Pages

Thursday, October 26, 2017

প্রাইভেট টিউশনে পড়ে উচ্চশিক্ষা লাভ

একবার বাসে যাওয়ার সময় সহযাত্রী হল একজন ব্যক্তি তা‌কে আমার চেনাজানা মনে হল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মনে  হল এই ব্যক্তিটি প্রায় পনের বছর আগের জানা‌শোনা। তখন আমরা যেখানে ছিলাম সেই প্রতিষ্ঠানের বিষ‌য়ে তার সাথে আলোচনা চল‌তে থাকল। হঠাত সে  আমার সিনিয়র একজনের নাম বললেন। তিনি কোথায় আছেন জান‌তে চাইল। আমার জানা নাই। তাই তা‌কে প‌রে জানাব বলে দিলাম। সে নিজের থেকে আলোচনায় আনল আমার সেই সিনিয়রের সাথে প্রাইভেট ভাবে তিনি মাস্টার্স পাশ করেছিলেন। আমার আগ্রহ বেড়ে গেল। আমি জান‌তে চাইলাম। কিভাবে তারা পড়েছে।
তারপর আমি মজাদার পড়া‌শোনার পদ্ধতি জানতে পারলাম। এখনকার সম‌য়ের ডিসট্যান্ট লার্নিং এর সাথে মিল পাওয়া যাবে। তারা দুইজন প্রাইভেট ও পেশাদারী লোক‌দের পড়াশোনার উপযোগী প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হল। সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার ক্লাস করত।
তিনি বললেন, স্যার যখনি  গাড়ী নি‌য়ে যেতেন। আমা‌কে সাথে নিতেন। আর যখন যে‌তে পারতেন না। আমি যেতাম। প্রায়শই জোর ক‌রে আমা‌কে ট্যাক্সি ভাড়া দিতেন। ক্লাস শেষে অফিসের ব্রেক টাইমে যেসব বিষয়ে স্যার ক্লাস করেননি। সেই সব পাঠগুলো আমি তা‌কে পড়াতাম। পরীক্ষা একসাথে দিতাম। পরীক্ষার আগে স্যারের বাসায় বা অফিসে দুইজনে আলোচনা ক‌রে পড়তাম। আমি বললাম, আপনা‌দের ফলাফল কি?
 দুইজনেই  সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছি। তবে স্যার আমার চে‌য়ে বেশী নম্বর পেয়েছিল।
চাকুরীজীবীদের এই  ধরনের পড়া‌শোনার বিষয়‌টি বেশ আশাব্যঞ্জক। সহযোগিতা নি‌য়ে পড়া‌শোনার এই সিস্টেমটি অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের আর্থিক উপার্জনের মাধ্যম হ‌তে পা‌রে। আমার এক নিকটাত্মীয় আছে । তার অল্প বয়সে বি‌য়ে হ‌য়ে‌ ছিল। তার আর্থিক অবস্থা ভাল। একদিন গল্প করতে গিয়ে  তিনি বললেন, এমন যদি হত। কেউ একজন আমা‌কে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিত। সপ্তাহে এক দুইদিন বাসায় এসে আমা‌কে পড়াবে। শুক্রবার ক‌রে কোন কোন মাসে এক দুইবার পরীক্ষা দি‌তে নি‌য়ে যাবে। এই  ধরনের প্যাকেজ ডিলে কাউকে পেয়েছেন কি। আমি জান‌তে চাইলাম। আপনি চেষ্টা করেছিলেন কি? অবশ্যই চেষ্টা করেছি। কিন্তু  মফস্বল শহরে এই ধরনের প্যাকেজে কাউকে পাওয়া যায়নি। আমি বললাম ফেইসবুকে দিতেন। পত্রিকায় বিঞ্জপ্তি দিতেন নিশ্চয়ই কাউকে পেতেন। আবার অনেক মিডিয়া আছেন। তারাও যোগাড় করতে পারত। ঢাকায় হয়ত সম্ভব কিন্তু মফস্বলে সম্ভব নয়। আর একটি ব্যক্তি আছে মেট্রিক পাশ করেছেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ হয়নি। এখন হা‌তে টাকা হ‌য়ে‌ছে। ব্যবসায় উন্নতি হ‌য়ে‌ছে। তার মনে হল ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলে ও ডিগ্রি পাশ করলে তার একটা শিক্ষিত ও ভাল পরিবারের পাত্রী জুটবে। এছাড়া শিক্ষিত মা হলে ভবিষ্যতে বাচ্চারাও উচ্চশিক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
কম শিক্ষিত ব্যবসায়ী এই‌ যুবক পড়‌তে চায়। কিন্তু তার সময় নাই।‌ তবে সারা দিনের কাজ শেষে রা‌তে যখন সে বিনোদ‌নের জন্য টি‌ভি দেখতে বসে তখন তা‌কে কেউ এক দুই ঘণ্টা পড়িয়ে গেলে মন্দ হয় না। তারপর পরীক্ষার দিনক্ষণ খেয়াল রেখে আগের দিন পরীক্ষা দি‌তে নি‌য়ে গেলে মন্দ হয়না। ব্যবসায়ী‌টি পড়া‌শোনার প্রয়োজন সমাজে তার ইজ্জতের জন্য। এমনকি ব্যবসায়ী‌টি তার ব্যবসার ধরনের সাথে মিল রেখে সেই ধরনের বিষয় নি‌য়ে পড়তে পারে। ২০১৭ সালের জুন মাসে সপরিবারে ঢাকায় এসে আমি বাচ্চা‌দের জন্য হাউজ টিউটর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অথচ দেশে কিন্তু বেকার যুবক যুবতীর অভাব নেই। অত:পর আমার ছেলে ফেইসবুক থেকে একটা মোবাইল নম্বর দিল। সেই মিডিয়া যোগাযোগ ক‌রে বুয়েটে পড়ুয়া হাউজ টিউটর যোগাড় ক‌রে দিল। প‌রে জান‌তে পারলাম, যে মিডিয়া যোগা‌যোগ ক‌রে দিয়েছে তারা টিউটরের প্রথম মাসের  ইনকাম হ‌তে অর্ধেক টাকা নেয়। এই  ধরনের  কাজ কেমন কেমন মনে হলেও আমার কাছে ভালই মনে হ‌য়ে‌ছে। কারণ পরিচিত কেউ আমা‌কে টিউশন মাস্টার যোগাড় ক‌রে দি‌তে পারছিল না। তাই সেই ফেইসবু‌কের মিডিয়ার উপর আমি সন্তুষ্ট। তারা সাত দিনে শিক্ষক ঠিক ক‌রে দিল। পত্র পত্রিকায় টিউশন চাইশিক্ষক চাইএই ধরনের বিঞ্জপ্তি দেখা যায়। তবে বাসায় পড়াশোনা করিয়ে ইন্টার মিডিয়েট পাশ করাতে চাই বা টিউটর আবশ্যকএই ধরনের আইডিয়া কেমন হবে জানি না। কিন্তু এতে অনেক বেকার শিক্ষিত যুবকের কর্মসংস্থান হবে তা নির্ধিদ্বায় বলে দেয়া যায়।
অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান তাদের এ্যাম্প্লয়িদের অফিস টাইমের পরে প্রশিক্ষক এনে তাদের প্রতিষ্ঠানের উপযোগী বিষয়ের উপর পড়াশোনার আয়োজন করাতে পারেন। সবাইকে আরও উচ্চশিক্ষিত করতে পারেন। সেই ব্যবস্থা করতে পারলে এতে হিউম্যান রিসোর্স উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের এ্যাম্প্লয়িদের মান উন্নয়ন হবে। প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হবে। একই ভাবে কোন প্রাইভেট স্কুল তারা শিক্ষকদের স্কুল শেষে বাইরে থেকে প্রশিক্ষক এনে বিএ্যাড ও এমএ্যাড পড়াতে পারে।

শিক্ষিত বেকারদের আয় রোজকার বাড়াতে হোম সার্ভিস ডিগ্রি চালুর পদ্ধতিটি ব্যবসায়ী মডেল হিসাবেও খারাপ হবে না। অনেকে এ বিষয়ে ভেবে দেখতে পারেন।

Thursday, October 19, 2017

বাংলাদেশে দলিল তৈরি ও ব্যাপক বাণিজ্য

প্রত্যেক মানুষের জীবন চক্রে  বার্ধক্য অবধারিত। আমরা বার্ধক্য এসে ধী‌রে ধী‌রে লাইফ সাইক্যাল শেষ ক‌রে পরাপা‌রে পারি জমাই। যাওয়ার আগে নিকটজন‌দের পরবর্তী বি‌রোধ রো‌ধে অনেকেই দানপত্র দলিল, বণ্টন নামা ও ওসিয়ত নামা দি‌য়ে যায়। আমার ও আমার ভাইবোনদের জীবনেও অভিঞ্জতা হল বাবা ও মার কাছ থেকে দান পত্র নেয়ার প্রস্তাব। মুসলিম ও হিন্দু আইনের সম্পত্তির নিয়ম মেনে চলার জন্য অনেক পিতা মাতাই সন্তান‌দের দান পত্র দলিল দেন। এই  দানপত্র দলিল অত্যন্ত কম খরচে  করা যায়। মুসলিম আইনে‌ হেবা দলিল নামে পরিচিত। এই‌ দলিল করার জন্য ইন্টারনেট হ‌তে প্রাপ্ত কিছু তথ্য তুলে ধরলাম।
" হেবার ঘোষণাপত্র দলিলের ফি:
১. মুসলমানদের ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) মোতাবেক হেবা মূল্য কোনো স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বিষয়ক ঘোষণা রেজিস্ট্রির জন্য সম্পত্তির মূল্য নির্বিশেষে প্রদেয় রেজিস্ট্রি ফি ৪৪০ টাকা।
২. যদি ওই হেবা স্বামী বা স্ত্রী, মা-বাবা ও সন্তান, দাদা-দাদি (নানা-নানি) ও নাতি-নাতনি, সহোদর ভাইরা, সহোদর বোনরা এবং সহোদর ভাই ও বোনদের মধ্যে হয়।"
লক্ষ্য করুন ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য হল ৪৪০ টাকা ফি সরকার নিচ্ছে। অনেকের সাথে কথা বলে জান‌তে পারলাম। স্ট্যাম্প বাবদ আরো পাঁচশত টাকা। তাহলে এখন পর্যন্ত খরচ ৪৪০ যোগ ৫০০ টাকা অর্থাৎ ৯৪০ টাকা। দলিলের নকল তুল‌তে সরকারী খরচ মনে করি ১০০০ টাকা। আর ডকুমেন্ট   কম্পোজ কর‌তে আরো ২০০ টাকা। সর্ব‌মোট: ২১৪০টাকা। তবে আমরা দানপত্র দলিল কর‌তে দি‌তে হয় কম ক‌রে হলেও ১০০০০ টাকা। আমি অনেকের কাছে জান‌তে চাইলাম বাড়তি টাকা কেন। সবাই বলল অফিস খরচ ৭০০০/৮০০০ টাকা নাকি লেগে যায়। এটা কি বেশী হল না। এটা গেল পরিষ্কার ঝামেলা মুক্ত দলিলের ক্ষেত্রে। আর যা‌দের জরিপ ও অন্যান্য খাজনা দেয়ার সমস্যা থাকলে কথা নেই। অফিস খরচ তখন লক্ষ টাকা নির্ধারণ হবে। কারণ পুরাতন ফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে হালনাগাদ করতে হয়। কি পরিমাণ পরিশ্রম যে করতে হয় বেচারা সরকারী বাবুদের।
আমি অনেকের সাথে কথা বললাম। জান‌তে পারলাম। অনেক মানুষ এর উপর জীবন ধারণ ক‌রে। দলিল লেখকরা বেঁচে আছে এই  টাকার উপর। রেজিস্ট্রি অফিসের সরকারী কর্মচারী‌দের অল্প টাকা নাকি বেতন পায়। তারা এর উপর নির্ভর ক‌রেই বেঁচে আছে। অত্যন্ত ল‌জিক্যাল বিষয়। তা‌দের দেখভাল সাধারণ মানুষ না করলে কে করবে। আমি  দানপত্র দলিল কর‌তে গি‌য়ে কেউ বলেছে ১২ হাজার, কেউ ১০ হাজার, কেউ ৮ হাজার ও কেউ ৬ হাজার টাকা। কোন নির্ধারিত রেট নেই। এখানে সামাজিক উন্নয়নের জন্য যেহেতু আমরা দলিল লেখক ও রেজিস্টারদের দেখভাল করছি তেমনি তারা যেন ঠ‌কে না যায় সেটাও আমাদের দেখতে হবে। সেজন্য সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা দলিল লেখক ও রেজিস্টারের ফি সরকারী বা স্থানীয় প্রঞ্জাপ‌নের মত করা যে‌তে পা‌রে। কারণ দলিল লেখক ও দলিল রেজিস্টারদের বেচে থাকার লড়াইটাও আমাদের বুঝতে হবে। এগুলো রম্য আলোচনা হয়ে গেল।
এখন আসি বাস্তবতার দিকে। সম্পত্তির মূল্য যাই হোক দান পত্রের খরচ সরকার অনেক কম রেখেছে। কারণ সবাই যেন জমি রেজিস্ট্রি করে। মুখে মুখে মালিকানা বদল না হয়। আমরা যদি খেয়াল করে দেখি ১ লক্ষ টাকার সম্পত্তির  দানপত্র রেজিস্ট্রি করতে যা খরচ তবে ১০০ কোটি টাকার দানপত্র রেজিস্ট্রি করতে একই খরচ। বাবা ছেলেকে দান করবে। ছেলে তার ছেলেকে দান করবে। এভাবে এটার চক্র চলতে থাকবে। দানপত্র চলমান থাকবে। শুধুমাত্র আত্মীয়ের বাইরে মালিকানা বদলের প্রয়োজনে নতুন দলিল হতে পারে। দানপত্র যদি কোন ব্যক্তি তার সন্তানের জন্য এক লক্ষ টাকা মূল্য মানের জমি রাখে তবে তার যদি খরচ হয় দশ হাজার টাকা তবে তা দু:খজনক। আবার এক কোটি টাকার সম্পত্তি যে পাবে সেও দিবে দশ হাজার টাকা। আমি জমির দানপত্র দলিলের সম্পদের মূল্য বাড়ানোর সাথে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করছি না। রেজিস্টারের কাছে এক লক্ষ টাকার জমি নথিতে হালনাগাদ করতে যা পরিশ্রম এক কোটি টাকার জমি হাল নাগাদ করতে একই পরিশ্রম। সরকার জমি দলিলের লেখা এখন সহজ করেছে। বিঞ্জ দলিল লেখকরা বাদেও অন্যরা দলিল তৈরি করতে পারে। ইন্টারনেটে সার্চ দিলেও জমির দলিল লেখার নমুনা পাওয়া যাচ্ছে। একটু চেষ্টা করলেই শিক্ষিতরা জমির দলিল তৈরি করতে পারবেন। তাতে আপনার কোন লাভ নাই। কারণ জমি লেখক দিয়ে দলিল লেখাতে হবে এবং তাকে দিয়ে দলিল রেজিস্টারের কাছে জমা করতে হবে। তাই অফিস খরচ হতে বের হওয়া সাধারণ মানুষের জন্য সহজ নয়।

বাংলাদেশে নাকি আশি লক্ষ জমির মামলা অনিষ্পন্ন আছে। অনেক মামলা নাকি ১০০ বছরে সমাধান হয়নি। এই অবস্থায় আমার কাছে মনে হল জমির রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে করা যেতে পারে। গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন যেমন অনলাইনে দেখা যায়। জমির রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে হতে পারে। ছবি, ভোটার আইডি কার্ডের স্ক্যান কপি, টাকা জমা দানের ট্রানজিশান আইডি ইত্যাদি অনলাইনে সাবমিট করা যেতে পারে। রেজিস্টার অনলাইনে চেক করবে। রেজিস্টার ডিজিটাল সাইন দিবে। অতঃপর গ্রাহকের কাছে দলিলের পিডিএফ কপি ইমেইলে পাঠানো যাবে। আর যে কেউ যে কোন জমি দাগ নম্বর বা জমির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে সার্চ করতে পারবে। এতে জমি সংক্রান্ত অনেক প্রতারণা দূর হবে। আমি আশাবাদী আজ না হউক আগামী ২০/৩০ বছরের মধ্যে জমির ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হবে। আর দলিল লেখকরা নিদিষ্ট ফি এর বিনিময়ে অনলাইন ফরম ফিলাপ করবে।

Thursday, October 12, 2017

জীবন যাত্রা: শহরের প্রাইভেট কারের চালক ও গ্রামের রিক্সা চালক

আমি গত সেপ্টেম্বর ২০১৭ মাসের শেষ সপ্তাহে আমার গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় যাই। পথে চান্দলা বাজার নামক স্থান হতে গ্রামের বাড়ী যাওয়ার জন্য রিক্সা নেই। আমাদের গ্রামের প্রায় শতভাগ রিক্সাই ব্যাটারি চালিত। তেমনি একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সায় উঠলাম। রিক্সা গ্রামের রাস্তায় চলছে। হঠাৎ করে খেয়াল করলাম। রিকশাওয়ালার কাপড় চোপড় পরিষ্কার। নীল জিনসের প্যান্ট পড়া। লাল জামা গায়ে। হাতে ঘড়ি। শার্টের পকেটে স্মার্ট ফোন। এই ২৫/২৬ বছরের গ্রামের রিকশাওয়ালার সাথে শহরে প্রাইভেট কার চালক যারা সাধারণত ১০,০০০ হবে ১৫,০০০ টাকা বেতন নিয়ে থাকে তাদের একটা পোষাকগত মিল পেলাম। এত ফিটফাট রিকশাওয়ালার আয় কত জানতে মন চাইল।
রিকশাওয়ালা জানাল সে প্রতি দিন ৬০০/৭০০ টাকার মত তার রোজগার হয়। এর মধ্যে ৫০ হতে ১০০ টাকা রিক্সার চার্জ বাবদ খরচ হয়। ছয় মাস পর পর ২২০০০ টাকা নতুন ব্যাটারি কেনার জন্য খরচ হয়। মাস হিসাবে প্রায় ৪০০০ টাকা। মনে করি চার্জ বাদে দিনে ৬০০ টাকা আয় ও মাসে আয় ১৮০০০ টাকা। ৪০০০ টাকা বাদ দিয়ে ১৪০০০ টাকা। অর্থাৎ ঢাকা শহরের প্রাইভেট কার চালকের বেতনের প্রায় সমান সমান।
ঢাকা শহরের প্রাইভেট কারের ড্রাইভাররা মালিকের বাসায় হয়তবা দুপুরের খাবার খায় মাঝে মাঝে রাতের খাবার খায়। অনেক মালিক থাকার জায়গা দিতে পারে। অনেকে পারে না। তাই এক দুইবেলা নিজের ব্যবস্থায় থাকার জন্য অনেক ড্রাইভারেরই ৩০০০/৪০০০ টাকা খরচ হয়। তাহলে কেমন হল ব্যাপারটা। গ্রামের রিক্সা চালক শহরের প্রাইভেট কারের ড্রাইভার হতে বেশী আয় করে থাকে। এটা কেমন হল। একটা ড্রাইভার অনেকেই মেট্রিক পাশ করেছে। টাকা খরচ করে শহরে থেকে গাড়ী চালনা শিখেছে। আর সে কিনা গ্রামের রিকশাওয়ালার সমান কামাই করছে।
একজন মোটামুটি শিক্ষিত যুবক টাকা খরচ করে ড্রাইভিং শিখে গ্রামের রিক্সা চালকের সমান আয় করলে তো ঠিক হল না। তবে এতে নিরাশ হবার কোন কারণ নেই। একজন প্রাইভেট কার চালক ছোট গাড়ী দিয়ে স্টার্ট আপ করে তাই বেতন কম। পরে সে বাস ট্রাক চালিয়ে আরো বেশী আয় করতে পারবে। রিক্সা চালক রোদ বৃষ্টিতে ভিজে আয় রোজগার করে আর প্রাইভেট কার ড্রাইভার এসি গাড়ীতে গান শুনে শুনে সময় পার করে। প্রাইভেট কার চালক অনেক সময় কোন প্রতিষ্ঠানে বা সরকারী স্থায়ী চাকুরীও পেতে পারে। রিক্সা চালকের সুযোগটা সীমিত। আমি গ্রামের স্থানীয় রিক্সা চালকদের লক্ষ্য করলাম। এদের রুটের টার্ন এরাউন্ড দূরত্ব থাকে সাধারণত ৩০ মিনিট হতে ৬০ মিনিট। ১ থেকে ১০ কি: মি: এর মধ্যে। পায়ে চালানো হতে ব্যাটারি রিক্সায় দ্রুত যাতায়ত করা যায়। তাই শারীরিক কষ্ট কম ও আয় বেশী। গ্রামের রিক্সা চালক বর্তমান সময়ে কিস্তিতে রিক্সা কিনে থাকে। এক দুই বছরের মধ্যে  তারা নিজেরাই রিক্সার মালিক হতে পারে।
গ্রামের রিক্সা চালকদের কয়েকটি বিষয় বেশ ভাল লেগেছে। প্রথমত তাদের দৈনিক আয় শহরের কাছাকাছি। এরা বাড়ীতেই বেশী খায়। হোটেলে  কম খায়। এদের বেশীর ভাগই নিজেই রিক্সার মালিক। এদের ইট সিমেন্টের পাকা বাড়ী আছে। বাড়ীতে টিভি ফ্রিজ আছে। গ্রামের বাজার থেকে ওয়ালটন টিভি ফ্রিজ কিস্তিতে কিনেছে। এদের বাচ্চারা গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে পড়তে যায়। নিজেরা ও পরিবারের কাপড়ের মান ভাল। গ্রামীণ রিকশাওয়ালাদের পরিবর্তন গুলি বেশ আশাপ্রদ। অপর দিকে শহুরে রোজগেরে রিকশাওয়ালা বা গাড়ীর চালকরা বাইরে হোটেলে হোটেলে খায়। এদের পরিবার সাধারণত গ্রামে থাকে। এরা তিন চার মাসে বেশ কিছু টাকা নিয়ে ছুটি যায়। যারা কষ্ট করে শহরে পরিবার নিয়ে থাকে তারাও বস্তি এলাকায় অত্যন্ত নিন্মমানের জীবন যাপন করে।

গ্রামেরও শহরের জীবন যাত্রার মান বাড়ছে। আয়ের সুযোগ বাড়ছে। পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে মানুষ অভ্যস্ত হচ্ছে। সন্তানদের স্কুল পাঠানোর আগ্রহ বেড়েছে। তাই শহর হতে গ্রাম এগিয়ে যাচ্ছে। বোকার মত শহরমুখী না হয়েও গ্রামেও সুন্দর জীবন যাপন সম্ভব।


Thursday, October 5, 2017

লেছ ক্যাশ জার্নি

আমার মাথায় মাঝে মাঝে পোকা/ আইডিয়া ঢুকে। এরূপ একটি আইডিয়া হল লেছ ক্যাশ হওয়া। আমি অনেক দিন হতে লেছ ক্যাশ অনুশীলন করে আসছি। এবার আমার ইচ্ছে হল ঢাকা থেকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আমার গ্রামের বাড়ীতে মানি ব্যাগে কম টাকা নিয়ে যাতায়ত করা। প্রথমে ঢাকা বাসা থেকে মানি  ব্যাগে  এক হাজার টাকা নিয়ে বের হলাম। আমার বড় আপা সহযাত্রী হল। কুমিল্লা পৌছানোর পর বুড়িচং উপজেলা শহরে  স্কুটার নিলাম। ছোট বোনকে দেখার জন্য বুড়িচং থামলাম। ছোট বোনের বাসায় গেলাম।  ছোট বোনের বাচ্চাদের জন্য নগদ ছালামী দিলাম। ছোট বোনের বাসা থেকে বের হয়ে বুড়িচং শহরে জানতে চাইলাম ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম আছে কিনা। লোকজন আমাকে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাকের লোকেশন বলে দিল। আমি সেখানকার এটিএম থেকে টাকা তুলে নিলাম। পরবর্তী গন্তব্য আমার মা ও বাবার উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা নামক স্থান পর্যন্ত স্কুটার নিয়ে রওয়ানা হলাম।
চন্দলা ইউনিয়ন এলাকার টানা ব্রিজে-এ স্কুটার দিয়ে পৌছে গেলাম। সেখান থেকে রিক্সায় উঠতে উঠতে একটি ব্যানার চোখে পড়ল। তা হল ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং এর শাখা চান্দলা বাজারে খুলেছে। ভাল বোধ করলাম। টাকা লাগলে এজেন্ট ব্যাংকারের কাছে আসা যাবে। গ্রামের বাড়ীর উদ্দেশ্যে চললাম। বাড়ীতে ঢোকার আগে বাড়ীর সামনে রকেট এজেন্টের কাছে থামলাম । রকেট এজেন্ট হতে কিছু টাকা তুললাম সামনের আগত সময়ের খরচ গুলি করার জন্য। বাড়ী গেলাম। বড় ভাইয়ের বাচ্চাদের নগদ সেলামী দিলাম। বাড়ী যাওয়ার পর আমার মায়ের কাছে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে লোক হাজির হল। আমি মাকে কিছু টাকা দিলাম সেখান থেকে মা কিছু টাকা গ্যাসওয়ালাকে দিয়ে বিদায় করল। বিকালে বাবা, মা, বড় বোন ও ভাইদের সাথে বাড়ীর উঠানে আড্ডা শুরু। আমি ছোট ভাইকে পাঠালাম ফল আনতে। আঙ্গুর, আপেল আর কমলা খাচ্ছি আর গল্প চলছে। এভাবে গল্প করতে করতে সন্ধ্যা ছয়টায় বসে রাত দশটা বেজে গেল। পরের দিন আমার এক ভাগ্নেকে নিয়ে গ্রামের বাজার দেখার জন্য বের হলাম। গ্রামের বাজারে প্রথমে গেলাম চান্দলা বাজারে। চান্দলা বাজারে দুইটি ব্যাংকের অবস্থান পেলাম। একটা হল ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং আর অপরটি হল ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং। ডাচ বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং নতুন হয়েছে। ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকটি হল ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের লোকেরাই চালাচ্ছে। বাড়ী থেকে দুই কিলোমিটার দুরে ব্যাংকের দুইটি শাখা থাকায় ভালই মনে হল। বাড়ী থেকে আসা যাওয়া সহ ৩০ মিনিটে ব্যাংকের কার্যক্রম করা যাচ্ছে। বেশ ভাল বিষয়। আমি আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে আমার মানি ব্যাগের লো ক্যাশের ব্যালেন্সকে আপ করে নিলাম। তারপর চান্দলা বাজার ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এখনকার সময়ে গ্রামের বাজারে অনেক নির্মান সামগ্রী পাওয়া যায়। তার কারণ অবশ্য গ্রামে এখন ইট সিমেন্টের বাড়ীর সংখ্যাই বেশী। আর একটা বিষয় চোখে পড়ল মোবাইলের দোকান ও ওয়ালটনের শো রুম। এখন গ্রামের সব বাজারেই মোবাইলের দোকান ও ওয়ালটনের শোরুম দেখা যায়।
এর পর আমি কসবা উপজেলার নয়নপুর নামক বাজারে গেলাম সেখানে কোন এজেন্ট ব্যাংকিং খুঁজে পাওয়া যায় কিনা। সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিং এখনও হয়নি। তবে অনেক আগে থেকেই অগ্রণী ব্যাংকের শাখা বিদ্যমান ছিল। এই বাজারে দেখলাম ডাচ বাংলা ব্যাংকের অনেক রকেট এজেন্ট আছে। ব্যাংকিং এর জন্য ডাচ বাংলার রকেট একাউন্ট মন্দ নয়। টাকা উঠানো ও জমা সবই করা যাচ্ছে। বাজার থেকে ফিরে আসলাম। পরের দিন কুমিল্লা শহরের উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে শহরে রওয়ানা হলাম। শহরে এসে আমার মেঝ বোনের সাথে দেখা করার চিন্তা করলাম। মেঝ বোনের ছেলের জন্য ছালামী ও ঢাকা যাওয়ার খরচের জন্য মানি ব্যাগ রিচার্জ প্রয়োজন। কালিয়াজুরী বাসার সামনের একটা দোকানে রকেট সাইন পোস্ট দেখে থামলাম ও টাকা উঠালাম। আমার মানিব্যাগ সাধারণত ১০০০-২০০০ টাকার মধ্যে থাকে। ১০০০ টাকার নীচে চলে গেলে মানিব্যাগে টাকা ২০০০ পর্যন্ত সাধারণত উঠাই। অন্য কোন খরচের প্রয়োজন হলে তখন সেই খরচের চাহিদা মাফিক অতিরিক্ত উত্তোলন করি। এক সময় বাসে করে ঢাকায় ফেরত আসলাম। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে আমার মানিব্যাগে টাকা না রেখে পথে পথে চাহিদা বা প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা উত্তোলন করে যাতায়ত বা জার্নি করার ক্যাশলেছ পরীক্ষা সফল ভাবে করতে পারার জন্য আমি ডাচ বাংলা ব্যাংক ও তাদের রকেট ব্যাংকিংকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ ডাচ বাঙলা একাউন্টের সাথে তাদের রকেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং লিংক করে নিয়েছি। এতে গ্রামের উপযোগী একটা চমৎকার ব্যবস্থা করতে পারলাম। অনেকে এখন হয়ত বিকাশের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম করে। কিন্তু ডাচ বাংলা ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ এটিএম, ফাস্ট ট্রাক, এজেন্ট ব্যাংকিং ও রকেটের মত মোবাইল ব্যাংকিং এর কারণে ব্যাংকটি আজ গ্রামীণ বান্ধব বা সাধারণ জনগণের কাছের ব্যাংক বলা যায়। এই ব্যাংকটির উপর ভরসা করে বাংলাদেশের যে কোন স্থানে টাকা কম নিয়ে যাতায়ত করা যায়। আমি আগে হিসাব করে টাকা নিয়ে বাড়ীতে গিয়ে প্রায়ই টাকা কম পড়ত। তখন বিকাশ করে টাকা আনতে হত বা গ্রাম থেকে কুমিল্লা শহরে এসে ট্রাস্ট ব্যাংক হতে টাকা তুলতে হত। এবার মানিব্যাগে অল্প টাকা নিয়ে যখন যেখানে প্রয়োজন ধার কর্জ ছাড়া গ্রামে ঘুরতে পেরে খুব মজা পেলাম। আপনারাও করে দেখতে পারেন।