আমার বড় ছেলে মাথা ব্যথার সমস্যায়
ভুগছে। আমার বেশ কয়েকজন রিলেটিভ বিশেষ একজন ডাক্তারের কথা বললেন। আমি অবশ্য জানি
ডাক্তারের সিরিয়াল যে দেয় সে টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল এদিক সেদিক করে। ডাক্তার
ফি নেয় ১০০০ টাকা আর সিরিয়ালধারী নেয় ১০০০ টাকা বা তারও বেশী। ডাক্তাররা জানে
কিনা আমি জানি না। হয়ত জানে। হয়ত জানে না। ৫ম গ্রেডের একজন সরকারী কর্মকর্তা হয়ে একজন
ডিপুটি সেক্রেটারী(ডিএস) মাসে পায় হয়ত ১ লক্ষ টাকার আশে পাশে। যদি ডাক্তারের
সিরিয়াল দেয়ার লোকটি একেক রোগীর কাছ থেকে নেয় ১০০০ টাকা করে। তবে ডাক্তার যদি
প্রতিদিন ১০ জন রোগী দেখে আর ৪ জন থেকে প্রতিদিন ৪০০০ টাকা নিতে পারে, তবে মাসে
অনায়াসে পেয়ে যায় একজন ডিএস-এর সমান বেতন বা তার বেশী। পড়াশোনা জানা/নাজানা
মেট্রিক পাশ টাইপ একজন কমিয়ে ফেলতে পারছে লক্ষাধিক টাকার উপর উপার্জন। কত সহজ। মেট্রিক
পাশ একজন কেবলমাত্র ভাল ডাক্তারের সাথে থাকার কারণে কত সহজে টাকা বানাচ্ছে। অথচ
অনেক এমবিবিএস ডাক্তার রোগী দেখেও তা পাচ্ছে না। ডাক্তাররা কি সিরিয়াল ব্যবসায়
আছে। আমার জানা নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি অনেকের কাছে শুনেছি আমাদের দেশের
ডাক্তারদের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়। আমাকে সিরিয়ালওয়ালা
বলল, আপনি স্বাভাবিক সিরিয়ালে গেলে আপনি সিরিয়াল পাবেন প্রায় তিন মাস পড়ে। সে আমাকে
বলল, আপনি নাম লেখান যখন কেউ সিরিয়াল ক্যানসেল করবে, তখন আপনাকে সিরিয়াল দেয়া
যাবে। সুন্দর প্রস্তাব। যেহেতু সেনাবাহিনীর লোক। আমার কাছে তাই সিরিয়াল আগানোর
জন্য টাকা চাইল না। আমি পরিচয় না দিলে হয়ত সিরিয়াল ম্যান টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল
আগানোর প্রস্তাব দিত।
পৃথিবীর অনেক দেশে স্বাস্থ্যসেবা
অনেক ভাল। যেমন কানাডায় খুব ভাল। অপরদিকে আমেরিকায় বাংলাদেশের মত চরম অরাজগতা
রয়েছে স্বাস্থ্য সেবায়। অথচ ভারতে যারা রোগী দেখাতে যায় তারা ভারতের ডাক্তারদের
অনেক প্রশংসা করে। ডাক্তাররা ও সিরিয়াল ধারীরা এত হয়রানী করে না। আমাদের দেশের
ডাক্তাররা অনেকেই অনেক ফি নেয় কিন্তু রোগীকে পাঁচটি মিনিটও ঠিকভাবে দেয় না। অমুক
ডাক্তারের সিরিয়াল পেতে তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়। এটা হল আরেক ধরনের ভাঁওতাবাজি।
আপনার সিরিয়াল তিন মাস পরে খাতায় লিখবে হয়তবা কিন্তু এর মধ্যে কয়েক হাজার রোগী
ঘুষের বিনিময়ে রোগী পার হবে। বাংলাদেশে কোন ডাক্তার তাদের সিরিয়াল ডিজিটাল
করেছে বলে আমার জানা নাই। অথচ চাইলে তারা তা করতে পারেন সহজেই। প্রয়োজনে রোগী
কিছু টাকা ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যয় করতে পারে সহজেই। রোগীরা অন লাইনে
সহজেই দেখতে পারবে তার সিরিয়াল কত চলছে। এতে রোগীদের বিপুল পরিমান হয়রানী
বন্ধ করা যাবে। সরকারের প্রয়োজনে সিরিয়েল বাণিজ্য ও রোগী হয়রানী বন্ধ করার জন্য
ডিজিটাল সিরিয়াল সিস্টেম চালু করা। আমাদের দেশের শতকরা ৯৯% ডাক্তার এই ডিজিটাল
সিরিয়াল মানতে চাইবে না। কারণ তাদের ভয় ইনকাম ট্যাক্স জেনে যাবে তাদের ইনকামের
পরিমাণ।
রাষ্ট্রে বিচারের ঊর্ধ্বে কাউকে
ছেঁড়ে দেওয়া উচিত নয়। স্বাস্থ্যখাতে একটা ভয়ংকর অরাজগতা চলছে। এটাকে রুখতে হবে।
আমি ডাক্তারের প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টরকে ধরলাম। তিনি আমাকে দুইদিন পরে একটা
সিরিয়াল দিল। অথচ সিরিয়াল ম্যান বলেছিল, প্রায় ১০০ দিন পর। আমি নিশ্চিত এটাই
প্রকৃত সিরিয়াল। যেটা ওই সেন্টারের ডাইরেক্টর আমাকে দিল। বাকীটি গল্প ও
প্রতারণা। এই প্রতারণা করে সিরিয়াল
ম্যানরা মানুষের পকেট থেকে টাকা খসায়। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনেকেই ডাক্তারদের
বিষয়ে লেখে না। কারণ প্রত্যেকে নিজের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে। ভাবে হয়ত পরে
ডাক্তাররা বয়কট করে বসবে। আর সেই সাংবাদিকের বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে।
তবে ডাক্তারদের ইনকাম ট্যাক্স
কমিয়ে হলেও তাদেরকে অনলাইন সিরিয়ালের মাধ্যমে আনাটা সময়ের দাবী। একজন রোগীর
রোগের সমাধানটা পাওয়া অতি জরুরী। অথচ তাকে কিনা তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। অথচ
আদতে তিন মাসের কোন সিরিয়াল কিন্তু নাই। কারণ এটার কোন স্বচ্ছতার প্রমাণ নেই।
তিন মাস পরের একটা তারিখ রেজিস্টারে লিখে আপনাকে ধরিয়ে দিল। এটার দ্রুত সমাধান
অতি জরুরি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে ডাক্তারি সিরিয়াল ডিজিটাল না হলে সরকারের
দায়বদ্ধতা থেকে যাবে। পরিশেষে সুশৃঙ্খল ডাক্তারি সিরিয়াল হয়ত আমরা পাব, যখন
মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ বিকশিত হবে।