আমি যখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেই
তখন পরীক্ষার আগে আগে মোটা মোটা টেস্ট পেপার কিনি। টেস্ট পেপার থেকে বাছাই
করে কিছু কিছু প্রশ্ন বের করে পরীক্ষার তিন মাস আগে নিজে নিজে ডেমো টেস্ট দেই। আমার মনে আছে সব বোর্ডের
প্রশ্ন দেখতাম না। নিজ বোর্ডের প্রশ্ন দেখতাম। তখন বোর্ড চারটা ছিল। তাই প্রতি বোর্ডের আলাদা
আলাদা টেস্ট পেপার থাকলে আমি নিশ্চিত দেশের মুদ্রণ শিল্পের অনেক কাগজ বেচে যেত। তা হয়নি। বিশাল আকার টেস্ট পেপার
কিনতে হয়েছে। লাগুক না লাগুক মোটা বই ছাপানো ও ছাত্রদের হাতে তুলে
দেয়া একটা বিশাল ব্যবসা। আমার ছেলেদের পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসির আগে টেস্ট পেপার কিনে দিতে হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি, বই বাজারে ছিল তাই ক্রয় করতে হয়েছে। এটাই হল বিষয়। কতটুকু কাজে লেগেছে আল্লাহ
মালুম। তবে এতে প্রিন্টিং প্রেসের বাণিজ্য হয়েছে তা নি:সন্দেহে বলা যায়।
আমার কাছে মনে হয় এই ধরনের অপচয় কারী
প্রিন্টিং বন্ধ করে আমরা লেছ পেপার কনসেপ্টে যেতে পারি। একটি ঘটনায় আমি বিষয়টি
নিয়ে আরও গভীর চিন্তায় নিপতিত হয়েছি। আমি আমার একজন সহকর্মীকে দেখেছিলাম। কম্পিউটার হতে ইন্টারনেটে
প্রথম আলো অনলাইন ভার্শন থেকে জেএসসি পরীক্ষার কন্টেনগুলো প্রিন্ট করে বই বানাচ্ছে। আমি বললাম বাজারে গাইড
থাকতে কি সব প্রিন্ট আউট নিচ্ছেন। তিনি বললেন আমি বাচ্চাকে কোন গাইড দেইনি। পত্রিকা থেকে প্রিন্ট নেয়ার
কারণ সে আমার কাছে যা বলেছিল তা হল। দেশের ভাল শিক্ষক দ্বারা তাদের কন্টেন্ট তৈরি করিয়েছে। আর ইম্পরট্যান্ট ও গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে। অনেক সময় অনেক সফল ছাত্র/ছাত্রীরা বলেছে পত্রিকায় দেয়া নোট পড়ে তারা ভাল করেছে। একবার একজন শিক্ষক আমাকে
বলেছিল কোন পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি স্টুডেন্ট
যদি বাসায় নিয়মিত পত্রিকা রেখে পড়াশোনার পাতাটি পড়ে তবে অনেক উপকৃত হবে।
যদি পত্রিকা থেকে বা পত্রিকার অনলাইন
ভার্শন থেকে ছাত্র/ ছাত্রীরা উপকৃত হতে পারে
তবে আর এত টাকা খরচ করে গাইড কেনা কেন? অনলাইনে বিশাল টেস্ট পেপার
রেখে দেয়া যায়। টেস্ট পেপারটি খোলার জন্য মোবাইল মানি বা কার্ডের মাধ্যমে
ওপেন করা যেতে পারে। এতে টেস্ট পেপার প্রিন্টিং করে কাগজের অপচয় কমে গেল। ছাত্র শিক্ষকরা কম্পিউটারে, ট্যাবে বা মোবাইল ডিভাইসে টেস্ট পেপারের প্রশ্নপত্র দেখতে পারল। প্রিন্টেড টেস্ট পেপার
হতে খরচও কম হল। একান্তই যেটা প্রয়োজন তা অনলাইন ভার্শন হতে প্রিন্ট করে
নিতে পারবে। শিক্ষা বোর্ড তাদের সমস্ত কারিকুলাম মূলত পাঠ্য বইকে
কেন্দ্র করে। শিক্ষা বোর্ড কিন্তু গলা ফাটাচ্ছে গাইড বা নোট বুক বন্ধ
করার জন্য। গাইড বা নোটবুক একটা ব্যবসা। এটা প্রয়োজন নয়। সরকার নিষিদ্ধ করেছে। তথাপিও অনেকে লুকিয়ে কিনছে। অনেকে লুকিয়ে বিক্রি করছে। এই লুকোচুরি না করে অনলাইনে
গাইড বই বা নোট বই প্রকাশনার অনুমতি দিয়ে প্রিন্ট কপি তুলে দিতে পারে। কেউ কম্পিউটার হতে ডাউন
লোড করে প্রিন্ট করলে অপরাধ নাই। অনুন্নত ও অপ্রয়োজনীয় গাইড ও নোটবুক প্রকাশনা করে দুষ্টু
চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছে। আর প্রিন্টেড কপি বিক্রি বন্ধ করলে অনেক ছোট ছোট কম্পিউটার
প্রিন্ট আউট নেয়া দোকান চালু হবে এবং ছোট ছোট কর্ম সংস্থান হবে। অনলাইনে টাকা দিয়ে পিডিএফ
গাইড প্রিন্ট করে নেয়া যাবে। অথবা যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু প্রিন্ট করে নিলেই চলবে। বাংলাদেশে একবার শেয়ার
মার্কেটের অনলাইন পত্রিকা মাসিক ৩০০ টাকা দিয়ে গ্রাহক হয়েছিলাম। তাদের পত্রিকা ইউজার নেম
ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ওপেন করতে হত। এভাবে পেমেন্টে অনলাইনে গাইড বুক, নোট বুক , রেফারেন্স বুক ও টেস্ট পেপার চালু
করা যেতে পারে। যে সব ছাত্রের যা প্রয়োজন সে সব পেইড ওয়েব সাইট হতে সংগ্রহ
করে প্রিন্ট করে নিলেই চলবে। অনেকে বলবেন ইন্টারনেটে এত পত্রিকায় পড়াশোনার উপর অনলাইন
ভার্শন ও প্রিন্ট ভার্শন আছে তথাপিও প্রিন্টেড নোট বা গাইড চলছে। বরং অনলাইন ভার্সন বা পত্রিকার
প্রিন্ট ভার্শন তেমন চলছে না। চলছে না কারণ নোট বুক বা গাইডে একসাথে সব পাওয়া যায়। তেমনি আমরা যদি কিছু ওয়েব
সাইটের মাধ্যমে পিডিএফ ও মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট রাখতে পারি তবে অত্যন্ত দৃঢ়তার বলা
যায় নিষিদ্ধ প্রিন্টেড গাইড ও নোটবুক কেউ আর ঝুঁকি নিয়ে প্রিন্ট করবে না। সকল অভিভাবক অপ্রয়োজনীয়
বই, কাগজের খরচ, প্রিন্টিং
খরচ ও সর্বোপরি বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় কারী পদ্ধতি পরিহার করে সাশ্রয়ী পদ্ধতির দিকে
যেতে পারবে। শিক্ষা খরচ কমবে ও শিক্ষা ব্যবস্থা গতিশীল হবে।