Pages

Thursday, January 25, 2018

শিশুদের আর্থিক শিক্ষা

মানুষের জীবনে আর্থিক ব্যবস্থাপনা একটা বিশাল বিষয় আমরা স্কুলে ভাল আচার আচরণ সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি পিতা মাতাকে সন্মান প্রদর্শন সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করি ইদানীং আইটি ও ফিজিক্যাল এডুক্যাশন নিয়েও পড়াশোনা করানো হয় উন্নত দেশ যৌন শিক্ষা সম্পর্কে  শিক্ষা দেয় কিন্তু শিশুকে বড় একটা বিষয়ে কোন শিক্ষা দেয়া হয় না তা হল ফাইনাশিয়াল এডুকেশন জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে আমরা অর্থনৈতিক সমস্যায় জড়িয়ে থাকি ব্যাংকিং ব্যবস্থা, মোবাইল ব্যাংকিং আয়ের সাথে সংগতি করে ব্যয় করা কিভাবে অপচয় রোধ করা যায় কিভাবে ঋণ না করে  থাকা যায় কিভাবে ব্যবসা করা যায় কিভাবে চাকুরী করা যায় ও চাকুরী পাওয়া যায় এ সব বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আমরা পরিকল্পনা করি না যদি ঋণ নিতেই হয় তবে কি কি কারণে ঋণ নেয়া যায় ঋণ নিলে কিভাবে ঋণ পরিশোধ করতে হয়
মহাজনী ঋণ না নিয়ে কিভাবে সরকারী ঋণ নেয়া যায় সরকারী বা ব্যাংক ঋণ নিতে কি কি কাগজ লাগে তবে আমি  ধার নেয়ার বিষয়ে সবাইকে সর্বদা নিরুতসাহিত করতে হবে ফাইনানশিয়াল এডুকেশনে মূল পাঠইঋণ না নিয়ে আর্থিক ম্যানেজমেন্ট করা
ছোটবেলা বইয়ে পড়েছিলাম "গণি মিয়া একজন দরিদ্র কৃষক তার নিজের জমি নাই অন্যের জমিতে চাষ করে" আমি কিন্তু এখনও বুঝতে পারিনা ৫/৬ বছরের বাচ্চাদের এই নেতিবাচক শিক্ষা দেয়াটার কারণ কি নিশ্চয়ই এই লেখাটা আমরা এভাবে পড়তে পারতাম "গণি মিয়াঁ একজন দক্ষ কৃষক তার পিতার  কোন জমি ছিল না সে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছেউন্নত চাষাবাদ করে গণি মিয়া আজ সফল কৃষক কৃষির আয় হতে সেও একদিন জমির মালিক হবে ও নিজের জমি চাষ করবে" এভাবে ইতিবাচক পড়াশোনা ও ইতিবাচক চিন্তার মাঝে সফল হওয়ার শক্তি লুকিয়ে আছে
আমাদের অনেকেরই ধারনা টাকা পয়সা অল্প বয়সে চিনে ফেললে বা উপর্জনের মজা পেয়ে গেলে আর নাকি পড়াশোনা হবে না এটা আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষ মনে করেন অনেক পরিবারই মনে করে ছেলে মেয়েদের টিউশনি করলেও তা পড়াশোনার জন্য ক্ষতিকর হবে অপরদিকে অনেকে উন্নত দেশে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা হোটেলে প্লেট ধোয়া ও অন্যান্য অনেক ধরনের কাজ করে থাকে কাজকে তারা মর্যাদার সাথে দেখে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মেয়ে যখন ছুটিতে কোন হোটেলে ওয়েট্রেসের কাজ করেছিল তখন আমেরিকার সিক্রেট সার্ভিস তাকে নিরাপত্তা দিতে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি হতে হয়েছিল প্রেসিডেন্টের মেয়ের নিরাপত্তা প্রটোকলের মাঝেও মেয়েকে বেতনের বিনিময়ে সাধারণ কাজে প্রেসিডেন্ট মানা করেননি তাই ছাত্র/ছাত্রীদের কাজ করতে হবে ও জমাতে শিখতে হবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে সকল ব্যাংক স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের ব্যাংকিং চালু করেছে এতে আমি আমার তিন সন্তানকে স্কুল ব্যাংক একাউন্ট করে দিয়েছি এই একাউন্টে তারা তাদের সালামীর টাকা জমা রাখে মাসে দুই হাজার টাকা তোলা যায় দুইবার কার্ড ব্যবহার করা যায় একাউন্টে মাস ভিত্তিক একটা লাভ দেয়া হয় এই ধরনের একাউন্ট প্রাথমিক ভাবে পিতামাতা পরিচালনা করে ছেলে মেয়ে ১৮ বছরের উপরে হলে তাদের নামে একাউন্টটি স্থানান্তর করা যায় এই স্কুল একাউন্টগুলি আমার বাচ্চাদের বেশ গর্বিত করেছে তারা কার্ড ব্যবহার করে ছোটখাটো কেনাকাটা করে তাদেরকে অনলাইন স্টেটমেন্ট দেখাই এটা হল পারিবারিক ভাবে শিক্ষা কিন্তু যেটা প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সেটাই আমরা দিতে পারি না স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী হতে ব্যাংকিং এর মধ্যে অবশ্যই বাচ্চাদের আনা প্রয়োজন বাচ্চাদের একাউন্টে পিতামাতা টাকা জমা করবেন বাচ্চারা কার্ডের মাধ্যমে বা চেকের মাধ্যমে তাদের একাউন্ট থেকে বেতন ও অন্যান্য বিষয়াদি পরিশোধ করলে বাচ্চারা ছোট বয়স থেকে ফরমাল ব্যাংকিং শিখে যাবে তারপর তাদের শিখানোর জন্য প্রয়োজন হবে ব্যক্তিগত বাজেট পরিকল্পনা বিভিন্ন মাধ্যমে বিনিয়োগ সঞ্চয় অভ্যাস গড়ে তোলা গাড়ী, বাড়ী ও অন্যান্য সম্পত্তি যা ক্রমান্বয়ে দাম কমে বা ডেপ্রিসিয়েট হয় সে সব ধার না করা বরং ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে ভোগ্য পণ্য অর্জন করতে হবে এভাবে আমরা যদি ছোট বয়স থেকে ছোটদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার মাঝে তৈরি করে নিতে পারি তবে তারা ধার মুক্ত জীবন যাপন করে স্বাবালম্বী হবে তবে ধার তখনই করবে যখন ধারের বিপরীতে যথেস্ট ইনকাম আসবে যা দ্বারা অল্প দিনেই সুদে আসলে ধারের টাকা পরিশোধ করা যায় পরিশেষে আর্থিক শিক্ষা দেয়ার জন্য ঘরে ঘরে পিতামাতারা সচেতন হবেন ও স্কুল গুলোতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা চালু হবে এই আশা আমাদের সকলের থাকবে

Thursday, January 18, 2018

পিতামাতার মতামত ও সন্তানদের ভিন্নমত

আমি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে তখনই বাবা মা আমাদের ভাই বোনদের কে কি করবে ও কিসে পড়াতে চান তার একটা গাইড লাইন তুলে ধরেন। আমরা বাবা মার গাইড লাইন পেয়ে একটা গোল সেটিং করে ফেলি। যেমন বাবা বললেন তুমি খেলনাপাতি ও অন্য যন্ত্রপাতি ভাংগাভাংগি কর। তুমি ইঞ্জিনিয়ার হও। ভাল করে পড়। যেন সাইন্স পাও। বাবা বরিশাল বদলী হলেন। তখন বললেন, বরিশাল ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হও। ভাল রেজাল্ট করতে পারবে ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া সহজ হবে। গেলাম ক্যাডেট কলেজে। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর বাবা বললেন আর্মিতে যাও। আমি বললাম, এটা কি বলছেন। আমি তো ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। বাবা বললেন আর্মিও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায়। ওখানে পড়। সপ্তাহ কাল নিজের মনের সাথে বোঝাপড়া করে আইএসএসবিতে গেলাম। বাবার ইচ্ছেই জীবনটা পরিচালিত করেছি। সফলতা বিফলতার হিসাব করিনি। আজ বাবা হয়ে যখন ছেলেমেয়ের পছন্দের কাছে হার মানি, তখন মনে হয় আমি যখন সন্তান ছিলাম তখন বাবার পছন্দের কাছ হার মেনেছিলাম। যখন বাবা হলাম তখন সন্তানদের পছন্দের কাছে হার মানি। আমার স্ত্রী আমাকে বলে তুমি আসলে হারু পার্টি। এই  হারু পার্টির আর একটা গল্প বলি। একজন সহকর্মী জানতে চাইল শান্তি রক্ষী মিশনে যাচ্ছি  অমুক স্কুলে বাচ্চা ভর্তি  করতে চাচ্ছি। অধ্যক্ষ ভর্তির বিষয়ে কোন সহযোগীতা করছে না। আমি জানতে চাইলাম পরিবার কোথায় বাসা ভাড়া করবে। তিনি যে লোকেশান বললেন তার থেকে যে স্কুলের নাম বলেছেন তার দূরত্ব বেশী। তাকে বাড়ীর কাছে স্কুলে বাচ্চাদের ভর্তি করতে বললাম। তিনি বললেন ছেলে মেয়েদের বুঝিয়েছি তারা রাজী না। তাহলে একটা কাজ করুন আপনার প্রস্তাবিত স্কুলের পাশে বাড়ী ভাড়া নিন। ভাড়া বেশী হলেও বাচ্চারা হেটে স্কুলে যেতে পারবে। ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে পড়বে না। সময় বেচে যাবে। তিনি তখন বললেন, স্ত্রী তার আত্মীয়দের নিকটে থাকবেন। এ প্রস্তাবে স্ত্রী রাজি নয়। আর এই  হল হারু পার্টিদের গল্প। আমাদের মত অনেক হারু পার্টি  আছে। আবার অনেক সফলও আছেন। আমি আমার সন্তানদের জন্য যা আশা করলাম তা তার পছন্দ যে সব সময় মিলাতে পারব তা নয়। বরং আমাদের তাদের পছন্দে যেতে হচ্ছে। আমার পছন্দ চাপিয়ে দিতে পারি। তাতে যে আন্দোলন হবে। তাও সামাল দেয়া যাবে। তবে সামলাসামলি থেকে মজার বিষয় হল নীতি নৈতিকতা ত্যাগ না করে সন্তানরা নতুন কোন ভেঞ্চার করতে চায় তবে করুক না। একবার এক বন্ধু বলল, তার ছেলে আড়াই লাখ টাকা খরচ করে বেসরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে বলল, সে যে সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছে তা তার পছন্দ নয়। অন্য সাবজেক্টে পড়বে। সুতরাং লস হলে আগে হওয়াই ভাল। আমি মাঝে মাঝে আমার সন্তানদের তাদের ফিউচার গোল সেটিং নিয়ে আলোচনা করি। তারা অনেক বেশী পর্যবেক্ষণ করে। তারা নিশ্চিত নয় তারা কি গোল সেটিং করবে। আমিও তাদের চিন্তার ম্যাচিউরিটির জন্য অপেক্ষা করছি।  তবে তারা সাইন্সে পড়বে এটা নিশ্চিত করেছে। একবার ভাবলাম  সন্তানদের সাথে ফাইনালসিয়াল গোল সেটিং নিয়ে কথা বলি। একদিন রাতে ডিনারে সন্তানদের কাছে জানতে চাইলাম, ২০১৭ সালে শেষে ৪৭ বছর বয়সে আমি যদি প্রাইভেট জেট কেনার স্বপ্ন দেখি, এটা কি বেশী হয়ে যাবে। ইন্টারমিডিয়েট পড়া বড় ছেলে বলল, তোমাকে এখনই পরিকল্পনা করে ফাইনানসিয়াল গ্রোথ শুরু করতে হবে। বড় ছেলের এই  সম্মতিতে আমি তার চিন্তার গভীরতা ও গোল সেটিং এর অসীম লক্ষ্যকে অনুধাবন করলাম। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া  ছোট ছেলে বলল, পাপা অনেক দেরী করে ফেলেছ। ক্লাস ওয়ানে পড়া মেয়ে বলল, তুমি একটা ফানি পাপা, গাড়ীই কিনতে পারছ না, আবার প্রাইভেট জেট।
সন্তানরা আমাদের ইচ্ছেয় চলবে না। তাদের চিন্তার জগতটা থেকে জানতে হবে আসলে তারা জীবন সম্পর্কে  কি ভাবে। কোনটায় তাদের আগ্রহ আছে। ফাইনানশিয়াল গ্রোথ তারা কিভাবে করতে চায়। ইথিকাল ও মরাল ভেলু কিভাবে তারা ইনকর্পোরেট করবে। ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের এখনকার স্মার্ট বাচ্চাদের গোল সেটিং ও ফাইনানশিয়াল গ্রোথ তাদের উপরই ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের কাজ হল গাইডিং ও মেন্টরিং।

এখনকার বাবাদের চাইল্ড সাইকোলজী সম্পর্কে জানতে হবে। অনেকে বলবেন ধর্মীয় অনুশাসনে নিয়ে আসুন সব ঠিক হয়ে যাবে। বাবার কথা পই পই করে শুনবে। কথা শোনা আর অন্তরে অনুধাবন করে কাজ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য। অল্প বয়সে প্রেম পিরীতি থেকে অন্য কোন ক্রিয়েটিভ কাজ করা ভাল ও সেভাবে বাবা মা সন্তানদের গাইড করতে পারে। ধর্মীয় অনুশাসন মান্যের বিষয়ে তাদের ভাবনা চিন্তায় ধর্মীয় কল্যাণকর দিক তুলে ধরে অনুপ্রাণিত করা যায়। বন্ধুদের সাথে অপরিকল্পিত সময় কাটানো থেকে অন্য কোন ভাল মুভি, আলোচনা ও ঞ্জান অর্জন উত্তম হতে পারে। প্রতিটি মূহুর্ত যেন নিজের মানবীয় ও দক্ষতার উন্নয়নে ব্যয় করা যায় তা তাদের অনুধাবন করাতে হবে। সবচেয়ে বড় হল আমরা বাবা ও মা,রা নীতি ও নৈতিকতার ঞ্জানে ও অনুশীলনে থাকতে হবে যেন সন্তানরা আমাদের অনুসরণ করতে পারে। নবীন প্রবীণের দ্বন্ধ চিরকাল ছিল। আগামীতে থাকবে। এটা কমানোর উপায় হল আমাদের নিজস্ব ধ্যান ঞ্জানে সীমাবদ্ধ না থেকে নতুন নতুন ধারনা ও ঞ্জান আমাদের অর্জন করতে হবে ও তার জন্য সময় দিতে হবে। আমাদের বাবা মা নির্দেশ দিয়েছে আমরা পালন করেছি । এখন বাবা হিসাবে হারু পার্টি না হওয়ার বুদ্ধি হল সন্তানরা তাদের পছন্দের প্রফেশন নির্ধারণ করবে আর আমরা তাদের সে প্রফেশনে সফলতা করার জন্য সহযোগীতা ও মেন্টরিং করব।  আমার এক বন্ধু বলেছিল পরীক্ষা দেয় বাচ্চা পড়তে হয় আমার। তাই কষ্ট করে সন্তানদের পছন্দ করা বিষয়ে আমাদের আরো পড়তে হবে ও জানতে হবে। এতে আমরা হারু বাবারা সফল বাবা হতে পারব।

Thursday, January 11, 2018

চাকুরী শেষে কি করব?

মান্যবর প্রফেসর ইউনুসের একটি লেখনীতে পেয়েছিলাম, চাকুরী  মানুষকে একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীতে বেধে রাখে। তাহলে সম্পদ বাড়াতে হলে ও আর্থিক মুক্তি পেতে হলে চাকুরীতে আবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাহলে চাকুরী হতে বের হতে গেলে কেন এত চিন্তা। আমি ঢাকার বাইরে দীর্ঘ ২৭ বছর  চাকুরী করে ঢাকায় বদলী এসে আমার অনেক বন্ধু কারো সাথে ৫ বছর এবং অনেকের সাথে ১০ বছর পর দেখা। তাদের সকলের একটা কমন প্রশ্ন এরা বেশীর ভাগই মেজর ও লে: কর্নেল র‍্যাংকের । রিটায়ারমেন্টের পর কি করবি। কারণ সেনাবাহিনীতে মেজর র‍্যাংকে ৫০ বছর ও লে কর্নেল র‍্যাংকে ৫১ বছরে রিটায়ার্ড করতে হয়। যখন অন্যান্য সকল চাকুরীজীবীরা ৫৯ বছর ও প্রফেসররা ৬৫ বছর বয়সে রিটায়ার করে। এটা অনেকের জন্য অনেক অনেক চিন্তার কারণ হলেও আমি এর মধ্যে চিন্তার কোন কারণ দেখছিনা। এর মধ্যে আমি সুযোগ দেখতে পাই। মুক্তি দেখতে পাই। পঞ্চাশ বছর বয়সে দেশের ভিতরে বাইরে একটা সেনা সদস্যের অনেক অনেক অভিঞ্জতা হয়। এই  সময় সে সমাজের অনেক অনেক কাজ করতে পারে। আমি একদিন একজন সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সাথে পেনশন বিষয়ক আলোচনা করছিলাম। আমি বললাম, এখন পুরো পেনসন বিক্রি  করতে সরকার দিচ্ছে না। অবিক্রীত পেনসনের আবার প্রতি বছর ৫% করে বাড়বে। এটা খুব ভাল দিক। চক্র বৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকলে আজকে দশ হাজার টাকা পেনশন পেলে তা বিশ হাজার টাকা হয়ে যাবে দশ বছর পর। তার দশ বছর পর অর্থাৎ ২০ হাজারের দ্বিগুণ ৪০ হাজার টাকা হচ্ছে। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে ২০ বছরে চল্লিশ হাজার টাকা হয়ে যাচ্ছে। অবশ্যই লাভজনক। কর্মকর্তাটি বলল আপনারা ৫০ বছরে রিটায়ার করছেন আপনাদের জন্য উপকারী। আমরা যারা ৫৯ তাদের জন্য ভাল নয়। তার চেয়ে এককালীন বিক্রি করলে বেশী লাভ হত। আমি  এখানে দমে গেলাম। আমরা সেনা মেজররা ৫০ বছর বয়সে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ার চাপ নিয়ে রিটায়ার করছি। আর ৫৯ বছরে যে রিটায়ার করছে সে বলছে, ৫০ বছরে রিটায়ার করে আমরা নাকি লাভবান। আসলে লাভ ক্ষতির বিশ্লেষণ হল নিজের বিবেচনায় ও পারিবারিক চাহিদার উপর। আমার আশে পাশের অনেক অবসর প্রাপ্ত মেজর বা লে: কর্নেলের সাক্ষাত পাই। তারা বেশীর ভাগই কোন না কোন কাজ নিয়ে আছে। বেতন ৫০ হাজার হতে ৫০০ হাজার পর্যন্ত। এখানে চাকুরীর বেতনের একটা বিশাল ভেরিয়েশন চোখে পড়ল। বাইরের চাকুরীতে ব্যক্তিগত ডিগ্রি হতে যোগাযোগ অনেক বেশী ভূমিকা রাখছে। তাই সেলারী দিয়ে বিচার করাটা একটু জটিল। ঢাকা ইউনিভার্সিটির এমবিএ নিয়ে অনেকে যে বেতনে চাকুরী করছে তার চেয়ে অনুন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ নিয়ে তার চেয়ে বেশী বেতনে চাকুরী করছে। তাই জানা শোনা ও নেটওয়ার্কটাই বেশী ইম্পরট্যান্ট। মাঝে মাঝে আমার গ্রাম থেকে জানাশোনার মধ্যে অনেকে জানতে চায় চাকুরী দিতে পারব কিনা। তখন আমি নিজে নিজে হাসি। কয়েকদিন পর আমাকেই চাকুরীর প্রার্থী হতে হবে। আমাকে এমবিএর ছাত্র হতে হবে। নাহলে ভাল বেতনের চাকুরী পাওয়া যাবে না। মাঝে মাঝে চিন্তা হয়। ব্যবসায়ী মালিক কোন ছোকড়া ছেলেকে “স্যার বলে তার খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করব। সেই ছোকড়া বুক ফুলিয়ে বলবে বড় বড় অবসর প্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমার বেতন ভুক্ত কর্মচারী। ৫৯ ও ৬৫ বছরের অবসরপ্রাপ্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা এই  সমস্যার মধ্যে নাই। কারণ ওই  বয়সে তাদের সেকেন্ড ক্যারিয়ার করার প্রয়োজন পড়ে না।  যারা এই সমস্যায় আছে তারা হল ৫০ বা ৫১ বছরের রিটায়ার্ড পার্টি। সব কিছুর ভাল দিক আছে। মন্দ দিক আছে। ভাল দিক হল ৫০ বছর বয়সে কিছু কিছু ব্যবসা শুরু করা যায়।  মনের অনেক আকুতি থাকে নিজের গ্রামে কিছু করা। সে কাজগুলো করা যায়।

আমার বন্ধুদের সাথে আলোচনায় একটা বিষয় আসে তা হল প্রথমে পরিবারকে আর্থিক ভাবে নিরাপদ করা। যাদের নিজ, পৈত্রিক  বাড়ী নাই এই  সময় আর করা যাবে না। পেনসনের মাসিক টাকা ব্যয় করতে হবে বাড়ী ভাড়া, ফ্লাটে থাকলে নিরাপত্তা, জেনারেটর অন্যান্য খরচাদির জন্য। পেনশন যেহেতু প্রতিবছর ৫% হারে বাড়বে তাই বাড়ী বৃদ্ধির সাথে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। পেনশনের টাকা থেকে আরও কিছু টাকা বাড়লে তখন তা জমানো যেতে পারে। পেনশন থেকে প্রাপ্ত এককালীন টাকায় সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোন পন্থায় বিনিয়োগ করে মাসিক খরচ বের করা যাবে। গাড়ী আগে থেকে না থাকলে নতুনভাবে কেনার প্রয়োজন নেই। পেনশনের মাসিক টাকা ও পেনশনের এককালীন টাকা বিনিয়োগ করে পরিবারকে নিরাপদ করে নিন। এবার চলুন জীবন যুদ্ধে নামি। আপনার পেনশন ব্যতীত অন্য কোন টাকা সঞ্চয় থাকলে তা দিয়ে শুরু করি। বাপের জমি থাকলে এগ্রো প্রোডাক্ট করা যেতে পারে। পুকুর থাকলে মাছ চাষ করা যায়। কোন কোম্পানী করা যায়। কোন চাকুরী করা যায়। এখানে অনেকে চিন্তা করতে পারে অনেকে অনেক টাকায় চাকুরী করছে। আমি অল্প টাকায় চাকুরী করব। এটা এই হিসাবে গেলে হবে না। চাকুরী বা কাজ প্রয়োজন হবে নিজের আয়ুটাকে বাড়ানোর জন্য। ভাল না লাগলে সেটা জীবনের পোস্টিং এর মত বদল করলে হবে। আমার বাবা রিটায়ার্ডমেন্টের পরে গ্রামে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শুধুমাত্র এগ্রো প্রোডাক্টে কাজ করে ৫৭ বছর বয়স থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত সুস্থ ছিলেন শুধু বাগান করে। ৮০ বছর পর থেকে ২০১৭ সালে ৮৪ বছর পর্যন্ত ৪ বছর তিনি স্ট্রোক করে ডান হাত অবশ আর খুড়িয়ে হাঁটেন। এছাড়া অন্য কোন অসুখ নেই। বাবার অন্যান্য শহুরের ইঞ্জিনিয়ার কলিগরা ৬৫ হতে ক্রমান্বয়ে ৭৫ বছরের মধ্যে বিধাতার দরবারে চলে গেছে। তাই অবসর জীবনে সহনীয় পরিমাণে কায়িক পরিশ্রমের কাজ না করলে অতি তাড়াতাড়ি বিধাতার সাক্ষাত লাভের সৌভাগ্য মিলবে। পেনশনের পর মাসিক টাকা আর এককালীন টাকা বিনিয়োগ করে বাচা যাবে। তবে নিজেকে বাচাতে কয়েকটি অভ্যাস করতে হবে। হাটাহাটি ও ব্যায়াম। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ। প্রয়োজনে নিজে বাজারে যাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়লে আরো ভাল। সমাজের মানুষদের জন্য কিছু করা। পড়াশোনা করা। লেখালেখি বা ক্রিয়েটিভ কিছু করা। নিজেকে বিতর্ক, ধান্ধাবাজি ও অসৎ জীবন যাপন থেকে দুরে রাখা। গঠন মূলক বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সমাজে অবদান রাখা যেতে পারে। পরিশেষে বলব রিটায়ার্ড শব্দটা আসলে সৈনিক জীবনের জন্য প্রযোজ্য নয়। সৈনিক যুদ্ধে ধ্বংস হয় কিন্তু পরাজয় বরন করে না। আর একটি বিষয় কিছু রোজগার আসুক বা না আসুক কোন ব্যবসা বা চাকুরীতে/ স্বেচ্ছাশ্রমে নিয়োজিত থাকলে দীর্ঘ আয়ু পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ আমরা তা আশা করতে পরি।

Thursday, January 4, 2018

মোবাইল ফোনের ফ্যাক্টরি রিসেট

আমরা যারা‌ আর্থিকভাবে মধ্যবিত্ত আছি তা‌দের মোবাইল ফোন গুলি সাধারণত ১০ হাজার হ‌তে ২৫ হাজার টাকা দামের মধ্যে হ‌য়ে থা‌কে। এই  দামের মোবাইল গু‌লো সাধারণত ছয় মাস এক বছর পর ইন্টারনেট ও অন্যান্য সফটওয়্যার ব্যবহার কর‌তে কর‌তে স্লো হ‌য়ে যায়। মাঝে মাঝে টাচ স্ক্রিন এত স্লো কাজ ক‌রে তখন খুবই বিরক্তিকর হ‌য়ে দাড়ায়। তখন মনে হয় মোবাইল‌টি বাতিল হ‌য়ে গেল। আর এক‌টি কিনতে হবে কিনা। মোবাইল ফোন বেশীর ভাগ লোকজনই সাধারণত দুই/তিন বছরের মধ্যে বদল ক‌রে। এটা নয় যে মোবাইল কাজের অনুপ‌যোগী থাকল। বরং রুচির পরিবর্তন। নিত্য নতুন প্রযুক্তির আগমন। ইত্যাদি কারণে অনেকেই মডেল পরিবর্তন ক‌রে থাকেন। আমা‌কে একজন বলল, একটা বিষয় কি খেয়াল করেছেন। আপনাকে মোবাইল ফোন দুই বছর পর পর কিনতে হবে। কারণ ‌মোবাইল কোম্পানী এমন সিস্টেম করেছে দেড়/দুই বছর ভাল চলার পর স্মার্ট ফোনগু‌লি স্লো‌ হ‌য়ে যায়। ম‌নমতো ব্যবহার করা যায় না। আমি তা‌কে বললাম ফ্যাক্টরি রিসেট করেছেন কি। তিনি ব্যাপারটা বুঝ‌তে পারলেন না। আমি  তা‌কে বললাম। শব্দ‌টি হল ফ্যাক্টরি রিসেটঅর্থাৎ আপনি ফ্যাক্টরি হ‌তে যেভা‌বে কি‌নে‌ছেন সেই অবস্থায় আনা। সমস্ত নম্বর মুছে যাবে। সমস্ত বাড়তি অ্যাপ মুছে  যাবে। ছবি মুছে যাবে। অন্যান্য তথ্য মুছে যাবে। তবে যে সব তথ্য ক্লাউড বা অনলাইনে সিন্ক্রোনাইজ থাকবে তা পুনরায় ফেরত পাওয়া যাবে। বর্তমানে আমরা ‌মোবাইলে প্রচুর পরিমাণে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, ফেইস  বুক ব্যবহার করি। এগু‌লোর অনেক ছবি মোবাইলের মে‌মোরী‌তে জম‌তে থা‌কে। তদুপরি ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারও থা‌কে। এগু‌লো স্মার্ট মোবাইলকে স্লো ক‌রে আনস্মার্ট ক‌রে ফেলে। তখন ফ্যাক্টরি রিসেট দিয়ে পুরো মোবাইলের অতিরিক্ত অ্যাপকে ঝেড়ে ফেলে দেয়া যায় এবং এভাবে স্মার্ট ফোনকে পুনরায় কার্যোপযোগী করা যায়।
আমি স্মার্ট ফোন ব্যবহারের পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে আমার ব্যবহৃত মোবাইলে  তিনবার ফ্যাক্টরি রিসেট দিয়েছিলাম। প্রতিবারই আমার জানা‌শোনা ফাইল ও অন্যান্য ডাটা আমি  ব্যাক আপ নিয়েছি। তারপরও কিছু কিছু ঝামেলায় পড়েছি। এর মধ্যে‌ একবার পড়লাম মোবাইল নম্বর হারা‌নোর সমস্যায়। তারপর পড়লাম ছবি হারা‌নোর সমস্যায়। সর্বশেষ যে সমস্যাটা ছিল তা হল কিছু এসএমএস আমি নোট প্যাডে কপি ক‌রে রেখেছিলাম। যা কিনা ফ্যাক্টরি রিসেট করার পর হারি‌য়ে ফেললাম। সেখানে একাউন্ট নম্বর ও অনন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি ছিল। তবে বেশী ক্ষতি হয়নি তবে পুনরায় যোগাড় করার বা কম্পোজ করে নিতে হয়েছে। ছবি হারালে তা পুনরায় পাওয়া যায় না।
তাহলে দেখা যাচ্ছে আমরা মোবাইলে  ছবি, ট্যাক্সট ও অন্যান্য যে কোন ডাটা রাখি না কেন তা ফ্যাক্টরি রিসেট করলে ব্যাক আপ করতে অনেক সময় সতর্কতার পরও ভুল হ‌তে পা‌রে। এই  ভুলে মূল্যবান ডাটা হারা‌তে পা‌রে। এ ধরনের ডাটা হারা‌নো বন্ধ করার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল সমস্ত ডাটা ক্লাউডে রাখা। কিভাবে রাখা যায় তা আলোচনা করা যাক। সমস্ত কন্টাক্টগু‌লো গুগল কন্ট্রাক্ট লিস্টে রাখা যায়। ছ‌বিগু‌লো ড্রপবক্সে আপ‌লোড করা যায়। যখনই কোন নতুন ছবি তোলা হবে তা সাথে সাথে আপ‌লোড হবে। ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলে তা ইন্টারনেট কানেকশন যখনই পাবে তখনই ছবি আপ‌লোড শুরু করবে। ডকুমেন্ট ও নোটপ্যাডও গুগলে আপ‌লোড করা যায়।
আর একটি বিষয় হল, আপনারা যারা ওয়াই ফাই ব্যবহার করছেন সে সমস্ত হটস্পটের ডাটা পুনরায় পাসওয়ার্ড দিয়ে সেট করতে হবে। ওয়াই ফাই বা হট স্পটের পাসওয়ার্ড আমরা একবার দিলে অনেকদিন পর্যন্ত আর দেয়ার প্রয়োজন পরে না। তাই মোবাইলে ফ্যাক্টরি রিসেট করার আগে ওয়াই ফাইয়ের পাসওয়ার্ড যদি ব্যবহার হয় তার তালিকা করে রাখতে হবে। অন্যথায় পুনরায় ওয়াই ফাই পাসওয়ার্ডের ঝক্কি ঝামেলায় পড়তে হবে।

আধুনিক সম‌য়ে ক্লাউড একটা শক্তিশালী মাধ্যম। যা কিনা ডাটা সুরক্ষা করে। যে কোন পরিস্থিতিতে মোবাইল ডাটা ক্লাউডে রাখাটা অপরিহার্য্য। মোবাইল ফোনে ফ্যাক্টরি রিসেট করা বা হারিয়ে যাওয়ার পর নতুন মোবাইল ক্রয় করলে সমস্ত ডাটা ক্লাউডে রাখলে আমরা রিসেট করা মোবাইলে বা নতুন কেনা মোবাইলে আমাদের আগের মোবাইল ফোন সেটিঙের মত অভ্যস্ত সেটিংগুলো ফিরে পাব। পরিশেষে বলতে পারি আমরা বছরে এক/দুইবার মোবাইল ফোনকে পূর্ণ কার্যোপযোগী করতে ফ্যাক্টরি রিসেট দিতে পারি। সেই সাথে সমস্ত ডাটা ক্লাউডে রেখে ডাটা হারানো সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারি।