Pages

Wednesday, September 26, 2018

ডাক্তার ও সি‌রি‌য়াল

আমার বড় ছেলে মাথা ব্যথার সমস্যায় ভুগছে। আমার বেশ কয়েকজন রিলেটিভ বিশেষ একজন ডাক্তারের কথা বললেন। আমি অবশ্য জানি ডাক্তারের সি‌রি‌য়াল যে দেয় সে টাকার বিনিময়ে সি‌রি‌য়াল এদিক সেদিক ক‌রে। ডাক্তার ফি নেয় ১০০০ টাকা আর সি‌রি‌য়ালধারী নেয় ১০০০ টাকা বা তারও বেশী। ডাক্তাররা জানে কিনা আমি জানি না। হয়ত জানে। হয়ত জানে না। ৫ম গ্রেডের একজন সরকারী কর্মকর্তা হ‌য়ে একজন ডিপুটি সেক্রেটারী(ডিএস) মাসে পায় হয়ত ১ লক্ষ টাকার আশে পাশে। যদি ডাক্তারের সিরিয়াল দেয়ার লোক‌টি একেক রোগীর কাছ থেকে নেয় ১০০০ টাকা ক‌রে। তবে ডাক্তার যদি প্রতিদিন ১০ জন রোগী দেখে আর ৪ জন থেকে প্রতিদিন ৪০০০ টাকা নি‌তে পা‌রে, তবে মাসে অনায়াসে পেয়ে যায় একজন ডিএস-এর সমান বেতন বা তার বেশী। পড়া‌শোনা জানা/নাজানা মেট্রিক পাশ টাইপ একজন কমি‌য়ে ফেল‌তে পারছে লক্ষাধিক টাকার উপর উপার্জন। কত সহজ। মেট্রিক পাশ একজন কেবলমাত্র ভাল ডাক্তারের সাথে থাকার কারণে কত সহজে টাকা বানাচ্ছ‌ে। অথচ অনেক এম‌বি‌বিএস ডাক্তার রোগী দেখেও তা পাচ্ছ‌ে না। ডাক্তাররা কি সিরিয়াল ব্যবসায় আছে। আমার জানা নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি অনেকের কাছে শুনেছি আমা‌দের দেশের ডাক্তার‌দের সি‌রি‌য়াল পাওয়ার জন্য অনেকদিন অপেক্ষা কর‌তে হয়। আমা‌কে সি‌রি‌য়ালওয়ালা বলল, আপনি স্বাভাবিক সি‌রি‌য়ালে গেলে আপনি সিরিয়াল পাবেন প্রায় তিন মাস পড়ে। সে আমা‌কে বলল, আপনি নাম লেখান যখন কেউ সিরিয়াল ক্যান‌সেল করবে, তখন আপনা‌কে সি‌রি‌য়াল দেয়া যাবে। সুন্দর প্রস্তাব। যেহেতু সেনাবাহিনীর লোক। আমার কাছে তাই সিরিয়াল আগা‌নোর জন্য টাকা চাইল না। আমি পরিচয় না দিলে হয়ত সিরিয়াল ম্যান টাকার বিনিময়ে সিরিয়াল আগা‌নোর প্রস্তাব দিত।
পৃথিবীর অনেক দেশে স্বাস্থ্যসেবা অনেক ভাল। যেমন কানাডায় খুব ভাল। অপরদিকে আমেরিকায় বাংলাদেশের মত চরম অরাজগতা রয়েছে স্বাস্থ্য সেবায়। অথচ ভার‌তে যারা রোগী দেখা‌তে যায় তারা ভারতের ডাক্তার‌দের অনেক প্রশংসা ক‌রে। ডাক্তাররা ও সিরিয়াল ধারীরা এত হয়রানী ক‌রে না। আমা‌দের দেশের ডাক্তাররা অনেকেই অনেক ফি নেয় কিন্তু রোগী‌কে পাঁচটি মিনিটও ঠিকভাবে দেয় না। অমুক ডাক্তারের সিরিয়াল পে‌তে তিন মাস অপেক্ষা কর‌তে হয়। এটা হল আরেক ধরনের ভাঁওতাবাজি। আপনার সি‌রি‌য়াল তিন মাস প‌রে খাতায় লিখবে হয়তবা কিন্তু এর মধ্যে কয়েক হাজার রোগী ঘুষের বিনিময়ে রোগী পার হবে। বাংলাদেশে কোন ডাক্তার তা‌দের সিরিয়াল ডিজিটাল করেছে বলে আমার জানা নাই। অথচ চাইলে তারা তা কর‌তে পারেন সহজেই। প্রয়োজ‌নে রোগী কিছু টাকা ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যয় কর‌তে পা‌রে সহজেই। রোগীরা অন লা‌ইনে সহজেই দেখ‌তে পারবে তার সি‌রি‌য়াল কত চলছে। ‌এতে রোগী‌দের বিপুল প‌রিমান হয়রানী বন্ধ করা যাবে। সরকারের প্রয়োজ‌নে সিরিয়েল বাণিজ্য ও রোগী হয়রানী বন্ধ করার জন্য ডিজিটাল সিরিয়াল সিস্টেম চালু করা। আমা‌দের দেশের শতকরা ৯৯% ডাক্তার এই ডিজিটাল সিরিয়াল মান‌তে চাইবে না। কারণ তা‌দের ভয় ইনকাম ট্যাক্স জেনে যাবে তা‌দের ইনকামের পরিমাণ।
রাষ্ট্রে বিচারের ঊর্ধ্বে কাউ‌কে ছেঁড়ে দেওয়া উচিত নয়। স্বাস্থ্যখাতে একটা ভয়ংকর অরাজগতা চলছে। এটা‌কে রুখ‌তে হবে। আমি ডাক্তারের প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টরকে ধরলাম। তিনি আমা‌কে দুইদিন প‌রে একটা সিরিয়াল দিল। অথচ সিরিয়াল ম্যান বলেছিল, প্রায় ১০০ দিন পর। আমি নিশ্চিত এটাই প্রকৃত সিরিয়াল। যেটা ওই সেন্টারের ডাইরেক্টর আমা‌কে দিল। বাকীট‌ি গল্প ও প্রতারণা। এই  প্রতারণা ক‌রে সিরিয়াল ম্যানরা মানুষের পকেট থেকে টাকা খসায়। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনেকেই ডাক্তার‌দের বিষ‌য়ে লেখে না। কারণ প্রত্যেকে নিজের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা ক‌রে। ভাবে হয়ত প‌রে ডাক্তাররা বয়কট করে বস‌বে। আর সেই‌ সাংবাদিকের বিনা চিকিৎসায় মর‌তে হবে।
তবে ডাক্তার‌দের ইনকাম ট্যাক্স কমিয়ে হলেও তা‌দেরকে অনলাইন সি‌রিয়ালের মাধ্যমে আনাটা সম‌য়ের দাবী। একজন রোগীর রো‌গের সমাধানটা পাওয়া অতি জরুরী। অথচ তা‌কে কিনা তিন মাস অপেক্ষা কর‌তে হবে। অথচ আদ‌তে তিন মাসের কোন সিরিয়াল কিন্তু নাই। কারণ এটার কোন স্বচ্ছতার প্রমাণ নেই। তিন মাস পরের একটা তারিখ রেজিস্টারে লিখে আপনা‌কে ধরিয়ে দিল। এটার দ্রুত সমাধান অতি জরুরি। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে ডাক্তারি সিরিয়াল ডিজিটাল না হলে সরকারের দায়বদ্ধতা থেকে যাবে। পরিশেষে সুশৃঙ্খল ডাক্তারি সিরিয়াল হয়ত আমরা পাব, যখন মানুষের মধ্যে বি‌বেকবোধ বিকশিত হবে।


Wednesday, September 19, 2018

বাংলাদেশে টিভি চ্যানেলের কৃষি অনুষ্ঠান


বাংলাদেশের একজন ইউএনডিপি প্রতিনিধির সাথে মন্ত্রণালয়ের একটা মিটিং এ পরিচিত হই। সে বিভিন্ন দেশের শান্তি মিশনে কাজ করেছিল। আমার শান্তি মিশনে অভিজ্ঞতা থাকায় আমার সাথে তার বেশ গল্প জমে যায়। তিনি বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ বছর যাবত আছেন। নাইজেরিয়ান অরিজিন আমেরিকান। আমাকে এমন একটা কথা বলল, আমার গর্বে বুক ফুলে গেল। সে বলল, তোমাদের বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের আমি খুব পছন্দ করি। তারা যে দেশেই ক্যাম্প করে; কিচেন গার্ডেন করে। তোমাদের অনেক শান্তিরক্ষী ক্যাম্পে গিয়ে আমি তোমাদের ক্যাম্পে উৎপাদিত শাক সব্জি খেয়েছি। এমনকি তোমাদের ক্যাম্পের শাক সবজি উৎপাদন দেখে আফ্রিকার স্থানীয় অলসরাও উজ্জীবিত হয়ে শাক সবজি উৎপাদন শুরু করেছে।
আমার প্রয়াত বাবা ৮৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গ্রামের বাড়ীতে ও চাকুরীকালীন অবস্থায় সরকারী কোয়ার্টারের আশে পাশে বাগান করতেন। তিনি টেলিভিশনে কৃষির কোন অনুষ্ঠান বাদ দিতেন না। তিনি তার জীবনে খুব কমই শাক সবজি বাজার থেকে কিনেছেন। চাকুরীকালীন সময়ে তিনি গ্রামে গেলে প্রায়ই মানুষকে কিচেন গার্ডেন ও গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিত করতেন। আমি তাই জেনিটিক্যালি কৃষিকে খুব পছন্দ করি। টেলিভিশনের কৃষি অনুষ্ঠানগুলি আমার খুব প্রিয় অনুষ্ঠান ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে কৃষি অনুষ্ঠান মনে করার ব্যবস্থা ও ঘড়িতে অ্যালার্ম দেয়ার মত কাজ করতাম।
আজ কৃষি অনুষ্ঠান দেখা কত সহজ। ইউটিউবে রয়েছে হাজার হাজার ভিডিও। নতুন পুরাতন অনেক অনেক কৃষির উপর টিভির অনুষ্ঠান ইউটিউবে রয়েছে। সাইখ সিরাজের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অন্যতম একটি অনুষ্ঠান। তিনি দেশে বিদেশে কৃষি বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন। সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। প্রবাসীর কাছে তার কৃষির নানা বিষয় ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব চ্যানেলই কৃষির উপর অনেক অনেক অনুষ্ঠান তৈরি করছে আর তার টিভিতে প্রচারের পাশাপাশি ইউটিউবে দিয়ে দিচ্ছে। এগুলোর অনেক অনেক হিটও হচ্ছে। অনেকই জানেন কোন ইউটিউব চ্যানেল এক মিলিয়ন হিট হওয়ার পর থেকে প্রতি হিটের জন্য তাই চ্যানেলগুলো টাকা পেতে থাকে। হৃদয়ে মাটি ও মানুষের হিট দেখলে ধারনা করা যায় তাদের উপার্জনও আছে অনেক।
হৃদয়ে মাটি ও মানুষ এর প্রতিটি ভিডিও কয়েক লক্ষ করে ভিউ হচ্ছে। এতে অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা কেমন তা সহজেই বুঝা যায়। আমি খুব সহজেই একটা বিষয় বলতে চাই আর তা হল "হৃদয়ে মাটি ও মানুষ" অনুষ্ঠানটি বিশাল একটি কৃষিপ্রেমী জনগোষ্ঠীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। সাইখ সিরাজ দেশে বিদেশে নানা কৃষি বিষয়ক তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরে মূলত: সমাজকে সবুজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করছেন। ছাদ বাগান কৃষি অনুষ্ঠানটি শহুরে মানুষের ছাদের বাগানের ব্যাপক আগ্রহ জাগিয়েছে। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের কৃষির সাথে সম্পৃক্ত করে ভিন্ন ধর্মী একটি ধারা সৃষ্টি করেছেন। দেশের গণ্ডী পেরিয়ে প্রবাসীদের সাথে কৃষিতে কানেক্ট হয়ে এখন বাংলাদেশী কৃষি আন্তর্জাতিক সীমানায় গেছে। প্রবাসীদের প্রতিবেশীরাও কৃষিতে অভীষ্ট হচ্ছে। এতে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশীদের কৃষির একটা চমৎকার চক্র। প্রবাসীর মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি অনুপ্রেরণা বিদেশীর মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমি প্রথমে যা বলেছি, যেভাবে ইউএন-এ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর কিচেন গার্ডেনের সুনাম রয়েছে, তেমনি প্রবাসীদের বাংলাদেশীর কৃষিও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিদেশীরাও প্রবাসী বাংলাদেশীদের বলা শুরু করবে, বাংলাদেশী গুড ইন এগ্রিকালচার এবং গুড ফাইটার এগেনইস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ
বাংলাদেশী জাতির জন্য কৃষিটা আজ বিশ্বব্যাপী অনেক গর্বের বিষয়। প্রেরণার বিষয়। হয়ত বাংলাদেশীরা সবুজ জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। আজ বাংলায় হাজার হাজার কৃষি ভিডিও ইউটিউবে দেখে মনে হয় কৃষির একটা রেভুলেশন চলছে। এটা বিস্তৃতি লাভ করতেই থাকবে। তা থামবার নয়। আজ ইউটিউবে কৃষির অনুষ্ঠানের হিট দেখলে বুঝা যায়, সকল ঘরে ঘরে সবাই আধুনিক কৃষির সচেতনতা বাড়াতে পেরেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাত ধরে সবুজ রেনেসাঁ আরো বেগবান হবে। তাতে কোন সন্দেহ নেই।

Thursday, September 13, 2018

গামছা বনাম টাওয়েল


২০০৭ সালের ডিসেম্বরে সামরিক ট্রেনিং এর একটা অংশ হিসাবে দুইটি প্যাকে করে নিজের সমস্ত সামগ্রী বহন করে নিয়ে যেতে হবে। কাটাতে হবে ১৫ দিন। এই প্যাকটা আবার ২৫ কি:মি: বয়ে নিয়ে জংগলে নীচে স্থাপন করা গুপ্ত আশ্রয়ে কাটাতে হবে। আবার ২৫ কি:মি হেটে সেনানিবাসে একই প্যাক নিয়ে ফেরত আসতে হবে। মেজর র‍্যাংকে কোম্পানি কমান্ডার হিসাবে সৈন্যদের সাথে আছি। তাই নিজের ব্যাগ নিজে নেয়াটা সন্মানজনক। ব্যাগ বহন ওজন কম ও আরাম দায়ক করার জন্য সমস্ত সামগ্রী ওয়ান টাইম ও মিনি প্যাক টাইপ করে নিলাম। তোয়ালে বড়সড় হয়ে যায়। এটা প্যাকের জায়গা নষ্ট করে। আবার যদি কোন কারণে প্যাকটা ভিজে যায়, তবে ভিজা তোয়ালে প্যাকে ওজন বাড়িয়ে দিবে। কোন জায়গায় আছি হঠাৎ করে স্থান ত্যাগ করলে ভিজা টাওয়েল থাকলে প্যাকের ওজন বাড়বে। মাথায় তখন বুদ্ধি আসল, তোয়ালের পরিবর্তে গামছা হলে কেমন হয়। ঝটপট মাঝারী সাইজের ইউনিফরমের সাথে ম্যাচিং রং হয়, সবুজ রংয়ের দুইটি গামছা তোয়ালে (গামছা থেকে একটু পুরু কাপড়) কিনে ফেললাম। এখন দেখলাম দুইটি গামছা আমার একটি মাঝারী সাইজের তোয়ালে থেকে পাঁচ ভাগের একভাগ জায়গা কম লাগছে। ১৫ দিন আমি চমৎকার ছিলাম। গোছল করে গা মোছার পর চট করে গামছাটা ধুয়ে দিয়ে রোদে শুকাতে দিতাম। ৩০/৬০ মিনিটের মধ্যে গামছা শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী হত। অনেক অনেক কমফোর্টেবল। যখনই গোসল করছি, তখনই শুকনো পরিষ্কার গামছা দিয়ে গা মুছে তা পুনরায় ধুয়ে ভাল করে নিংড়ে শুকোতে দিচ্ছি। কত সুবিধা। মূহুর্তেই শুকিয়ে যাচ্ছে। পুনরায় আবার ধোয়া শুকনো গামছা ব্যবহার করতে পারছি । গামছা প্যাক করতে সমস্যা নেই। দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার কারণে প্যাক নিয়ে যখন যেখানে যাচ্ছি, তখন আর ভিজা তোয়ালের মত কোন টেনশন নাই। গামছা ভিজা থাকলেও একে প্রায় অতি টাইটভাবে নিংড়ানো যায়। একদম পানি শুকিয়ে ফেলা যায়। ওজনও কমে যায়। আমার এই গামছা টেকনিক হয়ত সেনাবাহিনীর অনেকেই ব্যবহার করে। আমি ১৫ দিন অনুশীলন শেষ করে বাসায় যাওয়ার পর একই ভাবে মনের অজান্তে দুইটি গামছা ব্যবহার করে চলেছি। হঠাৎ দশ/বার দিন পর খেয়াল হল, বাসায় এসেও আমি মোলায়েম ও সুন্দর তোয়ালে ব্যবহার করছি না। আমি গোসলের পরে আমার গামছাই ব্যবহার করছি আর ধোয়া কাপড়ের সাথে গামছাগুলো ওয়াশিং এর জন্য রেখে দিচ্ছি। আমরা ছোটবেলা হয়ত অনেক কিছু পরিবারের সাথে শেয়ার করতাম। গ্লাস, তোয়ালে, প্লট ইত্যাদি। যখন নিজের পরিবার হল; তখন ধীরে ধীরে অনেক পরিবারের মত পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য আলাদা গ্লাস, প্লেট ও টাওয়েল আলাদা করতে শিখলাম। এতে পরিবারের সদস্যদের মাঝে ছোঁয়াচে রোগ গুলি কম ছড়ে। যেমন: পরিবারের এক সদস্যের স্কীন ডিজিজ আছে; একই টাওয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য সদস্যের মাঝে ছড়তে পারে। আবার কারো ভাইরাল ফিভার হয়েছে; একই গ্লাস প্লেট ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত অন্য সদস্যদেরও ছড়াতে পারে। স্বাস্থ্যকর দিক দিয়ে কিছু কিছু ক্লোজ কন্টাক্টের সামগ্রীগুলো ওয়ান টাইম বা ব্যক্তিগত হওয়াটা অতি প্রয়োজনীয়। পুনরায় গামছার আলোচনায় ফিরে আসি। সামরিক অনুশীলন শেষে দশ দিন গামছা ব্যবহারের পর যখন টের পেলাম; পুনরায় তোয়ালে ব্যবহারে ফিরে গেলাম। গোসল শেষে তোয়ালেটিকে ধোয়ার ঝুড়িতে রাখলাম। পরেরদিনও গোসল করে তোয়ালেটি ধোয়ার ঝুড়িতে রাখলাম। এভাবে চলছিল, তিন চারদিন পর দেখলাম; তোয়ালে শুকনো নাই। বৃষ্টি হওয়ার কারণে তোয়ালে রৌদ্রে দেয়া যায়নি। আর তোয়ালেও শুকায়নি। পুনরায় গামছা ব্যবহারে ফিরে গেলাম। এভাবে গামছা/তোয়ালে ব্যবহার করতে করতে হঠাত মনে হল আমি তো আগে সপ্তাহে একবার বা দুবার তোয়ালে ধুতে দিতাম। প্রতিদিন ধোয়ার জন্য দিতাম না। এরূপ মোটা তোয়ালে প্রতিদিন ধুতে দেয়াটা ভয়ংকর ব্যাপার। আবার প্রতিদিন তোয়ালে না ধুলে ব্যবহার করতেও পারছিলাম না। কেমন যেন একটা খচ খচ মনে হত। এভাবে মোটা তোয়ালে প্রতিদিন ধোয়ার পেরেশানি বাদ দেয়ার জন্য স্থায়ীভাবে গামছা ব্যবহারে ফিরে গেলাম। গামছা প্রতিটি বেলায় গোসলের পর ধোয়া যাচ্ছে। অল্প সময়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলেও ফ্যানের নিচে ভাল করে নিংড়ে দিলে শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রতিটি গোসলের পর ধোয়া ফ্রেশ টাওয়েল ছাড়া গা শুকাতে পারছি না। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। এখন দুইটা গামছা আমার সাথে সবখানে যাচ্ছে। ফাইভ স্টার/ থ্রি স্টার যে কোন হোটেল হোক না কেন নিজের গামছাই আমার ভরসা। পরিশেষে বলব, প্রতিদিন তোয়ালে ধোয়া কষ্টকর। তাই তোয়ালে যত আরামের হোক না কেন হাইজেনিক ও গোসলের পর পরিষ্কার ভাবে গা মোছার জন্য দুইটি গামছা হতে পারে আমাদের চির সাথী। গামছা তোয়ালে থেকে অনেক বেশী হাইজেনিক। এই গামছাই আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক শ্রমিক দরিদ্র মানুষকে সুস্থ ও হাইজেনিক রাখছে।

Thursday, September 6, 2018

তৈলমুক্ত বা কম তৈলের রান্নায় এয়ার ফ্রাইয়ারের উপকারিতা


চিনি কম খেলে রক্তে চিনি কম বাড়ে। তৈল কম খেলে রক্তে তৈল কম বাড়বে। পিউরিন আছে এই ধরনের খাবার কম খেলে রক্তে ইউরিক এসিড কম বাড়বে। প্রাণীজ উৎসে কোলেস্টোরেড আছে আর তা কম খেলে রক্তে কোলেস্টোরেড কম বাড়বে। শর্করা কম খেলে মোটা হওয়ার ভয় কমে যাবে। আবার সব খেয়ে যদি অনেক অনেক বার্ন করা যায়; তবে আর চিন্তা নেই। রক্তে যাই উপাদান  থাকুক অধিক পরিশ্রম করে তা নি:শেষ করা যায়। বাঙ্গালীদের খাবারে ভাজা পোড়া খাবার বেশী থাকে। আবার ভাজা-পোড়া খাবার অধিক কায়িক পরিশ্রমী মানুষের জন্য তেমন কোন সমস্যা নয়। তবে অধিক পরিশ্রম করার যুগ কি আছে। তেমন নেই। জমির কাজ হচ্ছে মেশিনে। মালপত্র উঠানামার কাজ হচ্ছে ফগ লিফটরে। বিভিন্ন কোম্পানিতে নানা কাজ হচ্ছে রোবটে। রিক্সার মত ম্যানুয়াল কাজও আজ মোটরে চলে আসছে। যদি কায়িক পরিশ্রমের কাজ কমে যায় তবে কি ধরণের খাদ্য অভ্যাস মানুষের প্রয়োজন। তা হল ক্যালরী কম খাওয়া। চিনি ময়দালবণ এই তিনটিকে বলা হয় সাদা বিষ। এই তিনটি যত কম খাওয়া যায় তত মঙ্গল। যারা বসে বসে ডেক্সে কাজ করে তারা আজকাল সাদা বিশ কম খাওয়ার চেষ্টা করছেন। যারা পেটের সমস্যায় ভোগেন তারা বাদে খুব কম লোকজনই আছে যারা ভাজা পোড়া কম খান। আমাদের দেশে রোজায় ভাজা-পোড়ার আইটেম ছাড়া অচল। তাই ভাজা পোড়ার অভ্যাস থাকুক কিন্তু প্রয়োজন কম তৈল খাওয়া। যদি ভাজায় ৮০% বা ৯০% তৈল কম ব্যবহার হয় তবে তা হবে বেস্ট অপশন। ভাজা একই রকম থাকবে, কিন্তু তৈল খরচ কম হবে। খাদ্যে কম তৈল থাকবে তাহলে সেটা হবে বেস্ট। আমরা যারা ভাজা-পোড়া খাই; তারা কমপক্ষে  দৈনিক প্রায় পাঁচ চামচ তৈল খাই। একটি চা চামচে যদি পাঁচ গ্রাম হয় তবে আমরা ৫ গুন ৯ মোট ৪৫ ক্যালরি খাবার নিচ্ছি। তাহলে পাঁচ চামচ হলে তা হয়ে যাবে; ২২৫ ক্যালরি। এখন আমরা একই ভাজা-পোড়া খেয়ে যদি এক চামচ তৈল খাই; তবে আমরা মাত্র ৪৫ ক্যালরি নিব। ১৮০  ক্যালরী কম খাব। এই ১৮০ ক্যালরি পুড়তে আপনার প্রয়োজন হবে প্রায় এক ঘণ্টা মধ্যম গতিতে দৌড় দেয়া। যারা দৌড়াতে কম পছন্দ করেন, তারা দিনে চার চামচ তৈল কম খেতে পারেন। আমাদের মা বোন ও স্ত্রীদের রান্নায় তৈল নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বাবুর্চিদের রান্নায় তৈল নিয়ন্ত্রণ করা একদমই যায় না। বেশী তৈল মানে খাবার বেশী উপাদেয়। অথচ তৈলের স্বাদ ও গন্ধ বা বর্ণ নেই। তবে কিভাবে তৈল উপাদেয় হবে। তৈল উপাদেয় নয়। ওয়েল ফ্রি কুকিং হয়ত যারা ভীষণ রকম রক্তের ট্রাই গ্লিসারাইড নিয়ে বিপদে আছেন তারা মেনে চলতে পারেন। আপনি ভাজা-পোড়া সবই খেলেন কিন্তু ওয়েল ফ্রি বা  অল্প তৈলে তাহলে কেমন হয়। খুব মজাদার বিষয় নয় কি? বেকিং করা একটা ভাল পদ্ধতি। এতে তৈল কম খরচ হয়। কিন্তু খাবারের ইভেন বা সমভাবে কুকিং নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। ডুবো তৈলে ভাজা হলে ভাজা-পোড়ার সমভাবে ভাজা যায়। কিন্তু বিপদ হল অনেক তৈল খাবারে থেকে যায়। খাবারের ভাজার স্বাদের জন্য অল্প তৈলই যথেষ্ট। বাকীটাই তৈল আমরা খামোখা খাই বা খেতে বাধ্য হচ্ছি। তবে উপায় কিবাতাসে রান্না করলে কেমন হয়তৈলে না ডুবিয়ে গরম বাতাস দিয়ে রান্না করলে কেমন হয়। আমার কাছে বিষয়টা খুবই মজাদার মনে হচ্ছে আর তা হল গরম বাতাস দিয়ে রান্না করা। গরম বাতাস দিয়ে রান্না করলে রান্নাটা সমভাবে করা যায়। গরম বাতাসে খাবার যেভাবে রাখুক না কেন সমভাবে তাপটা ছড়িয়ে খাবার রান্না করতে পারে। গরম বাতাসে খাবারে তৈল থাকুক আর না থাকুক সমভাবে রান্না করা সম্ভব হয়। তাই এটা বিনা তৈলে বা অল্প তৈলে রান্না করাটা বেশ সহজ। বেশ কয়েক বছর হল বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে এয়ার ফ্রাইয়ার বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এটিতে তৈল খরচ কমার পাশাপাশি কনভেনশনাল ওভেন থেকে সময় কম লাগে বলে বিদ্যুৎ খরচ কম। তাই এনার্জি এফিশিয়েন্টও বলা যায়। আসুন আমরা কম তৈল বা বিনা তৈলে রান্নার জন্য এয়ার ফ্রাইয়ার ব্যবহার করে স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি ভোজ্য তৈলের খরচ বাচাই। কনভেনশনাল ওভেনে বেক করার অর্ধেক সময়ে রান্না করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করি। সার্বিক বিবেচনায় একটা বাসস্থানের জন্য এটি একটি ভাল প্রোডাক্ট।