বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা যায় মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশ
উঁকিঝুঁকি মারছে। এতেই বাংলাদেশের
প্রায় সকল মানুষেরই বিদ্যুৎ একটি বেসিক
রাইট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যুৎ ছাড়া
উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না।
২০০৮ সালের জুন মাসের দিকে একবার আমরা পর পর তিনদিন লোডশেডিং
এর ভয়াবহতায় অস্থির। রাতে প্রতি
দুই ঘণ্টা পর পর এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ নাই। এতে যা ঘটে তা হল সবার ঘুমের ব্যাঘাত। পিডিবি উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ডাকা হল। পিডিবিএর দায়িত্ব প্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ইন্জ্ঞিনিয়াররা আসলেন। তাদেরকে সেনানিবাসের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের তথ্য তুলে ধরা হল। তারা জানাল, বিদ্যুৎ উৎপাদন সমস্যা থাকায় সবস্থানেই ব্যাপক
লোড শেডিং হচ্ছে। তারা আমাদের
এলাকা কম লোড শোডিং এ রেখেছেন। একেবারে লোড
শেডিংমুক্ত রাখতে তারা একান্তই অপারগ। তখন তারা একটা
চমৎকার সলিউশন নিয়ে হাজির হল।
তারা জানাল ময়মনসিংহ সেনানিবাসের একদিকে রয়েছে শহর অপরদিকে
রয়েছে গ্রাম অঞ্চল। দুইদিকে দুই
এলাকার হাই টেনশন (১১কেভি) লাইন রয়েছে। তাদের সাজেশন হল দুইটি ১১০০ কেভির লাইনের দুপাশ থেকে দুটি সংযোগ
নিতে। তার এমন ব্যবস্থা করে দিবে যাতে এক লাইনে
লোড শেডিং থাকলে অন্য লাইনে লোড শেডিং থাকবে না। তাতে আমরা কোন না কোন লাইনে অবশ্যই বিদ্যুৎ পাব। এতেই আমাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এর পর পিডিবি ও আর্মির পক্ষ থেকে আর একটি ১১০০ কেভি লাইন গ্রামের
মাঝ থেকে এগিয়ে সেনানিবাস পর্যন্ত আনা হয়। এভাবে দুই পাশ
থেকে দুইটি লাইন আনা হয়েছিল । একটি অটো সুইচ
বা চেঞ্চওভার লাগানো হয়েছিল যা কিনা যে লাইনে কারেন্ট আছে কেন্দ্রীয়ভাবে সেখানে সংযোগ
করে দেয়। এভাবে ব্যবস্থা
করার পর পরবর্তীতে মাসের পর মাস ময়মনসিংহ সেনানিবাসে বিদ্যুৎ যেত না। আমি সর্বশেষ ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ময়মনসিংহে তেমন একটা
বিদ্যুৎ যাওয়া বা লোড শেডিং পাইনি। সর্বদা বিদ্যুৎ
থাকায় মহা সুখকর অবস্থা ছিল। এভাবে হয়ত বা
অনেক প্রতিষ্ঠান একাধিক লাইন টেনে নিয়ে নিজেদের লোড শেডিং মুক্ত রাখতে পারে বা রাখছে।
২০১৩ সালে বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টরে জানুয়ারির শেষে বদলী আসার
পর বিদ্যুতের একটা ভয়াবহ অবস্থা দেখতে পাই। প্রতিদিন চার/পাঁচবার
বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করে। পল্লী বিদ্যুতের
লাইন গ্রামের মধ্য দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার কারণে প্রায়ই ডালপালা পরে লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহে
বিঘ্ন ঘটে। এমনও হয় মাঝে
মাঝে একটানা ১০/১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এসব বহুবিদ কারণে আমরা দীর্ঘদিন যাবত বড় জেনারেটর ক্রয় করার চেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পরে অবশ্য ৫০,৩০,২৫,১৫,১০,৫ কেভি জাতীয় একাধিক জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে চাহিদা মিটানো হচ্ছিল। বাসস্থানে, অফিসে ও সিকিউরিটি লাইনে আইপিএস লাগিয়ে বিদ্যুতের
আসা যাওয়াটা কিছুটা সহনশীল করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের একদিন প্রায় ২০ঘন্টা বিদ্যুৎ নাই। বিদ্যুৎ না থাকলে পানির সংকটও চরম রূপ নেয়। পরে আমি পল্লী বিদ্যুতের জিএম সাহেবের সাথে আলোচনা শুরু করি কিভাবে
লোড শেডিং কমানো যায়। আমি তাকে দুটি
১১০০ কেভি লাইন ব্যবহার করে সলিউশন দিলাম। তিনি নিকটবর্তী
আর একটি লাইন আনার আইডিয়াটা মাথায় রাখলেন কিন্তু খরচ হবে জানালেন। পরে অবশ্য তিনি ভাল একটা সলিউশন বের করলেন। তিনি আমাদের বিজিবি সেক্টরের গ্রিড লাইনটির সাথের বেসামরিক এলাকার
লোড অন্য লাইনের মাধ্যমে কমিয়ে দিয়ে একটা ছোট পরিসরে ৫০০ কিলোওয়াট টাইপ লোড তৈরি করে
নিলেন। কুষ্টিয়া ও মিরপুর উপজেলার অন্যান্য মেগাওয়াট
লোডের সরবরাহ থেকে আলাদা করে দিলেন। এতে মিরপুর
উপজেলার সাব ষ্টেশন থেকে বিজিবির ৫০০ কিলোওয়াট লোডকে লোড শেডিংমুক্ত রাখতে তাদের আর
কোন সমস্যা থাকল না। অনেক চেষ্টা
তদবিরের পর এরূপ একটা ব্যবস্থা করায় আমরা বিজিবি কুষ্টিয়ার সকলে পল্লী বিদ্যুত সমিতি
কুষ্টিয়ায় উপর যারপর নাই কৃতজ্ঞ হলাম। এরপর মিরপুর
উপজেলার মত গ্রামে থেকেও এক সাপ্তাহে একবার/দুইবারের বেশী বিদ্যুৎ যাচ্ছে
না। কেবল মাত্র
ঝড়ে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সত্যি
তার কল্পনাতীত। যা বিদ্যুৎ
যায় তা মূলত লাইন রক্ষণাবেক্ষণ ও তার ছেড়ার কারণে। মাঝে মাঝে গ্রিড লাইন রক্ষণাবেক্ষণে বিদ্যুৎ যায়। ঝড় বাদলের দিনে পল্লী বিদ্যুৎ তাদের গ্রামীণ জনপদের ভিতর দিয়ে
যাওয়া লাইনগুলো সাধারণত বন্ধ করে রাখে। পরিশেষে আমার
দেয়া লোড শেডিংমুক্ত ব্যবস্থাপনা আপনারা কাজে লাগাতে পারেন।