Pages

Thursday, February 18, 2016

সেকাল ও একালের কৃষি

১৯৮০/৮১ সালের দিকে আমি প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র। আমি পরিবারের সাথে কুমিল্লা শহরে বসবাস করতাম। তখন সমস্ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক বিষয় আমার মেমরিতে আসে। তখন আমরা এখনকার মত প্রচুর ডিম ও মুরগী পেতাম না। যা ডিম ও মুরগী পাওয়া যেত তাও তৎকালীন মুদ্রার অনুপাতে অনেক দাম ছিল। ব্যাপকভাবে ফার্ম আকারে মুরগীর চাষ হত না। বাজারে সব্জির্র প্রতুলটা শহরের বাজারে থাকলেও গ্রামের বাজারে ছিল না। শহরের বাজারে সব সময় সকল কিছু চাইলেও পাওয়া যেত না। এখন অবাক হতে হয় গ্রামে সারা বছর টমেটো,ফুলকপি,বাঁধাকপি, গাজর ও আরো অনেক সব্জি পাওয়া যায়। আগে এগুলো এত ব্যাপকভাবে পাওয়া যেত না। শাকসব্জি ও ফলমূল থেকে কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা ছিল বেশী। এখন তা দূরীভূত হয়েছে। যাতায়তে উন্নতি, অনেক অনেক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও মানুষের চাহিদার কারণে বেড়েছে নানা বিচিত্রের আয়োজন। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে চাহিদা টাকা থাকলেও সব পাওয়া যেত না।
আমি চাকুরীর স্থানের সরকারী কমপ্লেক্সে অনেক সব্জি ও অনেক ফল হয়। সকল সব্জি ও ফল ক্যাম্পাসের সকলকে দেয়া হয় অনেক স্বল্প মূল্যে। মাঝে মাঝে দেখা যায় কাঁঠাল বা  বিভিন্ন ফল নেয়ার মত ক্যাম্পাসের কাউকে পাওয়া যায় না। তখন বাইরে অতি কম মূল্যে দিতে হয়। কারণ একটাই। নষ্ট করার চেয়ে দেশের যে কোন মানুষ খেতে পারুক লাভ লসের হিসাব নয়। না পচে যেন মানুষ খেতে পারে। একবার প্রচুর আমলকী গাছে ধরে আছে কিন্তু নেয়ার লোক নেই। অনেক সব্জি বাগানে আছে নেয়ার লোক নেই। তখন অবাক হই কেন এ অবস্থা।
জাম গাছে প্রচুর জাম। পারার লোক নেই কারণ উঁচু জাম গাছে কেউ উঠবে না। মাঝে মাঝে অর্ধেক জামের ভাগ অফার করেও কাউকে পাওয়া যায় না। তখন টাকা অফার করতে হয়। আর টাকা দিয়ে জাম পাড়লে তখন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার স্থানীয় বাজার থেকে বেশী পরে যাবে। লেবার উচ্চমূল্যের জন্য এখনকার সময়ে আর লাভজনক থাকছে না। কৃষি উৎপাদন করে লাভের প্রথম শর্তই হচ্ছে ম্যাকানাইজ সিস্টেমে যাওয়া।কারণ কৃষিপণ্যের দাম অনুযায়ী ম্যানুয়ালি লেবার দিয়ে কৃষি পণ্য উৎপাদনে বাজার মূল্যে পোষাবে না । বিভিন্ন সরকারী কমপ্লেক্সে  জমি লীজ দেয়া বা স্থানীয় বগা চাষি দ্বারা চাষ ইত্যাদি  কার্যক্রমে স্বল্প খরচে জমিতে ফসল উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশে গাছ লাগানো,ফল উৎপাদন ও কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। দেশের সকল স্থান কৃষির আওতায় আনাটা জরুরী।

কয়েকবার আমাদের সরকারী কমপ্লেক্সে টমেটো,ফুলকপি ও বাধা কপি ইত্যাদি উৎপাদন করে ভীষণ ঝামেলায় পড়লাম। উৎপাদন এত হল যে সবাই খাওয়ার জন্য আর নিতে চাইত না। বাজারেও ব্যাপক দাম কম। তবু অতি অল্প দামে বা নামমাত্র দামে সব্জ‌ি শেষ করতে পারলাম। এরপর মাথার মধ্যে আসল আমরা জায়গা ফেলে না রেখে অবশ্যই চাষ করব। লীজও তেমন চলেছ না। তাই নিজেদের চাষ করতে হবে।  তবে উপায়। তখন মাথায় একটা আইডিয়া আসল আর তা হল আগের বড় বড় প্লটে এক দুই ধরনের সব্জি চাষ না করে ১০/১৩ রকমের সব্জি করা। এত‌ে অনেক ভ্যারাইটি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অপচয় রোধ হব‌ে। প্রতি ক্যাটাগরির ও বিভিন্ন রকমের সব্জি অল্প অল্প করে উৎপাদন করায় তা সহজেই  খরচ হবে ও অপচয় কম হবে। এছাড়া আরো একটি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া যায় আর তা হলো অপ্রচলিত বিদেশী সব্জি লাগানো। তবে বিদেশী সব্জি বা শস্য উৎপাদনে প্রচুর যত্ন আত্তির প্রয়োজন হয়। তবে দেশের ফসল ও শস্যের ব্যাপকতার কারণ দেশের সম্ভাবনাময় বেশীর ভাগ স্থান উৎপাদনের আওতায় এসেছে। উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা বতর্মান প্রজন্মের জন্য অবশ্যই খুশী হতে পারি কারণ তাদের খাদ্যে রয়েছে পর্যাপ্ততা। এভাবে হয়ত বাংলাদেশে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। তবে একইভাবে বর্ষায় ও বন্যায় যেন খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত না হয় তার জন্য থাকবে ভাসমান বাগানের আয়োজন। শহরের প্রতিটি ছাদ বাগানে বিস্তৃত করতে হবে। তবে সর্বদা ব্যাপক বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার আগে অবশ্যই বাজারের চাহিদার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

Thursday, February 11, 2016

মোবাইল ফোনে লেখালেখি

আমি একবার একটা খবর পড়েছিলাম আমেরিকার একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র অফিসে আসা যাওয়ার পথে মোবাইলে এসএমএস টাইপ করে একটি বই লিখে শেষ করেছে। অবাক ব্যাপার নিশ্চয়ই। আমি এ খবরটা মনে রেখে মোবাইলের মাধ্যমে আমিও আমার বাংলা লেখালেখির একটা চেষ্টা চালাই। যেহেতু আমি বিজয়ে টাইপ করতেই অভ্যস্ত। তাই অভ্র ফোনেটিকস দিয়ে টাইপ করতে গিয়ে পরতে হয় নতুন বিপদে। কয়েক দিন অভ্র ফোনেটিকস দিয়ে  টাইপ করার ক্লান্তিকর চেষ্টাটা চালালাম। বন্ধু/বান্ধবরা অভ্র ফোনেটিকস এর পক্ষে‌ সাপোর্ট দিল। একটা বিষয় মাথায় আসল।  আমি গুগল প্লে ষ্টোরে কেন বিজয় খোজ করছি না । পরে বিজয়ের একটি অ্যাপস পাওয়া গেল যা মোটামোটি  কার্যকর মনে হয়। এখনকার সময়ে মোবাইল থাকলে আর কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না।  কিছুদিন আগেও ট্যাব বা ল্যাপটপ ছাড়া আমরা চলতে পারতাম না। এখন মোবাইল হলেও আমাদের চলে। বরং ভারী ল্যাপটপ আর ট্যাব বেশী জরুরী না হলে আমরা বহন করতে চাইনা। আমি যে গল্পটি আপনাদের জানালাম এটি হল আগের দিনের এসএমএস এ যুগের গল্প। যখন এসএমএস মোবাইলের দশ বাটনের মধ্যে টাইপ করা লাগত। এখন টাচ মোবাইলে একই বাটনের বিভিন্ন লেটার টিপে টিপে টাইপ করার প্রয়োজন পড়ে না। একেবারে টাচ বাটনে নিদিষ্ট অক্ষর দেখে টাইপ করা যায়। টাইপ করাটা টাচ বাটনে একবার আয়ত্তে আনতে পারলে অনেক দ্রুত টাইপ করা যায়।
মোবাইলের বিজয় কীতে টাইপ করাটা অভ্যাস হয়ে গেল মন্দ হয় না। বিজয় অভ্যাস করে কম্পিউটারে টাইপিং ও মোবাইলের টাইপিং প্রায় একই রকম মনে হয়। অনেক ক্ষেত্রে মোবাইলে টাইপ করা আটির্ক্যাল টাইপিং কম্পিউটারে নিয়ে এডিটিং ইত্যাদি কাজ করতে গেলে দেখা যায় শব্দগুলো ভাংগা ভাংগা হয়ে জোড়া লাগে। এগুলো অভ্র  স্পেল চেক দিয়ে প্রয়োজনীয় কারেকশন করা যায়। মাঝে মাঝে মোবাইল টাইপিং এ রেফ, একার ও আরো দুই একটা সংযুক্ত বর্ণের জন্য সমস্যা হয়। তবে কোন তথ্যাদি ধরে রাখার জন্য মোবাইলে নিয়মিত টাইপ করার অভ্যাস করলে ধীরে ধীরে মোবাইলে টাইপিং সংক্রান্ত সমস্যাগুলি ধীরে ধীরে কেটে যায়। তখন মোবাইলে টাইপিংটাও স্বাভাবিক কম্পিউটারের মতো স্বাভাবিক হবে।
মোবাইল টাইপিঙের আইডিয়া আসে তখনই যখন আমাদের রাস্তা ঘাটের ট্রাফিক জ্যামের অলস টাইমগুলো কোয়ালিটি টাইমে রূপান্তর করা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না এখনকার অধিকাংশ এক্সিকিউটিভ কিছুটা অন্তত ডিজিটাল কার্যক্রমে অভ্যস্ত হচ্ছে। যেমন এসএমএস পড়া, লেখা, ইমেইল চেক করা ও ইন্টারনেটে সার্চ দেয়া। আজ হতে পাঁচ বছর আগেও দেখতাম অনেক কর্মকর্তাই এসএমএস, ইমেইল পাঠাতে ও খুলতে জানত না। এখন অধিকাংশ শিক্ষিতরাই কাজগুলি জানে। তাই এখন পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের স্মার্ট ফোনে স্মার্ট কর্মকাণ্ড করতে দেখা যায়।
বিভিন্ন স্থানে, রাস্তাঘাটে ও গাড়ীতে আজ অনেককেই  স্মার্টফোনে কর্মরতই দেখা যায়।
অনলাইন ও অফলাইন অনেক কাজ যখন স্মার্টফোনে করা যায়। এখন আমার মত লেখালেখি করা যাদের অভ্যাস আছে তারা লেখালেখির কাজগুলি সহজেই সারতে পারেন। স্মার্টফোনে লেখালেখির কাজ নোট বা মেমোতে না করে সরাসরি ড্রপবক্সে ফাইল গুলো নিয়ে করা যায়। এতে একবারেই মোবাইল ফোনে বা কম্পিউটার যে কোন স্থানে ও যে কোন ডিভাইসে টাইপ করা যাবে। অফিসে বা বাসায় ল্যাপটপ বা পিসিতে করে নিয়ে আমরা সেই লেখাগুলো মোবাইলে আবার রাস্তাঘাটে প্রয়োজনীয় সময় নিয়ে রিলাক্স মুডে কাজগুলো শেষ করতে পারি। যে কোন লেখা প্রুফ রিডিং বা সংশোধন পরিবর্ধন বা পরিমার্জনের কাজ মোবাইলে সহজে করা যায়। তবে কোন রেখা বা আইডিয়া হঠাত মনে পড়লে তা তৎক্ষণাৎ টাইপ করে নতুন নামে লেখাটি খুলে ফেলে নিলে মন্দ হয় না পড়ে প্রয়োজনীয় সময় হাতে নিয়ে পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে নিলেই চলবে।
আগে শুনতাম লেখকরা তাদের বিভিন্ন কাজের ফাকে ফাকে লিখতে বসতেন ছোট ছোট নোট প্যাডে বা কাগজে। পড়ে এক সময় সমস্ত নোটগুলি নিয়ে তারা বসত তাদের ধারনা গুলোকে ভাষার মনোহারী বিন্যাসে উপস্থাপনা করা। এখনকার সময়ে আইডিয়া গুলো নোট লেখার পরিবতে মোবাইলে টাইপ করে ফেলতে পারি। এতে নোট জমানো ও পুনরায় সাজিয়ে লেখার মত পুনরাবৃত্তি ধরনের কাজগুলো আমরা কমাতে পারি। আমরা যেন তেন ভাবে  মোবাইলে লেখাগুলো ডিজিটালই সংরক্ষণ করে ফেলতে পারলে পরে তা যেকোনো ভাবেই ব্যবহার করে যায়। তবে ভ্রমণরত অবস্থায় বাসে বা গাড়ীতে সাধারণত কলম দিয়ে লেখা যায় না। যদি লিখতে হয় তবে প্রচুর অনুশীলনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু মোবাইলের কিতে টাইপ করে লেখা যায়। টাচ ফোনেও গাড়ীর ঝাঁকুনিতে ঠিকভাবে আঙ্গুল রেখে কাজ করা যায় না। সরে সরে যায়। তবে একটু অভ্যাস করলে গাড়ীর ঝাঁকুনিতে ছোটখাট টাইপিং কাজ করা যায়। তবে নিধিধায় ভালভাবে কাজ করা যাবে জলপথে ও আকাশ পথে ভ্রমণের সময়। ট্রেনে সড়ক পথে জানি ভালভাবে করা যাবে।

আমরা যেখানে যে অবস্থায় থাকি না কেন আমাদের হাতের কাছে স্মার্টফোন থাকলে আর তা স্মার্টলি  ব্যবহার করতে জানলে আমাদের অলস ও বোরিং টাইমগুলো উৎপাদনশীল ও কোয়ালিটি টাইম হবে।

Thursday, February 4, 2016

পরিবার নিয়ে কলকাতায় বেড়ানো

২১ জানুয়ারি ২০১৬ আমার পরিবারের জন্য এক‌টি স্মরণীয় দিন। আমার পরিবারের সকল সদস্য পাস‌পোর্ট ও ভিসা নি‌য়ে দেশের বাইরে আসল। আমার কেজিতে পড়ুয়া ছোট মে‌য়ে ‌ইমিগ্রে‌শনে স্বহ‌স্তে স্বাক্ষর করল। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের সুবাদে অনেক দেশ দেখার সৌভাগ্য হলেও বিভিন্ন কারণে পরিবার নি‌য়ে দেশের বাইরে পা রাখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে বিএসএফ আ‌য়ো‌জিত ফ্যামিলি প্রোগ্রামে যদিও বর্ডারের আসে পাশে দুইবার পরিবার নিয়ে বিনা পাস‌পোর্ট ও ভিসায় ভারত গমন করেছিলাম।
পরিবার নি‌য়ে বিদেশ ভ্রমণ না কর‌তে পারার জন্য আর্থিক কারণটাই মুখ্য। প্রথম কারণ বিপুল পরিমাণ টাকা শেয়ার মার্কেটে হারি‌য়ে ঋনগ্রস্থ হওয়া। দ্বিতীয় কারণ পিতার রিটায়‌মে‌ন্টের পর পিতামাতা গ্রামে থাকার কারণে গরীব আত্মীয় স্বজন‌দের অহরহ টাকা দি‌তে হয়। তখন মনে হয় কারণ ছাড়া শুধুমাত্র বেড়ানোর জন্য বিদেশ গি‌য়ে লক্ষ টাকা খরচ করার চেয়ে দশ হাজার টাকা ক‌রে দিলেও এক লক্ষ টাকায় অন্তত গ্রামের ১০ জনের ভাগ্য বদলের সহায়তা কর‌তে পারি। চাকুরীর ক্যারিয়ারে সচেতন না হওয়ার কারণে অনেকের মত প্রমোশন উন্নতি লাভ করে ও বিদেশে  কোস ও অন্যান্য অগণিত কর্মকাণ্ডে সরকারী খরচে  অনেকের মত বিদেশ যাওয়ার ভাগ্য আমি তৈরি করতে পারিনি। যাতে পরিবার উৎসাহ পাবে।
যাকগে যা হোক বিজিবিতে চাকুরী করার সুবাদে ‌বিএসএফ এর সাথে পতাকা বৈঠকের সময় অনেক বিএসএফ অফিসাররা ছুটি নি‌য়ে ভারত বেড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ করেছিল। বিশেষ ক‌রে যে সব ‌বি‌এস‌এফ অফিসাররা বাংলাদেশে কোর্স করেছে বা ভিজিট করেছে তাদের আগ্রহটাই বেশী। পরে হিসাব করে দেখলাম দর্শনা বর্ডার দিয়ে ভারতের কলিকাতায় বেড়ানো বেশ সাশ্রয়ী। দূরবর্তী দেশে বেড়ানোর চিন্তা বাদ দিয়ে কাছাকাছি দেশ দিয়ে পারিবারিক বিদেশ ভ্রমণ শুরু করা যেতে পারে। বিশেষ করে বর্তমান যুগে নিজের সংগতি থাকতে দুই একটা দেশে না ঘুরালে সন্তানরা মনো কষ্ট পাবে। যেখানে সমসাময়িক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের বিদেশ ভ্রমণের গল্প শুনতে শুনতে পরিবার হীনমন্যতায় ছিল।
আমার ইঞ্জিনিয়ার পিতা নিজে অনেক দেশ ঘুরলেও আমাদের মাকে সহ ছয় জন ভাইবোনকে অন্য দেশ দেখানোর মত সাহস করেননি। অবশ্যই তা খরচের জন্য। সেজন্য আমার শখের মধ্যে প্লেনে উঠার শখ‌টি চাকুরীর পাওয়ার প্রথমে পূরণ করে ফেলি। ঢাকা সৈয়দপুর বিমান ভ্রমণ ক‌রে। তবে বিয়ের প‌রে চাকুরীর টাকায় টানা পূরণে পুনরায় আর্থিক কারণে বিদেশ যাওয়ার অভিঞ্জতা অর্জনে ব্যর্থ হই। তবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যাওয়ার কারণে বিদেশ যাওয়ার সু‌যোগ‌টি পাই চাকুরীর নয় বছরের মাথায়।
কলিকাতা শহর আর ঢাকা শহরের মধ্যে তেমন পার্থক্য চো‌খে পড়েনি।
লোকজনের পোষাকে একটা পার্থক্য দেখা যায়। ঢাকার রাস্তা ঘাঁটে লুঙ্গি পড়া লোকের সংখ্যা বেশী। এখানে কম। ইন্টারনেটে বাংলাদেশ থেকে কলিকাতার বেড়ানো সহায়ক অনেক অনেক তথ্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। কলিকাতার গুগল ম্যাপ অনেক বেশী আপডেটেড। নিজ লোকাশান থেকে অন্য লোকেশানে গেলে অনলাইন রাস্তার তথ্য, বাসের তথ্য ও ট্রাফিক জ্যামের তথ্যাদির আপডেট পাওয়া যায়। রিয়েল টাইম ইনফরমেশন এভাবে  পাওয়া যাবে। যে কোন সময়ে যে কোন স্থান হতে যেতে পাবলিক ট্রান্স‌পোর্ট ট্রেন,বাস ও হাটা ইত্যাদি পন্থায় ‌নি‌দ্দিষ্ট  স্থানে কিভাবে যেতে হয় তার গাইড গুগল ম্যাপে পাওয়া যায়। তা সত্যি চমৎকার।‌  গুগল ম্যাপে ঢাকা শহরের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও অন্যান্য তথ্যাদি পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করে দেখলাম। ঢাকার পাবলিক ট্রান্সপোটের্র কোন তথ্য নেই।
দেশে থাকতেই কোথায় কোথায় বেড়া‌নো যায় তার সমস্ত তথ্যাদিই আমার ছেলেরা ইন্টারনেট থেকে নিয়ে‌ছিল। মুলত: সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের বেড়ানো আগাচ্ছিল। থাকা ও খাওয়ার জন্য বিএসএফ এর বন্ধু অফিসাররা ব্যবস্থা ক‌রে দিয়েছিল। যার ফলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ ব্যবস্থা পেয়েছিলাম। দুই একদিন বন্ধু অফিসাররা ‌ গাড়ী ও গাইড দিয়ে সহায়তা করেছিল।
আমাদের‌ বেড়ানোটা যেভাবে করি তা নিমরুপ:
২১জানুয়ারী ২০১৬: বাংলাদেশ হতে দর্শনা ও গেতে হয়ে ভাড়া করা কারে কলিকাতা আসা।
২২ জানুয়ারি ২০১৬: কলিকাতা নিউ মার্কেট গমন ও কিছু কেনাকাটা করা। মার্কেটে কি কি পাওয়া যায় তার ধারনা করা।
২৩ জানুয়ারি ২০১৬: বিএসএফ কলিকাতা সেক্টরের নিকটবর্তী আলম বাজার এলাকায় বেড়া‌নো। হাওড়া এলাকায় হুগলী নদীর তীরবর্তী স্বামী বিবেকানন্দের বেলুড় মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় দেখা। পিলার বিহীন বিশাল উঁচু হাওড়া ব্রিজ দেখা। দক্ষিনেশ্বর মন্দির দেখা।
২৪ জানুয়ারি ২০১৬: ‌নিউটাউন এর সাইন্স সিটিতে ঘোরে বেড়ানো।
২৫ জানুয়ারি ২০১৬: নিউ মার্কেট ও নিকটবর্তী এলাকায় বেড়ানো।
২৬ জানুয়ারি ২০১৬: ইকো ট্যুরিজম পার্ক দেখা  ও সল্ট লেকের সিটি সেন্টারের কেএফসিতে ডিনার করা।
২৭ জানুয়ারি ২০১৬: ভি‌ক্টো‌রিয়া মেমোরিয়াল ও পার্ক স্ট্রীট এলাকার ডোমিনোজে লাঞ্চ করা।
২৮ জানুয়ারি ২০১৬: প্রি‌ন্সেপ ঘাটে বেড়ানো ও হাওড়ার এ্যাভোনী রিভারসাইড মলের ম্যাকডোনালসে লাঞ্চ করা।
২৯ জানুয়ারি ২০১৬: ‌অলিপুর চিড়িয়াখানায় বেড়ানো ও নিউ টাউনের সিটি সেন্টার-২ শপিং মলের সাবওয়ে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করা। দমদম এয়ারপোটের্র কাছে হলদি রামের শোরুম থেকে শুকনো মিষ্টি কেনা।
৩০ জানুয়ারি ২০১৬: কলকাতা হতে ভাড়া করা কারে গেদে দিয়ে বাংলাদেশে  প্রবেশ।
কলিকাতায় যাওয়ার পর দুইদিন পর্যন্ত নতুন স্থানে গমন ও আবহাওয়ার ভিন্নতার কারণে আমার ছেলেমেয়েদের ভাল লাগছিল না। তৃতীয় দিন থেকে তাদের ভাল লাগা শুরু হয়। আমার ভয় হচ্ছিল দশ দিন ছুটি কাটাতে পারি কিনা।  পরে দেখা গেল একনাগাড়ে আটদিনের প্রতিদিন বেড়িয়েও সন্তানদের উৎসাহের কমতি ছিল না। যাওয়া ও আসা সহ দশদিন সুন্দরভাবে আমার সন্তানরা কলিকাতায় কাটাতে পেরেছিল। এজন্য তারা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আমার স্ত্রী আমা‌দের সাথে বড়সড় হাটায় ও বেড়ানোতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিল।

পরিশেষে কলিকাতায় ছোট পরিসরে পরিবার নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের অনুভূতি চমৎকার। ছোট বাজেটে বিদেশ ভ্রমণের স্বাদ পেতে কলিকাতা মন্দ নয়।