বাংলাদেশের মানুষের জমি কম। সিংগাপুর ও হংকং এর ঘনবসতির
কাছাকাছি বাংলাদেশের অবস্থান। জার্মানি, জাপান, চীন ও ভারত সোলার বিদ্যুৎ তৈরিতে মাইল ফলক
সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশের সরকার শীঘ্রই সৌর শক্তি হতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
উৎপাদন করবে বলে আলোচনা শোনা যাচ্ছে। সরকার এ লক্ষ্যে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে।
সোলার সিস্টেম স্থাপনের জন্য জমি সংকট। রুফটপ সোলার সিস্টেম থেকে রুফটপ গার্ডেন
অনেক বেশী ভাল। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। ছাদে বাগান পরিবারের স্বাস্থ্য
উন্নয়নে সরাসরি কাজে লাগে। তাই সিমেন্টের ছাদে সোলার প্যানেল নয় বরং রুফটপ গার্ডেন
বেশী প্রয়োজন। ছাদে সোলার বসালে তার রক্ষণাবেক্ষণ আরেক ঝামেলা। তার চেয়ে রুফটপ
গার্ডেনের কাজে ব্যবহার করে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ছাদের মধ্যে টিনের ছাদ বা স্লোপ ছাদ অবশ্যই সোলার বিদ্যুৎ
উৎপাদনে অনেক কাজে লাগাতে হবে। যে ছাদ বাগানে ব্যবহার করা যাবে না তা সোলার
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। ছাদ বাগান অথবা সোলার দুইটির কোন না কোন কাজে
আমাদের ছাদগুলো বা চালগুলো ব্যবহার করতে পারলেই আমাদের ঘন বসতির দেশের জমির ক্রম
বর্ধমান সংকট আমরা নিরসন করতে পারব। জনসংখ্যাও কমানোর পদক্ষেপ জরুরী।
বাংলাদেশে লোকের জমি অনেক কম তাহলে আমাদের সোলার লাগানোর
স্থান কোথায়। আমাদের এখনো জমি নষ্ট না করে আমরা সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি।
আমাদের দেশের যত স্থান দিয়ে রেল লাইন চলে গেছে সমস্ত রেল লাইনের উপর দিয়ে আমরা
সোলার প্যানেল বসাতে পারি। সড়কের উপর বসানো যাবে না কারণ সড়কের ভিতর দিয়ে চলাচল রত
গাড়ীকে নিদ্দিষ্ট উচ্চতা সাধারণত বেধে দেয়া হয় না। তাই সড়কের উপর আপাতত সোলার
প্যানেল নয়। ট্রেনের উচ্চতা কম। সাধারণ ট্রেনের ছাদের উপরে আমাদের দেশে কিছু
যাত্রী সাধারণত যাতায়ত করে । এ সকল যাত্রীকে ট্রেনের উপর ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়ত করতে
না দেয়াই ভাল। তথাপিও নিদ্দিষ্ট উচ্চতার উপর আমরা সোলার প্যানেল বসানো যাবে।
আমাদের দেশে সাধারণত সকল জমিতে কমপক্ষে একটি বা একাধিক চাষাবাদ সকল সময় হচ্ছে। সোলার
প্যানেল বসানোর জন্য অনাবাদী জমি পাওয়া অত্যন্ত দূরুহ ব্যাপার। তাই আমাদের জমি খোজ
করতে হবে। বাড়ীর ছাদে, ট্রেনের
লাইনের উপর, খালের উপর, অনাবাদী চর
এলাকা ও অল্প পানিযুক্ত উপকুল এলাকা। বিলের নিচু এলাকায় পিলার বসিয়ে সোলার লাগানো
যাবে। বাড়ীর ছাদে আমরা রুফটপ গার্ডেন করব। তাই রেললাইনের উপর অথবা ক্যানেল টপ
আমাদের জন্য জমি নষ্ট না করে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাল অপশন।
ব্রিটেনের লন্ডনে নদীর উপর একটি রেলের ব্রিজ সোলার প্যানেল
দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে আর তাতে নিকটবর্তী রেল স্টেশনের ৫০% বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা
যাচ্ছে। বেলজিয়ামের জংগলের মধ্য দিয়ে দুই মাইলের একটি টানেলের উপর বনের গাছ
সাধারণত ভেঙ্গে পরত ও প্রায়শই রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হত। এ কারণে সেদেশের রেলের
কর্তৃপক্ষ দুই মাইল টানেল ৪৪০০০ সোলার প্যানেল দিয়ে ঢেকে দেয়। এতে যে বিদ্যুৎ
উৎপাদন হয় তা দ্বারা নিকটবর্তী এলাকার বিদ্যুৎ এর চাহিদা পূরণ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র
ও যুক্তরাজ্য তাদের মনো রেল লাইনের উপরের ছাউনি সোলার প্যানেল দ্বারা তৈরি করার
পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এতে করে তাদের মনো ইলেক্ট্রনিক ট্রেন চালানোর বিদ্যুৎ চলে আসবে
সোলার প্যানেল থেকে। অনেক দেশ আবার পূর্ণ সোলার প্যানেল আচ্ছাদন না করে দুইপাশে বা
একপাশে বেড়ার মত করে সোলার প্যানেল লাগানোর ব্যবস্থা করেছে।
বাংলাদেশে আমাদের যে বিস্তর রেললাইন রয়েছে তা আমাদের মত ঘন
বসতির দেশে সোলারের কাজে ব্যবহার করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একপাশে অথবা
দুইপাশে পিলার বসিয়ে সোলার প্যানেল দিয়ে ক্রমান্বয়ে রেল স্টেশনগুলো ঢাকতে পারি।
রেল স্টেশনগুলোর বিদ্যুতের চাহিদা আমরা স্টেশনের উপরের প্যানেল ও আশে পাশে প্রয়োজন
মোতাবেক প্যানেল বসিয়ে পূরণ করতে পারি। প্রথম ধাপে আমরা ছোট ছোট রেল স্টেশনগুলো সোলার
প্যানেল দিয়ে ঢেকে আমরা পাইলট প্রজেক্ট করতে পারি। তারপর মাঝারী মাপের স্টেশনগুলো
সৌর বিদ্যুতের আওতায় আসতে পারে। পরে বড় বড় স্টেশনগুলো সোলার প্যানেলে ঢাকা যাবে।
যেসব বিদ্যুৎ বিহীন অঞ্চল দিয়ে রেললাইন চলে গেছে সেসকল এলাকার রেললাইনের উপর ছাউনি
আকারে সোলার প্যানেল লাগিয়ে বিদ্যুৎ বিহীন এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ দেয়া যেতে পারে।
এভাবে গোটা রেললাইনকে সোলার প্যানেলের ছাদ দিয়ে ঢেকে দেয়া যায়। সাধারণ প্রতি
কিলোমিটারে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে আমার সম্পূর্ণ দেশে ইউকিপিডিয়ার
তথ্য মোতাবেক ৪৪৪৩ কিলোমিটার রেল লাইন ও ৪৪৪ রেলস্টেশনের উপর আনুমানিক ৫০০০
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। যা কিনা বাংলাদেশে ২০২১ সালে ২১০০০ মেগাওয়াট
লক্ষ্যমাত্রার প্রায় চার ভাগের একভাগ হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সূত্র মতে তাদের ৩১ হাজার ৮৬০ একর জমি
রয়েছে। যদি রেলওয়ের জমি সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যায় তাতে জায়গা
ভাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মৃতপ্রায় রেলওয়েকে সবল করা যাবে। রেললাইনের উপর সোলারের মেগা
প্রজেক্ট ১০ মেগাওয়াট করে ভাগ করে করে ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া যেতে পারে।
এতে গ্রিন পাওয়ার ব্যবসায় আরো অনেক ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসবে ও গ্রিন এনার্জির ব্যবসা
সম্প্রসারিত হবে। সোলার প্যানেলের নীচে বিশেষভাবে ব্যবস্থা করে নিলে রেইন ওয়াটার
হারবেস্টিং করা যাবে ও তা রেল রাস্তার নিকটবর্তী মানুষের জন্য সুপেয় পানির
ব্যবস্থা হতে পারে।
রেলে যাত্রীরা কি সুবিধা পাবে এ আলোচনায় আসা যাক। প্রথমত:
ট্রেন যাত্রীরা প্রখর রোদের ও গরমের থেকে রক্ষা পাবে। ট্রেন রোদে কম উত্তপ্ত হওয়ার
কারণে ট্রেনের এসি কম্পার্টমেন্ট ও অন্যান্য কম্পার্টমেন্টে কম বিদ্যুৎ খরচ হবে।
গাছ পালা ভেঙ্গে ট্রেনলাইন ব্লক হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
তবে সবুজ এনার্জি ব্যবহারে ট্রেনলাইনের ব্যবহার হবে পৃথিবীর
অগ্রগামী পদক্ষেপের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। রেললাইনের উপর সোলার প্যানেল
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে জমি সংরক্ষণ ও সবুজ এনার্জি
ব্যবহারে যুগান্তকারী ও প্রগতিশীল দেশ হিসাবে মর্যাদার আসনে দাঁড়াবে। আমরা সকলে
বাংলাদেশের সবুজ শক্তির বিপ্লবীয় দিনগুলো দেখার আশায় থাকলাম।