চিন্তা না করে আমরা দেশী প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আরো উন্নত করতে পারি। আমরা সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব যানবাহনগুলো আরো উন্নত করে নিরাপদ করার পদক্ষেপ নিতে পারি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এগুলোকে ট্যাক্সের আওতায় এনে সেই টাকা বিনিয়োগে রাস্তা বর্ধিত করে আলাদা রিক্সার লেন করা যেতে যেতে পারে। আর এর জন্য প্রয়োজন আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করা। চায়না নির্ভর না হয়ে আমরা দেশীয় প্রযুক্তিতে অটোরিকশার বডি, মটর ও ব্যাটারি তৈরি করে এ শিল্পটিকে সম্পূর্ণ দেশীয় শিল্প হিসাবে উন্নয়ন করতে পারি। আমাদের প্রগতিশীল মনোভাব পাল্টে দিতে পারে আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি।

Thursday, June 23, 2016

পরিবেশ বান্ধব ও কৃষক বান্ধব নয়া কৃষি

আমি আমার শৈশবে গ্রামে গেলে দেখতাম আমার কৃষক চাচা দুই তিনজন লোক নিয়ে জমিতে গরু দিয়ে হাল চাষ করছেন। জমিতে লোক নিয়ে ধানের চারা বা হালি লাগাতেন। ধান বীজটা ঘরে ছিল। যা ছোট জমিতে চাষ করে ধানের চারা করেছেন। নিজের ব্যবহারের পর কিছু অংশ অন্যদের কাছে বিক্রি করেছেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তেমন সার দিতেন না। পোকার জন্য অল্প কিছু বিষ ব্যবহার করতেন হয়তবা। কারণ এনড্রিন নামক বিষের নাম জানতাম। রাগ করে এনড্রিন খেয়ে গ্রামে অনেকেই আত্মহত্যা করত।বিষ তখন দেয়া শুরু হয়েছিল।
এখন পত্রিকায় দেখা যায় ধানের দাম কম ও কৃষকের মাথায় হাত। ফসলের উৎপাদন খরচ উঠে না তাই এ বিপদ। এখনকার কৃষিটা কেমন। আপনার ৫ বিঘা জমি আছে। আপনি ট্রাক্টর ওয়ালাকে ডেকে চাষ করার চুক্তি দিলেন। ৫ বিঘা জমি দুইদিনে চাষ করে দিল। আপনি তাকে বিঘা প্রতি ৬০০ দিয়ে ৩০০০ টাকা পরিশোধ করলেন।ধানের চারা ক্রয় ৫০০০ টাকা। ধান লাগানোর জন্য লোক নিলেন ১০ জন বা মেশিন দিয়ে লাগানোর চুক্তি দিলেন। ৩০০০ টাকা। পানি দেয়ার জন্য বিঘা প্রতি ২০০০ টাকা ১০০০০ টাকা দিলেন। সারের জন্য দিলেন আরো ৫০০০ টাকা। কীটনাশকের জন্য দিলেন আরো ৫০০০ টাকা। আগাছার পরিষ্কার কীট নাশক ছিটানো মনে করলাম আপনি করেছেন। ধার কাটা, মারাই ও পরিবহনের জন্য দিলেন আরো ৬০০০ টাকা। তবে আপনার খরচ কত পরল ৩৭০০০ টাকা। অর্থাৎ বিঘা প্রতি ৭০০০ টাকার মত। এ টাকা আপনি ক্ষুদ্র ঋণ পার্টি থকে ধার করেছেন। অথবা মহাজন থেকে সাপ্তাহিক সুদে নিয়েছেন। প্রতি বিঘায় আপনি ১৮/২০ মন ধান পেলে আপনি দাম ভাল থাকলে বিঘা প্রতি আপনি পেতে পারেন ৮০০০ হতে ১০০০০ টাকা। বিঘা প্রতি তিনমাসের ধান উৎপাদনে আপনার রিটার্ন হল ২০০০ হতে ৩০০০ টাকা আর ৫ বিঘায় তিনমাসে প্রাপ্তি ১০০০০ হতে ১৫০০০ টাকা। এ টাকায় কৃষকের সংসার চলবে না।
এখন আমি একটা মডেল তুলে ধরছি। বর্তমানে গরু দিয়ে চাষ করুক না করুক সব কৃষকের একাধিক গরু আছে। যদি কৃষক নিজের গরু দিয়ে চাষ করে তবে তার খরচ শূন্য। নিজের ঘরের ধান দিয়ে চারা করলে তার খরচ শূন্য গত বছরের নিজের ধান হতে। নিজের পরিবারের সদস্য দিয়ে চারা লাগালে খরচ শূন্য। রাসায়নিক সারের বদলে জৈব সার বা ঘরে তৈরি কেঁচো সার ব্যবহার করলে খরচ শূন্য। পানি তোলার জন্য ঢেঁকি পাম্প, খাল বা পুকুর হতে দোল দিয়ে তুললে সেচ খরচ শূন্য।ফসল নিজের সদস্যরা কাটলে ও পায়ে চালিত মারাই মেশিনে মারাই করলে খরচ শূন্য। এখন যন্ত্রের সাহায্য না নিয়ে, কীটনাশক ব্যবহার না করে ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে উৎপাদন করায় মনে করি আপনার বিঘা প্রতি উৎপাদন কমে হল ১৫ মন(এটা কমার কথা নয়) তবে ৫ বিঘায় আপনার উৎপাদন হল ১৫ গুন ৫=৭৫ মন। বাজারে একদম কম দামে ৪০০ টাকা মন বিক্রি করেও আপনি পাচ্ছেন ৩০০০০ টাকা। তিন মাস ধান উৎপাদনে আপনার পরিবারের জন্য মাসে আসল ১০০০০ টাকা। আর যান্ত্রিক ও আধুনিক চাষাবাদে আপনি পেয়েছিলেন ৩০০০ টাকা আর অযান্ত্রিক ভাবে আপনি পেলেন বিঘা প্রতি ৫০০০ টাকা সবচেয়ে কমের বাজার বিবেচনা করে ও সবচেয়ে কম ফসলের উৎপাদন হিসাব করে।যান্ত্রিক ও রাসায়নিক কৃষককে যতটুকু বেশী দিচ্ছে তার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেশী করছে।
কৃষক এখন গরু দিয়ে চাষাবাদ জানে না। হাতে টানা সেচ বা ঢেঁকি পাম্প কৃষক ব্যবহার করছে না। কৃষকের কৃষি চলে গেছে অন্যদের হাতে।এতে কৃষকের আরাম হয়েছে ঠিকই কিন্তু আর্থিক দৈন্যতায় কৃষক নিমজ্জিত হয়েছে।
আমার এখনও মনে আছে ছোটবেলায় বছরে এক/দুইবার আমার মা আমাদের নিয়ে গ্রামে যেতেন বর্গা ধান অর্ধেক ভাগ বিক্রি করার জন্য। এক সময় দেখলাম বর্গাদাররা বললেন স্কিমের টাকা দিতে। ডিজেল পাম্প দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছে। জমির জন্য কৃষকের হাতে টানা সেচ বন্ধ হল তার জন্য নগদ টাকা গোনা শুরু।বর্গাদাররা একসময় এসে পোষাতে না পেরে সেচের টাকার ভাগ জমির মালিক থেকে নেয়া শুরু করলেন। তারপর সারের দাম। রাসায়নিক বিষের দাম এবং আধুনিক চাষাবাদের নামে কৃষক পতিত হল ঋণ গ্রস্থদের তালিকায়। ধানের চাষ করা কৃষকরা লাভ হোক লস হোক ধানের চাষাবাদ চালু রেখেছে জমি ব্যবহার করা প্রয়োজন তাই। জমি ফেলে রাখলে ঘাস হয়ে পরে চাষাবাদ উপযোগী করতে খরচ বেড়ে যাবে।
আধুনিক যুগে কৃষক সমবায়ের মাধ্যমে নিজেরা কৃষি উপকরণ কিনে যান্ত্রিক সামগ্রী ব্যবহার করে খরচ কমাতে পারে অথবা ছোট ছোট পর্যায়ে প্রান্তিক কৃষকরা ফিরে যেতে পারে নি:খরচায় আদি কৃষিতে।
এখন আমরা পারি আদি ও আধুনিক কৃষির সংমিশ্রণ ঘটাতে। কয়েকজন কৃষক সমবায়ের মাধ্যমে ট্রাক্টর কিনে নিজেরা শিখে নিয়ে চাষ করবে। তেমনি ভাবে সমবায়ের মাধ্যমে প্ল্যানটার ও রাইপার বা হারবেস্টার ক্রয় করে নিজেরা চালাবে। নিজেরা সমবায়ের মাধ্যমে সোলার পাম্প বসাবে এতে ডিজেলের সেচ থেকে খরচ কম পড়বে। রাসায়নিক সারের বদলে কম্পোষ্ট ও কেঁচো সার ব্যবহার করবে। কীটনাশকের বদলে প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহার করবে।
ইন্টারনেটের অর্গানিক কৃষি আর কীটনাশক মুক্ত কৃষির একটা আন্দোলন চলছে। বাংলাদেশে মিডিয়াতে কিছু কিছু আলোচনা হচ্ছে।সেদিন হঠাৎ করে একটা ওয়েবসাইট পেলাম নাম উবিনীগ আর তাদের আন্দোলন নয়া কৃষি
তাদের ওয়েবসাইট হল,
http://ubinig.org/index.php/nayakrishidetails/showAerticle/6/23/bangla

সেখান থেকে এই নয়া কৃষির দশ মূলমন্ত্র নীচে দেয়া হল:
নয়াকৃষি নীতি ১: বিষ ব্যবহার এখনই বন্ধ করতে হবে। সকল প্রকার কীটনাশকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা নয়াকৃষির প্রথম নীতি। এই ব্যাপারে কোন আপোষ নাই।
নয়াকৃষি নীতি ২: কৃষকের হাতে, ঘরে ও মাঠে বীজ রাখতে হবে। বীজই নয়াকৃষির ধ্যান, বীজ রক্ষাই নয়াকৃষির পথ, বীজেই বিপ্লব।
নয়াকৃষি নীতি ৩: রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই শুরুতে জৈব সার দিয়ে চাষাবাদ এবং ক্রমে ক্রমে মাটির সুস্থ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে বাইরের কোন সার ছাড়াই মাটির স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা নয়াকৃষির পথ।
নয়াকৃষি নীতি ৪: একাট্টা ফসল অর্থাৎ এক প্রজাতি বা এক জাতের ফসল নয়াকৃষি করে না। সবসময়ই মিশ্র ফসল ও শস্যাবর্তনে বাহারি ফসল চাষ করে এক একর থেকে হাজার একরের ফলন আদায় করা নয়াকৃষির নীতি।
নয়াকৃষি নীতি ৫: আবাদি ও অনাবাদী জায়গার ব্যবস্থাপনা - অর্থাৎ আবাদি ফসল উৎপাদনের ধরণেই এমন করা যেন একই সঙ্গে জমিতে প্রচুর অনাবাদী ফসল ঘরে তুলে বাংলাদেশের খাদ্য চাহিদা, এমনকি অন্য দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানো নয়াকৃষির নীতি।
নয়াকৃষি নীতি ৬: পানির সুরক্ষা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সেচের জন্য মাটির ওপরের পানির পরিমিত ব্যবহারই নয়াকৃষির নীতি। মাটির তলার পানি ধ্বংস করা ও আর্সেনিকে পরিবেশ বিষাক্ত ও স্বাস্থ্য নষ্ট করার বিরোধী নয়াকৃষি। বাংলাদেশ মিষ্টি পানিতে দুনিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশ। পানির দাম তেল, দুধ এমনকি মদের চেয়েও বেশি। এই পানি নষ্ট করা ভয়ানক অপরাধ।
নয়াকৃষি নীতি ৭: নয়াকৃষি এক ফসলের হিশাব দিয়ে চাষাবাদের সামগ্রিক লাভালাভের হিশাব করে না। শুধু শস্য নয়-খড়, পাতা, খড়ি, মাছ, মুরগী, পশু-পাখি, জীব-অণুজীবসহ সবকিছু হিশাব করলেই লাভালাভ জানা যায়। একটি শস্যের পরিবর্তে কৃষকের খামারে সামগ্রিক ফলনের লাভালাভ এবং প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষা ও বিকাশের মধ্য দিয়ে পুরো গ্রাম বা জনগোষ্ঠীর পরিবেশগত ও আর্থিক লাভের খতিয়ান করতে শেখা নয়াকৃষির প্রধান একটি নীতি।
নয়াকৃষি নীতি ৮: গরু-ছাগল, হাঁস মুরগীসহ সকল গৃহপালিত পশু-পাখি অর্থাৎ প্রাণ এবং প্রাণীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, সম্পর্ক ও আচরণের মধ্য দিয়েই নয়াকৃষির কৃষক হওয়ার চর্চা ও নয়াকৃষির কৃষক হয়ে ওঠা নির্ভর করে। প্রাণ, প্রকৃতি আর নিজের ঘরের মধ্যে ব্যবধান মুছে দিয়ে প্রাকৃতিক নিয়মেই গৃহস্থের সামগ্রিক সম্পদ দ্রুত ও নিশ্চিত ভাবে বাড়ানোর সাধনাই নয়াকৃষির নীতি।
নয়াকৃষি নীতি ৯: জলের সঙ্গে চাষির পানির খবরাখবর নেয়া বা পানির খবরদারি করা নয়াকৃষির একটি প্রধান নীতি। যেন মাছসহ সকল জলজ প্রাণের সংরক্ষণ ও বিকাশ ঘটানো যায়। জল ও ডাঙা উভয়ের বৈচিত্র্য নিয়েই নয়াকৃষি।
নয়াকৃষি নীতি ১০: গ্রামের প্রাকৃতিক সম্পদ বৃদ্ধি করে জীবিকার নিশ্চয়তা বৃদ্ধি ও আয় উন্নতির সুযোগ বাড়ানো নয়াকৃষির নীতি। কৃষক পরিবারসহ নয়াকৃষি এলাকায় প্রত্যেকটি পরিবারকে আত্মনির্ভরশীল ও বাজার ব্যবস্থার অধীনস্থ না হয়ে আর্থিক ও প্রাকৃতিক সম্পদ উভয় ক্ষেত্রে সম্পদশালী করা নয়াকৃষির নীতি।

বাংলাদেশে নয়া কৃষির আন্দোলন সত্যিই আশাব্যঞ্জক। এটা বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের একটা টেকসই উন্নয়নে কাজে লাগবে। এখন সময় এসেছে কৃষককে আধুনিক কৃষিতে না ফেলে পরিবেশ ও কৃষক বান্ধব কৃষিতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

Thursday, June 16, 2016

ছাদের উপর সহজ চাষাবাদ

আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম তখন সারা পৃথিবী ব্যাপী আলোচনা চাদে মানুষ যাওয়া, বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার, আনুবিক শক্তির ব্যবহার। তারপর যখন চাকুরীতে আসি তখন শুরু হল কম্পিউটারের উন্নয়ন। তখন মানুষের মাঝে একটা সচেতনতা কম ছিল তা হল পরিবেশ রক্ষার চ্যালেঞ্জ। মানুষ এখন বিঞ্জানের উন্নতি অপেক্ষা পরিবেশ বান্ধব বিষয় নিয়ে চিন্তিত। সার ও কীটনাশক বাদ দিয়ে পরিবেশ বান্ধব কৃষিকাজ নিয়ে চিন্তিত। পশু, পাখি কিভাবে পরিবেশ সম্মত ভাবে উন্নয়ন করা যায় তা গুরুত্ব পাচ্ছে। কিভাবে অর্গানিক উপায়ে পশু ও পাখির খাদ্য তৈরি করা যায় তা এখনকার মানুষের চিন্তা ও চেতনায় প্রকাশ পাচ্ছে। আমাদের অনেকেই বিজ্ঞানের নানা স্বপ্ন ছেড়ে বিপন্ন পৃথিবী রক্ষায় গাছ গাছালি যুক্ত পরিবেশ তৈরি করা নিয়ে চিন্তিত। আর গাছ বেড়ে উঠবে প্রাকৃতিক ভাবে। আমার এখন জানতে চাইনা গাছে কি কি রাসায়নিক সার দিব। আর কি কি বিষ দিব। আমরা জানতে চাই কিভাবে অর্গানিক বা জৈব সারে গাছ উৎপাদন করব। আমরা জানতে চাই কিভাবে বালাইনাশক বা জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে গাছ, ফুল ও ফল রক্ষা করব।
আমরা এখন একটা কাজই করব। কোন স্থান গাছ মুক্ত রাখব না। যে কোন জায়গায় মাটি না থাকলে টবে, বস্তায়, যে কোন পাত্রে যা সহজে জন্মে তাই লাগাব। এতে আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ বৈশ্বয়িক উষ্ণতা অন্তত কয়েক ডিগ্রি কমাতে পারব । স্থানীয় পরিবেশের কার্বন ডাই অক্সাইড কমিয়ে আমরা অক্সিজেন বাড়াতে পারব।
ছাদে টবে যে কোন কিছুই লাগানো যায়। ছাদে গাছ উৎপাদনে অনেক বেশী যত্নশীল হতে হয়। নিয়মিত পানি দিতে হয়। নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। ছাদে গাছ লাগানোর পর নিয়মিত পরিচর্যা না করলে গাছ লাগানোর কষ্টটাই বিফলে যাবে।
আমি কয়েক মাস ধরে ছাদের বাগানের নানা ভিডিও ও লিটারেচার পড়ে এবং আমার ছাদ বাগানের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে ছাদে বাগানের সহজ কিছু ফলের নাম তুলে ধরলাম। যা ছাদে প্রাথমিক অবস্থায় লাভজনক। ছাদে চাষ করতে হলে যে কোন কন্টেইনার ব্যবহার করলে তার নীচে ছিদ্র করতে হবে। যাতে অতিরিক্ত পানি বেড়িয়ে যেতে পারে। তার পর কয়েকটি ইট বা সুরকির টুকরো নীচে দিতে হবে। এগুলো সাধারণত পানি ধরে রাখে। অত:পর অর্ধেক জৈব বা গোবর সার মাটির সাথে মিশিয়ে টব, ড্রাম ও কন্টেইনারে লাগালেই হয়ে গেল। এখন প্রয়োজন মাঝে মাঝে প্রয়োজন মত পানি দেয়া।
আমার কাছে মনে হয় ছাদে সহজে বাগান শুরু করার জন্য ফলের গাছ লাগাতে পারি তা হল আম্রপালি আম, বারোমাসি আমড়া, পেয়ারা, সফেদা ও বড়ুই গাছ। এগুলো দিয়ে বাগান তৈরির সহজ যাত্রা শুরু করতে পারি। প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিটি গাছের পাঁচটি করে কলমের গাছ নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করতে পারি।এতে ২৫টি গাছ হবে। প্রাথমিক কাজের জন্য যথেষ্ট। ফলের গাছগুলি যত্ন আত্তি করে কমপক্ষে তিনমাস পার করে আমরা কন্টেইনার চাষের খুঁটিনাটি আয়ত্তে আনতে পারব।
কন্টেইনারে ফল চাষাবাদের পর আমরা কতগুলো সবজি সহজে চাষাবাদের জন্য  কন্টেইনারে লাগাতে পারি। সেগুলো হল: পুইশাক, ডাটা শাক, কলমি শাক, টমেটো, বেগুন, মরিচ ও ভুট্টা। তদুপরি লতা জাতীয় গাছের মধ্যে আমরা লাগাতে পারি জিংগা, শশিন্দা, শিম, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, শসা ও লাউ।
বাগান তৈরির খরচ কমানোর জন্য আমরা পুরাতন কৌটা, পুরাতন ব্যাগ, বাজারের ব্যাগ, পুরাতন ট্রলি ব্যাগ, পুরাতন ট্যাংক ইত্যাদিতে আমরা চাষাবাদ শুরু করতে পারি।

প্রথম অবস্থায় যে কোন আইটেম একটি বা দুটি কন্টেইনারে লাগিয়ে চাষাবাদ শুরু করা ভাল। অল্প অল্প করে একাধিক আইটেম বা একাধিক ধরনের চাষ করলে কোনটি ভাল হবে আর কোনটি ভাল হবে না। এতে করে কোন ধরনের আইটেম চাষে কেমন ধরনের ব্যবস্থা নিতে হয় তা সহজে আয়ত্তে আসবে। আর একই আইটেম বেশী পরিমাণে করলে সেই আইটেম ভাল না হলে লসের বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। ঝুঁকি মোকাবেলার জন্যও একাধিক আইটেম অল্প অল্প করে আমাদের চাষ করাটাই লাভ জনক। সৌখিন চাষে চাষের ভ্যারাইটি যত বাড়বে তত বেশী তা আনন্দদায়ক ও কার্যকরী হবে। কেউ একটি/দুইটি ফসল উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলে তাতে পরিবারের সদস্যরা একঘেয়েমিতে ভুগবে। সে যাই হোক পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য আমাদের আশে পাশে জমি বাগান কিছুই আমাদের খালী রাখা উচিত নয়। যদি গরু ছাগল সমস্যা করে তবে গরু ছাগল নষ্ট করে না সেই গাছ লাগাব। যদি উৎপাদনে জটিলতা তবে যা জন্মায় তাই লাগাব। তাই আসুন আর দেরি নয়। আমাদের চারিদিকের পরিবেশ সবুজ করি ও গাছ লাগাই। পরিবেশ বাচাই। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী তৈরি করি।


Thursday, June 9, 2016

লাভজনক ছাদ বাগান করার ধারনা

আমরা যারা শহরে বাস করি আমাদের ছাদ বাগান করার মুল কারণ আমাদের জমি নেই কিন্তু আমাদের বাগান করার হবি আছে। আমরা অনেক কষ্ট স্বীকার করে বাগান করি। “শখের তোলায় আশি টাকা” অর্থাৎ তৎকালীন সময়ে কারো একশত টাকা রোজগার হলে তা শখে ৮০ টাকা বা ৮০% খরচ করা কোন বিষয় নয়। শখ মানুষের উপার্জিত অর্থকে খরচ করার অনুপ্রেরণা দেয়। আপনার বাগান করার জন্য যদি তীব্র শখ থাকে তবে বাগানের শখের জন্য আপনি কতটুকু গার্ডেন প্রোডাক্ট পেলেন সেটা মুল বিষয় নয়। মুল বিষয় হল আপনি গাছ ভালবাসেন ফুল ভাল বাসেন সেটা উৎপাদনে কত খরচ গেল তা আপনার কাছে বিবেচ্য বিষয় হবে না। কারণ সুন্দর ফুল আর তরতাজা গাছগুলির কোমলভাবে বেড়ে উঠাই আপনাকে আনন্দ দিবে। খরচ কোন বিবেচনা নয়।
আমরা যারা প্রয়োজনে ছাদ বাগান করব তাদের জন্য খরচ একটি বিবেচনার বিষয়। আমরা বাগানে যে বিনিয়োগ করব তার অন্তত সমান সমান অর্জন হলে মন্দ না। লাভ হিসাবে ফ্রেস সবজি আমরা লাভ করলাম। যদি বিনিয়োগ বেশী হয়ে যায় তখন আর তা লাভজনক থাকে না। তাই লাভজনক করা প্রধান শর্ত হল বিনিয়োগ কম করা প্রয়োজন। প্রথম কাজ হল টব বা কন্টেইনার কেনার প্রয়োজন নেই। বাসার অকেজো কনটেইনার, বোতল, প্লাস্টিক ব্যাগ অব্যবহৃত ও ছিঁড়া ফাটা বাজারের ব্যাগ দিয়ে যাত্রা শুরু করা যায়। ছাদের উপর লেবার দিয়ে একবারে অনেক মাটি তোলা বেশ চাপের কাজ। তার জন্য লেবার রাখলে একদিন মাটি তুলে দিলে ৩০০/৪০০ টাকা নিবে। এখন আপনি যা করতে পারেন বিকালে আপনার পরিবার যখন নিচে হাটতে যাবেন তখন বাগান থেকে ছেলে মেয়ে আপনি চার জনে দুই কেজি করে আট কেজি মাটি তুলে নিলেন। তাহলে ত্রিশ দিনে উঠাতে পারবেন ২৪০ কেজি মাটি। আপনার পরিবারের সবার প্রতিদিন বিকালে প্রত্যেকে দুই কেজি করে মাটি উঠালে ভালই অনুশীলন হবে। ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশারের উপকার পাবেন। এখন পর্যন্ত আপনি কনটেইনার কেনার জন্য কোন খরচ করেননি। মাটিও বিনা পয়সায় ছাদে উঠে গেল। কম্পোষ্ট যদি আপনি তৈরি করতে পারেন তবে তাও কেনার প্রয়োজন হবে না। বাসার রান্নাঘরের কুটা বাছায় যে আর্বজনা বের হয় তা ছয় মাস সময় পচিয়ে সহজে কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। আর একান্তই প্রাথমিক ভাবে কম্পোস্ট যোগাড় করতে ব্যর্থ হলে আমরা কেঁচো দিয়ে তৈরি ভার্মি কম্পোস্ট ক্রয় করতে পারি। শ্রেডারে কুচি কুচি করে কাটা কাগজ আমরা মাটির সাথে ব্যবহার করতে পারি। বাচ্চাদের হিসু করা ড্রাইপার রোদে শুকিয়ে তার তুলোগুলি কনটেইনারে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। এতে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়বে। আর হিসুর ইউরিয়া নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটাবে। বাসায় ঝাড়ু দিয়ে অনেক ধুলা পাওয়া যায়। এগুলো ডাস্টবিনে বা বালতিতে জমিয়ে রাখুন ও পরে কম্পোস্টের সাথে মিশিয়ে দিতে পারবেন। প্রতিদিন ছটাক ছটাক ধুলাবালি মাস শেষে কয়েক কেজি হয়ে যেতে পারে। রান্না ঘরের অর্জন আর ছাদ বাগানের মড়া পাতা, গাছ ও শিকড় পচিয়ে কম্পোস্ট বানিয়ে আর সেই কম্পোস্ট মাটির সাথে মিশিয়ে আমরা সহজেই ছাদ বাগানের কন্টেইনারে মাটির সাথে ব্যবহার করতে পারি। নীচ থেকে ছাদের উপর মাটি তোলার প্রয়োজন আর একটা পর্যায়ে আর লাগবে না কারণ মরা গাছগুলিকে কম্পোস্ট বানিয়ে রিসাইক্যাল করলেই চলবে।
আপনার বন্ধু-বান্ধবের বাগানে যান কিছু সবজির চারা না কিনেই আপনি তাদের কাছ থেকে আপনি নিতে পারেন। বাজার থেকে কলমি শাক কিনে তার ডাটাগুলো লাগাতে পারেন। পুইশাকের ডাটা লাগাতে পারেন। পুইশাক ও কলমি শাক লাগিয়ে বেশ ভালভাবে ফ্রেশ শাক খেতে পারেন। আমাদের বাসায় প্রায়শই শুকনা আস্ত লংকা কিনি সে লংকা বড় সড় দেখে ভিতর থেকে তার বিচিগুলো ভিজিয়ে টবে ছিটিয়ে দিন আপনি বিনা পয়সায় মরিচের চারা পেয়ে গেলেন। একইভাবে টমেটো, গোল আলু, ধনিয়া, রসুন, পেঁপে, করল্লা, কাকরুল, শসা,কচু ইত্যাদি বীজ আমরা রান্না ঘর থেকে পেতে পারি। বাজার করার সময় একটি/দুইটি পাকা সবজি কিনলেই সব পাওয়া যাবে। লাল শাক, ডাটা শাক ও পাটশাক স্থানীয় গ্রোসারী দোকান থেকে ক্রয় করা যেতে পারে অল্প কিছু টাকা খরচ হবে তার পর ছাদ বাগানে দুই/একটা ডাটা শাক, লাল শাক রেখে দিলে পরবর্তী সিজনে আর বীজের অভাব হবে না। আপনার আসে পাশে বিভিন্ন স্থান হতে কলম করে দুই একি ফলের কলম গাছ চাষ শুরু করতে পারেন। নার্সারিতে দেখা যায় পলি প্যাকের গাছ ১০ টাকা আর টবের গাছ ৫০ টাকা। তখন একটি দুইটি টবের গাছ অল্প বিনিয়োগে শুরু করা যায়।
আমি এ পর্যন্ত যা হিসাব দিলাম তার মধ্যে আপনার খরচ হওয়ার কোন কারণ ঘটেনি। আপনি আপনার বাগানে পুই শাক, কলমি শাক যদি উৎপাদন করে থাকেন তবে ওজন করে দাম লিখুন। মনে করুন প্রথম মাসে আপনি দুই কেজি পুই শাক আর দুই কেজি কলমি শাক উৎপাদন করলেন। খাতায় লিখলেন সর্বমোট ৫ কেজি মোট মূল্য ২০গুনন ৫ = ১০০ টাকা। আমি ১০০ টাকা আমি বিনিয়োগ করলাম। আমি এখন ১০০ টাকার চারা ও বীজ কিনে বিনিয়োগ করতে পারি। এভাবে আমি যা উৎপাদন করলেন তার মূল্যমান হিসাব রাখলেন এবং ক্রমান্বয়ে সেই পরিমাণ অর্থের কাছাকাছি বিনিয়োগ করতে থাকলেন আরো উন্নত চাষাবাদের জন্য। একসময় আপনার উৎপাদন যখন বিনিয়োগের দ্বিগুণ হবে তখন লেখালেখি ও হিসাব করা ছেড়ে দেবেন। তখন আপনি একটা ধারনা পেয়েছেন আপনার মাসে কত খরচ আর আপনার মাসে কত অর্জন। আপনি বাগানে সবকিছু এমনভাবে বিভিন্ন জাত ও প্রকারের ফল ও সবজি উৎপাদন করুন যাতে আপনার পরিবারের চাহিদা মিটানোর পর বেশী বাড়তি না হয়। একই রকম ফল সবজি বেশী উৎপাদন করে প্রতিবেশীদের বিলানো বা বাজারে বিক্রির জন্য ছুটোছুটি করার চেয়ে অনেক অনেক ধরনের ফল সবজি অল্প অল্প করে পরিবারের জন্যই বিষযুক্ত ও অর্গানিক ভাবে উৎপাদন করাটা অনেক অনেক ভাল উপায়। আসুন আর দেরী নয় ঘরের অপ্রয়োজনীয় যা আছে তা দিয়েই নি:খরচায় ছাদ বাগান শুরু করি। আর হয়তবা বেশী দিন দূরে নয় যখন আমাদের দেশের সকল ছাদে থাকবে সবুজের সমারোহ।


Thursday, June 2, 2016

ছাদে সোলার প্যানেল প্রয়োজন না ছাদ বাগান

সারা পৃথিবীব্যাপী ছাদে সোলার প্যানেল লাগিয়ে গ্রিন এনার্জি উৎপাদন একটা আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশেও এ আন্দোলনের আচ লেগেছে। অনেকেই বাড়ীর ছাদে পাওয়ার স্টেশন বসাচ্ছেন। সোলার প্যানেলের জন্য জমি নষ্ট না করে ছাদে সোলার প্যানেল অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে। ছাদের উপর প্যানেল বসালে ছাদ ঠাণ্ডা থাকবে আর এই দালানের কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যাবে।
তবে প্রশ্ন হল ছাদে বাগান করা যায় আবার সোলার প্যানেলও লাগানো যায়। কোনটা বাংলাদেশের শহরগুলির জন্য প্রযোজ্য। জ্ঞান বিজ্ঞানের এই যুগে ছাদে বাগান। মরুভূমিতে বাগান। বরফে বাগান। পানিতে বাগান। কোনটাই কোন জটিল নয়। প্রয়োজন কেবল উদ্দোগ নেয়া। সারা পৃথিবীর জলবায়ু উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা হয়ত পৃথিবী বিচরণ করে গেলাম। আমাদের বংশধররা কি এই উষ্ণ পৃথিবীতে জীবন ধারণ করতে পারবে? আমরা আমাদের জীবনের কথা ভাবি। বাকী দিনের কথা না ভাবলেও চলবে। ২০৫০ সালে আমার বয়স আশি হবে। যদি বেচে থাকি তবে পৃথিবীর উষ্ণতা কেমন হবে ভেবে রীতিমত ভয় লাগে। নদীনালা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। পুকুর খালে পানি কমে যাচ্ছে। পৃথিবীর পানির স্তর ক্রমে নীচে চলে যাচ্ছে। তবে আমাদের উপায় তাহলে কি?
ঘন বসতিপূর্ন শহরগুলোতে ছাদগুলো আমরা অনেকভাবে ব্যবহার করতে পারি। কাপড় শুকানোর জন্য। বিকালে পায়চারী করার জন্য। সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে আমার কাছে মনে হয় ছাদ এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার না করে গাছ লতাপাতা উৎপাদনে ব্যবহার করা অতি উত্তম একটি বিষয় হবে।
কোন কোন দেশে ছাদে গ্রিনারী লাগানো বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে এই উপদেশ কেউ শুনবে না। অনেক দেশে যারা ফ্লাটে বসবাস করে তারা চাইলে সরকারী অব্যবহৃত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বা নিজের জন্য চাষাবাদ করতে পারে। বাগান করা স্বাস্থ্য ভাল রাখার একটি হবি। ছাদে বাগান তারাই করেন যাদের বাগান করার তীব্র আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু মাটিতে কোন স্থান নেই। তারাই ছাদে বাগানে এগিয়ে যায়। আমি আগে সব সময় ভাবতাম আমাদের দেশের সকল ছাদের উপর সোলার প্যানেল লাগাতে হবে। কারণ দেশে বিদ্যুৎ এর ঘাটতি রয়েছে। পরিবেশ নিয়ে স্টাডি করে ও ছাদ বাগান নিয়ে স্টাডি করার পর আমার কাছে মনে হয় ছাদ বাগান শহরের জন্য এসওএস আন্দোলন।
ছাদে বাগান সবাই পছন্দ করবে তা কিন্তু নয়। ছাদে বাগানে বেশ কষ্ট আছে। ছাদ লীজ নেয়াটা লাভজনক করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ছাদে বাগানের প্রথম সমস্যা হল বিনিয়োগ কৃত মূলধন সাধারণত উঠানো যাবে কিনা এটা প্রথম সমস্যা। মনে করি একটা বার মাসের আমড়া গাছ টবসহ ৫০০ টাকা। এখন যত্ন ও পৃচ্ছা করার পর তাতে ৫০০ টাকার আমড়া এক/দুই বছরে পাওয়া যাওয়াটা ভাবনার বিষয়। এককভাবে বাগান করাটাকে তাই লাভজনক করাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এর মধ্যে আমাদের দেশে অনেকেই ছাদ বাগান লাভজনক করেছেন। ছাদ বাগান লাভজনক মনে হয় বাগানের পোডাক্ট থেকে হয়নি। যা হয়েছে তা মূলত বাগানের কলমের চারা ইত্যাদি বিক্রয় করে। বাড়ীর আঙ্গিনায় গর্ত করে দুটো বীজ লাগিয়ে দিলে যেভাবে উৎপাদন পাওয়া যায় সেভাবে টবে চাষ হয় না। টবে চাষ নিয়ম মেনে যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান নিয়ে করতে হয়। প্রতিটি কার্যক্রম সর্তকতার সাথে করতে হয় তবেই তা লাভজনক হয়। ছাদ বাগান থেকে যে লাভটা আমরা পাব তা টাকার অংকে বিচার করে কোন ফলাফল পাব না। কিন্তু আমরা যদি পরিবেশ বাচাও আন্দোলনের যুদ্ধের অনুভূতি নিয়ে বিচার করি তবে আমরা ছাদে বাগান করার সার্থকতা খুঁজে পাব। আমরা সাধারণ বিষযুক্ত ও রাসায়নিক সারে উৎপাদিত শাক সবজি খাই। এখানে আমাদের কাছে বেশ বড় একটি ব্যবস্থা রয়েছে। আর তা হল। অর্গানিক ও বিষমুক্ত খাবার খাওয়া। এতে আমাদের নিজেদের বিষমুক্ত খাবারের ঝুঁকি থেকে আমরা মুক্ত থাকব। ছাদে বাগান করার কারণে বাগানের টবের মাটি তৈরি। পানি দেয়া। ফসল তোলা। বাগানের পরিচর্যা ইত্যাদি কাজ করলে শরীর হালকা পরিশ্রমের মধ্যে থাকে। এতে শরীর ও মন ভাল থাকে। অতি সম্প্রতি বাতের বা অরথ্রাইটিস এর ডাক্তার গন বাতের চিকিৎসায় বাগান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর রোগ থেকে বাচতে আমাদের জায়গা না থাকলে ছাদটুকুই ভরসা। আমাদের দেশের মানুষ ধীরে ধীরে সচেতন হচ্ছে। আমাদের দেশের কিছু ভলান্টিয়াররা ছাদে বাগান করে দিচ্ছে। আমাদের অনেক সৌখিন বাগানিরা ছাদ বাগান তৈরি করতে তাদের সহযোগিতা গ্রহণ করছেন। আমার মনে হয় সেই দিনটি আর বেশী দুরে নয় যখন আমাদের কোন ছাদ পড়ে থাকবে না। আমার ছোট বেলায় আমার বাবা বছরে কয়েকবার শহর থেকে গ্রামে যেতেন। তখন বাবাকে দেখতার শুধু গাছ লাগাতেন। আজ অনেক বছর পর এসে দেখছি গ্রামের মানুষকে আর গাছ লাগাতে বলতে হয় না। তারা বাড়ীর আসে পাশে কোন জায়গা খালী রাখছে না। শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার একসময় কোন ছাদ খালী পাওয়া যাবে না। সরকার বাড়ীর মালিকদের বিনামূল্যে চারা, টব ও কম্পোষ্ট দিয়ে ছাদ বাগানের আগ্রহ বাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। পরিশেষে সোলার প্যানেল নয় বরং ছাদ বাগান হোক নগর জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম। ঢেউ টিনের ছাদ থেকে শুরু করে যেসমস্ত ছাদে ছাদ বাগান করা যায় না সেগুলো ব্যবহার হোক সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ছাদ বাগান সফল হবে এবং বাঁচবে আমাদের পরিবেশ এটাই সকলের কাম্য।