আজ
থেকে তিন/চার বছর আগে যখন সোলার সিস্টেমের প্রতি ওয়াটের দাম ১০০ টাকার উপরে ছিল।
তখন ধারনা করা হয়েছিল, যখন সোলারের
দাম ওয়াট প্রতি এক ডলারের নীচে চলে আসবে, তখন সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ
উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে।
তবে
সোলার প্যানেলের দাম কমলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন আশানুরুপ বাড়েনি।
এখন
দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র দিনের বেলা ব্যাটারি ব্যতীত সোলারের ইউনিট প্রতি খরচ ৬
টাকায় মধ্যে চলে এসেছে। অন্যদিকে ব্যাটারি ব্যাংক ব্যবহার করে রাতের জন্য সোলার
ব্যবহার করলে খরচ পড়বে প্রতি ইউনিট ১৮ টাকা। জেনারেটরের ১০০ কেভি থেকে ২ কেভি পর্যন্ত
বিভিন্ন ধরনের জেনারেটরের বিদ্যুৎ খরচ আনুমানিক কিলোওয়াট প্রতি ২৫ টাকা থেকে ৫০
টাকা পর্যন্ত। এ হিসাবগুলি আমি অংক কষে বের করেছি তার সাথে কমবেশী ২০% পাথর্ক্য
হতে পারে। ব্যাটারি ব্যাংক ব্যবহার করেও সোলারের খরচ এখনও জেনারেটরের সর্বনিন্ম
খরচ থেকেও কম। ব্যাটারি ব্যতীত দিনে সোলার সিস্টেম আমরা ব্যাপকভাবে ব্যাবহার করতে
পারি।
সারাদেশে
সমস্ত ইরিগেশন সিস্টেম ব্যাটারি ব্যাংক বিহীন সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে
ব্যবহার করা যায়। তবে যেহেতু সোলারের বিদ্যুৎ সূর্য কিরণের উপর নির্ভরশীল তাই
বিদ্যুতের পরিমাণ দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হবে সেহেতু ছোট ব্যাটারি ব্যাংক
প্রয়োজন হবে সোলারের পাওয়ার স্টেবিলাইজ করার জন্য। বাংলাদেশের আনুমানিক ৩০% এলাকায়
সেচে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। এতে প্রায় ৭০০-৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়
(তথ্য: www.iebeed.org)।
৭০%
এলাকা ধরা যাক ডিজেলের মাধ্যমে সেচের ব্যবহার হচ্ছে। আর দেশে সোলার ইরিগেশন
সিস্টেমের প্রজেক্টের সংখ্যা (মে ২০১৪ পর্যন্ত) এখনও একশত অতিক্রম করেনি। তবে অতি
শীঘ্রই সরকারের ১০,০০০
ডিজেল চালিত পাম্পকে সোলারে প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কিছু
প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সোলার ইরিগেশন সিস্টেমে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। কারণ
বিদ্যুতের বিল থেকে সোলার খরচ কমে গেছে। তবে ব্রাশলেছ ডিসি মটর(BLDC) ব্যবহার করলে কম বিদ্যুৎ খরচে আরও বেশী পানি তোলা যাবে।
বাংলাদেশে
১২ লক্ষ ডিজেল পাম্প ব্যবহ্রত হয়। যার জন্য ৮০কোটি লিটার ডিজেল ব্যবহ্রত হয়। যার
মূল্য ৫৪৪০ কোটি টাকা। এ তথ্য “MINISTRY
OF POWER, ENERGY AND MINERAL RESOURCES” এর ওয়েব সাইটে পাওয়া যাবে। আমরা
ধীরে ধীরে হয়ত বা ২০-২৫ বছরে সমস্ত ডিজেল পাম্প সৌর শক্তিতে রূপান্তর করতে পারব।
এতে ক্লিন এনার্জি ব্যবহারের পাশাপাশি আমরা আমদানিকৃত জ্বালানী সাশ্রয় করতে পারব।
অনেকসময় অনেক জায়গায় অস্থায়ী ভাবে পানি সেচের প্রয়োজন হতে পারে সে সমস্ত স্থানে
চাকা লাগানো ও টেনে আনা যায় সে ধরনের মোবাইল সোলারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বিদ্যুৎ
শক্তির বিশাল অংশ ব্যবহার হচ্ছে বৈদ্যুতিক মটরে। নতুন ব্রাশলেছ মটর আবিষ্কারে দেখা
গেছে কম বিদ্যুৎ খরচ করে বেশী কার্য ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। আমরা ভবিষ্যৎ এ ধরনের
সাধারণ মটর বাদ দিয়ে ব্রাশলেছ মটর ব্যবহার করতে পারলে আরও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে
পারব। সোলারে পাম্প চালালে বৈদ্যুতিক মটরের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সোলারের
এককালীন খরচটা অনেক বেশী। তবে একবার খরচটা করা গেলে আপনি ফল ভোগ করবেন দীর্ঘ ২০
বছরের জন্য। ২০ বছর অত্যন্ত কম মেনটেইন্যান্সে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে থাকবেন।
যুদ্ধের সময় কোন দেশের ছোট বড় সকল কোম্পানি যেমন সমরাস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত থাকে
তেমনি বর্তমান পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ এর ফসিল ফুয়েল শেষ হওয়ার আগে আগে ব্যাপকভাবে সোলার
এনার্জি ও উইন্ড এনার্জি ব্যবহারের প্রস্তুতির প্রয়োজন। ধারাবাহিক ভাবে সোলার
প্যানেলের মূল্য কমে যাওয়া প্রমাণ করছে সোলারের মাধ্যমে সৌর শক্তি ব্যবহারের
মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। সেইসাথে সোলার প্যানেলের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তবে মুল্য
কমার সাথে আনুপাতিক হারে ব্যবহার আরও বাড়তে থাকবে। আমাদের দেশে হয়ত আগামী এক/দুই
বছরের মধ্যে যদি ওয়াট প্রতি খরচ ১৫ টাকার উপরে উঠে তখন ব্যাপক আকারে সোলারের ব্যবহার
বৃদ্ধি পাবে। এখনও যদি সরকার বিদ্যুৎ এর ভর্তুকি তুলে দিয়ে ভূর্তকি বিহীন বিদ্যুৎ
বিল নির্ধারণ করে তবে তা মনে হয় ইউনিট প্রতি ১৫ টাকার নীচে থাকবে না। তখন ব্যাপক
হারে সোলারের ব্যবহার শুরু করবে কারণ সোলারে ব্যাটারি বিহীন খরচ মাত্র প্রতি ইউনিট
৬ টাকা। দেশের প্রয়োজনে বিদ্যুৎ এর ভর্তুকি তুলে দিয়ে বিদ্যুৎ বিল বাড়াতে হবে।
সোলার সামগ্রীর ট্যাক্স সম্পূর্ন মওকুফ করা প্রয়োজন এবং তা ক্রমাগতভাবে বহাল রাখতে
হবে। সেই সাথে সোলারের বিনিয়োগকারীদের সোলার সিষ্টেমের বিনিয়োগের সম পরিমাণ টাকার
ট্যাক্স মওকুফ করে দিলে সোলারের ব্যাপক বিস্তৃতি হবে।
আসুন
পরিবেশের প্রয়োজনে ও দেশের প্রয়োজনে আমরা সকলে সোলারে বিনিয়োগ ও ব্যবহার বৃদ্ধি
করি।