Pages

Saturday, November 23, 2019

সন্তা‌নের বি‌য়ে ও শশুর হওয়ার কর্তব্য

একজন সেনা অফিসার তার মে‌য়ে'‌কে দামী একটা কমিউনিটি সেন্টারে বি‌য়ের অনুষ্ঠান ক‌রে বি‌য়ে দিয়েছেন। প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ। এ যুগে তেমন টাকা নয়। আমার স্ত্রী বলল, দেখবা তোমার ছেলে মে‌য়ে বি‌য়ে দেয়ার সময় এর দ্বিগুণ টাকা লাগবে। মানে ৪০ লাখ টাকা। স্ত্রী'‌কে বললাম কও‌কি তাইলে তো প্রোপার্ট‌ি বিক্রি কর‌তে হইব।
আমার স্ত্রী'‌কে স্মরণ করালাম মনে আছে আমা‌দের বি‌য়ের সম‌য়ের কথা ১৯৯৭ সালে ডিসেম্বরে আমার শাশুড়ি আম্মা বললেন, তোমার শশুর আব্বা মারা যাবার আগে মেয়েদের একাউন্ট খুলে তা‌দের বি‌য়ের জন্য টাকা জমাতে শুরু ক‌রে ছিলেন, তোমার স্ত্রী'র একাউন্টে আছে তিন লাখ টাকা। এখন এটা খরচের তোমার মতামত চাচ্ছি। আমার মতামত হল, আমি আমার শুধুমাত্র পরিবারের সদস্য নি‌য়ে বি‌য়ে‌তে আসব। আপনি আপনার অতিনিকট আত্মীয়‌দের দাওয়াত করবেন।‌ নিজ বাসায় আয়োজন করুন। বরযাত্রী অ‌তি সী‌মিত হ‌বে। ঢাকা‌তে আমার দাওয়াত আমি করব ও আমার আত্মীয়‌দের খাওয়াব। বেঁচে যাওয়া অর্থ আপনি আপনার পরিবারের প্র‌য়োজ‌নে খরচ করুন।
অপরদিকে আমি আরেকটা বি‌য়ে দেখলাম; অসচ্ছল পরিবারের মে‌য়ে শিক্ষিত হ‌য়ে‌ছে। শশুরবাড়ীর পক্ষ শিক্ষিত ও সচ্ছল। ধুমধাম ক‌রে বি‌য়ে না দিলে ইজ্জত থা‌কে না। বাবা ঘুরে ঘুরে সাত আট লাখ টাকা ধার ক‌রে খরচ ক‌রে মে‌য়ের বি‌য়ে দেন। মে‌য়ের বি‌য়ের ধুম ধাম হয় ঠিকই। বাবা মার হাঁড়ি তো আর চড়ে না। বাবা চো‌রের মত ঘুরে বেড়ায় পাওনাদারদের এড়িয়ে।
আমি ঢাকায় নিজ বাসার ছা‌দের উপর বি‌য়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করব নিজের টাকায়। শুধু অতি কাছের আত্মীয়‌দের দাওয়াত করব। সব ঠিক ঠাক। বড় ভাই বাধ সাধল। ঢাকার মাঝামাঝি স্থানে বি‌য়ের আয়োজন করবে। ক্যাপ্টেন সা‌হে‌বের বি‌য়ে বলে কথা। বড় ভাই চাকুরীজীবী ঢাকায় সরকারী চাকুরী ক‌রে। অনেক বন্ধু বান্ধব। আমাকে দিয়ে ঢাকায় বড়সড় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করাল। ধার কর্জ ক‌রে খরচ করাল। পড়ে দেখলাম আমার সামরিক ও ক্যাডেট কলেজ বন্ধুরা সবাই অনুপস্থিত। আর যারা উপস্থিত তা‌দের আমার অচেনা বড় ভাই‌য়ের বন্ধু বান্ধব। বি‌য়ের পাঁচ বছর পর শান্তিরক্ষী মিশন থেকে এসে ব্যাংকের ওডি আর বড় ভাই‌য়ের ঋণ শোধ করেছিলাম।
অনেক সতর্ক থাকার পরও অপরের অনুরোধে ঢেঁকি গিলে ধরা খেলাম।
এটা একটা বিরাট শিক্ষা।
এখন চিন্তা করলে মনে হয় বাসার ছা‌দের উপর অনুষ্ঠান ক‌রে তৎকালীন সম‌য়ের বিশাল অপচয় কমা‌তে পারতাম।
সন্তান‌দের বি‌য়ের খরচের জন্য আমার পরিকল্পনা অতি সহজ। ছেলেদের স্ত্রী'‌দের জন্য দশ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ক‌রে দি‌য়ে ছেলেকে ন‌মিনী করব এবং ছেলের বি‌য়ের এই দশ লাখ টাকা কাবিন হবে ও কাবিনের উসুল দেখাবে। বাকী বি‌য়ের খরচ ও অলংকার ছেলের মার ও ছেলে তা‌দের ইনকাম ও সম্পত্তি বেচা বিক্রি ক‌রে যা পা‌রে খরচ করুক। আমি নাই এর মধ্যে। ছেলের বৌ চাকুরী করলে পাবে দশ লাখ। আর চাকুরী না ক‌রে পিউর হাউজ ওয়াইফ হলে পাবে বিশ লাখ। মে‌য়ের বি‌য়ের আগে থেকেই তার নামে সঞ্চয়পত্রের মত মাসিক ইনকাম থাকবে। ছেলে মেয়েদের বি‌য়ের সময় আর্থিক নিরাপত্তা দেয়াটা জরুরী।      নতুন সংসার শুরু কর‌তে অনেক কিছু কেনা কাটা কর‌তে হয়। এখানে অনেকে বলবেন  ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বেশী হ‌য়ে যাচ্ছ‌ে না। আমি বলব আপনি  ২০লাখ টাকার অনুষ্ঠান করছেন নাম কামা‌নো ও ইজ্জত বাড়া‌নোর জন্য সেটা না ক‌রে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে নব দম্পতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তা অবশ্যই ভাল কাজ।  অতঃপর নব দম্পতির সন্তান হলে প্রত্যেক নাতি নাতনীর জন্য মা‌য়ের নামে অতিরিক্ত পাঁচ লাখ টাকা ক‌রে সঞ্চয়পত্র যোগ হবে। আমরা সবাই জীবন শেষেই কেবল সম্পদ সন্তান বা উত্ত‌রো‌ধিকারী‌দের দেয়ার চিন্তা করি। কিন্তু জীবনের শেষ‌ে দেয়ার বদলে কোন বি‌নি‌য়ো‌গে রেখে মাসিক একটা আর্থিক অর্জনটা বেশী প্র‌য়োজন। নশ্বর এই  জীবনে  সম্পদ জ‌মি‌য়ে রাখার চে‌য়ে ক্রমান্বয়ে উপযুক্ত প্র‌য়োজ‌নে খরচ করাটা অনেক অনেক মংগলজনক। এটা আমার নিজ মতামত ও পরিকল্পনা। মে‌য়ের নিরাপত্তার জন্য চাকুরীর ম‌ধ্যে নেয়া ও সঞ্চয়পত্রের মত মাসিক ইনকামের ব্যবস্থা করা প্র‌য়োজন। এটা হয়তবা ছেলের বৌ বা মে‌য়ের জন্য ‌তেমন কোন টাকাই নয় এ যুগে। কিন্তু আমি নিশ্চিত,  এই  অল্প মাসিক পকেট খরচের মত টাকাটা তা‌দের বাড়তি বি‌নোদন ও স্ব‌স্থি দিবে। মে‌য়ের বি‌য়ে‌তে অপর পক্ষ কোন চাহিদা অলংকার ও যৌতুক হলে আমার পক্ষ থে‌কে ঝাঁটাপেটা হবে। যদি মে‌য়ের মা ও মে‌য়ে তাদের প্রপার্টি সেল ক‌রে আধুনিক কালের চাহিদা মিটায় তবে সেটা তা‌দের ব্যাপার। অপচয়ে ও মানুষ খাওয়া‌নো‌তে আমি নাই। অনেকে বলবেন, ছেলেদের বৌ'‌দের আর মেয়েকে সঞ্চয়পত্র ক‌রে কিভাবে এত টাকা দিবেন। ভবিষ্যতে আপনার ক্যান্সার হল, তখন বিদেশ চিকিৎসা আপনার পরিকল্পনায় পানি দিবে। এটা ঠিক। তবে সরকারী হাসপাতালে নিজের চিকিৎসা নি‌য়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যু গ্রহণ করলে পরিবারের প্রতিশ্রুত  কাজগু‌লি করা যাবে।
অনেকে বলবে, সঞ্চয়পত্র সুদ শব্দটার জন্য যারা এটা ব্যবহার কর‌বেন না তাদের জন্য ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বি‌নি‌য়োগ আ‌ছে। মূল বিষয়‌ হল মাসিক ‌যেন একটা আয় আসে । এমন‌কি দোকান ক্রয়েও বি‌নি‌য়োগ হ‌তে পা‌রে। অনেকে বলবেন, বৌ টিকল না বা মে‌য়ের স্বামী টিকল না। তাহলে কি এত বড় ঝুঁকিতে যাওয়া যাবে।
অবশ্যই‌ যাওয়া যা‌বে। কারন সংসার টিকুক না টিকুক আত্মীয়তা যেটা হল সে বিদ্যমান থাকুক মা‌সোহারা মধ্য দি‌য়ে। কল্যাণ হোক কা‌রো না কা‌রো।

No comments:

Post a Comment