Pages

Thursday, December 29, 2016

হিরো আলম: অদমনীয় ও অনুকরণীয় ডিজিটাল হিরো


একটা মানুষ মনের আনন্দে তার ভাল লাগার কাজটি করে যাচ্ছে। নিজের সময় ও টাকা খরচ করে। কে তাকে নিয়ে হাসল ও কৌতুক করল তা নিয়ে তার কোন বিকার নেই। সহজ সরল একটি মানুষ বগুড়ার ডিশ আলম বা হিরো আলম। আমি ৫ ডিসেম্বর ২০১৬ হতে ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ভারতে একটি ট্রেনিং করা সময় আমাদের দায়িত্বে নিয়োজিত একজন ভারতীয় হিন্দি ভাষী কর্মকর্তার কাছে প্রথম জানতে পারি বাংলাদেশের হিরো আলম সম্পর্কে। ভারতে থাকাকালীন ইন্টারনেটে হিরো আলম সার্চ দিয়ে অনেক তথ্য পাই। তার এই প্রচার ও পরিচিতির ধরনটা যেকোনো মানুষের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। কে কি বলল, না বলল, পছন্দের ভাল কাজ লজ্জায় ছেড়ে না দিয়ে করে যেতে থাকলে এবং ক্রমাগত উন্নতির জন্য চেষ্টা করে যেতে থাকলে উন্নতি আসবে সন্দেহ নেই। এ কারণে হিরো আলম হতে পারে অনেকের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
অনেকদিন আগে আমি প্রখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহমেদের একটি সাক্ষাতকার শুনেছিলাম। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনি রসায়নের অধ্যাপক হয়ে লেখালেখিতে কেন আসলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি লিখে আনন্দ পান। তিনি মনের আনন্দের জন্য লিখতেন। হুমায়ুন আহমেদ নিজের লেখা কতটুকু কাউকে আকর্ষণ করল কিনা বা কেউ আহত হল কিনা। বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবসা সফল হল কিনা বা বাজারে চলবে কিনা ইত্যাদি চিন্তা করে লিখতেন না। মনের আনন্দের জন্য কষ্ট করে রাতের পর রাত লিখে যেতেন। দিনের পর দিন লেখা সম্পাদনা ও সংশোধন করে যেতেন। আর এসব কাজ ভাল না লাগলে বা ভাল না বাসলে করা সম্ভব নয়। অনেক ধৈর্য ও কষ্টকর কাজ। আমি ক্যাডেট কলেজের সপ্তম শ্রেণী থেকেই পত্রিকা প্রকাশনা ও লেখালেখি করে আনন্দ পাই। একাদশ শ্রেণীতে নিজের স্টাইফেনের টাকা খরচ করে ফটোকপি করে চন্দ্রদ্বীপের চিঠিনামে পত্রিকা বানাই। বন্ধুরা সবাই হাসাহাসি করেছিল, আমার বেকুব টাইপ কাজ দেখে। এইতো তিনবছর আগে আমাকে একজন বলেছিল, আপনি যে লেখালেখি করেন তার ভবিষ্যৎ কি? এত লেখক থাকতে আপনি ভাত পাবেন। তার চেয়ে অন্য কাম করেন। উন্নতি করবেন। টাকা পয়সার রোজগার বাড়বে। আমার উত্তর ছিল, আমি আনন্দের জন্য করি। এটা থেকে আয় হবে, কেউ লেখাটা পড়বে কিনা এ চিন্তায় লিখি না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমি গত পাঁচ বছরে দেড় শতাধিক লেখা লিখেছি। গত দুইবছর থেকে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত ভাবে একটি করে লেখা লিখি। তবে বেশীরভাগ বন্ধুবান্ধব আমাকে উৎসাহ দিয়েছে দুই একজন হিরো আলমের মত হাসাহাসি করেছে।
আমি ভারত থেকে ফিরে হিরো আলম নিয়ে ইন্টারনেট গবেষণা শুরু করলাম। বাংলাদেশের বগুড়া জেলার এরুলিয়া গ্রামের হিরো আলম জানে তার চেহারা নায়কের নয় অথচ তার ভাল লাগে অভিনয় করতে। সেজন্য কি তার মনের আশা অপূর্ণ থাকবে। মোটেই না। সে নিজের টাকায় নিজের ব্যবস্থাপনায় মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়। সে মিউজিক ভিডিও প্রচার করেছে তারই ক্যাবল টিভির চ্যানেলে। তার এলাকার নবম, দশম ও কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের নিয়েছে মডেল হিসাবে। ছোটবেলায় অনেক মেয়ের মডেল হওয়ার স্বপ্ন থাকে কিন্তু পারিবারিক, আর্থিক, লাবন্যতা ও সক্ষমতার কারণে যাদের মডেল হওয়া সম্ভব নয় তারা যোগ দিয়েছে হিরো আলমের কাতারে। গ্রামের অদক্ষ ও আগ্রহী মেয়েগুলোর নেই কোন বাণিজ্যিক চিন্তা। নেই কোন বিখ্যাত হওয়ার ভাবনা। তাদেরও অভিনয়ের স্বপ্ন পূরণই হল সার্থকতা। তাই মেয়েগুলোর বিপরীতে সাধারণ চেহারা একজন ছেলে মডেল নিয়ে তাদেরও মাথাব্যথা নেই। তাদের অভিনয়গুলো কৃত্রিমতা বির্বর্জিত ও অনেক অনেক বেশী অনুশীলন ও আন্তরিকতা নিয়ে করা। যার ফলে মডেলদের চেহারা যাই হোক অকৃত্রিম অভিনয়ের জন্য তারা আধুনিক জেনারেশনের যুবক যুবাদের মোবাইলে লক্ষ লক্ষ বার দেখা হচ্ছে। মাত্র সাত মাসে(জুন-ডিসেম্বর ২০১৬) হিরো আলমের রূপের মাইয়ামিউজিক ভিডিওটির দেখা হয়েছে ১২ লক্ষেরও বেশী। এছাড়া ডিসেম্বর ২০১৬ এসে জানা যায় গুগলের সার্চে নায়কদের মধ্যে সবোর্চ্চ সালমান খানকে সে পিছে ফেলেছে। উইকিপিডিয়ায়ও তাকে নিয়ে পেইজ খোলা হয়ে গেছে।
হিরো আলম অত্যন্ত সাধারণ মানুষ যে নিজের শখ মিটাতে সৃষ্টিশীল কাজ করেছে। সে আট বছর যাবত করে যাচ্ছে। তার চরিত্রের শক্তিশালী দিক হল হাসি ও বিদ্রূপের মধ্যে নিজের আনন্দের জন্য কাজ করে যাওয়া। কম খরচে এলাকার ছেলে মেয়েদের বান্দরবন ও কক্সবাজার বেড়ানোর মত স্বপ্ন পূরণের আয়োজন করা তার আর একটি মহত কাজ। সে এলাকায় মেম্বার পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিল। সত্তর ভোটে হেরেছে। সে আরো দাড়াতে চায় কারণ সে র্নিদমনীয়।সে বলেছে যে কোন চেহারার ছেলে মেয়ে যেই অভিনয় করতে আগ্রহী তাকে নিয়েই সে ভিডিও বানাবে। তাদের স্বপ্ন সে তার টাকায় পূরণ করে দিবে। কোন ব্যবসা নেই। হয়তবা তার এই উদ্যোগের কারণে বিল কসবীবা উইফ্রে অপেরান্হমত সাধারণ চেহারার বাংলাদেশের গ্রামের অনেক মডেল বিখ্যাত হয়ে যেতে পারে। তার আর একটি ইচ্ছে হল অনাথ আশ্রম দেয়া। এতে তার নিঃস্বার্থতা ও মহত্ত্বের প্রকাশ পায়।

পরিশেষে বলব আমাদের অনেকের অনেক স্বপ্ন থাকে। সেগুলো পূরণে আমরা ব্যর্থ হই। আশে পাশের লোকেরা উপহাস করে। সে রকম ব্যর্থদের জন্য হিরো আলম অনুপ্রেরণা। প্রখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহমেদ নিজের আনন্দের জন্য লিখতেন। তেমনি আমাদের পছন্দের কাজটি নিজের আনন্দের জন্য করাটাই আত্মতৃপ্তি। মনের ও আত্মার শান্তি বড় শান্তি। সফলতা ও বিখ্যাত হওয়াটা পরের বিষয়। তবে একটা কথা আছে, “যদি লক্ষ থাকে অটুট বিশ্বাস হৃদয়ে, হবেই হবে দেখা, দেখা হবে বিজয়ে

Thursday, December 22, 2016

কার শেয়ারিং


তপু একজন টগবগ যুবক। বিভিন্ন জেলায় তার যেতে হয়। তার ছোট ব্যবসা। পণ্যের মার্কেটিং কাজের জন্য তার এই ছোটাছুটি। সে একটা কার কিনবে তার ইচ্ছায় রেখেছে। ব্যবসাটা কেবল দাড় করানোর অবস্থায় আছে মূলধন কম। তাই এখনই কার কিনে টাকা আটকিয়ে কি লাভ। সে কল্পনা করে ঢাকা থেকে ট্রেনে রাজশাহী গেল। পথে সে ট্রেনে রাজশাহী আসার কাছাকাছি সময়ে তার স্মার্ট ফোন থেকে সার্চ করে দেখে নিল রাজশাহী স্টেশনের কাছাকাছি শেয়ার কার পার্কিং আছে কিনা এবং কোন কার আছে কিনা। সে দুইটি কারের উপস্থিতি দেখল। একটি কার বুকিং দিল। গাড়ীর নম্বর ও পাকিং স্লটের নম্বর তার কাছে চলে আসল। ট্রেন থেকে নেমেই শেয়ার কারের পাকিং এর কাছে চলে গেল। গাড়ীর নম্বর মিলিয়ে নিল। গাড়ীর সামনের উইন্ডশীল্ডের কোনে তপু সাহেব শেয়ার কারের রেজিস্ট্রেশন কার্ডের বার কোডটি ধরল। কারটি দরজা আনলক হল। কার খুলে ইগনিশন চাবি দিয়ে কারটি চালু করল। আগামী তিনদিন কারটি চালিয়ে বেড়াবে। তারপর যখন ঢাকা যাবে তখন স্টেশনের পাকিংএ রেখে গেলেই চলবে। একটানা রাখতে না চাইলে মোবাইলের গুগল ম্যাপে সার্চ দিয়ে কাছাকাছি পাকিংএ গাড়ীটি রেখে দিলেই হল। আর মনে করে কারটির চার্জিং কর্ডটি লাগিয়ে গেলে আরেকজন যখন কারটি চালাবে তখন গাড়ীটি ফুল চার্জ পাবে। শেয়ার কার এমনই একটা কনসেপ্ট গ্রাহকরা গাড়ীর মালিক নয় কিন্তু ভাড়ায় দেশের যে কোন জায়গায় যে কোন কোম্পানির শেয়ার কার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ব্যবহার করে সুবিধাটি ভোগ করা যাবে। এটা অনেকটা এটিএম কার্ড দিয়ে যে কোন স্থান থেকে টাকা উঠানোর মত। যে কোন স্থানে কার্ড ব্যবহার করে নিজের মত গাড়ী চালানো ও ব্যবহার করা। আমাদের দেশের ভাড়ায় কারে চালকের খরচসহ দিতে হয় তারপর চালকের কারনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সংকটাপন্ন হতে পারে। চালকে চালানোর মান খারাপ হতে পারে। খরচ কম ও নিরাপত্তার কারনে চালকবিহীন শুধু কার শেয়ারিং অনেক বেশী সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। যারা গাড়ী চালাতে জানেন তাদের জন্য খুবই মজাদার বিষয় এই কার শেয়ারিং।

পৃথিবীর অনেক দেশেই কার শেয়ারিং অনেক আগেই চালু হয়েছে। জার্মানি এ বিষয়ে অনেক এগিয়ে আছে। তারপর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে। এটাকে বলা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি। এটার জন্য সাধারণত ইলেকট্রিক কার ব্যবহার করা হয়। পার্কিং স্থানগুলোতে চার্জিংর এর ব্যবস্থা করা থাকে। প্রতিটি গাড়ী জিপিএস ট্র্যাকিং আছে। ব্যবহারকারী মোবাইলে বুক করে পাকিংএ এসে গাড়ীটি নিয়ে যে কোন জায়গার পাকিংএ ছেড়ে দিলেই হল। বৈদ্যুতিক কার হওয়ার কারণে তৈল উঠানো ও পেমেন্টের কোন সমস্যা নেই। শেয়ার কারের বিল ক্রমাগত গ্রাহকদের জামানত হবে কর্তন হতে থাকবে। টাকা কমে গেলে পুনরায় মোবাইলের মত রিচার্জ করে নিলে হবে। এছাড়াও ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড হতে পরিশোধ করার ব্যবস্থা থাকবে। কোম্পানির কম্পিউটার জিপিএস ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে কত কিলোমিটার চলল ও কত সময় ব্যবহার হল ইত্যাদি তথ্যের উপর শেয়ার কারের বিল গ্রাহকের প্রিপেইড একাউন্ট হতে কর্তন করতে থাকবে। যখন যে কার চালাবে তখন সেই কারের বীমার সাথে গ্রাহক যুক্ত হবে। এক্সিডেন্ট করলে গ্রাহক ক্ষতিপূরণ পাবে। তবে শেয়ার কার রেজিস্ট্রেশনের জন্য গ্রাহককে ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী হতে হবে। কারণ শেয়ার কারের রেজিস্টার্ড ব্যক্তি গাড়ীটি চালাবে ও ব্যবহার করবে। কারণ এটা চালক ছাড়া নিজে ব্যবহার করার ব্যবস্থা কেউ যদি গাড়ী অন্যকে দিয়ে চালাতে চান সেক্ষেত্রে তাকে আলাদা পেমেন্টে শেয়ার কার নিজের নামে ভাড়া করে শেয়ার কারের রেজিস্টার-কৃত কাউকে দিয়ে চালনা করাতে হবে। গাড়ীর নিরাপত্তা ও নিজের নিরাপত্তা অনেক জরুরী বিষয়। ২০১২ সালে উইকিপিডিয়ার হিসাব মোতাবেক পৃথিবীর ২৭টি দেশের প্রায় ১০০০ শহরে প্রায় ১৭ লক্ষ গ্রাহক কার শেয়ারিং সার্ভিস ব্যবহার করছে। ধীরে ধীরে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। নভেম্বর ২০১৪ সালে ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকার ৭,৬৭,০০০ গ্রাহক ১১০০০ গাড়ীর মাধ্যমে তারা সার্ভিস নিচ্ছে। এখানে দেখা যাচ্ছে ৭৬,৭০,০০ গ্রাহক রাস্তায় ৭,৬৭,০০০ কার না নামিয়ে নিজের মত একেক সময় একেক ধরনের কার ব্যবহারের আনন্দ পাচ্ছে। এতে তার খরচ কমে যাচ্ছে। কার শেয়ারিং এক একটি কার ৬৯৭ জন ব্যবহার করছে। অবাক ব্যাপার তাই না।  এটা পরিবেশ বান্ধব এজন্য যে এটা বিপুল পরিমাণ কার বিক্রয় কমিয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কারের অপটিমাম ব্যবহার বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের মত ছোট দেশের কম রাস্তা ঘাটে কার শেয়ারিং অনেক বেশী পরিবেশ বান্ধব ও উপকারী হবে। ২০২০ সালে এটা ২.২ বিলিয়ন ব্যবসা হিসাবে দাঁড়াবে বলে বিশেষঞ্জরা মনে করছেন। বর্তমানে সিমের মাধ্যমে ট্র্যাকিং, জিপিএস ট্র্যাকিং ও বিটিআরসির আরএফআইডি ট্র্যাকিং এর কারণে গাড়ী চুরির সম্ভাবনা কমে গেছে। তাই বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা ও উদ্যোগতারা এটা চালু করতে পারেন।

Thursday, December 15, 2016

২০৩০ সালে পৃথিবীর মানুষের মঙ্গল গ্রহে যাত্রা


আমেরিকার একটি প্রাইভেট কোম্পানি তারা মানুষকে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহে ট্রিপ দিবে। মঙ্গল গ্রহে ৮০ হাজার মানুষের কলোনি তৈরি করা হবে। মঙ্গল গ্রহে যেতে ত্রিশ দিন ও ফিরতে ত্রিশ দিন লাগবে বর্তমান সময়ের স্পেস শীপের গতির উপর নির্ভর করে এ সময় বিবেচনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সময় আরো কমবে বলে কোম্পানিগুলো আশাবাদী। স্পেস-এক্স ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার হাথ্রো নামক স্থানে স্থাপিত হয়। ২০০৬ সালে নাসা বোয়িং ও স্পেস এক্স নামে দুইটি কোম্পানিকে স্পেস স্টেশনে কার্গো পরিবহন ও ক্রু পরিবহনের জন্য কন্ট্রাক্ট করে। বোয়িং দীর্ঘদিন মহাকাশ ফ্লাইট নিয়ে কাজ করছে। তাদের জন্য স্পেস স্টেশনে ফ্লাইট পরিচালনা করাটা কেবলমাত্র চুক্তিবদ্ধ বাণিজ্যিক কাজ। স্পেস-এক্স কোম্পানিটি চিন্তা ধ্যান ধারনা মূলত: আর্থিক ভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা। নাসার চুক্তিবদ্ধ ফ্লাইটের পাশাপাশি তারা চাচ্ছে স্পেস স্টেশনে বেড়িয়ে আসার জন্য ফ্লাইট চালু করা। চাঁদে ফ্লাইট চালু করা। অতঃপর ২০৩০ সালে মঙ্গল গ্রহে কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালু করা।
স্পেস-এক্স প্রাইভেট কোম্পানির সিইও ও সিটিও(চীফ টেকনিক্যাল অফিসার) ইলন মাস্ক হলেন টেসলা মটরের সিইও এবং পৃথিবীর ৮৩ তম সেলফ মেইড বিলিয়নিয়ার। একজন টেক ব্যবসায়ীর জন্য এ ধরনের চিন্তাটা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি। তাকে এ সুযোগ ও অনুমতি দিয়েছে স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও আমেরিকার সিনেটররা। এ কোম্পানিটি ফ্যালকন-১ ও ফ্যানকন-৯ এর প্রায় ১২ টি ফ্লাইট সফলভাবে পরিচালনা করেছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ৬ টি ফ্লাইট সফলতার সাথে পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে চারটি ফ্লাইট রিইউজ করার জন্য পৃথিবীতে ফেরত আনিয়ে ল্যান্ডিং করিয়েছে।
কোম্পানিটি ২০১২ সালে ড্রাগন স্পেস ক্রাফট সফলতার সাথে মহাকাশে পরীক্ষামূলক ভাবে পাঠায়।
ইলন মাস্ক বিভিন্ন সময় বলেছেন কোম্পানিটি তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এটা লাভজনক হবে কিনা তা তার জানা নেই। তার যাবতীয় সঞ্চয় এই কোম্পানি ঢেলেছেন। এই কোম্পানির প্রাথমিকভাবে তিনটি টেস্ট ফ্লাইট ক্রাশ করে। এতে ২০০৮ হতে ২০১০ পর্যন্ত চরম সংকটময় অবস্থা পার করে। এমনকি এক পর্যায়ে তার একটি মাত্র রকেট বাকী থাকে। সেটি ফেল করলে পুনরায় রকেট বানানোর জন্য তাকে গুগল কোম্পানির কাছে তেসলা কার কোম্পানি বিক্রি করতে হত। এমনকি তেসলা মটর কোম্পানি বিক্রির জন্য ১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যমান নির্ধারণ করা ছিল। যাক পরবর্তীতে মিশন ফেল করার মত মহাবিপদ থেকে কোম্পানিটি রক্ষা পায়। নাসার অনেক অভিঞ্জ ইঞ্জিনিয়াররা তার দলে যোগ দেয়। ২০০২ সালে কয়েক শত জনবল নিয়ে চালু হওয়া কোম্পানিটি বর্তমানে ৫০০০ এর উপর জনবলের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে ইলন মাস্কের ধারনা পৃথিবীর সমস্ত স্থানে ইন্টারনেট, টেলিযোগাযোগ ও টেলি কাস্টিং করার জন্য এখনও ৪০০০ স্যাটেলাইট অরবিটে স্থাপন করার চাহিদা রয়েছে। এর জন্য ৪০০০ বার লঞ্চিং করতে হবে। পুরাতন স্যাটেলাইট সার্ভিসিং করা ও অতি পুরাতন স্যাটেলাইট ডি কমিশনিং করার কাজও আছে। মহাকাশে কাজের প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে।মহাকাশে ব্যবসা আরো জমজমাট হবে এটা ইলন মাস্ক ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। শুধু বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্যাটেলাইট লঞ্চ করেই তার কোম্পানি বিশাল র‍্যাভিনিউ পাবে বলে তার ধারনা।
২০০২ সালে ইলন মাস্ক একাধিকবার রাশিয়া গমন করে। রাশিয়ার নভোচারীরা অত্যন্ত হাস্যকর ও অবাক ভাবে তাকে মূল্যায়ন করে। একজন ব্যক্তির কোম্পানি মহাকাশে ফ্লাইট চালাবে এটা হজম ও বিশ্বাস করতে তাদের কস্ট হয়। তার কাছে রাশিয়া প্রতিটি রকেটের দাম চায় ৮ মিলিয়ন ডলার। ইলন মাস হিসাব করে দেখল এর ৩% মূল্য দিয়ে রকেট তৈরি করা সম্ভব। রকেট তৈরিতে অনেক অনেক কোম্পানি অনেক ধরনের কম্পোনেন্ট সাপ্লাই করে। এতে রকেটের দাম বেড়ে যায়। ইলন মাস্ক তাই তার ওয়্যার হাউজে রকেটের ৮৫% মালামালই নিজেরা তৈরি করা শুরু করে। এতে তার খরচ অনেক কম হতে লাগল। রাশিয়ার দাম হতে রকেট প্রতি দাম দশগুণ কমে গেল এবং তাতেও ৭০% গ্রস প্রোফিট হল। এ কারণে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের চিন্তাটা আরো সহজ হল। ২০০৪ সালে নাশা তাদের ফ্লাইট বন্ধ করে। ২০১১ সালে নাশা তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। নাশা স্পেস স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণ স্পেস-এক্স আর আমেরিকার বোয়িং কোম্পানিকে দিয়েছে। অপরদিকে স্পেস-এক্স ও বোয়িং কেউ নভোচারী পরিবহনের সক্ষমতা অর্জন করতে না পারায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার নভোযানের মাধ্যমে আমেরিকার নভোচারীদের মহাকাশে পাঠানো ও ফেরত আনার জন্য নভোচারী প্রতি ৮২ মিলিয়ন ডলার বা ৬৫৬ কোটি টাকার খরচ রাশিয়াকে দিবে। রকেট রিইউজ কারার কারণে স্পেস এক্সের প্রতি লঞ্চে খরচ হচ্ছে ৩২০ কোটি টাকা। অন্যান্য দেশে যোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠাতে প্রতি লঞ্চে খরচ ১৫৭ মিলিয়ন ডলার বা ১২৫৬ কোটি টাকা। এটা আরো কমানো যাবে বলে ইলন মাস্ক আশ্বাস দিয়েছে। তার ১০০/২০০ যাত্রীর ফ্যালকন হেভি কর্মাশিয়াল ফ্লাইট চালু হলে ধারনা করা যায় বাংলাদেশী এক কোটি টাকায় মহাকাশ ভ্রমণ সম্ভব হবে। আমার ধারনা ২০১৮ সালের পর বাংলাদেশ থেকেও অনেক সামর্থবান ব্যক্তি মহাকাশের স্পেস স্টেশন থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবেন। যেভাবে আরবের যুবরাজ বেড়িয়ে এসেছিল।
ইলন মাস্কের মাথায় আরেকটি বিষয় ঢুকে তা হল রকেটকে রিইউজ করা। এর জন্য সে এমন প্রযুক্তি তৈরি করে যাতে করে অক্সিলারী রকেট ও মুল রকেট নির্দিষ্ট উচ্চতায় স্পেস ক্রাফটকে পৌঁছানোর পর নিজে নিজেই লঞ্চিং প্যাডে ফেরত আসে। এতে রকেট রিইউজ করার পথ সুগম হয়। ফেরত আসা রকেটটি রিফুয়েলিং করে পুনরায় এক ঘন্টার মধ্যে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত করা যায়। স্পেস ক্রাফট ও রকেটের জন্য তার কোম্পানি স্থির হোবারিং ও ভার্টিক্যাল টেক অফ/ল্যান্ডিং টেকনিক আবিষ্কার করে। এতে রকেট বা স্পেস ক্রাফটকে যে কোন গতিপথে যে কোন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রকেট ও স্পেস ক্রাফট রিইউজ করার কারণে শুধুমাত্র জ্বালানীর খরচ ব্যয় করে যুক্তিসংগত টাকা খরচ করে ধণ্যাঢ্য ব্যক্তিদের স্পেস স্টেশন, চাঁদ ও মঙ্গলে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মাধ্যমে ঘুরিয়ে আনা সম্ভব হবে। স্পেস-এক্স আমেরিকার কেইপ ক্যানাভেরাল এয়ারবেজ স্টেশন রকেট লঞ্চিং এর কাজে ব্যবহার করছে। ইলন মাস্ক চাঁদ ও মঙ্গলে যাওয়ার গতিপথে অনেকগুলো স্পেস স্টেশন বানানোর পরিকল্পনা করেছে। এগুলো চাঁদে বা মঙ্গলে যাওয়ার জন্য রিফুয়েলিং, স্পেস ক্রাফটে সমস্যা দেখা দিলে তা মেরামত ও বানিজ্যিক ফ্লাইটের যাত্রীদের যাত্রা বিরতিতে ব্যবহার করা যাবে। কোম্পনিটি রকেটের জ্বালানীরও পরিবর্তন এনেছে। তারা লিকুইড অক্সিজেনের বদলে মিথেন গ্যাস ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। এতে চাঁদে বা মঙ্গল গ্রহে যেহেতু কার্বন ডাই অক্সাইড ও সীমিত অক্সিজেন পাওয়া যায় তাই পৃথিবী থেকে জ্বালানী না নিয়ে চাঁদে ও মঙ্গল গ্রহে রকেটের জ্বালানী প্রস্তুত করা সম্ভব।

ব্যক্তিগত চিন্তায় ও উদ্যোগে মহাকাশ ভ্রমণ, চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে যাওয়া সচ্ছলদের জন্যে এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তব হতে চলেছে। আমি অনেক সংক্ষেপে বিবরণ দিলাম এরূপ একটি মজাদার বিষয়ে জানতে চাইলে স্পেস-এক্স এর ওয়েব সাইট www.SpaceX.com ভিজিট করতে পারেন। ইউটিউবে এ বিষয়ে অসংখ্য ভিডিও রয়েছে। তাতেও চমকপ্রদ সব তথ্য পাওয়া যাবে।

Thursday, December 8, 2016

অপচয় রোধে সরকারী স্থাপনা হতে হবে অত্যন্ত উন্নত সামগ্রীর তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ মুক্ত


আমার দীর্ঘদিন সরকারী চাকুরীর পর আমি একটা বিষ‌য়ে মারাত্মক ভাবে মর্মাহত,  আর তা হল সরকারী প্র‌তিষ্ঠানগু‌লোর রক্ষণাবেক্ষণ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হ‌তে অনেক বেশী নিন্মমা‌নের। প্রথম যে ব্যাপার‌টি আমার নজরে এসেছে তা হল সরকারী স্থাপনা নিয়মিত রং করা বা মেরামত করা হয় না। আমলাতান্ত্রিক বা যে কোন জটিলতায় কোর্য়াটারগু‌লো প্রয়োজন মোতাবেক মেরামত ও উন্নয়ন হয় না। কেবলমাত্র আমার দেখা ও জানা মতে সামরিক বাহিনীর স্থাপনাগু‌লো নিয়মিত রং করা হয়। তারপরও বাজেটের অভাবে সেখানকার কোয়ার্টার ও বাসা বাড়ীগু‌লো‌ নিয়মিত রং করা বা মেরামত করা হয় না। সরকারী যে কোন কাজে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নজরদারী করা শক্ত এক‌টি কাজ। প্রতিটি দালান রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রতি দালানের মূল্য অনুযায়ী ১০% টাকা রক্ষনাবেক্ষনের জন্য প্রতি বছর সরকারের বরাদ্দ দেয়ার কথা। এটা সরকার কখনও বরাদ্দ কর‌তে পা‌রে না। এক কোটি টাকার দালানের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর ১০ লাখ টাকা ক‌রে সরকার কখনোই বরাদ্দ কর‌তে পা‌রে না। যা বরাদ্দ ক‌রে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বড় কর্তা‌দের ও অফিস কমপ্লেক্সের জন্য ব্যয় ক‌রে প্রান্তিক কর্মচারী‌দের কোয়ার্টা‌রের জন্য আর কোন বরাদ্দ থা‌কে না। আমার দেখা ম‌তে এমন
ও দালান আছে যা নির্ন্মান করার পর ২০/২৫ বছরের মধ্যে কোন রং বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। হয়ত রং বা রক্ষণাবেক্ষণ না ক‌রে ২৫/৩০ বছর পর পরিত্যক্ত ক‌রে অকেজো ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে সরকারের শত বছর আয়ুর এক‌টি দালান ৩০ বছরে পরিত্যক্ত হ‌য়ে ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।
আমার মনে হয়। সরকার এক‌টি স্থাপনা তৈরি ক‌রে তার রক্ষনা‌বেক্ষনের চাপ একবারে ভুলে যে‌তে পা‌রে। এর জন্য প্রয়োজন দুই ধাপে কাজ করা। সরকারী যে কোন স্থাপনা অস্থায়ীভাবে প্রি‌ফেব হিসাবে ১০ বছরের জন্য তৈরি করা উচিত। প্রি‌ফে‌বের পর মূলত: বোঝা যাবে কয়‌টি সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরিবার নি‌য়ে সরকারী বাসস্থানে থাকবে। সরকারী স্থাপনার কি পরিমাণ স্কয়ার মিটার অরিজিন্যালী ব্যবহার হবে। প্রিফেব ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন করে স্থায়ীভাবে ৪০/৫০ বছর আয়ুষ্কাল সম্পন্ন দালান বানাতে হবে। দালান বানানোর উপাদান হবে গ্লাস, এলুমিনিয়াম, এসএস পাইপ, শক্ত প্লাস্টিক ও টাইলস। মূল বিষয় হল আমরা যাই ব্যবহার করি তা যেন কমপক্ষে পঞ্চাশ বছর কোনরূপ পরিচর্যা বা রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া ব্যবহার করা যায়। আমরা অনেকেই লক্ষ করে দেখব অনেক মসজিদ অনেক আগে থেকেই ভিতর বাহির সম্পূর্ণ টাইলস করে নিয়েছে। এগুলো বছরের পর বছর একই রকম চেহারা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রং পরিবর্তন হয়নি। একটা গর্জিয়াস লুক রয়েছে। বছর বছর তা রং করা বা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রাথমিক ভাবে প্রায় দ্বিগুণ বেশী খরচ গেলেও প্রতি দুইবছর পর পর রং করা বা আস্তর মেরামত বাবদ খরচ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে টাকা সেইভ হবে। মনে করি একটি দালান এক কোটি টাকায় তৈরি করা যেত। তা তৈরি করতে দুই কোটি টাকা খরচ হল এমনভাবে যাতে ভিতর ও বাইরে টাইলস করা হয়। এখন এক কোটি টাকা দালানে দশ বছরে নিয়ম অনুযায়ী খরচ করতে হবে প্রতি বছর ১০% হিসাবে আরো এক কোটি টাকা। এভাবে সাধারনত বছরে বছরে খরচ ও সিস্টেম লস চলতে থাকে। কিন্তু সরকার একবারে এক কোটির স্থানে দুই কোটি খরচ করে উন্নতমানের রক্ষনাবেক্ষনমুক্ত দালান বানালে কমপক্ষে ৪০/৫০ বছর ব্যাপী বা তারও বেশী আর কোন রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নাই। এতে দীর্ঘ মেয়াদে সরকারের লাভ তা হল বছর বছর রক্ষণাবেক্ষণের সিস্টেম লসে টাকা অপচয় হল না। অপরদিকে ব্যবহারকারী কর্মচারীদের লাভ তারা মান সম্পন্ন উন্নত দালানে থাকতে পারল। এভাবে একবার বিনিয়োগে ৪০/৫০ বছর পর একটা দালান ব্যবহার করে তা ভেঙ্গে ফেললেই চলবে। তাই সিমেন্টের আস্তর, লোহার বা কাঠের দরজা জানালা দিয়ে কোন দালান করা যাবে না। দালান করতে হবে এমন উপাদান দিয়ে যা ৪০/৫০ বছরে কিছু হবে না।

যত টাকাই লাগুক সরকারী দালানের ভিতর ও বাইরে টাইলস করা প্রয়োজন। সমস্ত দরজা জানালা হবে গ্লাস ও থাই এলুমিনিয়ামের তৈরী দীর্ঘস্থায়ী। সমস্ত রেলিং হবে এসএস পাইপের। সমস্ত টয়লেট ফিটিংসগুলো হবে উন্নত ও দীর্ঘস্থায়ী। ইলেকট্রিক ওয়্যারিং ও তারগুলি হবে এরূপ যেন তা ১০০ বছরে কোন মেরামত বা পরিবর্তনের প্রয়োজন না হয়। অনেক সময় বিভিন্ন স্থানে কম এ্যাম্পিয়ারের তার খরচ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এখানে তা করা হবে না। তার গুলো এমন হবে যে কোন পয়েন্ট থেকে রুম হিটার চালনা করলেও যেন তার, সার্কিট ব্রেকার ও সুইচ পুড়ে না যায়।

সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে যে কোন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কার্যক্ষম শুরু করবে ১০ বছরের জন্য প্রিফেব বাসস্থান দিয়ে। প্রিফেব বাসস্থানগুলো ব্যবহার করে করে বোঝা যাবে কতগুলি ও কি পরিমাণ স্থাপনার প্রয়োজন। প্রিফেব দ্রুত তৈরি করা যাবে। দ্রুত খুলে নেয়া যাবে। দেখতে সুন্দর ও হাইজেনিক। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে ঢাকার বাইরে দেখা যায় অনেক সরকারী দালান আছে। কেউ ব্যবহার করছে না কিছুদিন পর অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এভাবে হিসাব ছাড়া সরকারী স্থাপনা তৈরি উচিত নয়। অনেক কর্মকর্তা অনেক আগ্রহ নিয়ে সরকারী অর্থ খরচ করে অনেক স্থাপনা তৈরি করে থাকেন। তিনি যখন বদলী হন বা অবসর যান তখন সেই স্থাপনাগুলো অব্যবহৃত হয় বা অকেজো হয়। এজন্য যখনই কোন কর্মকর্তার মাথায় স্থাপনা তৈরির চিন্তা মাথায় আসে তখনই প্রয়োজন প্রথম ধাপে প্রিফেব তৈরি করা। দশ বছর ব্যবহারের পর মূলত একান্তই অনুভূত হবে স্থায়ী এবং কি  আয়তনের দালান তৈরি করতে হবে। তখনই আমার আলোচনা মোতাবেক এমন দালান বানাতে হবে যা কিনা বছর বছর রং করা বা মেরামত করতে হবে না। একেবারে ৪০/৫০ বছর পর ভেঙ্গে আবার নতুন করে তৈরি করে নিলে হবে। আমাকে একবার আমার আত্মীয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বলেছিলেন আমরা দালানের আয়ু ১০০ বছর বিবেচনা করলেও আমাদের ক্রমাগত আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন, বর্ধিত করন, রুচির পরিবর্তন, টেকনোলজির পরিবর্তন ইত্যাদি নানাবিধ কারণে ৩০/৪০ বছরের বেশী কোন স্থাপনা রাখা যায় না। তার আগে ভাঙ্গা পড়ে। তাই আমাদের প্রয়োজন প্রথম ধাপে সরকারী অর্থ অপচয় না করে প্রিফেব তৈরি। প্রিফেব আয়ু শেষ হলে স্ক্র্যাপ হিসাবে বিক্রয় করা। তারপর ৪০/৫০ বছর মেয়াদি রক্ষনাবেক্ষনমুক্ত দালান তৈরি। ৪০/৫০ বছর পর দালান অকেজো হলে নিলামে বিক্রয় করে দিতে হবে। নিলাম গ্রহনকারীরা দালান ভেঙ্গে বিভিন্ন উপাদান কাজে লাগাবে। পুরাতন দালান মেরামত করে সরকারের কাজে ব্যবহার করতে গেলে তাতে সিস্টেম লসের একটা জায়গা তৈরি হবে। তাই বড় ধরনের খরচের প্রয়োজন হলেই সেই স্থাপনা ভেঙ্গে নতুন ভাবে তৈরি করলে সরকারী অর্থের অপচয় হ্রাস পাবে। আর এভাবেই আমরা আমাদের সরকারী সম্পদের কার্যকরী উন্নয়ন করতে পারব।

Thursday, December 1, 2016

গবেষনার নতুন ধারা: উন্মুক্ত গবেষনা


মনে করুন আপনি চাচ্ছেন একটা গাড়ী বানাবেন। তা পানিতেও চলবে রাস্তায়ও চলবে। আপনি চাচ্ছেন গাড়ীটি পরিবেশ বান্ধব ১০০% রিসাইক্যাল সামগ্রী দিয়ে তৈরি হবে। গতিতে সেরা হবে। জ্বালানী হিসাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার হবে। এ গাড়ীটি যথেষ্ট পরিমাণ টেকসই ও উন্নত ফিচারের হলে আপনি এটি বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি করে আপনার কোম্পানি বাজারজাত করবে।
আমরা গতানুগতিক ধারায় আমরা যা করি তা হল: কিছু মেধা হায়ার করে তাদের একটা টিম করে আরএন্ডডিতে কাজে লাগানো হয়। সাধারণত এ ধরনের আরএন্ডডি লুকিয়ে গোপনে করা হয়। এর পিছনে কারণ হল প্রযুক্তিটিতে সারপ্রাইজ দেয়া। প্রযুক্তি চুরি করে এটি যেন অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে। গোপনে গবেষণা করাটা মূলত: গবেষকদের দুর্বলতার পরিচায়ক। কারণ তারা গবেষণায় আত্মবিশ্বাসী না বলে তারা গবেষণা মধ্যবর্তী তথ্য প্রকাশে অনিচ্ছুক। গবেষণা কাজটি উন্মুক্ত করে দিলে আরো নতুন নতুন আইডিয়া ও ইনপুট আসতে থাকবে এবং অতি দ্রুত অতি উন্নত টেকনোলজির আগমন ঘটবে।
পৃথিবীর ৮৩ তম সেলফ মেইড বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক হাইপার লুপ নামক একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। যারা কিনা প্রচলিত ট্রেনের চেয়েও কম খরচে বৈদ্যুতিক বাহন তৈরি করবেন। যা কিনা বর্তমান বাণিজ্যিক বিমান থেকে দ্রুত মানুষ ও মালামাল বহন করতে সক্ষম হবে। লস এঞ্জেলস থেকে ক্যালিফোর্নিয়া ৬০০ কি: মি: ৩৫ মিনিটে ২০১৮ সালের প্রথমভাগে পরীক্ষামূলক যাতায়াত শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই গবেষণা স্কুলের ছাত্র/ছাত্রী প্রজেক্টের মাধ্যমে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর হাজার হাজার মেধা সম্পন্ন গবেষক এর সাথে যুক্ত। স্থায়ী গবেষকরা তাদের গবেষণার অগ্রগতি প্রতিনিয়ত উন্মুক্ত করে দিচ্ছে আর অস্থায়ী ভলান্টিয়ার তাদের মতামত দিয়ে গবেষণার অগ্রগতি আরো দ্রুত ও সমৃদ্ধ করে দিচ্ছে। হাইপার লুপ চালু হলে পরিবহন জগতে একটা বিপ্লব সৃষ্টি হবে।
আমাদের দেশের কোম্পানিগুলি জন্য উন্মুক্ত আরএন্ডডি এর মাধ্যমে তাদের কোম্পানির প্রডাক্টের মান উন্নয়নের জন্য আরএন্ডডি করতে পারে। তাদের প্রডাক্টের মান আরো কিভাবে উন্নত করা যায় তার জন্য মুক্ত আইডিয়া চাইতে পারে। আইডিয়া প্রদান কারীদের বেশ দামী সন্মাননা প্রদান করা যেতে পারে। এভাবে ইন্টারনেট, ফেইসবুক ও আরো অন্যান্য মাধ্যমের দ্বারা কোম্পানিগুলো তাদের প্রডাক্টের আর এন্ড ডি করার জন্য ইন্টারনেটরে মাধ্যমে উন্মুক্ত গবেষণা চালাতে পারে। কোম্পানিরা অনেক অনেক টাকা দিয়ে গবেষক না পুষলেও চলবে। কারণ অনেক গবেষকই দিনের পর দিন বেতন ভাতা ভাল পেয়ে পেয়ে আর উৎপাদনশীল থাকে না। তাই এক দুইজন স্থায়ী গবেষক রেখে বাকী প্রডাক্টের আরএন্ডডি উন্মুক্ত করে পুরষ্কার ঘোষণা করলেই আইডিয়ার অভাব হবে না। ব্যবসায়ী প্রডাক্ট নিয়ে গবেষণা করে বাজারের প্রচলিত সকল প্রডাক্টের সেরা প্রডাক্ট তৈরি করতে পারলে সেই ব্যবসায়ীর আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। বিঞ্জাপন ছাড়াই তার প্রডাক্টের কাটতি ভাল হবে।
যে কোন ব্যবসায়ীর কাছে এ ধরনের আইডিয়া অত্যন্ত আত্মঘাতী মনে হতে পারে কিন্তু আধুনিক কালের বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের কাছে ব্যবসাটা গোপনীয়তা নয়। উন্মুক্ত গবেষণার মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি প্রডাক্ট তৈরি করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাই তার ব্যবসার ব্যতিক্রমধর্মী দিক।
আধুনিক কালে আমাদের বিভিন্ন প্রডাক্টের মান উন্নয়নের জন্য উন্মুক্ত গবেষণা করে প্রতিনিয়ত আমরা প্রডাক্টের মান উন্নয়ন বাড়াতে পারি। কিছু সংখ্যক বেতনভুক গবেষকের পাশাপাশি ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা আইডিয়া ও গবেষক হায়ার করা যেতে পারে।
এতে ব্যবসায়ের সফলতা নিয়ে টেনশন করার প্রয়োজন হবে না। যে কোন প্রডাক্টের মূল্য কম রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাই গবেষণায় বেড়িয়ে আসবে কিভাবে প্রডাক্টের মূল্য কম রাখা যাবে।
ইলন মাস্কের হাইপার লুপ পরিবহন ব্যবস্থার কনসেপ্ট হল বায়ুশূন্য নলের মধ্য দিয়ে বিমান সদৃশ ক্যাপসুল চালনা করা। এই ক্যাপসুল গুলো জেট ইঞ্জিনের মত ইলেকট্রিক প্রপেলারের মাধ্যমে বাতাস পিছনে ধাক্কা দেয় আর প্রচণ্ড দ্রুতবেগে ক্যাপসুল আগাতে থাকে। ক্যাপসুলের আকার বেশী বড় হবে না কারণ গতি বেশী করতে হলে আকার ছোট রাখতে হবে। এ ধরনের জটিল গবেষণাটি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হওয়ায় এটি অতি দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। হয়ত এমন দিন আসবে আমরা দেশের একপ্রান্ত হতে অপর প্রান্তে অত্যন্ত সুলভে এক ঘণ্টার মধ্যেই আমরা যাতায়ত করতে পারব।
ইলন মাস্কের হাইপার লুপ নিয়ে উন্মুক্ত গবেষণার প্রচলনটি মানব কল্যাণে ও পৃথিবীর উন্নয়নে ব্যাপক কাজে লাগবে। তবে মজার বিষয় হল উন্মুক্ত গবেষণা শুধুমাত্র মানব কল্যাণে করলেই সায় পাওয়া যাবে মারণাস্ত্র তৈরিতে ভলান্টিয়ার পাওয়া যাবে না এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।


Thursday, November 24, 2016

একটি খুশীর দিন ও সেই সাথে দু:খের দিন

১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে বিএমএ তে যোগদানের পর একটি বিষয় সেনা কর্মকর্তাদের চিন্তা চেতনায় টেনশনে মিশে যায় সেটা হল ঘাম ঝড়ানোর কসরত শারীরিক কসরতের পরীক্ষা ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর সকাল ০৬৩০ মিনিটে আমার সাথী অফিসারদের সাথে বিজিবি কুষ্টিয়ায় সেনা চাকুরীর সর্বশেষ তিন কি:লো: দৌড়টি নির্ধারিত ২৩ মি: সময়ের কয়েক মিনিট আগে শেষ করি এটা সকল সেনা অফিসারের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন দীর্ঘ চাকুরী জীবনে কষ্টকর ফিজিক্যাল ইফিসেন্সি টেস্ট(পিইটি) আর বর্তমানের ইন্ডিভিজুয়াল ফিটনেস টেস্ট(আইএফটি) শেষ করে সবাই যেন হাফ ছেড়ে বেচে যায় দিনের পর দিন ফিটনেসের জন্য চেষ্টা করা কঠোর পরিশ্রম করা নিয়মিত পিটি করে নিজেকে বছরের দুইবার ফিট প্রমাণ করার জন্য ছয় মাস পর পর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সত্যি মহা টেনশনের সময় এই টেস্টে সবচেয়ে ভাল যে পারফর্ম করে তাদেরও আগের রাতে কিঞ্চিত টেনশন হয় ঘুম কম হয় খাওয়া দাওয়া কমে যায় ২০১২ সালের আগে ফিজিক্যাল টেস্ট আরো কঠিন ছিল পরবর্তীতে অন্যান্য দেশের উন্নত আর্মির আদলে আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর ফিটনেস পরীক্ষা আরো স্বাস্থ্য সম্পন্ন করা হয় বর্তমান ফিটনেস টেস্ট বয়সের সাথে পরিবর্তনশীল হওয়ার কম বয়সী জুনিয়ার অফিসার সৈনিকদের জন্য আইএফটি ভয়ানক আতংক 
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীর(বিএমএ) দুই বছর সহ ২৭ বছরে প্রতি ছয়মাস পর পর এই ফিজিক্যাল টেস্টের আতংক পেরুতে হত আজ ৫৪টি ফিজিক্যাল টেস্ট সম্পন্ন করার পর যখন ৪৫ বছর বয়সের কারণে মা পেলাম তখন ভয়ানক খুশী হওয়ার কথা কিন্তু কেন যেন খুশী লাগছে না যদি বলা হয় আবার ফিজিক্যাল টেস্ট শুরু হউক আলাদা সময়ে আলাদা বয়সে মনে হয় মনটা সায় দিবে না কারণ আমার আগে যারাই ৪৫ বছরের উপরে গিয়েছে তারাই মাফ পেয়েছে তাহলে সেধে সেধে কেন আমার মনে পিইটি বা ফিজিক্যাল টেস্টের আতংকের মধ্যে ঢুকব আজ থেকে দশ বার বছর আগে একজন আর্মি ডাক্তার আমার বাৎসরিক প্রতিবেদনের মেডিক্যাল টেস্টের সময় বলেছিলেন সৈনিক জীবনের সবচেয়ে বড় ওয়েলফেয়ার হল ছয় মাস পর পর পিইটি এটা আছে বলেই অধিকাংশ সেনা সদস্য অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্ত এটা শেষ করার পর অনেক সেনা সদস্য রোগাক্রান্ত হয় ৪৫ বছরের উপরের সেনাবাহিনীতে রোগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বেশী আমি একবার চট্টগ্রামের হালিশহরে আর্টিলারি সেন্টারে ২০১০ সালে কিছু শ্রীলংকান অফিসারের সাথে ইউনিট কমান্ড কোর্স করি সেখানে একজন শ্রীলংকান লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন সে ছিপছিপে গড়ন আর সে নিয়মিত তিন কি:মি: দৌড়াতেন তার বয়স ছিল তখন ৪৭ বছর তার কাছে জানতে চাইলাম এই বয়সে সময় ধরে দৌড় দিচ্ছেন ঘটনা কি আপনার ৪৫ বছর উপরে নিশ্চয়ই পিইটি নেই তবে কেন এই দৌড় সে জানাল তাদের রিটায়মেন্টে যাওয়া ছাড়া দৌড়ের কোন শেষ নেই জেনারেল থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সুবেদার মেজর সবাইকে ফিজিক্যাল ফিটনেস টেস্ট দিতে হয় অবশ্যই বয়সের সাথে সাথে টেস্টও সহজ সহনশীল হতে থাকে সে চাপা মেরেছিল কিনা আমি অবশ্য ভেরীফাই করতে পারিনি মজার বিষয় হল, টেস্ট যতই সহজ হোক টেস্টের আতংকে নিয়মিত শারীরিক অনুশীলনের একটা চাপ থেকেই যায় এই আতংক আর যাই হোক না কেন কিছু ক্যালরি বার্ন করায় সুস্থ থাকার পথ সুগম করে যদিও ওজন নিয়ন্ত্রণের রাখার চেষ্টায় বেশীরভাগ সচেতন সেনা সদস্য ফিট থাকে ১৯৯০ হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আল্লাহর অশেষ রহমতে বিএমএর এমআইরুমে একবার চোখের কনজাংটিভাইটিসের জন্য এ্যাডমিট হয়েছিলাম এছাড়া বিএমএসহ দীর্ঘ ২৭ বছরে আল্লাহ সুস্থ রেখেছেন সিএমএইচে কখনও আমাকে ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এ্যাডমিট হতে হয়নি আমার কাছে মনে হয় পিইটি আতংকে নিয়মিত পিটি করা আর ওজন কমানোর সেনা নিয়মের কারণে এই সফলতাটা ভাগ্যে জুটেছে তাই পিইটি বিদায় দেয়ার সাথে সাথে মনে মনে ভয় পাচ্ছি গতকালও সকাল বিকাল কষ্ট করে হাটাহাটি দৌড়াদৌড়ি করছিলাম পিইটি আতংকে আগামীকাল তো সেই আতংক নেই তবে কি আমার সেই হাটা দৌড় নিয়মিত করে যেতে পারব মনে পরে কম চাকুরীর বয়সে যখন কেয়ার লেসের মত মাঝে মাঝে পিইটি ফেল করলে সিনিয়ররা লাগাতার পিইটি অনুশীলন লাগিয়ে দিতেন এতে ভয়ানক কষ্ট হতে থাকলেও মনে হয় এজন্য আজতক সুস্থ থাকতে পেরেছিলাম অনেক সাধনা করে আজ প্রায় পাঁচ বছর সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি তারপরও ভয় হয় কখন বুক হাত দিয়ে কাত হয়ে পড়ে যাই মরণ আমাদের সকলের জন্য অবধারিত তথাপিও আমাদের মাঝে কেহ সত্তর, কেহ আশি আবার কেউ বা নব্বই ক্রস করে তখন তাদের মত আয়ু পেতে লোভ হয় তার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ আর নিয়মিত শরীর চর্চার কোন বিকল্প নেই যেই পিইটি আতংকে আজতক সকাল বিকাল হাটা দৌড় করে যাচ্ছিলাম সেটি চলে যাওয়ায় নতুন অনুপ্রেরণায় নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে যুগ যুগ ধরে আমার মত সহস্রাধিক সেনা সদস্য ফিটনেস টেস্ট অতিক্রমণের পরও কঠিন অধ্যবসায়ে নিজেকে সুস্থ নীরোগ রেখেছেন সেইরূপ নিজেকেও একই অনুপ্রেরণায় সকালে হাটা দৌড়ের অভ্যাসে নিয়োজিত করতে হবে তাতেই রয়েছে সুস্থতা আরো অনুপ্রেরণা পাই আমার সেনা জীবনের অকালে অবসর নেয়া এক বন্ধু আজও মাইলের পর মাইল সাইক্যাল চালায়, সাতার কাটে প্যারাসুট/গ্লাইডার নিয়ে জাম্প দেয় আমরা নিশ্চয়ই সকলেই কোন না কোন ভাবে নিজেদের সুস্থ থাকার পথ বের করে নেই হয় খেলাধুলা বা অন্য কোন ভাবে আমরা সকলে সুস্থ থাকার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকব সেই হোক আমাদের প্রত্যয়