Pages

Thursday, October 29, 2015

সামান্য মোবাইল ফোনের জিপিএস এর অসামান্য ব্যবহার

কয়েক বছর যাবত মোবাইলের জিপিএস ও ম্যাপ ব্যবহার করছি। কোন নতুন স্থানে পারিপার্শ্বিক এলাকা জানা ও নতুন স্থানে গেলে মোবাইল ফোনের গুগল ম্যাপ আর মোবাইলের জিপিএস সত্যি বেশ কার্যকরী। মোবাইলের সাধারণত দশ হাজার টাকার উপরে বাজেটে গেলে সাধারণত প্রায় সকল মোবাইলে জিপিএস পাওয়া যায়। মোবাইল ফোনের জিপিএসও চমৎকার কাজে লাগতে পারে তা একবার আমি উপলব্ধি করেছিলাম। ২০১৪ সালে জুনের দিকে কুষ্টিয়ার বিজিবির একটা ডাবল কেবিন পিকাপ গাড়ী ভোর ৪টায় চোরাচালান অপারেশন শেষে অবৈধ মালামাল ধরে নিয়ে ফেরত আসার সময় কুষ্টিয়া শহরে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এতে দুইজন গুরুতর আহত হয়। তখন বিজিবির বিজিবি সদর দপ্তর রোগীগুলো উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে রোগীদের ঢাকা সিএমএইচে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সকাল ৫টায় বিজিবি সদর দপ্তর হতে কুষ্টিয়া স্টেডিয়াম অর্থাৎ হেলিপ্যাড এর কোঅর্ডিনেট জানতে চায়। আমি সাথে সাথে ফোন করে আমার লোকদের জিপিএস ও ম্যাপ আনার জন্য নির্দেশ দিলাম। আমি হিসাব করে দেখলাম সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করতে আমার প্রায় একঘণ্টা লেগে যাবে। ভোর ৫টায় স্টোর খুলবে। সামগ্রী সংগ্রহ করবে। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার বিজিবির লোকেশন থেকে গাড়ী কুষ্টিয়া শহরের স্টেডিয়ামে যাবে তারপর জিপিএস রিডিং নিয়ে হেলিকপ্টারে ব্যবহৃত লংগিচুট ও ল্যাটিচুড ইত্যাদি নোট করবে। অতঃপর এসএমএস কম্পোজ করে বিজিবি সদর দপ্তরের অপারেশন স্টাফকে পাঠাতে হবে। সেই এসএমএস পুনরায় বিজিবি সদর দপ্তরের অপারেশন স্টাফ এয়ার ফোসর্কে দিবে। হঠাত মনে হল কয়েকদিন পূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কুষ্টিয়ায় হেলিকপ্টারে আগমন করেছেন। কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামে অবতরণ করেছেন। সুতরাং এনডিসি বা এসপি হেলিপ্যাডের কোঅর্ডিন্যাট জানাটাই স্বাভাবিক। আমি ভোর পাঁচটায় এনডিসিকে ফোন করলাম। ভাগ্য ভাল। সাথে সাথেই ফোন ধরলেন। আমি দুর্ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে কুষ্টিয়ার হেলিপ্যাডের কোঅর্ডিন্যাট জানা আছে কিনা জানতে চাইলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল। আমার মোবাইলে আছে এক্ষুনি এসএসএস করছি। আমি বিকল্প হেলিপ্যাডের কোঅর্ডিন্যাট আছে কিনা জানতে চাইলাম। আরো অবাক করে দিয়ে বলল বিকল্প কোঅর্ডিন্যাটও দিচ্ছি। আমি মেইন ও অল্টারনেটিভ দুইটি কোঅর্ডিন্যাট সাথে সাথে এসএমএস করে দিলাম। বিজিবি অপারেশন স্টাফ আমাকে কনফার্ম করল। সে এসএমএস পেয়েছে এবং এয়ার ফোসের্র ডিউটি অফিসারকে ফরোয়ার্ড করেছে। এখন শুধু হেলিকপ্টার ফ্লাই করতে বাকী। বেসামরিক প্রশাসনের এধরনের টেকনিক্যাল কাজে তড়িৎ সহায়তা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমি তাকে একসময় জিঞ্জাসা করলাম কিভাবে কোঅর্ডিন্যাট বের করলেন। সহজ সরল উত্তর। মোবাইল ফোনের জিপিএস আছে না। মোবাইল ফোনেই বের করা যায়। বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা জিপিএস না নিয়ে ঘুরলেও তারা মোবাইল ফোনের জিপিএস নিয়ে ঘুরে। সেদিন তার সুফল পেয়েছিলাম। মোবাইল ফোনের জিপিএস সংক্রান্ত অ্যাপস আছে যেগুলো ব্যবহার করে অতি দ্রুত যে কোন স্থানের লংগিচুড ও ল্যাটিচুড বের করা যায়। সেটা আবার  ইমেইল, ভাইবার, ড্রপ বক্স ও এসএমএসএর মাধ্যমে ফরোয়ার্ড ও শেয়ার ইত্যাদি করা যায়। এখন সকল জিপিএস প্রায় একমিটার পর্যন্ত একোরেসিতে পাওয়া যাবে। মোবাইল ফোনের জিপিএস এর মজাটা হচ্ছে জিপিএস ডাটা যে কোন মাধ্যমে সরাসরি পাঠাতে পারছি। আবার অন্যদিকে জিপিএস এর ডাটা নোটবুকে লিখে তারপর এসএমএস কম্পোজ করে পাঠাতে হবে। বর্তমানে মোবাইল ফোনের জিপিএসগুলো আমার জানা মতে সাধারণ স্যাটেলাইট সিগন্যাল নির্ভর জিপিএস থেকে আরো বেশী একুরেট। স্যাটেলাইট সিগন্যাল আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে এর এ্যাকুরেসির তারতম্য হয়। আর মোবাইল ফোনের জিপিএস স্থানীয় বিটিএস ও ইন্টারনেটকে এইড হিসাবে গ্রহণ করে আবহাওয়ার ও অন্যান্য কারণে স্যাটেলাইট সিগন্যালের কারণে যে এ্যাকুরেসি সমস্যা করে তা দূর করে। তাই মোবাইল জিপিএস কার্যকারীতার দিক দিয়ে বেশ কার্যকরী।
অনেক দিন থেকে মোবাইলের জিপিএস ব্যবহার করলেও বেশ কিছুদিন আগে থেকে জিপিএস এর মোবাইল অ্যাপস গুলি ব্যবহার শুরু করি। গুগল প্লে স্টোরে জিপিএস এর অসংখ্য অ্যাপস রয়েছে। কারো সময় থাকলে এগুলো একে একে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। যেটা ভাল লাগে সেটা চালু রাখতে পারেন। আমি “ My GPS Coordinates” অ্যাপসটি ব্যবহার করে আমার কোঅর্ডিন্যাট বা অবস্থান ভাইবারে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পেরেছি। আবার কিছুকিছু কোঅর্ডিনেট ড্রপবক্সে পরবর্তী ব্যবহারের জন্য সেভ করতে পেরেছি। “ My GPS Coordinates” থেকে আরো কিছু খুচরো অ্যাপস ইনস্টল করতে পারবেন যেমন অডোমিটার, অল্টিচুড মিটার ও ডিসট্যান্ট মেজারিং ইত্যাদি। হেলিপ্যাডের জন্য প্রয়োজন জিপিএসএর লংগিচুড ও ল্যাটিচুড এর ডাটা আর এটা মোবাইল ফোনে সহজেই পাওয়া যায়।
সামরিক বাহিনীতে আমরা জিপিএসগুলো মিলিটারি ম্যাপের সাথে ব্যবহার করি। ম্যাপের গ্রিড সিস্টেম অনুযায়ী জিপিএসগুলোর গ্রিড রেফারেন্স দিয়ে থাকে। জিপিএস ইনিশিয়ালাইজ করার সময় কাষ্টমাইজ ডাটার মাধ্যমে আমরা মিলিটারি ম্যাপের সাথে ব্যবহার উপযোগী করতে পারি। আমরা জিপিএস গুলোতে প্রাইমারী স্ক্রিনে সাধারণত মিলিটারি গ্রিড রেফারেন্স এবং সেকেন্ডারি স্ক্রিনে  সাধারণত লংগিচুড ও ল্যাটিচুড সেট করি। আমরা মিলিটারি প্রোগ্রাম জিপিএস থেকে হেলিপ্যাডের জন্য জিপিএস এর সেকেন্ডারি স্ক্রিন থেকে সরাসরি লংগিচুড ও ল্যাটিচুড দিতে পারব। গ্রিড রেফারেন্স দিলে পাইলট তার জিপিএস থেকে লংগিচুড ও ল্যাটিচুড কনভার্ট করে নিতে হবে। আমরাও যে কোন গ্রিড রেফারেন্সকে জিপিএস থেকে লংগিচুড ও ল্যাটিচুড কনভার্ট করে নিতে পারি। এটার কোন সফটওয়্যার বা মোবাইল অ্যাপস আছে বলে আমার এখন পর্যন্ত জানা নাই।
সামরিক অফিসাররা তারা রেকির সময় মিলিটারি ম্যাপ ও জিপিএস ব্যবহার করে। এখন ম্যাপ বা জিপিএস না নিয়েও জিপিএস এ্যানাবল মোবাইল নিয়ে এই একি কাজ করা সম্ভব। মোবাইলে বিভিন্ন স্থানের কোঅর্ডিন্যাট সেইভ করে পরে তা জিপিএস এর মাধ্যমে গ্রিড রেফারেন্সে কনভার্ট করে মিলিটারি ম্যাপে প্লট করে নিলেই হল।
নীচে আমার মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত  “ My GPS Coordinates” অ্যাপস দিয়ে বের করা কোঅর্ডিনেট ড্রপবক্সে সেইভ করলাম তার তথ্যগুলো নিন্মরুপ:
Latitude : 23.92871 (23˙ 55 43.35˜N)
Longitude : 89.00831 (89˙ 0 29.92˜E)
accuracy of signal : 7 m
show on google maps

https://maps.google.com?q=23.92870792870793,89.008312008312

This message was sent with My GPS Coordinates , a free Android application

এখন আমার বাসার এই Latitude : 23.92871 (23 ডিগ্রি 55মিনিট 43.35 সেকেন্ড N নর্থ), Longitude : 89.00831 (89 ডিগ্রি 0 মিনিট 29.92সেকেন্ড E ইষ্ট) দিয়ে সহজেই মিলিটারি জিপিএএস থেকে মিলিটারি গ্রিড রেফারেন্স পাওয়া সম্ভব। আর URL টি মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের ব্রাউজারে কপি পেস্ট করে দিল গুগল ম্যাপে স্থানটির মার্কড স্থানাংক পাওয়া সম্ভব।

এভাবে আরো মাথা খাটিয়ে মোবাইল জিপিএস এর অনেক অনেক ব্যবহার বের করা সম্ভব।
আশা করি আমার অনেক সামরিক বন্ধু যারা দেশে ও জাতিসংঘ মিশনে অবস্থান করছে তাদের লেখাটি কাজে দিবে।


Thursday, October 22, 2015

ফুরিয়ে গেছে চিঠি লেখার প্রয়োজন

মানুষ যুগ যুগ ধ‌রে তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য খুঁজে বেড়ায় নানা ব্যবস্থা ও মাধ্যম। একটা সময় ছিল চিঠি নিয়ে কবুতর পাঠানো হত। তারপর আসল রানার দৌড়ে চিঠি দিয়ে আসত। পোস্টাল সার্ভিস। অত:পর কুরিয়ার। আজকের দিনে আমাদের বল‌তেই  হবে আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান। আমরা মূহু‌র্তে আমা‌দের প্রিয়জন‌কে এসএমএস, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ম্যাসেজ  ও ইমেইল পাঠা‌তে  পারি। আর সর্বশেষ ড্রোনের মাধ্যমে উপহার সামগ্রী পাঠাতে পারি।
আগে আমা‌দের অনেকে পেন ফ্রেন্ড করত (১৯৮৫ সালেরও আগে)। বিভিন্ন পেন  ফ্রেন্ডের বইয়ে বা ম্যাগাজিনে দেশী বিদেশী পেন ফ্রেন্ডে আগ্রহীদের ঠিকানা পাওয়া যেত। আবার কোন কোন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার ব্যক্তিগত বিঞ্জাপনে অনেক কলমি বন্ধু হওয়ার আবেদন পাওয়া যেত। বিভিন্ন ঠিকানায় চিঠি দি‌তে দি‌তে  হয়ত একজন দুইজনের উত্তর পাওয়া যেত। তারপর নিয়মিত যোগা‌যোগ শুরু হত। একটা চিঠি দেয়ার পর পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠি যাওয়া আসার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হত। প্রতীক্ষায় কাটত দিনের  পর দিন। তখন হয়ত যোগা‌যোগ হত মাসে দুই/তিনটি চিঠির মাধ্যমে। মানুষ তা‌দের কথাগু‌লো জমিয়ে রেখে ধী‌রে ধী‌রে লিখত। লেখার হরফে জমা হত মানুষের  পুঞ্জিভূত অনুভূতি।‌ চিঠি লেখাটা ছিল একটি শিল্পকর্ম।  রাত জেগে সময় নিয়ে‌ দিনের পর দিন এক একটি  চিঠি  লেখা হত। সেই চিঠি গুলো‌তে  থাকত  মনের গভীরের  অনুভূতি ও শৈল্পিক ভাবে ভাব প্রকাশ। আমি আমার স্ত্রীকেও অনেক চিঠি লিখেছি। ক্যাডেট কলেজ থেকে বাবা মাকেও অনেক চিঠি লিখতাম। তাদেরও অনেক চিঠি পেতাম। মাঝে মাঝে কিছু চিঠি পেতাম অনেক অনেক হৃদয় স্পর্শী সেগুলো অনেকবার পড়তাম।
প্রেম আর চিঠি তখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আজ মোবাইল ফোন প্রেমের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মাধ্যম। অনেকের সাথে যোগাযোগের জন্য ফেসবুক অন্যতম। আগে কলমের কালির ছোঁয়ায় জেগে উঠত অনুভূতি গুলো। আর আজ মোবাইল ফোনের টাচ কীতে তা জেগে উঠে এসএমএস আর ফেইসবুকে। অনুভূতি বদলায়নি। প্রকাশভঙ্গীর ধরন পাল্টেছে। ভাষা গুলো হয়েছে সংক্ষিপ্ত ।

আগে কারো সাথে প্রেমে ব্রেক করলে চিঠি গুলি ফেরত পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হতে হত। এখন এ অবস্থায় আমাদের ডিলিট আর রিমুভ নিয়ে ব্যস্ত হতে হয়। সম্পর্ক ব্রেক করলে একসাথে তোলা সেলফি, ভিডিও ইত্যাদি সরানোতে ব্যস্ত হয়। অন্যথায় প্রতিশোধ পরায়ণ প্রেমিক বা প্রেমিকাটি প্রমাণাদি নিয়ে ঝামেলা করতে পারে। আগের দিনে প্রেমিক ও প্রেমিকাদের জমানো চিঠিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, গোপনীয় ও বিপদজনক ছিল। কারো হাতে পড়লেই লজ্জাজনক ও বদনাম হওয়ার ভয় ছিল। আমরা কি এখন চাইলেই কারো সাথে চিঠি পত্রালাপ করতে পারব। মনে হয় পারব না। কারণ আমি এখন কাউকে চিঠি লিখলে সে কষ্ট করে চিঠি লিখে উত্তর না দিয়ে মোবাইল ফোনে আমার চিঠির জবাব দিবে। আর একান্তই মুখে বলতে না পারলে এসএমএস করে উত্তর দিবে। এখন হয়ত বাবা মা’রা দুরে অবস্থান কারী সন্তানদের সাথে ফোনেই বেশী কথা বলে। যদি তাদের ফোনে না পায় তবে দেয় ইলেক্ট্রনিক চিঠি, ক্ষুদে বার্তা অর্থাৎ এসএমএস। এতে আধুনিক সন্তানরা অনেক সময় রেসপন্স করে। আবার কখনো করে না। ক্যাডেট কলেজে থাকতে বাবার বড় বড় উপদেশমূলক চিঠি পেতাম। একবার আমাদের একজন শিক্ষক বলেছিলেন তোমাদের বাবাদের লেখা চিঠি সংরক্ষণ করে রাখ। যেদিন তোমাদের ছেলে মেয়েরা হোস্টেলে যাবে তখন তাদের যে চিঠি লিখবে সেদিন তোমাদের বাবার চিঠিগুলো মিলিয়ে দেখো। তখন তোমরা দেখবে একই কথাই তোমরা লিখছ। অথচ মজার ব্যাপার হল প্রযুক্তির এতই উন্নতি হচ্ছে যে আমরা ভবিষ্যতে আমাদের হোস্টেল পড়ুয়া ছেলে ও মেয়েদের কাছে আমাদের আর চিঠি লেখার সুযোগই থাকছে না। এখন আছে এসএমএস, বেশী ইচ্ছে করলে ইমেইলের মাধ্যমে চিঠি লেখা হতে পারে। অন্যথায় মোবাইল ফোনে কথা বলেই যোগাযোগ সম্পূর্ণ হয়। এটার ভাল ও মন্দ দিক কি?আমার কাছে মনে হয় ভাল দিকই বেশী। মন্দ দিক কম। একেকটার আনন্দ একেক রকম। যোগাযোগের এ মাধ্যমগুলি আগে থেকে আরো শক্তিশালী হয়েছে। অত্যন্ত সুলভ হয়েছে। চিঠির যুগে মনে করুন প্রেমিক প্রেমিকার খবর জানতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হত। এখন যখন তখন এসএমএস। আরও ত্বরিত হল মোবাইল ফোনে কল। সাথে সাথে যোগাযোগ। প্রেমিক ও প্রেমিকার সাথে কথা বলায় লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই ও লুকোচুরির কিছু নেই। যেকোনো স্থানে মোবাইল সাথে থাকলেই হল। এসএমএস, ফেইসবুক,ইমেইল ও ভিডিও কল সবই পকেটে। যোগাযোগ সেন্টার পকেটে। এখন প্রেমিকা হরিয়ে যেতে পারে মোবাইল ফোন হারালে। কারণ প্রেমিকার মোবাইল ফোন নম্বর মুখস্থ থাকে না বা ডাইরিতে এখন লেখা হয় না। সেইভ থাকে মোবাইল ফোনে। এটাও দূর হয়েছে। মোবাইল ফোন কোম্পানি এখন মোবাইল ফোন নম্বর ব্যাক আপ রাখারও সলিউশন দিয়েছে। তাই নম্বর বদল না হলে প্রেমিক ও প্রেমিকা হারিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আগের সিনেমা গল্পে দেখি ভিলেন চিঠি আটকিয়ে দিয়েছে। এতেই প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। এখন মোবাইলের যুগে হারিয়ে যাওয়াটা এত সহজ নয়। তেমনি পরকীয়া ও প্রতারণাও সহজ হয়ে গেছে। মোবাইল ফোনে অযাচিত সম্পর্ক বেড়ে যাচ্ছে। পারিবারিক সম্পর্কে ফাটলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিঠির যুগে সম্পর্ক হত ধীরে ধীরে। এতে সম্পর্ক টেকসই হত বেশী। এখন সম্পর্ক হয় দ্রুত। মনে করি প্রতি রাতে প্রেমিক প্রেমিকা যদি দুই ঘণ্টা করে কথা বলে তবে মাসে বলবে ২ x ৩০ বা ষাট ঘণ্টা। ৬০ ঘণ্টা প্রেমিক প্রেমিকা আলোচনা করলে নিজেদের অনেক কিছুই একমাসেই জানা হয়ে যায় । আর চিঠির যুগে একমাসে দুই/তিনটি চিঠিতে যা যোগাযোগ ঘটত তাতে ভাব ও তথ্যের আদান প্রদান হত মোবাইল ফোন হতে অতি ধীরে। এর মধ্যে চিঠি ধরা পরার ভয়টাও ছিল। চিঠির যুগ থেকে মোবাইল ফোনের যুগ অনেক দ্রুত ও নিরাপদ। আমাদের সন্তানরা আজও দরখাস্ত লেখে। চিঠি লেখে। কিন্তু তা লেখে পরীক্ষার খাতায়। বাস্তবে তাদের তেমন একটা লিখতে হচ্ছে না বা প্রয়োজনই হচ্ছে না। আমরা কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা ইত্যাদির আয়োজন করি। আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে, উপস্থিত বক্তৃতার মত আমরা স্কুল কলেজে চিঠি লেখার প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারি, কারণ চিঠি লেখার অভ্যাস সাহিত্য রচনায় অনুপ্রেরণা দিবে। অপর দিকে মনের ভাবকে সুন্দর ভাবে লিখে ও গুছিয়ে উপস্থাপনা করার কিছুটা চর্চা হবে। ইতিহাস থেকে সৃজনশীল চিঠির লেখনী হারিয়ে যায়নি। কেবল মাত্র তা রূপ ও মাধ্যম বদল করেছে। তাই হারিয়ে যাওয়া চিঠি লেখার অভ্যাস এখন প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে পুন:জাগরিত করার উপায় বের করতে হবে। এতে আমাদের বংশধরদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

Thursday, October 15, 2015

বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইট ও সহজ তথ্য প্রবাহ

আমার পৈত্রিক বাড়ী গ্রামে তদুপরি আমার পিতার সরকারী চাকুরীর অবসর কালীন সময়টা গ্রামে কাটানোর কারণে আমাকে গ্রামে যেতে হয়। গ্রামে যাওয়ার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের ইনফরমেশন সেন্টার দেখার সৌভাগ্য হয়। এগুলো সত্যিকার অর্থে খুবই উপকারী। আর আমি আইটি কার্যাবলী  পছন্দ করায় এগুলো আমার মাঝে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করছিল। বিভিন্ন সময়ে আমি সরকারী বিভিন্ন ওয়েব সাইটগুলি দেখি। দিনকে দিন সাইটগুলো বেশ তথ্যবহুল হচ্ছে এটা সত্যিই অত্যন্ত ভাল দিক।তথ্য অনুসন্ধানে কিভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট গুলো কাজে লাগতে পারে তার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি।
          পত্রিকায় একটা খবর পড়লাম নওগাঁতে এক লোক ভিয়েতনামী কই মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে। মাছ চাষির গ্রামের নাম ও ইউনিয়নের নাম পত্রিকায় দেয়া ছিল। আমি মাছ চাষির পুরো নাম, গ্রামের নাম ও ইউনিয়নের নাম দিয়ে আমার একজন অভিজ্ঞ জেসিও(জুনিয়ার কর্মকর্তা)কে বললাম, পত্রিকায় উল্লেখিত মাছ চাষির  মোবাইল নম্বর যোগাড় করুন। আমি তার সাথে কথা বলব। এর তথ্য নিয়ে আমাদের একটা পুকুরে ভিয়েতনামী কৈএর চাষ করব। কয়েক ঘণ্টা ঘুরে এসে বলল, স্যার, এই এলাকায় কোন সৈনিক পাইনি। তবে পাশের ইউনিয়নের সৈনিক পাওয়া গেছে। তাকে ছুটি পাঠিয়ে দেই। আগামী কাল সব তথ্য নিয়ে হাজির হবে। আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম, আমি আপনাকে তথ্য আনার জন্য কাউকে ছুটি পাঠাতে বলিনি। আমি মোবাইল নম্বর চেয়েছি। তিনি অবাক হয়ে বললেন, কাউকে ছুটি না পাঠালে তথ্য জানব কিভাবে। আমাদের পিএবিএক্সের এক্সচেঞ্জ অপারেটরকে বলুন নম্বর যোগাড় করতে। সে জানাল, পিএবিএক্সের এক্সচেঞ্জের অপারেটর কোন বুদ্ধি বের করতে না পেরে লোক পাঠানোর বুদ্ধি দিয়েছে। আমি তাকে জানালাম, আপনার এক্সচেঞ্জের অপারেটর ওই উপজেলার বিটিসিএলএর এক্সচেঞ্জের অপারেটরের সাথে কথা বলে চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বর নিতে পারত। আর আপনি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিতে পারতেন, সেই মাছ চাষির মোবাইল নম্বর যোগাড় করতে। তাহলেই তো কাজ হত। আমি মোবাইলের ব্রাউজারে গুগগুল সার্চ এনে ইউনিয়নের নাম দিয়ে সার্চ দিলাম। ইউনিয়নের নামটা দিয়ে সার্চ করে আমি সেই ইউনিয়নের ওয়েব সাইটে গিয়ে চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বর পেয়ে গেলাম। আমার সেই জেসিওকে চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বরটি দিয়ে বললাম, এখন চেয়ারম্যানকে বলেন, সেই মাছ চাষির নম্বর যোগাড় করতে। সৌভাগ্য বশত সেই মাছ চাষির মোবাইল নম্বর চেয়ারম্যানের কাছে ছিল। চেয়ারম্যান মাছ চাষির নম্বর সাথে সাথে দিতে পারল। আমি জেসিওকে বললাম এখন আর বোধ হয় কাউকে তথ্য আনার জন্য ছুটি পাঠানোর দরকার নাই।
 ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে চেয়ারম্যান সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর আছে। তাই কোন ব্যক্তির নাম, গ্রামের নাম ও ইউনিয়নের নাম জানলে ব্যক্তি বিশেষের তথ্য সহজেই বের করা যায়। গ্রাম পুলিশের নম্বরও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে দেয়া থাকে। তাদের কাছ থেকে বা চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে গ্রামের মেম্বারদের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। আর মেম্বারদের মাধ্যমে গ্রামের যে কোন লোকের মোবাইল যোগাযোগ বা তথ্য জানা সহজ।
একবার একজন মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারীর বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইট আমার কাজে লেগেছিল। এক ব্যক্তি একজন মুক্তিযোদ্ধার  একমাত্র উত্তরাধিকারী পরিচয় দিয়ে অনুদানে অর্থ গ্রহণ করার জন্য আসে। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমার সন্দেহ হয়। তাকে সামনে বসিয়ে রেখেই আমি এই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট থেকে চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বর বের করি। তখন চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানতে পারি উল্লেখিত মুক্তিযোদ্ধার আরো উত্তরাধিকারী আছে। এভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইট অনেক তথ্য প্রাপ্তিতে সহায়তা দিতে পারে।
          আমাদের অনেক সময় কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভার ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নানা কর্মীদের তথ্য জানা বা ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়। সরকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রাপ্তদের সাধারণত পুলিশের মাধ্যমে ভেরিফাই করা যায়। ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রাপ্ত লোকদের গ্রামের বাড়ী বা আইডি কার্ডের তথ্যকে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশ ইত্যাদির দ্বারা সত্যতা প্রতিপাদন করা সম্ভব। সাধারণত কোন ব্যক্তির বিষয়ে গ্রামে আপনি কোন ব্যক্তি বিশেষের কাছে জানতে চাইলে সহজেই অনেক তথ্য পাবেন। গ্রামের লোকজন শহর অপেক্ষা প্রতিবেশীদের অধিক হারে চেনে।
          ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটের যে ব্যবহার আমি বললাম আসলে তা একমাত্র বা গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যবহার নয়। ইউনিয়ন পরিষদের সকল ওয়েব সাইট হয়ত যথাযথ তথ্যাদি দিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ নয়। তবু সাধারণত অনেক মোবাইল নম্বর দেয়া থাকে। তা বেশ উপকারী। অনেক ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েব সাইটে সকল স্কুল কলেজের প্রধানদের কন্ট্রাক্ট নম্বর আছে। আমি কয়েকটিতে আবার মুক্তিযোদ্ধাদের মোবাইল নম্বরসহ তালিকা দেখেছি। এমনকি ভিজিএফ কার্ড ও অন্যান্য সুবিধাভোগীদেরও তালিকাও অনেক চেয়ারম্যান রেখে দিয়েছে। অনেক ওয়েব সাইটে চেয়ারম্যানের বিভিন্ন নোটিশ বিঞ্জপ্তি দেয়া হয়। যা জনসাধারণের কাজে দেয়। আবার অনেক ওয়েবসাইটে প্রবাসীদের তালিকাও আছে। গ্রামের নাম, জনসংখ্যা, ম্যাপ ইত্যাদি অনেক তথ্যই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট গুলি ইনফরমেশন সেন্টারের কর্মীরা মূলত যে যে ইনফরমেশন প্রয়োজন মনে করে তা দিয়ে চেয়ারম্যানদের মতামত অনুযায়ী তথ্য রাখে। যদিও ওয়েব সাইটগুলির তথ্যের হেডিংগুলো অনেকটাই নিদ্দিষ্ট করে দেয়া আছে। যেমনআমার  ইউনিয়ন হল কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের ওয়েব এড্রেস হল: http://shashidalup.comilla.gov.bd

আমরা সকলে আশা করতে পারি, আমাদের সকল গ্রামের তথ্য আমরা ইন্টারনেটে পেয়ে যাব। যেমন, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট থেকে আমার গ্রাম দেউসের জনসংখ্যার তথ্য পেলাম। আমার গ্রামের জনসংখ্যা হল ১৬৮২ জন। এভাবে প্রতিনিয়ত মেম্বাররা গ্রামগুলোর হালনাগাদ পরিসংখ্যান রাখতে পারে। এতে আদমশুমারি ছাড়াও প্রতিটি গ্রামের জনসংখ্যার তথ্য ও অন্যান্য তথ্য হালনাগাদ পাওয়া যাবে। এমন একদিন আসবে যখন আমরা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট থেকে প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি বাড়ীর জ্যৈষ্ঠ সদস্যদের নাম পাব। কন্ট্রাক্ট নম্বরও পাব। এভাবে হয়ত একদিন গোটা বাংলাদেশের সকল তথ্য হাতের মুঠোয় চলে আসবে। তখন সার্থক হবে ইউনিয়ন পরিষদের ইনফরমেশন সেন্টার গুলো।

Thursday, October 8, 2015

বৃদ্ধ আশ্রম বনাম বৃদ্ধ আনন্দ আশ্রম

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৬৫ বছর হলে এবং স্বাভাবিক মৃত্যু সৌভাগ্য থাকলে আমার বয়সীরা (২০১৫ সালে লিখছি) জীবনের দুই তৃতীয়াংশ (৪০ থেকে ৪৫ বছর) পার করে ফেলেছি। কখন যে সময়টা চলে গেল এবং যাচ্ছে তা আমাদের অজান্তে। কয়েকদিন পরে হয়ত স্বাভাবিক নিয়মে আমরা একে একে পরাপারে যেতে থাকব। বৃদ্ধ আশ্রম শুনলেই বৃদ্ধরা চমকে যায়। মনে হয় তাদের কেউ নাই । সন্তানরা নির্দয়। জেলখানা সমতুল্য স্থানে তাদের ফেলে রাখা হয়। অথচ অনেক বৃদ্ধ/বৃদ্ধার সাথে বৃদ্ধা আশ্রমে সবাই ভাল থাকার কথা কারণ কবির কথায় “মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক, মানুষেতে সুর অসুর”। আমরা যদি চমৎকার পরিবেশের একটা ছোট ছোট ফ্লাটের বাড়ী তৈরি করে আর সে সকল বাড়ীগুলোতে আমরা অনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধা একসাথে থাকি তাহলে কেমন হবে? অনেকের সন্তান ও নাতি নাতনি ফেলে থাকতে না পারলেও আমার মত অনেকের কাছে পরিবেশটা মন্দ মনে হবে না। এই আনন্দ আশ্রমটি হতে পারে ব্যস্ততম শহরের বাইরে কোন নিরিবিলি স্থানে। আমার মাথায় এ ধারনা আসার কারণ আছে। আর তা হল আমার নিকটবর্তী একজন আত্মীয় আছেন তিনি ও তার স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। সন্তানরা থাকে মালয়েশিয়া ও আমেরিকায়। আমার পিতার রিটায়ারের পর ঢাকা ছেড়ে আমার পিতা ও মাতা গ্রামের বাড়ীতে থাকেন। তারা নিজেদের মত ছোট্ট সংসার পরিচালনা করছেন। লোকজন রেখে নিজেদের মত জীবন ধারণ করছেন। কারণ আমার পিতামাতা ও সেই নিকটাত্মীয় কেউই সন্তানের সংসারে থাকতে আগ্রহী নয়। স্বামী স্ত্রী বেচে থাকায় তারা পরস্পর সাপোর্টে নিজেরাই চলার পথ বের করেছে। আজ থেকে ১৫ বছর পর আমিও আমার ক্ষেত্রে এ সিচুয়েশন চিন্তা করতে পারি। আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল। ছেলেরা দুরে নিজেদের মত বিভিন্ন দেশে চাকুরী করবে। কালে ভদ্রে বেড়াতে আসে। আমি আর স্ত্রী যদি গড় আয়ুতে বাচতে পারি, তবে পরস্পরের সাপোর্টে আমরা বাঁচব। এক ছেলের কাছে আমি অন্য ছেলের কাছে আমার স্ত্রী অথবা তিনমাস/ছয়মাস করে রোটেশন করে ছেলে মেয়ের সংসারে থাকা এটা অনেকের কাছে ঠিক গ্রহণযোগ্য নয়। গ্লোবালাইজেশনের যুগে সন্তানদের কাছে পাওয়ার বা সন্তানদের সংসারে থাকার চিন্তাটা হয়ত কমিয়ে দিতে হবে।
আমি আমার জীবনে উপরের যে পরিস্থিতি চিন্তা করেছি। তা হল। আমার সন্তানরা সবাই দূরে দূরে থাকবে। কালে ভদ্রে তারা আমাদের দেখে যাবে। এমন অবস্থায় আমার মত কয়েকজনকে নিয়ে একটা আশ্রম করলাম। এ আশ্রমের নাম দিলাম “আনন্দ আশ্রম”। কারণ আমাদের এই বৃদ্ধা আশ্রমটি হবে এমন যেখানে আমাদের দুইটি রুম থাকবে একান্তই নিকটাত্মীয় আসলে যেন আমাদের সাথে থাকতে পারেবেশী গেস্ট আসলে রেস্টুরেন্ট টাইপ ডাইনিং থাকবে। সেখানে খাওয়া দাওয়া চলবে। এছাড়াও কমন গেষ্ট রুম অনেক থাকবে তাতে গেস্টরা হোটেলের মত ভাড়া দিয়ে থাকবে। আমি দুই রুমের স্টুডিও এ্যাপর্টমেন্টের পরিকল্পনা দিচ্ছি। হয়তবা কক্সবাজারে বিভিন্ন হোটেলে এ ধরনের দুইরুমের ছোট ছোট এ্যাপার্টমেন্ট দেখা যায়। ছোট বাসায় থাকার কারণে বৃদ্ধ বয়সে বড় বাসা থেকে ছোট বাসা রক্ষণাবেক্ষণে বেশী সুবিধা হবে। এছাড়া বৃদ্ধরা তাদের বড় বড় বাসাগুলি ভাড়া দিয়ে কম খরচে  স্টুডিও ফ্লাটে অনেকের সাথে আনন্দে থাকতে পারবে। অনেক লোকজন রেখে অনেক টাকা খরচ করে তাদের বড় বাসা রাখতে হবে না। অনেক নিকট আত্মীয় আসলে তারা সহজেই ভাড়া দিয়ে গেস্ট রুমে রাখতে পারবে। তাদের আর বড় বাসা মেন্টেইন করতে হবে না।
মনে করি আমরা প্রায় ২০০/৩০০ ষাট উর্ধ্ব বৃদ্ধ পরিবার এমন পরিবেশে থাকব। যেখানে নীচের সুবিধাগুলি থাকবে।
১. প্রতিটি স্টুডিও ফ্লাটে রান্নার ব্যবস্থা থাকবে যেন ইচ্ছেমত টুকটাক রান্না করা যায়। আবার রেস্টুরেন্ট ও ডাইনিং এর ব্যবস্থা থাকবে যেন শরীর খারাপ থাকলে বা রান্না করতে ইচ্ছে না করলে ডাইনিং এ খাওয়া যায়।
২. প্রতি ফ্লাট হোটেলের মত কেন্দ্রীয় ভাবে ঝাড়ুদার পরিষ্কার করে দিবে।
৩. লন্ড্রি সার্ভিস থাকবে।
৪. চুলকাটার জন্য জেন্টস সেলুন ও মহিলাদের জন্য মহিলা সেলুন থাকবে।
৫. ব্যক্তিগত গাড়ী রাখার পার্কিং থাকবে আবার ভাড়ায় গাড়ী নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
৬. সবার রুমে টিভি থাকবে আবার হল ঘরেও কেন্দ্রীয় ভাবে দেখার জন্য টিভি থাকবে।
৭. পুরুষ ও মহিলা আলাদা আলাদা নামাজের স্থান থাকবে।
৮. নার্স ও ডাক্তার ২৪ ঘণ্টা থাকবে। এ্যাম্বুলেন্স থাকবে।
৯. হাটার জন্য পর্যাপ্ত লন ও পার্ক থাকবে।
১০. যাদের ইচ্ছে বাগান করার জন্য ব্যবস্থা থাকবে।
১১. সন্তানদের সাথে যোগাযোগের জন্য হাই স্পীড ইন্টারনেট থাকবে।
১২. ব্যায়ামের জন্য ট্রেইনার ও জিম থাকবে।
১৩. সুইমিং পুল, ছোটখাটো গলফ অনুশীলন, যত ধরনের খেলা বৃদ্ধরা খেলতে চায় তার ব্যবস্থা।
১৪. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা থাকবে।
১৫. সকল পত্রিকা ও লাইব্রেরী থাকবে।

আমার আর মনে পরছে না। আরো অনেক অনেক বিষয় যোগ করা যায়। বৃদ্ধ বৃদ্ধারা কমিটি করে পুরো প্রতিষ্ঠানটি সমবায় নীতিতে চালাবেন। তাদের কেউ ক্যাটারিং দেখবেন। কেউ হেলথ দেখবেন। কেউ লাইব্রেরী দেখবেন। কেহ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ দেখবেন। কেউ ডাক্তার থাকলে তিনি ডাক্তারি করবেন।অর্থাৎ যে যেটায় দক্ষ সেটাই দেখবেন তার জন্য সন্মানী গ্রহণ করবেন। এতে একধরনের কর্মচঞ্চল পরিবেশ তৈরি হবে। বৃদ্ধ বৃদ্ধরা অবসরের মধ্যে নতুনভাবে চাকুরী করা শুরু করবেন।

এখানে বৃদ্ধরা কেন থাকবেন? তারা থাকবেন আনন্দের জন্য। একা একা না থেকে আরো অনেক বৃদ্ধা বৃদ্ধার সহচর্যে আনন্দে থাকবেন। অসুখ বিসুখে পরস্পর সহায়তা করে একটা চমৎকার পরিবেশ তৈরি হবেঅনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধা অনেক সম্পদের মালিক হলেও অনেক অযত্ন ও অবহেলায় পরে থাকে। এই স্টুডিও ফ্লাটগুলো ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। কেউ এর মালিকানায় থাকবে না। বৃদ্ধরা বোর্ড করে এর উন্নয়ন ও মেরামত করবে। সকলে স্টুডিও এপার্টমেন্ট/ ফ্লাটগুলোর ও অন্যান্য সেবার জন্য ভাড়া দিবে। সন্তানদের প্রয়োজনে যে কেহ যে কোন সময় চলে যেতে পারে। পুনরায় আসতেও পারে। স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ মারা গেলেও সিঙ্গেল থাকতে পারেন। মূলত এটা বৃদ্ধ ও সামর্থবানদের ভাড়া বাড়ী। যেখানে ৬০ বছরের উপরে লোকজন থাকবে। কারণ ৬০ বছরের উপরের মানুষদের বেশী সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। স্বামী ও স্ত্রী যে কেউ ৬০ বছর পূর্ণ করলেই আনন্দ আশ্রমে থাকার যোগ্যতা অর্জন করবে।  বৃদ্ধরা আত্মীয় স্বজনকে নিদিষ্ট সময়ের জন্য নিজ ফ্লাটে বা গেষ্টরুমে রাখতে পারবে। তবে লাগাতার আত্মীয় স্বজন রাখতে গেলে প্রতিষ্ঠানের মহাত্ব ক্ষুন্ন হবে। কারো যদি কোন সন্তান অতিরিক্ত চাহিদা সম্পন্ন হয় তবে এরাও পিতা মাতার সাথে থাকার ব্যবস্থা থাকবে।
অন্যান্য বৃদ্ধ আশ্রমের সাথে এর পার্থক্য এখানকার বৃদ্ধরা সামর্থবান ও তারা ভাড়া করা  স্টুডিও ফ্লাটে নিজ বাড়ীর মত থাকবে। এটা একা একা বাসায় থাকা বৃদ্ধদের সংঘবদ্ধ করে কর্মমুখী করে আনন্দময় পরিবেশ তৈরী করবে। এতে বৃদ্ধ বৃদ্ধরা যে যার মত থাকবে। শুধুমাত্র বৃদ্ধ বয়সে যা যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা থাকবে এবং বৃদ্ধরা একসাথে আনন্দ করবে। তাই এর নাম বৃদ্ধ আশ্রম না হয়ে আনন্দ আশ্রম নাম দেয়া হবে। কারণ এখানে এটা নিশ্চিত করা হবে যে যেভাবে বৃদ্ধ বয়সে থাকতে চায় তাকে সেভাবেই রাখা হবে। যেন সকলেই আনন্দে থাকতে পারে এবং আনন্দময় জীবনে দীর্ঘজীবী হতে পারে।

          এ ধরনের আনন্দ আশ্রম বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের ব্যস্ততার কারণে অবহেলা থেকে দূরে রাখবে। একই বয়সী অনেক বন্ধুদের মাঝে থেকে মনটা প্রফুল্ল থাকবে। সবাই আনন্দ আশ্রমটি চালাতে নিজেরাই ব্যস্ত থাকবে। দিন যাক দেখা যাক আমার এই প্রস্তাবে ভবিষ্যতে কেমন সাড়া পাই । আমি সেই দিনটির অপেক্ষায় থাকলাম। যেদিন আমাদের দেশের প্রতিটি শহরে বৃদ্ধা আশ্রমের বদলে বৃদ্ধরা থাকবে “আনন্দ আশ্রম”। অনেক বৃদ্ধ সকসাথে থাকলে বাধর্ক্য আর কষ্টকর মনে হবে না। হেসে খেলে আনন্দে পরাপারে যাত্রা করা যাবে।

Thursday, October 1, 2015

মোবাইল ফোনের একাধিক সিম ও জটিল যোগাযোগ

আমার মত অনেকেই নিশ্চয়ই হয়রান আত্মীয় স্বজনদের মোবাইল নিয়ে। প্রায় সকলেরই বর্তমানে একাধিক নম্বর আছে। কোনটি চালু আছে কোনটি চালু নেই। দেখা যাচ্ছে প্রত্যেকের একাধিক নম্বর থাকলে আর এক মোবাইলে একাধিক সিম থাকলে একটি নম্বরে কথা বললে অন্য নম্বরগুলি আর সংযোগ দেখায় না। আবার চাকুরীজীবিদের সরকারী ফোন থাকলে একাধিক মোবাইল বহন করতে হয়। অফিসের মোবাইল সাথে রেখে ব্যক্তিগত মোবাইল বাসায় ফেলে রেখে গেলে আত্মীয় স্বজন আর পায় না। মোবাইলের জটিল চক্করে জীবন হয়রান। আবার অনেকে এত বেশী ফোন পায় তারা মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখে। তখন আবার আরেক চক্কর। তাদের পেতে আবার অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। কারণ সাইলেন্ট পার্টি মাঝে মাঝে মোবাইল চেক করে এবং তাদের সুবিধাজনক সময়ে কল ব্যাক দেয়।
আমার একজন সহকর্মী ছিল সে অপারেশন অফিসারের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ছিল। তাকে সাধারণত আমরা একবারে পেতাম না। কারণ সে সর্বদা মোবাইল  সাইলেন্ট করে রাখত তার কাছে আমি জানতে চাইলাম সব সময় মোবাইল সাইলেন্ট করার কারণ কি? তার একটাই উত্তর তার সাধারণত ব্লাড প্রেশার হাই থাকে। হটাত মোবাইল বেজে উঠলে তার বুকে ধুক ধুঁকনি বেড়ে যায়। এর রিমেডি বের করাটা সত্যিই বড়ই জটিল। আমি আবার আলোচনা সভা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা ও এবাদতের সময় মোবাইল সাইলেন্ট করে বিপদে পড়ে যাই। কারণ প্রায় ভুলে যাই যে মোবাইল সাইলেন্ট আছে। এরপর আমার উপরের কর্মকর্তারা মোবাইল সাইলেন্ট না করার পরামর্শ দিলেন। আলোচনা সভা ও সিনিয়রদের সাথে কথোপকথনে সহকারী কাউকে মোবাইলটা দিয়ে রাখা যেতে পারে। এমনকি এবাদত কালীন সময়ে মোবাইল বাসায় রেখে মসজিদে যাওয়া যেতে পারে অথবা মসজিদের বাইরে কেউ থাকলে তাকে দেয়া যেতে পারে। এ সমাধানগুলো আমার জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।
আগে আমরা চিঠি লিখতাম চিঠির উত্তর পেতে অনেক দিন অপেক্ষা করতাম। তারপর কুরিয়ার এলো আমরা এক/দুই দিন অপেক্ষা করে উত্তর পেয়ে যেতাম। একসময় মোবাইল ও এসএমএস আসল। আমরা আরো দ্রুত যোগাযোগ করতে পারলাম। আমাদের যোগাযোগের ধৈর্য অনেক কমে গেল। এখন আমরা কাউকে মোবাইলে না পেলে খুবই বিরক্ত হই। আর সেই সাথে একাধিক নম্বর থাকলে একটার পর আরেকটা চেষ্টা করার আরেক প্রয়াস চলতে থাকে। অতঃপর একান্তই না পাওয়া গেলে এসএমএস দিয়ে আমরা সাধারণত ক্ষান্ত দেই। আগে ল্যান্ড ফোনে ব্ল্যাংক কলের একটা ঝামেলা ছিল। কোন বাসায় উঠতি বয়সী মেয়ে থাকলেই হল। সাধারণত কলার আইডি আসত না বলে কে কল করেছে তা বুঝা যেত না। অনেক সময় কাঠ খড় পুরিয়ে অনেক খরচ করে টিএন্ডটি থেকে ডিস্টার্ব করীর নম্বর সংগ্রহ করা যেত। এখন অহরহ অনেক নম্বর থেকে মোবাইল ডিস্টার্ব আসে। এদের ধরতে প্রাযুক্তিক ভাবে সহজ হলেই তা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। একাধিক ও সহজলভ্য হওয়ায় মোবাইলে ডিস্টার্ব করে সহজেই সিম চেঞ্জ করে নিয়ে নিরাপদ থাকে ডিসটার্বকারী লোকজন। অনেক সময় হোয়াইট লিস্ট বা ব্ল্যাক লিস্ট চালু করে সাময়িক ভাবে মোবাইল বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সিম চেঞ্জ করে ডিস্টার্ব থেকে বাচা যায়। সিম চেঞ্জ করলে সাধারণত দুটি ক্ষতি হয়। এক পরিচিত সবাইকে আবার নতুন নম্বর জানাতে হয়। আর্থিক ভাবে নতুন সিমটা কেনার বাড়তি খরচ করতে হয়। প্রায়শই দেখা যায় কারো সিম হারিয়ে গেলে সিমের দাম তেমন বেশী না হলেই টাকা খরচ করে পুরাতন সিম নিতে দেখা যায়। কারণ একটা নম্বর সর্বদা ব্যবহার করাটা অত্যন্ত ভাল । কারণ, এতে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এক সময় আমি বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির বিভিন্ন অফারে আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির একাধিক নম্বর নেই। পরে দেখলাম এটা একটা বিড়ম্বনা। আমি একটা সান্ত্বনা বের করলাম। আর তা হল, দেশে টাকা দেশে রাখার কনসেপ্ট। আমি টেলিটক সিমকে আমার স্থায়ী সিম করে ফেললাম দেশের টাকা দেশে রাখার জন্য। দেশী সিম টেলিটকে বেশী টাকা খরচ করলেও আশা করা যায় সমুদয় টাকা দেশে থাকবে। অন্যান্য সিমে ১৫% দেশে থাকলেও অন্যান্য সকল লভ্যাংশ দেশের বাইরে চলে যায়। এ চিন্তায় আমার  টেলিটক সিমটি সর্বদা ব্যবহারের জন্য স্থায়ী হয়ে থাকল। টেলিটকের নেটওয়ার্ক দুর্বলতার জন্য অন্য কোম্পানির সিমও রাখার প্রয়োজন পরে। এ কারণে টেলিটকের বাইরে দুই একটি সিম না রেখে আর পারিনি।
সকল মোবাই‌ল কোম্পানীর একই ব্যক্তির মোবাইল ব্যক্তি চাহিদার  উপর নির্ভর করে মোবাইল কোম্পানীর কোড ব্যতীত নম্বরের অন্যান্য ডিজিটের নম্বর এক হ‌তে পারে। যেমন আমার টেলিটকে নম্বর হল ০১৫৫৮৭৩৭৩৫৫, গ্রামীণ ফোনে নম্বর‌টি হ‌তে পা‌রে  ০১৭৫৮৭৩৭৩৫৫ , বাঙলা লিংকে হ‌তে পা‌রে ০১৯৫৮৭৩৮৩৫৫, ভারতে এধরনের ব্যবস্থা আছে বলে জানা যায়। আমা‌দের দেশের অনেকে  মনে হয়  এয়ারটেল মোবাইল কোম্পানী থেকে নম্বর মিলিয়ে নম্বর নিতে পারেন। সভা সমিতি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ইভেন্ট ম্যানেজারের কাছাকাছি একজন দুইজন থাকবে সভার সকলের মোবাইলগুলো একসাথে রেখে মনিটর করতে পারেন। এতে আগত কলারকে জানাতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ সভা চলছে। ধর্মীয় উপাসনালয়ের সামনে অনেকসময় দ্রব্যাদি বা জুতা ইত্যাদি ম্যানেজ করার জন্য লোক মজুদ থাকে। তেমনি মোবাইল ফোনও একই ব্যবস্থায় থাক‌তে পা‌রে। যেখানে  মোবাইল ফোনগুলি  কিছু সংখ্যক মানুষ ভাড়ার বিনিময়ে সংরক্ষণ করবে ও প্রয়োজনে উত্তর দিয়ে জানাবে পড়ে কল করুন। কারণ তিনি এখন এবাদতে ব্যস্ত।
মোবাইলের  বিভিন্ন কোম্পানীর আলাদা আলাদা টাওয়ার বা বিটিএস না থেকে সবাই একই  টাওয়ার ব্যবহার করলে মোবাইল কোম্পানীর খরচ কম লাগত। নেটওয়ার্কের মানও ভাল হত। অনেক দেশে জানা যায় টাওয়ার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের আলাদা কোম্পানী কর্তৃক করা হয়। এতে মোবাইল কোম্পানীর পরিচালন ব্যয় কমবে। মোবাইলের   কল চার্জ কমবে । অপর দিকে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। জমি  ও জায়গার অযাচিত ব্যবহার কমবে। বাংলাদেশের মত  ছোট দেশের জন্য জমি ও বিদ্যুৎ এর এ ধরনের অপচয় কমা‌নো যে‌তে  পারে। ইদানীং  বাংলাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার টানার জন্য আলাদা কোম্পানি হয়েছে। অন্যথায় সমস্ত মোবাইল কোম্পানী আলাদা আলাদা লাইন টানলে দেশ ব্যাপী খোড়াখু‌ড়ি আর অপটিক্যাল লাইনে  একাকার হ‌য়ে যেত। তাই নির্ধারিত কোম্পানীর দ্বারা অপটিক্যাল ফাইবার রক্ষণাবেক্ষণ হওয়ায় এ খাতে শৃঙ্খলা এসেছে। এখন মোবাইল টাওয়ার ও বি‌টিএস নিন্মা‌নে শৃঙ্খলা আস‌বে বলে মনে করা যায়।
মোবাইল নেটওয়ার্ক ও টেলিযোগাযোগ খাতে নিন্মবর্নিত উন্নয়নগুলো হতে পারে:
১. সকল মোবাইল কোম্পানি একই বিটিএস টাওয়ার ও অপটিক্যাল লাইন ব্যবহার করলে সকল মোবাইল কোম্পানির খরচ কমবে লাভ বাড়বে । আর গ্রাহকের সবচেয়ে বড় লাভ হল মোবাইল বিল কমে আসবে।
২. যে কোন গ্রাহক যে কোন মোবাইল কোম্পানির মোবাইল ক্রয় করলে সে নম্বরটি  অন্যান্য সকল মোবাইল অপারেটরের জন্য বরাদ্ধ হতে হবে যেন একই গ্রাহক অন্য কোম্পানির মোবাইল ক্রয় করলে নতুনভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে না হয়। এতে গ্রাহক বিভিন্ন কোম্পানির সিম ক্রয় করলেও মোবাইল কোম্পানির কোড ব্যতীত অন্যান্য নম্বর একই থাকবে।
৩. যদি কলার আপনাকে কল করে তবে কলগুলি এমনভাবে রিডাইরেক্ট হবে যে আপনার এক নেটওয়ার্কের সিমে না পাওয়া গেলে অন্য নেটওয়ার্কের একই নম্বরের সিমে কল যাবে । এতে গ্রাহক নেটওয়ার্ক বদল করলেও কলারকে গ্রাহকের অন্যান্য নম্বর খুঁজে কল করতে হবে না। এতে সকল গ্রাহক যে কোন মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে থাকলেও এক কলই অন্য অপারেটরে কানেক্টেড থাকবে।
৪. সমস্ত নেটওয়ার্কের সংযোগ এমন হবে যেন গ্রাহক কখনও নেটওয়ার্কের বাইরে বা মোবাইল বন্ধ থাকলে তাকে যে কোন সিমের নেটওয়ার্কে থাকা গ্রাহকরা কল করে না পেলে পুনরায় গ্রাহক সংযুক্ত হলে কল কারীরা তার সন্ধান লাভ করবে। এ সিস্টেমগুলো এখনও শৃঙ্খলা বদ্ধ নয়। একেক অপারেটর একেক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ,এ বছর (২০১৫ সালে) বাংলাদেশ মধ্য আয়ের পথে অগ্রসর হয়েছে। আশা করা যায় মোবাইল ফোনের অনেক অপারেটরের অনেক ধরনের সিস্টেম সমন্বিত হয়ে গ্রাহক বান্ধব হবে। আমরা সেই দিনগুলোর অপেক্ষায় রইলাম।