মানুষের জীবনে আর্থিক ব্যবস্থাপনা একটা
বিশাল বিষয়। আমরা স্কুলে ভাল আচার আচরণ সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি। পিতা মাতাকে সন্মান প্রদর্শন
সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি। পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি। ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষা লাভ
করি। ইদানীং আইটি ও ফিজিক্যাল এডুক্যাশন নিয়েও
পড়াশোনা করানো হয়। উন্নত দেশ যৌন শিক্ষা সম্পর্কে শিক্ষা দেয়। কিন্তু শিশুকে বড় একটা
বিষয়ে কোন শিক্ষা দেয়া হয় না। তা হল ফাইনাশিয়াল এডুকেশন। জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে
আমরা অর্থনৈতিক সমস্যায় জড়িয়ে থাকি। ব্যাংকিং ব্যবস্থা, মোবাইল ব্যাংকিং। আয়ের সাথে সংগতি করে ব্যয় করা। কিভাবে অপচয় রোধ করা যায়। কিভাবে ঋণ না করে থাকা যায়। কিভাবে ব্যবসা করা যায়। কিভাবে চাকুরী করা যায়
ও চাকুরী পাওয়া যায়। এ সব বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা পরিকল্পনা করি
না। যদি ঋণ নিতেই হয় তবে কি কি কারণে ঋণ নেয়া যায়। ঋণ নিলে কিভাবে ঋণ পরিশোধ করতে হয়।
মহাজনী ঋণ না নিয়ে কিভাবে সরকারী ঋণ
নেয়া যায়। সরকারী বা ব্যাংক ঋণ নিতে কি কি কাগজ লাগে। তবে আমি ধার নেয়ার বিষয়ে সবাইকে
সর্বদা নিরুতসাহিত করতে হবে। ফাইনানশিয়াল এডুকেশনে মূল পাঠই ঋণ না নিয়ে আর্থিক
ম্যানেজমেন্ট করা।
ছোটবেলা বইয়ে পড়েছিলাম। "গণি মিয়া একজন দরিদ্র কৃষক। তার নিজের জমি নাই। অন্যের জমিতে চাষ করে"। আমি কিন্তু এখনও বুঝতে পারিনা ৫/৬ বছরের বাচ্চাদের এই নেতিবাচক শিক্ষা
দেয়াটার কারণ কি। নিশ্চয়ই এই লেখাটা আমরা এভাবে পড়তে পারতাম। "গণি মিয়াঁ একজন দক্ষ কৃষক। তার পিতার কোন জমি ছিল না। সে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে
চাষ করছে। উন্নত
চাষাবাদ করে গণি মিয়া আজ সফল কৃষক। কৃষির আয় হতে সেও একদিন জমির মালিক হবে ও নিজের জমি চাষ
করবে।" এভাবে ইতিবাচক
পড়াশোনা ও ইতিবাচক চিন্তার মাঝে সফল হওয়ার শক্তি লুকিয়ে আছে।
আমাদের অনেকেরই ধারনা টাকা পয়সা অল্প
বয়সে চিনে ফেললে বা উপর্জনের মজা পেয়ে গেলে আর নাকি পড়াশোনা হবে না। এটা আমাদের দেশের বেশীর
ভাগ মানুষ মনে করেন। অনেক পরিবারই মনে করে ছেলে মেয়েদের টিউশনি করলেও তা পড়াশোনার
জন্য ক্ষতিকর হবে। অপরদিকে অনেকে উন্নত দেশে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা
হোটেলে প্লেট ধোয়া ও অন্যান্য অনেক ধরনের কাজ করে থাকে। কাজকে তারা মর্যাদার সাথে
দেখে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মেয়ে যখন ছুটিতে কোন হোটেলে ওয়েট্রেসের কাজ করেছিল তখন
আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিস তাকে নিরাপত্তা দিতে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি হতে হয়েছিল। প্রেসিডেন্টের মেয়ের নিরাপত্তা
প্রটোকলের মাঝেও মেয়েকে বেতনের বিনিময়ে সাধারণ কাজে প্রেসিডেন্ট মানা করেননি। তাই ছাত্র/ছাত্রীদের কাজ করতে হবে ও জমাতে শিখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে সকল ব্যাংক
স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের ব্যাংকিং চালু করেছে। এতে আমি আমার তিন সন্তানকে
স্কুল ব্যাংক একাউন্ট করে দিয়েছি। এই একাউন্টে তারা তাদের সালামীর টাকা জমা রাখে। মাসে দুই হাজার টাকা তোলা
যায়। দুইবার কার্ড ব্যবহার করা যায়। একাউন্টে মাস ভিত্তিক একটা লাভ দেয়া হয়। এই ধরনের একাউন্ট প্রাথমিক
ভাবে পিতামাতা পরিচালনা করে। ছেলে মেয়ে ১৮ বছরের উপরে হলে তাদের নামে একাউন্টটি স্থানান্তর
করা যায়। এই স্কুল একাউন্টগুলি আমার বাচ্চাদের বেশ গর্বিত করেছে। তারা কার্ড ব্যবহার করে
ছোটখাটো কেনাকাটা করে। তাদেরকে অনলাইন স্টেটমেন্ট দেখাই। এটা হল পারিবারিক ভাবে
শিক্ষা। কিন্তু যেটা প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সেটাই আমরা দিতে পারি না। স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী হতে
ব্যাংকিং এর মধ্যে অবশ্যই বাচ্চাদের আনা প্রয়োজন। বাচ্চাদের একাউন্টে পিতামাতা
টাকা জমা করবেন। বাচ্চারা কার্ডের মাধ্যমে বা চেকের মাধ্যমে তাদের একাউন্ট
থেকে বেতন ও অন্যান্য বিষয়াদি পরিশোধ করলে বাচ্চারা ছোট বয়স থেকে ফরমাল ব্যাংকিং শিখে
যাবে। তারপর তাদের শিখানোর জন্য প্রয়োজন হবে ব্যক্তিগত বাজেট পরিকল্পনা। বিভিন্ন মাধ্যমে বিনিয়োগ। সঞ্চয় অভ্যাস গড়ে তোলা। গাড়ী, বাড়ী ও অন্যান্য সম্পত্তি যা ক্রমান্বয়ে দাম কমে বা ডেপ্রিসিয়েট
হয় সে সব ধার না করা। বরং ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে ভোগ্য পণ্য অর্জন করতে হবে। এভাবে আমরা যদি ছোট বয়স
থেকে ছোটদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার মাঝে তৈরি করে নিতে পারি তবে তারা ধার মুক্ত জীবন
যাপন করে স্বাবালম্বী হবে। তবে ধার তখনই করবে যখন ধারের বিপরীতে যথেস্ট ইনকাম আসবে
যা দ্বারা অল্প দিনেই সুদে আসলে ধারের টাকা পরিশোধ করা যায়। পরিশেষে আর্থিক শিক্ষা
দেয়ার জন্য ঘরে ঘরে পিতামাতারা সচেতন হবেন ও স্কুল গুলোতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা চালু
হবে এই আশা আমাদের সকলের থাকবে।