আমি ব্যক্তিগত জীবনে দুইবার হাইজাকারের পাল্লায় পড়ার পর থেকে টাকা সাথে নিয়ে
যাতায়ত প্রায় ছেড়ে দিয়েছি। হয়তবা ৫০০/১০০০ টাকা মানি ব্যাগে থাকতে পারে যেন
হাইজাকার ধরলে দেয়া যায়। নয়ত রাগ করে ছুরি মেরে দিতে পারে। যেমন শুনেছিলাম কিছু না
পেয়ে আমেরিকায় আন্ডার ওয়ার্ল্ডের লোকজন গুলি করে বা ছুরি মারে সেজন্য পুলিশ সব সময়
সাথে কিছু না কিছু ক্যাশ টাকা রাখার সাজেশন দেয়। আমরা হয়ত সম্পূর্ণ ক্যাশলেস হতে
পারব না। কিছু ক্যাশ নিরাপত্তার জন্য মজুদ রাখতে হবে। একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে
একবার কার্ডে পেমেন্ট করতে চাইলাম তারা জানাল তাদের পিওএস মেশিন নষ্ট। তখন স্ত্রীর
কাছ থেকে নিয়ে পেমেন্ট করতে হল। অন্যথ্যায় খাওয়া দাওয়ার পর এটিএম যেতে হত টাকা
ক্যাশ করার জন্য। এরূপ বিবিধ কারণে কিছু ক্যাশ প্রয়োজন পরে।
আমার জীবনে কিছু কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা চাইল ঞ্জান অর্জনের জন্য ও বাস্তবতা
অনুধাবনের জন্য। অনেকটা রোযা রেখে গরীব রোগীর ক্ষিধার কষ্ট অনুধাবনের মত।
আমি ও আমার স্ত্রী এক বছর কাজের লোক ছাড়া শুধুমাত্র যন্ত্রের উপর নির্ভর করে
কাটিয়ে ছিলাম তাও আবার ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে। এটা সম্ভব হয়েছিল বিভিন্ন ধরনের হাউজ
এ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার করে।
আমার সংস্থার ফ্রি চিকিৎসা ছয় মাস না নিয়ে বাহিরে চিকিৎসা করার একটা অনুশীলন
আমি করেছিলাম। বেশী টাকা তেমন খরচ হয়নি। পরিবারসহ সুস্থ ছিলাম।
আর একবার আমার সংস্থার প্রাধিকারভুক্ত সরকারী গাড়ী একদম ব্যবহার না করে ছয়মাস
প্রাইভেট কারে তৈল কিনে কেমন খরচাদি হয় রিটায়মেন্টের প্রস্তুতি হিসাবে অনুশীলন
করেছিলাম। সকল অনুশীলনই আমাকে বেশ ভাল আস্থা ও আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। এখন আমার
মাথায় এসেছে কিভাবে ক্যাশলেছ যাওয়া যায় তার একটি অনুশীলন করা।
ক্যাশলেছ অনুশীলনের কয়েকটি প্রস্তুতি নিতে হল। এরূপ প্রস্তুতির জন্য আমাকে
কিছু কাজ আগে ভাগে করতে হল।
ক। নিজের জন্য দুইটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড রাখতে হবে। কারণ অনেক সময় কোন কোন
কার্ড কোন কোন ব্যাংকের এটিএমএ কাজ নাও করতে পারে। এতে অবশ্য বছরে দুইটি কার্ডে
দুই ব্যাংকের একাউন্টে বাৎসরিক ১০০০ টাকা খরচ হবে।
খ। বিকাশ বা রকেট এ জাতীয় মোবাইল ব্যাংকিং করা প্রয়োজন হবে। আমি রকেট একাউন্ট
করেছি আবার ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট করেছি। এতে যে সুবিধা পাচ্ছি তা হল
একাউন্টের টাকা রকেট একাউন্টে আনতে পারছি। আবার রকেট একাউন্ট হতে বিনা পয়সায়
এটি-এম হতে আর .৯% দিয়ে এজেন্ট থেকে ক্যাশ আউট করা যাচ্ছে।
গ। বাসার বাচ্চাদের স্কুল একাউন্টের কার্ড। স্ত্রীর জন্য কার্ড থাকলে ভাল হয়।
ঘ। নিজ, স্ত্রী,
মোবাইল ব্যবহারকারী সন্তানাদি থাকলে এবং
পিয়ন/ব্যক্তিগত সহকারীদের মোবাইল ব্যাংকিং থাকলে অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ হাজার টাকার
সমপরিমাণে লেনদেন দ্রুত ও সহজে সম্পন্ন করা যাবে।
ক্যাশলেছ হওয়ার আগে উপরের প্রস্তুতিগুলো আপনাকে করে ফেলতে হবে।
আমার ক্যাশলেস বা লেস ক্যাশ হওয়ার পদ্ধতিগুলো আমি অনুসরণ করছি তা হল মানি
ব্যাগে দুহাজার টাকা রাখছি তা ফিক্সড। এখন যেসব দোকান ও রেস্টুরেন্টে কার্ডে
পেমেন্ট করা যায়। সেখানে কার্ডে পেমেন্ট করতে হবে।অনেক সময় পিওএস মেশিনে সমস্যা
হলে কার্ড সোয়াই-প করতে সমস্যা হয়। তাই একাধিক ব্যাংকের কার্ড থাকতে পারে। তবে
কার্ড না চললে কাছাকাছি বিকাশ বা রকেটের মোবাইল ব্যাংকিং এ টাকা রেখে তা ক্যাশ আউট
করে নিলেই হল। মোবাইল ওয়ালেট দ্বারা অনেক দোকানে পেমেন্ট করা যায়। লটো ব্যান্ডের
সকল শাখায় লক্ষ্য করেছি তারা কার্ডের পাশাপাশি বিকাশ ও ডাচ বাংলার রকেট মোবাইল
ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পেমেন্ট গ্রহণ করে থাকে। একান্তই কার্ড ব্যবহার না করা গেলে
আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি বিকাশ বা রকেট মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে কিছু টাকা ক্যাশ
আউট করার প্রয়োজন হতে পারে।
আপনার সহকারীর রকেট বা বিকাশ একাউন্ট থাকলে প্রতিদিনের খুচরা খরচ তার একাউন্টে
পাঠাতে পারেন। ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেটে আপনার সহকারীর রকেট একাউন্টে টাকা পাঠাতে
ও আপনার সহকারী এটিএম থেকে ক্যাশ আউট করলে কোন বাড়তি ফি দিতে হবে না। মাঝে মাঝে
কিছু কিছু জায়গায় কিছু টাকা মোবাইল বা এটি-এম লেনদেনে খরচ হতে পারে। এটা ক্যাশলেস
হওয়ার মূল বাধা। এরূপ কিছু খরচ ধরেই ক্যাশলেস বা লেস ক্যাশ সিস্টেমে আগানোর
অনুশীলন করছি। কিছু টাকা বাড়তি খরচ গেলেও ময়লা টাকা ধরতে হচ্ছে না এটা একটা বড়
আনন্দ। সকল টাকার হিসাব ডিজিটালই থেকে যাচ্ছে। এটা একটা ভাল বিষয়। যেহেতু টাকা
ক্যাশ থাকছে না সবই ব্যাংক বা মোবাইলে থাকছে এতে আমার মনে হয় অনেক খুচরা খরচ কমে
গিয়ে সঞ্চয় বাড়বে। আপনার আমার দেখানো ফরমুলায় ক্যাশলেস হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।
এটা পরিবার সহ শুধুমাত্র অভ্যাসের ব্যাপার। ভারতের মত হয়ত যুগের পরিবর্তনে
বাংলাদেশেও ক্যাশলেস হওয়ার প্রয়োজন পড়বে তখন আপনার এই ক্যাশলেছ হওয়ার অনুশীলন অনেক
উপকারে আসবে। পরিশেষে টাকার হিসাব মিলানোর ঝামেলা থেকে ক্যাশলেস হওয়ার অনেক বেশী
সুবিধা জনক।