পৃথিবীর উন্নত
দেশগুলো আজ একটা চিন্তায় বিভোর আর তা হল পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। পরিবেশ
বান্ধব বিদ্যুৎ হল আগামীর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। সোলার হোম
সিস্টেমে ৪৫ লক্ষ সোলার প্যানেল বাড়িঘরে বসিয়ে আমরা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করে ফেলেছি।
অথচ এখন সময় এসেছে শুধুমাত্র বিদ্যুৎহীন বাসাবাড়ির জন্যই কেবল সোলার বিদ্যুৎ নয়
আমাদের কলকারখানা ও যানবাহন সমস্ত কিছুই সৌর বিদ্যুতে চালাতে হবে। এছাড়া মুক্তি
নেই। ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে বাচাতে হলে বন্ধ করা প্রয়োজন কার্বন নি:স্বরনকারী ও পরিবেশ
দূষণকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। আমাদের বাংলাদেশে মানুষ বেশী। প্রতি বর্গ কিমি
পৃথিবীর ঘনবসতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে আছে। আমাদের জমির
পরিমাণ কম। তবে কি আমরা পারব না সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। অবশ্যই তা সম্ভব।
বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম সৌর শক্তির প্রাপ্তির দেশগুলো সৌরশক্তি উৎপাদনে এতদূর
এগিয়ে গেছে তা ভাবতে অবাক লাগে। অথচ আমাদের বাংলাদেশে ৩৬৫ দিনে ৩২০ দিনই ভালভাবে
সূর্যের আলো ও তাপ পাওয়া যায়। তবে আমরা কোন যুক্তিতে পিছিয়ে থাকব। বাংলাদেশের
জলাধারের পরিমাণ ৫.২৮ লাখ হেক্টর অর্থাৎ মোট আয়তনের ১১.৫৪ শতাংশ। এই জলাধারের যদি
আমরা ২০% ব্যবহার করি তাহলে আমাদের ব্যবহৃত জলাধার হবে ১,০৫,৬০০ হেক্টর জলাধার বা ২,৬০,৮৩২
একর। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন অনধিক ৫ একর তাহলে ২০% জলাধারে
৫২,১৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে যা কিনা ২০৫০ সাল অবধি
বাংলাদেশের সম্পূর্ণ চাহিদা মিটাবে।
সোলার প্যানেলের
বিদ্যুৎ আমাদের দিনের চাহিদা মেটাবে। রাতের বেলার বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য
আমাদের দেশের জন্য বায়ু, সোলার কনসেনট্রেটর যথেষ্ট কার্যকর নয়। তবে
আমরা রাতের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানী হিসাবে ধীরে ধীরে বায়ুমসের জ্বালানী
সম্প্রসারিত করতে পারি। জলাধারের উপর সোলার বসালে জলাধারের পানি কম পরিমাণ জলীয়
বাষ্পে পরিণত হবে। এতে জলাধারের পানি কম শুকাবে। পানির উপর প্যানেল থাকার কারণে
পানি উদ্বায়ী জলীয়বাষ্প প্যানেলকে শীতল রাখবে। এতে প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা
১৫% শতাংশ বেড়ে যাবে। ১৫% বেড়ে যাওয়ার কারণে এটি ভূমি অপেক্ষা জলাধারের স্থাপনের
বাড়তি ব্যয় সংকুলান হয়ে যাবে। অর্থাৎ ১৫% সোলার প্যানেল কম কিনতে হবে। অপরদিকে
ভাসমান সামগ্রী ক্রয় করতে হবে। সবচেয়ে মূল্যবান বিষয় হল আমাদের মূল্যবান ভূমির
অভাব আমরা এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করতে পারি।
আমাদের দেশে লক্ষ
লক্ষ রুফটপ খালী পড়ে আছে। আমরা সেসমস্ত রুফটপ সবার প্রথমে ব্যবহার করার জন্য কাজে
লাগাব। আমাদের যখন রুফটপগুলোর স্থান শেষ হয়ে যাবে তখন আমরা ভাসমান সোলার মডেলে
যেতে পারি। অনেক পুকুরে বিভিন্ন মাছ চাষ করার জন্য পানির অক্সিজেনের সরবরাহ
বাড়ানোর জন্য ঘূর্ণমান পাখা বা এ্যারোটর ব্যবহার করেন। তারা সহজেই অনেক দুর থেকে
বৈদ্যুতিক লাইন না এনে পুকুরে বা জলাধারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা দিয়ে এ্যারোটরের
পাখা ঘুরাতে পারেন। বাংলাদেশের অনেক স্থান আছে যেখানে সুয়ারেজ রিজার্ভারের লেক
আছে। সেসব স্থানে মাছ চাষ বা সব্জি চাষ করা যায় না এবং উচিতও নয়। মাছ চাষ করলে
তাতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক বেশী পরিমানে থাকে। সেই স্থানগুলি
ব্যবহারে আনা যাবে। অনেক নদীর বা স্থানে মাছ চাষ হয়না। নৌচলাচল হয় না সে স্থানগুলি
ভাসমান সোলারের কাজে ব্যবহার করা যায়। চট্টগ্রামের ফয়েজ লেকের মত বিস্তীর্ণ পানির
আধারের উপর ভাসমান সোলার প্যানেল লাগানো হলে তা চট্টগ্রামের মেগাসিটির বেশ খানিকটা
বিদ্যুৎ ব্যবহারে অবদান রাখবে ও জাতীয় গ্রিডের উপর চাপ কমাবে।
জমির সংকটের কারণে
ভাসমান সোলার প্যানেল একটি অপশন মাত্র। আমাদের বাংলাদেশের মত ছোট দেশে প্রথমে
আমাদের পরিত্যক্ত স্থানগুলো বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনতে হবে। তারপর কাজে লাগাতে
হবে আমাদের রুফটপগুলো। তারপর আমাদের জলাধারে ভাসমান ব্যবস্থায় আমরা যেতে পারি। তবে
মাছ চাষ হয় না এরূপ জলাধারগুলো এখনই আমরা আমাদের কাজে লাগাতে পারি। গ্লোবাল
ওয়ার্মিং ও কার্বন নি:স্বরন বন্ধ করার এ যুদ্ধে বিশ্বের সাথে আমার দেশ ও আমরা সকলে
এখনই শরীক হতে পারি।