Pages

Thursday, September 29, 2016

ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো আজ একটা চিন্তায় বিভোর আর তা হল পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ হল আগামীর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। সোলার হোম সিস্টেমে ৪৫ লক্ষ সোলার প্যানেল বাড়িঘরে বসিয়ে আমরা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করে ফেলেছি। অথচ এখন সময় এসেছে শুধুমাত্র বিদ্যুৎহীন বাসাবাড়ির জন্যই কেবল সোলার বিদ্যুৎ নয় আমাদের কলকারখানা ও যানবাহন সমস্ত কিছুই সৌর বিদ্যুতে চালাতে হবে। এছাড়া মুক্তি নেই। ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে বাচাতে হলে বন্ধ করা প্রয়োজন কার্বন নি:স্বরনকারী ও পরিবেশ দূষণকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। আমাদের বাংলাদেশে মানুষ বেশী। প্রতি বর্গ কিমি পৃথিবীর ঘনবসতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে আছে। আমাদের জমির পরিমাণ কম। তবে কি আমরা পারব না সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। অবশ্যই তা সম্ভব। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম সৌর শক্তির প্রাপ্তির দেশগুলো সৌরশক্তি উৎপাদনে এতদূর এগিয়ে গেছে তা ভাবতে অবাক লাগে। অথচ আমাদের বাংলাদেশে ৩৬৫ দিনে ৩২০ দিনই ভালভাবে সূর্যের আলো ও তাপ পাওয়া যায়। তবে আমরা কোন যুক্তিতে পিছিয়ে থাকব। বাংলাদেশের জলাধারের পরিমাণ ৫.২৮ লাখ হেক্টর অর্থাৎ মোট আয়তনের ১১.৫৪ শতাংশ। এই জলাধারের যদি আমরা ২০% ব্যবহার করি তাহলে আমাদের ব্যবহৃত জলাধার হবে ১,০৫,৬০০ হেক্টর জলাধার বা ২,৬০,৮৩২ একর। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন অনধিক ৫ একর তাহলে ২০% জলাধারে ৫২,১৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে যা কিনা ২০৫০ সাল অবধি বাংলাদেশের সম্পূর্ণ চাহিদা মিটাবে।

সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ আমাদের দিনের চাহিদা মেটাবে। রাতের বেলার বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের দেশের জন্য বায়ু, সোলার কনসেনট্রেটর যথেষ্ট কার্যকর নয়। তবে আমরা রাতের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানী হিসাবে ধীরে ধীরে বায়ুমসের জ্বালানী সম্প্রসারিত করতে পারি। জলাধারের উপর সোলার বসালে জলাধারের পানি কম পরিমাণ জলীয় বাষ্পে পরিণত হবে। এতে জলাধারের পানি কম শুকাবে। পানির উপর প্যানেল থাকার কারণে পানি উদ্বায়ী জলীয়বাষ্প প্যানেলকে শীতল রাখবে। এতে প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৫% শতাংশ বেড়ে যাবে। ১৫% বেড়ে যাওয়ার কারণে এটি ভূমি অপেক্ষা জলাধারের স্থাপনের বাড়তি ব্যয় সংকুলান হয়ে যাবে। অর্থাৎ ১৫% সোলার প্যানেল কম কিনতে হবে। অপরদিকে ভাসমান সামগ্রী ক্রয় করতে হবে। সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় হল আমাদের মূল্যবান ভূমির অভাব আমরা এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করতে পারি।
আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ রুফটপ খালী পড়ে আছে। আমরা সেসমস্ত রুফটপ সবার প্রথমে ব্যবহার করার জন্য কাজে লাগাব। আমাদের যখন রুফটপগুলোর স্থান শেষ হয়ে যাবে তখন আমরা ভাসমান সোলার মডেলে যেতে পারি। অনেক পুকুরে বিভিন্ন মাছ চাষ করার জন্য পানির অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ঘূর্ণমান পাখা বা এ্যারোটর ব্যবহার করেন। তারা সহজেই অনেক দুর থেকে বৈদ্যুতিক লাইন না এনে পুকুরে বা জলাধারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা দিয়ে এ্যারোটরের পাখা ঘুরাতে পারেন। বাংলাদেশের অনেক স্থান আছে যেখানে সুয়ারেজ রিজার্ভারের লেক আছে। সেসব স্থানে মাছ চাষ বা সব্জি চাষ করা যায় না এবং উচিতও নয়। মাছ চাষ করলে তাতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক বেশী পরিমানে থাকে। সেই স্থানগুলি ব্যবহারে আনা যাবে। অনেক নদীর বা স্থানে মাছ চাষ হয়না। নৌচলাচল হয় না সে স্থানগুলি ভাসমান সোলারের কাজে ব্যবহার করা যায়। চট্টগ্রামের ফয়েজ লেকের মত বিস্তীর্ণ পানির আধারের উপর ভাসমান সোলার প্যানেল লাগানো হলে তা চট্টগ্রামের মেগাসিটির বেশ খানিকটা বিদ্যুৎ ব্যবহারে অবদান রাখবে ও জাতীয় গ্রিডের উপর চাপ কমাবে।

জমির সংকটের কারণে ভাসমান সোলার প্যানেল একটি অপশন মাত্র। আমাদের বাংলাদেশের মত ছোট দেশে প্রথমে আমাদের পরিত্যক্ত স্থানগুলো বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনতে হবে। তারপর কাজে লাগাতে হবে আমাদের রুফটপগুলো। তারপর আমাদের জলাধারে ভাসমান ব্যবস্থায় আমরা যেতে পারি। তবে মাছ চাষ হয় না এরূপ জলাধারগুলো এখনই আমরা আমাদের কাজে লাগাতে পারি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও কার্বন নি:স্বরন বন্ধ করার এ যুদ্ধে বিশ্বের সাথে আমার দেশ ও আমরা সকলে এখনই শরীক হতে পারি।  

Thursday, September 22, 2016

জনবসতিশূন্য তপ্ত মরুভূমি আজ সৌরশক্তির মহামূল্যবান খনি

২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে দেখতে পাচ্ছি সারা পৃথিবীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের আন্দোলন। খালী জায়গা বের কর আর সোলার পাওয়ার প্লান্ট তৈরি কর। উন্নত দেশগুলো টাকা ও সোলার প্লান্টের সামগ্রী হতে নিয়ে বসে আছে। শুধু জায়গা পেলেই সৌর প্লান্ট বসানোর জন্য প্রস্তুত। টাকা আছে। সমস্ত সামগ্রী মজুদ আছে। শুধুমাত্র  খোলা ভূমি চাই। কারণ হল, বন কাটা যাবে না। পাহাড় ধ্বংস করা যাবে না। বরফ গলানো যাবে না। এমন স্থান খুঁজতে হবে যেখানে প্রচুর সূর্যের আলো ও তাপ পাওয়া যাবে। কিন্তু ফসল নষ্ট করা যাবে না। সেই স্থানগুলি কি হতে পারে। আর কিছুই নয় সে স্থানগুলো হল দীর্ঘদিনের অবহেলায় পড়ে থাকা মরুভূমিগুলো। আজ সেই মরুভূমি কৃষিজমি থেকেও মহা মূল্যবান। কৃষি জমির একর প্রতি ফলন থেকে আরো মূল্যবান বিদ্যুৎ তৈরির কাজে ব্যয় করার সময় এসেছে। আর তা হল সৌরশক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার। আজ পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার অপরিহার্য। খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি না হলে জমিতে ফসল অপেক্ষা সৌরশক্তি উৎপাদন অধিক লাভজনক।
সাহারা পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি। আজ সেই মরুভূমির দিকে তাকিয়ে আছে গোটা আফ্রিকা ও ইউরোপ। এই মরুভূমি এখন আফ্রিকার জন্য টাকার উৎস, সুপেয় জলের উৎস ও সর্বোপরি কর্মসংস্থানের উৎস। অপরদিকে ইউরোপের মত বিদ্যুৎ এর জন্য ক্ষুধার্ত মহাদেশের জন্য প্রতিবেশী আফ্রিকার সৌর বিদ্যুৎ স্বস্থিদায়ক বিষয়। মরুভূমিতে সোলার কনসেন্ট্রেটর অনেক বেশী উপকারী। সোলার কনসেন্ট্রেটর সাশ্রয়ী উপায়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে। এটি অতি সহজ প্রযুক্তি। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি রাতের জন্য থার্মাল কনটেইনারে তপ্ত গলিত লবণ জমা করে। যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন এই গলিত লবণ বিদ্যুৎ তৈরি করে। বিষয়টি সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলছি। মনে করি ১০০ একর একটা জমিতে আপনি কয়েক হাজার বড় বড় আয়না স্থাপন করলেন। আয়না গুলোর মাঝে শত মিটার উঁচু একটি টাওয়ার স্থাপন করুন। সেই শত মিটার উঁচু টাওয়ারের উপর আয়নাগুলো হতে সূর্যের আলোর প্রতিফলন ফেলুন। টাওয়ারটির যেখানে সূর্যের আলো পড়ছে সেখানে পাইপের কয়েল বানিয়ে নিলে সেই পাইপের ভিতর দিয়ে তরল প্রবাহিত করলে তা অনেক অনেক উত্তপ্ত হয়। প্রথমে তরল লবণ ২৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা নিয়ে পাইপের মাধ্যমে টাওয়ারের মধ্য দিয়ে ৫২৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে উত্তপ্ত হয়ে একটা ইনসুলেটেড কনটেইনারে জমা হয়। সেই ইনসুলেটেড কনটেইনারে গলিত লবণের ২৪ ঘণ্টায় মাত্র .৫ ডিগ্রি তাপ কমে। এই উত্তপ্ত গলিত লবণ পানির সংস্পর্শে পানিকে বাষ্পে পরিবর্তন করে। সেই বাষ্প বা স্টিমে জেনারেটরের চাকা ঘুরে আর বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে থাকে। বাষ্প তৈরি করার পর পুনরায় গলিত লবণ অন্য একটি রিজার্ভ কনটেইনারে ২৩০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড তাপ নিয়ে চলে আসে। সেখান থেকে পুনরায় টাওয়ারে উঠে ৫২৯ ডিগ্রি পাওয়ার জন্য। এভাবেই চক্রাকারে চলমান থাকে পুরো প্রক্রিয়াটি। সূর্যতাপে ব্যাটারিতে জমা ব্যতীত রাতের বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। এখন আর সেই সমস্যা নেই। সৌরতাপ উত্তপ্ত লবনে মজুদ রেখে রাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে সৌরশক্তির আধার মরুভূমিগুলোকে করেছে আরো বেশী উৎপাদনশীল। যেসব দেশে মরুভূমি আছে তাদের এসেছে সুদিন। তারা পাবে অফুরন্ত বিদ্যুৎ আর তার উপজাত হিসাবে সমুদ্রের পানিকে বাষ্প করে সুপেয় খাবার জল ও লবণ। সোলার কনসেট্র্রেটর পৃথিবীর অনেক দেশই তৈরি করেছে এবং এটা ক্রমান্বয়ে ব্যাপক হরে বাড়বে। বাংলাদেশ মরুভূমি না থাকলেও চর অঞ্চলে বা সমুদ্র উপকুলে ছোট আকারে করা যেতে পারে।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জার্মানি ২৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তি থেকে উৎপাদন করে চলেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানি সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সৌর, বায়ু ও বায়ুমস থেকে উৎপাদন করবে ঘোষণা দিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা তারও আগে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশ ৪০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুতের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ২০১৬ সালে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ভূমির অপ্রতুলতা। পৃথিবীর ঘনবসতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে আজ পাহাড় সবুজ ফসলে মোড়া। অফসলী জমি বাংলাদেশে বিরল। বাংলাদেশে সোলার কনসেন্ট্রেটর ব্যবহার করার মত জায়গা কম। বাংলাদেশের জন্য অন্যতম ব্যবস্থা হল সোলার পিভি সিস্টেম। আর এগুলো লাগাতে হবে ছাদের উপর। ঘরের চালে। খালের উপর। রেললাইনের উপর। তৈরি করতে হবে পানির উপর ভাসমান সোলার সিস্টেম। জাপানের মত জমির ফসলের সাথে সোলার প্যানেলের শেয়ারিং ব্যবস্থাটি আমরা অনুসরণ করতে পারি। ইংরেজিতে সোলার শেয়ারিং জাপানদিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে আমরা এ ধরনের অগণিত তথ্য, ছবি ও ভিডিও পাব।
আজ থেকে হয়ত ২০০৭/২০০৮ সালে যখন জ্বালানী তৈলের দাম অনেক অনেক বেশী ছিল আমরা সকলে শঙ্কিত ছিলাম পৃথিবীর জ্বালানীর ভবিষ্যৎ নিয়ে। তার পরই পৃথিবীব্যাপী নবায়ন যোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার পৃথিবীর সামগ্রিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিল। ২০১৬ সালে পৃথিবী ব্যাপী জ্বালানী তৈলের মূল্য অনেক অনেক কমে গেল। মনে হয় ২০৩০ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলে ফসিল ফুয়েলের মূল্য আরো অনেক অনেক কমে যাবে। খনিজ তৈল আহরণকারী দেশগুলো খনিজ তৈল উত্তোলন লাভজনক না হলে তার উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিবে। আমরা সেই দিনটির অপেক্ষায় থাকব যখন পৃথিবীর সমস্ত দেশ তৈল পুড়িয়ে আর বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে না। পৃথিবীর বায়ু হবে আরো পরিষ্কার ও নির্মল।


Thursday, September 15, 2016

বৈদ্যুতিক গাড়ী ব্যতীত অন্যান্য গাড়ী অপরিষ্কার ও নোংরা

আজ থেকে একযুগ পর ঢাকার রাস্তায় যদি কোন যাত্রীবাহী বাস ও ট্যাক্সি পেট্রোল বা ডিজেল ব্যবহার করে চলাচল করে সেই গাড়ীর ধূয়া ও শব্দে আপনাকে সেই গাড়ীগুলো মনে হবে অপরিষ্কার ও নোংরা। আজ ২০১৬ সালের মাঝামাঝি দাড়িয়ে আছি যখন বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে শতভাগ টয়লেট স্যানিটারি করা হয়েছে। এখন গ্রামের মানুষকে যদি খোলা জায়গায় টয়লেট করতে বলা হয় ,তাদের কেউ স্বাচ্ছন্দ্যে নোংরা কাজটি করবে না। তেমনি যখন বৈদ্যুতিক চার্জ করা গাড়ী ব্যাপকভাবে প্রচলন হবে, তখন কেউই আর শব্দ সৃষ্টি করা আর ধোয়া সৃষ্টি করা গাড়ী পছন্দ করবে না। তখন যাদের পুরাতন গাড়ী থাকবে তারাও দেখা যাবে তাদের গাড়ীটি ইলেকট্রিক গাড়ীতে কনভার্ট করে নিচ্ছে।
ইলেকট্রিক গাড়ী ব্যবহারে আমরা শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণ থেকে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারব। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আমরা গাড়ীগুলোকে গ্রিন এনার্জি ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত করতে পারব। আজ বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে কয়লা, গ্যাস, পারমানবিক জ্বালানী, খনিজ তৈল ইত্যাদি মিশ্র জ্বালানী উৎস থেকে। আর বেশী দুরে নয় যখন অনেক দেশই সমস্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সৌর, বায়ু ও বায়ুমস থেকে। আর এভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারে পৃথিবীর পরিবেশ থাকবে আরো গ্রিন। কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের নি:স্মরণ বহুলাংশে কমানো যাবে। এখন গাড়ী গুলো যদি বিদ্যুতে চলা শুরু করে তবে আর বেশী দিন লাগবে না আমরা জ্বালানী তৈলকে গুড বাই বলতে পারব। আমাদের ধূয়াময় পরিবেশে শ্বাস নিতে হবে না।
ইলেকট্রিক গাড়ীর সবচেয়ে ভাল গুণ হল এটা ট্রাফিক জ্যামে পড়লে মটর বন্ধ হয়ে যায়। তাই শক্তি কম খরচ হয়। আস্তে চললে কম বিদ্যুৎ আর জোরে চললে বেশী বিদ্যুৎ খরচ হয়। অপরদিকে তৈলের গাড়ী স্টার্ট দিলেই তৈল খায়। বৈদ্যুতিক গাড়ী তৈলের গাড়ীর মত নিষ্ক্রিয় (আইডেল) চালনা করার প্রয়োজন হয় না।  বর্তমান সময়ে ব্যাটারি স্টোরেজ একটি বড় সমস্যা। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত উন্নত দেশে উৎপাদিত ইলেকট্রিক কার সমূহ ১০০ কি:মি: দূরত্বের বেড়িয়ার ক্রস করেনি। তাই গভেষনা চলছে। জাপান ডুয়েল কার্বন ব্যাটারি তৈরি করেছে যা এখনো (২০১৬ সালের মধ্য আগস্ট) মার্কেটে আসেনি। এ ধরনের ব্যাটারি বাজারে আসলে ব্যাটারি স্টোরেজের সম্পূর্ণ চিত্রটি পাল্টে যাবে বলে ধারনা করা যায়। এ ধরনের ব্যাটারি বর্তমান লিথিয়াম আয়ন থেকে পাঁচ গুন বেশী চার্জ ধরে রাখতে পারে। পাঁচগুণ দ্রুত চার্জ করা যাবে। কার্বন দিয়ে তৈরি ও পরিবেশ বান্ধব। রিসাইক্যাল না করলেও পরিবেশের সাথে মিশে যাবে। এই ব্যাটারি ইলেকট্রিক কারের জন্য বিপ্লব নিয়ে আসবে। আরো বেশী অধিক দুরে যাতায়াত করা যাবে। শহর এলাকায় বাসা থেকে অফিস আর অফিস থেকে বাসা এভাবে যারা যাতায়ত করেন তাদের জন্য ইলেকট্রিক কার অত্যন্ত ভাল অপশন। কারণ বাসায় রাতে চার্জ করবে আর অফিস চলাকালীন সময়ে চার্জ করবে। যারা কার নিয়ে দুরে যাবে তারা হয়তবা হাইব্রিড অপশনের গাড়ী ব্যবহার করবে যাতে তৈল ও বিদ্যুৎ দুইটি ব্যবস্থা থাকবে। তবে ব্যাটারির দ্রুত গতির চার্জিং ব্যবস্থা চালু হলে স্থানে স্থানে গ্যাস রিফিলের মত চার্জ করে অনেকদূর যাওয়া যাবে। সিএনজি গ্যাসে একটি সাধারণ সিলিন্ডার দিয়ে সাধারণত একটি মাইক্রোবাস ৮০/১০০ কি:মি: যাতায়ত করে। কিন্তু দেখা যায় এ দূরত্ব বাড়ানোর জন্য প্রায়শই মাইক্রো বাসগুলো একাধিক সিলিন্ডার ব্যবহার করে। একই ভাবে ইলেকট্রিক কারে বড় বড় একাধিক ব্যাটারি ব্যবহার করে গাড়ীর একই চার্জের ভ্রমণ দূরত্ব বাড়ানো যেতে পারে।
ইলেকট্রিক কার পরিবেশ বান্ধব। তবে এটা পরিবেশের জন্য আরো নিরাপদ হবে যদি এটার চার্জিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে সৌর শক্তির করা যায়। এতে তা শতভাগ পরিবেশ বান্ধব হবে। অনেক দেশে সোলার চার্জিং এর জন্য কার পোর্ট তৈরি করে তা সফলভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১৬ সালের মধ্যে কয়েকটি অটোরিকশার জন্য চার্জিং স্টেশন চালুর পরিকল্পনা হয়েছে এবং কয়েকটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত কয়েক বছর পর তাদের যাতায়ত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে বৈদ্যুতিক করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ভারতে বৈদ্যুতিক ট্রেন অনেক আগে থেকেই চলছে। এত বড় ট্রেন যদি বিদ্যুৎ চলমান রাখা যায় তবে ছোট ছোট কার কোন বিষয়ই নয়। লক্ষ লক্ষ গাড়ীতে ডিজেল পোড়ার চেয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে বড় পাওয়ার প্লান্ট ও বড় সোলার প্লান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তার দ্বারা গাড়ী চালনা অনেক বেশী পরিবেশ বান্ধব।

আমাদের সামনে সেই দিনটি বেশী দূরে নয় যখন আমরা সকলেই সোলার চার্জড বৈদ্যুতিক বাহন ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হব।

Thursday, September 8, 2016

নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের জন্য দ্বৈত অপটিক্যাল লাইন

আমরা যারা ঢাকার বাইরে থাকি তারা প্রায় কিছু সেবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে পারি। তা হল, ইন্টারনেট নাই? কারণ অপটিক্যাল ফাইবারের তার কাটা পড়েছে। ক্যাবল টিভি নাই, কারণ ঝড়ে গাছ পরে অপটিক্যাল লাইন ছিঁড়েছে। ল্যান্ড টেলিফোন কানেকশান নাই। ফ্যাক্স চলছে না। কারণ অমুক জায়গায় অপটিক্যাল লাইন কাটা পড়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। রাজধানীর বাইরে বসবাসরতদের নিত্য নৈমিত্তিক সমস্যা।
তাহলে এর থেকে উত্তরণের উপায় কি? রেডিও লিংক। রেডিও লিংক বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে কিন্তু সাশ্রয়ী কোন উপায় নয়। কারণ সমপরিমাণ ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে অনেক বেশী খরচ করতে হবে। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে টানা লাইন সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদী। কিন্তু ঘন ঘন লাইন কেটে মাসে একাধিক দিন ইন্টারনেট না থাকাটা অত্যন্ত দূ:খজনক একটি ব্যাপার। এখনকার দিনে ইন্টারনেট না থাকলে, ফ্যাক্স না থাকলে আর্থিক ভাবে অনেক ক্ষতি হয়।
তাহলে কি উপায়? আমাদের সাশ্রয়ী ও সহজ যোগাযোগের জন্য অপটিক্যালেই থাকতে হবে। আমাদের শুধুমাত্র একাধিক অপটিক্যাল লাইন টানতে হবে। একটা কাটা গেলে বা ফেল করলে আরেকটা বিকল্প লাইন যেন ব্যবহার করা যায়। ওভারহেড বা পিলার দিয়ে লাইন টানলে তাতে খরচ কম। কিন্তু ঝড় বা অন্যান্য কারণে সহজে ছিঁড়ে যায় বা নষ্ট হয়। অন্যদিকে মাটির নীচ দিয়ে নেয়া অপটিক্যাল লাইন সহজে নষ্ট হয় না। তবে রাস্তার পাশে খোঁড়াখুঁড়িতে লাইন কাটা পড়ে। তবে লাইনগুলো যথাযথভাবে মার্কিং করা থাকলে লোকজন হয়ত সহজে ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল লাইনগুলো কেটে ফেলতে পাড়ত না।
অপটিক্যাল ফাইবারে আমরা যে পরিমাণ তথ্য পরিবহনে ব্যবহার করছি সেই পরিমাণ তথ্য আমরা অনেক অনেক খরচ করেও সমপর্যায়ে নিতে পারব না। আমরা কেবলমাত্র ইমার্জেন্সী হিসাবে অল্প স্বল্প তথ্য স্যাটেলাইট বা অন্যান্য মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারব। বিটিএস দিয়ে ছোট এলাকার মধ্যে উচ্চ গতির ইন্টারনেট দিতে পারলেও আমরা বিটিএস থেকে বিটিএসএর উচ্চগতির তথ্য প্রবাহের জন্য পুনরায় অপটিক্যাল সংযোগের উপর নির্ভর করতে হবে।
এখনকার বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রবাহের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগই হল সবচেয়ে কার্যকরী ও দ্রুত পদ্ধতি।
মাটির নীচের লাইন কাটা পড়বে আর মাটির উপরের লাইন ছিঁড়ে যাবে। এতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দিনের পর দেন ইন্টারনেট না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা ও আউটসোর্সিং কার্যক্রম। তাহলে উপায় কি? আমাদের দেশকে কানেকটিবিটি দেয়া আন্তর্জাতিক অপটিক্যাল ফাইবার লাইন সাগরের তলদেশ দিয়ে নেয়া হয়েছে আর সেই লাইন দ্রুত মেরামতও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে টহল দল। একাধিক দল মহাসাগরের অপটিক্যাল লাইন মেরামতের জন্য টহল দিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে বড় বড় জেলার অপটিক্যাল লাইনগুলো কাটা পড়লে দ্রুতই মেরামত হচ্ছে কিন্তু তাতেও ৬/১২ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার জন্য আমরা অপটিক্যাল কাটার স্থানটি দ্রুত বের করতে পারি এতে শুধু নির্ধারিত স্থানে লোক পাঠিয়ে কাটা স্থান জোড়া দিলেই চলবে।

তাহলে ৬/১২ ঘণ্টা মেরামতের সময়টা ব্যাকআপ দিলেই চলবে। কিভাবে এটা করা যাবে? যে  কোন প্রযুক্তি সচেতন ব্যক্তির কাছে তার উত্তর আছে। একাধিক লাইন একাধিক পথে বসাতে হবে। কিছুদূর পর পর তাদের মাঝে আন্ত:সংযোগ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কুষ্টিয়া জেলার ইন্টারনেটের কুষ্টিয়া-পাবনা সংযোগ কাটা পড়লে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ যশোরের সাথে সংযোগ হবে। যশোর সংযুক্ত থাকবে নতুন পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার সাথে। আবার যশোরের সংযোগ কাটা পড়লে যশোর সংযোগ পাবে যমুনা ব্রিজ দিয়ে ঢাকার সাথে পাবনা-কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ -যশোর এইপথে। আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের পাশাপাশি ক্যাবল টিভি অপারেটরদের  পিলার ধরে টানা ওভারহেড লাইনের মাধ্যমেও সংযোগ করা যায়। মনে করি পাবনা কুষ্টিয়া লাইন কাটা পড়ল। এতে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন ঠিক হতে হতে বিকল্প লাইন ঝিনাইদহ যশোরের মাধ্যমে সংযোগ পাবে। ঝিনাইদহ-যশোরের লাইন বিকল হলে ক্যাবল অপারেটরের  অব্যবহৃত ফাইবারের মাধ্যমে সীমিত আকারে কুষ্টিয়া-পাবনা ইন্টারনেটের অপটিক্যাল লাইন চালু হবে। সীমিত আকারে এ জন্য বললাম ক্যাবল অপারেটরদের অপটিক্যালের কিছু সংখ্যক অব্যবহৃত তন্তু রিজার্ভ রেখে কাজটি করা যেতে পারে। অপরদিকে ক্যাবল অপারেটরদের লাইন বিচ্ছিন্ন থাকার মত দুর্দিনে তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড ফাইবার দিয়ে সহায়তা দেয়া যেতে পারে। ক্যাবল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সকল সংস্থার কুইক রিয়েকশন টিম অবশ্যই রাখা প্রয়োজন। অপটিক্যাল ফাইবারের সংযোগ নিয়মিত চালু রাখায় এখন আর কোন সংস্থার খামখেয়ালীর কোন বিষয় নয়। এগুলো তথ্যের চালিকা শক্তি ও তথ্য প্রবাহের লাইফ লাইন। এখন আমাদের দেশ যতই উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে ততই আমাদের জন্য একাধিক পথে ও একাধিক পদ্ধতিতে বিকল্প  অপটিক্যাল ফাইবার চালু করতে হবে। আমি আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ছোট্ট একটি ক্যাম্পাসে আন্ডারগ্রাউন্ড ও ওভারহেড দুইভাবে ক্যাম্পাসে অপটিক্যাল টানিয়েছি। এতে ক্যাবল টিভি, ইন্টারনেট ও সিসি ক্যামেরার সংযোগ যে কোন উপায়ে বিচ্ছিন্ন হলে তা দ্রুত চালু করা যাচ্ছে শুধুমাত্র কানেকশন বদল করলেই হল। মুল প্রবাহটা বা প্রাইমারী মাধ্যম হল আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন। আন্ডারগ্রাউন্ড সহজে সমস্যা করে না। আর সমস্যা করলে সারতেও অনেক সময় লাগবে। আন্ডারগ্রাউন্ড মেরামতের সময়টা ব্যাকআপ দেবে ওভারহেড লাইন। ওভারহেড লাইন সব সময় ব্যবহার নাহলেও তা কম ইম্পরট্যান্ট দুই একটি সিসি ক্যামেরা জাতীয় কাজে ব্যবহার  করতে হবে যেন লাইনটি নষ্ট হলে সাথে সাথে মেরামত করে সব সময় চালু রাখা যায়। নচেৎ এক সময় এমন হতে পারে আন্ডারগ্রাউন্ড অপটিক্যাল লাইন নষ্ট হয়েছে আর ওভারহেড বিকল্প লাইনও নষ্ট হয়ে আছে। ওভারহেড লাইন যেহেতু দ্রুত মেরামত করা যায় তাই নষ্ট হলে তা দ্রুত মেরামত করে রাখতে হবে আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের বিকল্প হিসাবে। এখন সময় এসেছে আমাদের যে সমস্ত লাইন অপটিক্যালে ব্যবহৃত হচ্ছে তার একাধিক পথে একাধিক অপটিক্যাল লাইন টানতে হবে । এছাড়াও আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের পাশাপাশি আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনও টানতে হবে। আসুন আমরা অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের বিষয়ে সময় উপযোগী ব্যবস্থাপনা করি। এতেই রয়েছে আমাদের দেশের তথ্য প্রযুক্তির সামগ্রিক উন্নয়ন ও মঙ্গল।

Thursday, September 1, 2016

ফুরিয়েছে ইন্টারনেট হতে ডাউনলোড করে হার্ডডিস্কে স্টোর করা

আমি আজ থেকে একবছর আগে আমার কাছে জমানো ছবি, অডিও ও ভিডিও গান এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউন লোড করা সমস্ত পিডিএফ ফাইল ইত্যাদি অনেক কিছু মুছে দিয়ে আমার পুরাতন ল্যাপটপের হার্ডডিক্স খালি করে দিলাম। আগে অনেক বড় বড় স্টোরেজ সহ হার্ডডিস্ক নিয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করতাম। এখন কোন কিছু ইন্টারনেট থেকে ডাইন লোড করে হার্ডডিস্কে নিয়ে সেইভ করার কথা আর তেমন মনে পড়ে না। কারণ একটাই ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার। ইন্টারনেট ছাড়া আমরা হয়ত আমাদের সময়কে চিন্তা করতে পারিনা। এখন ইন্টারনেট না প্রাপ্তির ভাবনা অনেক কমে গেছে। হাটে মাঠ ঘাটে মোবাইল অপারেটররা ইন্টারনেট রাখবেই। কারণ এখন ভয়েজ কল থেকে ডাটা ব্যবহারে মোবাইল অপারেটরদের আয় বেশী। ইন্টারনেট সকল স্থানে প্রাপ্য হলে ইন্টারনেট থেকে ডাউন লোড করে পিডিএফ ফাইল, অডিও, ভিডিও ও ছবি ফাইল হার্ডডিস্কে সেভ করে জমিয়ে রাখার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। কারণ এখন প্রায় সব স্থান থেকে থ্রিজি ইন্টারনেটের কারণে যথেষ্ট ভাল গতির ইন্টারনেট বাংলাদেশের প্রায় সব স্থান হতে পাওয়া যায়। আর থ্রিজি ইন্টারনেট মানেই ভাল গতি ও বাফার ছাড়া ইন্টারনেট। এ কারণে ইন্টারনেট হতে কোন কিছু ডাউন লোড করা ও স্টোর করে ব্যবহার করা দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। অনেক সময় হার্ডডিস্কে কপি করে হার্ড ডিস্কে খোজার চেয়ে গুগলে খুঁজে নেয়া মনে হয় আরো সহজ। ইউটিউবে কোন ফাইল ডাউনলোড করা যত না যন্ত্রণার তার চেয়ে অনলাইনে দেখা অনেক সহজ। আপনি ১০০০টি ভিডিও আপনার হার্ডডিস্কে কপি করে রাখলেন। কোন নির্দিষ্ট গান খুঁজে পেতে আপনার যে সময় লাগবে তার চেয়ে দ্রুত আপনি ইউটিউব থেকে খুঁজে পাবেন। আবার আপনার কাঙ্ক্ষিত গান আপনার মজুদ করা একহাজার গানের মধ্যে আছে কিনা আপনার পক্ষে মনে রাখাও কঠিন। আর দিনের পর দিন ভিডিও অডিও কোয়ালিটির উন্নতি হওয়ায় এখন স্টোর করে লাভ নাই লেটেস্ট ভিডিও ও অডিও ডাউনলোড করাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। তবে কোথাও থ্রিজি ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলে বা ব্রডব্যান্ড না থাকলে ইন্টারনেট হতে ফাইল ডাউন লোডের প্রয়োজন হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে ঘন ঘন প্রয়োজন এরূপ কোন ফরমেট বা তথ্যাদি রাখা যেতে পারে। অফিসের সকল ফাইল যা অনলাইনে রাখা নিরাপদ না।  সেক্ষেত্রে সেগুলো স্টোর করা যেতে পারে। এছাড়া ইন্টারনেট হতে কোন ফাইল সেভ করার প্রয়োজন দেখি না। এমনকি ইম্পরট্যান্ট ফাইল বরং ক্লাউডে আপলোড করে রাখাটা নিরাপদ। নিজের ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট স্ক্যান করা কপিও অনলাইন স্টোরেজ কপি করে রেখে দিলে তা সহজে যে কোন প্রয়োজনে যে কোন স্থান হতে ব্যবহার করা যায়। অনলাইন স্টোরেজ ড্রপবক্স ছাড়াও আরো অনেক মাধ্যম ও সার্ভিস আছে আমরা আমাদের জন্য সুবিধা জনক সার্ভিসটি ব্যবহার করতে পারি। আমরা ইন্টারনেটে কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও আমরা আমাদের অনলাইন স্টোরেজ বা ক্লাউডে সেভ করতে পারি।
আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় ফাইল হার্ডডিস্ক বা ল্যাপটপে কপি করে রাখলে তা নষ্ট হতে পারে বা হারিয়ে যেতে পারে। তাই অনলাইন স্টোরিং একটি ভাল  অপশন। অনেক সময় বাসা বা অফিসে সার্ভিসিং এর লোকজন ও বাচ্চারা ল্যাপটপ নাড়াচাড়া করে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু সেভ না করাই ভাল। প্রয়োজনীয় কিছু থাকলে তা ক্লাউডে অর্থাৎ অনলাইন স্টোরেজে রাখা ভাল। যে সব বিষয় সাধারণ ক্যাচ ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে পাওয়া যায় সে সব কনটেন্ট ল্যাপটপে বা ডেস্কটপে সেভ করার প্রয়োজন নেই। মোবাইলের স্টোরেজে তো সেভ করার প্রশ্নই উঠে না। মোবাইল স্টোরেজ সাধারণত লিমিটেড হয়।
ইন্টারনেট ব্যাপক প্রাপ্তির আগে আমরা প্রচুর সিডি জমাতাম। আবার মোবাইল হার্ডডিস্কে সংরক্ষণ করতাম। এখন মনে হয় তার প্রয়োজন নেই। বই পড়া আমার শখ। এই শখের জন্য আমি অনেক অনেক পিডিএফ ফাইল স্টোর করতাম। এখন দেখি আমার স্টোর থেকে বের করতে বা খুঁজতে যত সময় লাগবে তার চেয়ে দ্রুত গতিতে ইন্টারনেটে সার্চ করে বের করা যায়। তাই পিডিএফ বই জমানো ছেড়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে দেখা যায় কোন কোন জমানো কনটেন্ট ল্যাপটপে বছরের পর বছর ব্যবহার ছাড়া আছে। তাই যে সব কনটেন্ট ব্যবহার ছাড়া জমা আছে তা মুছে দেয়া অত্যাবশ্যক। তথ্যের নিরাপত্তায়ও এখন কোন কিছু ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা মোবাইলে স্টোর করা ঠিক না। আপনি হয়তবা বেখেয়ালে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্ট ডাউনলোড করলেন। সেই ল্যাপটপ, কম্পিউটার বা স্মার্টফোন সার্ভিস সেন্টারে বা হারিয়ে গিয়ে  অন্য কারো হাতে পড়ল এতে আপনার সন্মান হানি বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেহাত হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তাই কোন কিছু স্টোর করা প্রয়োজন নেই। অনলাইনে সব আছে কেন আমরা স্টোর করব। তাই এখনকার স্লোগান হতে পারে ব্যক্তিগত গ্যাজেটে নো ডাটা স্টোরেজ
নিজের তৈরি কোন লেখা লেখি বা প্রেজেন্টেশন যা অনলাইনে নাই তা স্টোর করা যেতে পারে। তবে এগুলো ড্রপ বক্সে বা এজাতীয় অনলাইনে রাখলে ভাল যাতে দ্রুত যে কোন সময় যে কোন স্থান হতে ব্যবহার করা যায়। এমনকি তা অন্যদের সাথেও শেয়ার করা যাবে খুব সহজে। ইমেইল, ভাইবার ও এসএমএস যে কোন মাধ্যমে লিংকটা পাঠাতে পারলেই কাজ হয়ে যাবে।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা সিডি কেনা প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। আমরা মোবাইল হার্ডড্রাইভ ক্রয় করে তা ব্যবহার করছিলাম। এখন তারও প্রয়োজন কমে আসছে। তথ্যের নিরাপত্তার দিক দিয়ে চিন্তা করলে নো স্টোরেজই গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। আসুন আমরা ডাটা স্টোরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ ছেড়ে দিয়ে অনলাইনে অভ্যস্ত হই।