আমি কুষ্টিয়ায় সাইকেলের
দোকানে ব্যাটারী চালিত ভ্যান গাড়ীর মটর খুঁজতে
গেলাম। কারণ এধরনের
মটর দিয়ে আমার একটা গভেষনার শখ জাগল আর তা ছিল। মটরকে ব্যাটারি দিয়ে চালনা করে বাগানে পানি দেয়া, আবার সেই ব্যাটারিকে সোলার প্যানেল দিয়ে চার্জ করা। আমি দোকানদারের সাথে রিক্সা ভ্যানের মটর, মূল্য
ও ওয়ারেন্টি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এক পর্যায়ে দোকানদার বলল, আমরা এ ধরনের মালামাল তেমন একটা
বিক্রি করি না। মাঝে মাঝে কেউ
চাপ সৃষ্টি করে চাহিদা করলে চেনা জানা মানুষদের জন্য এনে দেই। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এটা নিয়ে এত লুকোচুরি কেন। সে জানাল, মাঝে মাঝে প্রশাসনের লোকজন মটর ভ্যান জব্দ
করে ভেঙ্গে দেয়। সে আমাকে প্রশ্ন
করল, এটা পরিবেশ বান্ধব, ধোয়া হয় না, এটা ব্যবহারে বাধা কোথায়? আমি তাকে জানালাম, এটার ব্যাটারি চার্জ করতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে আর সেই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে
তৈরি হচ্ছে তৈল, কয়লা ও গ্যাস পুড়িয়ে। এটার ব্যাটারি তৈরি করতেও তৈল গ্যাস পোড়াতে হয়েছে। ফলে দেখা যায় এটা পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ এর জন্য বাতাসে কার্বন
ডাই অক্সাইড নি:স্বরন করছে ( কারণ তৈল, গ্যাস ও কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে), রিক্সা ভ্যানের ব্যাটারি সোলার প্যানেল থেকে চার্জ করা গেলে এটাকে
পরিবেশ বান্ধব বলা যেত। আমাদের দেশে
মনে হয় ব্যাটারি চালিত রিক্সাগুলো আজ অবৈধ ও অনুপযুক্ত হওয়ার একমাত্র কারণ অটো রিক্সাগুলো
সাপ্লাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চার্জ দেয়া হয় সে কারণে। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরো শক্তিশালী হলে মনে হয় আমরা এ ধরনের ব্যাটারি
চালিত বাহনগুলির বিরুদ্ধে কথা বলাতাম না। আমাদের প্রতিবেশী
দেশ ভারত ২০৪০ সালে সমস্ত গাড়ী ইলেকট্রিক করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। অথচ আমরা আমাদের উপকারী ভ্যানগুলি নিষিদ্ধ করছি। জুন মাসে বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত একটি পত্রিকার বেশ কয়েকটি মানুষের
ছবি দিয়ে লেখা ছিল পঙ্গুত্ব সত্ত্বেও তারা ব্যাটারি রিক্সা চালিয়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে
৭০০ টাকা উপার্জন করছে। সে টাকা দিয়ে
আবার স্ত্রী সন্তানকে লালন পালন করছে। সেখানে আমাদের
অবস্থান ব্যাটারি রিক্সার বিপক্ষে। আমাদের দেশে
সোলার বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে আমরা অধিক পরিমাণ নবায়ন যোগ্য জ্বালানী আমরা আমাদের গ্রিডে
যোগ করতে পারি। আমাদের দেশে
মাঝে মাঝে মধ্যরাতেও লোড সেদিন হয়। আমি বিদ্যুৎ
বিভাগের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি রাতে ইজি বাইকের ব্যাটারি চার্জ দেয়ার কারণে
রাত ১২টার পরেও অফ পিক আওয়ারে মাঝে মাঝে লোড সেদিন দিতে হয়।
ইজি বাইক ও ব্যাটারি
রিক্সায় এখন কোন লাইসেন্স দেয়া হয় না। কারণ এগুলো
বিদ্যুৎ নষ্ট করে। এক্ষেত্রে আমার
মনে হয় এদের লাইসেন্সের আওতায় আনা প্রয়োজন। তাদের কাছ থেকে
চারটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি চার্জ করার জন্য কমপক্ষে ৪০০ ওয়াটের প্যানেলের টাকা বিদ্যুৎ
ব্যবহারের লাইসেন্সরে শর্ত হিসাবে নেয়া যেতে পারে। সরকার সমস্ত ইজি বাইক ও ব্যাটারি রিক্সার এককালীন টাকা দিয়ে সোলার
পাওয়ার প্লান্ট তৈরি করতে পারে। সেই সোলার প্লান্ট
দিনের অন্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস করবে ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বাড়াবে। আর এতে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি ইজি বাইক ও ব্যাটারি রিক্সা
দিয়ে বিদ্যুৎ খেকো বাহনগুলো সবুজ বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও বড় বড় সোলার চার্জিং স্টেশনও বানিয়ে এধরনের ব্যাটারি চালিত
গাড়ীগুলো ব্যবহার করা যাবে। ইজিবাইক ও ব্যাটারি
চালিত রিক্সা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। ইজিবাইক বাংলাদেশের সীমিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বলে সমস্যা। এছাড়া এই বাহনে মূলত নিরাপত্তাগত আর কোন সমস্যা আছে বলে জানা নাই। কারণ প্রায় সকল উন্নয়নশীল দেশেই চায়না হতে সরবরাহকৃত ইজিবাইক গুলো
চলছে। অপরদিকে ব্যাটারি চালিত রিক্সার বড় সমস্যা
হল পায়ে চালানো রিক্সাতে মটর চালিয়ে এটা গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। মনে হয় ভারসাম্যহীন অবস্থা। আমি একাধিকার গ্রামে যাতায়ত করেছি তেমন ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়নি। আমার কাছে মনে হয় মটর সাইক্যাল থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ। মনে হয় এর চেয়ে মটর সাইক্যাল অধিক এক্সিডেন্ট করে থাকে। ব্যাটারি চালিত রিক্সা বা ভ্যানগাড়ি যদি গতির জন্য এক্সিডেন্ট
করে থাকে। এ বিষয়ে যদি
পরিসংখ্যান থাকে তবে এর গতি কমানো ও ব্রেকিং সিস্টেম উন্নয়ন করে লাইসেন্স দিয়ে রাস্তায়
চালানো যেতে পারে। গ্রামের রাস্তায়
হাতে গোনা কদাচিৎ দুই একটি পায়ে চালিত রিক্সা দেখা যায়। এছাড়া অধিকাংশই ব্যাটারি চালিত রিক্সা। আমি গ্রামের রিক্সা ওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, পায়ে
চালিত রিক্সা ব্যাটারি ও মটর রিক্সা থেকে কম বিনিয়োগ করে ব্যবহার করা যায় তদুপরি ব্যাটারি
চালিত রিক্সার বিদ্যুৎ বিল আছে। তবে কিভাবে
ব্যাটারি রিক্সা লাভজনক। সে উত্তর দিয়েছিল, এ যুগে
মানুষ পায়ে চালিত রিক্সায় আস্তে আস্তে যাতায়ত করতে চায় না। দ্রুততায় অভ্যস্ত হয়েছে। ব্যাটারি রিক্সায় শারীরিক পরিশ্রম কম হওয়ায় পায়ে চালিত রিক্সা
থেকে দ্বিগুণ ও বেশী দূরে খেপ মারা যায় তাই আয় বেশী। আমাদের দেশের বিদ্যুতের টান পড়ায় আমরা একে পরিবেশ বান্ধব না বলে
এর অনেক দোষ ত্রুটি বের করে অনুপযোগী মনে করে বিরূপ অবস্থার মধ্যে রাখছি। বাস্তবতা হল সাধারণ মানুষ এ ধরনের বাহনে এত অভ্যস্ত হয়েছে এটাকে
দূর করা বিশাল চ্যালেঞ্জ। এগুলোকে প্রতিস্থাপন
করার জন্য বিদেশ থেকে অনেক টাকা খরচ করে অটো ট্যাক্সি বা ট্যাক্সি ক্যাব আমদানি করতে
হবে। বাংলাদেশের মানুষ এ মুহূর্তে এতটা সামর্থ্যের
মধ্যে আসেনি। এক সময় সামর্থ্য
হলে ঘরে ঘরে প্রাইভেট কার থাকবে ও রাস্তায় ট্যাক্সি ক্যাব থাকবে। সেই দিনগুলো আর বেশী দূরে নয়। এখন আমাদের প্রয়োজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, রিক্সা
ও ভ্যান গুলো গভেষনা করে এর নিরাপত্তা ও ব্রেকিং সিস্টেম জোরদার করা। সাধারণ রিক্সা ও ভ্যানে প্রয়োজনে চালকদের মটর সাইকেলের মত হেলমেট
পরিধান করানো যেতে পারে। যাত্রীদের সীট
বেল্ট থাকতে পারে। সোলার প্যানেলের
মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ করানো যেতে পারে। হয়তবা একযুগ
পরে এদেশের অনেক কারই ইলেকট্রিক বা হাইব্রিড হয়ে যাবে। এ সময় নিরীহ ও উদ্যমী মানুষদের গতি নিয়ে আসা এই বাহনগুলো অপসারণের
চিন্তা না করে আমরা দেশী প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আরো উন্নত করতে পারি। আমরা সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব যানবাহনগুলো আরো উন্নত করে নিরাপদ
করার পদক্ষেপ নিতে পারি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে
এগুলোকে ট্যাক্সের আওতায় এনে সেই টাকা বিনিয়োগে রাস্তা বর্ধিত করে আলাদা রিক্সার লেন
করা যেতে যেতে পারে। আর এর জন্য
প্রয়োজন আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তন করা। চায়না নির্ভর
না হয়ে আমরা দেশীয় প্রযুক্তিতে অটোরিকশার বডি, মটর ও ব্যাটারি তৈরি করে এ শিল্পটিকে
সম্পূর্ণ দেশীয় শিল্প হিসাবে উন্নয়ন করতে পারি। আমাদের প্রগতিশীল মনোভাব পাল্টে দিতে পারে আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি।