Pages

Thursday, April 30, 2015

কম্পিউটার ও আইটি অপচয়

১৯৯৪ সাল থেকে যখন আইটির হাতে খড়ি পাই। তখন থেকেই স্বপ্ন জাগে কম্পিউটার ক্রয় করার জন্য। ১৯৯৬ দিকে কম্পিউটারের দাম ছিল প্রায় ৫০,০০০ টাকা অর্থাৎ আমার তৎকালীন ক্যাপ্টেনের সম্পূর্ণ বেতনের প্রায় পাঁচ মাসের বেতনের সমান। আমার এ আশা সফল হয় ২০০০ সালে । ব্যাংকে ওডি করে ৩৬,০০০ টাকায় একটি কম্পিউটার ক্রয় করতে সমর্থ হই। ২০০২ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন সিয়েরালিওনে গেলে তখন কুমিল্লা সেনানিবাসের টিপরা বাজার থেকে কেনা কম্পিউটারটি সাথে নেই। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে সিয়েরালিয়নে যাওয়ার সময় আরো একটি কম্পিউটার কিনে পরিবারকে দিয়ে যাই। যাতে তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে মিশনে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারে। পরিবার তখন বগুড়ায় থাকত। বগুড়াতে তখনও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আসেনি। ডায়াল-আপ ইন্টারনেট ছিল। কম্পিউটারটি তখন ব্যাংকে লোণ করে ক্রয় করে দেই। পরবর্তীতে ছয়মাস পড়ে মিশন থেকে ছুটি এসে পরিশোধ করি।  অবশ্য পারিবারিক যোগাযোগের প্রয়োজনে ওডি করে ক্রয় করতে হয়েছে। বগুড়াতে যখন কম্পিউটার ক্রয় করে দিয়ে যাই সেটা ছিল এক অর্থে অপচয়। কারণ এ কম্পিউটার দিয়ে আমার পরিবারের সাথে ইন্টারনেট যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি । তখন টিএন্ডটি থেকে ইন্টারনেট সংযোগ আবেদন করেও পাওয়া যায়নি। সাধারণত তখন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে টিএন্ডটি হতে ইন্টারনেটের সংযোগ পেতে তিনমাস থেকে ছয়মাস সময় লাগত। এ ধরনের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য পরবর্তীতে আর ইন্টারনেটের জন্য চেষ্টা করিনি। এখন অবশ্য কোম্পানি হওয়ায় বিটিসিএলএর ইন্টারনেট কিছুটা  তাড়াতাড়ি সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে তখনও ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেসরকারি মালিকানার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডাররা অত্যন্ত কম খরচে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করত। টিএন্ডটি এর ইন্টারনেট প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মিশনে থেকে পরিবারের সাথে যোগাযোগের জন্য অতিরিক্ত কম্পিউটার ও মোডেম কিনে ব্যবস্থা করলেও তা অপচয়ে রূপান্তরিত হয়। বগুড়ায় আমার স্ত্রীর বাসার পাশের একটি দোকানে নেট টু ফোনের ব্যবস্থা ছিল যারা কিনা বিটিসিএল থেকে ইন্টারনেট নিয়ে ব্যবহার করত। সেই দোকানটিই  মূলত আমার স্ত্রীকে ইমেইলে চিঠি লিখলে তা প্রিন্ট করে বাসায় দিয়ে যেত। বিনিময়ে ২০টাকা নিত। আর মাঝে মাঝে ভয়েজ মেইল বা ভিডিও মেইল পাঠালে তা ফ্লপি ড্রাইভে করে বাসার কম্পিউটারে দিয়ে যেত। আর একান্তই আমার স্ত্রীর ফোন করতে ইচ্ছে করলে দোকানের নেট টু ফোন থেকে যোগাযোগ করত। আমি ইমেইলের পাশাপাশি সপ্তাহে ১/২ দিন ইউএনের ফোনে ১০ মিনিট এক ডলার রেটে কথা বলতাম। মূলত; ২০০২ সালের মার্চ থেকে ২০০৩ সালের মার্চের সময়কাল পর্যন্ত মিশনের সময়টা আমার ক্রয়-কৃত কম্পিউটার, ডায়াল আপ মোডেম ও ওয়েব ক্যাম্প ক্রয়ে আনুমানিক খরচ ৪০,০০০ টাকা। এর পুরোটাই ছিল আইটি খাতে অপচয়, তখন স্বর্ণের দাম ছিল ৮০০০ টাকা ভরি।

আমি মিশনে যে কম্পিউটারটি নিয়ে গিয়েছিলাম সেটা আমার খুব কাজে লেগেছিল। সর্বদা কম্পিউটারের নানা কাজ করতে পেরেছি। মিশনে কম্পিউটার সংক্রান্ত নানা কাজ শিখতে পেরেছি। অত:পর মিশন থেকে ফেরত আসার সময় জাম্বিয়ার একজন পুলিশ অবজারভারের কাছে কম্পিউটারটি বিক্রি করে দেই ৬০০ ডলারে। প্রায় কেনা দামে কম্পিউটারটি বিক্রয় করতে পেরেছিলাম। বিদেশে যাওয়ার সময় ক্রয় করা দেশের কম্পিউটারটি আমি বিদেশ থেকে আসার পর আমার বড় ছেলের কাজে লাগে। তখন সে একটু কম্পিউটার নাড়াচাড়া করে করে শিখতে শুরু করেছিল। তবে মোডেম বা ওয়েব ক্যামের কোন ব্যবহার তখন পর্যন্ত হয়নি। কিছুদিন আগে একজন কম্পিউটার মেকানিককে মোডেমটি দান করে দেই। আমার কম্পিউটার অপচয়ের আরো দুটি বড়ো অপচয় হল ২২৫ ডলারে এক্সটারনাল সিডি রাইটার ক্রয় করা। আমি মিশনে থাকাকালীন আমার একজন কোর্স-মেটকে দিয়ে আবুধাবি থেকে ২২৫ ডলারে এসার এক্সটারনাল সিডি রাইটার ক্রয় করেছিলাম। তখন সিডি-রাইটার যথেষ্ট পরিমাণে বাজারে পর্যাপ্ততা ছিল না। এই সিডি রাইটারটি ক্রয় করে আমার সিডিরাইটার ব্যবহার করা শেখা ছাড়া কোন লাভই হয়নি। বরং অনেক সিনিয়রকে সিডি কিনে রাইট করে দিতে হয়েছে। অথচ বাজারে সিডি রাইট করা যায় মাত্র ২০ টাকা রেটে। তখনকার ২২৫x৬০=১৩৫০০ টাকা খরচে রাইটারটি না কিনে বাজার থেকে সিডি রাইট করলে ১৩৫০০/২০=৬৭৫ টি সিডি রাইট করা যেত। সিডি রাইটারটি ক্রয় করার পর প্রায় তিন বছর আমি এটি ব্যবহার করি। মনে হয় না তিন বছরের মধ্যে আমি ও অন্যান্যরা মিলে ২৫০ এর বেশী সিডি কপি করতে পেরেছি। অথচ ২০০৩ সালের ১৩৫০০ টাকা যে সিডি রাইটার ক্রয় করেছি তার থেকে অনেক উন্নত রাইটার অনেক কম দমে দুই/তিন বছরের মধ্যেই বাজারে পাওয়া যেতে লাগল। তাই ব্যবহার ও প্রয়োজন না চিন্তা করে ক্রয় করে তা লাভজনক হয়নি। ২০০৩ সালের শেষের দিকে আমি একটি স্ক্যানার কিনি। এই স্ক্যানারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি দিয়ে ফ্লিম ক্রয় করা যেত। এটি কিনে আমি ভাবলাম ক্যামেরায় ফ্লিম ডেভেলপ করার পর ছবি প্রিন্ট করার আগে ছবিগুলির ফ্লিম স্ক্যান করে ভাল কোয়ালিটির ছবিগুলি প্রিন্ট করে খরচ কমানো যায়। তখন বাজারে ছবি স্ক্যান করার জন্য খরচ হচ্ছিল ৫ টাকা করে। সে হিসাবে ৯৫০০ টাকা দিয়ে স্ক্যানারটি কিনেছিলাম। ৯৫০০/৫=১৯০০ ছবি স্ক্যান করা হলে এটার দাম উঠতে পারত। মনে হয় প্রায় ৩৫০ টি ছবি স্ক্যান করি আর ১০০ মত ডকুমেন্ট স্ক্যান করি। এছাড়া ৫০/৬০ এর বেশী ফ্লিম স্ক্যান করতে পারিনি। সর্বমোট হয়তবা ৫০০ মত স্ক্যান করি। যা কিনা দোকান থেকে করলে সর্বসাকুল্যে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মত খরচ হতে পারত। এর মধ্যে স্ক্যানারটি নষ্ট হলে রিপেয়ার করে আনুমানিক ১৫০০ টাকা খরচ হয়। পরে আবার নষ্ট হলে রিপেয়ার না করে একজনকে দান করে দেই। স্ক্যানারটির পিছনে খরচ ৯৫০০+১৫০০=১১০০০ টাকা আর সার্ভিস প্রাপ্তি ৩০০০ টাকা। স্ক্যানারে আর্থিক লস হল ৮০০০ টাকা। ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার না হলে স্ক্যানার কেনা একটা আর্থিক অপচয়।

ল্যাপটপ কেনায় অপচয় আমার জীবনের একটি বড় অপচয়। আমি ২০০৩ সালের আনুমানিক নভেম্বর মাসে একটি ল্যাপটপ কিনি। তখন ল্যাপটপ কেনায় আমাকে ৬৫০০০ টাকা খরচ করতে হয়। বাজারে তখন উন্নত মানের ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে তবে বর্তমান কালের ল্যাপটপের ধারে কাছে নেই। আমি যেই ল্যাপটপ কিনেছিলাম তা ছিল কমপ্যাক প্রসারিও ৫০০ মেগাহার্টজ এএমডি প্রসেসর। আমি ঢাকার বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে গিয়েছিলাম চাইনিজ ল্যাপটপ ক্রয় করতে। যা কিনা ডেস্কটপ প্রসেসর ও মাদারবোর্ড দিয়ে ক্লোন করে তৈরি। তখন বাজারে ল্যাপটপের দাম অনেক বেশী থাকায় ডেস্কটপ মাদারবোর্ড ও প্রসেসর দিয়ে এক ধরনের কম দামের ক্লোন ল্যাপটপ বাজারে চালু হয়েছিল। মূলত অনেক গভেষনা করে আমি সেই ধরনের ডেস্কটপ টাইপ ল্যাপটপ কেনার পরিকল্পনা করেছিলাম, আমার ল্যাপটপ ক্রয়ের মূল কারণ ছিল আমি তখন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ক্যাম্পে থাকি। ক্যাম্পে অনেক সময়। তাই একটা ল্যাপটপ থাকলে আমার ক্যাম্পের অফুরন্ত সময়গুলি ভালভাবে কাটাতে পারব। তখন বিশেষ বিশেষ ক্যাম্পে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। এখনকার-মত মোডেম ও ইন্টারনেট চালু হয়নি। আমি বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে ৪৮০০০ টাকায় আমার ডেস্কটপ প্রসেসরের ল্যাপটপ টাইপ কম্পিউটারগুলি পেলাম। ৮০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১,০০,০০০ টাকায় বিভিন্ন ব্রান্ডের ল্যাপটপ দেখলাম। আমার বাজেট ৫০,০০০ টাকা। যদিও মনে মনে চাইনিজ ব্রান্ডের ডেক্সটপ প্রসেসরের ল্যাপটপটি কেনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। তখন একটি দোকানে কমপ্যাক প্রসারিও ডিসপ্লেতে দেখলাম। দাম ৬৫০০০ টাকা। এতক্ষণ কোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ কম দামে দেখিনি। হঠাৎ করে ৬৫০০০টাকা দাম দেখে আগ্রহ হল। ল্যাপটপটি চালু করে দেখলাম। দোকানদার বলল এটা ইংল্যান্ডের সেল থেকে কেনা। মূল দাম আরো বেশী। আমি ল্যাপটপের সাউন্ড ও ডিসপ্লেটা আমাকে মুগ্ধ করল। চাইনিজ ডেস্কটপ প্রসেসরের ল্যাপটপের সম্ভবত কোম্পানির নাম দেয়া ছিল কিংস্টন। এর শব্দটা অত ভাল ছিল না। তবে কমপ্যাক প্রোসারিও ল্যাপটপটি দোকানদার একবছরের ওয়ারেন্টি দিয়েছিল। রি-কন্ডিশন কমপ্যাক প্রসারিও ল্যাপটপটি কেনা আমার জন্য ছিল একটা বড় ভুল। তখন ৬৫০০০ টাকা ল্যাপটপ কিনেছিলাম আর ঢাকার বসুন্ধরায় ৫ লক্ষ টাকায় ৫ কাঠা প্লট পাওয়া যাচ্ছিল। মূল্যবান টাকার অমূল্য ব্যবহার আমার দ্বারা হয়নি। কারণ হল ল্যাপটপটি যে কারণে কেনা তার দুইমাস পড়েই আমি ইউনিট তথা ক্যাম্প থেকে বদলী হয়ে হিলের রিজিয়ন হেডকোয়ার্টার গুইমারাতে বদলী হয়ে আসি। গুইমারা রিজিয়ন সদরে আসার কারণে মূলত আমার ল্যাপটপ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। হয়ত কম্পিউটার প্রফেশনালস বা ব্যবসায়ী হলে ল্যাপটপ প্রয়োজন হত। বর্তমানে ল্যাপটপ একমাসের বেতনের দামে পাওয়া যাচ্ছে তখন আমার চারমাসের বেতনের সমান দামে ছিল। তবে রিকন্ডিশান ব্রান্ড আইটেম হলেও ক্রয় করা উচিত হয়নি কারণ সেই ল্যাপটপটি আমি তিনবছর ব্যবহার করতে পেরেছি। অথচ আমার বর্তমান ল্যাপটপটি পাঁচবছর ধরে ব্যবহার করছি এর মধ্যে উইন্ডোজ এক্স-পি থেকে উইন্ডোজ সেভেন সম্প্রতি উইন্ডোজ ৮ এ আপগ্রেড করেছি একটু স্লো হলেও আমার ইন্টারনেট ব্যবহার আর টাইপের কাজ ভালভাবে চলছে। আর সেই প্রথম ল্যাপটপটি নষ্ট হওয়ার পর দীর্ঘদিন ঢাকায় মেকানিকের কাছে রেখেও মাদার বোর্ড যোগাড় করতে না পেরে হার্ড ডিস্ক রিকন্ডিশন হিসাবে ৩৫০০ টাকায় বিক্রয় করে দেই। পরে আমি চিন্তা করে দেখেছি আমি রিকন্ডিশন ল্যাপটপ ক্রয় করে অপচয় করেছি। চাইনিজ নতুন ল্যাপটপ আরো কমে ক্রয় করলে আমার এ লসটা কম হত। এ ল্যাপটপ ক্রয় করার পর এটিকে ক্যাম্পে বিদ্যুৎবিহীন চালাতে দুইটি ব্যাটারি(২০০০টাকা), দুইটি সোলার প্যানেল(১৩০০০টাকা) ও টিভি দেখার জন্য টিভি কার্ড(৭৫০০টাকা) সর্বমোট ২০০০+১৩০০০+৭৫০০=২২৫০০ টাকা খরচ হয়। ল্যাপটপ সহ ৬৫০০০০ টাকা + ২২৫০০ টাকা=৮৭৫০০ টাকা। বিশাল আইটি অপচয়। অনেক সামর্থবানদের কাছে এটা তেমন বড় কোন অপচয় নয় শখের জন্য অনেক খরচ হতেই পারে। তবে চাকুরীজীবীদের জন্য অপচয় বৈকি।
আমার এ লেখাটির উদ্দেশ্য হল আইটি সামগ্রী আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক অপচয় ঘটিয়ে থাকে। আপনার যদি প্রফেশনাল প্রয়োজন না থাকে শুধুমাত্র নিজের ব্যবহারের জন্য স্ক্যানার কেনা লাভজনক নয়। যদি অনেক আইটেম স্ক্যান করার থাকে এবং দোকান থেকে করলে যা খরচ হবে তার থেকে স্ক্যানারের দাম কম হলে কাজের জন্য স্ক্যানার কেনা লাভজনক। এখনকার সময়ে ডিভিডিরম ড্রাইভ না কিনে পেন ড্রাইভ বা মোবাইল হার্ডডিস্ক দিয়ে কাজ চালানো য়েতে পারে। এখন অবশ্য ল্যাপটপের দাম কমে এসেছে। তাই ল্যাপটপ কেনা আর ডেস্কটপ কেনার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই বরং ল্যাপটপ সব জায়গায় ব্যবহার করা যায়। দুটি না কিনে প্রয়োজন অনুযায়ী ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ যে কোন একটি কিনলেই চলবে এতে আইটি অপচয় কম হবে। আমার অভিজ্ঞতার অলোকে লেখাটি লিখলাম। অনেক বেশী বিচার বিবেচনা করে না ক্রয় করলে ক্রম বর্ধমান পরিবর্তনশীল আইটি সামগ্রীতে আমাদের অপচয় বাড়তে থাকবে।

Thursday, April 23, 2015

অপ্রয়োজনীয় হচ্ছে সিডি ও ডিভিডির ব্যবহার


প্রায় দুবছর হতে চলল আমি ও আমার ছেলে কোন সিডি কিনিনি। গত দুই বছরে আমি কোন সিডি ব্যাবহার করেছি কিনা মনে পরছে না। এখন পেন ড্রাইভ, ইমেইল এটাচ ও ড্রপ বক্স ইত্যাদির ওপর নির্ভর করার কারণে সিডির ব্যবহার কমে গেছে। ২০১০ সালে আমি একটি নোটবুক পিসি বা আসুসের ইপিসি কিনি। এটার আকার ছোট ও ১২ ইঞ্চি মনিটর। সিডি-রম বা ডিভিডি রম নেই। আমি নোটবুকটি ক্রয় করার সময় আমাকে বিক্রেতা বললেন, এক্সটারনাল ডিভিডি ড্রাইভ নেয়ার জন্য। কখনও অপারেটিং সিস্টেম রি-ইন্সটল করতে হলে এক্সটারনাল ডিভিডি ড্রাইভ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে। আমি তখনও জানতাম না পেন-ড্রাইভ দিয়ে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা যায়। হয়ত জানলে আমি এক্সটারনাল সিডি-রম ড্রাইভ ক্রয় করতাম না। এক্সটারনাল সিডি রম ড্রাইভ ক্রয় করার পর আমি লক্ষ করলাম। ড্রাইভটি কেনার পর থেকে ছয় মাসের মধ্যে আমি মাত্র তিনবার ব্যবহার করেছি। তখন আমি বিক্রেতার সাথে কথা বলি। আমি ৫০০০ টাকায় ক্রয় করা একদম নতুন ড্রাইভটি তাকে পুনরায় ৩৫০০ টাকায় ফেরত দেই। কারণ ৬ মাসে মাত্র তিনবার ব্যবহার করা ডিভিডি ড্রাইভটি সংরক্ষণ করার আগ্রহ আর হল না।
বর্তমানে সিডি-রমের প্রয়োজন নেই। আপনি শুধু গত একবছরে আপনার সিডি-রম ড্রাইভটি কতদিন ব্যবহার করেছেন। এ তথ্যটি পেলে আপনি আপনার সিডি-রম ব্যবহারের প্রয়োজনটা বুঝতে পারবেন। একটা অফিসে ১৫/২০ টি কম্পিউটারের মধ্যে একটি কম্পিউটারে ডিভিডি/সিডি-রম থাকলেই যথেষ্ট। অন্যরা প্রয়োজন অনুযায়ী সিডি বা ডিভিডির তথ্য পেন ড্রাইভ বা এক্সটারনাল ড্রাইভে কপি করে নিলেই চলবে। সিডি রম ড্রাইভের অন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় ব্যবহার হল গান শোনা ও ছবি দেখা। এখন প্রায়ই গাড়ীতে দেখি সিডি-রম ড্রাইভের পরিবর্তে পেন ড্রাইভে কপি করে নিয়ে পেন ড্রাইভ চলে এরূপ প্লেয়ার দিয়ে অনেকেই গান শুনছেন। কোন ছবি দেখার প্রয়োজন হলে এখন খুব কমই দেখা যায় সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভ ক্রয় করতে। অধিকাংশই ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় মুভি বা গান ডাউন লোড করে নেয়। বাংলাদেশের ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টারগুলোতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট রয়েছে। আর অনেকেই থ্রিজি ব্যবহার করেন। দেশের যে কোন স্থানেই ব্রডব্যান্ড থাকায় তারা যে কোন স্থানে যাতায়াতে থাকলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যাদি সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে পারেন। আমি ২০১১ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে(কঙ্গোতে) যাওয়ার সময় দেখলাম আমাদের একজন ইয়ং ক্যাপ্টেন এক টেরাবাইট সাইজের মোবাইল ডিক্স ক্রয় করেছে। আর যাদের থেকে ক্রয় করেছে তাদেরকে কিছু টাকা দিয়ে বাংলা,ইংরেজি ও হিন্দি মিলিয়ে আটশত সিনেমা কপি করে নিয়েছে। এই হার্ডডিক্স থেকে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী ছবি কপি করে নিচ্ছিলাম। অবশ্য আপনি কপিরাইট লঙ্ঘনে সচেতন থাকলে হয়ত কপি না করে মুভি ডিভিডি/সিডি ক্রয় করে ব্যবহার করবেন। এখন অবশ্য অনেকেই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করে ইন্টারনেট হতে ছবি ডাউন-লোড করে নেয়। তারপর তার থেকে অন্যরা কপি করে নিতে থাকে।
ল্যাপটপ ও নোটবুক পিসি সিডি-রম ছাড়াও চলতে পারে। যদিও অধিকাংশ ল্যাপটপে ডিভিডিরম বিল্টইন। কিন্তু ডিভিডিরম বিহীন ল্যাপটপ দিয়েও আপনি নির্ধিদ্দায় চলতে পারবেন। আমি ২০১০ সালের মার্চ হতে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ডিভিডি ড্রাইভ বিহীন ল্যাপটপ ব্যবহার করে চলেছি সমস্যা ছাড়া। এ ল্যাপটপটিতে কোন বিল্টইন ডিভিডি ড্রাইভ নেই। গত পাঁচ বছরে আমার হাতে গোনা পাঁচ/ছয়বার সিডি-রম ড্রাইভের প্রয়োজন হয়। তখন আমি সিডি-রম ড্রাইভের তথ্যাদি কোন ডেস্কটপ কম্পিউটার থেকে কপি করে পেন ড্রাইভে নিয়েছি। অত:পর পেন-ড্রাইভ থেকে ল্যাপটপে নিয়ে কাজ করেছি।
আপনার যদি ডিভিডিরম না থাকে আর কখনও তা ব্যবহারের প্রয়োজন হলে মাঝে মাঝে সাইবার ক্যাফে থেকে কপি করে নেয়া যাবে। আমরা একসময় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি ফ্লপি ডিস্ক, টেপে বা সিডি-রম ড্রাইভে কপি করে রাখতাম। এখন আমরা মোবাইলের মেমোরি কার্ডে ও পেন ড্রাইভে কপি করে রাখতে পারি। আজকাল অনলাইন স্টোরিং বেশ জনপ্রিয়। আমার কাছে মনে হয় অনলাইন  স্টোরিং কম্পিউটারকে ভাইরাস-মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
আমার মত অনেকেই অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী জমিয়ে রাখতে মোটেই পছন্দ করে না। এইতো সেদিন অনেকগুলো ছবির ফিল্ম (নেগেটিভ) ধ্বংস করলাম। কারণ হিসাব করে দেখলাম ২০০৫ এর পর থেকে আমি ক্যামেরায় কোন ফিল্ম লোড করিনি। ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি উঠানো চলছে। আমার সংগ্রহ থেকে কোন ফিল্ম(নেগেটিভ) নিতে হয়নি ছবি ডেভেলপ করার জন্য। তাই দীর্ঘ দিনের ছবির ফিল্ম জমিয়ে না রেখে আমার চেস্ট অব ড্রয়ার খালি করে দিলাম। অপ্রয়োজনীয় হিসাবে সকল নেগেটিভ কেটে-কুটে ফেলে দিলাম।
আর একদিন আমার চেস্ট অব ড্রয়ার থেকে সব সিডি বের করে ফেলে দেয়ার জন্য উদ্যত হলাম। আমার বাসার ঝাড়ুদার তার বাচ্চাদের খেলনা বানানোর জন্য নিতে চাইল। আমি চোখা একটা পয়েন্টার দিয়ে দাগ কেটে সিডিগুলো অকেজো করে খেলনা হিসাবে দান করলাম। কারণ একটাই, গত দুই বছর আমার কোন সিডি ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। তাই অপ্রয়োজনীয় কোন দ্রব্য বাসায় রেখে দেয়া মোটেই ঠিক নয়। হয়তবা স্মৃতি হিসাবে হয়ত রাখা যেতে পারে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট থাকলে অনলাইন স্টোরিং করা যায়। যেমন সব সিডি ফেলে দিলেও আমার গুরুত্বপূর্ণ স্ক্যান করা ডকুমেন্ট ও ছবি ল্যাপটপে এবং ডেস্কটপে ব্যাকআপ রেখেছি। আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ড্রপ-বক্সে অনলাইন স্টোরেজে রাখছি। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আর অনলাইন স্টোরেজে আমাদের ডাটা হারানোর ভয় কমিয়েছে। যে কোন স্থান থেকে ডাটা প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। এতকিছুর আগমন ঘটায় আমার কাছে মনে হচ্ছে সিডির ব্যবহার শেষের পথে আর সিডি ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে।

Saturday, April 18, 2015

বিদ্যুৎ তৈরিতে বায়োমস জ্বালানীর ব্যবহার


আমাদের বাংলাদেশে ঘরে ঘরে জ্বালানী হিসাবে পাতা, জমির শুকানো খড়, পাটখড়ি ও অন্যান্য গাছগাছালি ব্যবহার হচ্ছে। একটা গ্রামীণ পরিবার যেন তেন ভাবে কমপক্ষে দিনে ১০ কেজি লাকড়ি জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে। তাই প্রতিটি পরিবারের সমস্ত লাকড়িগুলো একসাথে করে (যেমন ১০০০ পরিবারের ১০০০০ কেজি জ্বালানী) আমরা আবদ্ধ প্রকোষ্ঠে প্রজ্বলিত করে তাপ উৎপাদন করতে পারি। আর সেই তাপ দিয়ে বাষ্পচালিত টারবাইন মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। বাংলাদেশের কাপাসিয়ায় একজন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী লোড শেডিং এ অতিষ্ঠ হয়ে  ভারতের ধানের তুষ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল দেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনে উদ্যোগী হয়। তার এবিষয়টি দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। জামানি এ ধরনের বায়োমাস রিএ্যাকটর স্থাপন ও বিক্রয় করে। বায়োমস ইলেক্ট্রিসিটি দিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে এ ধরনের প্রচুর বায়োমাস রিএ্যাকটর বিশ্ববাজারে পাওয়া যায়। শুধু প্রয়োজন যোগাযোগ করা ও আমদানি করা।


আমাদের দেশের মহিলারা। এখনও উন্মুক্ত চুলা ব্যবহার করে যাচ্ছে। এ ধরনের চুলা তাদের জীবনী শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। তারা দীর্ঘস্থায়ী ভাবে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন তাদের ব্যবহৃত লাকড়ির চুলা তুলে দিয়ে তাদেরকে ভর্তুকি দরে ইলেকট্রিক ইনডাকশন চুলা দেয়া যেতে পারে, খাবার গরম করার জন্য মাইক্রোওয়েভ ওভেন আর ব্যাকআপ হিসাবে গ্যাস দেয়া যেতে পারে। ইনডাকশন চুলায় নিরাপত্তা ভাল। ইন্ডাকশন চুলা আনুমানিক ৩৫০০ টাকা+ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ৮০০০ টাকা + সিলিন্ডার সহ গ্যাসের চুলা ৫০০০ টাকা= সর্বমোট:১৬৫০০ টাকা তাদের খরচ করার প্রয়োজন হবে। বায়োমস সংগ্রহের আওতাধীন এলাকার গ্রামের মানুষদের ঘরবাড়িতে রান্নার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন হবে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে নেয়া হবে বায়োমস জ্বালানী। তাদের খড়কুটো, তুষ, অন্যান্য ফসলের জ্বালানী, গাছের পাতা ও মরা ডালপালা। অর্থাৎ যা দিয়ে আগুন জ্বালানো যায় তাই বায়োমস রিএ্যাক্টরের জন্য নেয়া হবে। ইন্ডাকশন চুলা প্রায় ৮৪% এনার্জি এ্যাফিশিয়েন্ট। অন্য দিকে গ্যাসের চুলার এ্যাফিসেন্সি হল ৩৪%, মাইক্রোওয়েভ আরো এনার্জি সাশ্রয়ী। সাধারণত ১০০ টাকার মাইক্রোওয়েভ বিল+ ৪০০ টাকা ইন্ডাকশন চুলার বিল+এক সিলিন্ডার গ্যাস শুধু বিদ্যুৎ না থাকলে ব্যবহার করলে মাসে গ্যাস খরচ(১৫০০/৩ অর্থাত তিন মাসে এক সিলিন্ডার) হবে ৫০০ টাকা। সর্বমোট খরচ ১০০০ টাকা। /৬ মন বায়োমস জ্বালানী বিক্রয় করে কৃষক পরিবার পাবে ১০০০ টাকা। সুতরাং বায়োমস বিক্রয় করে কৃষকের গ্যাস ও বিদ্যুৎ খরচ চালানো কোন ব্যাপারই নয়। আমরা কৃষকের ঘরে ঘরে বায়োমসের অগনিত চুলায় ব্যবহার করতে না দিয়ে সেই বায়োমস জ্বালানী দিয়ে ৭ থেকে ১২ মেগাওয়াটের রিএ্যাকটর প্রতিটি এলাকায় ১০০ বর্গ কিমি: আয়তনের  মধ্যে ব্যবহার করতে পারি।  বায়োমাস প্লান্ট ব্যবহার করে আমাদের গ্রামের মানুষ লাকড়ির পরিবর্তে ইনডাকশন কুকার আর মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করবে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে স্ট্যান্ড বাই হিসাবে গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করবে।

আমার এ লেখাটি যে ধারনায় ও উদ্দেশ্যটা খুব সাধারণ আর তা হল গ্রামের মহিলারা যেসমস্ত জ্বালানী ছোট ছোট চুলায় জ্বালায় সেই জ্বালানীগুলো একত্র করে আবদ্ধ প্রকোষ্ঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি করে তা দ্বারা নিরাপদ বৈদ্যুতিক চুলা জ্বালানোটাই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সরাসরি অগুণের চুলার পরিবর্তে জ্বালানী থেকে বিদ্যুৎ তৈরি আর তা দ্বারা এফিশিয়েন্ট বৈদ্যুতিক চুলা জ্বালিয়ে পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়ার অগ্রযাত্রা করা। গ্রামের মানুষদের বাড়ী বাড়ী ভ্যান বা ট্রাক যাবে তাতে তারা তাদের সমস্ত খড়কুটো যা জ্বালানীর জন্য ব্যবহার করা হত তা তুলে দিবে বা বিক্রয় করবে। এই খড়কুটো  জ্বালানী থেকে তারা পাবে বিদ্যুৎ। যা দ্বারা তারা রান্না সহ অন্যান্য কাজ করবে। রান্না কাজে ব্যবহৃত বাড়তি বিদ্যুৎ বিল তারা পরিশোধ করবে তাদের বিক্রয়লব্ধ বায়োমাস থেকে।
বায়োমস গ্রামের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে গ্রামের পরিবেশ অপরিষ্কার করে রাখে। তাই যখন গাছের পাতা থেকে শুরু করে সমস্ত বায়োমস বিক্রয় করা যাবে তখন গ্রাম এলাকায় আর বায়োমসের কারণে অপরিচ্ছন্নতা আর দেখা যাবে না। সবাই বায়োমস কুড়িয়ে নিয়ে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করবে। এতে রিনিউবল উৎস থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের মত কৃষি-প্রধান দেশে সর্বদাই অফুরন্ত বায়োমাস দেখা যায়, এমনকি কৃষকরা জমিতে অনেক বায়োমস পুড়িয়ে ফেলে। যদি পাওয়ার প্লান্টের জন্য বায়োমস কেনাবেচা হয় তবে কেহই আর কিন্তু  জমিতে পুড়বে না। সবাই সে সমস্ত বায়োমস সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করবে। বায়োমস জ্বালানী হিসাবে উন্মুক্ত-ভাবে জ্বালানো হলে তা ব্যাপক হারে পরিবেশ দূষণ করবে। আর বৈদ্যুতিক রিএ্যাকটারে জ্বালানো হলে তা কম বায়ু দূষণ করবে।

বাংলাদেশের জন্য বায়োমস রিএ্যাকটর বিপ্লব সৃষ্টি করবে। এ ধরনের মেগাওয়াট মাপের বায়োমস রিএ্যাকটর প্রতিটি উপজেলায় পরিচালনা করা সম্ভব। আর বায়োমস রিএ্যাকটর চালাতে আর বায়োমস সংগ্রহ করতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রতিটি উপজেলায় যদি দশ মেগাওয়াটের একটি করে রিএ্যাকটর থাকে আর তা যদি ২৪ ঘণ্টা করে চলে তবে রিএ্যাকটরের জ্বালানী সংগ্রহ কাজ পরিচালনা করা হয় তবে এই কর্মকাণ্ডে প্রায় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর প্রতিটি উপজেলায় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হলে পুরো দেশে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হওয়াটা মোটেই আশ্চর্যয়ের বিষয় নয়। যদি অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়। তবে ধারনা করা যায় দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও দ্রুত উন্নতি হতে থাকবে।

          ইন্টারনেটে এ বিষয়ে সার্চ করে জানা যায় ৭ থেকে ১২ মেগাওয়াটের রিএ্যাক্টারে আনুমানিক ১০ একর জায়গার প্রয়োজন। বায়োমাস জ্বালানী মজুদ করতে আরো ১০ থেকে ২০ একর স্থানের প্রয়োজন। এতে বর্তমান(২০১৫ সাল) প্রায় ৩০/৩৫ কোটি টাকা খরচ হবে। ২০০০ সালের পর হতে গত ১৫ বছরে ভারতে সর্বমোট ৯৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ৭-১০ মেগাওয়াটের অসংখ্য বায়োমস বিদ্যু কেন্দ্র চালু আছে। আমরা ভারত বা জামানি থেকে বায়োমসের রিএ্যাক্টর আমদানি করতে পারি। একটা ৭-১২ মেগাওয়াটের বায়োমস রিএক্টরের স্থাপনা তৈরী করতে ১৮ মাসের মত সময় প্রয়োজন। সহজেই বাংলাদেশে একাধিক বায়োমস রিএ্যাক্টর তৈরি সম্ভব,পরিশেষে বলব, গ্রামের মানুষ তাদের খড় ও অন্যান্য সামগ্রী থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে নিজেরা আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত ভাবে লাভবান হতে পারে। এটা পল্লী বিদ্যুতায়নকে সহায়তা করবে। অনেকে ধারনা দিতে পারেন জ্বালানী পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিবেশ বান্ধব নাও হতে পারে। তবে লক্ষ লক্ষ খড়ি/লাকড়ির চুলায় জ্বালানী পুড়ানোর চেয়ে আবদ্ধ প্রকোষ্ঠে যথাযথভাবে কার্বন নির্গমন কমাতে পাড়লে বায়োমস রিএ্যাকটরও পরিবেশ বান্ধব হিসাবে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের বৈদ্যুত ঘাটতি মেটাতে এগুলো হবে অনেক বেশী কার্যকর।
Photos collected from internet search

Friday, April 10, 2015

পাইলট প্রজেক্ট: বিজিবি ইউনিটের তথ্য প্রবাহ গতিশীল করা ও দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডের চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে অনলাইন রিপোটিং সিস্টেম

সূচনা

১. বিজিবির একটি অপারেশন বাহিনী। এ বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট কোন না কোনভাবে অপারেশনের সাথে জড়িত। ২৪ ঘণ্টা চলছে বাহিনীর কর্মকাণ্ড। বিজিবির প্রতিটি ইউনিট / সেক্টর /রিজিয়ন সমূহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চলমান তা হলো রিপোটিং। বর্ডার ও চোরাচালান সংক্রান্ত বিষয়গুলির ও ঘটনার কোন রিপোর্ট  প্রেরণের কোন সময় ও মাধ্যম সুনির্দিষ্ট নেই। যখনই ঘটবে সাথে সাথে চ্যানেল অনুযায়ী রিপোটিং চলতে থাকে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমাদের রয়েছে অনেক দ্রুত মাধ্যম। অনলাইন রিপোটিং হবে এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে বিজিবি ইউনিটের অফিস স্টাফরা একটি মাত্র রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশ করে তার থেকে এসএমএস, ভাইবার, কাগজের চিঠি ও ফ্যাক্স ইত্যাদি যে কোন কাজ স্বল্প সময়ে ও দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে পারবে। সমস্ত প্রজেক্ট পেপারে আইডিয়াটাটি ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়েছে যাতে প্রযুক্তির সাথে চলমান যে কেউ সহজে বাস্তবায়ন করতে পারেন বা কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

উদ্দেশ্য

২. এই প্রজেক্ট পেপারে উদ্দেশ্য হল ইন্টারনেটের অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে বিজিবি ইউনিটের তথ্য প্রবাহ গতিশীল করা ও দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডের চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে অনলাইন রিপোটিং সিস্টেমের পাইলট প্রজেক্ট করা।

প্রাথমিক ধারনা

৩. বিজিবির  প্রথমে কোন রিপোটিং শুরু হয় মোবাইল/ফোনে। অতঃপর ক্রমান্বয়ে চলতে থাকে এসএমএস রিপোটিং, ভাইবার রিপোটিং, ফ্যাক্স প্রেরণ, ইমেইল প্রেরণ, প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও অফিসিয়াল পত্রালাপ ইত্যাদি। সমস্ত  গুলি যদি আমরা সময় বিচার করি তবে তার বিন্যাস হবে নিম্নরূপ:
ক।       একটা রিপোর্টিং এর জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে অধীনস্থদের সাথে আলোচনা, মোবাইলে কথা বলা ও তথ্য সংগ্রহ: ০১ ঘণ্টা।
          খ।       এসএমএস প্রস্তুতি প্রেরণ: ১৫/৩০ মিনিট।
          গ।       ভাইবারে তথ্য প্রেরণ: ১৫ মিনিট।
          ঘ।       করণিকদের লিখিত রিপোট প্রস্তুতি: ০১ ঘণ্টা।
          ঙ।       কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষর ও অনুমোদন: ১৫ মিনিট।
          চ।       ফ্যাক্সে প্রেরণ/ডিসপ্যাস রেজিষ্টারে ইন/আউট: ১৫ মিনিট।

৪. তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কোন গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট কর্মকর্তার এক থেকে দেড় ঘণ্টা ব্যয় হয় আর করণিকদের মাধ্যমে আরো ১ থেকে দেড় ঘণ্টার সময় প্রয়োজন হয়। এরূপ সমস্ত কাজগুলির একটা কমন বা নির্দিষ্ট মাধ্যমে নিয়ে করলে তা যে কোন মাধ্যমে(ফ্যাক্স বা মোবাইল মেসেজ) দ্রুততার সাথে সকলকে প্রেরণ করা যাবে। তাই অনেকগুলি কাজকে একটি একক কাজে রূপান্তর করে রিপোর্টিং এর সময় ও গতিশীলতা বাড়ানো যাবে। যে কোন তথ্য পেলে স্টাফ অফিসার তথ্য ও ছবি দিয়ে তার পোষ্ট/ইমেইল রেডি করবে। পোষ্ট প্রস্তুত হলে তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ইমেইল/এসএমএস/মোবাইলে কথা বলে প্রয়োজনীয় সংশোধনী নিয়ে অনলাইনে প্রকাশ করবে। এখন অনলাইনে প্রকাশিত তথ্য থেকে কপি করে তথ্যাদি এসএমএস, ভাইবার, ওয়েব সাইটে প্রদর্শন, ওয়েব থেকে কাগজে প্রিন্ট আউট ও ফ্যাক্স ইত্যাদি যে কোন সংস্করণে প্রেরণ করা যাবে। এমনকি অনলাইন পোষ্ট মোবাইলে খুলে টেক্সট কপি ও পোষ্ট করে যে কাউকে ভাইবার বা এসএমএস এ পাঠিয়ে দিলেই চলবে। এর জন্য আমরা বেছে নিতে পারি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে অনলাইন প্রকাশনা। যদি কেউ লগ অন্য করে তথ্যের প্রাপক ও গ্রাহক সীমিত করতে চান তাও সম্ভব।

৫. প্রযুক্তির এ যুগে আমরা আমাদের রিপোর্টিংগুলো যেগুলো সাংবাদিকদের বিতরণ করার মত বিষয় সে সমস্ত বিষয়গুলো উন্মুক্ত চ্যানেলে চালু করে তা অত্যন্ত গতিশীল করতে পারি। এখনকার সময়ে সাংবাদিকদের তথ্য প্রদানের প্রয়োজনে প্রায় সকল ইউনিটে ইমেইল প্রেরণ করার মত দক্ষ করণিক বা আইসিটি দক্ষ সৈনিক তৈরি হয়েছে। তারা যে ভাবে প্রেস ব্রিফিং ইমেইলে সাংবাদিকদের প্রদান করে একইভাবে প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইমেইল করে দিবে। এতেই ইমেইলের তথ্যগুলো অনলাইন পেইজে পাবলিশ হবে। তখন সেই তথ্য সাংবাদিকরা ব্যাটালিয়নের অনলাইন তথ্য ভাণ্ডার থেকে সংগ্রহ করে নিবে। আর কর্মকর্তারা তাদের যেকোনো অবস্থায় রিপোর্টিংগুলোর উপর লক্ষ্য রাখতে পারবে। তার জন্য অফিসের বাইরে থাকলেও  মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইন রিপোর্টিং এর তথ্যাদি জানা ও শেয়ার করতে পারবেন।

৬.       অনলাইনে বিজিবি’র নিম্নবর্ণিত তথ্যাদি দেয়া যেতে পারে:
          ক।       চোরাচালান অভিযানের খবর।
          খ।       করিডোর ট্যাক্স আদায়ের প্রতিবেদন।
          গ।       অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ডিউটির বিবরণ।
          ঘ।       ফ্ল্যাগ মিটিং সংক্রান্ত তথ্যাদি।
          ঙ।       আইসিপি’র গমনাগমন তথ্যাদি।
          চ।       ভারতীয়/বাংলাদেশী মৈত্রী ট্রেন চলাচল প্রতিবেদন।
          ছ।       সীমান্ত হতাহতের প্রতিবেদন।
          জ।       অস্ত্র আটকের প্রতিবেদন।
          ঝ।       সীমান্তের ৮ কি: মি: এর মধ্যে ঘটনার প্রতিবেদন(শুধুমাত্র সাংবাদিকদের প্রকাশ করার মত ইতিবাচক ঘটনা)।

৭. বর্তমানে সীমান্ত সংক্রান্ত প্রতিবেদন গুলি প্রতিটি ইউনিট ধারাবাহিকভাবে সরাসরি বিজিবি সদর দপ্তরে প্রেরণ করে আসছে। সেক্টর সদর দপ্তর ও রিজিয়ন সদর দপ্তর অবগতি পাচ্ছে। এখন সীমান্ত সংক্রান্ত প্রতিবেদন গুলি শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব সাইটে অনলাইনে প্রকাশ করবে। সেখান থেকে রিপোর্টগুলি অতিদ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নোটিশে চলে আসবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওয়েব সাইটে নির্দিষ্ট ইউনিটের তথ্যগুলি স্টাফ/কমান্ড চ্যানেলের নির্ভরশীলতা ব্যতিরেকে সরাসরি মনিটর করতে পারবে। এতে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের তথ্যের অবাধ প্রবাহের কারণে অনেক বেশী তথ্য-নির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী থাকবেন।

৮.       ইউনিট সমূহ অনলাইনে তথ্যগুলি সরাসরি অনলাইনে প্রকাশ করার সাথে সাথে সেক্টর ইমেইলে নোটিফিকেশন পাবে। কারণ প্রতিটি সাইট থেকেই অনলাইন নোটিফিকেশন সম্ভব। এছাড়া কোন রিপোর্ট কখন ইউনিট প্রকাশ করবে সেটা টাইম সিন্ক্রোনাইজ করে নেয়া যেতে পারে। ব্যাটালিয়নের তথ্যগুলি গুরুত্ব ও অন্যান্য বিবেচনায় সেক্টর সাইটে সমস্ত ব্যাটালিয়নের তথ্যগুলি একত্র করে সামারী আকারে প্রেরণ করবে। সমস্ত সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সমস্ত সামারী দিয়ে সেক্টর নিজস্ব ওয়েব সাইটে পোষ্ট দিবে। রিজিয়ন সদর দপ্তর তার অধীনস্থ সমস্ত সেক্টরের তথ্য নিয়ে রিজিয়নের ওয়েব সাইট আপডেট করবে। সবশেষে বিজিবি সদর দপ্তর চারটি রিজিয়নের ওয়েব সাইট থেকে সমস্ত তথ্যাদি সারাংশ আকারে পেয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি হবে সাশ্রয়ী ও দ্রুততম সময়ে।

তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়:

৯. অনলাইনে বিজিবি ও দেশের প্রশাসনের উপর নেতিবাচক কোন তথ্য দেয়া হবে না। নেতিবাচক তথ্যাদি স্বাভাবিক চ্যানেল অব কমান্ডে লিখিতভাবে পরিচালিত হবে। সম্পূর্ণ বিষয়টির উপর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারেন যারা আইটিতে স্বাচ্ছন্দ্য নন বা  পছন্দ করেন না। অধিক পরিমাণ কাগজ ব্যবহার না করে এ পদ্ধতিতে দ্রুত তথ্য প্রবাহ করা যাবে। আমরা যারা তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তারা এ বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকতে পারি। তারা যে সমস্ত বিষয়ে দ্বিধা দ্বন্ধে থাকবেন সে সমস্ত তথ্য অবশ্যই লিখিত, স্বাক্ষরিত ও ফ্যাক্স/ডাক/ডিআর এর মাধ্যমে প্রেরণ করবেন। আর যে সমস্ত তথ্য সাংবাদিকদের জানলে সমস্যা নেই সে সমস্ত তথ্য অনলাইনে নির্বিঘ্নে প্রবাহিত করা যাবে। সাংবাদিকদের দেয়ার মত তথ্যগুলো যদি আমরা উন্মুক্ত প্রবাহে দেই তাতেও আমাদের অপারেশন শাখার ৮০ শতাংশ পত্রালাপ, কাগজের ব্যবহার, ফ্যাক্স প্রেরণের খরচ, কম্পিউটার বিদ্যুৎ খরচ ও প্রিন্টারের কালির ব্যবহার কমে যাবে। সর্বোপরি তথ্য প্রবাহ অনেক গতিশীল হবে। অনেকে যারা অনলাইনে তথ্য দেখতে পছন্দ করবেন না, বা কম্পিউটার/মোবাইল স্ক্রিনে তথ্য পড়তে চোখের সমস্যা তাদের জন্য অনলাইনের তথ্যগুলি প্রিন্ট আউট নিয়ে পড়ার ও ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। আজকাল কর্মকর্তারা অধিকাংশ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে পারেন। দামী ও স্মার্ট ফোনের সকল ফিচার ব্যবহার না করলেও এটা এখন স্ট্যাটাস সিম্বল তাই অধিকাংশ কর্মকর্তা এগুলো ব্যবহার করেন। তারা সমস্ত তথ্যাদি স্মার্ট-ফোন হতে দেখতে পারবেন। ফলে অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম চালু করতে নতুন ডিভাইস ক্রয় বা বরাদ্ধের প্রয়োজন হবে না।

পাইলট /পরীক্ষামূলক প্রজেক্ট

১০. কুষ্টিয়া সেক্টর গত ০৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সেক্টর কমান্ডারের(কর্নেল জাভেদ সুলতান) অনুমতি সাপেক্ষে পরীক্ষামূলক ভাবে তিনটি অনলাইন সাইট খুলে। তিনটি সাইট গুলো হল ৬ বিজিবি ব্যাটালিয়ন(cdnbn.blogspot.com), ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন(kstbn.blogspot.com) ও (kstsec.blogspot.com)সেক্টর সদরের ওয়েব সাইট। দুইটি ব্যাটালিয়ন তাদের দুইটি সাইটে প্রতিবেদন আকারে দুপুর ১২ টায় ও বিকাল ৫টায় প্রকাশ করবে। উক্ত প্রতিবেদন থেকে সেক্টরের অপারেশন করণিকরা সামারী আকারে ১৪০০ ঘটিকায় ও ১৮০০ ঘটিকায় রিজিয়ন সদরে প্রদানের জন্য তাদের রিপোর্ট রেডি করবে এবং একই রিপোর্ট থেকে সেক্টরের রিপোর্টের সামারী তৈরি করবে। যদি পরবর্তীতে রিজিয়ন সদর দপ্তর অনলাইন রিপোর্টিং যোগ দেয় তবে তাদের রিপোর্ট একইভাবে দুই সেক্টরের অনলাইন রিপোর্ট হতে সামারী নিয়ে কপি ও পেস্ট করে চালু করবে। বর্তমানে কুষ্টিয়া সেক্টরের অনলাইন রিপোটিং এর পাইলট প্রজেক্টের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় দুই ব্যাটালিয়নের দুই ক্লার্ক, সেক্টর সদরের সিটি ও জি ক্লার্ক কাজ করছে। তাদের সকলের বিশেষত্ব হল তারা ইমেইল ব্যবহার করতে পারে এবং ওয়েব সাইট ব্রাউজ করতে পারে। এখন প্রশ্ন হল, এই প্রজেক্ট কিভাবে অন্যদের জন্য বাস্তবায়ন করা যাবে। প্রথমে কুষ্টিয়া সেক্টরের তত্ত্বাবধানে কয়েকটি ওয়েব সাইট বা যে কোন বিজিবি/ বেসামরিক দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি দ্বারা ব্যাটালিয়ন/সেক্টর/রিজিয়নের জন্য ফ্রি/পেমেন্ট কয়েকটা অনলাইন সাইট তৈরি করে নিলেই চলবে। আর অপারেশন ক্লার্কদের কাজ হবে কর্মকর্তার নিদেশ অনুযায়ী অনলাইন রিপোর্ট বা নিউজগুলো নির্দিষ্ট সাইটে পোস্ট দেয়া। আর এতেই তৈরি হবে অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম। বর্তমানে কুষ্টিয়া সেক্টর বিনে পয়সায় ফ্রি ব্লগ-স্পটে তিনটি সাইট চালু করেছে। যদি এটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য হয় তবে ভবিষ্যতে টাকা খরচ করে হোস্টিং স্পেস বা ডোমেইন ক্রয় করা ফেতে পারে। এতে লাভ কি হতে পারে? কিছু টাকা খরচ এবং নিজস্ব নামে সাইট রেজিস্ট্রেশন ছাড়া আর কোন লাভ আছে বলে মনে হয় না। তবে পাইলট প্রজেক্ট শেষ হলে বিশেষজ্ঞ দ্বারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ করে টাকা খরচ করা যেতে পারে। আপাতত পরীক্ষা নিরীক্ষা ও অনুশীলন করার জন্য কোন টাকা খরচ বা বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই। ফ্রি সাইটের মাধ্যমে করলেই চলবে। তিনটি ওয়েব সাইটের ছবি নীচে দেয়া হল।


ওয়েব সাইট কম্পিউটারে বা মোবাইলে দেখা
১১. অনলাইন রিপোর্টিং এর সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয়টা হল সমস্ত রিপোর্টগুলি স্মার্ট-ফোনে দেখা সম্ভব। স্মার্ট-ফোন বর্তমানে ৩/৪ হাজারে ক্রয় করা সম্ভব। এই ফোনগুলি ইন্টারনেটে যে কোন ডাটা প্যাকেজ নিয়ে ব্যবহার করা সম্ভব। এতে তেমন বেশী খরচ হবে না। অন্য একটি ব্যবস্থা হল অনেক স্থানে ওয়াই ফাই আছে সে সমস্ত স্থানে ব্যবহার করা যাবে। কর্মকর্তারা তাদের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে সবসময় আপডেট রিপোর্ট পাবেন। নীচের ছবিতে কম্পিউটার ও মোবাইলে কুষ্টিয়া সেক্টরের ওয়েব সাইটি কেমন দেখাবে তা দেয়া হল।


অনলাইন রিপোর্টিং কিভাবে হবে
১২.  অনলাইন রিপোর্টিং পাইলট প্রজেক্টে যেভাবে শুরু করা হয়েছে তা একটা ফ্লো চার্টের মাধ্যমে উদাহরণ হিসাবে দেখানো হল। অপারেশন করণিক/সহকারী ইউনিট গুলোর প্রতিবেদন দেখে সম্পূর্ণ সেক্টরের সামারী তৈরি করে সেক্টরের স্বীয় ওয়েবে দিবে। অধীনস্থ সকল সেক্টরের ওয়েব সাইট থেকে তথ্য নিয়ে রিজিয়ন তার সারাংশ তৈরি করে স্বীয় ওয়েব সাইটে দিবে। চারটি রিজিয়ন সদরের ওয়েব সাইট থেকে তথ্য নিয়ে বিজিবি সদর দপ্তর তাদের তথ্য বোর্ড ও ওয়েব সাইট আপডেট করবে।




অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেমের ভাল দিক সমূহ

১৩. অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম আমাদের কি কি উপকার করতে পারবে অর্থাৎ ভাল দিকগুলো নিচে তালিকাভুক্ত করা হল:
ক। কাগজ ও কালির ব্যবহার ও খরচ কমিয়ে “পেপার রিডাকশন/পেপার লেস অফিস সিস্টেম” অগ্রযাত্রার সূচনা ঘটবে।
খ। একবার সিস্টেমটি আয়ত্তে আসলে পেপার অফিস থেকে পেপার রিডাকশন অফিস সিস্টেম অধিক গতিশীল হবে।
গ। কর্মকর্তারা তথ্য নির্ভর বিষয়ে আরো বেশী উপকৃত হবেন।
ঘ। সাংবাদিকরা অনেক তথ্য প্রবাহে থাকতে পারার কারণে সংবাদ সংগ্রহে তারা অনেক বেশী গতি পাবে ও নির্ভূল সংবাদ পাবে। ইমেইল খোলা ও কপি করার অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
ঙ। যেহেতু সমস্ত তথ্য ওয়েব সাইটে প্রদর্শিত থাকবে সেহেতু সাংবাদিকদের তথ্য না পাওয়ার মত অবস্থা থাকবে না।
চ। বিজিবি কর্মকাণ্ড অনেক বেশী সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশিত হওয়ার কারণে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত আরো জোরদার হবে।
ছ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এসএমএস ও ভাইবারের ম্যাসেজ পাঠানো সহজ হবে । শুধুমাত্র মোবাইলে ওয়েব সাইট খুলে কপি পেস্ট করলেই হবে। একইভাবে ভাইবারে ছবি শেয়ারও সহজ হবে।

অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেন্জ্ঞ গুলো কি কি হতে পারে

১৪. নিরাপত্তা বিষয়টি বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া কিছু সীমাবদ্ধতা নিচে দেয়া হল।
ক। কিছু সংখ্যক করণিকদের বা সহকারীদের ইন্টারনেট ব্যবহার ও ইমেইল প্রেরণের উপর প্রশিক্ষিত করতে হবে।
খ। যদি বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানে ইন্টারনেট মোবাইলের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু যেখানে ইন্টারনেট মোডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয় সেসমস্ত স্থানে ওয়েব সাইটে ছবি আপলোড করতে সমস্যা হতে পারে তবে তথ্য আপলোড করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
গ। কোন কোন স্থানে ব্রড ব্যান্ডে সমস্যা হতে পারে সেক্ষেত্রে মোডেমের মাধ্যমে তথ্য আপলোড করা যেতে পারে। যদি ছবি আপলোড করা না যায় তবে বি:দ্র: দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় ছবি দেয়া হল না। পরবর্তীতে ছবি আপলোড করা হবে।

উপসংহার


১৫.  সারা পৃথিবীতে তথ্য প্রবাহের সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য পৃথিবীব্যাপী অনেক অনেক বিনিয়োগ ও তৎপরতা চলছে। তবে বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের মত শক্তিশালী মাধ্যম আর দ্বিতীয়টি নেই। বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন যাবত আইটি মাধ্যমে সুশাসনের ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্য সেবা কেন্দ্র সে সমস্ত পদক্ষেপের বাস্তবরূপ। বিজিবি অনেক বিষয়ে নিজেদের সাফল্য সংবাদ মাধ্যমের সাথে শেয়ার করতে হয়। তাই বিজিবি স্থানীয় সাংবাদিক ও স্থানীয় জনগণকে নিজেদের সাফল্য শেয়ার করে একটা সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পারে যা কিনা বর্ডার সংক্রান্ত অপরাধ কমিয়ে আনবে। অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম নিঃসন্দেহে বিজিবি অপারেশন গতিশীল করবে। অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম সম্পূর্ণভাবে পাইলট প্রজেক্টের মাধ্যমে ছোট ছোট চ্যালেন্জ্ঞগুলো সমাধান করে যথেষ্ট শক্তিশালী তথ্য প্রবাহের মাধ্যম বা ধারার সূচনা করা যায়। এতে বিজিবির সৈনিক  থেকে শুরু করে সকলেই উপকৃত হবে।