Pages

Wednesday, December 3, 2014

আমরা কি বুড়িয়ে যাচ্ছি

আমার এ লেখাটি আমার বন্ধুদের জন্য যারা ৪৪-৪৬ বছর বয়সী। আমাদের অনেকের কানে একটি বাক্য প্রায়ই আসে,বয়স হয়েছে আর কত। এই কথাটি কিছুদিন আগেও বেশ গুরুত্ব দিতাম। এখন মনে হচ্ছে এটা গুরুত্ব দেয়ার কোন বিষয় এটা নয়। কারণ বয়স হলে হয়তবা ২৫ বয়সীর মত কাজ সম্ভব নয় কিন্তু বয়স অনুযায়ী কার্যক্রম থেমে থাকার কথা নয়। আমরা প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি। আমাদের শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষা। বিভিন্ন স্থানে যাতায়ত। ব্যাটল ড্রেস পড়া। মাইলের পর মাইল হাটা। এগুলো কোনটাই আরামদায়ক কাজ নয়। আমি ২০১২ সালে মিশনে গিয়েছি। সেখানে যখনই ক্যাম্পে গেছি বা টহলে গেছি কখনও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বা বুলেট প্রুফ হেলমেট মাথা থেকে নামাতে পারিনি। কারণ একটাই কঙ্গোতে আমাদের বাংলাদেশের হতাহতের ঘটনা কম নয়। কঙ্গোতে আমাদের ভাষা-গত পার্থক্য থাকার কারণে আমরা তেমনিভাবে তাদের সাথে মিশতে পারতাম না। দুভাষী দ্বারা আর যাই হোক বন্ধুত্ব করাটা কঠিন।
তবু যারা মিশনের ক্যাম্প থাকে তাদের অনেক বেশী পরিমাণে টহল করতে হয়। জীপগুলি কঙ্গোর রাস্তায় চলতে চলতে আর আরামদায়ক অবস্থায় নাই। তবে গাড়ী চলমান আছে কারণ প্রতি তিনমাস পরপর পরিদর্শনে গাড়ী অকেজো থাকলে সেই সমস্ত গাড়ীর কোন ভাড়া বাংলাদেশ পাবে না। তাই গাড়ীর রং ও চেহারা যাই হোক না কেন গাড়ী চলমান থাকত। আমাদের সাথে দুইজন কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন অনেক সিনিয়র মেজর। একজন কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের কোর্সের আর আর একজন ছিল কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের এক কোর্সের জুনিয়র। আমি ব্যাটালিয়ন হেড কোয়াটার থেকে কোম্পানি কমান্ডারদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য মাঝে মাঝে কোম্পানিতে যেতাম। আমার দীর্ঘ সময় বিপি হেলমেট পড়ায় মাঝে মাঝে বেশ টায়ার্ড ফিল করতাম কোথাও গেলে তা খোলার জন্য আকুপাকু করতাম। অপরদিকে আমার থেকে প্রায় সাত বছরের সিনিয়র কোম্পানি কমান্ডার নির্ধিধায় বিপি হেলমেট ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে আছে খোলার নামগন্ধ নেই। ভাঙ্গা-চুরা জীপে মাটির রাস্তায় মাইলের পর মাইল যাচ্ছে ক্লান্তির কোন ছাপ বা বিরক্তি নেই। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, সে কিভাবে এত লম্বা সময় বিপি হেলমেট পড়ে থাকতে পারছে। একটানা ঘণ্টা পাঁচেক পরে আমার অবস্থা খারাপ। সে আমাকে বলল, অভ্যাস। সপ্তাহ খানেক নিয়মিত দশ ঘণ্টা/বার ঘণ্টা টহল করতে থাকলে  কয়েকদিন পরে দেখবে বিপি পড়ে আছ না গেঞ্জি পড়ে আছ টের পাবে না। আসলে তাই হয়েছিল আমি এক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিপি হেলমেট পড়ে থাকলেও টের পেতাম না। আমি একজন জেসিওকে দেখলাম, এই জেসিও আমার চেয়ে ১০ বছরের বড়। সে ক্লান্তিহীন ভাবে টহল করছে। বিপি হেলমেট খুলছে না। তাকে দেখে আমি শুধু চিন্তা করি, সে পাড়লে আমার জন্য তা আরো সহজ। আমি তার তুলনাটি নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত রাখছিলাম। আসলে পরিশ্রমের ক্ষমতা নির্ভর করছে অভ্যাসের উপর। অবশ্য অনেকে বলেন যারা মেধার পরিশ্রম করেন তারা কায়িক পরিশ্রম করলে মেধাকে কাজে লাগাতে পারেন না। বিষয়টা মোটেই ঠিক নয়। মেজর কোম্পানি কমান্ডার দুইজন, নিরলস ভাবে যে পরিশ্রম করত তারচেয়ে অর্ধেক পরিশ্রম করেও সমবয়সী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসি বাংলো ও প্রাডো জীপে বিপি  হেলমেট ছাড়া জীবন যাপন করেও সর্বদা ফিজিও থেরাপিস্টের নানা রকম অনুশীলনের মধ্যে থাকতেন। একজন লে: কর্নেল পদমর্যাদার ডাক্তার সর্বদা তার শারীরিক অবস্থা ভাল রাখার জন্য অত্যন্ত তৎপর ছিল। আর আমরা আতংকে থাকতাম কখন তার শরীর খারাপ সাথে মেজাজ খারাপ। আমার থেকে র‍্যাংকে সিনিয়র কোর্সে জুনিয়ার দুই কর্মকর্তা লাগাতার যেভাবে চিকিৎসা নেয়ায় ব্যস্ত ছিল তাতে আমাকে একটু অবাক করেছিল । তারা নিশ্চিতভাবে অনেক উপরে উঠতে পারবে। তাদের কমফোর্ট লেভেল আমার মত মেজর থেকে অনেক বেশী ছিল। তাদের চেয়ে অনেক শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যেও আল্লাহ আমাকে অধিক সুস্থ রেখেছিলেন। তবে আমি বলব তারা যদি আমার র‍্যাংকেথাকতেন। তবে হয়তবা আরো কম অসুস্থ হতেন। আমার চেয়ে নীচে র‍্যাংকেযারা আছে তারা আমার চেয়ে আরো কম অসুস্থ হচ্ছে। কারণ বেশী পরিশ্রম হলে আর যাই হোক শরীর ভাল থাকে। তাই সামাজিক অবস্থা বা স্ট্যাটাস ভাল থাকলে শারীরিক অবস্থা সেইভাবে ভাল নাও থাকতে পারে। আমি আমার কাপড় ধোয়ার জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল। একজন সৈনিক নিজে পরিশ্রম করে তার কাপড়টা ধুয়ে নিচ্ছে। সে আরও অনেক কাজ করছে তার জন্য সে আমার চেয়ে বেশী পরিশ্রম করছে। এ ধরনের মানুষদের গড় আয়ু হয়ত আমার মত চেয়ারে বসে কাজ করা মানুষের চেয়ে বেশী। আমরা পরিশ্রমী মানুষদের পরিশ্রমগুলো করতে না পারলেও খেলাধুলা আর হাটার মধ্যে থেকে হয়তবা শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ বের করে নিতে পারি। টাইম ম্যানেজমেন্টের একটা আর্টিক্যাল পড়ে একটা মজার তথ্য জানলাম আর তা হল, আমাদের প্রত্যেকের প্রতি ঘণ্টা কাজের মূল্য বের করতে হবে। যদি আমার ঘণ্টার দাম হয় ৫০০ টাকা আর কাপড় ধোয়ার লোকের মূল্য যদি হয় ঘণ্টায় ১০০ টাকা তাতে আমার যদি সময় কম থাকে তবে লো ভ্যালু কাজ কম মূল্যে করিয়ে নেয়া ভাল। এতে আমার প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে। যদি সময় পাওয়া যায় তবে নিজের কাজ নিজে করলে শরীর ভাল থাকবে।
কাজটা অভ্যাসের বিষয়। তবে এটা নিশ্চিত নিজের পদমর্যাদা যাই হোক না কেন নিজ উদ্যোগ পরিশ্রম করে নিজেকে হালকা ঝরঝরে রাখা যায়। কুষ্টিয়ার ডিসি সৈয়দ বেলাল হোসেন(২০১৪ ডিসেম্বর)  খুবই টেনিস খেলেন । তার হালকা পাতলা ফিট শরীর তার কাজের তৎপরতায় প্রকাশ পায়। অথচ বিজিবি বা আর্মিতে থেকেই আমরা ওবিস সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি। তখন একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে নিয়মিত টেনিস খেলে নিজেকে সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যের থাকাটা প্রশংসার দাবীদার।

তবে যে কোন খেলাধুলা বা ব্যায়াম নিয়মিত ও ধারাবাহিক ভাবে করাটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশী গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় আমরা পদার্পণ করি ততবেশী ভাল ও উচ্চ ফ্যাট-যুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হবে। উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা অথবা আর্থিক অবস্থা ভাল লোকজনের স্বাভাবিকভাবেই দামী ও উন্নত প্রোটিন খাদ্যের মধ্যে থাকে। বাজারের বড় বড় মাছ ও অন্যান্য দামী খাবার, রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া চলতে থাকলে ওজন আর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণের রাখাটা অনেক বেশী শক্ত। পরিশেষে বলা যায় সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে আছে কেবলমাত্র সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা নিজেদের ওজন ও অভ্যাস নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারি। তাই যে কোন কাজে আমি বুড়িয়ে যাচ্ছি তা নয় বরং বয়সকে তোয়াক্কা না করে কাজে তৎপর থাকাটা জরুরী। তাতেই মঙ্গল রয়েছে। আর যারা উচ্চ মর্যাদায় নেই তাদের মন খারাপ করার কারণ নেই কারণ উচ্চ মর্যাদায় না থাকা আবার আশীর্বাদ হিসাবেও নেয়া যেতে পারে। কারণ অল্পমুল্যের খাবার, অল্প মূল্যের গাড়ী, অল্প আয়েস ইত্যাদি আমাদের অধিক পরিশ্রম করাবে আর তাতে আমরা আরো বেশী সুস্থ থাকব। আর যারা উচ্চ মর্যাদায় আছেন তদের প্রয়োজন সতর্ক থাকা কারণ হাত বাড়ালেই তার জিম পাচ্ছেন। হাত বাড়ালেই পারছেন অনুশীলনের কোচ নিয়োগ করতে। আপনার ডায়েটিং চার্ট তৈরি করতে  ডাক্তার নিয়োগ করতে পারছেন। প্রয়োজন শুধু একটু তৎপরতার ও ইচ্ছার।

Sunday, November 2, 2014

এক কম্পিউটার থেকে ডজন ডজন কম্পিউটার চালানো

প্রযুক্তির নতুন নতুন উত্তরণ আমাদের জন্য কখনও সাশ্রয়ী আবার কখনও খরচ সাপেক্ষ। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি পণ্য আপগ্রেড হচ্ছে। আমি আমার প্রথম ল্যাপটপ ২০০৩ এ কিনে ২০০৫ পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারি। তারপর নষ্ট হয়। আমি আর রিপেয়ার করতে পারিনি। কারণ ততদিনে মডেল পরিবর্তন হয়েছে পার্টস পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আমার দ্বিতীয় ল্যাপটপ সাদৃশ নেটবুক ব্যবহার করছি। এখন পর্যন্ত চালাতে পারছি তবে উইন্ডোজ ৭ এর মধ্যে আছি। পরবর্তীতে উইন্ডোজ ৮ বা ১০ অথবা পরবর্তী অপারেটিং সিস্টেমে যেতে অবশ্যই আমার নেটবুক বদল করা ছাড়া কোন উপায় নাই। এর মধ্যে দুইবার ব্যাটারি পরিবর্তন করেছি। কিন্তু আমি যদি আমার রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী চিন্তা করি তবে এখনও আমার নেটবুকটি আরো পাঁচ বছর ব্যবহার করতে পারব। কারণ ইন্টারনেট ব্রাউজ করা ও ছোটখাটো টাইপিং কাজের মধ্যে আমার কার্যাবলী সীমাবদ্ধ।
সমস্যা হল আমরা যতই যত্ন করে কম্পিউটার চালাই না কেন আমাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপগুলো চার থেকে পাঁচ বছর পর সফটওয়্যারের রিকোয়ারমেন্টের কারণে বদল করতে হয়। আর আমাদের ছেলে ও মেয়েদের কম্পিউটারগুলো এদের গেমের রিকোয়ারমেন্টের কারণে প্রতি দুইবছর পর পর হার্ডওয়্যার বদলের প্রয়োজন পড়ছে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের কম্পিউটারগুলো নয়ত আপনি দুই/তিন বছর পর পর পরিবর্তন করলেন এতে হয়ত তেমন চাপ পড়ছে না। কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠানে যদি  ১০ টি কম্পিউটার থাকে তার বর্তমান গড় মূল্য ধরুন ৩০,০০০x১০ = ৩ লক্ষ টাকা। এখন এই দশটি কম্পিউটার যদি তিন বছর পর সফটওয়্যার কম্পেটেবিলিটির জন্য বদল করতে হয় আবার তিনলক্ষ টাকা প্রয়োজন আর পুরাতন কম্পিউটার বিক্রি করে যা পাওয়া যায় তা বেশ নগণ্য টাকা। অর্থাৎ কিনতে গেলে বেশী দাম।বেচতে গেলে দাম নাই। এখন আসা যাক এন্টিভাইরাস ব্যবহারের হিসাবে। দশটি কম্পিউটার প্রতিবছর ৭০০০ টাকা এন্টিভাইরাস আপগ্রেডে খরচ করলে দশ বছরে খরচ ৭০,০০০ টাকা।
বিদ্যুৎ খরচের সাশ্রয়টা আরো ব্যাপক। দশটি কম্পিউটারের প্রতিটিতে ৩০০ ওয়াট করে বিদ্যুৎ খরচ হলে মোট খরচ ৩০০০ ওয়াট, এখন যদি দশটি কম্পিউটার মাত্র ৫০০ ওয়াট খরচ করে ২৫০০ ওয়াট বিদ্যুৎ সেইফ করা যায় তাহলে কেমন হয় ,কম্পিউটারগুলো অফিসের কাজে দশ ঘণ্টা চলে তবে একদিনে বিদ্যুৎ সাশ্রয় ২৫০০x১০=২৫০০০ ওয়াট বা ২৫ কিলো ওয়াট। ২৫ কিলো ওয়াটx৮ টাকা=২০০ টাকা আর মাসে ৬০০০ টাকাবছরে ৭২ হাজার টাকা। সরকারী প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ বিল বলে হয়ত আমরা টের পাইনা। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিল বেশ ভালভাবেই টের পাওয়া যায়।
দশটি কম্পিউটারে প্রতি মাসে মাসে কিছু রক্ষণাবেক্ষণ খরচ লেগেই থাকবে। এখন সে জায়গায় একটি কম্পিউটার দিয়ে যদি আমরা ১০-২০টি, কয়েক ডজন বা শতাধিক কম্পিউটার চালাতে পারি তবে মন্দ হয় না। আমাদের জন্য এর সমাধান অনেক আগেই হয়ে গেছে আমরা তেমনিভাবে বিষয়টিতে অবগত নই এটাই হল এর বিস্তারে ও প্রসারে সীমাবদ্ধতা।
আমি ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর আর্টডকে চাকুরীরত অবস্থায় জানতে পারি ঘাটাইল সেনানিবাসের এশিয়া নামক প্রশিক্ষণ সেন্টারে একটি কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করেছে যাতে মাত্র একটা সার্ভার থেকে একাধিক কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আমি সেই ল্যাবটি দেখার সময় ও সুযোগ করতে পারিনি। আমার ইচ্ছে ছিল ঘাটাইল এর এশিয়ার মডেলটি ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে চালু করার জন্য তাদের উৎসাহিত করা। আমি ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দুই বছর গভর্নিং বোর্ডের সেক্রেটারি থাকাকালীন দুইটি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট উন্নয়নে সহায়তা করেছিলাম। অত:পর মিশনে যাওয়ার কারণে বিষয়টি নিয়ে আর ভাবিনি। মিশন থেকে দেশে ফিরে বিজিপিতে পোস্টিং পেয়ে হঠাৎ  করেই জানলাম, লে: কর্নেল এস এম মনিরুজ্জামান, ৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এ ধরনের নেটওয়ার্কিং করেছেন। তার অফিসের কম্পিউটারগুলোর নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা আমার বেশ ভাল লাগল। আরো জানতে পারলাম তার অফিস সহকারীদের জন্য নেটওয়ার্ক করার ফলে যে সমস্ত কম্পিউটার স্পেয়ার হয়েছে সেগুলো দিয়ে তিনি তার বিজিবি স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করে দিয়েছেন। এখন অবশ্য সমস্ত হাই স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব রাখতে হচ্ছে কারণ সরকার জেএসসি পরীক্ষায় সকলের জন্য কম্পিউটার বাধ্যতামূলক করেছে। এখন ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত সকল ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের পরীক্ষার সকল ফলাফল অনলাইনে বোর্ডের সার্ভারে আপলোড করতে হচ্ছে। ফলে হাই স্কুলগুলোতে কম্পিউটার ছাড়া চিন্তা করা যাচ্ছে না।

৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অফিসের নেটওয়ার্কিং থেকেই আমার ইচ্ছে ছিল এধরনের ব্যবস্থা আমাদের কুষ্টিয়া বিজিবি সেক্টর অফিসে করি। ইতিপূর্বে আমি এ ধরনের নেটওয়ার্ক কম্পিউটার ল্যাবের জন্য চিন্তা করেছি। অফিসেও এর ব্যবহার করা যায় তা চিন্তা করিনি। আমি আমার সম্পূর্ণ প্রস্তাব ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারকে উপস্থাপন করি তিনি নাকচ করে দেন। পুনরায় আরেক জন ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারকে উপস্থাপন করি তিনি তাচ্ছল্য করে বলেন, “জটিলতা বাড়িও না আমিও জটিলতা না বাড়িয়ে চুপচাপ বসে থাকলাম। আমার কোর্স-মেট কর্নেল জাবেদ সুলতান সেক্টর কমান্ডার হয়ে আসলে পুনরায় প্রস্তাবটা দিলাম। তিনি প্রযুক্তি প্রেমী ও সিগন্যাল অফিসার হওয়ায় আমার জন্য বেশ ভাল হল। আমাকে অনেক উৎসাহ দিলেন।
৬বিজিবি ব্যাটালিয়নে যে নেটওয়ার্কটা করেছিল সেই কম্পিউটার ফার্মকে নিয়োগ দিলাম। তবে পিসিআই কার্ড দিয়ে প্রতি রুমে একটা কম্পিউটার থেকে দুইটি বা তিনটি কম্পিউটারের চালনার জন্য তারা সিস্টেম করেছিল। এতে ডকুমেন্ট প্রিন্টিং করা হত প্রতি রুমের মুল কম্পিউটার হতে। কয়েকটি মনিটর বা কীবোর্ড দিয়ে বাকী সহকারীরা আলাদা আলাদাভাবে তাদের কাজ করতে পারে। মনিটর ও কীবোর্ডে বসা সহকারীরা বুঝতেই পারবে না যে সে অন্য একটি কম্পিউটারের নির্ভরশীল ভাবে কাজ করছে। সে যেভাবে তার ডেস্কটপ রেখেছে সে একইভাবে যে কোন ওয়ার্ক স্টেশন থেকে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড সংযুক্ত হয়েও সে তার নির্দিষ্ট ডেস্কটপটিই পাবে। যা কিনা উইন্ডোজের একই কম্পিউটারে মাল্টি ইউজার লগঅনের মত।
আমি সরবরাহ ফার্মকে চাহিদা দিলাম আমার সকল শাখার কম্পিউটার একই নেটওয়ার্কে থাকবে এবং প্রতিটি সহকারীদের রুমে সংযোগ থাকবে। প্রতি সহকারী যার যার স্থান থেকে প্রিন্ট নিতে পারবে ও পেন-ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারবে। সরবরাহকারী আমাকে সলিউশন দিল ইউটিপি ক্যাবল ও সুইচের মাধ্যমে করবে এবং আমেরিকার তৈরি L-230 Ncomputing ছোট বক্স ব্যবহার করবে। এতে কী বোর্ড, মাউস ও মনিটর লাগিয়ে ল্যানের কানেকশন দিলেই কম্পিউটার রেডি। প্রতিটি নেটওয়ার্ক কম্পিউটিং কার্ডে  ইউএসবি পোর্টও থাকবে যা দ্বারা প্রতিটি ওয়ার্ক স্টেশন থেকে পেন-ড্রাইভ, প্রিন্টার ও স্ক্যানার ইত্যাদি ইউএসবি ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে। নেটওয়ার্ক কার্ডটি মনিটরের পিছনে এটাচমেন্ট দিয়ে সংযোগ করা হবে এতে টেবিলের উপর স্পেস আরো কম লাগবে এবং সমস্ত তার গুছানো থাকবে।

একদিন পুরোদিন ধরে কম্পিউটার ফার্মের লোকেরা কাজ করল। দেখা গেল, একই রুমের কাছের কম্পিউটারে কাজ করছে দূরের কম্পিউটারে কাজ করছে না। পরে ঢাকায় সরবরাহকারীদের সাথে আলোচনা করে তারা নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত তার বদলিয়ে পুনরায় নেটওয়ার্কিং করল। এবার চালু হল।
সহকারীদের সব ডাটা একসাথে করা হল এবং সার্ভারে কপি করা হল। এরমধ্যে হিসাব শাখার একটি ও রেশন সফটওয়্যারের জন্য একটি মোট দুইটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বাইরে রাখলাম। বিকল্প সার্ভার কম্পিউটার হিসাবে অপারেশন শাখার কম্পিউটারটি নির্দিষ্ট করে রাখলাম। প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত সহকারীরা তাদের পুরাতন মায়া জন্মানো কম্পিউটারগুলো ছাড়তে চাইল না। তারপর তাদের পুরাতন কম্পিউটারগুলো সরিয়ে দিলাম এখন তারা আবার অন্য কাজ করা শুরু করল। যে তিনটি কম্পিউটার নিরাপত্তার কারণে বহাল রেখেছিলাম সে তিনটি কম্পিউটারে পেন-ড্রাইভ ব্যবহার করে নিজেদের কাজ কর্ম চালু করল। কেউই আর নেটওয়ার্কের ওয়ার্ক স্টেশন ব্যবহার করছে না। আমি আবার মহাসংকট ও মহাফাপরে পড়লাম। তাদের কাছে নেটওয়ার্ক কম্পিউটারগুলো ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলাম। তারা আমাকে কিছু সমস্যার কথা বলল, আমি সরবরাহকারীকে সমস্যাগুলো সমাধার করতে বললাম। সমস্যাগুলোর প্রায় সবই ছিল বাংলা টাইপিং ও সফটওয়্যার নিয়ে। তাদের সমস্যাগুলো এক এক করে সমাধান করলাম। মন খারাপ করে আমার ১২ জন সহকারী আস্তে আস্তে ব্যবহার শুরু করল। নেটওয়ার্ক ব্যবহার শুরু করার দ্বিতীয় দিন আরেক বিপদে পড়লাম। সার্ভার ভাইরাসে আক্রান্ত। কারণ সমস্ত কম্পিউটারের ডকুমেন্টের ডাটা এক জায়গায় করার কারণে সমস্ত কম্পিউটারের ভাইরাসগুলোও একসাথে হল। তাড়াতাড়ি এন্টি ভাইরাস কিনে সার্ভার কম্পিউটার থেকে ভাইরাস দুর করলাম। এর মধ্যে আরেক সমস্যা হল, কোন একটা সফটওয়্যার সমস্যায় সার্ভার বুটিং নিচ্ছিল না। এ ধরনের সমস্যার জন্য প্রস্তুতি ছিল অর্থাৎ সম্পূর্ণ সার্ভারের ব্যাকআপ ছিল। কিন্তু পুরো সিস্টেমটা চালু করতে দুই ঘণ্টা সময় লাগল। এতে আটজন সহকারীর কাজ বন্ধ। এর মধ্যে দুইজন সহকারীর অত্যন্ত জরুরী ডকুমেন্ট পুনরায় নেটওয়ার্কের বাইরের কম্পিউটার থেকে টাইপ করতে হল। এ অবস্থায় আমি আমার পূর্বে নির্ধারিত ডুয়েল কোর কম্পিউটার বিকল্প সার্ভার হিসাবে তৈরি করে নিলাম। এখন মূল সার্ভারে সমস্যা হলে দ্বিতীয় সার্ভারে লগঅন করেই সহকারীরা কাজ শেষ করতে পারবে।একাধিক সার্ভার করলে ডাটা রাউটারের মাধ্যমে আলাদা ব্যাকআপ রাখা ভাল।
নিয়মিত খেয়াল রাখলে ও সার্ভার কম্পিউটারটি রক্ষণাবেক্ষণ করলে দ্বিতীয় সার্ভারের ব্যবহারের তেমন প্রয়োজনই পরবে না। আমাদের সিস্টেমটি চালু করার প  প্রায় দুইমাস হতে চলল। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সার্ভার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। অপর একটি কম্পিউটার কমপক্ষে ডুয়েল কোর  থাকলে প্রথমটির পাশাপাশি দ্বিতীয় একটি সার্ভার করে নিলে ভাল হবে। কারণ, ইলেক্ট্রনিক্সে কোন বিশ্বাস নেই।
আমি Ncomputing এর ওয়েবসাইট থেকে ডিভাইসটির লাইফ পেয়েছিলাম এক লক্ষ ঘণ্টা যা কিনা প্রতিদিন দশ ঘন্টা ব্যবহারে ২৭ বছরের বেশী সময় ব্যবহার করা যাবে। তবে ২৭ বছর বাদ দিয়ে ১০ বছরও যদি ব্যবহার করা যায় তা হবে বিশাল প্রাপ্তি।

আমরা Thin Client Ncomputing যে কারণে ব্যবহার করব, তা নিচে তুলে ধরলাম:
১. দশটি কম্পিউটারে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে বছরে ৭২,০০০ টাকা আর এতে আপনি গ্রিন হাউস এফেক্ট কমাতে ভূমিকা রাখতে পারেন। সাধারণত এ সিস্টেমে ৯০% এনার্জি সেভিং ধরা যাবে। বিদ্যুৎ খরচ কম হওয়ায় ইউপিএস বা আইপিএস ব্যবহার করে বিদ্যুতের লোডশেডিং এ দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের কাজ চালু রাখা যাবে।  বিদ্যুতের খরচ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিহীন অঞ্চলের স্কুলে সহজেই সৌর শক্তির সাহায্যে কম্পিউটার ল্যাব বা সাইবার ক্যাফে পরিচালনা করা যাবে।
২. সার্ভার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপগ্রেড করলে অন্যান্য সবাই তার সুবিধা পাবে। সকলের জন্য প্রতিটি কম্পিউটারের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে খরচ করতে হবে না। সফটওয়্যার আপগ্রেড ও হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ  ৭৫% খরচ কমে যাবে।
৩. যে কোন ব্যক্তি নেটওয়ার্কের যে কোন ওয়ার্ক স্টেশনে বসে কাজ করতে পারবে তার জন্য নির্দিষ্ট কম্পিউটারে বসার প্রয়োজন পড়ছে না। এতে কোন কম্পিউটার খালী থাকছে না এবং কোন সহকারীর কোন কম্পিউটার শেয়ার করার জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন পরছে না। যখন যে কম্পিউটার খালী তখন সে কম্পিউটারে কাজ করতে পারা যাবে। এতে সম্পদের সবোর্চ্চ ব্যবহার হচ্ছে। কোর আই থ্রি, ফাইভ বা সেভেন ইত্যাদি সার্ভার ব্যবহার করলে কম্পিউটারের সবোর্চ্চ শক্তিকে অনেকগুলি কম্পিউটারের মাধ্যমে কাজে লাগানো যাবে।
৪. অপটিক্যাল ফাইবার ও রেডিও লিংক করে যত খুশী দূরত্বে নেয়া যাবে। এতে শতাধিক কম্পিউটার চালু রাখা যাবে বিদ্যুৎ খরচ কমবে, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অকল্পনীয় ভাবে কমে যাবে। এমনকি সার্ভারটি প্রতিষ্ঠান প্রধান নিজ রুমে রেখে সকলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও তথ্যের নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে।
৫. পেন ড্রাইভের ব্যবহার কমে যাবে। ডকুমেন্ট ভাইরাসে কম আক্রান্ত  হবে। তথ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা যাবে। কারণ সমস্ত ফাইল এক জায়গায় বা ব্যাকআপসহ ক্লাউডে সেইফ করা যাবে।
৬. সার্ভারে ইন্টারনেট দিলে সকলে শেয়ার করতে পারবে। প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা ইন্টারনেট দেয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। খরচ কমে যাবে।

আমি এই সিস্টেমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখা ছাড়া আর কোন অসুবিধা দেখতে পাচ্ছিনা। তবে গোপনীয় ফাইলগুলো আলাদা স্ট্যান্ড এ্যালোন কম্পিউটারে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশেপিসি স্টেশননামে চাইনিজ কার্ড পাওয়া যায় সেগুলোর ব্যবহার কেমন তা আমার জানা নেই। কেউ ব্যবহার করলে নীচে কমেন্টে আমাকে জানাবেন বা মেইল করবেন tareq4202@gmail.com এ ঠিকানায়। আমি যা জানতে পেরেছি চাইনিজ কার্ডগুলো আরো সস্তায় পাওয়া যায়। Ncomputing কার্ড ব্যবহার করার পূর্বে ইউটিউব ও ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে আরো বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। বাংলাদেশের ডিলার থেকে তথ্য নিতে পারেন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট www.globacomm.net থেকে কন্ট্রাক্ট নম্বর থেকে যোগাযোগ করে তাদের সহায়তা নিতে পারেন। স্কুল  কলেজের কম্পিউটার ল্যাবের জন্য অর্থ যোগাড় করে একবার এ ধরনের নেটওয়ার্কিং করা গেলে দীর্ঘমেয়াদি খরচ কমে যাবে। আমার সহকারীরা প্রথম প্রথম সম্যসা দিলেও এখন তারা সিস্টমটি বেশ পছন্দ করছে।  পরিশেষে খরচ সাশ্রয়ের জন্য কারো এ তথ্যগুলো কাজে লাগলে ছুটির দুইদিন ব্যয় করে আমার এ লেখাটি সার্থক হবে।

Saturday, October 25, 2014

আমরাও হতে পারি মননশীল ও মহান মানুষ

আমরাও হতে পারি মননশীল(Intellectual) ও  মহান(Great) মানুষ এ লেখাটি সুত্রপাত হল আমার পড়া একটা মটিভেশনাল বই থেকে।
মাঝে মাঝে লেখকের লেখায় বন্ধত্য আসে। তেমনি বেশ কিছুদিন লিখতে গিয়ে অলসতায় পাচ্ছিল। ল্যাপটপ আর  কীবোর্ড নিয়ে লেখালেখি করতে ইচ্ছে করছিল না। এক সময় মনে হল বাংলা টাইপিং কষ্টকর বলে হয়ত লিখতে ইচ্ছে করছে না। বেশ হয় যদি কাগজে কলম দিয়ে লিখে কোন সহকারীর মাধ্যমে টাইপ করিয়ে নেয়া যাক। তাও ইচ্ছে করছিল না। সেদিন কোর্সমেট লে: কর্নেল তারেক, ইন্ঞ্জিনির্য়াসের মেইলটি পড়ে যা মনে আসে তাই লিখতে বসলাম। যা মনে আসে তাই লিখছি। তাও লিখতে বসি। তারেক, ইন্ঞ্জিনির্য়াসের মেইলটি  নীচে দিলাম:
“For quite sometime the group is maintaining a kind of sobriety. Particularly, missing the hot topics and writing from my friend Tareq Mahmood sarkar. I am sure he can read my mail from Kushtia and will continue exploring his writing skills. 

Even if I don't comment most of the times,  I enjoy these writings.  

As far as I can remember Akbar was talking about a G2G on 9 January 2015. I am not sure whether he still holds the same spirit. 

Tarek, Engrs”

বন্ধু তারেক,আমরা কেউ যদি প্রতিদিন সকালে ৫০০ ওয়ার্ড লিখি তাহলে বছর শেষে একটি বই লেখা হয়ে যাবে। প্রতিদিন লেখা এটা একটা শক্ত অভ্যাস অনেকটা নিয়মিত পিটিতে যাওয়ার মত। আর সকালে উঠে পিটিতে যাওয়ার সময় মনে পড়ে বিখ্যাত বানী
 “Early to rise and early to bed makes a man healthy , wealthy and wise”  
তবে এ কোটেশানটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে ঠিক নেই ।
সকালে উঠলে শরীর ভাল থাকে এটা সন্দেহ নেই। তবে সকালে না উঠে যারা বিকালে জিম করে তারাও তাদের স্বাস্হ্য ভাল রাখতে পারে। সকালে উঠলে বিদ্ধান হওয়া যায় এ কথাটাও ঠিক না। এখনকার বিদ্বানরা নিয়মিত রাত জেগে পড়াশোনা করে আর সকালে ঘুমায়। সেনানিবাসে পিটির আগে ঝাড়ু দেয় এনসিই পার্টি তারাই সবচেয়ে আগে উঠে অথচ তারা চতুর্থ শ্রেনী। আর সফল ব্যক্তিরা যাদের আর্থিক ও সামাজিক স্ট্যাটাস ভাল তাদের কিন্তু ঝাড়ুদারদের মত অত সকালে ঊঠতে হয় না।
দেখা যাচ্ছে, সকালে ঘুম থেকে উঠার সাথে স্বাস্থ্য, অর্থ ও বিদ্বান হওয়ার কোন যোগসূত্র নেই। এটা আবিষ্কার করার পর আমি আমার সন্তানদের আমার বাবার মত সকালে উঠার জন্য আর চাপ দেই না। তবে নামাজের জন্য সকালে উঠা পুনরায় ঘুমিয়ে নেয়া এটা আমাদের অনেকের অভ্যাসে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সকালে উঠার অভ্যাস ধরে রাখার চেস্টা করছি কারন সকালে উঠলে মনটা ফুরফুরে থাকে। আর সকালে হাটাহাটি করে আসলে শরীরের অনুভুতি গুলো চাংগা থাকে এবং খিটমিটে মেজাজ হয় না।
আমার বয়ষী ক্যাডেট কলেজের বন্ধুরা বা সেনা বন্ধুরা আমাদের অধিকাংশের বর্তমান আর্থিক অবস্থানে মাসিক আয় ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে। হয়তবা দুই একজনের আরো বেশী হতে পারে(প্রবাসী ব্যতীত)। বয়ষ ৪২ হতে ৪৫ এর মধ্যে। আমাদেরই একজন সেনা অফিসারের কাছ থেকে আমি অনেকটা কৌতুকচ্ছলে জানতে পারি সেনা অফিসারদের “স্ট্যাটাসগত” শ্রেনী বিভাগ আছে। এর কোন না কোনটির মধ্যে আমাদের অবস্থান রয়েছে বা ভবিষতও থাকবে।
১। ভিআইপি মেজর (শরীরের ভিন্ন অংশের চুল সফেদ হওয়া অভিজ্ঞ মেজর)
২। আইপি অফিসার ( লে: কর্নেল/নন ভিআইপি)
৩। ভিআইপি(কর্নেল)
৪। জেনারেল (বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ও তদউর্ধ্ধ)
তবে ভিআইপি মেজরের আগে আরো কয়েকটি ক্যাটাগরী আছে যা আমরা পার করে এসেছি:
১। সাবালতান(সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট/লেফটেন্যন্ট)
২। জুনিয়ার অফিসার(ক্যাপ্টেন)
৩। জুনিয়ার মেজর (১৩ বছরের নীচে চাকুরী, শরীরের বিভিন্ন অংশের চুল এখনও কৃষ্ঞ বর্ন)
৪।সিনিয়র মেজর (১৩ বছরের উপরে চাকুরী, কমান্ড নেয়ার জন্য অনুশীলনরত এবং উধ্ধর্তন কর্মকর্তার প্রতি অতীব শ্রদ্ধাশীল)।
৫। সুপারসিডেট মেজর বা ভিআইপি মেজর।
যাক গে, এ ধরনের ফানি শ্রেনী বিভাগের বর্ননায় আমি যাচ্ছি না।  এটার আমার পরবর্তী বক্তব্যেও নাই। তবে আমাদের এ বয়সে আমরা নিজেদের মানবীয় গুনাবলীতে  দুইটি ক্যাটাগরীতে নিজেদের তৈরী করে নিতে পারি। এর সাথে ভিআইপি, নন ভিআইপি, কোটিপতি ও লাখপতির কোন ভেদাভেদ নেই। মানবীয় গুনাবলীর ক্যাটাগরীতে দুইটি শ্রেনী রয়েছে একটা সাধারন মানুষ ও অপরটি মননশীল মহান মানুষ। নিজেদের যাচাই করার জন্য আমি ব্রিটিশ লেখক ডেভিড জে শ্বার্টজ এর “The Magic of Thinking Big” অবলম্বনে (কিছুটা সহজীকরন করে উপস্থাপন) নীচের  ছকটি দিলাম:
কার্যক্রম/পরিস্থতি
সাধারণ মানুষ
মননশীল মহান ব্যক্তি
খরচপত্র
খরচ কম করে। আয় বৃদ্ধির পথ খুঁজে।
প্রয়োজনে উদারভাবে খরচ করে। আয়ের উৎস তৈরি করে।
কথাবার্তা বলা
বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিষয়ে  নিন্দা ও সমালোচনা করে।
সর্বদা প্রশংসা ও ভাল কথা বলে উৎসাহিত করে।
প্রগতি
প্রতিষ্ঠান নিয়মতান্ত্রিক পরিচালনায় সতর্ক পদক্ষেপ নেয়।
বিস্তার ও বৃদ্ধিতে আগ্রহী
ভবিষ্যৎ
মনে করে ভবিষ্যতের সম্ভবনা সীমিত
ভবিষ্যৎ অসীম সম্ভাবনাময় মনে করে
কাজ
প্রয়োজনীয় কাজের বাইরে কাজ করতে অনাগ্রহী
কাজের নিত্য নতুন পন্থা ও বিষয় অন্বেষণ করে অন্যদের কাজে সহায়তা করতে আগ্রহী
প্রতিদ্ধন্দিতা
সমসাময়িকদের সাথে ও নিন্মপদের লোকদের সাথে তুলনা /প্রতিদ্ধন্দিতা করে
শ্রেষ্ঠদের সাথে প্রতিদ্ধন্দিতা করে
বাজেটের সমস্যা
প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কম কেনে । সঞ্চয়ের পথ খুঁজে।
প্রয়োজনীয় দব্যাদি উদারভাবে কেনে। আয় বর্ধক কাজ করে।
লক্ষ্য
ছোটখাটো লক্ষ্য স্থির করে
বড় বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করে
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্বল্পকালীন পরিকল্পনা তৈরি করে
দূরদর্শী, দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা করে।
নিরাপত্তা
নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকে
নিরাপত্তাকে সফলতার সঙ্গী মনে করে
সহচর্য
সাধারণ মানুষের সহচর্য চায়
প্রগতিশীল ও বিচক্ষণ সঙ্গীদের সহচর্য চায়
ভুল-ত্রুটি
সামান্যতম ত্রুটিও বড় করে দেখে। অযথা সমস্যা বাড়ায়
অপ্রয়োজনীয় ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করে।

আমরা আমাদের যে কোন আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান থেকেই মহান ও মননশীল হওয়ার অনুশীলন করতে পারি। নিজেকে মহান করার অনুশীলনের জন্য নিচের বিষয়গুলি মনে রাখুন:
১। নিজেকে ঠকাবেন না। নিজেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। নিজের গুনগুলো খুঁজে দেখুন। আপনি নিজে যা মনে করেন আপনি তার চেয়ে বড় মাপের মানুষ। কেউ আপনাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলে আপনার উদারতা ও বিশলতা দিয়ে উত্তর দিন।
২। মননশীল ব্যক্তিদের শব্দাবলী ব্যবহার করুন। প্রশংসাসূচক, উদ্দীপক ও শ্রুতিমধুর শব্দ ব্যবহার করুন। যে শব্দে রয়েছে বিজয়, আশা-অভিলাষ, আনন্দ, খুশির প্রতিশ্রুতি তেমন শব্দ প্রয়োগ করুন। যে সব শব্দে মনে হতাশা, ব্যর্থতা ও দুখের অনুভূতি হয় সেগুলো বর্জন করুন।
৩। দৃষ্টি প্রসারিত করুন, যা আছে শুধু তাই নয়,যা হতে পারে, যা করা সম্ভব, তাও দেখুন। কোন বিষয়ে দক্ষতা পাবেন বিবেচনায় আনুন, কোন কোন মানব সম্পদ কাজে আসবে চিন্তা করুন, নিজের অমুল্য নেতৃত্বকে বিশ্বাস করুন।
৪। আপনার কাজের বৃহত্তর উদ্দেশ্যটা জেনে নিন। বিশ্বাস করুন, আপনার বর্তমান কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বর্তমান কাজের প্রতি আপনার ইতিবাচক মনোভাবই আপনার উন্নতির জন্য প্রয়োজন।
৫। তুচ্ছতা ও ক্ষুদ্রতাকে  উপেক্ষা করতে শিখুন। বড় লক্ষটির দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখুন। তুচ্ছ ব্যাপারে নিজে জড়িয়ে যাওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, এটা কি সত্যি জরুরী?
পরিশেষে বলা যায় বড় মাপের মানুষ হয়ে ওঠার জন্য বড় বড় ভাবনা চিন্তা করুন

বিদেশী মটিভেশনাল বই থেকে ধার করা তথ্য উপস্থাপন করলাম, আমার বড় বড় বন্ধুদের জন্য। যারা দেশ জয়ের পাশাপাশি একসময় বিশ্বজয় করবে। আর আমিও একদিন সাহিত্যকে জয় করব।

Thursday, September 25, 2014

শহরে থাকার আবশ্যকতা

৮০ সালের দিকে প্রাইমারী স্কুলের স্টুডেন্ট থাকতে যখন গ্রামে যেতাম, তখন গ্রামে দুই/তিন দিনের বেশী থাকতে পারতাম না। কারণ গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না। গ্রামে গিয়ে তখন শহরে(কুমিল্লা) আসার জন্য উদগ্রীব থাকতাম। মামারা/চাচারা আরও কিছুদিন থেকে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করত। আমাদের উত্তরটা ছিল বিদ্যুৎ নাই। রাতে ভয় লাগে। ভাল লাগে না। একসময় গ্রামে বিদ্যুৎ আসল। তখন আবার আরেক সমস্যা হয়ে দাঁড়াল বিদ্যুৎ আছে ঠিকই। তা বেশী সময় থাকে না। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যায়। আবার রাস্তাঘাট ঠিক নাই। ক্যাবল টিভি নাই। সাপ্লাই পানি নাই। ঘরবাড়ী পাকা নাই। অত:পর কালের পরিক্রমায় গ্রামে রাস্তাঘাট পাকা হল। ঘরবাড়ী পাকা হল। মোটরে ট্যাংকিতে পানি তুলে টেপের পানি হল। ক্যাবল টিভি আসল। আইপিএস লাগানো গেল। মোবাইল নেটওয়ার্ক আসল। সাথে ইন্টারনেটও পাওয়া যেতে লাগল। আর কি বাকী থাকল?
সাপ্লাই গ্যাস লাইন কোথায়। তারও প্রয়োজন নেই। গ্রামের বাজারে সিলিন্ডার গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। আর কি বাকী থাকল?
অবশ্য আমি কুমিল্লা জেলার ক্যান্টনমেন্টের উপজেলা বুড়িচং এর পাশে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গ্রামের কথা বলছি। যেখানকার অগ্রগতি দেশের অন্যান্য গ্রামীণ অঞ্চল থেকে অগ্রগামী।
গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় বাকী থাকল আর তা হল ভাল স্কুল, শিক্ষিত বন্ধু ও চিকিৎসা। এ তিনটি বিষয় শিক্ষিত মানুষের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাই গ্রামে বেড়াতে যাওয়া যায় কিন্তু স্থায়ীভাবে থাকাটা পছন্দের হবে না।
চিকিৎসা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঠিক মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা পেতে গ্রামে সমস্যা।
এখন আমি আমার একটা পরিস্থিতি বর্ণনা করি। আমি আমার মত একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা অবসর পরবর্তী গ্রামীণ জীবনে থাকার পরিকল্পনা তুলে ধরব। তার আগে আমার পিতার গ্রামীণ জীবন তুলে ধরি। আমার পিতা ১৯৯১ সালে  বিটিএন্ডটি (বর্তমান বিটিসিএল)  এর ইঞ্জিনিয়ার পদ থেকে রিটায়ার করার পর গ্রামে গিয়েছিলেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর গ্রামে ব্যস্ত জীবন কাটিয়েছেন। ২০১৩ সালে স্ট্রোক করার পর ৮১ বছর বয়সে শয্যাশায়ী হয়েছেন। যদি শহরে থাকতেন, তবে ভাল থাকতেন, সে গ্যারান্টি দেয়া যায় না। কারণ শহরের অবস্থানরত তার কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু ৬০/৬৫ বছর বয়সে ডায়াবেটিকসে ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ৮০ বছর বয়সে স্ট্রোকের আগ পর্যন্ত তিনি কোন রকম রোগের সমস্যায় ছিলেন না। সকালে ফজর নামাজের পর তার দিন শুরু হত। টুক টুক করে এক দুই জন লেবার নিয়ে সব্জিবাগান, ফলবাগান, পুকুরের মাছ, হাস-মুরগী, গরু, ছাগল ইত্যাদি নিয়ে তিনি তার ফার্মিং হাউসে ব্যস্ত থাকতেন। কাজ শেষে বিকালে পত্রিকা পড়া আর টিভি দেখার কাজগুলো করতেন। গ্রামের মানুষ ডাক্তার দেখানোর মত তার কাছে আসত বিভিন্ন পরামর্শের জন্য। অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার গ্রামের মানুষের কাছে ছিল একজন সম্মানিত পরামর্শদাতা। গ্রামের মানুষের মাঝে চায়ের দোকান বা উঠোনে আড্ডা দেয়ার একটা অভ্যাস লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আমার বাবা (এম এ মালেক সরকার) বিভিন্ন ফামিংএ এত ব্যস্ত থাকতেন যে আড্ডা মারার সময় ছিল না। তিনি শারীরিকভাবে ছিলেন যথেষ্ট ফিট। একবার হেটে হেটে তিনি আমাকে জমি দেখাচ্ছিলেন। ঘন্টাখানেক হাটার পর আমি সেদিনের মত ফেরত আসতে চাইলাম। তিনি টিপ্পনী কাটলেন, তুমি না মিলিটারি অল্পতে দমলে চলবে? আমি লজ্জা পেয়ে বাকী পথটুকু বিনাবাক্য তার সাথে হাটতে শুরু করলাম। আমার বাবার শহর থেকে গ্রামে যাওয়াটা ছিল আমার জন্য একটা প্রেরণা। আমার বাবা রিটায়ার করার পর ১৯৯১ সালে যখন ঢাকার বাড়ীতে না থেকে গ্রামে যেতে চাইল, আমার সকল ভাইবোন বিরোধিতা করল। আমি আমার বাবার পক্ষে থেকে তাকে উৎসাহ দিলাম। তিনি বললেন, “শহরে থাকলে আমি মসজিদে যাব। পত্রিকা পড়ব । দুইদিন পর ডায়াবেটিস আর ব্লাড প্রেশার হয়ে মারা যাব। অথচ গ্রামের বাড়ী থেকে বেরুলে অন্তত আমার আত্নীয় স্বজনরা সালাম দিবে আর আমার ভালমন্দ কুশলাদি জানতে চাইবে। ঢাকাতে হাজার মানুষের হাজার ব্যস্ততায় এ আন্তরিকতাটুকু কারো কাছে পাব না। সারা জীবন নিজ গ্রামের মানুষ থেকে দূরে থাকলাম শেষ বয়সে অন্তত তাদের পাশে থাকিআমি তাকে শর্ত দিলাম, পেনশনের টাকা খরচ করে গ্রামের বাড়ীতে উন্নায়নমুলক কাজগুলি করবেন। যেমন: পাকা বাড়ী, পাকা বাথরুম, বিদ্যুতের জন্য জেনারেটর ইত্যাদি ইত্যাদি। গ্রামে থাকার সময় ভিলেজ পলিট্রিস্ পাস কাটিয়ে চলবেন। তারপর থেকে আমার বাবা দীর্ঘ ২১ বছর গ্রামে কাটাচ্ছেন। এখন স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হওয়ার পর তাকে যখন ঢাকা বা কুমিল্লায় শহরে থাকতে অনুরোধ করা হয়। তাতে তিনি রাজী নন। তিনি তার পরিবেশে গ্রামেই থাকবেন। আমাদের যেটা করতে হয় অসুস্থ হলেই বাবাকে আর মাকে এ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের সিএমএইচে আনতে হয়। কুমিল্লা সেনানিবাসের পাশে বেসরকারি ময়নামতি হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করে বাড়ীতে পাঠিয়ে তাদের সিএমএইচ, কুমিল্লায় আনার ব্যবস্থা করা যায়। গ্রাম থেকে সিএমএইচে আনতে প্রয়োজন আনুমানিক একঘন্টা সময়। তবে ঢাকার রাস্তায় জ্যামে এর চেয়ে বেশী সময় লাগতে পারে।
আমার বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামে যাওয়ার জন্য আমার জন্য কিছু অপশন রয়েছে। তবে সে পযর্ন্ত বেচে থাকার উপর নির্ভর করছে পরিকল্পনাগুলো। আমার চাকুরী রয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ এখনও ৭ বছর বাকী (এ লেখাটি লিখছি সেপ্টেম্বর ২০১৪) । ৭ বছরে আমার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান হয়তবা ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়বে। যদি তাকে ক্যাডেট কলেজ জাতীয় আবাসিকে দিতে পারি তবে তখন থেকেই গ্রামের জীবনের পরিকল্পনায় যাওয়া যাবে। অন্যথায় কনিষ্ঠ মেয়ে প্রকৌশলী বা ডাক্তারির জন্য আবাসিক ব্যবস্থায় চলে গেলে তখন গ্রামের পথে হাটা যাবে। এখন গ্রামের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে।  জেলা শহরে কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান জাতীয় ব্যবসা করলে শহর ছেড়ে বেশী দুরে গ্রামে গেলে সমস্যায় পড়ব। এগ্রো বেইজড কোন ব্যবসা করলে গ্রামে থাকাটা আরও বেশী কার্যকর হবে। শহরের উপকণ্ঠে থাকলে গ্রামীণ পরিবেশ পাওয়া যাবে। সেইসাথে শহরে দ্রুত যাওয়া যাবে।
তাহলে গ্রামে থাকতে হলে নীচের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হচ্ছে:
১। স্কুলিং।
২। চিকিৎসা ।
৩। শিক্ষিত বন্ধু বান্ধবের অভাব।
এই তিনটি চ্যালেঞ্জই বর্তমানে শহরে বসবাসরত পরে গ্রামে যেতে যায় তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্তদের জন্য এগুলো চ্যালেঞ্জ নয়। এগুলো অতিক্রম করার জন্য যে প্রক্রিয়া করা যেতে পারে সে আলোচনা করা যাক।
প্রথমত: গ্রামের স্কুল থেকে ভাল রেজাল্ট ধারীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। তাই গ্রামে থেকে ভাল ফলাফল সম্ভব নয় কথাটা ঠিক নয়। ইংরেজি ভার্সন আর মিডিয়াম পড়নো সম্ভব নয়। শহরে মাঝে মাঝে যাওয়া আসা করে পড়ানোর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষিত পিতামাতাকে সন্তানদের সরাসরি যত্ন নিতে হবে। অনলাইন ব্যবস্থার সাহায্য নিতে হবে। আর কিছুদিন পর গ্রামেও থ্রিজি ইন্টারনেট চলে আসবে।
দ্বিতীয়ত: চিকিৎসার জন্য নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে এক দুইবার ডাক্তারের কাছে যেতে হলে তার জন্য পরিচ্ছন্ন হাওয়ার নির্মল গ্রামের জীবন প্রযোজ্য নয়। ডায়াবেটিসের কারনে নিয়মিত ইনসুলিন নেয়া পার্টি, ক্যান্সার আক্রান্ত কেমো  ইত্যাদির দলভুক্ত মানুষগুলো গ্রামের জন্য আনফিট। সাধারণ গ্রামের মানুষ সাধারণত রোগ নিয়ে সচেতন নয়। তাই হঠাত করে অসুখে ভুগে ‘আল বিদা’ করে ফেলে। তারা জানতেও পারেনা আসলে কি অসুখে ভুগছিল। তবে বিষয়টা হল মরণশীল মানুষ কোন না কোনভাবে মরবেই। আগে আর পরে। অনেক সময় ক্যান্সারের রোগী নিজের সর্বস্ব শেষ করে আর সন্তানদের সর্বস্ব শেষ করে ফাইনালি যখন ‘আল বিদা’ বলে তখন সুদূর অন্ধকার দিনগুলো পড়ে থাকে উত্তরাধিকারীদের জন্য। মরে গিয়ে মেরে যাচ্ছে সবাইকে। আমরা সবাই এ কামনা করি, যেন আমরা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় না থেকে হুট করে মরে যাই। দীর্ঘ সময় বিছানায় পরে থেকে মৃত্যু কারো কাম্য নয়। সুতরাং নিয়মিত রুগী না হলে গ্রামে থাকা সমস্যা নয়। যে কোন বিপদে আপদে প্রাথমিক ভাবে পল্লী চিকিৎসক গন প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা বড় ডাক্তারদের নির্দেশনা মত দিতে পারবে আর রোগী এ্যাম্বুলেন্সে শহরমুখী হবে। তাই চিকিৎসা হবে না এটা গ্রামে থাকার প্রতিবন্ধকতা নয়। উপজেলায় ডাক্তার থাকায় এখন গ্রামের ২০/২৫ কি:মি: মধ্যে ডাক্তার থাকার সম্ভবনা আছে।
আমাদের সর্বশেষ পয়েন্ট যেটি থাকল আর তা হল শিক্ষিত বন্ধু।
শিক্ষিত বন্ধু: শিক্ষিত বন্ধু কি সর্বদা ভাল হবে। হ্যা বা না। চাকুরী ছাড়ার পর আমার এক বন্ধুকে দেখলাম শহর থেকে কিছু দুরে তার অবস্থান। বন্ধুদের সান্নিধ্য শহরে মাঝে মাঝে আগমন। ক্লাবের টেনিস, ব্রিলিয়ার্ড, সুইমিংপুল ও বন্ধুদের সংগ। ভাল মন্দ খাওয়া দাওয়া করে মনটাকে চার্জ আপ করে পুনরায় শহরের উপকণ্ঠে নিজ ঢেরায় ফিরে আসা। আর মাঝে মাঝে রাজধানীতে গিয়ে বা অন্য শহরে গিয়ে বন্ধুদের গেটটুগেদার করা যায়।
তাহলে গ্রামে পড়াশোনার ব্যবস্থা হল, চিকিৎসা হল এবং শিক্ষিত বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা হল এখন আর গ্রামে থাকতে সমস্যা নাই। আমি যদি আমার অবসর জীবনে গ্রামে থাকার চিন্তা করি তবে তার একটা রূপরেখা হতে পারে এরূপ:
(১) এক থেকে দুই বিঘা জমি থাকবে।
(২) মাস চাষের জন্য ছোট পুকুর থাকবে।
(৩) বিভিন্ন ধরনের ফল বাগান থাকবে।
(৪) বিভিন্ন ধরনের সব্জি বাগান থাকবে।
(৫) বন্যা মুক্ত করার জন্য উঁচু করে দুই তলা বাড়ী। নীচের তলায় গ্যারেজ,ষ্টোর ও সাভেন্টস কোয়ার্টার। দ্বিতীয় তলা দেয়াল দেয়া টিন শেড। টিন শেড করার কারণ রেইন ওয়াটার হারবেস্ট করা এবং খরচ কমানো।
(৬) গরু,ছাগল ও হাস মুরগীর প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণ যথেষ্ট কষ্টকর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ রাখা যায় না তবে ভূমিতে চড়ে বেড়ানো জীবিত প্রাণীর চাষাবাদ আপাতত আমার গ্রামের বাড়ীর পরিকল্পনায় নাই।
(৭) শহরের উপকণ্ঠ গ্রামটি হলে গাড়ী থাকবে। অন্যথায় সে স্থানের চলাচল উপযোগী বাহন থাকবে।
(৮) সোলার সিস্টেমের পাশাপাশি আইপিএস ও জেনারেটর থাকবে। কমপক্ষে দুইটি রুমে এসি থাকবে।
এ হল আমার গ্রামের বাড়ীর একটা প্রাথমিক ধারনা। আমরা এখন শহরগুলোতে ৫০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকায় মধ্যম মানের ছোটোখাটো ফ্লাট ক্রয় করি। আশা করি অনুরূপ টাকায় গ্রামের বাড়ীর এ প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করা যাবে।
এ ধরনের বাড়ী আমার পঞ্চাশোর্ধ বয়সের রিটারমেন্টের পর কি কি চাহিদা পূরণ হবে?
         নির্মল ও মুক্ত বাতাস পাওয়া যাবে
         সুন্দর পরিবেশে সকাল বিকাল হাটা যাবে।
         নিজে উৎপাদিত ফ্রেশ সব্জি ও ফল পাওয়া যাবে। কিছু খাওয়া, কিছু উপহার পাঠানো ও কিছু বিক্রি করা যাবে।
         ফ্রেশ মাছ পুকুর থেকে প্রতিনিয়ত জাল দিয়ে ধরা যাবেএছাড়া বড়শী দিয়েও মাছ ধরা যাবে
         কোলাহল মুক্ত পরিবেশে লেখালেখি করার জন্য পরিবেশটা মন্দ নয়।

সাপ্লাই বিদ্যুৎ, সোলার, ব্যাটারি  ও জেনারেটরের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যু প্রাপ্তি আর তেমন সমস্যা নয়। এ যুগে মনে হয় গ্রাম, শহর আর দেশের দুরত্ব কমে কমে গেছে। ইন্টারনেট আর নেটওর্য়াকের যুগে পৃথিবী একত্রীভূত। গ্রাম আর শহরে থাকাটা নিজ নিজ ভাল লাগা আর খারাপ লাগার অনুভুতি। তবে সাধারন মানুষের পাশে শিক্ষিতরা থাকলে আমারদের গ্রামগুলি আরো এগিয়ে যাবে।