Pages

Wednesday, July 30, 2014

ব্যাটারী চালিত রিক্সা হউক পরিবেশ বান্ধব

বাংলাদেশে যখন প্রথম ব্যাটারি চালিত রিক্সা চায়না থেকে আমদানি করা হয় তখন একটা প্রচারণা আমার খুব মনে আছে। তা হল ব্যাটারি চালিত রিক্সা পরিবেশ বান্ধব কারণ এটা ব্যাটারিতে চলে। পেট্রোল বা ডিজেল গাড়ীর মত কার্বন নি:সরন করে বায়ু দূষণ করছে না। কিন্তু তখনও একটি প্রশ্ন ব্যাপকভাবে মাথা চড়া দেয়নি। যা আজ অনেক অনেক বেশী মাথাচাড়া দিচ্ছে আর তা হল ব্যাটারি চার্জ করতে বিদ্যুতের প্রয়োজন আর বিদ্যুৎ তৈরি করতে পুড়ানো হচ্ছে কয়লা, গ্যাস ও তৈল। তাই পরোক্ষভাবে আমরা রিক্সার ব্যাটারি চার্জ করতে ঠিকই কার্বন দূষণ করছি। জ্বালানী সরাসরি জ্বালানো থেকে যদি বিদ্যুতে রূপান্তর করে তা আবার ব্যাটারি চার্জিং করে সে ব্যাটারির শক্তি ব্যবহার করলে আরো বেশী জ্বালানীর অপচয় হয়। ব্যাটারির চার্জিং সার্কিট তাপ উৎপাদন করে মূলত বেশ খানিকটা বিদ্যুতের অপচয় করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে সস্তায় বিদ্যুৎ তৈরি সম্ভব হয়নি। জলবিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎ, পারমানবিক বিদ্যুৎ বা কয়লা থেকে সস্তায় বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারলে তবে তা রিক্সার ব্যাটারি চার্জ করলে সাশ্রয় হত। এখন উন্নত দেশে ব্যাপকভাবে ইলেকট্রিক কার বা হাইব্রিড কার তৈরি শুরু হয়েছে। এসব কার চার্জ করতে বিদ্যুতের প্রয়োজন। এ সমস্যার একটা ভাল সমাধানে এগিয়ে এসেছে তারা। সকালে যখন বাসা থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ী নিয়ে অফিসে আসে তখন গাড়ীতে তেমনই চার্জ বিদ্যমান থাকে যাতে নির্বিঘ্নে অফিসে যেতে পারে। অফিসে এসে সবাই নিজ নিজ গাড়ীগুলো সোলার প্যানেলের তৈরি ছাতা টাইপ / ছাউনি সদৃশ শেডের নীচে রাখে আর সেই শেডগুলো সোলার প্যানেলে তৈরি। সেই সব সোলার প্যানেল থেকে গাড়ীর চার্জিং এর সংযোগ দিয়ে স্বীয় অফিসের কাজে মনোনিবেশ করে। অতঃপর ৬ঘন্টা অফিস শেষে যখন বাসার পথে ফেরত আসার জন্য গাড়ীতে উঠে তখন গাড়ী থাকে সম্পূর্ণ চার্জড। যা কিনা সারাদিনের কার্যক্রম শেষে পরের দিন অফিসে আসার মত চার্জ থেকে যায়। পরের দিন অফিসে গিয়ে পুনরায় চার্জিং । এ ধরনের চার্জিং আর্বতে চলে বৈদ্যুতিক গাড়ীর ব্যবহার।
ব্যাটারি চালিত গাড়ী বা রিক্সা যদি তার ব্যাটারি যে কোন নবায়ন যোগ্য বিদ্যুৎ  উৎস থেকে চার্জ করতে পারলেই আমরা সে সমস্ত বাহনগুলোকে সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব হিসাবে চিন্তিত করতে পারি। বাংলাদেশে আমরা ব্যাটারি চালিত রিক্সা নিয়ে বেশ উৎবিঘ্ন কারণ এ ধরনের রিক্সা আমাদের কয়েকটি সমস্যার জন্য দায়ী। প্রথমত আমাদের ভর্তুকি দেয়া বিদ্যুৎ এর ঘাটতি সৃষ্টি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। দ্বিতীয়ত আমাদের সীমিত রাস্তার প্রতিনিয়ত ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি করছে।
মজার বিষয় হল, শহরে চলমান কিছু ব্যাটারি চালিত রিক্সা বা বোরাক প্রথম যখন আমদানি করা হয় তখন রিক্সার মতন পৌরসভা থেকে লাইসেন্স দেয়া হত। পরবর্তীতে যখন সরকার টের পেল এ ধরনের রিক্সা বিদ্যুতের বারোটা বাজাচ্ছে তখন সরকারের তরফ থেকে অনুমতি দেয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তাতে কোণ লাভ হয়নি। বরং পৌরসভা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভুয়া কাগজ তৈরি করে বিভিন্ন দালাল ও দূনীতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গকে ম্যানেজ করে দিনকে দিন বোরাক রাস্তায় গিজ গিজ করছে। সস্তা বাহন হিসাবে সকলের কাছে বেশ জনপ্রিয়। আমরা যারা সরকারী কর্মকর্তা ছুটিতে যখন সরকারী বাহন মুক্ত থাকি অথবা আর্থিক বিবেচনায় ব্যক্তিগত বাহন ব্যবহার হতে সাময়িক বিরতি দেই তাদেরও মাঝে মাঝে এসব বাহনে সপরিবারে উঠতে হয়। তখন মন্দ লাগে না। বিশেষ করে আমার তিন সন্তান, কাজের লোক, স্ত্রী সমেত আমার এ ধরনের বাহনে দুই রিক্সার বদলে একটি বোরাকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারি।
আমাদের দেশের সরকার এ ধরনের বাহনগুলি বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য তুলে দিতে চায়। তাই লাইসেন্স প্রদান বন্ধ নবায়ন বন্ধ। এতে কি তেমন লাভ হচ্ছে:
মোটেই না। বোরাক তো বন্ধ হচ্ছে না বরং এখন সাধারণ রিক্সায়ও ব্যাটারি আর মটর হরদম ব্যবহার হচ্ছে। আমার মনে হয় আর পাঁচ বছর পর কায়িক ভাবে টানা আর রিক্সার দেখা মিলবে না। এই যদি হয় ভবিষ্যৎ তবে দেরী না করে দ্রুত ব্যাটারি রিক্সার আরএন্ডডি করে সেফটি ফ্যাক্টর নিশ্চিত করে লাইসেন্স প্রদান করা অতি প্রয়োজন। লাইসেন্সের শর্ত হিসাবে থাকবে এ ধরনের রিক্সায় সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ থেকে চার্জ না করে সৌরশক্তি বা নিজ ব্যবস্থাপনায় জেনারেটর থেকে চার্জ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
আমার ছোটবেলায় যখন মিশুক চালু হয় মনে আছে সে সময় প্রত্রিয়ায় পড়ে ছিলাম। রিক্সা মানব সভ্যতার অত্যন্ত বর্বরতম দিক। মানুষ মানুষকে কায়িক পরিশ্রমে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তখন মিশুকের মত ছোট ইঞ্জিনের গাড়ীগুলো বেশ খানিকটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কায়িক পরিশ্রমে চালিত জ্বালানী বিহীন পরিবেশ বান্ধব রিক্সা মিশুক দ্বারা প্রতিস্থাপনের পায়তারা চলছিল। কিন্তু পেট্রোলের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি ও উচ্চ মূল্যের ভাড়ার কারণে মিশুক গাড়ী তেমন বিস্তৃতি লাভ করেনি। যার স্থানটি পরবর্তীতে সিএনজি ট্যাক্সি দখল করে নেয় ।
এখন বোরাক গাড়ী বা সাধারণ রিক্সায় মটর লাগানো বাহন বন্ধ করার পদক্ষেপ অনেকটা বাস্তবতা বিবর্জিত পদক্ষেপ। আবার লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন লাইসেন্স না দিয়ে দালাল ও অন্যান্য অনেককে অবৈধ আয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আমাদের সকলের উচিত ব্যাটারি চালিত রিক্সাকে বিদ্যুৎ আর রাস্তার সংকটের জন্য তুলে না দিয়ে বরং এর পিছনে আরএন্ডডি করা। আর আরএন্ডডির টাকা কিন্তু সরকারের নিজের দেয়ার প্রয়োজন হবে না। রিক্সার চালকরাই দিবে। সরকারের প্রয়োজন এদেরকে দালাল মুক্ত করে লাইসেন্স ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা আদায় করা। দেশে যদি একলক্ষ ব্যাটারি চালিত রিক্সা থাকে এবং সরকার যদি প্রতি রিক্সা থেকে প্রতি বছর ৫০০০ টাকা করে আদায় করে তবে এক লক্ষ রিক্সা থেকে ৫০ কোটি টাকা আদায় হবে আর ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ১ কোটি ওয়াট বা ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ  উৎপাদন সম্ভব। এভাবে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে সরকার ঠিকই ব্যাটারি চালিত রিক্সার বাড়তি বিদ্যুৎ সৌরশক্তি থেকে উৎপাদন করে ফেলতে পারত। তখন বিদ্যুৎ নিয়ে এদের পিছে না লাগলেও চলত।
ব্যাটারির রিক্সা চালকদের বাহন বন্ধ না করে এদের টাকা দিয়ে সরকার তাদের জন্য পরিবেশ বান্ধব সৌর বিদ্যুৎ তৈরি করে ফেলতে পারত। বেশ দেরীতে হলেও সরকার ব্যাটারি রিক্সার চাজিং পয়েন্ট পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনে তৈরি করার চেষ্টা করছে। এটা একটা ভাল উদ্যোগ সন্দেহ নাই। কিন্তু ব্যাটারি রিক্সাদের চার্জের জন্য পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। কারণ দিনে চার্জ দিলে এরা রোজগার করবে কখন? তবে যদি এদের ব্যাটারি দ্রুত বদল করার সিস্টেম করা যায় তবে হয়ত দিনের বেলা চার্জিং জনপ্রিয় হবে। অন্যথায় এদের লাইসেন্স ফি বাবদ অধিক টাকা নিয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ তৈরিতে ব্যবহারই হবে সহজ পন্থা।
আমি কুষ্টিয়ার ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকো কোম্পানিতে দেখলাম তারা ফর্ক লিফটার চালানোর জন্য বড় বড় রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যাবহার করে। এ সকল ব্যাটারি আলাদা চার্জ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ফর্ক লিফটারে লাগিয়ে  ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের রিচার্জেবল ব্যাটারি কিন্তু রিক্সার জন্য তৈরি করা যায়। যা আলাদাভাবে থাকবে।  আলাদাভাবে চার্জ দেয়া হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী রিক্সাতে ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ডিসচার্জ ব্যাটারি যখন তখন ব্যবহার করা যাবে। ব্যাটারি রিক্সা সোলার চার্জিং পয়েন্টে এসে তার ব্যাটারি বদলিয়ে নিবে। এভাবে সোলার চার্জিং পয়েন্ট ব্যবহার বাস্তব সম্মত হবে। জাপান সম্প্রতি ডুয়েল কার্বন ব্যাটারি আবিষ্কার করেছে যা কিনা কমদামী। ওজন কম ও দ্রুত চার্জ হয়। এ ব্যাটারিগুলো ২০ মিনিটে চার্জ সম্ভব। তবে ব্যাটারি রিক্সার ক্ষেত্রে বিশ মিনিট নয় ১ বা ২ ঘণ্টায় চার্জ হলেও তা সাশ্রয়ী হবে। কারণ দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে ব্যাটারির রিক্সা চালকরা তাদের রিক্সার ব্যাটারি নির্দিষ্ট সোলার পয়েন্ট থেকে চার্জ করতে পারবে।
          আমি বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে আশা করি আপনাদের বুঝাতে পেরেছি ব্যাটারি চালিত রিক্সা বন্ধ করার মত জ্বালা-হুয়া উদ্যোগ না নিয়ে বরং রিক্সা চালকের কাছ থেকে বেশী বেশী রাজস্ব আদায় করে বেশী বিদ্যুৎ উৎপাদন করুন, রাস্তা প্রশস্ত করুন এবং ব্যাটারির বাহনের উন্নয়নে বেশী বেশী করে আরএন্ডডি করুন। আর এ ধরনের ব্যাটারির রিক্সা তুলতে পারলে লাভবান হবে আমাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত কারণ তারা বেশী বেশী করে সিএনজি ট্যাক্সি রপ্তানি করে আমাদের দেশ ভরিয়ে দিবে।

          বর্তমানে ব্যাটারি রিক্সায় উন্নত প্রযুক্তির ব্রাশ লেছ (বিএলডিসি) মটর ব্যবহার করে। এ মটর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লো মেইন্টেণ্যান্স ও দীর্ঘস্থায়ী।  এসব মটর চায়না  এবং ভারতের তৈরি। প্রতিটি মটরে সিরিয়াল নম্বর আছে। মটরের এই সিরিয়াল নম্বর দিয়েও ব্যাটারি রিক্সার লাইসেন্স দেয়া সম্ভব। তাই সরকারের অতি দ্রুত ব্যাটারি রিক্সা লাইসেন্স এর কার্যক্রমে নিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি করে ব্যাটারির রিক্সা পরিবেশ বান্ধব করা, আরএন্ডডি করে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করলে অবশ্যই আমাদের ব্যাটারি চালিত রিক্সা আপদ না হয়ে সম্পদে পরিণত হবে।

Saturday, July 26, 2014

রিচার্জেবল ব্যাটারি কি পরিবেশ বান্ধব?

এক জোড়া রিচার্জেবল পেন্সিল ব্যাটারিকে যদি ১০০ বার চার্জ করা যায় তবে তা ১০০ জোড়া সাধারণ পেন্সিল ব্যাটারি ক্রয় করা থেকে আমাদের রক্ষা  করবে এতে আমাদের পরিবেশে ১০০ জোড়া সাধারণ পেন্সিল ব্যাটারি বর্জ্য থেকে রক্ষা পাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা ছোট ছোট পেন্সিল ব্যাটারি রিসাইক্যাল করি না। সাধারণত: এদের ভূমিতে বর্জ্যরুপে নিক্ষেপ করি। তাই একজোড়া রিচার্জেবল ব্যাটারি যদি ১০০ জোড়া ব্যাটারির বর্জ্য কমাতে পারে তবে রিচার্জেবল ব্যাটারিকে পরিবেশ বান্ধব খেতাব দেয়া যায়। রিচার্জেবল ব্যাটারি পরিবেশ বান্ধব আমার এ ধরনের একটা মজাদার আইডিয়া আসার কারণ হল আমি ইন্টারনেটে একটা মজার আর্টিক্যাল পরছিলাম। একজন এনজিও কর্মী আফ্রিকায় সাধারণ লোকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করছিলেন রিচার্জেবল ব্যাটারি বিতরণ করে। আর বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আফ্রিকানরা সবচেয়ে বেশী ছোট ছোট ড্রাই-সেল ব্যাটারি ব্যবহার করে। তিনি তাদের বলছিলেন, “তোমরা সাধারণ ব্যাটারি ব্যবহার না করে রির্চাজেবল ব্যাটারি ব্যবহার কর। এই ব্যাটারি সোলার প্যানেলে চার্জ কর আর তা টর্চ ও রেডিওতে ব্যবহার কর। এটা সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব
এই পরিবেশ বান্ধব বিষয়টিতে মনে একটু খটকা লাগতে পারে। কিন্তু পরিবেশ বান্ধব কথাটির তাৎপর্য খুঁজে পাই যেভাবে তা হল রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহারে নন রিচার্জেবল ব্যাটারি কম লাগছে। পরিবেশে কম নন রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার কমায় তার দ্বারা পরিবেশ কম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বেশী পরিমাণে ননরির্চাজেবল ব্যাটারি তৈরি করতে কার্বন ডাই অক্সাইড বহি:গমন হচ্ছে। এটা কিন্তু রোধ করা যাচ্ছে না। একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরিতে ব্যাটারির কোম্পানির দ্বারা বায়ু ও পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা ১০০টি  নন রিচার্জেবল ব্যাটারিতে ১০০ গুন বেশী ক্ষতি হচ্ছে। তাই ১০০টি নন রিচার্জেবল ব্যাটারির পরিবর্তে আমরা একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করব।

সাধারণত: যেসব ডিভাইস ও খেলনা ব্যাটারি বেশি বেশি ব্যবহার করে ও ব্যাটারি তাড়াতাড়ি শেষ করে সেসব ডিভাইস চালানোর জন্য আমাদের অনেকেই রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করছেন। রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহারে আর একটা বড় খরচের বিষয় রয়েছে আর তা হল চার্জার। সাহস করে একটি ভাল মানের চার্জার ক্রয় করতে পারেন। যা কিনা ৫০০ হতে হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে একটু খোজা খুঁজি করলে বেশ ভাল ব্যাটারি চার্জার ৫০০ টাকার অনেক কমেও পাওয়া যাবে। ইচ্ছে করলে সোলার থেকেও সহজে রিচার্জেবল ব্যাটারি চার্জ করা ব্যবস্থা যাবে। সেজন্য অল্প কিছু টাকা খরচ করে চার্জার তৈরি করে নিলেই চলবে।
আধুনিক যুগে সচ্ছল পরিবারে এক/দুইটি টেবিল ঘড়ি ও দেয়াল ঘড়ি আছেই। এ ধরনের ঘড়িতে সাধারণত AA সাইজ বা পেন্সিল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। ঘড়িগুলি খুব অল্প ব্যাটারির পাওয়ার খরচ করে। একটি পেন্সিল ব্যাটারি একবছর চলে যায় অনায়াসে। এখন আমি যদি প্রস্তাব করি, সাধারণ ব্যাটারির স্থানে  ঘড়িতে যদি রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করি তাহলে কেমন হবে। আমি জানি অনেকেই এ আইডিয়া মোটেই পছন্দ করবেন না। কারণ একটা সাধারণ ব্যাটারির দাম ১০ টাকা আর কমদামী একটি রিচার্জেবল ব্যাটারির দাম ৫০ টাকা। তাহলে পাঁচ বছরে পাঁচটি ব্যাটারির জন্য খরচ ৫০ টাকা আর একটি রিচার্জেবল ব্যাটারির জন্য খরচ ৫০ টাকা। তাহলে পাঁচ বছরের জন্য কেন রিচার্জেবল ব্যাটারি ক্রয় করব। আর পাঁচবছর রিচার্জেবল ব্যাটারি টিকবে কিনা সন্দেহ। বিষয়টি যাই হোক না কেন আমি কিন্তু পরিবেশ সচেতন হিসাবে আপনাকে সাধারণ ব্যাটারি অপেক্ষা রিচার্জেবল ব্যাটারি ক্রয় করার পরামর্শ দিব। কারণ পাঁচ বছরে পাঁচটি ব্যাটারি ব্যাবহার করে পাঁচটি বর্জ্য তৈরি করার চেয়ে পাঁচ বছরে রিচার্জেবল ব্যাটারির একটি বর্জ্য তৈরি করা যুক্তিসংগত। তেমনি ছয় মাস পর পর যদিও প্রয়োজন হয় তবুও পরিবেশের কথা চিন্তা করে রিমোট কন্ট্রোল গুলোতে রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারেন। যদি ঘড়ির ব্যাটারি পর্যন্ত আমরা রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করতে সম্মত হই তবে আমাদের কাছে এমন আর কোন ব্যাটারির ব্যবহার বাকী থাকল না যা কিনা রিচার্জেবল ব্যাটারি দ্বারা না চালানোর আর কোন কারণ থাকতে পারে। একটা রিচার্জেবল ব্যাটারি থাকলে আর ব্যাটারি চার্জিং এ আর কোন ঝামেলাই থাকবে না।
বর্তমানে বাজারে যে কোন সাইজের রিচার্জেবল ব্যাটারি পাওয়া যায়। নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারির আধিক্যই বেশী। রিচার্জেবল ব্যাটারি সাধারণত: ১.২ ভোল্টের হয়ে থাকে। তবে ১.৫ ভোল্টের ব্যাটারির স্থালেও সহজে ব্যবহার করা যায়। সাধারণ পেন্সিল ব্যাটারি ৫০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা থাকে। তবে রিচার্জেবল ব্যাটারি ৬০০,৮০০,১০০০,১২০০,১৫০০,১৮০০,২২০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা থাকে। ভাল ব্রান্ডে-ড কোম্পানি ছাড়া লেখা অনুযায়ী চার্জ থাকবে কিনা এটার ভিন্নতা দেখা যায়। আমি ইউকে থেকে আনা ৮০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারির সাথে বাংলাদেশ থেকে অনেক দামে একজোড়া ২২০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা ব্যাটারির তুলনা করে দেখলাম বাংলাদেশের ২২০০  মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা ব্যাটারি ইউকে এর ৮০০মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা ব্যাটারি থেকে অর্ধেক পরিমাণ সময় চার্জ ধারণ করে। তাই গায়ে কি লেখা তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রাকটিক্যালি কতক্ষণ চার্জ থাকে। রিচার্জেবল ব্যাটারি সাধারণত: ধরে নিতে পারি ১০০ বার চার্জ ও ডিসচার্জ করা যায়। আবার অনেক কোম্পানি ঘোষণা করে তাদের ব্যাটারি ১০০০ বার চার্জ ও ডিসচার্জ করা যায়। তবে আমার অভিজ্ঞতা হল রিচার্জেবল ব্যাটারি ক্রমাগত ব্যবহার করলে ব্যাটারি ভাল থাকে আর দীর্ঘদিন ব্যবহার না করে ফেলে রাখলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। আবার শুধু চার্জ করে রাখলে এবং ডিসচার্জ না করলে ব্যাটারির ফটো এফেক্ট হয়। তবে নিকেল ক্যাডমিয়াম ছাড়া অন্য ব্যাটারিতে ফটো এফেক্ট থাকবে না।
বাজারে এখন নিকেল ক্যাডমিয়াম, নিকেল মেটাল হাইড্রেড ও নিকেল জিংক ব্যাটারি পাওয়া যায়। এর মধ্যে নতুন চালু হওয়া নিকেল জিংক পরিবেশ বান্ধব, মূল্য কম, বেশী ভোল্ট পাওয়া যায়। তবে এর চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতায় ঘাটতি দেখা যায়। নিকেল জিংক ব্যাটারির চার্জিং এর প্রক্রিয়াটাও অন্য রিচার্জেবল ব্যাটারী থেকে আলাদা হবে


আমার এতক্ষনের আলোচনায় পরিবেশ বান্ধব রিচার্জেবল ব্যাটারির ব্যবহারে আপনারা আগ্রহ পাবেন। ইন্টারনেটে আরো অনেক তথ্য আপনারা জানতে পারবেন। আসুন আমরা আমাদের ডিভাইসের উপযোগী ও প্রয়োজন মোতাবেক রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার শুরু করি রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি।

Sunday, July 20, 2014

তৈরি করুন সমবায় ভিত্তিক সোলার ডিসি মাইক্রো গ্রিড সিস্টেম

সোলার প্যানেল বিজ্ঞানের এক বড় আবিষ্কার । ছোট ছোট ছবির ফ্রেমের মত প্যানেল রোদে রেখে দিচ্ছি আর বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। একেকটা যেন ছোট ছোট বিদ্যুৎ তৈরির কারখানা। বিষয়টা ছোট খাট ব্যাপার নয় বিশাল আবিষ্কার। আজ থেকে কয়েক যুগ আগে সোলার প্যানেল আবিষ্কার ও ব্যবহার হলেও অতি উচ্চ মূল্যের জন্য বিদ্যুতের বিকল্প হিসাবে সোলার প্যানেলকে বিবেচনা করা যায়নি। ২০১৪ সালে পদার্পণ করে মনে হচ্ছে সৌর বিদ্যুতই আমাদের ভবিষ্যতের ভরসা। কারণ মাটির নীচের গ্যাস, জীবাশ্ম তৈল শেষ হবেই,এটা সীমিত, যেহেতু পৃথিবীর পেটে এগুলো আছে আবার পৃথিবীর আকারও বেড়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাহলে আমাদের নাতিরা বা তাদের নাতিরা কিভাবে বাঁচবে। তার সমাধান ঠিকই হয়ে গেছে। এখন আর উত্তর খোজার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাওয়া ও প্রযুক্তির বাস্তবায়ন। বিদ্যুৎ আসবে সৌর, বায়ু আর পানি থেকে। গাড়ীর জন্য তৈল আর ইথানল আসবে গাছ থেকে। নবায়নযোগ্য জ্বালানীর জন্য প্রয়োজন ঘরে ঘরে সোলার সেল জুড়ে জুড়ে প্যানেলের দাম কমিয়ে আনা। কুটির শিল্পের ভিত্তিতে ছোট ছোট এলইডি লাইট তৈরি করা। ঘরে ঘরে চার্জ কন্ট্রোলার তৈরি। জেলা ও উপজেলায় ছোট আকারের ব্যাটারি উৎপাদন কারখানা চালু করা।
আমি প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময়ে ছোটবেলার একটি গল্প পড়েছিলাম কিভাবে কয়েকজন চাষি অল্প অল্প সঞ্চয় করে বিশাল কৃষি যন্ত্রপাতি, জায়গা জমি ও উন্নত জীবন যাত্রা অর্জন করেছিল। আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য সমবায় করে কিভাবে পুরো গ্রামের বিদ্যুৎ সমস্যার মোকাবিলা করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন গ্রামবাসীর সমবায় উদ্যোগ।
বিদ্যুৎ বিল গড়ে ধরে নিলাম ৩০০ টাকা। ৫০টি পরিবার গ্রিড সংযোগের বাইরে আছে। মনে করি সামর্থ্য-বান এক দুইজনের হোম সোলার সিস্টেম আছে বাকীদের কিছুই নেই। ভারতে আমাদের দেশের দশগুণ মানুষ আছে। তাদের নন-গ্রিড এলাকার মানুষও আমাদের দেশের দশগুণ। সেখানে সবাই যে হোম সোলার সিস্টেম লাগাতে পেরেছে তা কিন্তু নয়। ভারতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা তৈরি করেছে বৈদ্যুতিক বাতির চার্জ স্টেশন। একেক জন ৬০/১০০টি বাতি সৌর প্যানেলে বসিয়ে চার্জ দিয়ে দিচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কেরোসিন বাতির ব্যবহার দুর করা যাচ্ছে। আমাদের গ্রামের গঞ্জের এসিড ব্যাটারি চার্জিং দোকানের মত। প্রতিদিন দুই টাকা দিচ্ছে আর চার্জ করা সোলার লাইট ভাড়া নিয়ে সবাই ব্যবহার করছে। মাসে ৬০ রুপি খরচ। এভাবে কুপির কেরোসিনের খরচের পরিবর্তে মাত্র ৬০ টাকা ব্যয়ে উন্নত ও উজ্জ্বল লাইট পাওয়া যাচ্ছে।
আমাদের দেশের ইডকল ও এনজিওদের মিলিত উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে সোলার হোম সিস্টেমের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। আমরা সোলার হোম সিস্টেম যতই ব্যবহার করি না কেন এটার সরবরাহ কিন্তু বিদ্যুতের সাথে তুলনা চলে না। সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ অনেক সস্তায় ব্যবহার করা যায়। যদিও কিস্তিতে ক্রয় করছে তবুও প্রতিটি সোলার সিস্টেম ২০ হাজার টাকা হলে ৫০ জনের হোম সোলার সিস্টেমের দাম হবে ৫০ x ২০ হাজার অর্থাৎ ১০,০০,০০০ বা দশ লক্ষ টাকা। বর্তমানে ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে ৫ কিলোওয়াটের হাইব্রিড সিস্টেম চালনা করা সম্ভব। এতে সৌর বিদ্যুৎ, তার সাথে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর ও ব্যাটারি ব্যাকআপ ইত্যাদি ব্যবস্থায় প্রতিদিন প্রত্যেকে গড়ে ৫০০০/৫০=১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব। এতে একজনের বাড়ীতে কি কি চলতে পারবে। একটি সিলিং ফ্যান ৩০ ওয়াট, একটি ২৪ ইঞ্চি এলইডি  টিভি ২৪ ওয়াট, একটি ছোট ল্যাপটপ ৩২ ওয়াট, পাঁচ ওয়াটের দুইটি এলইডি বাতি, তিন ওয়াটের একটি এলইডি বাতি অথবা এক বা একাধিক মোবাইল চার্জার। দেখা যাচ্ছে যে, ১০০ ওয়াটও কিন্তু কম বড় না। এখন এই ১০০ ওয়াটে ল্যাপটপ ও টিভি একবারে ব্যবহার না করলে ৩০ ওয়াটের আরও একটি সিলিং ফ্যান ব্যবহার করা যাবে। আবার সিলিং ফ্যান ব্যবহার না করে একাধিক ১০/১৫ ওয়াট টেবিল ফ্যান ব্যবহার করা যাবে। তদুপরি সবাই যে ২০ ঘণ্টা ধরেই ১০০ ওয়াট ব্যবহার করবে তা কিন্তু নয়। রাতে ঘুমানোর পর ব্যবহার কমবে। দিনের বেলায় লাইটের ব্যবহার কমে যাবে। অন্যদিকে সবাই যে ১০০ ওয়াট ব্যবহার করবে তা কিন্তু নয় অনেকেরই লাইট ও ফ্যানের বাইরে অন্য কোন চাহিদা নাই। তাদের ১০০ ওয়াটের বরাদ্ধের মধ্যে খরচ হবে মাত্র ৫০/৬০ ওয়াট তাদের বেচে যাওয়া ৪০/৫০ ওয়াট অন্য গ্রাহক যার বেশী প্রয়োজন সে ব্যবহার করতে পারবে। পুরো সিস্টেমটি প্রিপেইড বা পোষ্ট পেইড মিটারে পরিচালিত হতে পারে।
৫০ জনের প্রত্যেকে ১০০ ওয়াট করে বিদ্যুৎ পেতে হলে ৫ কিলোওয়াট সোলার সিস্টেম প্রয়োজন। যেহেতু ৫ কিলোওয়াট লোড একবারে নাও লাগতে পারে সেহেতু আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্রমাগতভাবে স্থাপনের সুবিধার জন্য ৩.২ কিলোওয়াট নির্ধারণ করি। কারণ আমরা ৪ বারে ৮০০ ওয়াট করে প্যানেল লাগিয়ে ৩.২ কিলোওয়াটের প্যানেল স্থাপন করতে পারব।
৩২০০ ওয়াট প্যানেল, ব্যাটারি ব্যাকআপ ও স্ট্যান্ড বাই জেনারেটর দিয়ে নীচে আনুমানিক বাজার দরে সিস্টেমের খরচের হিসাব দেয়া হল:
১। ৩২০০ ওয়াট প্যানেল ওয়াট প্রতি ৫০ টাকা হিসাবে মূল্য: ৩২০০x৫০=১,৬০,০০০ টাকা।
২। ১৬ টি,১২ ভোল্ট ১৩০ এএইচ ডিপ ডিসচার্জ ব্যাটারি: ১২০০০x
১৬=১,৯২,০০০
৩। এলুমিনিয়ামের গ্রিড লাইনের তার: ১০০০x৩৩ টাকা মিটার=৩৩,০০০ টাকা।
৪। মিটার প্রিপেইড(Solaric এর তৈরি www.solar-ic.com): ৫০x২৫০০ টাকা=১,২৫,০০০ টাকা।
৫। সোলার প্যানেল রাখার জন্য ফ্রেম, চার্জ কন্ট্রোলার, ওয়্যারিং এর তার, এলইডি লাইট, সকেট, সুইচ ইত্যাদি: ১,০০,০০০ টাকা।
সর্বমোট: ৬,১০,০০০ টাকা।
এখন আমরা দেখি কিভাবে সমবায়ের মাধ্যমে আগানো যায়। হোম সোলার সিস্টেম আপনাকে কিস্তি দিচ্ছে এবং সরকারী ভর্তুকি আছে ঠিকই তবুও ২০,০০০ টাকা সোলার সিস্টেমে কমপক্ষে ৫০০০ টাকা এনজিওদের লাভ থাকেই। ৫০০০ করে ৫০ টা হোম সিস্টেমে ২,৫০,০০০ টাকা লাভ বাবদ চলে যাচ্ছে। এ টাকাটা সমবায়ের মাধ্যমে সমবায়ীরা নিজেদেরই কাজে ব্যয় করতে পারবেন।
সমবায়ের মাধ্যমে ডিসি মাইক্রো গ্রিড স্থাপন করার জন্য ধাপ সমূহ:
১ম ধাপ:
১ম মাসে প্রথম চাঁদা ৫০০ টাকা। সর্বমোট ৫০০x৫০=২৫,০০০ টাকা। সকল বাড়ীকে এলুমিনিয়ামের গ্রিড লাইনে সংযোগ করা। গ্রিড লাইনটি এমন হবে যেন তা গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে কেন্দ্রীয় স্থানে স্থাপন করা হয়। চার থেকে পাঁচটি লাইন লোড অনুযায়ী ভাগ হবে। প্রতিটি লাইনে ২০ অ্যাম্পিয়ারের বেশী লোড দেয়া হবে না। ২০ অ্যাম্পিয়ারের বেশী প্রবাহ করলে সিস্টেম কম এফিসিয়েন্ট হবে। শর্ট সার্কিট রিস্ক বেড়ে যাবে। সার্কিট ব্রেক ঠিকভাবে হবে না।
২য় থেকে ৪র্থ মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ২০০ ওয়াট করে সৌর বিদ্যুৎ যোগ করে চার মাসে ৮০০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
২য় ধাপ:
ছয়মাস পরে এ ধাপ সম্পন্ন হবে। সবাই ৩০০ টাকা করে চাঁদা পরিশোধ করতে থাকবে। ৪টি ১২ ভোল্টের ১৩০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ব্যাটারি দিয়ে ৪৮ ভোল্ট সাপ্লাই তৈরি করা হবে। এখন প্রথম ধাপের পর গ্রাহকরা রাতে ও দিনে সৌর বিদ্যুৎ পেতে থাকবে। প্রত্যেক গ্রাহক কমপক্ষে দুইটি করে ৫ ওয়াটের এলইডি লাইট ও মোবাইল চার্জার লাগাতে পরবে।
৩য় ধাপ:
ছয় মাস পর থেকে ১২ মাসে সম্পন্ন হবে। সকল গ্রাহকের মিটার লেগে যাবে।
৪র্থ ধাপ:
১৩ থেকে ৩০ মাস প্রতি ছয় মাস পরপর প্রত্যেকবারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৮০০ ওয়াট প্যানেল এবং ৪টি ১২ ভোল্টের ১৩০ এএইচ  ব্যাটারি সংযোগ হতে থাকবে ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে থাকবে। সমবায়ের গ্রাহকরা এ পর্যায়ে গ্রাহক চাঁদা ৩০০ টাকা থেকে কমিয়ে সর্বনিন্ম ১০০ টাকা করতে পারে বাকীটা বিলের মাধ্যমে আদায় করতে পারবে।
৫ম ধাপ:
 ৩১ থেকে ৩৬ মাস এ পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি স্থাপন করা হবে। মিটারে বিল তোলা হবে। গ্রাহকরা ১০০ টাকা করে চাঁদা দিবে। জেনারেটর ক্রয় করা হবে। মেঘলা বা বৃষ্টির দিনে জেনারেটর ব্যাকআপ হিসাবে থাকবে।

আমরা ব্যাংক লোণ ছাড়া সেলফ ফাইনান্সিং এর মাধ্যমে সমবায়ের মাধ্যমে অনেক কম খরচে ৫০ জনকে অনেক শক্তিশালী গ্রিড লাইন উপহার দিতে পারব। তবে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য ইডকল(IDCOL) থেকে লোণ নেয়া যাবে। এতে প্রজেক্টটি একবারে তৈরি করা যাবে। একবারে তৈরি করলে গ্রাহক পর্যায়ে ব্যাংক লোণের সুদ বাবদ একটু বেশী খরচ গেলেও ধাপে ধাপে সময় ক্ষেপণ না করে সম্পূর্ণ প্রজেক্টি একবারে চালু করা যাবে এবং অনেক বেশী সুবিধা আমরা শুরু থেকেই পেতে থাকব। যে সব এলাকার মানুষের অধিকাংশের হোম সোলার সিস্টেম আছে তারা শুরু থেকে ব্যাংক লোণ নিয়ে সম্পূর্ণ সিস্টেমটি একেবারে চালু করতে পারেন। পরে সমবায়ের মাধ্যমে বিল পরিশোধ ও নির্দিষ্ট চাঁদা পরিশোধ করে সমবায়-ভিত্তিক ডিসি মাইক্রো গ্রিড সিস্টেমটি বাস্তবায়ন করতে পারেন। আসুন আমরা সমৃদ্ধির পথে আমাদের প্রিয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

Wednesday, July 16, 2014

রিনিউবল এনার্জি নিয়ে ভাবনা

আমার রিনিউবল এনার্জি ব্যবহার ও ভাবনা মূলত: শুরু হয় ২০০৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্যাম্পে থাকার সময় থেকে। তখন আমি সৌর শক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাই বা ব্যবহারে বাধ্য হই। ক্যাম্পের ওয়্যারলেছ সেটের ব্যাটারি সাধারণত সোলার প্যানেলে চার্জ করা হত। আমি তখন একটি ল্যাপটপ কিনেছিলাম। দাম পড়েছিল ৬২ হাজার টাকা। তারপর কচ্ছপ আকৃতির টিভি কার্ড কিনেছিলাম ৭৫০০ টাকা দিয়ে। ল্যাপটপটি তিন বছর ব্যবহারের পর নষ্ট হয়। মাদার বোর্ড নষ্ট হয়। ঢাকায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দিয়েও রিপিয়ারে ব্যর্থ হই। আর রিপিয়ার করাতে পারিনি। এই ল্যাপটপটি চালানোর জন্য আমি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গ্রামীণ শক্তি অফিস থেকে ১৩ হাজার টাকায় ২৫ ওয়াটের দুইটি সোলার প্যানেল কিনি। যা এখনও আমার সাথে বয়ে বেড়াচ্ছি। কম ব্যবহারের কারণে দুটি প্যানেল বেশ নতুন আছে। এ দুটির বর্তমান (জুলাই ২০১৪) বাজারদর মাত্র ৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন সোলার প্যানেলের দাম কত কমেছে। তখন ওয়াট প্রতি  প্যানেলের মূল্য দিয়েছি ২৬০ টাকা আর এখন তা মাত্র ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা।

 সত্যি অবাক করা ব্যাপার। যদিও আমাদের এনজিওরা সোলার হোম সিস্টেম এখনও ২০০৩ সালের দামে বিক্রি করে যাচ্ছে। যা কিনা বাংলাদেশের ব্যবসায়িক কালচার । একবার উচ্চ দাম থাকলে তা সহজে কমে না কারণ সবাই বেশী দামে নাকি মজুদ করেছিল। তাই দাম কমাতে কয়েক বছর লেগে যায়। আর যেহেতু সোলার হোম সিস্টেম কিস্তিতে ক্রয় করা হয় সেহেতু দাম কমানোর প্রশ্নই উঠে না। ২০০৩ সালে সোলার হোম প্যাকেজের যা দাম ছিল এখনও সেরকম দামেই বিক্রি হচ্ছে। অথচ সব যন্ত্রাংশের দামই কমে গেছে।

আমি ল্যাপটপ চালানোর জন্য তিনটি ৬ ভোল্টের এসিড ব্যাটারি কিনেছিলাম। কারণ ল্যাপটপের পাওয়ার ইনপুট ছিল ১৯.৫ ভোল্ট। তিনটি ব্যাটারি সিরিজে লাগিয়ে ১৮ ভোল্ট প্লাস ডিসি সাপ্লাইয়ে ল্যাপটপটি চালানো যেত। তখন বাংলাদেশের গ্রামে গজ্ঞের বাজারে ৬/৮ ভোল্টের স্থানীয়ভাবে সংযোজিত ব্যাটারি পাওয়া যেত। কারণ এ ব্যাটারিগুলো টেপরেকর্ডার চালাতে ব্যবহৃত হত। এ ধরনের তিনটি ছয় ভোল্টের টেপরেকর্ডারের ব্যাটারি আমি সিরিজে ব্যবহার করতাম। যতটুকু মনে পড়ে প্রতিটি ব্যাটারি ৫০০ টাকা করে চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট থেকে কিনেছিলাম। রাতে ল্যাপটপে টুকটাক টাইপ করা। টিভি কার্ড দিয়ে  ঘণ্টা দুয়েক টিভি দেখতাম তাও আবার এন্টেনা দিয়ে বিটিভি দেখা। কারণ এখনকার মত তখন ক্যাম্পে ডিশ এন্টেনা ছিল না। বিটিভিতে আমরা নাটক ও খবর দেখতে পারতাম। সৈনিকরা ১২ ভোল্টের সাদা ও কালো টিভি দেখত। তখন অবশ্য ইটিভির( একুশে টিভি) টেরিস্টরিয়াল ট্রান্সমিশন হত। বিটিভির পাশাপাশি একুশে টিভি পাহাড়ের উপরে লক্ষ্যিছড়ি উপজেলার দুইল্লাতলী ক্যাম্পে দেখতে পারতাম। উঁচু পাহাড়ের উপরে থাকার করনে রিসিপশন ভালই ছিল।

সার্কিট ব্যবহার করে এক ফুট দৈর্ঘ্যের একটা টিউব লাইট জ্বালাতাম। লেখালেখির কাজ বা বই পড়ার সময় টিউব লাইটটি জ্বালাতাম অন্য সময় হারিকেনের বাতি। কারণ টিউবটি সর্বদা জ্বালাতে পারতাম না ব্যাটারি খরচের জন্য। ক্যাম্পে মাঝে মাঝে বর্ষার পর মোবাইলের এরিয়েল দিয়ে নেটওয়ার্ক পেতাম । আমার পরিবার ছিল চট্টগ্রাম সেনানিবাসে। তখন তাদের সাথে কথা বলতাম। দুই একজন সৈনিকও নম্বর নিয়ে এসে আমার মোবাইল থেকে কথা বলত। তবে আউট গোয়িং কল করতে পারলেও ইনকামিং কল হত না।
তবে এরিয়েল দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করতাম। এখন মোবাইলের এন্টেনা যাদুঘরের আইটেম। বর্তমানে আমাদের দেশের সকল কোম্পানির নেটওয়ার্ক অনেক উন্নত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্কের অনুমতি না থাকায় মোবাইলের বিটিএস মূলত: পাহাড়ি এলাকার বাইরের সীমানায় ছিল। পাহাড়ের উঁচু ক্যাম্পেরে উপর থেকে মূলত: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকার বিটিএস থেকে আমরা নেটওয়ার্ক পেতাম। এ ধরনের মোবাইল এন্টেনা তখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী ছিল। কোন ক্যাম্পে গেলে মোবাইল এন্টেনা সাথে থাকত।

এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্যাম্প সোলার সিস্টেম আছে। জেনারেটর আছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক আছে। মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট আছে। ডিশ এন্টেনার মাধ্যমে স্যাটেলাইট চ্যানেল আছে।



তবে আমার রিনিউবল এনার্জি ভাবনায় সোলার প্যানেল ব্যবহার করে ল্যাপটপ চালানো ছিল হাতে কলমে সোলার এনার্জি ব্যবহারের অনুশীলন। এই অনুশীলন আমাকে সোলার এনার্জি নিয়ে ভাবতে শিখায়। সুখের বিষয় এই যে, সোলার প্যানেলের ওয়াট প্রতি মূল্য এক ডলারের নীচে চলে আসায় সারা পৃথিবী সোলার এনার্জি ব্যবহারে ব্যাপকভাবে এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ অবশ্য সোলার হোম সিস্টেমে সারা পৃথিবীর জন্য মডেল স্বরূপ। এখন এই সবুজ এনার্জি নিয়ে কাজ করতে পারলে আমার ভাবনা সার্থক হবে।


Tuesday, July 15, 2014

আমার সোলার কোম্পানী ও সোলার হোম সিস্টেমের প্যাকেজ অফার


আমি ২০০৩ সালে আমার ল্যাপটপ চালানোর জন্য ২৫ ওয়াটের দুইটি প্যানেল কিনেছিলাম ১৩ হাজার টাকায়। এখনকার সময় (জুলাই ২০১৪) সেই একই সোলার প্যানেল পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০০০ টাকায়। আমি একবার একজন এনজিও এর এমডিকে বললাম বর্তমানে সোলার প্যানেলের দাম অনেক কমে গেছে। তিনি বললেন, “কই দাম তো কমেনি”,আমি তার কথা শুনে অবাক হলাম কারণ তার এনজিও সোলার হোম সিস্টেম সরবরাহ করে। এ যদি হয় সচেতনতা তবে তা দু:খজনক। ২০০৩ সালের ২০ ওয়াট প্যানেলের দুই লাইটের সিস্টেম ১২ হাজার টাকা হলে বর্তমানে সেই সিস্টেম একই দামে রয়েছে। তখন ২০ ওয়াটের সোলার প্যানেলের ছিল দাম ৫২০০ টাকা। আর বর্তমান দাম মাত্র ১২০০ টাকা। ৪০০০ টাকা দাম কমেছে। ব্যাটারির দাম তো বাড়েনি বরং কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমাদের দেশের আদর্শ ও নিষ্ঠাবান এনজিওরা দাম একই রেখেছে। কারণ একবার একটা দাম নির্ধারিত হলে আমাদের দেশে নিয়ম অনুযায়ী তা সহজে কমে না। অথচ দাম বাড়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সংবাদেই দাম বেড়ে যায়।
আমি বিভিন্ন সোলার হোম সিস্টেম এর প্যাকেজে বর্ণিত দ্রব্যের মূল্যমান বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম। সোলার সিস্টেমের প্যাকেজ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভর করে প্যাকেজ ডিজাইন করা যেতে পারে।
১। সোলার প্যানেলের শুরুটা হতে পারে যে কোন সহজ প্যাকেজের মাধ্যমে। যারা একদম সোলার সম্পর্কে জানে না তারাও বেশ আগ্রহের সাথে ব্যবহার করার আগ্রহ পাবে। দাম কম হবে। কম জটিল হবে। প্রথম সিস্টেমটি হতে পারে ১০০ টাকা মাসিক কিস্তিতে। ৪০০/৫০০ টাকা সবোর্চ্চ কিস্তিতে গ্রাহকরা কমপক্ষে ১০০ ওয়াট প্যানেল, ১০০ এএইচ ব্যাটারি দিয়ে লাইট,ফ্যান, রঙ্গিন টিভি ও ল্যাপটপ চালানোর সামর্থ্য অর্জন করবে।
২। এক প্যাকেজ থেকে উপরের প্যাকেজে গেলে পূর্বের প্যাকেজের সমস্ত কিছু পরের প্যাকেজে ব্যবহার করার যাবে ও প্রয়োজন উপযোগী থাকবে। এতে গরীব মানুষ অজ্ঞতার জন্য জুলুম/ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। অনেকেই এখন যা করে তা হল, এক প্যাকেজের টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে সিস্টেম আপগ্রেড করার জন্য নতুন করে পুরুতন অনেক কাজের উপযোগী যন্ত্রাংশ থাকার পরও নতুন সিস্টেম একই ধরনের যন্ত্রাংশ কিনতে হয়। এতে পুরানো অনেক কিছু থাকার পরও নতুন করে অনেক কিছু কিনতে হয়।
৩। এক প্যাকেজ থেকে অন্য প্যাকেজে মাইগ্রেট করলে গ্রাহক তার পুরাতন সিস্টেম পুনরায় উপযুক্ত মূল্যে বিক্রয়ের সুযোগ পাবে।
৪। গ্রাহক যে কোন সামগ্রী সিস্টেমের উপযোগী করে চালানোর সহায়তা দেয়া হবে যেন তা ব্যাবসায়িক সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট লাইট,ফ্যান ইত্যাদির মধ্যে সীমিত থাকবে না।
এখন আশা যাক আমার পরিকল্পিত প্যাকেজ সমূহ:
১ম প্যাকেজ। স্টার্টার প্যাকেজসান”(Sun)  বাংলা নামসূর্য:
প্যাকেজের সামগ্রী: ২০ ওয়াট প্যানেল-১২০০ টাকা, এসি ভোল্টের সকেট মোবাইল/এলইডি/টর্চ চার্জার চার্জ করার জন্য ২০০ টাকা, একটি এসি চার্জিং এলইডি টর্চ লাইট ১৫০ টাকা, একটি এলইডি রিচার্জেবল টেবিল ল্যাম্প ২৫০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৩০০ টাকা,তার ২০ গজ ৩০০ টাকা সর্বমোট ২৪০০ টাকা। এককালীন ৫০০ টাকা মাসিক কিস্তি দুই বছর ১০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা।
প্যাকেজের কারিগরি বিশ্লেষণ: এই প্যাকেজ মূলত: অনেক সাশ্রয়ী। ২০০ টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষ সহজেই নিতে পারবে। যারা একদম সোলার সম্পর্কে জানে না এবং তাদের জন্য সোলারের আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য প্যাকেজটি খুবই কার্যকরী হবে। সোলার প্যানেলের ১২ ভোল্ট ডিসিকে কনভার্ট করে ২০ ওয়াটের এসি করা হয়েছে যেন চার্জ লাইটগুলো বৃষ্টির দিনে যেখানে বিদ্যুৎ আছে সেখানে থেকে চার্জ করানো যায়। স্টার্টার প্যাকেজটি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন তা পরের প্যাকেজেও ব্যবহার করা যায়।
২য় প্যাকেজ। স্টার(Star)  বাংলা নামতারা”: 
এটি মূলত: ঘরের দেয়ালে স্থায়ীভাবে এলইডি লাইট স্থাপন করার উপযোগী প্যাকেজ
উপরের ২৪০০ টাকার সমস্ত সামগ্রীগুলো থাকবে। নতুন যোগ হবে, তার,সুইচ সহ দুইটি ৩ ওয়াট এলইডি টিউব বাতি যা দেয়ালে ওয়ারিং করে সংযোগ দেয়া হবে খরচ ১২০০ টাকা। চার্জ কন্ট্রোলার : ৬০০ টাকা, ১২ ভোল্ট ৭.৫ অ্যাম্পিয়ার ইউপিএস এর ব্যাটারি ১০০০ টাকা, ২০ ওয়াটের ৫ টি প্যানেল পাশাপাশি সংযোগ করে ছাদে লাগানোর স্ট্যান্ড টাইপ রেক ৪০০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৪০০ টাকা সর্বমোট:৬০০০ টাকা, এককালীন ৬০০ টাকা, তিন বছরের প্রতি মাসে কিস্তি ২০০ টাকা।
তারাপ্যাকেজের কারিগরি বিশ্লেষণ
এ প্যাকেজ স্টার্ট-আপ প্যাকেজের পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে। এ প্যাকেজে মোট ৪০ ওয়াট সোলার প্যানেল রয়েছে। এখান থেকে এই প্যাকেজটি মূলত: অন্যান্য এনজিওদের প্যাকেজের সাথে মিল আছে। ব্যাটারি ব্যাকআপ ও চার্জ কন্ট্রোলার ব্যবহার এ প্যাকেজ থেকে শুরু হচ্ছে। ইউপিএস এর ব্যাটারি কমপক্ষে তিনদিন ব্যাকআপ দিতে না পারলেও দুইটি তিন ওয়াট এলইডি টিউব ১৫ ঘণ্টা একটানা চলতে সক্ষম। যদি বৃষ্টির দিনে রাতে চার ঘণ্টা করে ব্যবহার করা যায় তবে তিনদিন ব্যবহার করা যাবে। ইউপিএসএর ব্যাটারিটি ছোট বিধায় বৃষ্টির দিনে যেখানে গ্রীড লাইনের সরবরাহের বিদ্যুৎ আছে সেখান থেকে ১২ ভোল্টের আনুমানিক এক ওয়াটের চার্জার দিয়ে চার্জ করানো সম্ভব।
৩য় প্যাকেজ। কুল(Cool) বাংলা নামশীতল”: 
উপরের ৬০০০ টাকার সমস্ত সামগ্রী থাকবে, সাথে আরো যোগ হবে ২০ ওয়াট সোলার প্যানেল ১২০০ টাকা, ৫০ অ্যাম্পিয়ার এসিড ব্যাটারি ৫৫০০ টাকা, দুইটি টেবিল ফ্যানের ওয়ারিং ৫০০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৩০০ টাকা, একটি ১২ ভোল্ট ১০ ওয়াট ডিসি টেবিল ফ্যান ১৮০০ টাকা, একটি ১২ ভোল্ট ৬ ওয়াট ডিসি ছোট ফ্যান( যা কার গাড়ীর কার ফ্যান নামে পরিচিত) ৭০০ টাকা,সর্বমোট: ১৬০০০ টাকা। ডাউন পেমেন্ট ১৬০০ টাকা। মাসিক কিস্তি ৩০০ টাকা।
শীতলপ্যাকেজের কারিগরি বিশ্লেষণ:
এ প্যাকেজে ৬০ ওয়াট সোলার প্যানেল রয়েছে। দুইটি ফ্যান চলবে। লাইট চলবে। মোবাইল,টর্চ লাইট ও টেবিল ল্যাম্প চার্জ করার ব্যবস্হা থাকবে। একবারে এই প্যাকেজ ক্রয় করলে ১ম ও ২য় প্যাকেজের কিছু আইটেম বাদ দিয়ে কিস্তির খরচ কমানো যাবে। এককালীন খরচ ঠিক থাকবে।
৪র্থ প্যাকেজ: স্মাইল বাংলা নামহাসি”, ৩য় প্যাকেজের ১৬০০০ টাকা দামের সমস্ত সামগ্রী এই প্যাকেজ যোগ হবে। আরো থাকবে ২০ ওয়াটের সোলার প্যানেল ১২০০ টাকা, ৫০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ব্যাটারি ৫৫০০ টাকা। টিভির জন্য ওয়ারিং ৫০০ টাকা, ১০০ ওয়াট ইনভার্টর ১৫০০ টাকা। সার্ভিস চার্জ ৩০০ টাকা। সর্বমোট ২৫০০০ টাকা। ডাউন পেমেন্ট ২৫০০ টাকা। তিন বছরের মাসিক কিস্তি ৩৭৫ টাকা।
হাসিপ্যাকেজের কারিগরি বিশ্লেষণ
এ প্যাকেজের সর্বমোট ওয়াট ৮০ । ৩য় প্যাকেজের একটি ৫০ অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি ও এই প্যাকেজের একটি ৫০ অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি প্যারালালে লাগিয়ে সর্বমোট ১০০ অ্যাম্পিয়ার করা হবে। এ প্যাকেজ একবারে ক্রয় করলে আগের তিনটি প্যাকেজের সামগ্রী কম বেশী করে প্রয়োজন অনুযায়ী মূল্য সমন্বয় করা যাবে। চারটি ২০ ওয়াটের প্যানেলে পরিবর্তে একটি আশি ওয়াটের প্যানেল একবারে ক্রয় করা যাবে। আবার দুইটি ৫০ অ্যাম্পিয়ারের পরিবর্তে ১০০/১৩০ অ্যাম্পিয়ার একটি ব্যাটারি ব্যবস্থা করা যাবে। লাইট ও অন্যান্য কানেকশন কমবেশি করা যাবে। ইনভার্টরের ওয়াট কম বেশী করা যাবে।

৫ম প্যাকেজ: “স্বাধীন”:
 উপরের প্যাকেজের ২৫০০০ টাকার সমস্ত সামগ্রী এর সাথে যোগ হবে। তিন ওয়াটের টিউব লাইট দুইটি, তারসহ রান্নাঘর ও বাথরুমে লাগানোর জন্য  ১০০০ টাকা, সোলার প্যানেল ২০ ওয়াট একটি ১২০০ টাকা। সার্ভিস চাজ ৩০০। সর্বমোট: ২৭৫০০ টাকা। ডাউন পেমেন্ট ২৭৫০ টাকা। তিন বছরের মাসিক কিস্তি ৪০০ টাকা।
স্বাধীনপ্যাকেজের কারিগরি বিশ্লেষণ
এ প্যাকেজের সর্বমোট ওয়াট ১০০ । ৪র্থ প্যাকেজের সমস্ত কিছু এতে থাকবে। এ প্যাকেজ একবারে ক্রয় করলে আগের ৪র্থ প্যাকেজের সামগ্রী কম বেশী করে প্রয়োজন অনুযায়ী সমন্বয় করা যাবে। পাঁচটি ২০ ওয়াটের প্যানেলে পরিবর্তে একটি ১০০/১৩০ ওয়াটের প্যানেল একবারে ক্রয় করা যাবে। আবার দুইটি ৫০ অ্যাম্পিয়ারের পরিবর্তে ১০০/১৩০ অ্যাম্পিয়ার একটি ব্যাটারি ব্যবস্থা করা যাবে। লাইট ও অন্যান্য কানেকশন কমবেশি করা যাবে। ইনভার্টারের ওয়াট কম বেশী করা যাবে। এটা মূলত: ৪র্থ প্যাকেজকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে।
সমস্ত প্রস্তাবিত প্যাকেজ গরীব মানুষের ক্রমান্বয়ে সক্ষমতা বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে অগ্রগতির পরিকল্পনা করা হয়েছে। হোম সোলার সিস্টেমের পর ক্রমান্বয়ে গ্রাহদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাহিদা বাড়তে থাকবে। তখন গ্রাহদের ক্রম বর্ধমান চাহিদা মাথায় রেখে ৪৮ ভোল্ট গ্রিড মাধ্যমে সোলার,ব্যাটারী ও স্ট্যান্ড বাই জেনারেটরেম মাধ্যমে সরবরাহ করা যাবে। প্রিপেইড মিটার ব্যবহারে করা যাবে। অথবা সোলারিক কোম্পানি ( www.solar-ic.com) ২২০ ভোল্ট ডিসি ন্যানো গ্রিডে রূপান্তর করা যাবে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের ব্যবহৃত হোম সোলার সিস্টেমগুলোর একটা মূল্য ধরে ক্রয় করা যাবে যাতে প্রযুক্তি পরিবর্তনে সাধারণ গ্রাহকরা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

সোলার সিস্টেম বিক্রয় করার এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালে আমি চাকুরী হতে রিটায়ারমেন্টে গেলে শুরু করার পরিকল্পনা করছি ইনশাল্লাহ। তবে তখন সোলার হোম সিস্টেম থাকবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কারন মিনি গ্রীড/ মাইক্রো গ্রীড/ ন্যানো গ্রীড এর মাধ্যমে সবাই বিদ্যুত সরবরাহ পাবে। কেবল পাহাড়ী এলাকায় ও জংগলে অনেকে গ্রীড রাইনের বাইরে থাকবে। তবে প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে সোলার হোম সিস্টেমেরও পরিবর্তন হবে ব্যবসার ধরনও পরিবর্তন হবে। প্যাকেজের মূল্য ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী বর্ননা দিয়ে আমার সোলারের ব্যবসার ধরন কেমন হবে তা তুলে ধরলাম। তবে কেবলমাত্র ব্যবসায়িক কোনো মনোভাব না নিয়ে জনকল্যানমুলক কাজ হিসাবে গ্রহণ করব। মুনাফা ততটুকু থাকবে যেন উন্নতি চলমান থাকে। লালবাতি না জ্বলে। প্রতিষ্ঠানে একজন সাধারণ বেতন ভুক্ত ম্যানেজার হিসাবে আমার অবস্থান থাকবে।

Thursday, July 10, 2014

আছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, পাশেই অন্ধকার

বাংলাদেশে পল্লী বিদ্যুৎ এর ব্যাপক সাফল্য রয়েছে। মূলত: পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হওয়ার কারণে বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে ব্যাপক বিদ্যুতায়ন হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ একটা সমিতির মাধ্যমে হওয়ায় গ্রাহকদের সংখ্যা ও লাভজনক হিসাবে পল্লী বিদ্যুৎ এর সংযোগের বিস্তার করা হয়। কয়েকজন মিলে বা কেউ একাকী পানির পাম্পের জন্য বৈদ্যুতিক সংযোগের আবেদন করলে পিলার দূরে হলে গ্রাহকদের নিজেদের টাকা খরচ করতে হয়। গ্রাহকরা সম্মিলিতভাবে বর্ধিত লাইনের পিলার কেনা, তার কেনা, ট্রান্সফরমার কেনা ইত্যাদি খরচ করে থাকেন। পল্লি বিদ্যুৎ এর পিলার রাস্তার পাশ দিয়ে বা রুট ম্যাপ অনুযায়ী টানা হয়। রাস্তার পাশে ও রুট ম্যাপে টানা পিলারের পাশে যাদের বাড়ী বা স্থাপনা রয়েছে তারা ভাগ্যবান। যাদের বাড়ী রাস্তা থেকে দুরে তাদেরকে কয়েকজনে মিলে ২০১৪ সালের জুলাই মাসের রেট অনুযায়ী ১০৩০০ টাকা প্রতি পিলারের দাম, পিলারের ক্যারিং খরচ ১০০০-৩০০০ টাকা, ৫০০০ টাকা এক পিলার থেকে অপর পিলারের তারের দাম, এছাড়া সংযোগ লাইনের তার মিটার/গজ প্রতি মূল্য ৩৩ টাকা, বিদ্যুৎ প্রবাহ মাপার বা বিলের জন্য মিটারের দাম ১২০০-১৫০০ টাকা  ইত্যাদি খরচ দিতে হয়। আবার কখনো কখনো বাড়তি খরচ গ্রাহক থেকে সম্পূর্ণ না নিয়ে কিস্তি আকারে গ্রাহকের বিলের সাথে আদায়েরও ব্যবস্থা আছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের বিদ্যুৎ সঠিক পরিমাণ বজায় রাখার জন্য ১০০ ফুটের বেশী দূরত্বের বাইরে গ্রাহক হলেই পিলার বসাবে। আবার ভোল্টেজ ড্রপ হলেই ট্রান্সফরমার বসাবে। মনে করি তিনটি পরিবার রাস্তা থেকে ২০০ মিটার দূরে আছে এখন তাদের বিদ্যুৎ পেতে দুইটি পিলার, তার, ট্রান্সফরমার বাবদ আনুমানিক ৯০,০০০ থেকে এক লক্ষ টাকা খরচ হবে। এ খরচ সেই তিনটি গ্রাহককে ৩০,০০০ টাকা করে দিতে হবে অন্যথায় বিদ্যুৎ নাই। এত টাকা খরচ করে গরীবদের আর বিদ্যুৎ নেয়া হয় না। যার ফলে বাতির নীচে অন্ধকারের মত। পল্লী বিদ্যুৎ এর পিলারের আশে পাশের অন্ধকার আর সহজে দূর হয় না। 
আমার বিকল্প ব্যবস্থা যেটা চিন্তা করেছি তা পরে আরো বিস্তারিত আলোচনা করব। এখন শুধু খরচের পাথর্ক্যটা তুলে ধরলাম। পল্লী বিদ্যুতের খুটি থেকে বিদ্যুৎ ৪৮ ভোল্ট করে বিকল্প ভাবে নিতে খরচ হবে, ২২০ ভোল্ট থেকে ৪৮ ভোল্ট স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমারে খরচ ২০০০ টাকা, ২০০ মিটার তার ৬৬০০ টাকা, ইনভারটার ৪৮ ভোল্ট থেকে পুনরায় ২২০ ভোল্ট করতে আনুমানিক খরচ ৩০০০ টাকা, ৪৮ ভোল্ট নিরাপদ লাইন টানতে ছোট ছোট বাঁশের খুঁটি গ্রাহকরা সংগ্রহ করে ফেলবে। দেখা যাচ্ছে ৯০ হাজার টাকার স্থলে তিনজন দরিদ্র গ্রাহক মাত্র ১২৬০০ টাকা অথাত ৪২০০ টাকা মাথাপিছু খরচে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। গ্রাহক সহজেই তার একটি গৃহপালিত ছাগল বিক্রি করে সংযোগ নিতে পারবে আর পল্লি বিদ্যুৎ এর খরচ গরু বিক্রি করেও পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
পল্লী বিদ্যুৎ আবার ব্যক্তি নিরাপত্তা বা শক হেজার্ট বিবেচনা করে গ্রাহক তার কিনে, বিকল্প খুঁটি হিসাবে বাঁশ বা কাঠের খুঁটি দ্বারা স্ব-উদ্যোগে লাইন নিতে অনুমতি পায় না। এধরনের সংযোগ পিডিবির লাইনে দেখা যায়। বিশেষ করে পিডিবির পিলার থাকলে স্ব-উদ্যোগে অনেকে যে কোন ধরনের তার কিনে ১০০ ফুটের অধিক দূরে সংযোগ নিতে দেখা যায়। ১৯৯৩ সালে আমাদের গ্রামের বাড়ীর(কুমিল্লা জেলার ব্রাম্মনপাড়া উপজেলার দেউস গ্রামে) ৫০০ গজ দূরের বাজারে প্রথম বিদ্যুৎ আসলে আমরা ৫০০ গজ দূর থেকে একটি সিঙ্গেল তারের মাধ্যমে  ফেজ থেকে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ পাই। এমনকি বৈদ্যুতিক তারটি বাঁশের খুঁটি বসিয়ে নদীর উপর দিয়ে আনা হয়। স্বাভাবিক কারণে ভোল্টেজ ড্রপ হয়। তবুও লাইট, ফ্যান ও টিভি চালানো যাচ্ছিল তাতেই যার পর নাই খুশী ছিল আমার বাবা মা। টিএন্ডটির কর্মকর্তা থেকে সদ্য রিটায়ারমেন্টের পর (১৯৯১ সালে) বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শহরের আবাস ছেড়ে গ্রামে স্থায়ী হবেন। তাই বিদ্যুৎ বিহীন গ্রামে যাওয়ার পর অপ্রত্যাশিতভাবে সেখানে বিদ্যুৎ পেয়ে আনন্দে ছিলেন। অবশ্য তার তিন বছর পর তিনি পল্লী বিদ্যুৎ এর সংযোগ পান।
লো ভোল্টেজ হওয়ার পরও যদি লাইট,ফ্যান ও টিভি চালাতে পারলে সাধারণ কৃষক এবং শ্রমজীবীদের বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ পূরণ হয়ে যায়। সেইসাথে যদি এনার্জি এ্যাফিশিয়েন্ট লাইট ব্যবহার করা যায়, তবে বড় চার ফুট দুইটি এলইডি টিউব লাইটে লাগবে ২০+২০=৪০ ওয়াট। ২৪ ইঞ্চি এলইডি টিভিতে খরচ ২৫ ওয়াট। দুইটি ব্রাশ লেস ডিসি সিলিং ফ্যানে খরচ ৩০+৩০=৬০ ওয়াট। আরো যদি রান্না ঘর, বাথরুম, বারান্দা ও নিরাপত্তা বাতিতে এলইডি ৫ ওয়াট করে ব্যবহার করা হলে লাগবে ৪x৫=২০ ওয়াট। তাহলে শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের মত লাইট জ্বালিয়ে বিদ্যুৎ খরচ হবে মাত্র ১৪৫/১৫০ ওয়াট। আর পল্লী বিদ্যুতের সর্বনিন্ম বিলের সুবিধাভোগীদের জন্য মাসিক ২৫ কিলোওয়াটের নীচে এটি থাকবে। এই ১৫০ ওয়াট ৪৮ ভোল্ট থেকে পেতে তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতে হবে মাত্র ১৫০ ওয়াট ভাগ ৪৮ ভোল্ট অর্থাৎ ৩ অ্যাম্পিয়ার ৪৮ ভোল্টের বিদ্যুৎ। এ ধরনের ১০ জন গ্রাহকের জন্য দিতে হবে ৩x১০ =৩০ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ যা কিনা অতি সহজেই  গ্রাহকের লাইনের এলুমিনিয়ামের তার দ্বারা প্রবাহিত করা সম্ভব। সম্পূর্ণ বিষয়টি সোলার প্যানেল থেকে সাশ্রয়ী ও এ্যাফিশিয়েন্ট হবে।এ ধরনের লো ভোল্টেজ বিদ্যুৎ বিতরণ করেও প্রায় ৯০% গ্রিড লাইনের এ্যাফিশিয়েন্সি পাওয়া যাবে। পরবর্তীতে ৪৮ ভোল্টকে ২২০ ভোল্ট এসিতে রুপান্তর করে এসি বিদ্যুতের সামগ্রীগুলো চালানো যাবে।

এবার আশা যাক হাই ভোল্টেজ ডিসি বিতরণ ব্যবস্থায়। আমেরিকা ও বাংলাদেশের প্যাটেন্ট প্রাপ্ত উদ্ভাবক ও সোলারিক কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী জনাব দিদারুল ইসলামের (দৈনিক প্রথম আলোর ২৪ জুন ২০১৪ তারিখের পত্রিকার ২০ পৃষ্ঠার নীচের অংশে ১-৩ কলামে বিশেষ প্রতিবেদন অথবা www.solar-ic.com  তথ্য রয়েছে
) হাই ভোল্টেজ ডিসি দিয়ে ন্যানো গ্রিড করেও এ ব্যবস্থা চালু করা যাবে। সোলারিকের ন্যানো গ্রিডের সোলার প্যানেল, ব্যাটারি ব্যাংক ও হাই ভোল্টেজ ডিসি কনভার্টার অংশ বাদ দিয়ে ২২০ ভোল্ট এসি থেকে ২২০ ভোল্ট    ১০/১৫ অ্যাম্পিয়ার ডিসি বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে পারলেই চলবে।
সোলারিকের ন্যানো গ্রিড অনুসরণ করলে খরচ কম হবে। কারণ চিকন তার ব্যবহার করে মাটির নীচ দিয়ে নিরাপদে হাই ভোল্টেজ ডিসি সহজেই নেয়া যাবে। ফলে খুঁটির খরচ ও মোটা তারের খরচ কমে যাবে। এতে পল্লী বিদ্যুৎ এর বিধিবদ্ধ শক হেজার্ড সমস্যা থাকবে না। সোলারিকের ন্যানো গ্রিডের বিস্তার ১ থেকে ১.৫ কিমি সহজেই করা যাবে। আর পল্লী বিদ্যুতের পিলারের আশে পাশের অন্ধকার এলাকা সাধারণত সোলারিকের বিস্তারের এলাকার জন্য যথেষ্ট হবে। সোলারিকের প্রিপেইড মিটার এ ধরনের সাব গ্রিড বা ন্যানো গ্রিডের টাকা সংগ্রহের জন্য উন্নত একটি ব্যবস্থা।

   পরিশেষে বলব, পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির আশ পাশের অন্ধকার এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ বা পিডিবি থেকে নিরাপদ ৪৮ ভোল্টের লো ভোল্টেজ বিতরণ ব্যবস্থা অথবা সোলারিকের মাটির নীচ দিয়ে হাই ভোল্টেজ ডিসি লাইনের মাধ্যমে কম খরচে অন্ধকার দূর করা যেতে পারে। এ ধরনের নিরাপদ ও কার্যকরী ব্যবস্থা প্রাইভেট সেক্টরে অনুমতি দিয়ে পলিসি তৈরি করলে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা দিয়ে দেশের প্রায় ৬২ ভাগ বিদ্যুৎ প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী থেকে সহজেই ৮০ ভাগে উন্নীত করা সম্ভব। প্রাইভেট সেক্টর ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক হবে বিধায় তা অতি দ্রুত কার্যকর করবে।

আমার এ ধারনাটি যারা পলিসি মেকার হিসাবে আছেন বা যাদের জন্য প্রযোজ্য তারা ভেবে দেখবেন। এতে যদি অন্তত এক কোটি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনা যায় তাতেই মানুষের জীবন যাত্রার উন্নয়নের পাশাপাশি আয় বর্ধক কাজ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের জিডিপির উত্তরণ ঘটবে।