Pages

Thursday, December 28, 2017

প্রিন্টেড গাইড ও নোটবুক বন্ধ করে অনলাইন রাখা

আমি যখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেই তখন পরীক্ষার আগে আগে মোটা মোটা টেস্ট পেপার কিনি টেস্ট পেপার থেকে বাছাই করে কিছু কিছু প্রশ্ন বের করে পরীক্ষার তিন মাস আগে নিজে নিজে ডেমো টেস্ট দেই আমার মনে আছে সব বোর্ডের প্রশ্ন দেখতাম না নিজ বোর্ডের প্রশ্ন দেখতাম তখন বোর্ড চারটা ছিল তাই প্রতি বোর্ডের আলাদা আলাদা টেস্ট পেপার থাকলে আমি নিশ্চিত দেশের মুদ্রণ শিল্পের অনেক কাগজ বেচে যেত তা হয়নি বিশাল আকার টেস্ট পেপার কিনতে হয়েছে লাগুক না লাগুক মোটা বই ছাপানো ও ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়া একটা বিশাল ব্যবসা আমার ছেলেদের পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসির আগে টেস্ট পেপার কিনে দিতে হয়েছে সত্যি কথা বলতে কি, বই বাজারে ছিল তাই ক্রয় করতে হয়েছে এটাই হল বিষয় কতটুকু কাজে লেগেছে আল্লাহ মালুম তবে এতে প্রিন্টিং প্রেসের বাণিজ্য হয়েছে তা নি:সন্দেহে বলা যায়
আমার কাছে মনে হয় এই ধরনের অপচয় কারী প্রিন্টিং বন্ধ করে আমরা লেছ পেপার কনসেপ্টে যেতে পারি একটি ঘটনায় আমি বিষয়টি নিয়ে আরও গভীর চিন্তায় নিপতিত হয়েছি আমি আমার একজন সহকর্মীকে দেখেছিলাম কম্পিউটার হতে ইন্টারনেটে প্রথম আলো অনলাইন ভার্শন থেকে জেএসসি পরীক্ষার কন্টেনগুলো প্রিন্ট করে বই বানাচ্ছে আমি বললাম বাজারে গাইড থাকতে কি সব প্রিন্ট আউট নিচ্ছেন তিনি বললেন আমি বাচ্চাকে কোন গাইড দেইনি পত্রিকা থেকে প্রিন্ট নেয়ার কারণ সে আমার কাছে যা বলেছিল তা হল দেশের ভাল শিক্ষক দ্বারা তাদের কন্টেন্ট তৈরি করিয়েছে আর ইম্পরট্যান্ট ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে অনেক সময় অনেক সফল ছাত্র/ছাত্রীরা বলেছে পত্রিকায় দেয়া নোট পড়ে তারা ভাল করেছে একবার একজন শিক্ষক আমাকে বলেছিল কোন পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি স্টুডেন্ট যদি বাসায় নিয়মিত পত্রিকা রেখে পড়াশোনার পাতাটি পড়ে তবে অনেক উপকৃত হবে

যদি পত্রিকা থেকে বা পত্রিকার অনলাইন ভার্শন থেকে ছাত্র/ ছাত্রীরা উপকৃত হতে পারে তবে আর এত টাকা খরচ করে গাইড কেনা কেন? অনলাইনে বিশাল টেস্ট পেপার রেখে দেয়া যায় টেস্ট পেপারটি খোলার জন্য মোবাইল মানি বা কার্ডের মাধ্যমে ওপেন করা যেতে পারে এতে টেস্ট পেপার প্রিন্টিং করে কাগজের অপচয় কমে গেল ছাত্র শিক্ষকরা কম্পিউটারে, ট্যাবে বা মোবাইল ডিভাইসে টেস্ট পেপারের প্রশ্নপত্র দেখতে পারল প্রিন্টেড টেস্ট পেপার হতে খরচও কম হল একান্তই যেটা প্রয়োজন তা অনলাইন ভার্শন হতে প্রিন্ট করে নিতে পারবে শিক্ষা বোর্ড তাদের সমস্ত কারিকুলাম মূলত পাঠ্য বইকে কেন্দ্র করে শিক্ষা বোর্ড কিন্তু গলা ফাটাচ্ছে গাইড বা নোট বুক বন্ধ করার জন্য গাইড বা নোটবুক একটা ব্যবসা এটা প্রয়োজন নয় সরকার নিষিদ্ধ করেছে তথাপিও অনেকে লুকিয়ে কিনছে অনেকে লুকিয়ে বিক্রি করছে এই লুকোচুরি না করে অনলাইনে গাইড বই বা নোট বই প্রকাশনার অনুমতি দিয়ে প্রিন্ট কপি তুলে দিতে পারে কেউ কম্পিউটার হতে ডাউন লোড করে প্রিন্ট করলে অপরাধ নাই অনুন্নত ও অপ্রয়োজনীয় গাইড ও নোটবুক প্রকাশনা করে দুষ্টু চক্র লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছে আর প্রিন্টেড কপি বিক্রি বন্ধ করলে অনেক ছোট ছোট কম্পিউটার প্রিন্ট আউট নেয়া দোকান চালু হবে এবং ছোট ছোট কর্ম সংস্থান হবে অনলাইনে টাকা দিয়ে পিডিএফ গাইড প্রিন্ট করে নেয়া যাবে অথবা যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু প্রিন্ট করে নিলেই চলবে বাংলাদেশে একবার শেয়ার মার্কেটের অনলাইন পত্রিকা মাসিক ৩০০ টাকা দিয়ে গ্রাহক হয়েছিলাম তাদের পত্রিকা ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ওপেন করতে হত এভাবে পেমেন্টে অনলাইনে গাইড বুক, নোট বুক , রেফারেন্স বুক ও টেস্ট পেপার চালু করা যেতে পারে যে সব ছাত্রের যা প্রয়োজন সে সব পেইড ওয়েব সাইট হতে সংগ্রহ করে প্রিন্ট করে নিলেই চলবে অনেকে বলবেন ইন্টারনেটে এত পত্রিকায় পড়াশোনার উপর অনলাইন ভার্শন ও প্রিন্ট ভার্শন আছে তথাপিও প্রিন্টেড নোট বা গাইড চলছে বরং অনলাইন ভার্সন বা পত্রিকার প্রিন্ট ভার্শন তেমন চলছে না চলছে না কারণ নোট বুক বা গাইডে একসাথে সব পাওয়া যায় তেমনি আমরা যদি কিছু ওয়েব সাইটের মাধ্যমে পিডিএফ ও মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট রাখতে পারি তবে অত্যন্ত দৃঢ়তার বলা যায় নিষিদ্ধ প্রিন্টেড গাইড ও নোটবুক কেউ আর ঝুঁকি নিয়ে প্রিন্ট করবে না সকল অভিভাবক অপ্রয়োজনীয় বই, কাগজের খরচ, প্রিন্টিং খরচ ও সর্বোপরি বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় কারী পদ্ধতি পরিহার করে সাশ্রয়ী পদ্ধতির দিকে যেতে পারবে শিক্ষা খরচ কমবে ও শিক্ষা ব্যবস্থা গতিশীল হবে

Thursday, December 21, 2017

ভোগ্য পণ্য কিস্তিতে নয় বরং মাসাধিককাল সঞ্চয় করে ক্রয় করা উত্তম

১৯৭৭ সালে আমার বড় ভাই কুমিল্লা জেলার হাই স্কুলে পড়তেন। প্রতিদিন যাওয়া আসায় প্রায় দুই টাকা রিক্সা ভাড়া খরচ যায়। বড় ভাইয়ের আবদার একটা ফনিক্স বাই সাইক্যাল কেনা। বড় ভাইকে বাই সাইক্যাল দেয়া হবে। পাঁচশত টাকা লাগবে। আব্বা ও আম্মা তিন মাস ধরে মাসের খরচ থেকে জমাচ্ছেন বড় ভাইকে বাই সাইক্যাল কিনে দিবেন বলে। এভাবে আমার মা ও বাবা বেতনের টাকা হতে জমিয়ে বিভিন্ন সময় ঘরের অনেক সামগ্রী কিনতেন। আমরাও জানতাম কোন মাসে কি কেনা হবে। সেই অনুযায়ী আমরাও কৃচ্ছতা সাধন করতাম। তখন আগে সঞ্চয় পরে ক্রয় করা হত। এটা একটা কষ্টকর প্রক্রিয়া। অপেক্ষা করা। আর কোন জিনিষ আমি চাইছি তা দেরী করে কেনা। অনেক কষ্টকর বিষয়। তবে কষ্টকর হলেও আগে অপেক্ষা  করে পরে ঋণ মুক্ত থাকা যেত। অথচ এখন আধুনিক কাবুলিওয়ালারা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে হাজির। শুধু আপনার একটু ঋণ নেয়ার জন্য আওয়াজ দিতে হবে এই আরকি।
বাড়ী বাড়ী গিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার কালচার চালু হয়েছে এটার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া আছে। গ্রামের নিরীহ মানুষ সাধারণ ভাবে আর্থিক অনটনে থাকে। তাদের কিছু খায়েশ থাকে যা তাদের ছোট ছোট উপার্জনে পূর্ণ করতে সক্ষম হয় না। যখন নগদ কিছু টাকা হাতে আসে তখন তারা বেহিসাবি ভাবেই খরচ করে ফেলে। ক্ষুদ্র ঋণের গরু, ছাগল ও হাস মুরগী কেনার টাকা দিয়ে টাচ মোবাইল, গয়না ঘাটি, ফার্নিচার ও ঘরের কাজ করে ফেলে। তখনই মূলত বিপর্যয়টা ঘটে। ক্ষুদ্র ঋণের আইডিয়াটাই এসেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে বা কৃষির বিনিয়োগ করে আয় করা। সেই আয় দ্বারা কিস্তি বা ঋণ শোধ করা। কিস্তি পরিশোধের জন্য শক্তিশালী আয়ের উৎস থাকতে হবে। নচেৎ কষ্টকর আয়ের বড় অংশ ব্যাংকের সুদ পরিশোধে চলে যাবে। তাই ছোট বেলা থেকে বাচ্চাদের শেখাতে হবে শখে শখে বা উৎপাদনীল খাত ছাড়া ঋণ না করা। এমনকি অনেক সময় আয় রোজগার ভাল মনে হচ্ছে কিস্তি নিতে সমস্যা কোথায়। আজ ভাল চলছে। কালকে অত্যন্ত মন্দ অবস্থায় যেতে পারে। তখন এই ঋণ গুলো আপনাকে চরম বিপদে ফেলে দিবে। ব্যবসায় লস। আয় নাই। কিন্তু কিস্তি গুনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ আগে ছিল দরিদ্র কিন্তু ক্ষুদ্র ঋণ চালু হওয়ার পর গ্রামের মানুষ হয়েছে ঋণ গ্রস্থ দরিদ্র মানুষ।
ঋণ ও কিস্তির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আয় বর্ধক কাজ ছাড়া ঋণ বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করতে হবে। একান্তই চিকিৎসার জন্য বা পড়াশোনার জন্য ঋণ নেয়া যেতে পারে। তার বাইরে অবশ্যই নয়।

কোন বাড়ীতে শিশুরা আবদার করল তাদের রঙ্গিন টিভি চাই। এখনই কিস্তিতে কিনতে হবে তা নয়। সময় নিতে হবে। মাসিক ভিত্তিতে জমাতে হবে। তার পর কিনতে হবে। বাচ্চাদের শিখাতে হবে একটি টিভি কিনতে আমাদের প্রয়োজন হবে ২০ হাজার টাকা। অপর দিকে মাসে আমরা সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে সেইভ করতে পারি ২০০০ টাকা। তাই ২০ হাজার টাকার টিভি কিনতে আমাদের সঞ্চয় করতে হবে ১০ মাস ধরে। এভাবে যে কোন ভোগ্য পণ্য ক্রয় অবশ্যই নগদে করাটাই বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় কিস্তিতে অধিক টাকা খরচ হবে। অনেকে বলবে একটু বেশী গেলেও কিস্তিতে কিনলেও দশ মাস আগে থেকেই আমি টিভি উপভোগ করতে পারি। তাহলে সমস্যা কি। সমস্যা আছে। মনে করুন আপনি কিস্তি করে  টিভি কিনেছেন। আপনার ইনকাম ভাল। আয় রোজগার ভাল। হঠাৎ করে আপনি অসুস্থ হয়ে গেলেন। চিকিৎসায় অনেক খরচ চলে গেল। এখন মাসিক কিস্তি আপনি নিয়মিত দিতে পারলেন না। আপনার ঋণ ও সুদ আরও বেড়ে যাবে। অথচ আপনি যদি দশ মাস টাকা জমিয়ে কিনতেন তবে আপনি আর এই সমস্যায় পড়তেন না। আপনি অসুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসায় বেশী খরচ হয়েছে। সমস্যা নাই। সেই ক্ষেত্রে আপনি দশ মাসের বদলে আরও কয়েক মাস বেশী জমিয়ে কয়েক মাস পড়ে টিভি কিনবেন। অনেকেই নিজের ইমোশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ঝোঁক হল। কিস্তিতে কিনে ফেলল। এর জন্য সুদূর প্রসারী চিন্তা করে না। খরচের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হওয়াটা জরুরী। পরিশেষে বলব, আসুন আমরা আমাদের আশে পাশের মানুষদের শখের বসে কিস্তিতে ঋণ গ্রহণ করায় নিরুৎসাহিত করি।

Thursday, December 14, 2017

আবাসন বীমা

বাংলাদেশের আবাসন শিল্প এখনও ভাল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ মানুষ একটা ঠিকানা চায়। তাই যাই দাম হোক একটা ফ্লাট, প্লট ও বাড়ী ঠিকানা হিসাবে সবাই চায়। আমি ২০১৭ সালে ৪৭ বছর বয়সেও একটা স্থায়ী নিবাস চাইযখন ফ্লাট ক্রয় করার চিন্তা করি এবং কিছুটা উন্নত ফ্লাটের দাম শুনি কোটি টাকা। তখন এক‌টি হিসাব মাথায় চলে আসে আর তা হল কোটি টাকার ফ্লাট ভাড়া দিলে কত ভাড়া পাব। যখন জানা যায় ভাড়া হবে ৩০/৩৫ হাজার টাকা তখন আর হিসাব মেলে না। মনে হয় ফ্লাট না কিনে টাকা ব্যাংকে রেখে তার লাভ দি‌য়ে বাড়ী ভাড়া প‌রি‌শোধ ক‌রেও আরও টাকা জমা‌নো যা‌বে। উপরন্তু কোটি টাকা অপরিবর্তিত থাকবে। যারা সুদ বা ব্যাংকের মুনাফা নি‌তে চান না তারা ব্যাংকের শরীয়া মোতা‌বেক একাউন্ট খুলে টাকার বিপরীতে লাভ বাড়া‌তে পারবেন। আমি ধারনা আবাসন আমরা চাই নিরাপত্তার জন্য। প্রথম নিরাপত্তা হল, আমি ভাড়া দিচ্ছি। মনে হচ্ছে‌ খালী খালী অনেক টাকা ভাড়া বাবদ অপচয় হচ্ছে। নিজের বাড়ী থাকলে এই টাকাটা খরচ হত না। দ্বিতীয় সমস্যা হল, বাড়ী ভাড়া নিয়মিত বৃদ্ধি পায়। যদিও ঢাকা শহরের বাড়ী ভাড়া বছর বছর না বেঁড়ে তা সাধারণত সরকারী চাকুরে‌দে‌র বেতন বাড়ার সাথে বেঁড়ে থা‌কে। তৃতীয় সমস্যা হল, ঘন ঘন বাড়ী পরিবর্তন। এটার কোন সমাধান নেই। কারণ একজন বাড়ীওয়ালা কখন কোন প্রয়োজ‌নে তার বাড়ীর প্রয়োজ‌ন হবে তা সে নিজেও জানে না। তাই ভাড়া বাড়ির স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা নেই। তবে প্যাক এন্ড পার‌সেল প্রতিষ্ঠানে টাকা দিলে পুরাতন ভাড়া বাড়ী হ‌তে নতুন ভাড়া বাড়ী‌তে হুবহু বদলী ক‌রে দেয়। এতে অনেক টেনশন কমে যাবে। চতুর্থ হল, পরিচয়। একটা ফ্লাট নিজের থাকলে নিজের স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে পরিচয় দেয়া যায়। ছেলে মে‌য়ের বি‌য়ে দি‌তে গেলে ব্যাংকে কত বিনিয়োগ আছে তা কেউ দেখে নাএই ক্ষেত্রেও ফ্লাট বা বাড়ীর মালিক হওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
এখন এর কি সমাধান করা যায় তা নিয়ে একটু ভাবনা চিন্তা করলে মন্দ হয় না। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক আবাসন বীমাকর‌তে পা‌রে। যেমন: প্রতি মাসে আপনি ২৫০০০ টাকা করে দি‌তে পারেন কোন আবাসন বীমা কোম্পানী‌কেকোম্পানী‌টি প্রথম বছর ভাড়া বাবদ ১০,০০০ টাকা, ২য় বছর ১০,৫০০ টাকা পরের বছর ১১,০০০ টাকা অর্থাৎ প্রতি বছর ৫০০ টাকা বাড়াবে ও সর্বশেষে ২৯ বছরে ২৪,৫০০ টাকা ভাড়া প্রদান ক‌রে ৩০ বছরে কার্যক্রম শেষ করবে। ৫০০ টাকা করে ভাড়া বাড়ানোর কারণ হল প্রতি বছর কিছু কিছু করে বাড়ী ভাড়া বাড়তে থাকে। এর মধ্যে বীমা গ্রহীতা মারা গেলে নমী‌নি ৩০ বছর যাবত মাসিক বাড়ী ভাড়া প্রিমিয়াম না দিয়েও পেতে থাকবে এবং এটাই হবে বীমার সুবিধাআর মারা না গেলে ৩০ বছর ক্রমান্বয়ে ভাড়া গ্রহণের পাশাপাশি মেয়াদা‌ন্তে কোটি টাকা দেয়া হবে। এই হিসাবে ব্যাংকের ৬/৭ % হারে মুনাফা বা লভ্যাংশ ধরা হয়েছে। কেউ হয়ত ২০ বছর মাসিক ২৫০০০ টাকা প্রিমিয়াম দি‌য়ে মারা গেল। আর দশ বছর প্রিমিয়াম প্রদান করলেই  এক কোটি টাকা হ‌য়ে  যেততখন ন‌মিনী মাস ভিত্তিক পুরো পেমেন্ট চালু রেখে লাভসহ কোটি টাকা তুলে নি‌তে পারবে। এখন আসি ৩০ বছর পর কোটি টাকায় ফ্লাট বাড়ী কেনা যে‌তে পা‌রে। অথবা অন্য আর এক‌টি বি‌নি‌য়োগ সেবা নি‌তে পা‌রে। তা হল, ৫০ লক্ষ টাকার লভ্যাংশে বাড়ী ভাড়া প্রাপ্তি আর অবশিষ্ট ৫০ লক্ষ টাকায় প্রতি ১০ বছরে ডাবল টাকা প্রাপ্তি। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকরা ১০ বছর সাইকেলে মূলধন ডাবল করার প্রক্রিয়া চালু রাখ‌তে পা‌রে। এই সিস্টেমে প্রতি দশ বছর পর পর সম্পূর্ণ টাকা দুই ভাগ ক‌রে এক ভাগ ফিক্সড ডি‌পো‌জিট ও অপর ভাগ মাসিক বাড়ী ভাড়া হিসাবে হা‌তে দেয়া হ‌তে থাকবে।
বাড়ীর বিষয়‌টি অনেক বেশী ইমোশনাল হওয়ায় মানুষ ধার কর্জ ক‌রে বি‌নি‌য়োগ বাড়ী বা ফ্লাট করার কাজে ক‌রে ফেলে। তাই ধার কর্জ ক‌রে বি‌নি‌য়োগ না ক‌রে জীবনের প্রথম থেকে সবাই যদি কিছু কিছু ক‌রে বাড়ী ভাড়ার অতিরিক্ত ক‌রে জমা‌তে থা‌কে তবে বাকী জীবনের বাড়ী ভাড়ার নিশ্চয়তা চলে আস‌বে। তারপর বাড়ী কেনার টাকা হা‌তে চলে আস‌বে।

ধার ক‌রে বাড়ী করে কোটি কোটি মানুষ নিজেদের মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমিত রাখ‌তে পেরেছে। কখনও উচ্চবিত্ত হ‌তে পারেনি। সম্পূর্ণ সম্পদের ১০% বাড়ী ও গাড়ী জন্য সাধারণত বুদ্ধিমানরা ব্যয় ক‌রে থাকে‌। বাকী ৯০% সম্পদ বর্ধনশীল খা‌তে বিনি‌য়োগ ক‌রে থা‌কে। পরিশেষে বলব, “আবাসন বীমার যে ব্যবসায়ী মডেলটি দিলাম ব্যাংকি খা‌তের ও বীমা খাতের লোকজন ভেবে দেখ‌তে পারেন।

Thursday, December 7, 2017

ফেইস বু‌কে উপার্জন

ফেইস বু‌কে কিভাবে উপার্জন করা যায় এই বিষ‌য়ে ফেইস বু‌কেই  জান‌তে চেয়েছিলাম। একজন আমা‌কে এমন এমন আপত্তিকর মন্তব্য করল যে  আমি দমে গেলাম। পোস্টটা মুছে দি‌য়ে জান ছুটালাম। জান ছুটা‌লেও মন ছুটা‌তে পারলাম না। আমরা এক সময় তরুণ বয়সে অন্যদের জানার জন্য পত্র মিতালী করতাম। তারপর আসল ইন্টারনেট চ্যাট। তারও প‌রে ভয়েজ চ্যাট। সর্বশেষ ব্যবহার হল আমা‌দের মাল্টিমিডিয়া যোগা‌যোগ ফেইস বুক। টেক্সট, অডিও ও ভিডিও নি‌য়ে অপূর্ব  সমন্বয় এই ফেইস বুক।
তরুণ তরুণীরা প্রচুর সময় ফেইস বু‌কে  কাটায়। আর কাটা‌বে নাই বা কেন। এত এত মানুষের এত এত মজার মজার তথ্য জানা যায়। নিজের ছবি মূহুর্তেই সবাইকে দেখানো যাচ্ছে। ভিডিও লাইভ করা যাচ্ছে। মানুষ প্রকৃতিগত ভাবে অন্যকে জান‌তে চায়। আর ফেইস বুক এই কাজ‌টিই ক‌রে যাচ্ছে। এই ফেইস বুক থেকে আমরা যদি ইন্টারনেট খরচটা পাই তা‌তে মন্দ কি।
ইন্টারনেটে সার্চ দিলেও ফেইস বু‌কে  ইনকামের অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। সে কাজটা আমা‌দের তরুণ ভাই বো‌নেরা করবে। আমি আমার মাথায় পুঞ্জিভূত তথ্য বা আইডিয়া আছে তাই ঝেড়ে দিচ্ছি । প্রথম যে আইডিয়া আসল তা হল আমা‌দের আসে  পাশে অনেক লেখক বা সে‌লি‌ব্রে‌টি আছে  যারা ফেইস বু‌কে সময় দি‌তে পারেন না। কিন্তু ফেইস বু‌কে যথাযথ রেসপন্স দি‌তে তা‌দের মন চায়। তা‌দের এই  কাজ‌টি আপনি ক‌রে দি‌তে পারেন। প্রতিদিন সামারী ক‌রে উল্লেখযোগ্য কমেন্ট ও হাইলাইটস আপনার সে‌লি‌ব্রে‌টির কাছে ইমেইল,ভাইবার ইত্যাদির মাধ্যমে দেয়া যাবে। এর জন্য কাজের পরিধি বিবেচনায় আপনি আপনার সে‌লি‌ব্রে‌টি বা লেখকের সাথে আপনার পারিশ্রমিকের বিষয়টা আলোচনা কর‌তে পারেন। সরকারী ও বেসরকারি অনেক সংস্থা ফেইস বুকের মাধ্যমে কমপ্লেইন সংগ্রহ ক‌রে। তা‌দের ফেইস বুক পেইজ মেন‌টেইন করার জন্য আপনি চুক্তিবদ্ধ হ‌তে পারেন।
আমা‌দের অনেকেরই বাড়ী ভাড়া ও টিউশন দরকার হয়। আপনা‌কে কেউ রি‌কো‌য়েস্ট  করল, আপনি তা‌কে বললেন আমা‌কে দুই শত টাকা দেন আমি জি‌বি কিনে ফেইস বু‌কে সার্চ ক‌রে বের ক‌রে দিচ্ছি। আমি দুইবার দুইজন গৃহশিক্ষক ফেইস বুকে পোস্ট দিয়ে খুঁজে পেয়েছি।
‌ফেইস বুক চালায় না কিন্তু আপনার বন্ধু বান্ধব অনেক আছে তা‌দের জন্য টিউশন খুঁজে দি‌য়ে আপনি তা‌দের কাছ থেকে "এম‌বি" কেনার টাকাটা বের কর‌তে পারেন।
মালিকদের ভাল ভাড়াটিয়াকে বাড়ী ভাড়া দেওয়া ও ভাড়াটিয়াদের সুবিধা জনক লে‌কেশা‌নে সুবিধাজনক ভাড়ায় বাড়ী ভাড়া পাওয়া বড়ই চ্যালেঞ্জ।  বাড়ী ভাড়া সংক্রান্ত পোস্ট আপনি দি‌তে পারেন ও আপনার প্রতিবেশী, আত্মীয় ও বন্ধু বান্ধবদের  এই উপকার গু‌লো ক‌রে আপনি কিছু ফি নি‌তে পারেন।
অনেক তরুণ তরুণী প্রেম ও ভাব করার জন্য ফেক ফেইস বুক আইডি চালায়। এত ফেক না ক‌রে এক‌টি ফেইস বুক অনেক বন্ধু নি‌য়ে চালা‌নো প্রয়োজন। আপনার পরিচিতি লুকিয়ে দুই একটা প্রেম পিরীত ক‌রে সাময়িক মজা ও সময় নষ্ট হয় মাত্র। তার‌ চে‌য়ে অনেক বন্ধু নি‌য়ে ফেইস বুক করলে তা‌দের ক্রমান্বয়ে নেতিবাচক ও ফেক‌দের আন‌ফ্রেন্ড করলে মন্দ নয়। দুই একটা ভাল বন্ধু ম্যা‌সেঞ্জা‌রে রাখা যে‌তে পা‌রে। দুষ্টুদের ব্লক মারলেই চলবে।
আপনার এলাকার জানা শোনাদের ‌দোকানে কি কি দ্রব্য পাওয়া যায় তার পোস্ট ফেইস বুকে দি‌তে পারেন। বিনিময়ে "এম বি" কেনার টাকাটা উঠা‌তে পারেন। আমি আমা‌দের তরুণ তরুণীদের কাছে "এম‌বি' ক্রয় একটা প্রিয় বিষয়। তাই তা‌দের ভাষায় ইন্টারনেটের ডাটা কেনার কথা বলছি। ফেইস বুক  বা ম্যা‌সেঞ্জার দি‌য়ে সভা ও সমিতির কার্যক্রম সবাইকেই জানা‌তে পারেন। বিনিময়ে আহবায়কের কাছ থেকে "এম‌বি" চে‌য়ে নি‌তে পারেন। আমি একটা ধারনা দিলাম মাত্র। আমি জানি আমার প্রিয় তরুণ ও তরুণীরা আরো  অনেক মাধ্যম বের ক‌রে নিবে। উপার্জন করা একটি মৌ‌লিক কাজ। আপনি ফেইস বু‌কে আছেন তার থেকে কোন ফয়দা নিবেন না তা তো হয় না। খালী খালী "এম‌বি" কিনবেন তার‌ চে‌য়ে সেটা উপার্জন করবেন। সেটা ভাল নয় কি।

বিভিন্ন  পরিবহনের টিকিট ক্রয় বিক্রয় করা যে‌তে পা‌রে। কারো ফরমায়েশের কাজ করা যে‌তে পা‌রে। আর এই যোগা‌যোগটাই হতে পা‌রে ফেইস  বুকের মাধ্যমে। আমি নিশ্চিত ফেইস বু‌কে আরো শত শত সহজ আ‌য়ের রাস্তা বের করা যাবে। অনেকে মিথ্যা তথ্য দি‌য়ে দান চায়। অথবা প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে ডে‌কে নি‌য়ে খারাপ ছবি তুলে ব্ল্যাক মেইল ক‌রে। এদের কাছ থেকে আবার দু‌রে থাক‌তে হবে। পরিশেষে বলব আমাদের অনেকের ফেইস বুক নেশা ব্যাপক ভাবে আছে । এটা‌কে উপার্জনের কাজে ব্যবহার করার উপায় বের কর‌তে হবে। যা‌তে ইন্টারনেট ব্যবহারের টাকাটা তরুণ তরুণীরা নিজেরাই যোগাড় কর‌তে পা‌রে। এখনকার আইডিয়া এই  পর্যন্তই  রাখছি। আরো আইডিয়া যোগাড় কর‌তে পারলে আরও এক কিস্তি এ বিষ‌য়ে কলম ধরার ইচ্ছে রাখছি।

Thursday, November 30, 2017

ক্রেডিট কার্ড অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নয় বরং শৃঙ্খল

কেউ যদি বলে আমি ভাল আছি। পৌঁচ পাস বাড়াতে চাই বা শো অফ করতে চাই। তার জন্য একটা প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ঘোরা খুবই ভাল অপশন। ইনকাম ভাল থাকলে প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড মন্দ না। আমেরিকার শতকরা ৯৯ জন ক্রেডিট কার্ড নিয়ে চলাফেরা করে। অনেকে আবার একসাথে অনেকগুলি ক্রেডিট কার্ড নিয়ে গর্বিত আছেন। অনেকে আবার এক ক্রেডিট কার্ডের লোণ নিয়ে আর এক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পরিশোধ করে থাকেন। ছোট বেলা থেকে আমার বাবা মা লোণ না করার জন্য আমাদের সব সময় বলতেন। তথাপিও চাকুরী জীবনের প্রথম দিকে ওভার ড্র আর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতাম। চাকুরী জীবনের প্রথম প্রায় ১৫ বছরই বলা যায় ওডি আর ক্রেডিট কার্ডের লোনে কাটিয়েছিলাম। শখ করে এটা ওটা কিনে ফেলতাম। আর ওডি না করে যে কোন কিছু কেনা যায় এটা চিন্তা করতে পারতাম না। আমি ১৯৯৭ সাল হতে স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নিয়েছিলাম। ২০০৬ সালে ট্রাস্ট ব্যাংকের ডেভিট কার্ড হাতে পাওয়ার পর থেকে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সমর্পণ করি। ক্রেডিট কার্ডের লোণ ও একাউন্টের ওডির সুদ দিয়ে আমার আজো মনে হয় আমি বেতনের প্রায় ৫-১০% টাকা হারাতাম। অর্থাৎ ওডি ও ক্রেডিট কার্ডের কল্যাণে যে প্রতি মাসে ২০০০/৩০০০ টাকা লস করতাম। তা যদি আমি তখন থেকে জমাতাম। আমি নিশ্চিত। এখন আমি সেই লস এমাউন্ট থেকে ২০১৭ সালে ২৭ বছর চাকুরীতে অর্ধ কোটি টাকা জমাতে পারতাম। ২০১৩ সাল থেকে আমি প্রতিঞ্জা করি আমি ওডি ছাড়া চলব। প্রয়োজনে কোন কিছু কিনতে হলে ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে কিনব। সত্যি কথা বলতে কি ওডি ও ধার দেনা মুক্ত থাকা অত্যন্ত শান্তির বিষয়।
ক্রেডিট  কার্ড ও ওডি/‌লোন মুক্ত জীবন কত যে‌ মুক্তি  তা যারা এনজয় কর‌তে পারেন তারাই  জানে। আমি লোন মুক্ত হওয়ার পর সত্যি টের পাচ্ছি লোন না থাকায় সুদ না দেয়ার আনন্দ। জীবনের  প্রথম দি‌কে যারা লোন দি‌য়ে শুরু করে তারা সত্যি দুর্ভাগা। আর যারা কার লো‌নেপ্রাইভেট কার কিনে জীবন শুরু করে তারাই জীবনের শেষে যদি যথেষ্ট পরিমাণে ইনকাম বাড়া‌তে না পা‌রে আমি নিশ্চিত তারা যথেষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়ও কর‌তে পারবে নাএকটা‌ সূত্র আছে। আমরা যা আয় করি, তার চে‌য়ে‌  কম ব্যয় ক‌রে সঞ্চয় বা ইন‌ভেস্ট করি, তা‌তে আমা‌দের গ্রোথ হতে  বাধ্য। তাই কখনো আজ টাকা নেই‌, কাল  হবে। তাই আজ গাড়ী চালাই। কারণ আগামীকাল গাড়ীর এনজয় করার বয়স থাকবে না। বিষয়টা এরূপ নয়। যেটা আমি  টাকা জমিয়ে  নগদে কিনতে পারছি না। সেটা কাম্য নয়। ব্যবসার সামগ্রী বা উপার্জনের সামগ্রী আমি বাকীতে নিতে পারি কিন্তু ভোগ্য পণ্য নয়। যদি কোন কিছু আমি নগদে কিনতে না পারি তবে সেটার জন্য আমি যোগ্য নই। সেভাবেই আমাদের চিন্তা করতে হবে। অনেকে আবার চিন্তা ক‌রে ধার কর্জ করে একটা দামী গাড়ী কিনে ফেলি। গাড়ীর উসিলায় একটা ধনী পাত্রী পাব। তখন ধনী পাত্রীর টাকা দি‌য়ে গাড়ী বাড়ী ক‌রে ফেলব। সেটা আর একটা ভুল।‌ সেই অসামঞ্জস্য ধনী ঘরের বৌ‌য়ের খরচ সামলা‌তে তখন আরো  ফতুর হ‌তে হয়। তাই লোন নয় ও ক্রেডিট কার্ড নয়। বাংলাদেশে এখনও ব্যাপক ভাবে ক্রেডিট কার্ড চালু হয়নি। ব্যাংকগু‌লো বেশ সচেতন রয়েছে ব্যাপক ভাবে ক্রেডিট কার্ড চালু কর‌তে। ক্রেডিট কার্ড মানুষের জন্য কত বড় ক্ষতি তা ভূক্ত‌ভোগীরাই জানে। ক্রেডিট কার্ডে মাসিক কিস্তি সুবিধা দেয়। অথচ যে কোন ব্যাংকারই জানে ওডি করে ক্রয় করা কিস্তি থেকে কেনা থেকে লাভজনক। আবার নিয়মিত মিনিমাম টাকা পরিশোধ করলে পরবর্তীতে ক্রেডিট লিমিট বাড়ানো হয়। কত সুখকর বিষয়। স্থানীয় বাংলায় বলা যায় বাঁশের উপর বাঁশ অফার।

ক্রেডিট কার্ডের যত ভাল অফারই থাকুক না কেন। কেউ নিজেকে ক্রেডিট কর্ডে‌র স্লেব বা দাস বানা‌তে না চাইলে‌ ক্রেডিট কার্ডের চক্কর  দূরে থাকুন। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী‌দের মধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার শতকরা ৯০% ব্যক্তিরাই ২ থেকে ৩% পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ডের মাসিক চক্র বৃদ্ধি সুদ প‌রি‌শোধ ক‌রে।  যা কিনা বছর শেষে ২০ থেকে ৩৫ % সুদ হয়। এটা মহাজনী লোন থেকেও সাংঘাতিক। পরিশেষে আমরা আশা করি বাংলাদেশের মানুষরা যেন ইউরো‌প ও আমেরিকার মত ক্রেডিট কার্ড রো‌গে আক্রান্ত হ‌য়ে ক্ষ‌তিগ্রস্থ না হয়। আর দেরী নয় এখনই ছাত্র/ছাত্রী থেকে শুরু করে সমাজের সকলের মাঝে ক্রেডিট কার্ড বিরোধী সচেতনতা বাড়াতে হবে।

Thursday, November 23, 2017

ফ্লাট কেনার ফর্মুলা

২০১৭ সালে এক কোটি টাকা দিয়ে ফ্লাট কিনে মাসে এক লক্ষ টাকা ভাড়া পাওয়া যায় না। অথচ এক কোটি টাকার সঞ্চয় পত্র কিনলে প্রায় ৯২ হাজার টাকা প্রতি মাসে পাওয়া যাবে। তখন একই রকম ফ্লাট ভাড়া ৩০ হাজার টাকায় করে (৯২-৩০) বাকী ৬২ হাজার টাকা ব্যাংকে রাখা যাবে। মণে করুন আপনি প্রতি মাসে ৬২ হাজার টাকা ব্যাংকে জমাতে থাকলেন। আপনি ২৫ বছর পর বছর বছর বন্ড কিনেও আপনি ৯/১০ কোটি টাকা জমাতে পারবেন। আর যদি ফ্লাট কিনেন তবে এক কোটি টাকার ২২০০ স্কয়ার ফ্লাটের বেসিক খরচ ৩০ লক্ষ টাকা। আর জায়গার মূল্যে আপনি পাচ্ছেন ৫ কাঠার আটের এক অংশ বা ৩০ লক্ষ টাকার জায়গা। সর্বমোট আপনার ফ্লাটের বেসিক ভ্যালু হবে ৬০ লক্ষ টাকা । আর আপনি কিনেছেন  ১০০ লক্ষ বা এক কোটি টাকায়। এখানে ডেভেলপারকে আপনি লাভ দিয়েছেন ৪০ লক্ষ টাকা। আপনার জায়গার অংশ ৩০ লক্ষ টাকার বৃদ্ধি ৫০ বছরে দ্বিগুণ অথবা তিন গুন হবে। মূলত  ৫০ বছর পর আপনার বিনিয়োগ কৃত জায়গার দামটিও আপনার থাকবে। বাকী ফ্লাট তৈরির খরচ ও ডেভেলপারের লাভ আপনার সেবার মূল্য হিসাবে বাদ দিতে হবে। আপনার জায়গার দামটি হয়ত ৫০ বছর বা ১০০ বছরের এক কোটি বা দু কোটি টাকা হবে। অনেকে বলে আমি এক কোটি টাকা দিয়ে ফ্লাট কিনেছি এখন দুই কোটি টাকায় এই ফ্লাট পাব না। এটা সত্যি নতুন ফ্লাটের ক্ষেত্রে। কিন্তু আপনার এক কোটি টাকার ফ্লাট বিক্রি করতে যান ৫০ লক্ষ বা অর্ধেক পাবেন ১০/১৫ বছরের মধ্যে।
ব্যবসায়িক ভাবে ফ্লাট কেনা লাভজনক না হলেও এটার একটা মারাত্মক ইমোশনাল ভ্যালু আছে। আমি নিজের বাড়ীতে থাকি। আমার স্থায়ী ঠিকানা আছে। আমাকে কেউ ইচ্ছে করলেই বলতে পারবে না বাসা ছেড়ে দিন। আমার ছেলে বিদেশ থেকে আসবে বাসা ছেড়ে দিন।
ফ্লাট না কিনে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তার থেকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা বাড়ী ভাড়া পরিশোধ করার পরও আপনি এক কোটি টাকা ইনট্যাক্ট রাখার পাশাপাশি আপনি কমপক্ষে ২২.৪+১ কোটি অর্থাৎ ২৩.৪ কোটি টাকার মালিক থাকবেন। আর এর এক কোটি টাকার ফ্লাট কিনলে হয় বা সর্বোচ্চ ৫/৬ কোটি টাকার জায়গার মালিক থাকবেন। অর্থাৎ আপনি প্রায় ১৭/১৮ কোটি টাকা কম অর্জন করবেন। তাই কোটি টাকায় ফ্লাট না কিনে ভাল ভাল বাড়ী ভাড়ায় থেকেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ২৩/২৪ কোটি টাকা রেখে যাওয়া সম্ভব। আর যদি জমানো টাকা দিয়ে ব্যবসা করে সফলতা পেলে আরও ধনী হয়ে যাওয়া সম্ভব। আমরা যদি ১০ লক্ষ টাকা সঞ্চয়পত্রে জমা করি আর তার থেকে পরোক্ষ ইনকাম ১০ লক্ষ টাকা প্রতি মাসে পাই তবে তা খুবই ভাল বিষয় নয় কি। তাই বাড়ী বা ফ্লাট হুট করে না কিনে ব্যাংকে জমিয়ে বৃদ্ধি করে তার আয় দিয়ে কেনা যেতে পারে।
তবে কেউ যদি একান্তই ফ্লাট বাড়ী কিনে নিজের ঠিকানা করতে চান তবে তার জন্য এক ধরনের ফর্মুলা আছে। প্রথমে জায়গা কিনুন। জায়গার দাম কিন্তু বাড়বেই। তার পর ধীরে ধীরে আপনার বাড়ী ভাড়া সেইভ করে ঘর করতে থাকুন। আমার বাবা টিএন্ডটি ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সারা বাংলাদেশে চাকুরী করার পর ঢাকায় পোস্টিং আসে। তার একটা স্টেশন ওয়াগন গাড়ী ছিল। গাড়ীটি দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রি করে ঢাকায় তিন কাঠা জায়গা কিনে। তারপর সেখানে বাড়ী করে। বাড়ীটি করে আবার অদ্ভুদ ভাবে। তা হল ছাদ দেয়াল আর জানালা দরজা তৈরি করে আমরা বাড়ীতে উঠে যাই। তখন ফ্লোর পাকা হয়নি। আস্তর হয়নি। বাবা প্রতি মাসের ৬০০০ টাকার ভাড়া সেইভ করে দুই মাসে বা তিন মাসে একবার করে বাড়ীর কাজ করতে থাকে। এভাবে তিন বছর ধরে বাবার বাড়ীর কাজ চলে। আমি দেখেছি এভাবে কেউ জায়গা কিনে বাড়ী ভাড়া করতে পারলে পোষাবে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হল ২০০৭ পর থেকে ২০১৭ পর্যন্ত গত ১০ বছরে দেশের বেশীর ভাগ জায়গায় দাম মোটেই বৃদ্ধি হয়নি। তাই জায়গার মূল্য এমন একটা স্থানে আছে এখন বাড়ীর জমি কিনে ব্যাংক হতে বেশী লাভ পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ থেকে যায়। ফ্লাট ও বাড়ী ব্যবসায়ী বা ধনীদের জন্য লাভজনক প্রজেক্ট নয়। মধ্যবিত্তের নিরাপত্তার জন্য ফ্লাট বা বাড়ী কেনাটা মন্দ নয়। বাড়ী ভাড়ার বিপরীতে ফ্লাটের মালিক হতে পারলে মন্দ হয় না। আপনি প্রতি মাসে হয়ত ২৫০০০ টাকা বাড়ী ভাড়া দেন তার বিপরীতে ফ্লাটের মালিক হলেন এটা ভাল অপশন হতে পারে।
আরেকটা আইডিয়া আছে। ৮ জনে মিলে জায়গা কিনলেন। নীচে পার্কিং স্থান করে আটটা ফ্লাট করলেন। এটা লাভজনক হতে পারে। কারণ রিয়াল স্টেটের ২০-৩০% প্রফিট আপনি কয়েকজনকে নিয়ে সমবায়ের মাধ্যমে বাঁচিয়ে ২০-৩০% কমে টেকসই ফ্লাটের মালিক থাকলেন।

আপনি যদি এক কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্লাট না কিনে আপনি জোড়া ফ্লাট কিনুন। ৫০ লক্ষ ও ৫০ লক্ষ টাকা করে দুইটি কিনুন একটিতে থাকুন ও অন্যটি ভাড়া দিন। ভাড়ার টাকা যদি ১৫০০০ টাকা হয় ও প্রতিবছর সঞ্চয় পত্রের উপর জমাতে পারেন তবে ২৫ বছরে ২ কোটি টাকা আপনার জমা হবে। আবার ৫০ লক্ষ টাকায় ফ্লাট কিনে আর ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে রাখলেন এতে অন্তত বিনিয়োগের ৫০ লক্ষ টাকা ২৫ বছরে ৩/৪ কোটি টাকা হয়ে যাবে। তখন আপনার এক কোটি টাকার দুইটি ফ্লাটের মূল্যে আপনার লায়াবিলিটিস না হয়ে এসেট হিসাবে দৃশ্যমান হবে। ফ্লাট কখনো কিস্তিতে ক্রয় করা ঠিক না। এতে আপনি আরও দরিদ্র হবেন। ফ্লাটের ইমোশনাল ভ্যালুর বিষয়ে চিন্তা করে ফ্লাট না কিনে বাড়ী ভাড়া সেইভ করে তার বিনিময়ে প্রপার্টিতে কনভার্ট করার ফর্মুলাতে গেলে তা লাভজনক হবে। পরিশেষে বলব আপনি তখনই ফ্লাট কেনার যোগ্যতা অর্জন করবেন যখন আপনার কাছে আরও সম পরিমাণ টাকা বিনিয়োগের জন্য মজুদ থাকবে।

Thursday, November 16, 2017

একজন মধ্যবিত্ত কখন গাড়ী কেনার সামর্থ্য অর্জন করবে

মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেরই সাধারণত পৈত্রিক সূত্রে বাড়ী থাকে। তাদের বাড়ী উন্নত করার শখ থাকে। কিন্তু তারা যে বিষয়টি নিয়ে বেশী ক্রেজী থাকে তা হল গাড়ী কেনা। যে কোন মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী কর্মকর্তা তার একটি গাড়ীর স্বপ্ন থাকে। সবাই মনে প্রাইভেট কার তাকে মধ্যবিত্ত স্ট্যাটাস হতে ধনী স্ট্যাটাসে আনবে। কিন্তু উপার্জনে ও সম্পদে ধনী না হয়ে প্রাইভেট কার  কিনে ধনী হওয়ার ভাব আনলেই ধনী হওয়া যায় না। এটা করাও উচিত নয়। এই ধরনের কাজ যে কাউকে শীঘ্রই আর্থিক অনটনে ফেলে দিবে। প্রাইভেট কার  কেনার স্বপ্নটা আরও তীব্র হয় যখন পৈত্রিক পরিবারে গাড়ী না থাকলে। ব্যাংকে একটা টার্ম চালু আছে কার লোণব্যবসা ছাড়া লোণ মানুষকে দরিদ্র করে। লোণ পরিশোধের যথেষ্ট সামর্থ্য না থাকলে লোণ নেয়া অত্যন্ত ক্ষতিকারক একটি বিষয়। লোণ মানুষকে ধীরে ধীরে দরিদ্র করে ফেলে। অনেকে নতুন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরী পেয়েছে। ভাল বেতন পাচ্ছে। হয়তবা এক লক্ষ টাকা বেতন পাচ্ছে। ২৫০০০ টাকা কিস্তিতে কার লোণ দিয়ে  ৫ বছরে কারের মালিক হচ্ছে। অনেকটুকু ভাল খবর। সমস্যা হল। এই পাঁচ বছর কিস্তি দিয়ে ১০ লক্ষ টাকার কার পনের লক্ষ টাকায় ক্রয় করেছে। পাঁচ বছরে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা বেশী দিয়েছে। সেই সাথে কারের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ। ট্যাক্সের খরচ ইত্যাদি নানাবিধ খরচ কিন্তু যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন সেই তরুণটি ২৫০০০ টাকা কিস্তি না দিয়ে যদি প্রতি মাসে জমাত ও যেখানে টাকা বাড়ে সেই ধরনের হিসাবে রাখত তবে তিন বছরে কারের মূল্যে জমিয়ে নগদে কার ক্রয় করতে পারত। দুই বছর আর পাঁচ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হত না। অনেকে বলবে আমি তো আমার বয়স থাকতে কারের মজা করেছি। তিন বছর আগে থেকেই কার চালাচ্ছি। আমার তো লাভই হল। আমি এনজয় করতে পারলাম। মধ্যবিত্তরা এই তৃপ্তিতেই কারের মালিক হয় এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীতেই অবস্থান করতে থাকে। গাড়ীর মত খরোচে জিনিষ ক্রেডিটে বা ধারে কেনাই হল লায়াবিলিটিস। তাই বলে আমরা কি কার কেনা বাদ দিয়ে দিব। অবশ্যই না। আমরা মিডল ক্লাসরা কার কিনব। কতগুলো শর্ত পূরণের পর।
ক। আমাদের যে কোন উৎস হতে এককালীন কার ক্রয় করার সামর্থ্য থাকতে হবে। অবচয় মূল্য বাদ পড়ায় পুরাতন কার ক্রয় মন্দ অপশন নয়। তবে দশ বছরের পুরাতন নয়। তাহলে আবার ম্যান্টেন্যান্সে বেশী খরচ হবে।
খ। কারের মূল্য অনুযায়ী ৫ লক্ষ হতে ১৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্র বা আয়বর্ধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই টাকাটা কার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় করতে হবে এবং এই টাকাটা পরোক্ষ ভাবে আয় করার প্রয়োজন হবে।
গ। এখন  যদি চালক রাখতে হয় তবে আরও দশ লক্ষ থেকে পনের লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্রের মত বা এই ধরনের উপার্জন বর্ধক আয় থাকতে হবে।
ঘ। কারের ম্যান্টেন্যান্সে খরচ ও ড্রাইভার রাখার ব্যয় মধ্যবিত্তের বহন করার  জন্য উপার্জন বা সঞ্চয় পত্রের আয়ের মত ব্যাকআপ আয় লাগবে।
চাকুরী শুরু করে কারো যদি গাড়ী কেনার ইচ্ছে থাকলে ও আয় ভাল থাকলে কিস্তিতে না কিনে প্রথমে ৫লক্ষ হতে ১৫ লক্ষ সামর্থ্য অনুযায়ী কার কিনতে হবে সম্পূর্ণ টাকা জমানোর পর। তারপর গাড়ী ভেদে পুনরায় ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্র বা সেই ধরনের আয় বর্ধক ব্যবস্থা করে গাড়ী চালনার ব্যয়ের খরচটা প্রাপ্তির ব্যবস্থা  করে নিতে হবে। যেন নিজের মূল আয় থেকে না গিয়ে জমানো টাকার পরোক্ষ আয় থেকে পরিশোধ করা যায়। নিজে গাড়ী চালাতে চাকুরীর প্রথম পর্যায়ে এই ভাবে গাড়ীর মালিক হতে পারলে মন্দ হয় না।
বয়স হয়ে গেলে গাড়ী নিজে চালাতে না পারলে ড্রাইভার রাখতে হলে ড্রাইভারের বেতন ১০০০০ হতে ১৫০০০ টাকা ২০১৭ সালের শেষ দিকে এই রেটে পেমেন্ট করতে হতে পারে।

সর্বসাকুল্যে গাড়ী কেনার জন্য ২০১৭ সালের শেষ দিকে আমরা দেখতে পাই কমপক্ষে ২৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন।  এর মধ্যে ১০ লক্ষ টাকা গাড়ীর নগদ মূল্য এবং  ৫ লক্ষ+ ১০ লক্ষ অর্থাৎ ১৫ লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্রের মাধ্যমে আয় করার ব্যবস্থা করতে পারলেই কেবল গাড়ী ক্রয় করা উচিত। অন্যথায় নিজেদের অন্যান্য আয় বর্ধক অবস্থা ঠিক রাখতে না পারলে মধ্যবিত্তের চক্রেই আবদ্ধ থাকতে হবে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা ফাইনানসিয়াল ফ্রিডম কখনোই আসবে না। পরিশেষে বলব মধ্যবিত্তদের ঝোঁকের বসে প্রাইভেট কার না কিনে ২৫ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকার সঞ্চয় পত্রের মাধ্যমে আয়ের সংস্থান করে এককালীন মূল্য পরিশোধ ও অন্যান্য টাকা আয় বর্ধক ব্যবস্থায় রেখে প্রাইভেট কার ক্রয় করলে মধ্যবিত্তের আবর্তে ঘুরপাক খেতে হবে না।

Thursday, November 9, 2017

হাতের লেখার বদলে কম্পিউটারে টাইপ হতে পারে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ধাপ

সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ ঞ্জানী আছেন যারা মানুষের পড়াশোনার উন্নয়নে দিন রাত গবেষণা করে যাচ্ছেন। সেই সকল গবেষকদের জন্য আমার মাথায় একটা আইডিয়া আসল যা আমি তাদের জন্য উপস্থাপনা করছি। আমি অনেক পরিবারের ছোট বাচ্চাদের জানি তারা একদম ছোট বয়স থেকে গেইম খেলতে  জানে। গেইমের অনেক কমান্ড তাদের বুঝতে ও চালাতে জানে। স্টার্ট বা এক্সিট দেখতে দেখতে তার মাথার মধ্যে তা গেঁথে গেছে। সে স্টার্ট লেখার ধরনটা একটা ছবি হিসাবে সে মনে রেখেছে। আমার মেয়ে ৪ বছর বয়সে ক্যানসেল পড়া বা বানান করার আগেই জানত কম্পিউটারে ক্যানসেলের কাজ কি ও তার ব্যবহার।  ছোট বেলায় শিশুরা ছবি দেখে সব কিছু বুঝতে চেষ্টা করে। যে কোন লেখা তাদের কাছে ছবি। বাচ্চারা সেই ছবিগুলো তাদের  কাজের সাথে মিলিয়ে নেয়। শিশুরা পড়া থেকে লিখতে বেশী সময় নেয়। অথচ শিশুদের পড়া শেখানোটা অনেক বেশী জরুরী। তাই আমার মনে হল এমন কি কিছু করা যায় শিশুরা  ছবি আঁকবে। অক্ষর চিনবে। পড়তে শিখবে। আর লেখার বদলে প্রথমেই শুরু করবে টাইপ। কলমশব্দটা পড়বে ও কলমহাতে না লিখে সে টাইপ করবে। ক-ল-ম। তিনটি কী টাইপ করেই সে কলম লিখতে পারবে। টাইপ করেই তার লেখা শেষ হয়ে যাব। এক সময় মেয়েদের হাতের লেখা শেখানোর গুরুত্ব দেয়া হত। কারণ স্বামীকে চিঠি লিখতে হত। এখন মেয়েদের স্বামীকে চিঠি লিখতে হয় না। স্বামীকে ফোনে কল দিতে হবে তাই স্ত্রীকে ফোন চালানো জানতে হবে। চিঠি না লিখে ম্যাসেজ লিখতে হবে। তাই মোবাইলে টাইপ করা জানতে হবে। দলিল লেখকরা আজ আর হাতে লেখে না। টাইপ করে দলিল বানায়। হাতে লেখা আবেদন দিলে এখন অনেকে বলে কম্পিউটারে টাইপ করে আনেন। সিভিটা কম্পিউটারে টাইপ করাতে হয়। আসলে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ছাড়া হাতে লেখার কাজ অনেক কমে গেছে। আমি চাকুরীতে সাইন ও এসিআর লেখা ছাড়া হাতে লেখার কাজ তেমন একটা দেখি না। আজকাল এসিআরও অনেকে টাইপ করিয়ে নেন।প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ও চাকুরী জীবনে টাইপিংটা অতি জরুরী। আমার ধারনা খুব কম লেখক আছেন যারা কম্পিউটারে টাইপ না করে হাতে লিখেন। আমি লেখালেখি শুরুর প্রথম থেকেই কম্পিউটারে লেখালেখি করে যাচ্ছি। ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ১ম বর্ষে পড়ুয়া ছেলের কম্পিউটারে টাইপ করা স্পীড দেখে আমি জানতে চাইলাম তোমার টাইপিং স্পীড কত। ছেলে হাসতে হাসতে বলল ৯৩ শব্দ প্রতি মিনিটে। আমি অবাক হলাম। সাধারণ ভাবে অফিসিয়ালি আমরা প্রতি মিনিটে ইংরেজিতে ৪০/৪৫ শব্দ স্যান্ডার্ড ধরি। আমি অনেকক্ষণ চিন্তা করে বের করলাম এই স্পীডের কারণ হল গেইম খেলা। অনলাইন গেইমিংএ অনেক কমান্ড দ্রুত টাইপ করে দিতে হয়। প্রোগ্রামার ও কোডিং যারা করে তারাও একই গতিতে টাইপ করে। আমার এই ছেলে কম্পিউটারে বসেছিল আড়াই বছর বয়সে।
এটা একটা উদাহরণ দিলাম। হাতে লেখার পিছনে সময় নষ্ট না করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ৮ বছরের আগে কোন হাতের লেখা নয়। চার বছর বয়স থেকে বাচ্চারা ট্যাব নাড়বে। কম্পিউটারে টাইপ করবে। ছবি আঁকবে। পড়তে শিখবে। ছবি আঁকতে আঁকতে এক সময় হাতের লেখাও শিখে ফেলবে। ১‌ম থেকে ৩র্থ শ্রেণী পর্যন্ত তারা কোন হাতের লেখা সংক্রান্ত পরীক্ষা দিবে না। তাদের পরীক্ষা হবে টাইপ করে। ছবি আঁকবে ও পড়া শিখবে। ৪র্থ শ্রেণী থেকেই তারা কম্পিউটারে সার্চ করে তথ্য বের করার অনুশীলন করবে। ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণী হতে তাদের হাতের লেখার অনুশীলন শুরু হবে। ১ম শ্রেণী থেকেই সংখ্যা চিনাতে হবে। আর অংক করাতে হবে কম্পিউটারে বা ক্যালকুলেটরে। ১ থেকে ১০ এর নামতা মুখস্থ না করে ক্যালকুলেটরে বের করবে। মুখস্থ না করে কম্পিউটারে নামতার টেবিল বানাবে। অংক ক্যালকুলেটরে শুরু করবে। ৫ম শ্রেণীর পর দৈনন্দিন হিসাবের জন্য অল্প কিছু অংক ম্যানুয়ালি অনুশীলন করবে। আমরা এখন জটিল গুন ভাগ ম্যানুয়ালি করিয়ে মাথা নষ্ট করে পরে উপরের ক্লাসে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে দেই। একই ভাবে জটিল হাতের লেখার অনুশীলন করে অতঃপর কম্পিউটারে টাইপিং করতে বলি। আমি সারা জীবন এক হাতে এক আঙ্গুলে দেখে দেখে টাইপ করে গেলাম। গতি মন্দ নয়। অনেকের চেয়েই অনেক বেশী টাইপ করছি। অন্তত নিশ্চিতভাবে বলতে পারি আমার সহকারী থেকে বেশীই আমি টাইপ করি কারণ মাসে অন্তত চারটি আর্টিক্যাল লিখে ফেলি।

অশিক্ষিত বয়স্ক মানুষরা লেখাপড়া শিখতে লজ্জা পায়। তদের ট্যাব বা কম্পিউটারে  পড়া ও টাইপ শেখানোটা অনেক বেশী সহজ হবে। পরিশেষে আমি মনে করি আমাদের শিক্ষার কার্যক্রমকে ডিজিটাল করাটা অনেক বেশী জরুরী মনে হয়।

Thursday, November 2, 2017

নিকটাত্মীয়দের ধার দেয়া ও মনোমালিন্য পরিহার

আমি জীবনে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী অনেককে লোন দিয়েছি কিছু লোন ফেরত পেয়েছি কিছু পাইনি আমার এই ক্রাইসিসের মধ্যে আমার স্ত্রী এক বুদ্ধি দিল লোন দিবে না সামর্থ্য অনুযায়ী ডোনেশান দাও টাকা ফেরত নেয়ার আশা নাই চিন্তাও নাই তোমার নিকট আত্মীয়দের সাথে লোন দেয়ার লেনদেনে না গিয়ে যতটুকু পার স্বত্ব ত্যাগ করে দাও সেই  ভাল আত্মীয়তায় তিক্ততা আসবে না আমি আমার বন্ধুর সাথে লেনদেন সংক্রান্ত মনোমালিন্য হওয়ার পর থেকে কাউকে লোন দিচ্ছি না কেবল মাত্র ডোনেশান দেই আমি মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী মানুষ আমি একটা পুরাতন গাড়ী কিনে ৮ বছর চালানোর পর বিক্রি করে দিয়ে পুনরায় গাড়ী কিনতে ভয় পাচ্ছি কারণ মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী হিসাবে একটা গাড়ী ও চালক পোষার খরচ মাসিক ৩০/৪০ হাজার টাকার কম নয় এর চেয়ে মাসিক ১০/২০ হাজার টাকায় উবার ও ট্যাক্সি ব্যবহার করে কাটানো যায় প্রাইভেট কার ছেড়ে দেয়ার পর আমার গ্রামের আত্মীয়দের ডোনেশন বাড়াতে পেরেছি তবে ভাই বোনের জটিল সমস্যায় আমাদের অনেকের সামর্থ্য অনুযায়ী ধার না দিয়ে পারা যায় না এখন নিকট আত্মীয়কে বা কাছের মানুষকে কিভাবে ধার দেয়া যায় এটা নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি সহজ উপায় হল ওডি একাউন্ট খুলে দেয়া বা ওডি সিস্টেম বাতলিয়ে দেয়া এটা আবার ব্যাংকের সুদ দিয়ে নিজের ভাই বোন ফতুর হলে নিজেরই খারাপ লাগবে নিজের কাছে কিছু সঞ্চয় আছে ভাই বোনের বিপদে না দিতে পারলেও খারাপ লাগে অথচ টাকাটা ফেরত দিতে পারবে তারও কোন গ্যারান্টি নাই কি করা যায় আমরা এই বিপদে প্রায়ই পড়ে যাই আমি একটা ঘটনা জানি একজন একটা মামলায় পড়ে জেলে যায় ভদ্র পরিবার নিজেদের সন্মান রক্ষার্থে তার বাবা মা ছেলেকে ছোটাতে আদালত ও উকিলের পিছনে অনেক টাকা খরচ করে এই  টাকা ধার কর্জ করতে হয় তার চাকুরীজীবী মেয়ের স্বামীর কাছ থেকে ধার নিতে হয় মেয়ের চাকুরীজীবী স্বামী বাড়ীর জমি ক্রয় করার জন্য টাকাটা জমিয়েছিল সে টাকাটা শ্যালককে জেল থেকে ছোটানোর জন্য দিয়ে দেয় শাশুড়ি অগত্যা দাম ধরে মুল বাড়ীর অংশ থেকে মেয়ের স্বামীকে ধারের বিনিময়ে বাড়ীর অংশ দানপত্র দলিল লিখে দেয় এরূপ অনেক ঘটনা আমাদের আশে পাশে ঘটতে থাকে এই বিষয়টি  আমাকে অন্যদের ধার দেয়ার জন্য নতুন আইডিয়া দেয় যারা আমরা নরম শরম মানুষ তাদের জন্য ধার দেয়ার জন্য নতুন কৌশল মাথায় আছে তা হল:
আত্মীয় কি কারণে ধার চাইছে তা বের করতে হবে কারণটা মর্মাহত করলে অবশ্যই প্রথমে অনুদান ও পরে ধার দেয়া উচিত
আত্মীয় ধার করার রেকর্ড, ধার পরিশোধের মানসিকতা ও ধার পরিশোধের সক্ষমতা জানতে হবে
জমি বা বাড়ী বন্ধকের বিনিময়ে ধারের একটা স্ট্যাম্প করার প্রয়োজন হবে ধারের টাকা সুদে না বিনা সুদে দেয়া হবে তা উল্লেখ রাখতে হবে অনেকে সুদ নেন না আবার অনেকে বলেন ধার না দিয়ে টাকাটা ব্যাংকে রাখলে আমার পাঁচ বছরে অনেক টাকা বাড়ত তবে যারা সুদ দিবেন তারা টাকা ধার না দিয়ে ব্যাংকে গ্যারান্টার হয়ে ধার গ্রহীতার জমি/বাড়ী  জামানত রেখে ওডি একাউন্ট খুলে দিন আপনার আত্মীয়ের যখন খুশী টাকা প্রয়োজন তখন নিবে আর যখন টাকা হাতে আসবে তা পরিশোধ করবে ওডি একাউন্ট  করিয়ে আত্মীয়ের চারিদিকের মহাজনী ধার কর্জ এক জায়গায় করে দিতে পারলে আপনার আত্মীয়টির ভাল উপকার হবে কারণ ধার অনেক জায়গায় ছড়ানোর চেয়ে ব্যাংকের একটি একাউন্টে আনলে ভাল এতে ধারের প্রতি সচেতনতা বাড়ে ও দ্রুত ধার পরিশোধ হয়
অনেক আত্মীয় আবার বলবে আত্মীয় হয়ে জমি কর্জ রেখে কেন ধার দিবে তখন তাকে পরিষ্কার ভাবে জানাতে হবে লিখে পরে টাকা পয়সার ধার দেনার হিসাব করার ধর্মীয় নির্দেশ রয়েছে ধার নেয়ার সময় মনোমালিন্য হওয়া ভাল এতে পরে মনোমালিন্য কম হবে ধার গ্রহীতার  একাউন্টে চেকের মাধ্যমে বা অনলাইন ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা দিতে হবে যেন ট্রানজিশান রেকর্ড থাকে ধার গ্রহীতার কাছ থেকে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে এক বা একাধিক চেক নিতে হবে তারিখ দেয়া যাবে না কারণ চেকের তারিখের মেয়াদ হল ছয় মাস
ধার গ্রহীতার কাছ থেকে চেক নিলে সুবিধা হল গ্রহীতার একাউন্টে টাকা রাখলেই  হল ধার প্রদানকারীকে ধারের টাকা গ্রহণের জন্য গ্রহীতার পিছে পিছে ঘুরতে হবে না আর গ্রহীতাও তাকে বলতে পারবে না এখানে আসেন টাকা দিব ওখানে আসেন টাকা দিব ধার প্রদানকারী বলবে একাউন্টে রাখেন আমি তুলে নিব আর চেক ডিজঅনার হলে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া যায়
স্ট্যাম্পে হাতে লিখে বা কম্পিউটারে নিজেদের মত ধারের চুক্তিনামা করে নেয়া যায় তার জন্য দলিল লেখক ভাড়া করার প্রয়োজন নাই ধার গ্রহীতার কাছ থেকে তারিখ বিহীন ব্যাংক চেক নিতে হবে
বেশী টাকা হলে জমির দলিল জমা নিতে হবে আত্মীয়দের কাছ থেকে স্বর্ণ বা অন্য কোন সামগ্রী বন্ধক নিলে অন্য বিপদ আর তা হল ওই  সব সামগ্রী হারাতে পারে বা চুরি যেতে পারে জমির দলিল হারালে বা খোয়া গেলে তার নকল তোলা যাবে তাই কোন কিছু জমা রাখতে হলে দলিল জমা রাখাই ভাল
একটা গল্প দিয়ে শেষ করি:
সোলায়মান একজন ভাল ছাত্র এইচএসসি পাশ করেছে বাবা ও মা আছেন বাবা গ্রামের প্রাইভেট স্কুলে স্বল্প বেতনে চাকুরী করে আর টিউশন করে চার ভাইবোন বিভিন্ন ক্লাসে পড়ে সোলায়মান কোচিং ছাড়াই মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়ে গেল সোলায়মান একমাত্র অবস্থাপন্ন মামার কাছে গেল সাহায্যের জন্য মামা জানাল তিনি ভর্তি হওয়ার এককালীন খরচ বই কেনা জামা কাপড় কিনে দিবেন কিন্তু নিয়মিত খরচ দিবেন না আসলে মামা নিয়মিত খরচ দিতে সক্ষম হলেও মামীর জন্য  পারবেন না কারণ নিজের সংসার আছে নিজের সন্তানকে তো আগে দেখতে হবে মামা একটা বুদ্ধি বের করে তার স্ত্রীর অনুমোদনের জন্য গেল স্ত্রী অনুমোদন দিল পরিকল্পনাটা হল এরূপ সোলায়মানদের একটা জমি মামা বন্ধক রাখবেন প্রতি মাসে মামা ৫০০০ টাকা করে বছরে ৬০০০০ টাকা দিবেনএভাবে মাসিক ৫০০০ টাকা হিসাবে পাঁচ বছরে অর্থাৎ ডাক্তারি শেষ না করা পর্যন্ত বিনা সুদে পাঁচ বছরে তিন লক্ষ টাকা প্রদান করবেন ডাক্তারি পাশ করে চাকুরীর পর সোলায়মান টাকা ধারাবাহিক ভাবে ফেরত দিবে অথবা জমি বিক্রয় করে পরিশোধ করবে মামা ভাগনের প্রতি দায়িত্ব হিসাবে টাকাটা বিনা সুদে প্রদান করবে শুধু মূল টাকাটা ফেরত নিবে
সোলায়মান ২০১৪ সালে ডাক্তারি পড়া শেষ করল বিসিএস চাকুরী পেল ২০১৭ সালের জুনেই সোলায়মান মামাকে সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দিল মামাও খুব খুশী মামা দলিল ফেরত দিল সোলায়মানও কৃতজ্ঞ থাকল মামার এই অবদানের জন্য

আমাদের মাঝে যারা সচ্ছল আছেন তারা এই প্রক্রিয়ায় নিজেদের নিকট আত্মীয়দের দায়িত্ব পালন করতে পারেন আশা করি আমরা সবাই চাইলেই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করতে পারব