Pages

Wednesday, October 31, 2018

একালের সেনসিটিভ ছেলেমেয়ে

ছোটবেলায় পিতামাতার কাছ থেকে আমরা যা মার খেতাম, এখনকার বাচ্চারা হয়ত তা কল্পনা করতে পারবে না। আমাদের সময় মারধর হত ঘরে ও স্কুলে। পিতা মাতা ও স্কুলের টিচাররা মনে হয় অথরাইজ ছিল মারধর করার জন্য। কারণে অকারণে বেতের বাড়ি ছিল একটা সহজ লভ্য বিষয়। স্কুল কলেজ থেকে বেতের বারি বিতাড়িত হ‌য়ে‌ছে। বেতের বারি ও সাথে অকথ্য বকাঝকা বোনাস থাকত। এখন বেতের বারি নেই। অকথ্য কথা বোনাস হিসাবে পাওয়া যায় না। এখনকার বেশীরভাগ পরিবারের ছেলেমেয়েদের দেখা যায় অনেক বেশী সেনসিটিভ। তারা বকা ঝকা সহ্য কর‌তে পা‌রে না। অল্প‌তেই  তারা ইমোশনাল হ‌য়ে যায়। এই  পৃথিবীর কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু ক‌রে সব ক্ষেত্রেই সহনশীলতা অনেক বেশী জরুরী। সব সময় ভাল ব্যবহার ও যথাযথ মর্যাদা পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষ উন্নতির জন্য ও পেটে খাদ্যের নিশ্চয়তার জন্য ছুটে চলেছে। প্রতিনিয়ত মানুষ যুদ্ধরত। এই  যুদ্ধ চলছে, থামার কোন সু‌যোগ বা লক্ষণ নেই। তাই উঠতি বয়সের বাচ্চা‌দের সহনশীল বানা‌নোটা অতি জরুরী।
আমি এক‌টি ঘটনা শেয়ার করছি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী একজন ছাত্র প্রিটেস্ট পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফলাফল না করার কারণে ক্লাস শিক্ষক পিতাকে ছেলেসহ প্রিন্সিপ্যালের সাথে দেখা করতে বললেন। এ খবর শোনার পর ছাত্রটি আপসেট হয় করে। এর তিন মাস আগে থেকে মাইগ্রেণের সমস্যাটা বেশী ছিল। তখন মাইগ্রেন ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে পাঁচদিনই বিছানায় শোয়া। এভাবে দেড় মাস অসুস্থ থাকল, এর মধ্যে চার জন ডাক্তার বদল হয়েছে। কোন সুরাহা হচ্ছে না। মাইগ্রেন বেড়েই যাচ্ছে। চোখের চশমার পাওয়ার ঠিক, এক্সরে করে সাইনাসের কোন সমস্যা ধরা পড়েনি। সিটি স্ক্যান ব্রেনের করে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। মাইগ্রেণের অনেক কারণ অজানা। কারণ পিতাকে নিয়ে প্রিন্সিপ্যালের মুখোমুখি হওয়ার হিমুলিয়েশন সে নিজের অজান্তে হয়তবা আঘাত পেয়ে থাকতে পারে। ফলে মাইগ্রেণের তীব্রতা এরুপ কোন অজানা কারণ থাকতে পারে। মাইগ্রেণের অনেক অনেক কারণ ডাক্তারদের অজানা। ছেলে পরীক্ষায় খারাপ করায় তাকে পেরেন্টসহ প্রিন্সিপ্যাল ডাকবে, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তা অনেক সেনসিটিভ বাচ্চারা মানসিক ভাবে মুষড়ে যেতে পারে এবং অসুস্থ হতে পারে।
তার মাইগ্রেণের ভয়াবহতায় দেড় মাস চিকিৎসা চলার পর তার সাধারণ পড়া‌শোনার ধারা বদল ক‌রে কম চাপ সৃষ্টি ক‌রে তার উপ‌যোগী বিষ‌য়ে পড়ার ব্যবস্থা করতে হল।
পৃথিবীটা আমরা যেভাবে চাই। সেভাবে পৃথিবীটা পাব না। আমরা যেভাবে চিন্তা করি। পৃথিবীর সব মানুষ সেভাবে চিন্তা করব‌ে না। সকল মানুষের আর্থিক অবস্থা এক রকম নয়। যেহেতু সমতা এক রকম নেই। মানুষের আচরণ এক হবে না। কখনও কর্মক্ষেত্রে  পাওয়া যাবে ভাল বস। কখনও পাওয়া যাবে বুলি বস। সমস্ত ধরনের বস‌দের সাথে কাজ করার প্রশিক্ষণ সেন্টার হ‌তে পা‌রে স্কুল বা কলেজ।
একটা ভাল বিষয় দেখলাম, এখনকার স্কুল গুলিতে ম‌টি‌ভেটর বা কাউন‌সিল‌রের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এটা একটা ভাল ব্যবস্থা। স্কুল‌ের বাচ্চা‌দের সব সময় পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে খাপ খাওয়া‌নো শেখা‌নোটা অনেক বেশী প্র‌য়োজনীয়। তা‌দেরকে পৃথিবীর বাস্তবতা ‌শেখা‌নোটা অনেক জরুরী। পৃথিবীর সকল মানুষ কখ‌নো ভাল করা সম্ভব নয়। উন্নত পড়া‌শোনা। উন্নত জীবন বিধান দ্বারা মানুষের অপরাধ কমা‌নো ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু অপরাধ নির্মূল করা যাবে না। অপরাধ নির্মূল করার জন্য পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্য‌বো‌ধের বিকাশ অনেক বেশী প্র‌য়োজন। পিতামাতা‌কে সন্তান গ্রো‌মিং করার শিক্ষাটা গ্রহণ করার প্র‌য়োজন। স্কুল ও কলেজের শিক্ষক‌দের প্র‌য়োজন জীবনযাপন বিষ‌য়ে ম‌টি‌ভেশন করা। কিভাবে বিরূপ অবস্থা মোকা‌বেলা কর‌তে হবে তার উপর মনস্তাত্ত্বিক ট্রেনিং দি‌তে হবে। কিভাবে কারো টিজিং, এবিউজ ব্যবহার ও বুলি মোকা‌বিলা কর‌তে হবে তার ট্রেনিং এখনকার ছেলেমেয়েদের জন্য প্র‌য়োজনই নয়, অত্যাবশ্যকীয় বটে। পরিশেষে বলা যায়, ছেলেমেয়েদের পিতামাতা‌কে ডে‌কে হেনস্তা করা অপেক্ষা ম‌টি‌ভেটর বা কাউন‌সিলা‌রের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা বলে অতঃপর পিতামাতা‌কে ডাকাটা উত্তম। হুট ক‌রে পিতামাতা‌কে জবাবদী‌হিতা করার জন্য ডাকাটা ছেলেমেয়েদের নার্ভাস সিস্টেম ব্রেক কর‌তে পা‌রে।

Thursday, October 25, 2018

ধনী হয়েও শত্রু মুক্ত থাকা


বাংলাদেশে নাকি ১৭% হারে কোটিপতি বাড়ছে। যা কিনা বিশ্বের সর্বোচ্চ। আমাদের চারিদিকে অনেকের সুন্দর চকচকে গাড়ী ও চোখ ধাঁধানো বাড়ী আমাদের নজর কারে। এই ধরনের বাড়ী ও গাড়ীতে মানুষের নজর কারে। মনে করুন, আপনার কাছে একটি বাড়ী ও সম্পত্তি আছে; যার মূল্য দশ কোটি টাকা। এরূপ কোটি পতির সংখ্যা এই দেশে কয়েক লক্ষ। আপনি সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিলেন। আপনি দশ কোটি টাকা তিন চারটি ব্যাংকে ইসলামী আমানত হিসাবে রেখে দিলেন। আপনি যদি ৬% করে পান, তবে আপনি মাসে পাঁচ লক্ষ টাকা পাবেন। এখন এই পাঁচ লক্ষ টাকায় আপনি বাড়ী ভাড়া করলেন ৬০হাজার টাকায়, দুইটি গাড়ী ভাড়ায় রাখলেন অন কল ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা। ১ লক্ষ টাকা চলে গেল। এখন আপনার বাচ্চাদের জন্য খরচ করলেন মাসে আরো ১ লক্ষ টাকা। কাজের কাজের লোক ও বুয়া ৫০ হাজার টাকা। চিকিৎসা ও অন্যান্য ৫০ হাজার টাকা; মোট ১ লক্ষ। বাসার বাজার,নামীদামী হোটেলে খাওয়া ও বেড়ানো ১ লক্ষ টাকা। ইনকাম ট্যাক্স ও মাসিক সঞ্চয় ১ লক্ষ টাকা। তাহলে ৫ লক্ষ টাকার বিতরণ হয়ে গেল। খেয়াল করে দেখুন, আপনার বাড়ী নাই। গাড়ী নাই। আপনার শত্রু নাই। আপনার ভাড়া বাড়ী। ভাড়া গাড়ী। সমস্যা হল, পছন্দ হচ্ছে না, চালকসহ গাড়ী বদল করে নিলেন। বাড়ী পছন্দ হচ্ছে না, বদলিয়ে নিলেন। আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আপনি বাড়ী ও গাড়ীর মালিক না হওয়ায়, আপনি ভাদাইম্মা। আপনার আত্মীয় স্বজন আপনার ইগনোর করবে আপনার পিছনে লাগতে আসবে না। আপনার কাছে কিছু আশা বা চাহিদা করবে না। কারণ আপনি ভাদাইম্মা। অথচ আপনি নতুন চকচকে ভাড়া করা বাড়ীতে থাকছেন। চকচকে ভাড়া করা গাড়ীতে চড়ছেন। বাড়ীর জন্য আপনার ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না। গাড়ীর জন্য ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না। আপনি একাধিক ব্যাংকে টাকা রাখার কারণ হল, কোন ব্যাংক যদি হায় হায় হয়ে যায়, আপনি পুরোটা হারাবেন না। অনেকে বলবেন, জমি খাটি। অথচ এই জমি দখল হয়ে যেতে পারে। মামলা করে আপনি ফতুর হয়ে যাবেন। আপনি যদি একটি গাড়ী পোষেন আপনার মাসে ৫০ হাজার টাকা খরচ যাবে। আপনার গাড়ীর মেরামত ও দুর্ঘটনা। চালকের নানা রূপ উপদ্রব আপনার সহ্য করতে হবে। যদি পার্ট টাইম দুইটি গাড়ী চুক্তিতে ভাড়া রাখেন তবে বর্তমান বাজার দরে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টায় দুইটি গাড়ী চুক্তিবদ্ধ ভাড়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। কারণ আমাদের নিজের গাড়ী থাকলেও তা বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করা যায় না বা লাগে না। কারণ আমাদের দেশের অনেক মার্কেট আছে বাড়ীর আশে পাশে। অনেক স্কুল আছে বাড়ীর আশে পাশে। তাই মাঝে মাঝে বেড়ানোর জন্য মূলত গাড়ীর ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। অনেকে চিন্তা করবেন বাড়ী না থাকলে মেয়ে বিয়ে দেয়া যায় না। ছেলে বিয়ে দেয়া যায় না। সেই সমস্ত ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের নামে কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট গ্যারান্টি হিসাবে প্রদর্শন করতে পারেন। এতে যদি কেই কনভিন্স না হয় হবে সেই বিয়ে না দেয়াই ভাল। ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রে এখনকার সময় কর্মজীবি হওয়াটা প্রয়োজন। প্রয়োজনে সাধারণ মানের পরিবারে হতে পারে। কর্মজীবীরা উদ্যমী ও পরিশ্রমী হয়। যে রোজগারের টেকনিক জানে, তার ভাতের অভাব হয় না।
অন্য কথায় চলে গেলাম। আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য হল, অত্যন্ত সহজ ও সাধারণ জীবন যাপন করা। বাইরের মানুষকে একটা সাধারণ লুক দেয়া। যাতে ঈর্ষা থেকে শত্রু কম হয়। শত্রু যত কম হবে, আপনি তত ভাল থাকবেন। আপনার স্ট্রেস কম থাকবে। স্থাবর সম্পত্তি যত কম থাকবে, আপনি তত মামলামুক্ত, কর মুক্ত ও মানুষের চোখ টাটানি থেকে দূরে থাকবেন। আপনি যখন ভাড়া করা বাড়ী ও ভাড়া করা গাড়ীতে থেকে ভাদাইম্মা হয়ে যাবেন; আপনার গরীব আত্মীয় স্বজনও আপনাকে তাদের অবস্থানে ধরে নিয়ে আপনার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখবে। তাই সমস্ত স্থাবর সম্পদ ছেড়ে দিয়ে ভাদাইম্মা হওয়াটা ভাল। এতে আপনি ধনী হয়েও শত্রু মুক্ত থাকতে পারবেন।

Thursday, October 18, 2018

নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়াটা কষ্টকর


আপনি গাড়ীর চালাবেন। সিটবেল্ট পড়ুন। মটর সাইকেল চালাবেন। হেলমেট পড়ুন। কনস্ট্রাকশনের কাজ করবেন। সেফটি গিয়ার পড়ুন। রান্না করবেন। গ্লাভস এ্যাপোন পড়ুন। আপনি বাগান করছেন। বুট ও গ্লাভস পড়ুন। আপনি প্লেট-ধুচ্ছেন। গ্লাভস পড়ুন। এগুলো আপনার নিরাপত্তার জন্য আপনি পড়বেন। রান্না করতে গিয়ে আগুনের ছ্যাকা খাওয়া পুড়ে যাওয়া অহরহ ঘটছে। সবজি কাটতে গিয়ে হাত কাটছে অহরহ। গরম খাবার ও গরম পানি গায়ে ছিটে পড়তে পারে। এতে এ্যাপ্রোন কিছুটা প্রটেকশন দিতে পারে। গ্লাভস প্রটেকশন দিতে পারে। অথচ দেখুন কোনটাই আরামদায়ক নয়।
সড়ক দু:ঘটনায় অনেকেই মারা যায়। বেশীরভাগই সিট বেল্ট ছাড়া ও হেলমেট ছাড়া গাড়ী ও মটর স্যাইক্যাল চালনায় মৃত্যুকে আলিংগন করে। মটর সাইক্যাল যে চালায়, তার জন্য হেলমেট নিয়ে চালানো খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটা বিষয়। শুধু ডিটারমিনেশন ও বাহ্যিক নিয়মের কড়া চাপই পাড়ে একজনকে হেলমেট পড়াতে। একইভাবে মটর স্যাইক্যালের সহযাত্রী যিনি তিনি আরো বেশী অনিরাপদ। কারণ যিনি চালাচ্ছেন তিনি অনেক কিছু বুঝতে পারলেও পিছনে বসা ব্যক্তিটি নাও বুঝতে পারে। নিরাপত্তার জন্য পিছনের ব্যক্তির জন্য হেলমেট অনেক অনেক জরুরী। ছোট বাচ্চা, যাকে মটর সাইক্যালে বসানো হয়; তার জন্যও প্রয়োজন। অনেকে বছরের পর বছর মটর সাইক্যাল চালাচ্ছেন। অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী। তিনি অল্প দূরত্বের পথটুকু হেলমেট পড়তে চান না। অথচ দু:ঘটনার কোন সময় নেই। যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় তা ঘটতে পারে।
সেদিন দেখলাম, আমার ৮ বছরের মেয়ে হাতে গ্লাভস পড়ে মাইক্রোওভেন থেকে খাবার বের করার জন্য বসে আছে। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম; যখন খাবার বের করবে, তখন পড়লেই হত। সে বলল, যদি খাবার বের কারার সময় যদি গ্লাভস পড়তে মনে না থাকে। আর খাবার ওভেন থেকে বের করতে গিয়ে যদি হাতটা পুড়ে যায়। আমি চিন্তা করে দেখলাম; এর মধ্যে যুক্তি আছে। খাবার হয়ে গেল, টুন টুন শব্দ হল; তখন গ্লাভস না পড়েই ওভেন থেকে খাবার বের করে আমরা হাতটা পুড়তে পাড়ি। তাই নিরাপত্তার এই ধারনাটি খারাপ নয়। আমাদের দেশে বেশীরভাগ মহিলারা অ্যাপ্রুন ব্যবহার করে না। তেলে ভাজাভাজি করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করে না। মুখে মাস্ক ব্যবহার করে না। মাথায় নেট ব্যবহার  করে না। শুধু খাবারের হাইজিনই নয়। নিরাপত্তার জন্য গ্লাভস ও অ্যাপ্রুন পড়াটা প্রয়োজন। সচেতনতা অনেক জরুরী বিষয়। দু:ঘটনা ঘটার আগে তা নিরোধ করতে হবে। ঘটে গেলে আর কিছুই করা থাকে না। নিরাপত্তার মানসিকতা একটা শক্তিশালী বিষয়। মানুষের মাঝে নিরাপত্তার সচেতনতা আনতে পারলে মানুষ তাকে নিরাপদ রাখার কৌশল ঠিকই বের করে নিবে।
নির্মানকর্মী কেন হেলমেট পড়বে। এটা বুঝানো জটিল বিষয়। কেন গ্লাভস পড়বে তাও তাকে বুঝানো কঠিন। কারণ এগুলো আরামদায়ক নয়। আমাদের দেশের বেশীর ভাগ নির্মাণ শ্রমিক এগুলো পড়তে চায় না। অথচ দেশের বাইরে গেলে পড়ে। কারণ ওখানে সেফটি গিয়ার না পড়ে কোন দু:ঘটনায় পড়লে বীমা কোম্পানি কোন ক্ষতিপূরণ দিবে না। তাই সবাই সেফটি গিয়ার পরে। কষ্ট বা অস্বস্থি এমন একটা বিষয় মানুষ যথেষ্ট বাধ্য না হলে মানুষ মানতে চায় না। আমার এক আত্মীয়ের কাছে শুনেছিলাম, তার ক্যাবল টিভির ব্যবসা আছে। তার ক্যাবল টিভির এক শ্রমিক বিদ্যুতের পিলারের উপর দিয়ে লাইন নিতে গিয়ে তার ছুড়ে মেরেছে; ইনসুলিন ছাড়া বিদ্যুতের সরবরাহের লাইনের উপর দিয়ে। সেই সরবরাহের লাইনে ডিশের তার আটকিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে ছেলেটা মারা যায়। আমার আত্মীয়টি তার পরিবারের কথা চিন্তা করে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়। আমি আমার আত্মীয়কে বললাম, আপনি একটা ব্যবস্থা এরূপ করতে পারেন; আপনার মাঠের টেকনিশিয়ানরা হেলমেট, গ্লাভস ও বুট পড়ে কাজ করবে। উঁচু জায়গায় উঠলে তাকে হুক ব্যবহার করে আটকিয়ে নিবে। এটা দলিলে লিখয়ে নিতে পারবেন। তাতে আপনার লাভ হবে। আপনার কর্মীদের সেফটি আপনি নিশ্চিত করতে পারবেন। মৃত্যুর মত ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বাঁচানো যাবে। আর কর্মী দলিল লেখার কারণে কষ্ট হলেও আপনার সেফটি গিয়ার ব্যবহার করবে।
পরিশেষে বলব, শারীরিক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে অনেক অনেক রিস্ক বা বিপদ আছে। এটার জন্য সর্বদা প্রস্তুতি লাগবে। সেটা কষ্টকর হলেও তা চালিয়ে যেতে হবে।

Thursday, October 11, 2018

বাংলাদেশের নারী ও বাই-সাইক্যাল


ঢাকা শহরে এক বছরের উপরে হল চাকুরীর সুবাদে পোস্টিং আছি। এই এক বছরে অনেক নারীকে গাড়ী ও মটর সাইক্যাল চালাতে দেখেছি। কিন্তু নারী বাই-সাইক্যাল চালনাকারী খুব বেশী একটা দেখা যায় না। আমি একবছর ঢাকায় থাকার পর ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এলাকায় একজন নারী বাই-সাইক্যাল চালনাকারী দেখেছি। মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। একটা ব্যাক প্যাক পিঠে নিয়ে বাই-সাইক্যাল চালাচ্ছে। যথেষ্ট ভাল চালায় তা বলা যাবে না। কারণ ট্রাফিক সিগন্যালে বাই-সাইক্যাল থেকে নেমে পড়ে সাইক্যাল হাতে দাড়াতে দেখলাম। আবার জ্যাম ক্লিয়ার হওয়ার পর সতর্কতার সাথে পার হল। আমার মনে আছে ২০১৬ সালে আমি বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা আইসিপি দিয়ে ভারতের কলিকাতায় ভাড়া করা কারে ভ্রমণ করি। ভারতের গেদে সীমান্ত থেকে কলিকাতার যাওয়ার পথে রাস্তায় একটা কমন দৃশ্য দেখেছি তা হল মেয়েদের বাই-সাইক্যাল চালানো। আমাদের দেশে গ্রামে এনজিওতে চাকুরীরত মেয়েরা সাইক্যাল চালায় এটা কমন একটা দৃশ্য। ছাত্রীদের বিশেষ করে ঢাকা শহরে ছাত্রীদের বাই-সাইক্যাল চালাতে দেখা যায় না। এর কারণ অনিরাপদ সড়ক হতে পারে। সাইক্যাল লেন না থাকাও একটা কারণ হতে পারে।
আমার অনেক লেখনী‌তে স্মার্ট সিটি নি‌য়ে কথা বলেছি। স্মার্ট সিটিতে হাটা ও বাই সাইক্যা‌লের ব্যবস্থা থাকবে। সমস্ত রাস্তার পাশে ফুটপাত আর রাস্তার মাঝে বাই-সাইক্যাল লেন বেশ জরুরী। কারণ রিক্সা বাই-সাইক্যাল হল পরিবেশ বান্ধব যান। অনেক দেশে রিক্সা নেই। আমাদের দেশে আছে। রিক্সা থাকুন। অনেক গবেষণা ক‌রে রিক্সা গু‌লো ব্রেক সিস্টেম ও নিরাপত্তা বাড়ালে চলবে। রিক্সা ও বাই-সাইকেলের জন্য আলাদা লেন থাকলে কখ‌নোও  ব্যাটারি চালিত রিক্সার বা সাধারণ রিক্সার নিরাপত্তা ঝুঁকি কমে যাবে বলে মনে করা যায়।
আমা‌দের দেশের প্রায় নব্বই শতাংশ মে‌য়ে রিক্সা, স্কুটার ও ওবার ইত্যাদিতে যাতায়ত ক‌রে; ধাক্কাধাক্কি পরিহার করা ও নিরাপত্তার জন্য তা ক‌রে থা‌কে। এখন রিক্সা ও বাই সাইক্যা‌লের জন্য আলাদা লেন কর‌তে পারলে সবচেয়ে লাভবান করা যাবে মেয়েদের। এতে অনেক মেয়েই বাই-সাইক্যাল চালা‌তে সাহস পাবে। মে‌য়েরা অধিক পরিমাণ বাই-সাইক্যাল চালালে সমাজের কিছু লাভ হবে। সবচেয়ে বড় লাভ হবে মেয়েদের শরীরে কায়িক পরিশ্রম করার সক্ষমতা বাড়বে। তারা কম রোগাক্রান্ত হবে। সক্ষম মা হবে। উন্নত স্বাস্থ্যের সন্তান জন্ম দি‌তে পারবে। তা‌দের মাঝে মূখা‌পেক্ষতা কমে যাবে। তারা আত্মনির্ভরশীল  হবে। ভার‌তে ২০১৬ সালের মার্চ মাসের দি‌কে ভারত ভ্রমণের সময় অনেকের কছে শুনেছিলাম  পশ্চিম বংগের মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের পড়া‌শোনা উন্নয়নের জন্য সাড়ে তিন লাখ বাই-সাইক্যাল স্কুলের ছাত্রী‌দের মাঝে বিতরণ করেন। মেয়েদের বাই-সাইক্যাল ছেলেদের থেকে বেশী পরিমাণে চালা‌নো প্রয়োজন। এটা এমন একটা ট্রেনিং যা কিনা একটা নারী‌কে তার সম্ভ্রম রক্ষা ক‌রে পুরুষের স্পর্শ ছাড়া যাতায়ত নিশ্চিত করবে। বাসে ও অন্যান্য গণ প‌রিবহ‌নের যাতায়‌তে নারী‌দের নামা উঠার পথে ও ভিড়ের ধাক্কায় পুরুষের সাথে ধাক্কা যুদ্ধ পড়‌তে হয়। তা নারীর জন্য ও সকলের জন্য বিব্রতকর। তাই পরিবেশ বান্ধব বাই-সাইক্যা‌লে নারী‌কে অভ্যস্থ কর‌তে পারলে নারী হ‌য়ে উঠবে অনেক অনেক বেশী আত্মপ্রত্যয়ী ও ক্ষমতাধর।
গ্রামের রাস্তা ঘাট অনেক বেশী দু‌রে দূরে। সেখানে ছাত্রী‌দের ছোট বয়স থেকে বাই-সাইক্যাল দেয়াটা প্রয়োজন। গ্রামের স্কুল কলেজ অনেক দূরে দূরে। সেখানে গনপ‌রিবহন তেমন নেই। ছাত্রীরা অনেক দূরের রাস্তা হেঁটে পার হয়। অনেক সময় ব্যয়‌ হয় ও শারীরিক চাপ যায়। বাই-সাইক্যাল তা‌দের স্কুল ও কলেজে আসা যাওয়ার শারীরিক চাপ কমা‌তে পারবে। পড়া‌শোনায় তারা আরো এগিয়ে আন‌তে পারবে।
বাংলাদেশের গ্রামে অনেক স্থানে মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত বাই-সাইক্যাল চালু থাকলেও অনেক স্থানে চালু নাই।  সরকার ও অনেক সংস্থা গ্রামের মেয়েদের বাই-সাইক্যাল অনুদান দিতে পারেন। পিতামাতা মেয়েদের বাই-সাইক্যাল চালনায় উতসা‌হিত কর‌তে পারেন। সামর্থবান বাবা মায়েদের মেয়েদের অবশ্য বাই-সাইক্যাল কিনে দি‌তে পারেন ও উতসা‌হিত কর‌তে পারেন।
মে‌য়েরা পর্দায়‌ থে‌কেও বাই-সাইক্যাল চালা‌তে পা‌রে যেভাবে সৌ‌দি মে‌য়েরা হিজাব পড়ে অলিম্পিকে যোগদান ক‌রে।
পরিশেষে আশা থাকবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সাথে মে‌য়ে আরো বাই-সাইক্যাল চালাবে ও সক্ষমতা অর্জন করবে।

Thursday, October 4, 2018

গৃহস্থলীর ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী ক্রয়ের বিপরীতে সেবা ক্রয়


আমি একটা স্বর্ণের দোকানে স্ত্রীর জন্য স্বর্ণ কেনার সময় সেখানকার স্বর্ণকার বললেন; আপনি যে স্বর্ণের জিনিষটি কিনলেন তা যত বছর পরেই হোক কাগজটা নিয়ে আসবেন, আমরা তখনকার দামে ওজন করে ১০% বাদ দিয়ে আপনার কাছ থেকে কিনে নিব। শুনতে খুব ভাল মনে হল। যদিও অত লাভজনক ডিল না। কারণ এখন তিনি নিচ্ছেন আমার কাছ থেকে ২২ ক্যারেট সোনার দাম। আমার থেকে পুনরায় ক্রয় করার সময় তিনি দিবেন অর্ধেক স্বর্ণের দাম যা কিনা তাদের ভাষায় সনাতনী সোনার বা পুরাতন সোনার দাম। যা কিনা প্রায় অর্ধেক দাম। তারপর ১০% বাদ দিবে। অবশ্য ভাল ডিল নয়। তবুও আমরা অনেকেই তাতে সন্তুষ্ট হব। ধরুন আপনি স্বর্ণের ডিজাইন বদল করতে চাচ্ছেন। তখন প্রয়োজনে লস দিয়ে হলেও আপনি নতুন ডিজাইনের সামগ্রী কিনতে পারছেন। মন্দের ভাল।
এখন আপনি ধরুন টিভি কিনেছেন। আপনি চাচ্ছেন পাঁচ বছর পর মডেল চেঞ্জ করতে। এখন আপনাকে প্রায় পানির দামে টিভিটি বিক্রি করতে হবে। তারপর নতুন কিনতে হবে। এখন যদি এমন সিস্টেম থাকে, ধরুন আপনার টিভিটি ১০ বছর ব্যবহার করার পর তা আপনি ২০০০ টাকায় বা সর্বনিন্ম একটা দাম ইচ্ছে করলে যে কোম্পানির কাছ থেকে কিনেছেন তাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। আর ধরুন আপনি টিভিটি ৫ বছর পর টিভিটি বদল করতে চাইলেন টিভিটির পাঁচ বছর ব্যবহারের জন্য অর্ধেক দাম বাদ দিলেন, যে দাম থাকবে তা নতুন কেনা টিভির সাথে মূল্য অ্যাডজাস্ট করলেন। তাহলে পুরাতন টিভির কি হবে। এটা অর্ধেক দামে রিকন্ডিশান মাল হিসাবে শো রুমে বিক্রি করবে। এই শর্তে যে টিভিটি অবশিষ্ট পাঁচ বছর না চললে হয় ব্যবহারকারী বা ক্রেতা ফেরত দিতে পারবেন বা নতুন বা পুরাতনের সাথে বদল করে নিতে পারবেন। এটা করলে কেমন হয়? আমরা যে কোন ইলেকট্রিক সামগ্রী কিনলে প্রথমে টেনশনে থাকি যে, এই সামগ্রীটি কিনে সেটি নির্ধারিত সময় চালাতে পারব কিনা না। তার আগেই নষ্ট হবে কিনা। কোন জিনিষ কিনলাম কয়েকদিন পর আর ভাল লাগছে না। অথচ এই টিভিটি অন্য কারো জন্য কাজের হতে পারে। একটা কথা প্রচলিত আছে, শো রুম থেকে কোন পণ্য বাইরে বেরুলে তার মূল্য অর্ধেক হয়ে যায়। এই জায়গাটিতে ক্রেতার কোন স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। ক্রেতা সব সময় ভয়ে থাকে আমি ইলেকট্রিক বা ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীটি কিনে বিক্রয়োত্তর সেবা পাব কিনা। বাস্তবতা হল কেউই বিক্রয়োত্তর সেবা পায় না। কারণ শো রুম বা দোকানীরা কোন না কোন বাহানায় ঘুরাতে থাকবে। তার চেয়ে এটা ভাল নয় কি সমস্ত প্রোডাক্টের একটা আয়ু ধরা থাকবে। আবার প্রোডাক্টের একটা সর্বন্নিম দাম ধরা থাকবে। যা কিনা পণ্যটির ভাঙ্গারি দাম বলা যেতে পারে অর্থাৎ এই দামটি ক্রেতা মাল ক্রয়ের অনেক বছর পরও দ্রব্যটি রিকন্ডিশন ফেরত দিলে মূল্যটা ফেরত পাবেন। আপনি ১০ বছর আয়ুর টিভির ১৫ বছর দেখার জন্য দোকানে ফেরত আনলেন। আপনাকে নতুন টিভি দেয়া হল এবং নতুন টিভির মূল্য হতে পুরাতন টিবির সর্বন্নিম দামটি( মনে করি ২০০০ টাকা) বাদ দিয়ে আপনার নতুন টিভির দামটি সাশ্রয় করা হল। আমরা অনেকেই আছি যারা চাই আমাদের পুরাতন সামগ্রীটি সরিয়ে নতুনটি রাখতে। অনেক ক্ষেত্রের পুরাতন সামগ্রীর দাম কেউ বলে না বা বিক্রি করা যায় না। তখন তা ই-বর্জ্য হয় বা কাউকে দান করতে হয়। ভাঙ্গারি হিসাবে অতি নগণ্য মূল্যে ক্রয় করা যাবে।
আমরা টিভি, ফ্রিজ, এসি ও হাউজ হোল্ড সামগ্রী ক্রয় করি। ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা সব সময় ভয়ে থাকি আমার কেনা দামী দ্রব্যটি নষ্ট হলে এটি ওয়ারেন্টি হয়ত ঠিকভাবে পাব না। আবার অনেক টাকা খরচ করে নতুন সামগ্রী কিনতে হয়। কষ্টকর অভিঞ্জতা। আমি আপনাদের এতক্ষণ আলোচনা পর নতুন ব্যবসায়িক ধারনা তুলে ধরছি। তা হল একজন ক্রেতা যে কোন সামগ্রী নষ্ট হওয়ায় বা অন্য কোন কারণে ফেরত দিতে চাইলে সে তা ফেরত দিয়ে নতুন আইটেম নিতে পারবে। পুরাতন সামগ্রীর যত বছর ওটার আয়ু অনুযায়ী বকেয়া আছে সেটার বেনিফিট তাকে দেয়া হবে। অনেকে বলবেন, তাহলে ফেরত আসা পুরাতন সামগ্রীতে তো শো রুম ভর্তি হবে তার কি হবে। তবে যথাযথ ভাবে পুরাতন সামগ্রী বিক্রয় করতে পারার একটা কালচার শো রুমে চালু করা সম্ভব।
এভাবে রিপ্লেসমেন্ট সেবা দিয়ে ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর কালচার চালু করলে মানুষ অনেক অনেক উপকার পাবেন। এই বিজনেস মডেলটি অনেকেই চিন্তা করতে পারেন। এই ধরনের বিজনেস মডেল পরিবেশের জন্য অনেক উপকারে আসবে কারণ সমস্ত ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর টেকসই ও সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে।