Pages

Thursday, December 20, 2018

সিনিয়র সিটিজেন সার্প‌োট সেন্টার

ইসলাম ধর্ম‌ে  বর্ণিত আছে, আল্লাহ সকল পশুপাখির জন্য রিজিক দিয়েছেন। মানুষকে বলেছেন, অব‌লোকন কর‌তে; এক‌টি পাখি ক্ষুধার্ত অবস্থায় বেড়িয়ে যায়। দিন শেষে ফেরত আসে পেট ভর্তি ক‌রে। মানুষেরও মূলত: রিজিক নি‌য়ে স্ট্রেসফ‌ুল হওয়ার কোন কারণ নাই। কারণ সুস্থ মানুষ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ ক‌রে গেলে তার খাদ্যের অভাব হবে না। সুস্থ মানুষের ধ‌রে নিলাম কাজ করবে খাদ্যের অভাব নাই। তাহলে সিনিয়র সিটিজেনদের কি হবে। তা‌দের তো কাজ করার সীমাবদ্ধতা আছে। তা‌দের ঔষধ খরচ লাগে, নার্সিং লাগবে। বৃদ্ধাশ্রমগু‌লি মানুষের নেতিবাচক ম‌নোভাবের শিকার। শেষ বয়সে বৃদ্ধ বৃদ্ধরা ছেলে মে‌য়ে পরিবারের মাঝে থাক‌তে চান।  ইউটিউবে দেখা যায় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা অভিযোগ করছে তা‌দের ছেলেমেয়েরা তা‌দের দেখ‌তে আসে না। তা‌দের খোজ খবর নেয় না। দূ:খজনক। অনেকে বলছেন, ছেলে মে‌য়ে ম্যাজিস্ট্রেট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও প্রফেসর হ‌য়েও বাবা/মা‌কে সাথে রাখছে না। ছেলেমেয়ে কি কারণে সাথে রাখ‌তে পারছে না। তার মূল কারণ আর্থিক নয়। সময় দেয়া ও ব্যবস্থাপনা করার সমস্যা। সেটার জন্য অনেক ছেলে মে‌য়ে সময় ও ব্যবস্থাপনাটা কর‌তে পা‌রে না। তারা তা‌দের ক্যারিয়ার ও পরিবার নি‌য়ে এত এত সমস্যায় থা‌কে, বাবা মা‌কে আসলে টেক কেয়ার কর‌তে পা‌রে না। তাহলে উপায় কি? কোন কো-অপারেটিভ বা সহ‌যোগীতা করার সংস্থার প্রয়োজন। যদি এরূপ হয় চাকুরীজীবী স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই  সকালে চলে যায়, তবে কে বৃদ্ধ মা বা বাবা‌কে দেখবে। যদি এমন হয়, কোন সাহায্যকারী সংস্থা থেকে এসে তা‌দের গোসল করাল। কাপড় ধু‌য়ে দিল। রুম ও টয়লেট পরিষ্কার ক‌রে দিল। খাবার ঔষধ খাই‌য়ে দিল। এভাবে বুয়া বা কাজের লোকের মত সা‌পোর্ট দিল। কেমন হয় বলুন? এতে আমি নিশ্চিত অ‌নেক অনেক সচ্ছল অথচ সব সময় দেখভালে অপারগ সন্তানরা তা‌দের বাবা ও মা‌কে বৃদ্ধ আশ্রমে পাঠাবে না। একজন গৃহিনী যারা সকাল থেকে শুরু ক‌রে রাত/দিন স্বামী সংসারে খেঁটে খেঁটে ত্যক্ত ও বিরক্ত। তারা যদি শশুর শাশুড়ির জন্য একবেলা সা‌পোর্ট পায়, আমি নিশ্চিত; তারা তা‌দের বৃদ্ধ শাশুর ও শাশুড়িকে খেদিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে না।

পৃথিবীর অনেক দেশে সিনিয়র সিটিজেনদের দেখা‌শোনা করার জন্য অনেককে চাকুরী দেয়া হয়। এমনকি সিনিয়র সিটিজেনকে হাঁটি‌য়ে বা বেড়িয়ে আনার জন্য চাকুরী আছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। অপর দি‌কে ভাল চিকিৎসার জন্য মৃত্যুর হারও কমেছে। ফলাফল সিনিয়র সিটিজেন বেড়েছে। জাপানের সিনিয়র সিটিজেন অনেক বেশী। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য কমিউনিটি লি‌ভিংটা অনেক অনেক বেশী জরুরী। কমিউনিটি লিভিং সিনিয়র সিটিজেনদের কোয়ালিটি টাইম বাড়ায়। সিনিয়র সিটিজেনরা শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য ধী‌রে ধী‌রে কাজ ক‌রে। গল্প কর‌তে বেশী পছন্দ ক‌রে। সেজন্য তারা যখন অনেক সিনিয়র সিটিজেনের সাথে কাটাবে তখন অনেক বেশী কর্মক্ষম থাকবে। অপরদিকে সিনিয়র সিটিজেন যারা স্বামী বা স্ত্রী‌কে হা‌রি‌য়ে‌ছেন। একা একা আছেন তারা ইচ্ছে করলে অন্য কোন সিনিয়র সিটিজেনকে বি‌য়ে কর‌তে পারেন। বিবাহিত সিনিয়র সিটিজেন একাকী সিটিজেন থেকে আরো দীর্ঘ আয়ু হবেন এটা আশা করা যায়। সেজন্য সিনিয়র সিটিজেন সা‌পোর্ট সেন্টারে মে‌ট্রো‌মো‌নিয়াল সার্ভিসেরও ব্যবস্থা করা যায়। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য পিকনিক ও নানা বি‌নোদনমূলক ট্রিপ চালু করা যে‌তে পা‌রে। অনেক সিনিয়র সিটিজেন অনেক অর্থ রাখছেন। কিন্তু কোন সহায়তা পাচ্ছেন না; বেড়া‌নো, বি‌নোদন করা ইত্যাদি কার্যক্রমে। তাই বিত্তবান সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য অনেক ধরনের সাপোর্ট অনেক সুলভে ও কমিউনিটির আইডিয়ায় করা যে‌তে পা‌রে। এখন সময় এসেছে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য কমিউনিটি লেভেলে কিছু করার।

বাংলাদেশে অনেকেই  অসহায় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা‌দের নি‌য়ে বৃদ্ধাশ্রম চালু করেছে। অনেক অনাথ বৃদ্ধও বৃদ্ধা‌দের বিনা খরচে থাকা, খাওয়া ও ঔষধের ব্যবসা করেছে। ভারতের কলকাতার একজন এধরণের সা‌পোর্ট সেন্টার করেছে। এটা নতুন কোন আইডিয়া নয়। এই আইডিয়া হল যারা ছেলে মে‌য়ে, নাতি নাতনী‌দের ত্যাগ কর‌তে কষ্ট আবার সন্তানরাও তা‌দের সেবা কর‌তে পা‌রে না। এই  ধরনের সাপোর্টে সেন্টার হ‌তে পা‌রে সে ধরনের সমস্যার উত্তম সমাধান। 

Thursday, December 13, 2018

তিন লক্ষ টাকার বিয়ের কার্ড


আমার স্ত্রী বলল, জান মু‌কেশ আম্বানী মে‌য়ের বি‌য়ে‌তে যে কার্ড ছাপিয়েছে তার দাম তিন লক্ষ টাকা। আমি বললাম, সে একটা ছাগল। সে ধনী মানলাম তবে কি এভাবে প্রদর্শনের প্রয়োজন আছে। প্রতিটি কার্ড তিন লক্ষ টাকার না ছাপিয়ে মে‌য়ে বি‌য়ে উপলক্ষ‌ে হাজার হাজার মানুষ‌কে তিন লক্ষ টাকা ক‌রে দান কর‌তে পারত।
কে আসলে ধনী? ধনী আসলে সে, যে নাকি কারো কাছে হাত পা‌তে না। যার আয় থেকে ব্যয় কম। যার প্রবৃদ্ধি আছে। সে ধী‌রে ধী‌রে ধনীর পথে আগাবে। কেউ একজন মনে করি আয় থেকে ব্যয় কম ক‌রে সে সঞ্চয় করছে বা বি‌নি‌য়োগ করছে। সেও ফতুর হ‌তে পা‌রে যদি তার পরিবারের কেউ দূরা‌রোগ্য বা অনেক খরচের কোন রো‌গে আক্রান্ত হয়। অনেকে দুর্ঘটনা ও নানা জুলুমে ক্ষ‌তিগ্রস্থ হয়। কোটি কোটি টাকার মালিক আমরা জানি আবার পিছনে আছে কোটি কোটি টাকা ধার। তবে তার সম্পদের বাজার দ‌রে মূল্য ও অন্যান্য আয়, ধারকৃত টাকার ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি সমস্ত কিছু দি‌য়ে সে যদি প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকে তবে তার উন্নতি হ‌য়ে‌ছে বা ধনীর রাস্তায় হাঁট‌ছে বলা যাবে। যে তার টাকা লায়া‌বি‌লি‌টিসএ খাটিয়েছে যেমন গাড়ী বা ফ্লাট এবং ভাল কোন ইনভেস্ট করেনি নিশ্চিত ভাবে বলা যায় সে গরীবের খাতায় লিখাল।
মনে করি একজন রিকশাওয়ালা প্রতি দিন ৬০০ টাকা কামাই ক‌রে প্রতিদিন  ৪০০ টাকা খরচ করার পর প্রতিদিন ২০০ টাকা জমায়। মাসে ৬০০০ টাকা কামাই ক‌রে বছরে ৭২ হাজার টাকা কামাই হচ্ছে।  ৩ বছর পর এক‌টি সিএন‌জি কিনে ফেলল। তারপর দিনে সঞ্চয় হবে ৪০০ টাকা। পাঁচ বছর পর সঞ্চয়‌য়ের টাকা দি‌য়ে মাই‌ক্রো কিনে ফেললেন। তখন সঞ্চয় হবে দিনে ৮০০ টাকা। আবার সঞ্চয় ক‌রে পাঁচ বছর পর মিনিবাস কিনে ফেললেন। প্রতিদিন জমা হ‌তে থাকল দিনে ২০০০ টাকা। পাঁচ বছর পর বড় বাস কিনে ফেললেন। প্রতিদিন জমা দিনে হ‌তে লাগল ৪০০০ টাকা। তার পাঁচ বছর পর আরো দু‌টি বাস হবে। তার পাঁচ বছর পর চার‌টি বাস হবে। তার চার বছর পর আট‌টি বাস হবে। যখন আপনার প্রতি দিনের ইনকাম ৩২ হাজার। মাসে ১০ লক্ষ আর বছরে কোটি টাকার উপ‌রে। এতে ৩৩ বছর পার হবে। আপনার বয়স হবে ৫১ বছর। তার পর যত বছর বেঁচে থাকবেন আপনার টাকা গাণিতিক হা‌রে বাড়বে। তাই ধনী হওয়ার আর কোন ফর্মুলা নাই। আপনার আ‌য়ের চে‌য়ে ব্যয় কমাতে হবে। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
রিকশাওয়ালাদের অনেকে ধনী বা প্রবৃদ্ধি না হওয়ার কারণ দেখা যায় তা‌দের অপরিকল্পিত আয় ও অপরিকল্পিত ব্যয়। দিন আনে দিন খায়। এই বিষয়টি তা‌দের সঞ্চয়ের পথে বাধা। যারা ভাড়ায় রিক্সা চালায় তারা প্রতিদিন রিক্সার মালিককে জমা নামক একটা কার্যক্রমে জড়িত। এটার সাথে যদি তারা সঞ্চয় করত, তবে তারা অগ্রগামী হয়। দিনের আ‌য়ের লোকজন আরেকটি ভয়াবহ বিপদে আক্রান্ত। তা হল, বিভিন্ন কারণে কিস্তি নেয়া এবং তা সুদযুক্ত কিস্তিতে প‌রি‌শোধ করা। এখানেও বিপদ দৈনিক আ‌য়ের লোকজন সচ্ছল মানুষের ক্রেডিট কার্ড‌র মত আনন্দ ফুর্তিতে কিস্তিতে টাকা নেয় ও খরচ ক‌রে প‌রে চো‌খের পানি ও ঘামের টাকা এক ক‌রে প‌রি‌শোধ কর‌তে থা‌কে। তখন আর প্রবৃদ্ধি না হ‌য়ে অবনতি হ‌তে থা‌কে।
তাই ধার ও কিস্তি টাকা বাণিজ্যিক কাজ ছাড়া কোন ক্রমেই নেয়া অনুচিত। চল‌তে হবে ইতিবাচক পথে। দিন মুজু‌রের জন্য সাপ্তা‌হের প্রথম দিনের উপার্জন ব্যয় কর‌তে হবে খাবার কিনে। প্রয়োজ‌নে পুরো সাপ্তা‌হের চাল কিনে ফেল‌তে হবে। তার পর দিনের আয় থেকে অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এভাবে করলে একটা লেবার কাজে কোন বিপদে বা অসুখে পড়লেও তা‌দের লোন কর‌তে হবে না।
উন্নতির ধারাবাহিকতা শর্ত হল লোন ক‌রে লায়া‌বি‌লি‌টিস কেনা যাবে না। তাই পরিকল্পনা ক‌রে ধী‌রে ধী‌রে উন্নয়নের পথে চললে আমা‌দের দেশেও মূ‌খেশ আম্বানী হওয়া সম্ভব। তবে কেউ মূ‌খেশ আম্বানী হওয়ার পর তিন লক্ষ টাকার কার্ড বিতরণ না ক‌রে বিল গেটসের মত সারা পৃথিবীর বাচ্চা‌দের মত টিকাদানের মত কর্মসূচি না হোক অন্তত ছোট বড় অনেক উন্নয়ন করা সম্ভব।
আমি নিশ্চিত বিল গেটস আর ওয়ারেন্ট বা‌ফেট আর যাই হোক ধনাঢ্য প্রদর্শনের জন্য তিন লক্ষ টাকার কার্ড বিতরণ কর‌তে যাবে না।

Thursday, December 6, 2018

জিম মেম্বার না হলেও ছোট ছোট ফিটনেস অনুশীলন


মনে করুন, আপনি জিমের মেম্বার। আপনার বাসা থেকে জিমে যাওয়ার দূরত্ব ৩০ মিনিটের পথ। আবার ফির‌তে ৩০ মিনিট। যাতায়াত ওবারে খরচ মনে করি যে‌তে ১৫০ টাকা। আবার আস‌তে ১৫০ টাকা। মোট যাতায়ত ৩০০ টাকা। মাসে হয়ত ২০ দিন যান। তাহলে খরচ ৬০০০ টাকা। জিম মেম্বারে খরচ আরো ৫০০০ টাকা। মোট ১১০০০ টাকা। আমি বলব ১% মানুষও জিম মেম্বার না। তারপরও বলব, বাংলাদেশে নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ৮০ ভাগ মানুষ কিন্তু ওবিস নয়। সুস্থ আছে। তারা কিভাবে সুস্থ আছে। সেটা হল লাইফ স্টাইল। আপনি জিমে যাওয়া আসায় এক ঘণ্টা আর জিমে আরো এক ঘণ্টা মোট দুই ঘণ্টা ব্যয় করেছেন। আমি বলব, এটা কেমন হয়, যদি আপনি আপনার কাজের স্থানটি‌তে গাড়ী ব্যবহার না ক‌রে হেঁটে যান। বাজা‌রে হেঁটে যান। বাজার শেষে কেনা কাটার পরিমাণের উপর নির্ভর ক‌রে বাহনে ফেরেন। অনেকের মত মসজিদে জামা‌তে নামাজ পড়েন। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাপড় ধু‌য়ে ফেলুন। ঘর ঝাড়/ঘর মোছার কাজগু‌লো করছেন। তবে কিন্তু আর আপনার প্রতিদিন দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় ক‌রে জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। জিমের খরচ বাঁচল ও সাধারণ কাজ ক‌রে আপনি ফিট থাকছেন। যদি জিম স্টেটাস সিম্বল হয় সেটা আলাদা বিষয়। এখন অনেকে প্রশ্ন করবেন। আমা‌দের দেশে রিক্সা, গাড়ী, ঘোড়া ও ধূলা বালির জন্য হাঁটা যায় না। এটা খোড়া অজুহাত। অনেক অনেক মানুষ হাঁটছে। তবে তারা নিন্ম শ্রেণী। কিন্তু স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কাজে যাওয়ার পথে হাঁটা শুরু করুন, বাজা‌রে হেঁটে যান। গবী‌বের এই  স্টাইল‌টি ফ‌লো করলে আমরা অনেক বেশী সুস্থ থাকব। বাচ্চাদের সর্বদা হেঁটে বা বাই সাইক্যাল চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য আমরা উৎসাহ দি‌তে পারি। এতে তা‌দের স্বাস্থ্য অনেক ভাল থাকবে।
ইউ‌রোপ ও আমেরিকায় অনেক মানুষ আছে তারা নাকি জিমের মেম্বারশীপ ক‌রে সাধারণ বা নিন্ম‌বিত্ত মানুষ একটা মাত্র কারণে তা হল ভাল পরিবেশে শাওয়ার নেয়ার জন্য। কারণ সেই লোকগু‌লি বস্তিতে থা‌কে বা গাড়ী‌তে থা‌কে। অথচ আমা‌দের দেশে জিম মেম্বারশীপ হল স্ট্যাটাস সিম্বলধরীরা ব্যবহার ক‌রে। মধ্যবিত্তদেরও রোগ‌টি আছে। তারা জিমের জন্য উপার্জনের বড় একটা খরচ ক‌রে ফেলে। আমার উপদেশ মূলত তা‌দের জন্য। শরীর ফিট রাখার এত এত ব্যবস্থা থাকতে, কেন এত অপচয়ে যাওয়া। স্বাস্থ্য সচেতনরা তেড়ে আসবেন। কি বলছেন, আজে বাজে কথা। স্বা‌স্থ্যের জন্য বিনিয়োগ এটা তো অতি উত্তম। আমি বলব, ধনীদের জন্য জিমে বিনিয়োগ উত্তম। মধ্যবিত্তের জন্য জিম মেম্বারশীপ অপচয়। একজন মধ্যবিত্তের হাঁটা ও কায়িক পরিশ্রমের জন্য এত এত সুযোগ আছে তারা একটু নজর দিলেই ফিট থাকার মাল মশল্লা পেয়ে যাবে। কায়িক পরিশ্রমযুক্ত লাইফ স্টাইল অনেক বেশী জরুরী। আমাদের দেশে দুই কদম আমরা হাঁটতে চাই না। রিক্সা নেই। সামর্থ্য থাকলে গাড়ী ব্যবহার করি। অথচ সুস্থ ও ভাল থাকার জন্য কর্মস্থলে আসা যাওয়াটা হেঁটে করাটা সবচেয়ে ভাল। বিকালে খেলাধুলার সুযোগ না থাকলে হাঁটার অভ্যাসটা অনেক ভাল হতে পারে। অনেক টাইট ডায়েটিং করেও হাঁটার অভ্যাস না থাকার কারণে অনেকেই ওজন কমাতে ব্যর্থ হয়।
যারা অফিসে বসে বসে কাজ করেন তারা অফিসে আসাটা সকালে হেঁটে আসতে না পারলেও ফেরত যাওয়াটা হেঁটে  করতে পারেন। ফেরত যাওয়ার পথটা গাড়ীতে বেশী সময় ও দূরের রাস্তা হলে ৪০/৫০ মিনিট হাঁটার রাস্তা থাকতে গাড়ী ছেড়ে দিলে মন্দ না। আশে পাশে বাজারে যাওয়ার জন্য গাড়ী, রিক্সা ইত্যাদি ব্যবহারটা পরিহার করাটা বাঞ্ছনীয়। কেবল মাত্র হাতে মালামাল থাকলে গাড়ী বা বাহন সাথে যেতে পারে।
আমি অনেক দেশেই দেখেছি মানুষ অনেকটুকু রাস্তা হেঁটেই যায়। আমাদের দেশের মত ছোট ছোট দূরত্বে রিক্সা বা বাহন ব্যবহার করতে তারা অভ্যস্ত হয় না। বেশীর ভাগ দেশেই আমাদের দেশের মত ছোট রাস্তা পার হওয়ার জন্য রিক্সার মত স্বল্প খরচের বাহন নেই। তাই গাড়ীর স্ট্যান্ড ও পার্কিং পর্যন্ত হেঁটেই যেতে হয়। এভাবে হাঁটার অভ্যাস হয়ে যায়। পরিশেষে বলব, আমাদের সুস্থ ও কার্যক্রম থাকার জন্য জিম নয় বরং আমাদের সকলকে হাঁটাটা অভ্যাসে আনাটা অনেক বেশী জরুরী।

Thursday, November 29, 2018

উত্তরাধিকারীদের জন্য চাকুরী ভাল না ব্যবসা


আমি আজ চাকুরী করছি। সরকারী চাকুরী। সন্তোষজনক বেতন ও সুযোগ সুবিধা। আমি যখন অবসর নিব। আমার সন্তানের কি হবে। তাকেও পড়তে হবে। চাকুরীর জন্য যুদ্ধ করতে হবে। আমার ছোট ভাই ব্যবসা করে তার সন্তানও পড়াশোনা করে। তার সন্তানও চাইলে ছোট ভাইয়ের ব্যবসাটি ধরতে পারে বা চাকুরী করতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত আমার সন্তানের মত দ্বারে দ্বারে চাকুরীর জন্য যেতে হবে না। কারন ব্যবসায়ী ছোট ভাইয়ের সন্তান যাই করুক উত্তরাধিকারী হিসাবে আয় নিশ্চিত। এটা হল ব্যবসায়ীদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। তাহলে চাকুরীজীবীদের জীবনের নিরাপত্তা হয়ত ব্যবসা থেকে কিছু বেশী। ব্যবসা আজ ভাল, কাল মন্দ। সর্বদা একটা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যায়। তবে কষ্ট করে ব্যবসায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারলে ও ক্রমাগত ব্যবসাটি সময়ের সাথে উপযোগী করে নিতে পারলে জেনারেশনের পর জেনারেশন নিরাপদ হয়ে যায়। জেনারেশনকে আর চাকুরীর জন্য সময় ও যৌবনের মূল্যবান শক্তি নষ্ট করতে হয় না। একজন বিসিএস করা জাঁদরেল সচিবের ছেলে হয়তবা প্রাইভেট কোম্পানিতে ক্লার্ক আর অফিসার এর মাঝামাঝি এক্সিকিউটিভ নামের স্বঘোষিত অফিসার পদে চাকুরী করতে হচ্ছে। কিন্তু একটা কোম্পানির মালিকের যেন তেন ইন্টারমিডিয়েট বা গ্রাজুয়েশন করা ছেলে মেয়ে বাবার কোম্পানির এমডি বা ডাইরেক্টর হয়ে যাচ্ছে। একসময় জাঁদরেল চেয়ারম্যান হয়ে যাচ্ছে। এ এক চমৎকার কর্মসংস্থান। এ ধরনের কর্মসংস্থানের কাছে জাঁদরেল সচিব বা যে কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ফেল করে যাবে। অথচ সন্তান থাকলে তার প্রতিষ্ঠাতা সবচেয়ে জরুরী। চাকুরীতে যত জাঁদরেল লোকই হোক, যত বেতন পাক, সে ফেল করবে যেন তেন ব্যবসায়ীর কাছে। কারণ একটা সাধারণ ব্যবসায়ী জানে কিছু কাজ না পাক, তার উত্তরাধিকারীরা তার ব্যবসা ধরে অন্তত তার মত জীবন যাপন করতে পারবে। চিন্তা কম। সুযোগ বেশী। নিরাপদ বেশী। তাহলে আমাদের মত চাকুরীজীবীদের উপায় কি। একটা উপায় আছে প্রতিষ্ঠান তৈরী ও সন্তানদের সেখানে প্রতিষ্ঠা করা। অনেক সচিব বা চাকুরীদের সন্তানকে দেখেছি বাবার সহায়তায় নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। এটা কিন্তু মন্দ ধারনা নয়। বরং এর মাধ্যমে জেনারেশনের পর জেনারেশনের কর্ম সংস্থান তৈরী করা যায়। যে কোন ভাবে চিন্তা করি না কেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই টেকসই ব্যবস্থা। ব্যবসায় অনেক রিস্ক ও অনেক উত্থান পতন আছে। যদি সন্তানরা ছোটবেলা থেকেই শিখতে পারে তবে তা বড়ই কার্যকরী হবে।
প্রফেসর ইউনুস তাঁর অনেক অনেক লেকচারে বলেছেন মানুষ ক্রিয়েটিভ। তারা উদ্যোক্তা হওয়ার জিন নি‌য়ে জন্ম গ্রহণ ক‌রে। তাদের মাঝে ধী‌রে ধী‌রে সমাজ ও পারিপার্শ্বিকতা তা‌কে দাসত্ব শিখায়। সমাজের বুদ্ধিমান মানুষ সমাজের কম অগ্রসরমান মানুষ‌কে দাসে পরিণত ক‌রে। তার সাথে যোগ হয় আর্থিক অবস্থান। এটা মানুষ‌কে দুর্বল ক‌রে ফেলে। মানুষ আর্থিক নিরাপত্তা পে‌তে সমাজের দাসত্ব মেনে নি‌তে থা‌কে। দাসত্বের ভদ্ররুপ হল চাকুরী। সুতরাং চাকুরীর নিরাপত্তা শুধু নিজের জীবদ্দশা পর্যন্ত। সন্তান‌দের নিরাপত্তা সে দি‌তে পা‌রে না। চাকুরের সন্তান চাকু‌রে হওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা তদবির কর‌তে থা‌কে। কখনও সফল হয়। কখনও সফল হয় না। হা‌তে গোনা অল্প কিছু চাকুরীজীবীর সন্তান হয়ত ব্যবসায়ী হয়। চাকুরীরা ব্যবসার অনিরাপদ কিন্তু স্বাধীন জীবন‌কে ভয় পায়। নিদিষ্ট ইনকাম তা‌দের কষ্টকর মনে হলেও মনে দেয় প্রশান্তি ও নিরাপত্তা। ইচ্ছে হলে কাজ করব নয়ত করব না। বা এমন ব্যবস্থা করব যেন ঘুমিয়ে থাকলেও টাকা প্রাপ্তি হয় মূলত এটাই হল ব্যবসায়ীর কাজের ধরন।
পরিশেষে বলব, নিজের ভবিষ্যৎ বংশধর‌দের নিরাপত্তার জন্য ব্যবসা, প্রতিষ্ঠান ও কোন কাজের স্কিল সন্তান‌দের মাঝে প্রসারিত করাটা অনেক প্রয়োজন।
একজন এয়ার কন্ডিশন, ফ্রিজ ও অন্যান্য কারিগরি কাজে দক্ষ সে চাকুরী পেলেও কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার শখ ও দক্ষতার কাজ‌টি সর্বদা চালু রাখ‌তে পা‌রে এমনকি তার বংশধর‌দের জন্য সু‌যোগ সৃষ্টি করে রাখ‌তে পা‌রে যেন, তার পরের প্রজন্ম কোন স্ক‌িল, দক্ষতা ও প্রতিষ্ঠান নি‌য়ে নিরাপদ হ‌তে পা‌রে। পরিশেষে বলব, চাকুরী নয়, উদ্যোক্তা হওয়াটাই সবচেয়ে ভাল পন্থা।

Thursday, November 22, 2018

মানুষের আশার প্রতিফলনে দেশের নেতৃত্ব


পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক পদ্ধতি হল গণতন্ত্র। রাশিয়ার সমাজতন্ত্র খতমের পর সেটা প্রমাণিত। অপর দিকে ইসলাম পুঁজিবাদী সমাজ বর্জন না করে যাকাত ও মানবীয় ব্যবস্থার দিক নির্দেশনা দিয়ে গণতন্ত্রের বিরোধ করেনি।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সকল মানুষ ভোটের অধিকারের মাধ্যমে তার আশার প্রতিফলন রাখতে চায়। সেটা কি গণতান্ত্রিক ভোটের মাধ্যমে হয়? প্রতিটা মানুষের ভোটের মূল্যমান ঠিক থাকে? থাকে না। যদি থাকত, ভোট ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দটা আসত না। পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশে এটা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নানা ইঞ্জিনিয়ারিং। উন্নত দেশের মধ্যে আমেরিকায় গণতন্ত্র আছে। সেখানেও মানুষের ভোট বেশী পেয়েও নাকি হিলারি নির্বাচিত হয়নি। কারণ তাদের সিস্টেমে স্থানে স্থানে জয়লাভ করতে হবে। টোটাল ভোটে নয়। কোথাও বেশী ভোটে জয়লাভ আবার কোথাও অল্প ব্যবধানে হারা। এই ধরনের সিস্টেম আসলে নির্ধারণ করা অতন্ত্য কষ্টকর যে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
বাংলাদেশে কোন দলের মনে করি শতকরা ৪০/৪৫ ভাগ ভোট আছে। তবুও তারা সরকার গঠন করতে না পারার ঝুঁকিতে থাকবে। আবার কোন দলের শতকরা ৩০/৩৫ ভাগ জনপ্রিয়তা নিয়েও সরকার গঠন করতে পাররে। এটাই ইঞ্জিনিয়ারিং। যদি এটা হয়, তবে সেই গণতন্ত্র আসলে কারোর জন্যই ভাল নয়। গণতন্ত্র যদি প্রকৃত অর্থেই থাকতে হয়, তবে সকল ভোটারের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। কোন এলাকার কেউ নির্বাচিত হওয়া প্রয়োজন তার ব্যক্তিগত ইমেজে। কিন্তু তা কি হচ্ছে। প্রার্থী নির্বাচিত হচ্ছে দলের কারণে। দলে আবার তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন একটা বাণিজ্যের কারণে। এটা কি গণতন্ত্রের জন্য ভাল। মোটেই না। যারা পলিটিকাল সাইন্স পড়ে তারা হয়ত রাজনৈতিক বিষয়ের অদ্যপান্ত জানবেন। তবে আমার মত একজন সাধারণ লেখক এটা জানি। বর্তমান সিস্টেমগুলো ভাল হচ্ছে না। এতে সীমাবদ্ধতা আছে। অসন্তোষ আছে।
এটা কি এমন হতে পারে, সমস্ত নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা নিজেদের মত নমিনেশন নিবে। এখন মনে করি, কুমিল্লা নির্বাচনী এলাকা-১ পাঁচজন প্রার্থী হল। দুইলাখ ভোটের মধ্যে ৬০ ভাগ কাস্ট হল। ১,৬০,০০০ ভোট। এখন মনে করি নির্বাচিত প্রার্থীদের ক=৭০,০০০ খ=৫০,০০০০ গ=১৫,০০০ ঘ=১০,০০০ ঙ=৫,০০০।
প্রার্থীদের মধ্যে ক মনে করি এক্স পার্টি। আর খ,,ঘ ও ঙ এই চারটি হল ওয়াই পার্টির। এখন দেখুন, এক্স পার্টি প্রার্থীর ভোট হল ৭০ হাজার যা একজন প্রার্থী দিয়েছে। অপর দিকে ওয়াই পার্টির চারজন মিলে পেল ৮০ হাজার। এবার দেখুন এমপি এক্স পার্টির লোক নির্বাচিত হলেও পার্টির ভোট বেশী হবে ওয়াই পার্টির। এখন এমন হতে পারে এক্স পার্টির এমপি বেশী হলেও সরকার গঠন সেই করবে, যার ভোট বেশী। হয়তবা ওয়াই পার্টিসরকার গঠন করল। সেই দলের প্রধান হবেন, সরকার প্রধান। মন্ত্রীরা হবে দলীয় ভোট সংখ্যার উপর ভিত্তি করে। এতে জনগণের ভোটের প্রকৃত মূল্যায়ন হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য, পার্টির মধ্যে গণতন্ত্র না থাকা  ইত্যাদি সমস্যা দূর হবে। যারা নির্বাচিত হবে তারা পার্টির ইঞ্জিনিয়ারিঙের উপর নির্ভর করতে হবে না। তারা প্রার্থী হবে পার্টির নাম ডিক্লেয়ার দিয়ে বা স্বতন্ত্র হিসাবে। যার ফলে একাধিক প্রার্থী আসবে একই দল থেকে।
আমি যেটা বর্ণনা করলাম, এতে কোন দল কোন প্রার্থীকে নিয়ে ব্যস্ত হবে না। এখন প্রার্থী নির্বাচন করে পার্টি প্রধানরা। ফলে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী হয় না। কিন্তু পার্টির ব্যানারে পাশ করে যায়, কিন্তু জনপ্রিয় হওয়া যায় না। আমার আইডিয়ায় সকল প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে নিজের ইমেজ ও জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে পাশ করবে। অপর দিকে একাধিক প্রার্থী দিয়ে ভোট ভাগ হয়ে যাবে এই চিন্তার কোন কারণ নাই। সকল প্রার্থীর সকল ভোটই তখন দলের জন্য মূল্যবান। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যারা পাশ করেনি কিন্তু ভোট পেয়েছে তারা যখন ফলাফল হওয়ার পর বিভিন্ন পার্টিতে যোগ দিবে। তাদের ভোটও কাজে লাগবে।
খেয়াল করে দেখুন, এতে সকল প্রার্থী ব্যস্ত হবে পার্টির তাঁবেদারি না করে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হতে। আবার পার্টি সরকার গঠন করে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রার্থীর উপর নির্ভর না করে সার্বিক ভোট বাড়াতে চেষ্টা করবে। ইমেজ বাড়াতে চেষ্টা করবে। দলে দলে কোন্দল কমে যাবে। মারামারি কমে যাবে। আগে অনেক জটিল হিসাব হলেও এখন মূহুর্তের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বলতে পারবে কোন প্রার্থী কত ভোট পেল ও কোন দল কত ভোট পেল একটা মাত্র ক্লিক। অপর দিকে পার্টি প্রধানের জনপ্রিয় একাধিক প্রার্থীর মধ্যে বাছাই করার প্রয়োজন হচ্ছে না। জনগণ ভোটের মাধ্যমে বাছাই করে দিচ্ছে। ক্ষমতা বিহীন দলগুলো অনর্থক সমস্যা করবে না। কারণ তাদের ভোট অনুযায়ী তারা মন্ত্রিত্ব ও অন্যান্য ক্ষমতায় থাকবে। তাই সাধারণ জনগণ যোগ্যকে ভোট দিলে সে যেই পার্টিরই হোক তার একটা সুযোগ থাকবে মন্ত্রী হওয়ার। এভাবে চমৎকার একটা ভারসাম্য আসবে। এটা হয়ত থিংক ট্যাংকরা ভেবে দেখতে পারেন।

Friday, November 16, 2018

বর্তমান দামী খাবার


ছোট‌বেলা দেখতাম বাবার কাছে গ্রামের অভাব ও অনটনে পড়া কেউ কেউ পড়া‌শোনার জন্য আর্থিক সাহায্য চাইতে আসত। তাদের অনেকে সন্তান নি‌য়ে বলত, সন্তান অনেক পড়া‌শোনা ক‌রে সেই  অনুযায়ী মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ খাওয়া‌তে পা‌রে না। কলের বিবর্তনে আজ আমরা এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছি। আজ পাঙ্গাশ ও তেলাপিয়া ঘরে ঘ‌রে খায়। ডিম অনেক অনেক উৎপাদন হয়। কোন পরিবারের বাচ্চারা ডিম ভাগ ক‌রে খায় জানা নেই। বয়লার মুরগীর ব‌দৌল‌তে মাংসের ঘাটতি নেই। দুধ উৎপাদন বাড়ছে। হয়ত দুধ তেমন না পেলেও দুগ্ধজাত পণ্যের অভাব নেই।
বিপদ হল ভাজা পোড়া ও মিষ্টি আইটেমে বাজার সয়লাব। তাই কোন দরিদ্র পিতামাতাও বাচ্চা‌দের মুরগী, মাছ ও ডিম থেকে বঞ্চিত করছে না। রাস্তা ঘাটে অধিক ওজনকারী বাচ্চার সংখ্যা বাড়ছে। খাবারের দাম কমেছে। উচ্চ ক্যালরির খাবার এখন অনেক সস্তায় পাওয়া যায়। আপনি ধরুন পাঁচটি  গরম ভাজা পুরি খেয়ে ফেললেন। পাঁচটি গরম গরম জিলাপি খেয়ে ফেললেন, কি পরিমাণ ক্যালরি নি‌য়ে ফেললেন, ডাই‌টে‌শিয়ানরা হিসাব ক‌রে হয়রান হ‌য়ে যাবে। আপনি বিশ টাকায় দু‌টি বড় বড় সাগর কলা খেয়ে ফেললেন। কম পরিশ্রমী মানুষ সারাদিনের অর্ধেক ক্যালরি ওই দুইটি কলায়ই পেয়ে যাবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রচারণার যুগে হাই ক্যালরি ফুল আর হাই ক্যালরি ফ্যাটযুক্ত খাবার আজ দামী হলেও শিক্ষিত ধনী‌দের কাছে পরিত্যাজ্য আজ ধনীরা খুঁজে লো ফ্যাট ও‌ লো ক্যালরি ফুড। তারা জানে এসি গাড়ী, এসি বাড়ী ও কায়িক প‌রিশ্রমবিহীন জীবন তা‌দের হাই ক্যালরি ফুড ও হাই ফ্যাট ফুড তাদের জীবন সংকীর্ণ ক‌রে দিবে। তাই পেট ভরবে গা‌য়ে কম লাগবে সেই  খাবারগু‌লি ধনীরা খোজ করেন। একটা হাই ক্যালরি কলা খাওয়ার চে‌য়ে এক কেজি ড্রাগন ফল খাওয়াটা ধনী‌দের কাছে বেশী আগ্রহের। অথচ একটা কলার দাম দশ টাকা আর এক কেজি ড্রাগন ফলের দাম ৫০০/৬০০ টাকা। এক কেজি আলু অনেক ক্যালরি দিবে দাম  ২০ টাকা। অপরদিকে এক কেজি মাশরুম অনেক পুষ্টি দিবে দাম ১০০০ টাকা। তাই পুষ্টি আগে ক্যালরি পরে। মোটা ঠেকা‌নোটা মূল ব্যাপার। আজ মজাদার খাবার কায়িক পরিশ্রমকারী দরিদ্রের দখলে। পানসে, তৈল কম, চিনি কম ও লবণ কম খাবার ধনীর ভাগ্যে। আজ কোন দরিদ্র বলবে না যে, টাকা নাই। ছেলে মেয়েকে ডিম দুধ খাওয়া‌তে পারিনা।
খাদ্যের চাহিদার এই ধরনের পরিবর্তনে অবাক হতে হয়। হয়তবা ২০/২৫ বছর আগে ঘি ভাজা প‌রোটা ও ঘির তৈরি নানা আইটেম ছাড়া ধনীর ব্রেক ফাস্ট কল্পনা করা যেত না। আজ ধনীর প্লেটে ওরস, কন‌ফ্লে‌ক্সের মত ফাইবার রিচ খাবার। ধনীর ডাই‌টে‌শিয়ানরা হয়রান হ‌য়ে যায়, লো ফ্যাট ও লো ক্যালরি খাবার বের কর‌ার জন্য। লো ফ্যাট ও লো ক্যালরি খাবার আজ অনেক অনেক বেশী চাহিদা সম্পন্ন ও দামী।
তিন তারা ও পাঁচ তারা হো‌টেলগু‌লো মাশরুম, ক্যাপ‌সি কাম, বেবি কর্ণ ইত্যাদি ছাড়া কারী কল্পনা কর‌তে পা‌রে না। অথচ খাবার গুলি উচ্চ ক্যালরি বা উচ্চ ফ্যাট-যুক্ত নয়। অপরদিকে উচ্চমূল্যের অলিভওয়েল দি‌য়ে সমস্ত রান্না ক‌রে দিবে। বিল যদিও আকাশচূম্ভী। তবুও ধনীর জন্য কুছপ‌রোয়া নেহি। ভারী শরীর ও ক্ষতিকারক ‌রোগ থেকে বাচাটা জরুরী। ধনী‌দের ডাই‌টে‌শিয়ানরা না হয় বেঁছে বেঁছে উচ্চমূল্যে পুষ্টিকর খাবার বের ক‌রে দিচ্ছে বা অনুপ্রাণিত করছে। কিন্তু মধ্যম আ‌য়ের দোকানদা‌রের কি হবে। দিনের বেশীরভাগ সময় কায়িক পরিশ্রম কম ক‌রে দোকানদারী করছেন। তিনি হয়তবা ধনী‌দের মত দামী মেনু‌তে যাচ্ছ‌েন না। তিনি খাচ্ছেন পেঁয়াজু, লুচি ও জিলাপির মত মূখ‌রোচক খাবার। এই  খাবারগু‌লো দাম কম ও ওজন বাড়ায়। তবে কায়িক পরিশ্রমীরা এরুপ খাবার বেশী খেলেও পরিশ্রম ক‌রে তা ঝাড়িয়ে ফেলে। গা‌য়ে রাখ‌তে দেয় না।
বর্তমানকালে পুষ্টিকর খাবার দামী ও কমদামী দু‌টোই আছে। খাবার বাছাই কর‌তে হবে লাইফ স্টাইল ও পরিশ্রমের প্যাটার্ন অনুযায়ী। আজকাল মা‌য়েরা বাচ্চা‌দের বাটার, চিজ ও ভাজা পোড়া অনেক আইটেম খাওয়ায়। কিন্তু বেশীর ভাগই মায়েরা বাচ্চা‌রা কতটুকু পরিশ্রম করছে তার উপর মেনুটা নির্ধারণ করেন না। যা অতি জরুরী। নতুবা বাচ্চারাও ধী‌রে ধী‌রে মোটা হ‌য়ে অকেজো হ‌তে থাকবে। সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারেও হাই ফ্যাট ও হাই ক্যালরি খাবার অধিক গ্রহনের ফলে সাধারন পরিবারেও মোটা মানুষের সঙখ্যা বাড়ছে। তাই অল্প পরিশ্রমী মানুষের উচ্চ ফ্যাট ও উচ্চ ক্যালরির খাবার পরিহার করাটা অতি জরুরি। হয়ত ধীরে ধীরে মানুষ সচেতন হবে ও সমাজে পরিবর্তন আসবে।


Wednesday, November 7, 2018

প্রাইভেট ক্লিনিক প্রাইভেট কাজ কারবার


আমি আমার নিকটাত্মীয়‌কে একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করিয়েছিলাম। স্বাভাবিক কারণে আত্মীয়া‌কে দেখা ও সেবা করার জন্য নিয়মিত ক্লিনিকটিতে যে‌তে থাকলাম। মাঝে মাঝে ঔষধ কেনা ও এটা ওটার ব্যবস্থা করার মত খুচ‌রো কাজ করে সহায়তা করলাম। ক্লিনিকটি জেলা শহরের প্রায় ২০/২২ বছর পুরানো। আমার সরকারী চিকিৎসার সুযোগ থাকায় আমি ক্লিনিকের পদ্ধতির সাথে পরিচিত নই। অনেক ক্লিনিক আছে ওয়ান স্টপ সেন্টার টাইপ। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আপনাকে ঘাটে ঘাটে ঘুরতে হয় এখানে সবকিছু অটোমেটিক। প্রথমত কোন রোগী আসার সাথে সাথে স্ট্রেচার বা হুইল চেয়ারে করে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নেয়া এবং ক্লিনিকের ওয়ার্ডে নেয়ার জন্য কিছু ইয়ং ছেলেদের ক্লিনিকরে দরজায় থাকবে। রোগী আসার সাথে সাথে তারা তাড়াহুড়ো করে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। তারপর ডাক্তারের কাছ থেকে ক্লিনিকের বেডে বা কেবিনে নিয়ে যাবে। প্রথম দেখায় আপনি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করবেন। কিছুক্ষণ পর আপনার ভুল ভাঙবে যখন আপনার কাছে স্ট্রেচারে রোগী উঠানো ও নামানো বাবত ৫০০/১০০০ টাকা দাবী করে বসবে। আপনার কাছে অযৌক্তিক মনে হলেও আপনাকে মানতে হবে। কারণ আপনার রুগীকে উঠানামা  করিয়েছে। অনেকটা নতুন জামাইয়ের হাত ধোয়ানোর মত। আপনি না চাইলেও আপনাকে হাত ধোয়ানো হবে বা টাকা নেয়া হবে। আপনি ধরে ধরে রোগীকে তুলতে পারলেও তাকে  হুইল চেয়ারে বসানো হবে বা স্ট্রেচারে করে আনা হবে এবং আপনার কাছে বিল দাবী করা হবে। যেটার সাথে ক্লিনিকের বিল জড়িত নয়। এমনকি অনেক ক্লিনিকের চাকুরীরত লোকদের বাইরে ক্লিনিককে উল্টো চাঁদা দিয়ে ওরা রোগী উঠানো নামানোর কাজ করে থাকে। অথচ এটা ক্লিনিকের সেবার আবশ্যক অংশ হতে পারত। তা না হয়ে রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায়ের একটা মাধ্যম বলা যায়। অনেক ধনীরা হাসিমুখে টাকাটা দেন। অনেক সাধারণ মানুষের কাছে এটা চাপ মনে হবে।
এরপর আসা যাক ক্লিনিকের রুম ঝাড়ু দেয়া বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা। অনেক ক্লিনিক আছে কোন ঝাড়ুদার রাখে না। রোগীরা চাইলে তাড়া আসে ঝাড়ু দেয়। রোগীরা পয়সা দেয়। চুক্তিভিত্তিক রোগীর সাথে পেমেন্টে কাজ। রোগী সামর্থ্যবান হলে সেবা পাবে অন্যথায় রোগীর বন্দোবস্ত। তবে প্রায় সকল ক্লিনিকের কয়েকজন স্থায়ী ক্লিনার থাকে। তারা সামগ্রিক ভাবে কেবিনের বাইরের ক্লিনিকে কাজ করে। অনেক ক্লিনিকে আছে রোগী ছাড়ায়ে নেয়ার সময় ক্লিনিকের সমস্ত ক্লিনারকে মোটা অংকের একটা টাকা তারা এক সাথে দাবী করে ও রোগীকে তা দিতে হয়। আবার নার্স ও অন্যান্য স্টাফরাও রোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় করে। বিশেষ করে বাচ্চা হওয়া মায়েদের জন্য জনে জনে মিষ্টি খাওয়ানোর একটা রেওয়াজ তারা রেখেছে। এই মিষ্টির খরচটা আবার টাকায় দিতে হয় কষ্ট করে মিষ্টি কেনার প্রয়োজন নেই।

দেশের সমস্ত ক্লিনিক বিশাল বিশাল বিল ধরিয়ে রোগীর গলা কাটছে তারপর যোগ হয় স্ট্রেচার বেয়ারার বিল ও অন্যান্য ব্যক্তি বিশেষের বিল। এটা থেকে মুক্তির উপায় হয়ত কোন একদিন ডাক্তাররা বা হাসপাতাল পরিচালকরা বের করতে পারবে।

ক্লিনিকগুলির নীচে ঔষধের দোকান থা‌কে। এরা ঔষধের দাম বেশী নেয়, এতে সন্দেহ নেই। তবে ভাল বিষয় হল, রিক্সা ভাড়া বা গাড়ী ভাড়া ক‌রে দূরে যে‌তে হচ্ছে না। এটা খারাপ বিষয় নয়। বিপত্তিটা হয় তখনই যখন এরা বড়াবা‌ড়ি রকম বেশী দাম নেয়।

প্রাইভেট ক্লিনিক সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক সীমাবদ্ধতা‌কে দূর করেছে। এটা সঠিক। অস্থায়ী শ্রমিক ও দালাল ইত্যাদি শ্রেণী তৈরি করছে। যা ভাল লক্ষণ নয়। চিকিৎসার সেবাগু‌লো রাষ্ট্রীয়ভাবে যত সুসংহত করা যাবে, সাধারণ মানুষ তত উপকৃত হবে। প্রতিটি ক্লিনিকে অনেক মানুষ আসেতা‌দের সুচিকিৎসা প্রয়োজন। তবে কোন ক্লিনিক সমাজের জন্য খারাপ থেকে ভালটাই বেশী ক‌রে। তাই ক্লিনিক বন্ধ না ক‌রে নিয়ন্ত্রণ জরুরী। প্রথম নিয়ন্ত্রণ; রোগী উঠা‌নো নামা‌নো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ক্লিনিকের বিলের অংশ বা ক্লিনিকের সেবার অংশ হওয়া প্রয়োজন। বাচ্চা হ‌লে মিষ্টি খাওয়া‌নোর প্রাক‌টিস ক্লিনিকে না থাকাই ভাল। যদি এগু‌লো বন্ধ করা না যায়, তাহলে রেগু‌লেট কর‌তে হবে। রোগী‌কে উঠা‌নো নামা‌নোর খরচ ঝুলিয়ে দেয়া যে‌তে পা‌রে। রোগীর কেবিন  প্রতিবার পরিষ্কারের জন্য নিদিষ্ট বিল নির্ধারণ করা যে‌তে পা‌রে। ক্লিনিকের মেডিসিন কত শতাংশ বেশী দাম রাখবে তাও রোগী‌কে অবগত কর‌তে পা‌রে। এত‌ে‌ রোগীর অ্যা‌টে‌ডেন্টরা ঔষধের দামের স্বচ্ছ ধারনা পাবে ও প্রয়োজ‌নে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য তারা বাইরের ফার্মেসি থেকে ক্রয় কর‌তে পারবে। তাই ক্লিনিকের আওতাধীন ফার্ম‌েসীগু‌লো‌তে নিয়ন্ত্রন প্রয়োজন। ক্লিনিক সমাজের অনেক উপকার করছে। কর্মসংস্থান করছে। তাই ক্লিনিকগুলো মান নিয়ন্ত্রন করে জনসেবার বাড়ানোর ব্যবস্থা করাটা অতি জরুরী।



Wednesday, October 31, 2018

একালের সেনসিটিভ ছেলেমেয়ে

ছোটবেলায় পিতামাতার কাছ থেকে আমরা যা মার খেতাম, এখনকার বাচ্চারা হয়ত তা কল্পনা করতে পারবে না। আমাদের সময় মারধর হত ঘরে ও স্কুলে। পিতা মাতা ও স্কুলের টিচাররা মনে হয় অথরাইজ ছিল মারধর করার জন্য। কারণে অকারণে বেতের বাড়ি ছিল একটা সহজ লভ্য বিষয়। স্কুল কলেজ থেকে বেতের বারি বিতাড়িত হ‌য়ে‌ছে। বেতের বারি ও সাথে অকথ্য বকাঝকা বোনাস থাকত। এখন বেতের বারি নেই। অকথ্য কথা বোনাস হিসাবে পাওয়া যায় না। এখনকার বেশীরভাগ পরিবারের ছেলেমেয়েদের দেখা যায় অনেক বেশী সেনসিটিভ। তারা বকা ঝকা সহ্য কর‌তে পা‌রে না। অল্প‌তেই  তারা ইমোশনাল হ‌য়ে যায়। এই  পৃথিবীর কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু ক‌রে সব ক্ষেত্রেই সহনশীলতা অনেক বেশী জরুরী। সব সময় ভাল ব্যবহার ও যথাযথ মর্যাদা পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষ উন্নতির জন্য ও পেটে খাদ্যের নিশ্চয়তার জন্য ছুটে চলেছে। প্রতিনিয়ত মানুষ যুদ্ধরত। এই  যুদ্ধ চলছে, থামার কোন সু‌যোগ বা লক্ষণ নেই। তাই উঠতি বয়সের বাচ্চা‌দের সহনশীল বানা‌নোটা অতি জরুরী।
আমি এক‌টি ঘটনা শেয়ার করছি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী একজন ছাত্র প্রিটেস্ট পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল না করার কারণে ক্লাস শিক্ষক পিতাকে ছেলেসহ প্রিন্সিপ্যালের সাথে দেখা করতে বললেন। এ খবর শোনার পর ছাত্রটি আপসেট হয় করে। এর তিন মাস আগে থেকে মাইগ্রেণের সমস্যাটা বেশী ছিল। তখন মাইগ্রেন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে পাঁচদিনই বিছানায় শোয়া। এভাবে দেড় মাস অসুস্থ থাকল, এর মধ্যে চার জন ডাক্তার বদল হয়েছে। কোন সুরাহা হচ্ছে না। মাইগ্রেন বেড়েই যাচ্ছে। চোখের চশমার পাওয়ার ঠিক, এক্সরে করে সাইনাসের কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। সিটি স্ক্যান ব্রেনের করে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। মাইগ্রেণের অনেক কারণ অজানা। কারণ পিতাকে নিয়ে প্রিন্সিপ্যালের মুখোমুখি হওয়ার হিমুলিয়েশন সে নিজের অজান্তে হয়তবা আঘাত পেয়ে থাকতে পারে। ফলে মাইগ্রেণের তীব্রতা এরুপ কোন অজানা কারণ থাকতে পারে। মাইগ্রেণের অনেক অনেক কারণ ডাক্তারদের অজানা। ছেলে পরীক্ষায় খারাপ করায় তাকে পেরেন্টসহ প্রিন্সিপ্যাল ডাকবে, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তা অনেক সেনসিটিভ বাচ্চারা মানসিক ভাবে মুষড়ে যেতে পারে এবং অসুস্থ হতে পারে।
তার মাইগ্রেণের ভয়াবহতায় দেড় মাস চিকিৎসা চলার পর তার সাধারণ পড়া‌শোনার ধারা বদল ক‌রে কম চাপ সৃষ্টি ক‌রে তার উপ‌যোগী বিষ‌য়ে পড়ার ব্যবস্থা করতে হল।
পৃথিবীটা আমরা যেভাবে চাই। সেভাবে পৃথিবীটা পাব না। আমরা যেভাবে চিন্তা করি। পৃথিবীর সব মানুষ সেভাবে চিন্তা করব‌ে না। সকল মানুষের আর্থিক অবস্থা এক রকম নয়। যেহেতু সমতা এক রকম নেই। মানুষের আচরণ এক হবে না। কখনও কর্মক্ষেত্রে  পাওয়া যাবে ভাল বস। কখনও পাওয়া যাবে বুলি বস। সমস্ত ধরনের বস‌দের সাথে কাজ করার প্রশিক্ষণ সেন্টার হ‌তে পা‌রে স্কুল বা কলেজ।
একটা ভাল বিষয় দেখলাম, এখনকার স্কুল গুলিতে ম‌টি‌ভেটর বা কাউন‌সিল‌রের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এটা একটা ভাল ব্যবস্থা। স্কুল‌ের বাচ্চা‌দের সব সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে খাপ খাওয়া‌নো শেখা‌নোটা অনেক বেশী প্র‌য়োজনীয়। তা‌দেরকে পৃথিবীর বাস্তবতা ‌শেখা‌নোটা অনেক জরুরী। পৃথিবীর সকল মানুষ কখ‌নো ভাল করা সম্ভব নয়। উন্নত পড়া‌শোনা। উন্নত জীবন বিধান দ্বারা মানুষের অপরাধ কমা‌নো ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু অপরাধ নির্মূল করা যাবে না। অপরাধ নির্মূল করার জন্য পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্য‌বো‌ধের বিকাশ অনেক বেশী প্র‌য়োজন। পিতামাতা‌কে সন্তান গ্রো‌মিং করার শিক্ষাটা গ্রহণ করার প্র‌য়োজন। স্কুল ও কলেজের শিক্ষক‌দের প্র‌য়োজন জীবনযাপন বিষ‌য়ে ম‌টি‌ভেশন করা। কিভাবে বিরূপ অবস্থা মোকা‌বেলা কর‌তে হবে তার উপর মনস্তাত্ত্বিক ট্রেনিং দি‌তে হবে। কিভাবে কারো টিজিং, এবিউজ ব্যবহার ও বুলি মোকা‌বিলা কর‌তে হবে তার ট্রেনিং এখনকার ছেলেমেয়েদের জন্য প্র‌য়োজনই নয়, অত্যাবশ্যকীয় বটে। পরিশেষে বলা যায়, ছেলেমেয়েদের পিতামাতা‌কে ডে‌কে হেনস্তা করা অপেক্ষা ম‌টি‌ভেটর বা কাউন‌সিলা‌রের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা বলে অতঃপর পিতামাতা‌কে ডাকাটা উত্তম। হুট ক‌রে পিতামাতা‌কে জবাবদী‌হিতা করার জন্য ডাকাটা ছেলেমেয়েদের নার্ভাস সিস্টেম ব্রেক কর‌তে পা‌রে।

Thursday, October 25, 2018

ধনী হয়েও শত্রু মুক্ত থাকা


বাংলাদেশে নাকি ১৭% হারে কোটিপতি বাড়ছে। যা কিনা বিশ্বের সর্বোচ্চ। আমাদের চারিদিকে অনেকের সুন্দর চকচকে গাড়ী ও চোখ ধাঁধানো বাড়ী আমাদের নজর কারে। এই ধরনের বাড়ী ও গাড়ীতে মানুষের নজর কারে। মনে করুন, আপনার কাছে একটি বাড়ী ও সম্পত্তি আছে; যার মূল্য দশ কোটি টাকা। এরূপ কোটি পতির সংখ্যা এই দেশে কয়েক লক্ষ। আপনি সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিলেন। আপনি দশ কোটি টাকা তিন চারটি ব্যাংকে ইসলামী আমানত হিসাবে রেখে দিলেন। আপনি যদি ৬% করে পান, তবে আপনি মাসে পাঁচ লক্ষ টাকা পাবেন। এখন এই পাঁচ লক্ষ টাকায় আপনি বাড়ী ভাড়া করলেন ৬০হাজার টাকায়, দুইটি গাড়ী ভাড়ায় রাখলেন অন কল ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা। ১ লক্ষ টাকা চলে গেল। এখন আপনার বাচ্চাদের জন্য খরচ করলেন মাসে আরো ১ লক্ষ টাকা। কাজের কাজের লোক ও বুয়া ৫০ হাজার টাকা। চিকিৎসা ও অন্যান্য ৫০ হাজার টাকা; মোট ১ লক্ষ। বাসার বাজার,নামীদামী হোটেলে খাওয়া ও বেড়ানো ১ লক্ষ টাকা। ইনকাম ট্যাক্স ও মাসিক সঞ্চয় ১ লক্ষ টাকা। তাহলে ৫ লক্ষ টাকার বিতরণ হয়ে গেল। খেয়াল করে দেখুন, আপনার বাড়ী নাই। গাড়ী নাই। আপনার শত্রু নাই। আপনার ভাড়া বাড়ী। ভাড়া গাড়ী। সমস্যা হল, পছন্দ হচ্ছে না, চালকসহ গাড়ী বদল করে নিলেন। বাড়ী পছন্দ হচ্ছে না, বদলিয়ে নিলেন। আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আপনি বাড়ী ও গাড়ীর মালিক না হওয়ায়, আপনি ভাদাইম্মা। আপনার আত্মীয় স্বজন আপনার ইগনোর করবে আপনার পিছনে লাগতে আসবে না। আপনার কাছে কিছু আশা বা চাহিদা করবে না। কারণ আপনি ভাদাইম্মা। অথচ আপনি নতুন চকচকে ভাড়া করা বাড়ীতে থাকছেন। চকচকে ভাড়া করা গাড়ীতে চড়ছেন। বাড়ীর জন্য আপনার ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না। গাড়ীর জন্য ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না। আপনি একাধিক ব্যাংকে টাকা রাখার কারণ হল, কোন ব্যাংক যদি হায় হায় হয়ে যায়, আপনি পুরোটা হারাবেন না। অনেকে বলবেন, জমি খাটি। অথচ এই জমি দখল হয়ে যেতে পারে। মামলা করে আপনি ফতুর হয়ে যাবেন। আপনি যদি একটি গাড়ী পোষেন আপনার মাসে ৫০ হাজার টাকা খরচ যাবে। আপনার গাড়ীর মেরামত ও দুর্ঘটনা। চালকের নানা রূপ উপদ্রব আপনার সহ্য করতে হবে। যদি পার্ট টাইম দুইটি গাড়ী চুক্তিতে ভাড়া রাখেন তবে বর্তমান বাজার দরে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টায় দুইটি গাড়ী চুক্তিবদ্ধ ভাড়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। কারণ আমাদের নিজের গাড়ী থাকলেও তা বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায় না বা লাগে না। কারণ আমাদের দেশের অনেক মার্কেট আছে বাড়ীর আশে পাশে। অনেক স্কুল আছে বাড়ীর আশে পাশে। তাই মাঝে মাঝে বেড়ানোর জন্য মূলত গাড়ীর ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। অনেকে চিন্তা করবেন বাড়ী না থাকলে মেয়ে বিয়ে দেয়া যায় না। ছেলে বিয়ে দেয়া যায় না। সেই সমস্ত ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের নামে কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট গ্যারান্টি হিসাবে প্রদর্শন করতে পারেন। এতে যদি কেই কনভিন্স না হয় হবে সেই বিয়ে না দেয়াই ভাল। ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রে এখনকার সময় কর্মজীবি হওয়াটা প্রয়োজন। প্রয়োজনে সাধারণ মানের পরিবারে হতে পারে। কর্মজীবীরা উদ্যমী ও পরিশ্রমী হয়। যে রোজগারের টেকনিক জানে, তার ভাতের অভাব হয় না।
অন্য কথায় চলে গেলাম। আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য হল, অত্যন্ত সহজ ও সাধারণ জীবন যাপন করা। বাইরের মানুষকে একটা সাধারণ লুক দেয়া। যাতে ঈর্ষা থেকে শত্রু কম হয়। শত্রু যত কম হবে, আপনি তত ভাল থাকবেন। আপনার স্ট্রেস কম থাকবে। স্থাবর সম্পত্তি যত কম থাকবে, আপনি তত মামলামুক্ত, কর মুক্ত ও মানুষের চোখ টাটানি থেকে দূরে থাকবেন। আপনি যখন ভাড়া করা বাড়ী ও ভাড়া করা গাড়ীতে থেকে ভাদাইম্মা হয়ে যাবেন; আপনার গরীব আত্মীয় স্বজনও আপনাকে তাদের অবস্থানে ধরে নিয়ে আপনার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখবে। তাই সমস্ত স্থাবর সম্পদ ছেড়ে দিয়ে ভাদাইম্মা হওয়াটা ভাল। এতে আপনি ধনী হয়েও শত্রু মুক্ত থাকতে পারবেন।

Thursday, October 18, 2018

নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়াটা কষ্টকর


আপনি গাড়ীর চালাবেন। সিটবেল্ট পড়ুন। মটর সাইকেল চালাবেন। হেলমেট পড়ুন। কনস্ট্রাকশনের কাজ করবেন। সেফটি গিয়ার পড়ুন। রান্না করবেন। গ্লাভস এ্যাপোন পড়ুন। আপনি বাগান করছেন। বুট ও গ্লাভস পড়ুন। আপনি প্লেট-ধুচ্ছেন। গ্লাভস পড়ুন। এগুলো আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনি পড়বেন। রান্না করতে গিয়ে আগুনের ছ্যাকা খাওয়া পুড়ে যাওয়া অহরহ ঘটছে। সবজি কাটতে গিয়ে হাত কাটছে অহরহ। গরম খাবার ও গরম পানি গায়ে ছিটে পড়তে পারে। এতে এ্যাপ্রোন কিছুটা প্রটেকশন দিতে পারে। গ্লাভস প্রটেকশন দিতে পারে। অথচ দেখুন কোনটাই আরামদায়ক নয়।
সড়ক দু:ঘটনায় অনেকেই মারা যায়। বেশীরভাগই সিট বেল্ট ছাড়া ও হেলমেট ছাড়া গাড়ী ও মটর স্যাইক্যাল চালনায় মৃত্যুকে আলিংগন করে। মটর সাইক্যাল যে চালায়, তার জন্য হেলমেট নিয়ে চালানো খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটা বিষয়। শুধু ডিটারমিনেশন ও বাহ্যিক নিয়মের কড়া চাপই পাড়ে একজনকে হেলমেট পড়াতে। একইভাবে মটর স্যাইক্যালের সহযাত্রী যিনি তিনি আরো বেশী অনিরাপদ। কারণ যিনি চালাচ্ছেন তিনি অনেক কিছু বুঝতে পারলেও পিছনে বসা ব্যক্তিটি নাও বুঝতে পারে। নিরাপত্তার জন্য পিছনের ব্যক্তির জন্য হেলমেট অনেক অনেক জরুরী। ছোট বাচ্চা, যাকে মটর সাইক্যালে বসানো হয়; তার জন্যও প্রয়োজন। অনেকে বছরের পর বছর মটর সাইক্যাল চালাচ্ছেন। অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী। তিনি অল্প দূরত্বের পথটুকু হেলমেট পড়তে চান না। অথচ দু:ঘটনার কোন সময় নেই। যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় তা ঘটতে পারে।
সেদিন দেখলাম, আমার ৮ বছরের মেয়ে হাতে গ্লাভস পড়ে মাইক্রোওভেন থেকে খাবার বের করার জন্য বসে আছে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম; যখন খাবার বের করবে, তখন পড়লেই হত। সে বলল, যদি খাবার বের কারার সময় যদি গ্লাভস পড়তে মনে না থাকে। আর খাবার ওভেন থেকে বের করতে গিয়ে যদি হাতটা পুড়ে যায়। আমি চিন্তা করে দেখলাম; এর মধ্যে যুক্তি আছে। খাবার হয়ে গেল, টুন টুন শব্দ হল; তখন গ্লাভস না পড়েই ওভেন থেকে খাবার বের করে আমরা হাতটা পুড়তে পাড়ি। তাই নিরাপত্তার এই ধারনাটি খারাপ নয়। আমাদের দেশে বেশীরভাগ মহিলারা অ্যাপ্রুন ব্যবহার করে না। তেলে ভাজাভাজি করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করে না। মুখে মাস্ক ব্যবহার করে না। মাথায় নেট ব্যবহার  করে না। শুধু খাবারের হাইজিনই নয়। নিরাপত্তার জন্য গ্লাভস ও অ্যাপ্রুন পড়াটা প্রয়োজন। সচেতনতা অনেক জরুরী বিষয়। দু:ঘটনা ঘটার আগে তা নিরোধ করতে হবে। ঘটে গেলে আর কিছুই করা থাকে না। নিরাপত্তার মানসিকতা একটা শক্তিশালী বিষয়। মানুষের মাঝে নিরাপত্তার সচেতনতা আনতে পারলে মানুষ তাকে নিরাপদ রাখার কৌশল ঠিকই বের করে নিবে।
নির্মানকর্মী কেন হেলমেট পড়বে। এটা বুঝানো জটিল বিষয়। কেন গ্লাভস পড়বে তাও তাকে বুঝানো কঠিন। কারণ এগুলো আরামদায়ক নয়। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ নির্মাণ শ্রমিক এগুলো পড়তে চায় না। অথচ দেশের বাইরে গেলে পড়ে। কারণ ওখানে সেফটি গিয়ার না পড়ে কোন দু:ঘটনায় পড়লে বীমা কোম্পানি কোন ক্ষতিপূরণ দিবে না। তাই সবাই সেফটি গিয়ার পরে। কষ্ট বা অস্বস্থি এমন একটা বিষয় মানুষ যথেষ্ট বাধ্য না হলে মানুষ মানতে চায় না। আমার এক আত্মীয়ের কাছে শুনেছিলাম, তার ক্যাবল টিভির ব্যবসা আছে। তার ক্যাবল টিভির এক শ্রমিক বিদ্যুতের পিলারের উপর দিয়ে লাইন নিতে গিয়ে তার ছুড়ে মেরেছে; ইনসুলিন ছাড়া বিদ্যুতের সরবরাহের লাইনের উপর দিয়ে। সেই সরবরাহের লাইনে ডিশের তার আটকিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে ছেলেটা মারা যায়। আমার আত্মীয়টি তার পরিবারের কথা চিন্তা করে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়। আমি আমার আত্মীয়কে বললাম, আপনি একটা ব্যবস্থা এরূপ করতে পারেন; আপনার মাঠের টেকনিশিয়ানরা হেলমেট, গ্লাভস ও বুট পড়ে কাজ করবে। উঁচু জায়গায় উঠলে তাকে হুক ব্যবহার করে আটকিয়ে নিবে। এটা দলিলে লিখয়ে নিতে পারবেন। তাতে আপনার লাভ হবে। আপনার কর্মীদের সেফটি আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন। মৃত্যুর মত ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বাঁচানো যাবে। আর কর্মী দলিল লেখার কারণে কষ্ট হলেও আপনার সেফটি গিয়ার ব্যবহার করবে।
পরিশেষে বলব, শারীরিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অনেক অনেক রিস্ক বা বিপদ আছে। এটার জন্য সর্বদা প্রস্তুতি লাগবে। সেটা কষ্টকর হলেও তা চালিয়ে যেতে হবে।

Thursday, October 11, 2018

বাংলাদেশের নারী ও বাই-সাইক্যাল


ঢাকা শহরে এক বছরের উপরে হল চাকুরীর সুবাদে পোস্টিং আছি। এই এক বছরে অনেক নারীকে গাড়ী ও মটর সাইক্যাল চালাতে দেখেছি। কিন্তু নারী বাই-সাইক্যাল চালনাকারী খুব বেশী একটা দেখা যায় না। আমি একবছর ঢাকায় থাকার পর ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এলাকায় একজন নারী বাই-সাইক্যাল চালনাকারী দেখেছি। মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। একটা ব্যাক প্যাক পিঠে নিয়ে বাই-সাইক্যাল চালাচ্ছে। যথেষ্ট ভাল চালায় তা বলা যাবে না। কারণ ট্রাফিক সিগন্যালে বাই-সাইক্যাল থেকে নেমে পড়ে সাইক্যাল হাতে দাড়াতে দেখলাম। আবার জ্যাম ক্লিয়ার হওয়ার পর সতর্কতার সাথে পার হল। আমার মনে আছে ২০১৬ সালে আমি বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা আইসিপি দিয়ে ভারতের কলিকাতায় ভাড়া করা কারে ভ্রমণ করি। ভারতের গেদে সীমান্ত থেকে কলিকাতার যাওয়ার পথে রাস্তায় একটা কমন দৃশ্য দেখেছি তা হল মেয়েদের বাই-সাইক্যাল চালানো। আমাদের দেশে গ্রামে এনজিওতে চাকুরীরত মেয়েরা সাইক্যাল চালায় এটা কমন একটা দৃশ্য। ছাত্রীদের বিশেষ করে ঢাকা শহরে ছাত্রীদের বাই-সাইক্যাল চালাতে দেখা যায় না। এর কারণ অনিরাপদ সড়ক হতে পারে। সাইক্যাল লেন না থাকাও একটা কারণ হতে পারে।
আমার অনেক লেখনী‌তে স্মার্ট সিটি নি‌য়ে কথা বলেছি। স্মার্ট সিটিতে হাটা ও বাই সাইক্যা‌লের ব্যবস্থা থাকবে। সমস্ত রাস্তার পাশে ফুটপাত আর রাস্তার মাঝে বাই-সাইক্যাল লেন বেশ জরুরী। কারণ রিক্সা বাই-সাইক্যাল হল পরিবেশ বান্ধব যান। অনেক দেশে রিক্সা নেই। আমাদের দেশে আছে। রিক্সা থাকুন। অনেক গবেষণা ক‌রে রিক্সা গু‌লো ব্রেক সিস্টেম ও নিরাপত্তা বাড়ালে চলবে। রিক্সা ও বাই-সাইকেলের জন্য আলাদা লেন থাকলে কখ‌নোও  ব্যাটারি চালিত রিক্সার বা সাধারণ রিক্সার নিরাপত্তা ঝুঁকি কমে যাবে বলে মনে করা যায়।
আমা‌দের দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ মে‌য়ে রিক্সা, স্কুটার ও ওবার ইত্যাদিতে যাতায়ত ক‌রে; ধাক্কাধাক্কি পরিহার করা ও নিরাপত্তার জন্য তা ক‌রে থা‌কে। এখন রিক্সা ও বাই সাইক্যা‌লের জন্য আলাদা লেন কর‌তে পারলে সবচেয়ে লাভবান করা যাবে মেয়েদের। এতে অনেক মেয়েই বাই-সাইক্যাল চালা‌তে সাহস পাবে। মে‌য়েরা অধিক পরিমাণ বাই-সাইক্যাল চালালে সমাজের কিছু লাভ হবে। সবচেয়ে বড় লাভ হবে মেয়েদের শরীরে কায়িক পরিশ্রম করার সক্ষমতা বাড়বে। তারা কম রোগাক্রান্ত হবে। সক্ষম মা হবে। উন্নত স্বাস্থ্যের সন্তান জন্ম দি‌তে পারবে। তা‌দের মাঝে মূখা‌পেক্ষতা কমে যাবে। তারা আত্মনির্ভরশীল  হবে। ভার‌তে ২০১৬ সালের মার্চ মাসের দি‌কে ভারত ভ্রমণের সময় অনেকের কছে শুনেছিলাম  পশ্চিম বংগের মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের পড়া‌শোনা উন্নয়নের জন্য সাড়ে তিন লাখ বাই-সাইক্যাল স্কুলের ছাত্রী‌দের মাঝে বিতরণ করেন। মেয়েদের বাই-সাইক্যাল ছেলেদের থেকে বেশী পরিমাণে চালা‌নো প্রয়োজন। এটা এমন একটা ট্রেনিং যা কিনা একটা নারী‌কে তার সম্ভ্রম রক্ষা ক‌রে পুরুষের স্পর্শ ছাড়া যাতায়ত নিশ্চিত করবে। বাসে ও অন্যান্য গণ প‌রিবহ‌নের যাতায়‌তে নারী‌দের নামা উঠার পথে ও ভিড়ের ধাক্কায় পুরুষের সাথে ধাক্কা যুদ্ধ পড়‌তে হয়। তা নারীর জন্য ও সকলের জন্য বিব্রতকর। তাই পরিবেশ বান্ধব বাই-সাইক্যা‌লে নারী‌কে অভ্যস্থ কর‌তে পারলে নারী হ‌য়ে উঠবে অনেক অনেক বেশী আত্মপ্রত্যয়ী ও ক্ষমতাধর।
গ্রামের রাস্তা ঘাট অনেক বেশী দু‌রে দূরে। সেখানে ছাত্রী‌দের ছোট বয়স থেকে বাই-সাইক্যাল দেয়াটা প্রয়োজন। গ্রামের স্কুল কলেজ অনেক দূরে দূরে। সেখানে গনপ‌রিবহন তেমন নেই। ছাত্রীরা অনেক দূরের রাস্তা হেঁটে পার হয়। অনেক সময় ব্যয়‌ হয় ও শারীরিক চাপ যায়। বাই-সাইক্যাল তা‌দের স্কুল ও কলেজে আসা যাওয়ার শারীরিক চাপ কমা‌তে পারবে। পড়া‌শোনায় তারা আরো এগিয়ে আন‌তে পারবে।
বাংলাদেশের গ্রামে অনেক স্থানে মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত বাই-সাইক্যাল চালু থাকলেও অনেক স্থানে চালু নাই।  সরকার ও অনেক সংস্থা গ্রামের মেয়েদের বাই-সাইক্যাল অনুদান দিতে পারেন। পিতামাতা মেয়েদের বাই-সাইক্যাল চালনায় উতসা‌হিত কর‌তে পারেন। সামর্থবান বাবা মায়েদের মেয়েদের অবশ্য বাই-সাইক্যাল কিনে দি‌তে পারেন ও উতসা‌হিত কর‌তে পারেন।
মে‌য়েরা পর্দায়‌ থে‌কেও বাই-সাইক্যাল চালা‌তে পা‌রে যেভাবে সৌ‌দি মে‌য়েরা হিজাব পড়ে অলিম্পিকে যোগদান ক‌রে।
পরিশেষে আশা থাকবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সাথে মে‌য়ে আরো বাই-সাইক্যাল চালাবে ও সক্ষমতা অর্জন করবে।

Thursday, October 4, 2018

গৃহস্থলীর ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ক্রয়ের বিপরীতে সেবা ক্রয়


আমি একটা স্বর্ণের দোকানে স্ত্রীর জন্য স্বর্ণ কেনার সময় সেখানকার স্বর্ণকার বললেন; আপনি যে স্বর্ণের জিনিষটি কিনলেন তা যত বছর পরেই হোক কাগজটা নিয়ে আসবেন, আমরা তখনকার দামে ওজন করে ১০% বাদ দিয়ে আপনার কাছ থেকে কিনে নিব। শুনতে খুব ভাল মনে হল। যদিও অত লাভজনক ডিল না। কারণ এখন তিনি নিচ্ছেন আমার কাছ থেকে ২২ ক্যারেট সোনার দাম। আমার থেকে পুনরায় ক্রয় করার সময় তিনি দিবেন অর্ধেক স্বর্ণের দাম যা কিনা তাদের ভাষায় সনাতনী সোনার বা পুরাতন সোনার দাম। যা কিনা প্রায় অর্ধেক দাম। তারপর ১০% বাদ দিবে। অবশ্য ভাল ডিল নয়। তবুও আমরা অনেকেই তাতে সন্তুষ্ট হব। ধরুন আপনি স্বর্ণের ডিজাইন বদল করতে চাচ্ছেন। তখন প্রয়োজনে লস দিয়ে হলেও আপনি নতুন ডিজাইনের সামগ্রী কিনতে পারছেন। মন্দের ভাল।
এখন আপনি ধরুন টিভি কিনেছেন। আপনি চাচ্ছেন পাঁচ বছর পর মডেল চেঞ্জ করতে। এখন আপনাকে প্রায় পানির দামে টিভিটি বিক্রি করতে হবে। তারপর নতুন কিনতে হবে। এখন যদি এমন সিস্টেম থাকে, ধরুন আপনার টিভিটি ১০ বছর ব্যবহার করার পর তা আপনি ২০০০ টাকায় বা সর্বনিন্ম একটা দাম ইচ্ছে করলে যে কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছেন তাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। আর ধরুন আপনি টিভিটি ৫ বছর পর টিভিটি বদল করতে চাইলেন টিভিটির পাঁচ বছর ব্যবহারের জন্য অর্ধেক দাম বাদ দিলেন, যে দাম থাকবে তা নতুন কেনা টিভির সাথে মূল্য অ্যাডজাস্ট করলেন। তাহলে পুরাতন টিভির কি হবে। এটা অর্ধেক দামে রিকন্ডিশান মাল হিসাবে শো রুমে বিক্রি করবে। এই শর্তে যে টিভিটি অবশিষ্ট পাঁচ বছর না চললে হয় ব্যবহারকারী বা ক্রেতা ফেরত দিতে পারবেন বা নতুন বা পুরাতনের সাথে বদল করে নিতে পারবেন। এটা করলে কেমন হয়? আমরা যে কোন ইলেকট্রিক সামগ্রী কিনলে প্রথমে টেনশনে থাকি যে, এই সামগ্রীটি কিনে সেটি নির্ধারিত সময় চালাতে পারব কিনা না। তার আগেই নষ্ট হবে কিনা। কোন জিনিষ কিনলাম কয়েকদিন পর আর ভাল লাগছে না। অথচ এই টিভিটি অন্য কারো জন্য কাজের হতে পারে। একটা কথা প্রচলিত আছে, শো রুম থেকে কোন পণ্য বাইরে বেরুলে তার মূল্য অর্ধেক হয়ে যায়। এই জায়গাটিতে ক্রেতার কোন স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। ক্রেতা সব সময় ভয়ে থাকে আমি ইলেকট্রিক বা ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীটি কিনে বিক্রয়োত্তর সেবা পাব কিনা। বাস্তবতা হল কেউই বিক্রয়োত্তর সেবা পায় না। কারণ শো রুম বা দোকানীরা কোন না কোন বাহানায় ঘুরাতে থাকবে। তার চেয়ে এটা ভাল নয় কি সমস্ত প্রোডাক্টের একটা আয়ু ধরা থাকবে। আবার প্রোডাক্টের একটা সর্বন্নিম দাম ধরা থাকবে। যা কিনা পণ্যটির ভাঙ্গারি দাম বলা যেতে পারে অর্থাৎ এই দামটি ক্রেতা মাল ক্রয়ের অনেক বছর পরও দ্রব্যটি রিকন্ডিশন ফেরত দিলে মূল্যটা ফেরত পাবেন। আপনি ১০ বছর আয়ুর টিভির ১৫ বছর দেখার জন্য দোকানে ফেরত আনলেন। আপনাকে নতুন টিভি দেয়া হল এবং নতুন টিভির মূল্য হতে পুরাতন টিবির সর্বন্নিম দামটি( মনে করি ২০০০ টাকা) বাদ দিয়ে আপনার নতুন টিভির দামটি সাশ্রয় করা হল। আমরা অনেকেই আছি যারা চাই আমাদের পুরাতন সামগ্রীটি সরিয়ে নতুনটি রাখতে। অনেক ক্ষেত্রের পুরাতন সামগ্রীর দাম কেউ বলে না বা বিক্রি করা যায় না। তখন তা ই-বর্জ্য হয় বা কাউকে দান করতে হয়। ভাঙ্গারি হিসাবে অতি নগণ্য মূল্যে ক্রয় করা যাবে।
আমরা টিভি, ফ্রিজ, এসি ও হাউজ হোল্ড সামগ্রী ক্রয় করি। ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা সব সময় ভয়ে থাকি আমার কেনা দামী দ্রব্যটি নষ্ট হলে এটি ওয়ারেন্টি হয়ত ঠিকভাবে পাব না। আবার অনেক টাকা খরচ করে নতুন সামগ্রী কিনতে হয়। কষ্টকর অভিঞ্জতা। আমি আপনাদের এতক্ষণ আলোচনা পর নতুন ব্যবসায়িক ধারনা তুলে ধরছি। তা হল একজন ক্রেতা যে কোন সামগ্রী নষ্ট হওয়ায় বা অন্য কোন কারণে ফেরত দিতে চাইলে সে তা ফেরত দিয়ে নতুন আইটেম নিতে পারবে। পুরাতন সামগ্রীর যত বছর ওটার আয়ু অনুযায়ী বকেয়া আছে সেটার বেনিফিট তাকে দেয়া হবে। অনেকে বলবেন, তাহলে ফেরত আসা পুরাতন সামগ্রীতে তো শো রুম ভর্তি হবে তার কি হবে। তবে যথাযথ ভাবে পুরাতন সামগ্রী বিক্রয় করতে পারার একটা কালচার শো রুমে চালু করা সম্ভব।
এভাবে রিপ্লেসমেন্ট সেবা দিয়ে ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর কালচার চালু করলে মানুষ অনেক অনেক উপকার পাবেন। এই বিজনেস মডেলটি অনেকেই চিন্তা করতে পারেন। এই ধরনের বিজনেস মডেল পরিবেশের জন্য অনেক উপকারে আসবে কারণ সমস্ত ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর টেকসই ও সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে।

Wednesday, September 26, 2018

ডাক্তার ও সি‌রি‌য়াল

আমার বড় ছেলে মাথা ব্যথার সমস্যায় ভুগছে। আমার বেশ কয়েকজন রিলেটিভ বিশেষ একজন ডাক্তারের কথা বললেন। আমি অবশ্য জানি ডাক্তারের সি‌রি‌য়াল যে দেয় সে টাকার বিনিময়ে সি‌রি‌য়াল এদিক সেদিক ক‌রে। ডাক্তার ফি নেয় ১০০০ টাকা আর সি‌রি‌য়ালধারী নেয় ১০০০ টাকা বা তারও বেশী। ডাক্তাররা জানে কিনা আমি জানি না। হয়ত জানে। হয়ত জানে না। ৫ম গ্রেডের একজন সরকারী কর্মকর্তা হ‌য়ে একজন ডিপুটি সেক্রেটারী(ডিএস) মাসে পায় হয়ত ১ লক্ষ টাকার আশে পাশে। যদি ডাক্তারের সিরিয়াল দেয়ার লোক‌টি একেক রোগীর কাছ থেকে নেয় ১০০০ টাকা ক‌রে। তবে ডাক্তার যদি প্রতিদিন ১০ জন রোগী দেখে আর ৪ জন থেকে প্রতিদিন ৪০০০ টাকা নি‌তে পা‌রে, তবে মাসে অনায়াসে পেয়ে যায় একজন ডিএস-এর সমান বেতন বা তার বেশী। পড়া‌শোনা জানা/নাজানা মেট্রিক পাশ টাইপ একজন কমি‌য়ে ফেল‌তে পারছে লক্ষাধিক টাকার উপর উপার্জন। কত সহজ। মেট্রিক পাশ একজন কেবলমাত্র ভাল ডাক্তারের সাথে থাকার কারণে কত সহজে টাকা বানাচ্ছ‌ে। অথচ অনেক এম‌বি‌বিএস ডাক্তার রোগী দেখেও তা পাচ্ছ‌ে না। ডাক্তাররা কি সিরিয়াল ব্যবসায় আছে। আমার জানা নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি অনেকের কাছে শুনেছি আমা‌দের দেশের ডাক্তার‌দের সি‌রি‌য়াল পাওয়ার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা কর‌তে হয়। আমা‌কে সি‌রি‌য়ালওয়ালা বলল, আপনি স্বাভাবিক সি‌রি‌য়ালে গেলে আপনি সিরিয়াল পাবেন প্রায় তিন মাস পড়ে। সে আমা‌কে বলল, আপনি নাম লেখান যখন কেউ সিরিয়াল ক্যান‌সেল করবে, তখন আপনা‌কে সি‌রি‌য়াল দেয়া যাবে। সুন্দর প্রস্তাব। যেহেতু সেনাবাহিনীর লোক। আমার কাছে তাই সিরিয়াল আগা‌নোর জন্য টাকা চাইল না। আমি পরিচয় না দিলে হয়ত সিরিয়াল ম্যান টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল আগা‌নোর প্রস্তাব দিত।
পৃথিবীর অনেক দেশে স্বাস্থ্যসেবা অনেক ভাল। যেমন কানাডায় খুব ভাল। অপরদিকে আমেরিকায় বাংলাদেশের মত চরম অরাজগতা রয়েছে স্বাস্থ্য সেবায়। অথচ ভার‌তে যারা রোগী দেখা‌তে যায় তারা ভারতের ডাক্তার‌দের অনেক প্রশংসা ক‌রে। ডাক্তাররা ও সিরিয়াল ধারীরা এত হয়রানী ক‌রে না। আমা‌দের দেশের ডাক্তাররা অনেকেই অনেক ফি নেয় কিন্তু রোগী‌কে পাঁচটি মিনিটও ঠিকভাবে দেয় না। অমুক ডাক্তারের সিরিয়াল পে‌তে তিন মাস অপেক্ষা কর‌তে হয়। এটা হল আরেক ধরনের ভাঁওতাবাজি। আপনার সি‌রি‌য়াল তিন মাস প‌রে খাতায় লিখবে হয়তবা কিন্তু এর মধ্যে কয়েক হাজার রোগী ঘুষের বিনিময়ে রোগী পার হবে। বাংলাদেশে কোন ডাক্তার তা‌দের সিরিয়াল ডিজিটাল করেছে বলে আমার জানা নাই। অথচ চাইলে তারা তা কর‌তে পারেন সহজেই। প্রয়োজ‌নে রোগী কিছু টাকা ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যয় কর‌তে পা‌রে সহজেই। রোগীরা অন লা‌ইনে সহজেই দেখ‌তে পারবে তার সি‌রি‌য়াল কত চলছে। ‌এতে রোগী‌দের বিপুল প‌রিমান হয়রানী বন্ধ করা যাবে। সরকারের প্রয়োজ‌নে সিরিয়েল বাণিজ্য ও রোগী হয়রানী বন্ধ করার জন্য ডিজিটাল সিরিয়াল সিস্টেম চালু করা। আমা‌দের দেশের শতকরা ৯৯% ডাক্তার এই ডিজিটাল সিরিয়াল মান‌তে চাইবে না। কারণ তা‌দের ভয় ইনকাম ট্যাক্স জেনে যাবে তা‌দের ইনকামের পরিমাণ।
রাষ্ট্রে বিচারের ঊর্ধ্বে কাউ‌কে ছেঁড়ে দেওয়া উচিত নয়। স্বাস্থ্যখাতে একটা ভয়ংকর অরাজগতা চলছে। এটা‌কে রুখ‌তে হবে। আমি ডাক্তারের প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টরকে ধরলাম। তিনি আমা‌কে দুইদিন প‌রে একটা সিরিয়াল দিল। অথচ সিরিয়াল ম্যান বলেছিল, প্রায় ১০০ দিন পর। আমি নিশ্চিত এটাই প্রকৃত সিরিয়াল। যেটা ওই সেন্টারের ডাইরেক্টর আমা‌কে দিল। বাকীট‌ি গল্প ও প্রতারণা। এই  প্রতারণা ক‌রে সিরিয়াল ম্যানরা মানুষের পকেট থেকে টাকা খসায়। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনেকেই ডাক্তার‌দের বিষ‌য়ে লেখে না। কারণ প্রত্যেকে নিজের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা ক‌রে। ভাবে হয়ত প‌রে ডাক্তাররা বয়কট করে বস‌বে। আর সেই‌ সাংবাদিকের বিনা চিকিৎসায় মর‌তে হবে।
তবে ডাক্তার‌দের ইনকাম ট্যাক্স কমিয়ে হলেও তা‌দেরকে অনলাইন সি‌রিয়ালের মাধ্যমে আনাটা সম‌য়ের দাবী। একজন রোগীর রো‌গের সমাধানটা পাওয়া অতি জরুরী। অথচ তা‌কে কিনা তিন মাস অপেক্ষা কর‌তে হবে। অথচ আদ‌তে তিন মাসের কোন সিরিয়াল কিন্তু নাই। কারণ এটার কোন স্বচ্ছতার প্রমাণ নেই। তিন মাস পরের একটা তারিখ রেজিস্টারে লিখে আপনা‌কে ধরিয়ে দিল। এটার দ্রুত সমাধান অতি জরুরি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে ডাক্তারি সিরিয়াল ডিজিটাল না হলে সরকারের দায়বদ্ধতা থেকে যাবে। পরিশেষে সুশৃঙ্খল ডাক্তারি সিরিয়াল হয়ত আমরা পাব, যখন মানুষের মধ্যে বি‌বেকবোধ বিকশিত হবে।


Wednesday, September 19, 2018

বাংলাদেশে টিভি চ্যানেলের কৃষি অনুষ্ঠান


বাংলাদেশের একজন ইউএনডিপি প্রতিনিধির সাথে মন্ত্রণালয়ের একটা মিটিং এ পরিচিত হই। সে বিভিন্ন দেশের শান্তি মিশনে কাজ করেছিল। আমার শান্তি মিশনে অভিজ্ঞতা থাকায় আমার সাথে তার বেশ গল্প জমে যায়। তিনি বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ বছর যাবত আছেন। নাইজেরিয়ান অরিজিন আমেরিকান। আমাকে এমন একটা কথা বলল, আমার গর্বে বুক ফুলে গেল। সে বলল, তোমাদের বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের আমি খুব পছন্দ করি। তারা যে দেশেই ক্যাম্প করে; কিচেন গার্ডেন করে। তোমাদের অনেক শান্তিরক্ষী ক্যাম্পে গিয়ে আমি তোমাদের ক্যাম্পে উৎপাদিত শাক সব্জি খেয়েছি। এমনকি তোমাদের ক্যাম্পের শাক সবজি উৎপাদন দেখে আফ্রিকার স্থানীয় অলসরাও উজ্জীবিত হয়ে শাক সবজি উৎপাদন শুরু করেছে।
আমার প্রয়াত বাবা ৮৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গ্রামের বাড়ীতে ও চাকুরীকালীন অবস্থায় সরকারী কোয়ার্টারের আশে পাশে বাগান করতেন। তিনি টেলিভিশনে কৃষির কোন অনুষ্ঠান বাদ দিতেন না। তিনি তার জীবনে খুব কমই শাক সবজি বাজার থেকে কিনেছেন। চাকুরীকালীন সময়ে তিনি গ্রামে গেলে প্রায়ই মানুষকে কিচেন গার্ডেন ও গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিত করতেন। আমি তাই জেনিটিক্যালি কৃষিকে খুব পছন্দ করি। টেলিভিশনের কৃষি অনুষ্ঠানগুলি আমার খুব প্রিয় অনুষ্ঠান ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে কৃষি অনুষ্ঠান মনে করার ব্যবস্থা ও ঘড়িতে অ্যালার্ম দেয়ার মত কাজ করতাম।
আজ কৃষি অনুষ্ঠান দেখা কত সহজ। ইউটিউবে রয়েছে হাজার হাজার ভিডিও। নতুন পুরাতন অনেক অনেক কৃষির উপর টিভির অনুষ্ঠান ইউটিউবে রয়েছে। সাইখ সিরাজের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অন্যতম একটি অনুষ্ঠান। তিনি দেশে বিদেশে কৃষি বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন। সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। প্রবাসীর কাছে তার কৃষির নানা বিষয় ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব চ্যানেলই কৃষির উপর অনেক অনেক অনুষ্ঠান তৈরি করছে আর তার টিভিতে প্রচারের পাশাপাশি ইউটিউবে দিয়ে দিচ্ছে। এগুলোর অনেক অনেক হিটও হচ্ছে। অনেকই জানেন কোন ইউটিউব চ্যানেল এক মিলিয়ন হিট হওয়ার পর থেকে প্রতি হিটের জন্য তাই চ্যানেলগুলো টাকা পেতে থাকে। হৃদয়ে মাটি ও মানুষের হিট দেখলে ধারনা করা যায় তাদের উপার্জনও আছে অনেক।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এর প্রতিটি ভিডিও কয়েক লক্ষ করে ভিউ হচ্ছে। এতে অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা কেমন তা সহজেই বুঝা যায়। আমি খুব সহজেই একটা বিষয় বলতে চাই আর তা হল "হৃদয়ে মাটি ও মানুষ" অনুষ্ঠানটি বিশাল একটি কৃষিপ্রেমী জনগোষ্ঠীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। সাইখ সিরাজ দেশে বিদেশে নানা কৃষি বিষয়ক তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরে মূলত: সমাজকে সবুজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করছেন। ছাদ বাগান কৃষি অনুষ্ঠানটি শহুরে মানুষের ছাদের বাগানের ব্যাপক আগ্রহ জাগিয়েছে। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের কৃষির সাথে সম্পৃক্ত করে ভিন্ন ধর্মী একটি ধারা সৃষ্টি করেছেন। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে প্রবাসীদের সাথে কৃষিতে কানেক্ট হয়ে এখন বাংলাদেশী কৃষি আন্তর্জাতিক সীমানায় গেছে। প্রবাসীদের প্রতিবেশীরাও কৃষিতে অভীষ্ট হচ্ছে। এতে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশীদের কৃষির একটা চমৎকার চক্র। প্রবাসীর মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি অনুপ্রেরণা বিদেশীর মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমি প্রথমে যা বলেছি, যেভাবে ইউএন-এ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর কিচেন গার্ডেনের সুনাম রয়েছে, তেমনি প্রবাসীদের বাংলাদেশীর কৃষিও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিদেশীরাও প্রবাসী বাংলাদেশীদের বলা শুরু করবে, বাংলাদেশী গুড ইন এগ্রিকালচার এবং গুড ফাইটার এগেনইস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ
বাংলাদেশী জাতির জন্য কৃষিটা আজ বিশ্বব্যাপী অনেক গর্বের বিষয়। প্রেরণার বিষয়। হয়ত বাংলাদেশীরা সবুজ জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। আজ বাংলায় হাজার হাজার কৃষি ভিডিও ইউটিউবে দেখে মনে হয় কৃষির একটা রেভুলেশন চলছে। এটা বিস্তৃতি লাভ করতেই থাকবে। তা থামবার নয়। আজ ইউটিউবে কৃষির অনুষ্ঠানের হিট দেখলে বুঝা যায়, সকল ঘরে ঘরে সবাই আধুনিক কৃষির সচেতনতা বাড়াতে পেরেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাত ধরে সবুজ রেনেসাঁ আরো বেগবান হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই।

Thursday, September 13, 2018

গামছা বনাম টাওয়েল


২০০৭ সালের ডিসেম্বরে সামরিক ট্রেনিং এর একটা অংশ হিসাবে দুইটি প্যাকে করে নিজের সমস্ত সামগ্রী বহন করে নিয়ে যেতে হবে। কাটাতে হবে ১৫ দিন। এই প্যাকটা আবার ২৫ কি:মি: বয়ে নিয়ে জংগলে নীচে স্থাপন করা গুপ্ত আশ্রয়ে কাটাতে হবে। আবার ২৫ কি:মি হেটে সেনানিবাসে একই প্যাক নিয়ে ফেরত আসতে হবে। মেজর র‍্যাংকে কোম্পানি কমান্ডার হিসাবে সৈন্যদের সাথে আছি। তাই নিজের ব্যাগ নিজে নেয়াটা সন্মানজনক। ব্যাগ বহন ওজন কম ও আরাম দায়ক করার জন্য সমস্ত সামগ্রী ওয়ান টাইম ও মিনি প্যাক টাইপ করে নিলাম। তোয়ালে বড়সড় হয়ে যায়। এটা প্যাকের জায়গা নষ্ট করে। আবার যদি কোন কারণে প্যাকটা ভিজে যায়, তবে ভিজা তোয়ালে প্যাকে ওজন বাড়িয়ে দিবে। কোন জায়গায় আছি হঠাৎ করে স্থান ত্যাগ করলে ভিজা টাওয়েল থাকলে প্যাকের ওজন বাড়বে। মাথায় তখন বুদ্ধি আসল, তোয়ালের পরিবর্তে গামছা হলে কেমন হয়। ঝটপট মাঝারী সাইজের ইউনিফরমের সাথে ম্যাচিং রং হয়, সবুজ রংয়ের দুইটি গামছা তোয়ালে (গামছা থেকে একটু পুরু কাপড়) কিনে ফেললাম। এখন দেখলাম দুইটি গামছা আমার একটি মাঝারী সাইজের তোয়ালে থেকে পাঁচ ভাগের একভাগ জায়গা কম লাগছে। ১৫ দিন আমি চমৎকার ছিলাম। গোছল করে গা মোছার পর চট করে গামছাটা ধুয়ে দিয়ে রোদে শুকাতে দিতাম। ৩০/৬০ মিনিটের মধ্যে গামছা শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী হত। অনেক অনেক কমফোর্টেবল। যখনই গোসল করছি, তখনই শুকনো পরিষ্কার গামছা দিয়ে গা মুছে তা পুনরায় ধুয়ে ভাল করে নিংড়ে শুকোতে দিচ্ছি। কত সুবিধা। মূহুর্তেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পুনরায় আবার ধোয়া শুকনো গামছা ব্যবহার করতে পারছি । গামছা প্যাক করতে সমস্যা নেই। দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার কারণে প্যাক নিয়ে যখন যেখানে যাচ্ছি, তখন আর ভিজা তোয়ালের মত কোন টেনশন নাই। গামছা ভিজা থাকলেও একে প্রায় অতি টাইটভাবে নিংড়ানো যায়। একদম পানি শুকিয়ে ফেলা যায়। ওজনও কমে যায়। আমার এই গামছা টেকনিক হয়ত সেনাবাহিনীর অনেকেই ব্যবহার করে। আমি ১৫ দিন অনুশীলন শেষ করে বাসায় যাওয়ার পর একই ভাবে মনের অজান্তে দুইটি গামছা ব্যবহার করে চলেছি। হঠাৎ দশ/বার দিন পর খেয়াল হল, বাসায় এসেও আমি মোলায়েম ও সুন্দর তোয়ালে ব্যবহার করছি না। আমি গোসলের পরে আমার গামছাই ব্যবহার করছি আর ধোয়া কাপড়ের সাথে গামছাগুলো ওয়াশিং এর জন্য রেখে দিচ্ছি। আমরা ছোটবেলা হয়ত অনেক কিছু পরিবারের সাথে শেয়ার করতাম। গ্লাস, তোয়ালে, প্লট ইত্যাদি। যখন নিজের পরিবার হল; তখন ধীরে ধীরে অনেক পরিবারের মত পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা গ্লাস, প্লেট ও টাওয়েল আলাদা করতে শিখলাম। এতে পরিবারের সদস্যদের মাঝে ছোঁয়াচে রোগ গুলি কম ছড়ে। যেমন: পরিবারের এক সদস্যের স্কীন ডিজিজ আছে; একই টাওয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য সদস্যের মাঝে ছড়তে পারে। আবার কারো ভাইরাল ফিভার হয়েছে; একই গ্লাস প্লেট ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত অন্য সদস্যদেরও ছড়াতে পারে। স্বাস্থ্যকর দিক দিয়ে কিছু কিছু ক্লোজ কন্টাক্টের সামগ্রীগুলো ওয়ান টাইম বা ব্যক্তিগত হওয়াটা অতি প্রয়োজনীয়। পুনরায় গামছার আলোচনায় ফিরে আসি। সামরিক অনুশীলন শেষে দশ দিন গামছা ব্যবহারের পর যখন টের পেলাম; পুনরায় তোয়ালে ব্যবহারে ফিরে গেলাম। গোসল শেষে তোয়ালেটিকে ধোয়ার ঝুড়িতে রাখলাম। পরেরদিনও গোসল করে তোয়ালেটি ধোয়ার ঝুড়িতে রাখলাম। এভাবে চলছিল, তিন চারদিন পর দেখলাম; তোয়ালে শুকনো নাই। বৃষ্টি হওয়ার কারণে তোয়ালে রৌদ্রে দেয়া যায়নি। আর তোয়ালেও শুকায়নি। পুনরায় গামছা ব্যবহারে ফিরে গেলাম। এভাবে গামছা/তোয়ালে ব্যবহার করতে করতে হঠাত মনে হল আমি তো আগে সপ্তাহে একবার বা দুবার তোয়ালে ধুতে দিতাম। প্রতিদিন ধোয়ার জন্য দিতাম না। এরূপ মোটা তোয়ালে প্রতিদিন ধুতে দেয়াটা ভয়ংকর ব্যাপার। আবার প্রতিদিন তোয়ালে না ধুলে ব্যবহার করতেও পারছিলাম না। কেমন যেন একটা খচ খচ মনে হত। এভাবে মোটা তোয়ালে প্রতিদিন ধোয়ার পেরেশানি বাদ দেয়ার জন্য স্থায়ীভাবে গামছা ব্যবহারে ফিরে গেলাম। গামছা প্রতিটি বেলায় গোসলের পর ধোয়া যাচ্ছে। অল্প সময়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেও ফ্যানের নিচে ভাল করে নিংড়ে দিলে শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রতিটি গোসলের পর ধোয়া ফ্রেশ টাওয়েল ছাড়া গা শুকাতে পারছি না। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। এখন দুইটা গামছা আমার সাথে সবখানে যাচ্ছে। ফাইভ স্টার/ থ্রি স্টার যে কোন হোটেল হোক না কেন নিজের গামছাই আমার ভরসা। পরিশেষে বলব, প্রতিদিন তোয়ালে ধোয়া কষ্টকর। তাই তোয়ালে যত আরামের হোক না কেন হাইজেনিক ও গোসলের পর পরিষ্কার ভাবে গা মোছার জন্য দুইটি গামছা হতে পারে আমাদের চির সাথী। গামছা তোয়ালে থেকে অনেক বেশী হাইজেনিক। এই গামছাই আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক শ্রমিক দরিদ্র মানুষকে সুস্থ ও হাইজেনিক রাখছে।

Thursday, September 6, 2018

তৈলমুক্ত বা কম তৈলের রান্নায় এয়ার ফ্রাইয়ারের উপকারিতা


চিনি কম খেলে রক্তে চিনি কম বাড়ে। তৈল কম খেলে রক্তে তৈল কম বাড়বে। পিউরিন আছে এই ধরনের খাবার কম খেলে রক্তে ইউরিক এসিড কম বাড়বে। প্রাণীজ উৎসে কোলেস্টোরেড আছে আর তা কম খেলে রক্তে কোলেস্টোরেড কম বাড়বে। শর্করা কম খেলে মোটা হওয়ার ভয় কমে যাবে। আবার সব খেয়ে যদি অনেক অনেক বার্ন করা যায়; তবে আর চিন্তা নেই। রক্তে যাই উপাদান  থাকুক অধিক পরিশ্রম করে তা নি:শেষ করা যায়। বাঙ্গালীদের খাবারে ভাজা পোড়া খাবার বেশী থাকে। আবার ভাজা-পোড়া খাবার অধিক কায়িক পরিশ্রমী মানুষের জন্য তেমন কোন সমস্যা নয়। তবে অধিক পরিশ্রম করার যুগ কি আছে। তেমন নেই। জমির কাজ হচ্ছে মেশিনে। মালপত্র উঠানামার কাজ হচ্ছে ফগ লিফটরে। বিভিন্ন কোম্পানিতে নানা কাজ হচ্ছে রোবটে। রিক্সার মত ম্যানুয়াল কাজও আজ মোটরে চলে আসছে। যদি কায়িক পরিশ্রমের কাজ কমে যায় তবে কি ধরণের খাদ্য অভ্যাস মানুষের প্রয়োজন। তা হল ক্যালরী কম খাওয়া। চিনি ময়দালবণ এই তিনটিকে বলা হয় সাদা বিষ। এই তিনটি যত কম খাওয়া যায় তত মঙ্গল। যারা বসে বসে ডেক্সে কাজ করে তারা আজকাল সাদা বিশ কম খাওয়ার চেষ্টা করছেন। যারা পেটের সমস্যায় ভোগেন তারা বাদে খুব কম লোকজনই আছে যারা ভাজা পোড়া কম খান। আমাদের দেশে রোজায় ভাজা-পোড়ার আইটেম ছাড়া অচল। তাই ভাজা পোড়ার অভ্যাস থাকুক কিন্তু প্রয়োজন কম তৈল খাওয়া। যদি ভাজায় ৮০% বা ৯০% তৈল কম ব্যবহার হয় তবে তা হবে বেস্ট অপশন। ভাজা একই রকম থাকবে, কিন্তু তৈল খরচ কম হবে। খাদ্যে কম তৈল থাকবে তাহলে সেটা হবে বেস্ট। আমরা যারা ভাজা-পোড়া খাই; তারা কমপক্ষে  দৈনিক প্রায় পাঁচ চামচ তৈল খাই। একটি চা চামচে যদি পাঁচ গ্রাম হয় তবে আমরা ৫ গুন ৯ মোট ৪৫ ক্যালরি খাবার নিচ্ছি। তাহলে পাঁচ চামচ হলে তা হয়ে যাবে; ২২৫ ক্যালরি। এখন আমরা একই ভাজা-পোড়া খেয়ে যদি এক চামচ তৈল খাই; তবে আমরা মাত্র ৪৫ ক্যালরি নিব। ১৮০  ক্যালরী কম খাব। এই ১৮০ ক্যালরি পুড়তে আপনার প্রয়োজন হবে প্রায় এক ঘণ্টা মধ্যম গতিতে দৌড় দেয়া। যারা দৌড়াতে কম পছন্দ করেন, তারা দিনে চার চামচ তৈল কম খেতে পারেন। আমাদের মা বোন ও স্ত্রীদের রান্নায় তৈল নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বাবুর্চিদের রান্নায় তৈল নিয়ন্ত্রণ করা একদমই যায় না। বেশী তৈল মানে খাবার বেশী উপাদেয়। অথচ তৈলের স্বাদ ও গন্ধ বা বর্ণ নেই। তবে কিভাবে তৈল উপাদেয় হবে। তৈল উপাদেয় নয়। ওয়েল ফ্রি কুকিং হয়ত যারা ভীষণ রকম রক্তের ট্রাই গ্লিসারাইড নিয়ে বিপদে আছেন তারা মেনে চলতে পারেন। আপনি ভাজা-পোড়া সবই খেলেন কিন্তু ওয়েল ফ্রি বা  অল্প তৈলে তাহলে কেমন হয়। খুব মজাদার বিষয় নয় কি? বেকিং করা একটা ভাল পদ্ধতি। এতে তৈল কম খরচ হয়। কিন্তু খাবারের ইভেন বা সমভাবে কুকিং নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। ডুবো তৈলে ভাজা হলে ভাজা-পোড়ার সমভাবে ভাজা যায়। কিন্তু বিপদ হল অনেক তৈল খাবারে থেকে যায়। খাবারের ভাজার স্বাদের জন্য অল্প তৈলই যথেষ্ট। বাকীটাই তৈল আমরা খামোখা খাই বা খেতে বাধ্য হচ্ছি। তবে উপায় কিবাতাসে রান্না করলে কেমন হয়তৈলে না ডুবিয়ে গরম বাতাস দিয়ে রান্না করলে কেমন হয়। আমার কাছে বিষয়টা খুবই মজাদার মনে হচ্ছে আর তা হল গরম বাতাস দিয়ে রান্না করা। গরম বাতাস দিয়ে রান্না করলে রান্নাটা সমভাবে করা যায়। গরম বাতাসে খাবার যেভাবে রাখুক না কেন সমভাবে তাপটা ছড়িয়ে খাবার রান্না করতে পারে। গরম বাতাসে খাবারে তৈল থাকুক আর না থাকুক সমভাবে রান্না করা সম্ভব হয়। তাই এটা বিনা তৈলে বা অল্প তৈলে রান্না করাটা বেশ সহজ। বেশ কয়েক বছর হল বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে এয়ার ফ্রাইয়ার বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এটিতে তৈল খরচ কমার পাশাপাশি কনভেনশনাল ওভেন থেকে সময় কম লাগে বলে বিদ্যুৎ খরচ কম। তাই এনার্জি এফিশিয়েন্টও বলা যায়। আসুন আমরা কম তৈল বা বিনা তৈলে রান্নার জন্য এয়ার ফ্রাইয়ার ব্যবহার করে স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি ভোজ্য তৈলের খরচ বাচাই। কনভেনশনাল ওভেনে বেক করার অর্ধেক সময়ে রান্না করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করি। সার্বিক বিবেচনায় একটা বাসস্থানের জন্য এটি একটি ভাল প্রোডাক্ট।