Pages

Wednesday, December 3, 2014

আমরা কি বুড়িয়ে যাচ্ছি

আমার এ লেখাটি আমার বন্ধুদের জন্য যারা ৪৪-৪৬ বছর বয়সী। আমাদের অনেকের কানে একটি বাক্য প্রায়ই আসে,বয়স হয়েছে আর কত। এই কথাটি কিছুদিন আগেও বেশ গুরুত্ব দিতাম। এখন মনে হচ্ছে এটা গুরুত্ব দেয়ার কোন বিষয় এটা নয়। কারণ বয়স হলে হয়তবা ২৫ বয়সীর মত কাজ সম্ভব নয় কিন্তু বয়স অনুযায়ী কার্যক্রম থেমে থাকার কথা নয়। আমরা প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। আমাদের শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষা। বিভিন্ন স্থানে যাতায়ত। ব্যাটল ড্রেস পড়া। মাইলের পর মাইল হাটা। এগুলো কোনটাই আরামদায়ক কাজ নয়। আমি ২০১২ সালে মিশনে গিয়েছি। সেখানে যখনই ক্যাম্পে গেছি বা টহলে গেছি কখনও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বা বুলেট প্রুফ হেলমেট মাথা থেকে নামাতে পারিনি। কারণ একটাই কঙ্গোতে আমাদের বাংলাদেশের হতাহতের ঘটনা কম নয়। কঙ্গোতে আমাদের ভাষা-গত পার্থক্য থাকার কারণে আমরা তেমনিভাবে তাদের সাথে মিশতে পারতাম না। দুভাষী দ্বারা আর যাই হোক বন্ধুত্ব করাটা কঠিন।
তবু যারা মিশনের ক্যাম্প থাকে তাদের অনেক বেশী পরিমাণে টহল করতে হয়। জীপগুলি কঙ্গোর রাস্তায় চলতে চলতে আর আরামদায়ক অবস্থায় নাই। তবে গাড়ী চলমান আছে কারণ প্রতি তিনমাস পরপর পরিদর্শনে গাড়ী অকেজো থাকলে সেই সমস্ত গাড়ীর কোন ভাড়া বাংলাদেশ পাবে না। তাই গাড়ীর রং ও চেহারা যাই হোক না কেন গাড়ী চলমান থাকত। আমাদের সাথে দুইজন কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন অনেক সিনিয়র মেজর। একজন কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের কোর্সের আর আর একজন ছিল কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের এক কোর্সের জুনিয়র। আমি ব্যাটালিয়ন হেড কোয়াটার থেকে কোম্পানি কমান্ডারদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে কোম্পানিতে যেতাম। আমার দীর্ঘ সময় বিপি হেলমেট পড়ায় মাঝে মাঝে বেশ টায়ার্ড ফিল করতাম কোথাও গেলে তা খোলার জন্য আকুপাকু করতাম। অপরদিকে আমার থেকে প্রায় সাত বছরের সিনিয়র কোম্পানি কমান্ডার নির্ধিধায় বিপি হেলমেট ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে আছে খোলার নামগন্ধ নেই। ভাঙ্গা-চুরা জীপে মাটির রাস্তায় মাইলের পর মাইল যাচ্ছে ক্লান্তির কোন ছাপ বা বিরক্তি নেই। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, সে কিভাবে এত লম্বা সময় বিপি হেলমেট পড়ে থাকতে পারছে। একটানা ঘণ্টা পাঁচেক পরে আমার অবস্থা খারাপ। সে আমাকে বলল, অভ্যাস। সপ্তাহ খানেক নিয়মিত দশ ঘণ্টা/বার ঘণ্টা টহল করতে থাকলে  কয়েকদিন পরে দেখবে বিপি পড়ে আছ না গেঞ্জি পড়ে আছ টের পাবে না। আসলে তাই হয়েছিল আমি এক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিপি হেলমেট পড়ে থাকলেও টের পেতাম না। আমি একজন জেসিওকে দেখলাম, এই জেসিও আমার চেয়ে ১০ বছরের বড়। সে ক্লান্তিহীন ভাবে টহল করছে। বিপি হেলমেট খুলছে না। তাকে দেখে আমি শুধু চিন্তা করি, সে পাড়লে আমার জন্য তা আরো সহজ। আমি তার তুলনাটি নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত রাখছিলাম। আসলে পরিশ্রমের ক্ষমতা নির্ভর করছে অভ্যাসের উপর। অবশ্য অনেকে বলেন যারা মেধার পরিশ্রম করেন তারা কায়িক পরিশ্রম করলে মেধাকে কাজে লাগাতে পারেন না। বিষয়টা মোটেই ঠিক নয়। মেজর কোম্পানি কমান্ডার দুইজন, নিরলস ভাবে যে পরিশ্রম করত তারচেয়ে অর্ধেক পরিশ্রম করেও সমবয়সী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসি বাংলো ও প্রাডো জীপে বিপি  হেলমেট ছাড়া জীবন যাপন করেও সর্বদা ফিজিও থেরাপিস্টের নানা রকম অনুশীলনের মধ্যে থাকতেন। একজন লে: কর্নেল পদমর্যাদার ডাক্তার সর্বদা তার শারীরিক অবস্থা ভাল রাখার জন্য অত্যন্ত তৎপর ছিল। আর আমরা আতংকে থাকতাম কখন তার শরীর খারাপ সাথে মেজাজ খারাপ। আমার থেকে র‍্যাংকে সিনিয়র কোর্সে জুনিয়ার দুই কর্মকর্তা লাগাতার যেভাবে চিকিৎসা নেয়ায় ব্যস্ত ছিল তাতে আমাকে একটু অবাক করেছিল । তারা নিশ্চিতভাবে অনেক উপরে উঠতে পারবে। তাদের কমফোর্ট লেভেল আমার মত মেজর থেকে অনেক বেশী ছিল। তাদের চেয়ে অনেক শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যেও আল্লাহ আমাকে অধিক সুস্থ রেখেছিলেন। তবে আমি বলব তারা যদি আমার র‍্যাংকেথাকতেন। তবে হয়তবা আরো কম অসুস্থ হতেন। আমার চেয়ে নীচে র‍্যাংকেযারা আছে তারা আমার চেয়ে আরো কম অসুস্থ হচ্ছে। কারণ বেশী পরিশ্রম হলে আর যাই হোক শরীর ভাল থাকে। তাই সামাজিক অবস্থা বা স্ট্যাটাস ভাল থাকলে শারীরিক অবস্থা সেইভাবে ভাল নাও থাকতে পারে। আমি আমার কাপড় ধোয়ার জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল। একজন সৈনিক নিজে পরিশ্রম করে তার কাপড়টা ধুয়ে নিচ্ছে। সে আরও অনেক কাজ করছে তার জন্য সে আমার চেয়ে বেশী পরিশ্রম করছে। এ ধরনের মানুষদের গড় আয়ু হয়ত আমার মত চেয়ারে বসে কাজ করা মানুষের চেয়ে বেশী। আমরা পরিশ্রমী মানুষদের পরিশ্রমগুলো করতে না পারলেও খেলাধুলা আর হাটার মধ্যে থেকে হয়তবা শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ বের করে নিতে পারি। টাইম ম্যানেজমেন্টের একটা আর্টিক্যাল পড়ে একটা মজার তথ্য জানলাম আর তা হল, আমাদের প্রত্যেকের প্রতি ঘণ্টা কাজের মূল্য বের করতে হবে। যদি আমার ঘণ্টার দাম হয় ৫০০ টাকা আর কাপড় ধোয়ার লোকের মূল্য যদি হয় ঘণ্টায় ১০০ টাকা তাতে আমার যদি সময় কম থাকে তবে লো ভ্যালু কাজ কম মূল্যে করিয়ে নেয়া ভাল। এতে আমার প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে। যদি সময় পাওয়া যায় তবে নিজের কাজ নিজে করলে শরীর ভাল থাকবে।
কাজটা অভ্যাসের বিষয়। তবে এটা নিশ্চিত নিজের পদমর্যাদা যাই হোক না কেন নিজ উদ্যোগ পরিশ্রম করে নিজেকে হালকা ঝরঝরে রাখা যায়। কুষ্টিয়ার ডিসি সৈয়দ বেলাল হোসেন(২০১৪ ডিসেম্বর)  খুবই টেনিস খেলেন । তার হালকা পাতলা ফিট শরীর তার কাজের তৎপরতায় প্রকাশ পায়। অথচ বিজিবি বা আর্মিতে থেকেই আমরা ওবিস সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি। তখন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে নিয়মিত টেনিস খেলে নিজেকে সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যের থাকাটা প্রশংসার দাবীদার।

তবে যে কোন খেলাধুলা বা ব্যায়াম নিয়মিত ও ধারাবাহিক ভাবে করাটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশী গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় আমরা পদার্পণ করি ততবেশী ভাল ও উচ্চ ফ্যাট-যুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হবে। উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা অথবা আর্থিক অবস্থা ভাল লোকজনের স্বাভাবিকভাবেই দামী ও উন্নত প্রোটিন খাদ্যের মধ্যে থাকে। বাজারের বড় বড় মাছ ও অন্যান্য দামী খাবার, রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া চলতে থাকলে ওজন আর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণের রাখাটা অনেক বেশী শক্ত। পরিশেষে বলা যায় সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে আছে কেবলমাত্র সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা নিজেদের ওজন ও অভ্যাস নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারি। তাই যে কোন কাজে আমি বুড়িয়ে যাচ্ছি তা নয় বরং বয়সকে তোয়াক্কা না করে কাজে তৎপর থাকাটা জরুরী। তাতেই মঙ্গল রয়েছে। আর যারা উচ্চ মর্যাদায় নেই তাদের মন খারাপ করার কারণ নেই কারণ উচ্চ মর্যাদায় না থাকা আবার আশীর্বাদ হিসাবেও নেয়া যেতে পারে। কারণ অল্পমুল্যের খাবার, অল্প মূল্যের গাড়ী, অল্প আয়েস ইত্যাদি আমাদের অধিক পরিশ্রম করাবে আর তাতে আমরা আরো বেশী সুস্থ থাকব। আর যারা উচ্চ মর্যাদায় আছেন তদের প্রয়োজন সতর্ক থাকা কারণ হাত বাড়ালেই তার জিম পাচ্ছেন। হাত বাড়ালেই পারছেন অনুশীলনের কোচ নিয়োগ করতে। আপনার ডায়েটিং চার্ট তৈরি করতে  ডাক্তার নিয়োগ করতে পারছেন। প্রয়োজন শুধু একটু তৎপরতার ও ইচ্ছার।