Pages

Thursday, November 24, 2016

একটি খুশীর দিন ও সেই সাথে দু:খের দিন

১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে বিএমএ তে যোগদানের পর একটি বিষয় সেনা কর্মকর্তাদের চিন্তা চেতনায় টেনশনে মিশে যায় সেটা হল ঘাম ঝড়ানোর কসরত শারীরিক কসরতের পরীক্ষা ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর সকাল ০৬৩০ মিনিটে আমার সাথী অফিসারদের সাথে বিজিবি কুষ্টিয়ায় সেনা চাকুরীর সর্বশেষ তিন কি:লো: দৌড়টি নির্ধারিত ২৩ মি: সময়ের কয়েক মিনিট আগে শেষ করি এটা সকল সেনা অফিসারের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন দীর্ঘ চাকুরী জীবনে কষ্টকর ফিজিক্যাল ইফিসেন্সি টেস্ট(পিইটি) আর বর্তমানের ইন্ডিভিজুয়াল ফিটনেস টেস্ট(আইএফটি) শেষ করে সবাই যেন হাফ ছেড়ে বেচে যায় দিনের পর দিন ফিটনেসের জন্য চেষ্টা করা কঠোর পরিশ্রম করা নিয়মিত পিটি করে নিজেকে বছরের দুইবার ফিট প্রমাণ করার জন্য ছয় মাস পর পর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সত্যি মহা টেনশনের সময় এই টেস্টে সবচেয়ে ভাল যে পারফর্ম করে তাদেরও আগের রাতে কিঞ্চিত টেনশন হয় ঘুম কম হয় খাওয়া দাওয়া কমে যায় ২০১২ সালের আগে ফিজিক্যাল টেস্ট আরো কঠিন ছিল পরবর্তীতে অন্যান্য দেশের উন্নত আর্মির আদলে আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর ফিটনেস পরীক্ষা আরো স্বাস্থ্য সম্পন্ন করা হয় বর্তমান ফিটনেস টেস্ট বয়সের সাথে পরিবর্তনশীল হওয়ার কম বয়সী জুনিয়ার অফিসার সৈনিকদের জন্য আইএফটি ভয়ানক আতংক 
বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীর(বিএমএ) দুই বছর সহ ২৭ বছরে প্রতি ছয়মাস পর পর এই ফিজিক্যাল টেস্টের আতংক পেরুতে হত আজ ৫৪টি ফিজিক্যাল টেস্ট সম্পন্ন করার পর যখন ৪৫ বছর বয়সের কারণে মা পেলাম তখন ভয়ানক খুশী হওয়ার কথা কিন্তু কেন যেন খুশী লাগছে না যদি বলা হয় আবার ফিজিক্যাল টেস্ট শুরু হউক আলাদা সময়ে আলাদা বয়সে মনে হয় মনটা সায় দিবে না কারণ আমার আগে যারাই ৪৫ বছরের উপরে গিয়েছে তারাই মাফ পেয়েছে তাহলে সেধে সেধে কেন আমার মনে পিইটি বা ফিজিক্যাল টেস্টের আতংকের মধ্যে ঢুকব আজ থেকে দশ বার বছর আগে একজন আর্মি ডাক্তার আমার বাৎসরিক প্রতিবেদনের মেডিক্যাল টেস্টের সময় বলেছিলেন সৈনিক জীবনের সবচেয়ে বড় ওয়েলফেয়ার হল ছয় মাস পর পর পিইটি এটা আছে বলেই অধিকাংশ সেনা সদস্য অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্ত এটা শেষ করার পর অনেক সেনা সদস্য রোগাক্রান্ত হয় ৪৫ বছরের উপরের সেনাবাহিনীতে রোগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বেশী আমি একবার চট্টগ্রামের হালিশহরে আর্টিলারি সেন্টারে ২০১০ সালে কিছু শ্রীলংকান অফিসারের সাথে ইউনিট কমান্ড কোর্স করি সেখানে একজন শ্রীলংকান লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন সে ছিপছিপে গড়ন আর সে নিয়মিত তিন কি:মি: দৌড়াতেন তার বয়স ছিল তখন ৪৭ বছর তার কাছে জানতে চাইলাম এই বয়সে সময় ধরে দৌড় দিচ্ছেন ঘটনা কি আপনার ৪৫ বছর উপরে নিশ্চয়ই পিইটি নেই তবে কেন এই দৌড় সে জানাল তাদের রিটায়মেন্টে যাওয়া ছাড়া দৌড়ের কোন শেষ নেই জেনারেল থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সুবেদার মেজর সবাইকে ফিজিক্যাল ফিটনেস টেস্ট দিতে হয় অবশ্যই বয়সের সাথে সাথে টেস্টও সহজ সহনশীল হতে থাকে সে চাপা মেরেছিল কিনা আমি অবশ্য ভেরীফাই করতে পারিনি মজার বিষয় হল, টেস্ট যতই সহজ হোক টেস্টের আতংকে নিয়মিত শারীরিক অনুশীলনের একটা চাপ থেকেই যায় এই আতংক আর যাই হোক না কেন কিছু ক্যালরি বার্ন করায় সুস্থ থাকার পথ সুগম করে যদিও ওজন নিয়ন্ত্রণের রাখার চেষ্টায় বেশীরভাগ সচেতন সেনা সদস্য ফিট থাকে ১৯৯০ হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আল্লাহর অশেষ রহমতে বিএমএর এমআইরুমে একবার চোখের কনজাংটিভাইটিসের জন্য এ্যাডমিট হয়েছিলাম এছাড়া বিএমএসহ দীর্ঘ ২৭ বছরে আল্লাহ সুস্থ রেখেছেন সিএমএইচে কখনও আমাকে ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এ্যাডমিট হতে হয়নি আমার কাছে মনে হয় পিইটি আতংকে নিয়মিত পিটি করা আর ওজন কমানোর সেনা নিয়মের কারণে এই সফলতাটা ভাগ্যে জুটেছে তাই পিইটি বিদায় দেয়ার সাথে সাথে মনে মনে ভয় পাচ্ছি গতকালও সকাল বিকাল কষ্ট করে হাটাহাটি দৌড়াদৌড়ি করছিলাম পিইটি আতংকে আগামীকাল তো সেই আতংক নেই তবে কি আমার সেই হাটা দৌড় নিয়মিত করে যেতে পারব মনে পরে কম চাকুরীর বয়সে যখন কেয়ার লেসের মত মাঝে মাঝে পিইটি ফেল করলে সিনিয়ররা লাগাতার পিইটি অনুশীলন লাগিয়ে দিতেন এতে ভয়ানক কষ্ট হতে থাকলেও মনে হয় এজন্য আজতক সুস্থ থাকতে পেরেছিলাম অনেক সাধনা করে আজ প্রায় পাঁচ বছর সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি তারপরও ভয় হয় কখন বুক হাত দিয়ে কাত হয়ে পড়ে যাই মরণ আমাদের সকলের জন্য অবধারিত তথাপিও আমাদের মাঝে কেহ সত্তর, কেহ আশি আবার কেউ বা নব্বই ক্রস করে তখন তাদের মত আয়ু পেতে লোভ হয় তার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ আর নিয়মিত শরীর চর্চার কোন বিকল্প নেই যেই পিইটি আতংকে আজতক সকাল বিকাল হাটা দৌড় করে যাচ্ছিলাম সেটি চলে যাওয়ায় নতুন অনুপ্রেরণায় নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে যুগ যুগ ধরে আমার মত সহস্রাধিক সেনা সদস্য ফিটনেস টেস্ট অতিক্রমণের পরও কঠিন অধ্যবসায়ে নিজেকে সুস্থ নীরোগ রেখেছেন সেইরূপ নিজেকেও একই অনুপ্রেরণায় সকালে হাটা দৌড়ের অভ্যাসে নিয়োজিত করতে হবে তাতেই রয়েছে সুস্থতা আরো অনুপ্রেরণা পাই আমার সেনা জীবনের অকালে অবসর নেয়া এক বন্ধু আজও মাইলের পর মাইল সাইক্যাল চালায়, সাতার কাটে প্যারাসুট/গ্লাইডার নিয়ে জাম্প দেয় আমরা নিশ্চয়ই সকলেই কোন না কোন ভাবে নিজেদের সুস্থ থাকার পথ বের করে নেই হয় খেলাধুলা বা অন্য কোন ভাবে আমরা সকলে সুস্থ থাকার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকব সেই হোক আমাদের প্রত্যয়