কেউ যদি বলে আমি ভাল আছি। পৌঁচ পাস বাড়াতে চাই বা শো অফ করতে চাই। তার জন্য
একটা প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ঘোরা খুবই ভাল অপশন। ইনকাম ভাল থাকলে প্লাটিনাম
ক্রেডিট কার্ড মন্দ না। আমেরিকার শতকরা ৯৯ জন ক্রেডিট কার্ড নিয়ে চলাফেরা করে।
অনেকে আবার একসাথে অনেকগুলি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে গর্বিত আছেন। অনেকে আবার এক
ক্রেডিট কার্ডের লোণ নিয়ে আর এক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পরিশোধ করে থাকেন। ছোট বেলা
থেকে আমার বাবা মা লোণ না করার জন্য আমাদের সব সময় বলতেন। তথাপিও চাকুরী জীবনের
প্রথম দিকে ওভার ড্র আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতাম। চাকুরী জীবনের প্রথম প্রায়
১৫ বছরই বলা যায় ওডি আর ক্রেডিট কার্ডের লোনে কাটিয়েছিলাম। শখ করে এটা ওটা কিনে
ফেলতাম। আর ওডি না করে যে কোন কিছু কেনা যায় এটা চিন্তা করতে পারতাম না। আমি ১৯৯৭
সাল হতে স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নিয়েছিলাম। ২০০৬ সালে
ট্রাস্ট ব্যাংকের ডেভিট কার্ড হাতে পাওয়ার পর থেকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড
ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সমর্পণ করি। ক্রেডিট কার্ডের লোণ ও একাউন্টের ওডির সুদ
দিয়ে আমার আজো মনে হয় আমি বেতনের প্রায় ৫-১০% টাকা হারাতাম। অর্থাৎ ওডি ও ক্রেডিট
কার্ডের কল্যাণে যে প্রতি মাসে ২০০০/৩০০০ টাকা লস করতাম। তা যদি আমি তখন থেকে
জমাতাম। আমি নিশ্চিত। এখন আমি সেই লস এমাউন্ট থেকে ২০১৭ সালে ২৭ বছর চাকুরীতে অর্ধ
কোটি টাকা জমাতে পারতাম। ২০১৩ সাল থেকে আমি প্রতিঞ্জা করি আমি ওডি ছাড়া চলব। প্রয়োজনে
কোন কিছু কিনতে হলে ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে কিনব। সত্যি কথা বলতে কি ওডি ও ধার দেনা
মুক্ত থাকা অত্যন্ত শান্তির বিষয়।
ক্রেডিট কার্ড ও ওডি/লোন মুক্ত জীবন
কত যে মুক্তি তা যারা এনজয় করতে পারেন
তারাই জানে। আমি লোন মুক্ত হওয়ার পর
সত্যি টের পাচ্ছি লোন না থাকায় সুদ না দেয়ার আনন্দ। জীবনের প্রথম দিকে যারা লোন দিয়ে শুরু করে তারা
সত্যি দুর্ভাগা। আর যারা “কার লোনে” প্রাইভেট কার কিনে জীবন শুরু করে তারাই জীবনের শেষে যদি যথেষ্ট পরিমাণে ইনকাম
বাড়াতে না পারে আমি নিশ্চিত তারা যথেষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়ও করতে পারবে না। একটা সূত্র আছে। আমরা যা আয় করি, তার চেয়ে কম ব্যয় করে সঞ্চয় বা ইনভেস্ট
করি, তাতে আমাদের গ্রোথ হতে বাধ্য। তাই
কখনো আজ টাকা নেই, কাল হবে। তাই আজ গাড়ী চালাই। কারণ আগামীকাল গাড়ীর
এনজয় করার বয়স থাকবে না। বিষয়টা এরূপ নয়। যেটা আমি টাকা জমিয়ে
নগদে কিনতে পারছি না। সেটা কাম্য নয়। ব্যবসার সামগ্রী বা উপার্জনের সামগ্রী
আমি বাকীতে নিতে পারি কিন্তু ভোগ্য পণ্য নয়। যদি কোন কিছু আমি নগদে কিনতে না পারি
তবে সেটার জন্য আমি যোগ্য নই। সেভাবেই আমাদের চিন্তা করতে হবে। অনেকে আবার চিন্তা
করে ধার কর্জ করে একটা দামী গাড়ী কিনে ফেলি। গাড়ীর উসিলায় একটা ধনী পাত্রী পাব।
তখন ধনী পাত্রীর টাকা দিয়ে গাড়ী বাড়ী করে ফেলব। সেটা আর একটা ভুল। সেই
অসামঞ্জস্য ধনী ঘরের বৌয়ের খরচ সামলাতে তখন আরো ফতুর হতে হয়। তাই লোন নয় ও ক্রেডিট কার্ড নয়।
বাংলাদেশে এখনও ব্যাপক ভাবে ক্রেডিট কার্ড চালু হয়নি। ব্যাংকগুলো বেশ সচেতন
রয়েছে ব্যাপক ভাবে ক্রেডিট কার্ড চালু করতে। ক্রেডিট কার্ড মানুষের জন্য কত বড়
ক্ষতি তা ভূক্তভোগীরাই জানে। ক্রেডিট কার্ডে মাসিক কিস্তি সুবিধা দেয়। অথচ যে
কোন ব্যাংকারই জানে ওডি করে ক্রয় করা কিস্তি থেকে কেনা থেকে লাভজনক। আবার নিয়মিত
মিনিমাম টাকা পরিশোধ করলে পরবর্তীতে ক্রেডিট লিমিট বাড়ানো হয়। কত সুখকর বিষয়।
স্থানীয় বাংলায় বলা যায় বাঁশের উপর বাঁশ অফার।
ক্রেডিট কার্ডের যত ভাল অফারই থাকুক না কেন। কেউ নিজেকে ক্রেডিট কর্ডের স্লেব
বা দাস বানাতে না চাইলে ক্রেডিট কার্ডের চক্কর
দূরে থাকুন। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের মধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার শতকরা
৯০% ব্যক্তিরাই ২ থেকে ৩% পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের মাসিক চক্র বৃদ্ধি সুদ পরিশোধ
করে। যা কিনা বছর শেষে ২০ থেকে ৩৫ % সুদ
হয়। এটা মহাজনী লোন থেকেও সাংঘাতিক। পরিশেষে আমরা আশা করি বাংলাদেশের মানুষরা যেন
ইউরোপ ও আমেরিকার মত ক্রেডিট কার্ড রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। আর
দেরী নয় এখনই ছাত্র/ছাত্রী থেকে শুরু করে সমাজের সকলের মাঝে ক্রেডিট কার্ড বিরোধী সচেতনতা
বাড়াতে হবে।