১৯৮০/৮১ সালের দিকে আমি প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র। আমি পরিবারের
সাথে কুমিল্লা শহরে বসবাস করতাম। তখন সমস্ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক বিষয় আমার
মেমরিতে আসে। তখন আমরা এখনকার মত প্রচুর ডিম ও মুরগী পেতাম না। যা ডিম ও মুরগী পাওয়া
যেত তাও তৎকালীন মুদ্রার অনুপাতে অনেক দাম ছিল। ব্যাপকভাবে ফার্ম আকারে মুরগীর চাষ
হত না। বাজারে সব্জির্র প্রতুলটা শহরের বাজারে থাকলেও গ্রামের বাজারে ছিল না। শহরের
বাজারে সব সময় সকল কিছু চাইলেও পাওয়া যেত না। এখন অবাক হতে হয় গ্রামে সারা বছর টমেটো,ফুলকপি,বাঁধাকপি,
গাজর ও আরো অনেক সব্জি পাওয়া যায়। আগে এগুলো এত ব্যাপকভাবে পাওয়া যেত না। শাকসব্জি
ও ফলমূল থেকে কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা ছিল বেশী। এখন তা দূরীভূত হয়েছে। যাতায়তে উন্নতি,
অনেক অনেক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও মানুষের চাহিদার কারণে বেড়েছে নানা বিচিত্রের
আয়োজন। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে চাহিদা টাকা থাকলেও সব পাওয়া যেত না।
আমি চাকুরীর স্থানের সরকারী কমপ্লেক্সে অনেক সব্জি ও অনেক ফল হয়।
সকল সব্জি ও ফল ক্যাম্পাসের সকলকে দেয়া হয় অনেক স্বল্প মূল্যে। মাঝে মাঝে দেখা যায়
কাঁঠাল বা বিভিন্ন ফল নেয়ার মত ক্যাম্পাসের
কাউকে পাওয়া যায় না। তখন বাইরে অতি কম মূল্যে দিতে হয়। কারণ একটাই। নষ্ট করার চেয়ে
দেশের যে কোন মানুষ খেতে পারুক লাভ লসের হিসাব নয়। না পচে যেন মানুষ খেতে পারে। একবার
প্রচুর আমলকী গাছে ধরে আছে কিন্তু নেয়ার লোক নেই। অনেক সব্জি বাগানে আছে নেয়ার লোক
নেই। তখন অবাক হই কেন এ অবস্থা।
জাম গাছে প্রচুর জাম। পারার লোক নেই কারণ উঁচু জাম গাছে কেউ উঠবে
না। মাঝে মাঝে অর্ধেক জামের ভাগ অফার করেও কাউকে পাওয়া যায় না। তখন টাকা অফার করতে
হয়। আর টাকা দিয়ে জাম পাড়লে তখন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার স্থানীয় বাজার থেকে বেশী
পরে যাবে। লেবার উচ্চমূল্যের জন্য এখনকার সময়ে আর লাভজনক থাকছে না। কৃষি উৎপাদন করে
লাভের প্রথম শর্তই হচ্ছে ম্যাকানাইজ সিস্টেমে যাওয়া।কারণ কৃষিপণ্যের দাম অনুযায়ী ম্যানুয়ালি
লেবার দিয়ে কৃষি পণ্য উৎপাদনে বাজার মূল্যে পোষাবে না । বিভিন্ন সরকারী কমপ্লেক্সে জমি লীজ দেয়া বা স্থানীয় বগা চাষি দ্বারা চাষ ইত্যাদি কার্যক্রমে স্বল্প খরচে জমিতে ফসল উৎপাদন করা যায়।
বাংলাদেশে গাছ লাগানো,ফল উৎপাদন ও কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। দেশের সকল স্থান
কৃষির আওতায় আনাটা জরুরী।
কয়েকবার আমাদের সরকারী কমপ্লেক্সে টমেটো,ফুলকপি ও বাধা কপি ইত্যাদি
উৎপাদন করে ভীষণ ঝামেলায় পড়লাম। উৎপাদন এত হল যে সবাই খাওয়ার জন্য আর নিতে চাইত না।
বাজারেও ব্যাপক দাম কম। তবু অতি অল্প দামে বা নামমাত্র দামে সব্জি শেষ করতে পারলাম।
এরপর মাথার মধ্যে আসল আমরা জায়গা ফেলে না রেখে অবশ্যই চাষ করব। লীজও তেমন চলেছ না।
তাই নিজেদের চাষ করতে হবে। তবে উপায়। তখন মাথায়
একটা আইডিয়া আসল আর তা হল আগের বড় বড় প্লটে এক দুই ধরনের সব্জি চাষ না করে ১০/১৩ রকমের
সব্জি করা। এতে অনেক ভ্যারাইটি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অপচয় রোধ হবে। প্রতি
ক্যাটাগরির ও বিভিন্ন রকমের সব্জি অল্প অল্প করে উৎপাদন করায় তা সহজেই খরচ হবে ও অপচয় কম হবে। এছাড়া আরো একটি ব্যবস্থাপনায়
যাওয়া যায় আর তা হলো অপ্রচলিত বিদেশী সব্জি লাগানো। তবে বিদেশী সব্জি বা শস্য উৎপাদনে
প্রচুর যত্ন আত্তির প্রয়োজন হয়। তবে দেশের ফসল ও শস্যের ব্যাপকতার কারণ দেশের সম্ভাবনাময়
বেশীর ভাগ স্থান উৎপাদনের আওতায় এসেছে। উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা বতর্মান প্রজন্মের
জন্য অবশ্যই খুশী হতে পারি কারণ তাদের খাদ্যে রয়েছে পর্যাপ্ততা। এভাবে হয়ত বাংলাদেশে
মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। তবে একইভাবে বর্ষায় ও বন্যায় যেন খাদ্য উৎপাদন
ব্যাহত না হয় তার জন্য থাকবে ভাসমান বাগানের আয়োজন। শহরের প্রতিটি ছাদ বাগানে বিস্তৃত
করতে হবে। তবে সর্বদা ব্যাপক বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার আগে অবশ্যই বাজারের চাহিদার
বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।