বাংলাদেশের
ঢাকার সুন্দর সুন্দর অট্টালিকার নীচে এখনও একচালা ও পলিথিনের ছোট ছোট ঘরের বস্তি
রয়েছে। এই বস্তির ঘরগুলো কিন্তু বিনামূল্যের আবাসন নয়। এগুলো ২০১৭ সালের হিসাবে
কখনও পাঁচশত টাকা, কখনও হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া
দিয়ে শ্রমজীবী মানুষ থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে এরা আসে রাজধানীতে কাজ করতে।
বাংলাদেশের সরকার ঢাকার বস্তিবাসীদের জন্য হাজার হাজার আবাসন পরিকল্পনা গ্রহণ
করলেও তা মূলত মধ্যবিত্তদের মাঝেই চলে যাবে। বস্তিবাসীরা ক্রমান্বয়ে আর্থিক উন্নতি
করে করে ধীরে ধীরে বস্তি ছেড়ে না আসা পর্যন্ত অনেকেরই ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।
সময়ে
সময়ে বস্তি উচ্ছেদের ব্যাপক অভিযানে বস্তিগুলো শহরের প্রান্তে চলে আসতে থাকে। শ্রমজীবী মানুষ হেটে বা গাড়ীতে করে রিক্সা চালানো, মজুরের
কাজ, শ্রমিকের কাজ ইত্যাদির জন্য শহরের উপকণ্ঠ হতে মুল শহরে
আসা যাওয়া করতে হয়। এতে গাড়ীর ব্যবহার বাড়ে। শ্রমিকের শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হয়। আমরা
যদি সরকারী কোন ক্যাম্পাসের দিকে দেখি সেখানে দেখা যাবে সুইপার, ক্লার্ক ও কর্মকর্তা সবাই একই ক্যাম্পাসে আলাদা আলাদা মান অনুযায়ী দালানে
থাকে। সকল পেশার লোক নিয়েই নাগরিক সভ্যতা। এই সভ্যতাকে রক্ষা করতে গিয়ে বস্তী বাসী
ও শ্রমজীবীদের শহরের মাঝেই রাখতে হবে। দূরে বের করলে হবে না। শ্রমজীবীদের শহরে
রাখলে ভাল সেবা পাওয়া যাবে। যাতায়তের কারণে তাদের অর্থের অপচয় কমবে। সময় বাঁচবে।
আরও অধিক কাজে তাদের উৎসাহ আসবে। বস্তিবাসীর আবাসনে ড্রইং রুম, ডাইনিং রুম, এটাচ বাথরুম টাইপ না করে এদের জন্য
বহুতল ভবনে একটা খাট পাতার স্থান, কমন টয়লেটে ও বাথরুম সাথে
কমন রান্নার ব্যবস্থা করলে বস্তির মানুষকে কম খরচে বস্তি হতে উন্নত পরিবেশ দেয়া
সম্ভব। এটা করা যাবে উন্নত এলাকার মধ্যেই। আইডিয়া হল আমরা ১০০০ ফুট গুণন ১০০০ ফুট
অর্থাৎ ১০ লক্ষ বর্গফুট এলাকায় যদি প্রত্যেকের জন্য ৫০ বর্গফুট এলাকা দেই তবে ২০
হাজার লোক রাখা সম্ভব। তবে এই একই পরিমাণ লোক আমরা ১০০ ফুট গুন ১০০০ ফুট করে ১
লক্ষ বর্গফুটের ১০ তলা করে আমরা ২০ হাজার লোককে রাখতে পারি। এতে আমাদের জমি
ব্যবহার হচ্ছে ১০ ভাগের এক ভাগ। আইডিয়াটা হল টিন, বাঁশ ও আধা
পাকা সিমেন্টে তৈরি বস্তিটাকে বহুতলে নিয়ে আসা। যদি লিফট লাগানো সমস্যা হয় তবে ৬
তলা পর্যন্ত হতে পরে। এতেও পাঁচগুণ জমির ব্যবহার কমতে পারে।
লঞ্চ
বা ইস্টিমারের ডেকে বিস্তীর্ণ খোলা জায়গা রাখা থাকে সেখানে যে যার মত চাদর বিছিয়ে
বালিশ নিয়ে শুয়ে পরে।
বহুতল
বস্তির ধারনাটা অনেকটা এরূপ। দালানের প্রতি তালার দুইপাশে কমন বাথরুম। নারী ও
পুরুষ আলাদা বাথরুম। একদিকে কমন রান্নাঘর। তবে মাঝের স্থানটি সম্পূর্ণ খালী না
রেখে প্রতি দুইজনের জন্য ১০ বাই ১০ ফুট কুঠুরি করে দেয়া হবে। প্রতিটি কুঠুরিতে
একটি ডাবল খাট বা দুইটি সিঙ্গেল খাট থাকার মত জায়গা থাকবে। প্রতিটি কুঠুরির
দুইপাশে সিমেন্টের তাক থাকতে পারে। প্রতি ১০ বাই ১০ ফুট রুমের ভাড়া নির্ধারণ করা
যেতে পারে প্রতি বর্গফুট ১০ টাকা। রুম
শেয়ার করলে মাসে ৫০০ টাকা। একজন দিন মজুর প্রতিদিন ৩০০ টাকা আয় করলে মাসে ৯০০০
টাকা। এর মধ্যে ১০০০ টাকা রুম ভাড়া দিলে তাদের জন্য আবাসনের আইডিয়াটা খারাপ হবে
না।
পুরো
দালানের নীচের তলা কমন প্লেস থাকবে। সেখানে ধুপি, নাপিত,
দর্জি, হোটেল ও ষ্টেশনারী দোকান থাকবে। রিক্সা,
টমটম ও বেবি ট্যাক্সি রাখার স্পেস থাকবে। ছোট বাচ্চাদের জন্য নীচে
প্রাইমারী স্কুল থাকবে।
ব্যবসায়ী
মডেল হিসাবে আইডিয়াটা কেমন হতে পারে? আমার মন হয়
মোটেই খারাপ নয়। প্রথমত: এই বহুতল বস্তিগুলোর উন্নয়ন হবে বস্তির আয়ের টাকায়। তা
হতে পারে আরসিসি পিলারের উপর ছয়টি ছাদ। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট কুঠুরিগুলো আস্তর ছাড়াই
শুধু ইটের গাঁথুনিতে করা হবে। ইটের ঘরেই বস্তিবাসীরা উঠে পড়বে। প্রতিমাসে তাদের মাসিক
ভাড়া দিয়ে উন্নয়ন চলতে থাকবে। ঢাকায় ১ কোটি টাকার ২৫০০ স্কয়ার ফিটের ফ্লাট যেখানে
বাড়ীওয়ালাদের পঁচিশ ও ত্রিশ হাজার টাকায় ভাড়া দিতে সমস্যা সেখানে এক কোটি টাকা খরচ
করে ২০হাজার বর্গ ফুট ছাদ ও ইটের দেয়াল নির্ধিদ্ধায় করা সম্ভব। এতে প্রতি বর্গফুটে
১০ টাকা ভাড়া হিসাবে প্রতি মাসে দুই লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। অথচ এক কোটি টাকা
উন্নত ফ্লাটে আয় মাত্র ২৫/৩০ হাজার টাকা। দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়িক দিক দিয়ে এই ধরনের
প্রজেক্ট দুর্দান্ত ভাবে লাভজনক।
বহুতল
বস্তিতে মূলত পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা, রান্নার
ব্যবস্থা ও থাকার জন্য খাট পাতার ব্যবস্থাদি সাধারণ বস্তি হতে একই ভাড়ায় ভাল হবে।
সাধারণ বস্তির চারিদিকে নোংরা নর্দমা, ময়লা, আবর্জনা ইত্যাদি এতই অস্বাস্থ্যকর থাকে সে তুলনায় বহুতল বস্তী হবে অনেক
বেশী স্বাস্থ্য সম্পন্ন। ভাড়া একই। অবস্থান হবে শহরের মধ্যে। শ্রমজীবী মানুষের
যাতায়ত খরচ কম হবে। এ ধরনের প্রজেক্টে এনজিওরা এগিয়ে আসলে খারাপ হবে না।
বহুতল
বস্তীর মানুষদের শহরের অন্য দালান থেকে যেন অবলোকন করা না যায় সেজন্য সম্পূর্ণ
দালানটি মৌচাকের বাসার মত খোপ খোপ ব্লক দিয়ে বাহিরের দিক থেকে ঢাকা থাকবে। ভিতরের
কার্যক্রম দেখা যাবে না। এতে আলো ও বাতাস ভরপুর থাকবে কিন্তু প্রাইভেসীর কোন
সমস্যা থাকবে না।
আমি
আমার অনেক দিনের একটি আইডিয়া শ্রমজীবী বস্তির মানুষের জন্য তুলে ধরলাম। তবে ছাদ
পিলারের এই কাঠামো বস্তী বাসীর জন্য তৈরি করে সময়ের বির্বতনে এই আয়তনের ছাদগুলো
মডিফাই করে অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেও রূপান্তর করা যাবে। কারণ এই ছাদগুলো ও
কাঠামোটা টাইলস, মোজাইক ও আস্তর না করে রাখা থাকবে যাতে
ফ্লোরগুলো সহজেই মডিফাই করা যাবে। শ্রমজীবী মানুষের জন্য এই মডেলটিতে বিত্তবান ও
এনজিওরা এগিয়ে আসলে আর্থিক লাভের পাশাপাশি মানব কল্যাণও হবে।