Pages

Thursday, July 30, 2015

বাসাবাড়ীর পর্দা ঝুলানোর সার্বজনীন পদ্ধতি

চাকুরীর প্রথম বেতন থেকে নিজের রুমের জন্য পর্দা বানাই। অফিসার মেসের আমার নির্ধারিত রুমের জন্য পর্দা লেগেছিল ১৩টি। পর্দা বানানোর পর টেইলার পর্দায় হুক লাগানো অনান্য কিছু কারিগরী কাজ করতে হয়। ২৪ বছর চাকুরী জীবনে (২০১৫ সাল পযন্ত) প্রায় ১৩ টি পোষ্টিং পাই। প্রতিটি পোষ্টিং এর পর বাসা সাজানোতে সর্বদাই একটা ঝামেলায় থাকতে হয়। আর তা হল। একেক বাসার পর্দার সিস্টেম একেক রকম। পুরাতন বাসা গুলোতো কাঠের গোলাকার লাঠি থাকে। যাতে কিনা বড় বড় প্লাষ্টিকের রিং ব্যবহার করতে হয়। আবার কোন কোন বাসায় এ্যালুমিনিয়ামের পাইপ থাকে। সেখানে আবার চিকন অথাত পুনে এক ইন্ঞি ব্যাসের রিং ব্যবহার করতে হয়। সবচেয়ে কমন সিস্টেম হল এ্যালুমিনিয়ামের রেইল সিস্টেম। সমস্যাটা হল এসব সিস্টেম একেক বাসায় একেক রকম। এতে প্রতিটি পোষ্টিং এর সময় প্রতিবারই বিভিন্ন হুক কিনতে হয়। একেক ধরনের হুক একেক বাসায় একেক রকম সিস্টেমে ব্যবহার করতে হয়। তদুপরি পুর্বে কেনা বিভিন্ন হুক সবসময় সংরক্ষন করা যায় না। ২০০৮ সালে ময়মনসিংহ সেনানিবাসে পোষ্টিং হলে বাসার লিভিংরুমে  নতুন পর্দা লাগানোর জন্য পর্দার দোকানে যাই। পর্দার দোকানে গিয়ে পর্দার একটা সিস্টেম আমার কাছে বেশ ভাল লাগে। পর্দায় হুকের বদলে তারা কাপড়ের লেস ব্যবহার করেছে। ভিতরে বকরম দিয়ে বেল্টের আকারের লেস গুলো পর্দা ঝুলানোর জন্য তৈরী করা হয়েছে। এপর্দাগুলোর লেসগুলোর ভিতর দিয়ে এ্যালুমিনিয়ামের হাফ ইঞ্চি পাইপ ঢুকিয়ে ঝুলানো হয়। এর নাম পর্দাওয়ালা দিয়েছে নিমা সিস্টেম। নিমা সিস্টেমটি ভাল কারন এতে কোন হুক নাই। তাই খোলা জোড়ায় কোন ঝামেলা নাই। পর্দা ধোয়ার সময় হুক খোলার ঝামেলার মধ্যে পড়তে হবে না। আমার কাছে নিমা সিস্টেমটি বেশ পছন্দ হল। মেয়েদের নিমার লেসদুটো কাধে যেভাবে থাকে একইভাবে ঝুলে থাকে বলে এর নাম নিমা সিস্টেম। এখন এই নিমা সিস্টেম কিন্তু এ্যালুমিনিয়ামের রেলের সাথে ব্যবহার করা যাবে না। এ্যালুমিনিয়ামের রেলের সাথে ব্যবহার করতে হলে এর সাথে ছোট একটু ইঞ্জিনিয়ারিং করতে হবে তা হলো নিমার লেসটাকে একপাশে কেটে দিয়ে তাতে ভেলকো লাগাতে হবে। এভাবে পর্দায় আর লেসে ভেলকো লাগালে নিমা সিস্টেম এ পর্দাগুলো তখন যেকোন স্থানে লাগানো যাবে। যে কেউ লাগাতে পারবে। দর্জি লাগবে না। কোন হুক ব্যবহার না করার কারনে পর্দার স্টিক/পাইপ/রেলের কাঠামোর জন্য হুক বদলের প্রয়োজন পড়ছে না। ধাতুর হুক না থাকার কারনে পর্দায় হুকের মরিচায় পর্দার কাপড় নষ্ট হয় না। ভেলকো দিয়ে আটকানোর কারনে যখন তখন ঝটপট পর্দা খোলা যায়। যে কেউ পর্দা খুলতে ও লাগাতে পারে। কোন স্পেশালিষ্টের প্রয়োজন পড়ে না।


বদলীর চাকুরী বা বাসা বদলে পর্দা লাগানো ও খোলায় কোন রকম মডিফিকেশন বা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন পড়বে না। বেশ সহজ ব্যবস্থা। বর্তমানে যে কোন পর্দার টেইলাররা নিমা সিস্টেমের মত লেসের একদিকে কেটে ভেলকো লাগিয়েই এটা তৈরী করতে পারবে। তৈরীটা বেশ সহজ। আমি আমার পুরাতন পর্দা একইভাবে মডিফাই করে নিয়েছিলাম। এর জন্য প্রতি দশটা পর্দায় সম্ভবত একটা করে পর্দা কেটে মডিফাই করার বাড়তি কাপড়ের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। কারন প্রতিটি পর্দা ৫/৬ টি নিমার মত লেস তৈরী করতে বেশ কাপড় প্রয়োজন। যদি পুরানো পর্দা কমাতে না চান সেক্ষেত্রে কাপড়ের রং মিলিয়ে কাপড় কিনে লেস বানালেই চলবে। আমি বেশ কয়েকদিন সময় নিয়ে আমার বাসার অনুমানিক ৪০ টি পর্দায় ভেলকো দিয়ে নিমা সিস্টেম করেছিলাম যাতে অন্য কোথাও পোস্টিং এ গেলে পর্দা নিয়ে আর চিন্তা করতে না হয়। এর পর আমি ছয় মাসের জন্য চাপাইনবাবগঞ্জ, পরে পুনরায় ময়মনসিংহ এবং বর্তমানে কুষ্টিয়ায় এরুপ তিনটি পোষ্টিং এ আমি নিশ্চিন্তে কোন রকম সমস্যা ছাড়াই পর্দা লাগানো ও খোলার কর্মযঞ্জটি করেছি। পরে আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানেই টেইলাররা ভেলকো দিয়ে আমার আইডিয়াটি সবার জন্য চালু করে দিয়েছে। কুষ্টিয়ার টেইলার কোথাও পর্দা বানালেই আমি দেখতে পাই আমার সেই নিমা সিস্টেমের মত করে লেসের সাথে ভেলকো লাগিয়ে অনান্য পর্দা বানিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যাদের ঘন ঘন বাসা বদল করতে হয় তারা পর্দায় এ ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। এতে শান্তি পাবেন।



Friday, July 24, 2015

এখনো জ্বলছে বিদ্যুৎ অপচয়-কারী বাতি

চাকুরীর সুবাদে গ্রাম ও শহরে অনেক স্থানে আমাকে ঘুরে বেড়াতে হয়। ঘুরে বেড়ানোর সময় একটি বিষয় আমাকে ভীষণ পীড়া দেয়। রাতের বেলা রাস্তা থেকে বাড়ী-ঘর ও দোকান-পাটের দিকে তাকালে দেখা যায় আগের দিনের গোল ফিলামেন্টের লাইটগুলো জ্বলছে। যা ইংরেজীতে বলে ইনকনডেনেসন্ট লাইট (Incandescent Light)। তখন অবাক হতে হয়। এই ভেবে যে, এখনো মানুষ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক লাইটস সম্পর্কে জানে না। তা কি ভাবা যায় ? অনেক সময় মনে হয় একজন বেশী বিদ্যুৎ অপচয়-কারী তাতে কি? ইলেকট্রিক বিলটা সেই দিচ্ছে। এতে আমাদের চিন্তিত হওয়ার বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। আমাদের উদ্বিগ্ন বা চিন্তিত হতে হচ্ছে এ কারণে আমরা বাংলাদেশে ভর্তুকি দরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। এ ভর্তুকির টাকা আমাদের সবাইকে দিতে হয়। আর এতেই আমাদের সকলের কনসার্ন হওয়ার বা সজাগ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আমি নিশ্চিত যে আমাদের  দেশের অনেক মানুষ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইটের বিষয়ে জানে না। অথচ মিটার রিডাররা প্রতি মাসে মিটার চেকিং এর জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার বাড়ী বাড়ী যাতায়ত করছে। মিটার রিডাররা অবশ্যই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইট সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা উচিত। প্রয়োজনে মিটার চেকিং এর সময় কোন বাড়ীতে কয়টি বিদ্যুৎ খেকো ফিলামেন্ট লাইট জ্বলছে তার তালিকা তৈরি করতে পারে। এ তালিকা পরবর্তীতে সরকারী  অনুদানে এনার্জি লাইট ক্রয় করার জন্য সুপারিশ দিতে পারে।
Click to enlarge
আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষার হার এগুচ্ছে। তাই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইটের বিষয়ে কেউ জানবে না এটা মেনে নেয়া যায় না। সকলে অন্তত টিভি দেখে। টিভিতে এনার্জি সেভিং লাইট নিয়ে প্রচারণাও সবাই দেখতে পায়। তাহলে সমস্যা হল প্রাপ্যতা। এখনও বৈদ্যুতিক দোকানে ফিলামেন্ট বাল্ব পাওয়া যাচ্ছে এটাই হল বাস্তবতা। এখনও কিছু কোম্পানি ফিলামেন্ট লাইট তৈরি করছে। এছাড়া দোকানেও ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। তাই মানুষজন এখনও ফিলামেন্ট বাল্ব কিনছে। আর কিনবেই না কেন। অনেক সস্তায় এ লাইট পাওয়া যায়। একটি সিএফএল বাল্ব যখন ২০০ টাকা আর এলইডি একই শক্তির বাল্ব ৪০০ টাকা তখন ২০/২৫ টাকা দিয়ে ফিলামেন্ট বাল্ব কেনাটাই অবশ্যই সহজ ও সাশ্রয়ী। মাসে মাসে বিদ্যুৎ বিল বেশী হবে এটা নিয়ে সাধারণ মানুষ কখনও কেউ চিন্তা করে না। কারণ আমরা ভর্তুকি দরে বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আজ যদি ১০/১৫ টাকা কিলোওয়াট ইউনিট দরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হত তবে সবাই টাকা খরচ করে এনার্জি লাইট ক্রয় করতে পিছপা হত না। একটা রুম আলোকিত করতে ফিলামেন্ট লাইট দিয়ে পাঁচগুণ বেশী বিদ্যুৎ খরচ করে যে শুধু মূল্যবান রাজস্বের অপচয় হচ্ছে শুধু তাই নয় এতে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কয়লা, গ্যাস খনিজ তৈল ইত্যাদিরও অপচয় হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যেভাবে কার্বন নি:সরন হয় তাও বিদ্যুৎ অপচয়ের মাধ্যমে কার্বন নি:সরন বেশী হয়। তাই দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ খেকো ফিলামেন্ট লাইট ও এনার্জি সেভিং লাইট আমাদের পরিবেশ ও আর্থিক দিক দিয়ে পার্থক্য তৈরি করে। তাই সচেতন নাগরিক জেনে শুনে এ ভুল করাটা অপরাধ।
আমাদের দেশে বাংলাদেশ সরকার অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সিএফএল বাতি বিতরণ করেছে। অনেক প্রচারও করা হয়েছে। কিন্তু এখনও গ্রামে, হাটে, বাজারে ফিলামেন্ট লাইট দেখা যায়। এ ধরনের লাইটের পরিমাণ মোট লাইটের আনুমানিক ৩০ শতাংশ হবে। একটা বিষয় আমি লক্ষ করেছি বেশির ভাগ বাড়ীতে বা বাজারের ঘরগুলোর বাইরে এ ধরনের লাইটগুলো জ্বালানো হয়। এধরনের বিদ্যুৎ খাদক ফিলামেন্ট লাইট গুলো দামে কম। চুরি গেলে ক্ষতি নেই। আমাদের দেশের বাইরের লাইট প্রায়শই চুরি যায়। অথচ এসব লাইট সবচেয়ে বেশী সময় জ্বলানো হয়। একটানা প্রায় সারা রাত। এগুলো অবশ্যই এনার্জি সেভিং হওয়া প্রয়োজন। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় বেশী হবে। মনে করি বাইরের একটা এনার্জি সেভিং লাইট জ্বালানো হল রাতে ১০ ঘণ্টা। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে মাসে: ১০ঘন্টা x ২০ ওয়াট x ৩০দিন ভাগ ১০০০ ওয়াট(এক ইউনিট) x ৫ টাকা = ৩০ টাকা। অনুরূপ ভাবে ১০০  ওয়াটের ফিলামেন্ট লাইট জ্বালালে এর পাঁচ গুন বিল উঠবে। অর্থাৎ ৫ x ৩০ টাকা = ১৫০ টাকা বিল উঠবে। তেমনি দুই মাসে বিল উঠবে ফিলামেন্ট লাইটের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা। অপরদিকে সিএফএল লাইট জ্বালালে বিল আসবে ৬০ টাকা। দেখা যাচ্ছে দুই মাসে প্রায় ৩০০ বিয়োগ ৬০ টাকা = ২৪০ টাকা বেশী খরচ হবে। দুই মাসে ২৪০ টাকা বেশী বিদ্যুৎ দেয়ার চেয়ে ২০০/২৫০ টাকা দিয়ে এনার্জি সেভিং সিএফএল লাইট কেনাটা অত্যন্ত জরুরী।
বর্তমানে আরো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি লাইট পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ কোয়ালিটির এলইডি লাইট সাধারণত্ব ৫/৭ ওয়াট ১২৫/১৫০ টাকায় পাওয়া যায়। ভাল কোয়ালিটির এলইডি লাইট ৫/৭ ওয়াট ৩৫০/৪৫০ টাকায় পাওয়া যায়। সেসব লাইটের আবার ২ বছরের ওয়ারেন্টি থাকে।
আমরা একটা অনুপাত দেখতে পাব আলোর উজ্জ্বলতায়।
যেমন: ১০০ ওয়াট ফিলামেন্ট লাইটের আলো=২০ ওয়াট সিএলএফ=৭ ওয়াট এলইডি।
প্রায় একি লুমেন্সের উজ্জ্বলতায় বিদ্যুৎ খরচের একটা ব্যাপক পার্থক্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। মাত্র দুই মাসের পে ব্যাক হওয়ার মত কারণ থাকলেও অনেকে সিএলএফ ব্যবহার করছেন না। মনে হয় উচ্চমূল্য ও চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে বাইরের সিকিউরিটি জন্য দীর্ঘসময় জ্বলা লাইটগুলো সিএলএফ লাইট ব্যবহারে অনেকেই সাহস করছে না। বাজারে এখন কমদামী এলইডি লাইট পাওয়া যায়। ১০০/১২৫ টাকার এ লাইটগুলো ওয়াট অনেক কম দামও কম। এ ধরনের লাইটগুলো হয়ত সিকিউরিটি লাইট হিসাবে ভাল চলতে পারে। চুরি গেলেও খুব বেশী লস হবে না। এ লাইট গুলো চুরির জন্য এনার্জি সেভিং লাইটের মত অত আকর্ষণীয় নয়। তাই এলইডি কমদামী ডিস্ক টাইপ হল কম-মূল্যের ভাল সলিউশন।
সব শেষে আমরা সবাইকে সচেতন করতে পারি। কেউ যেন বিদ্যুৎ অপচয়-কারী বাতি ব্যবহার না করে। বিদ্যুৎ অপচয়-কারী বাতি বাজার থেকে বিতাড়িত করতে হবে। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা করতে পারলে আমরা কার্বন নি:সরন কমিয়ে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারব।



Thursday, July 16, 2015

শোবার ঘরে উপকারী এলইডি ঘড়ি

মোবাইল আসার পর থেকে আমার মত অনেকেই হাতঘড়ি পরা ছেড়ে দিয়েছে। এখন প্রায় ভুলেই গেছি হাতঘড়ি কি জিনিষ। হাতঘড়ি ত্যাগ করার সাথে সাথে আমার অভ্যাসে একটা বিষয় ঢুকে গেছে। তা হল । প্রতিটি ঘরে দেয়াল ঘড়ি রাখা। এমনকি বাথরুমের বেসিনের তাকে একটি করে টেবিল ঘড়ি স্থাপন। এটা এমন একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে কোন ঘড়ি বন্ধ হলে কারো না কারো নজরে পড়ে যায়। সেইসাথে দ্রুত মেরামতের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।
আমার মনে হয়। ঘড়ির মূল্য কম হওয়ার কারণে আর ব্যাটারি খরচ কম থাকায় এখন দেয়াল ঘড়ির যথেষ্ট ব্যবহার সব জায়গায় হচ্ছে। তবে হাতঘড়ি ব্যবহার করলে হয়ত এত দেয়াল ঘড়ির অভ্যাস হত না। মোবাইলের কারণে আমার মত অনেকেই হাতে আর একটি ঘড়ি ব্যবহারের মত ঝামেলায় থাকতে চায় না। তবে আমার দুই ছেলে আবার পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় হাতঘড়ি নিতে হচ্ছে কারণ মোবাইল নট এলাউড।


এখন আসি মূল আলোচনায়। আমার ব্যক্তিগত ঘড়ি ব্যবহারের বর্ণনা আমি সবাইকে দিলাম। এখন শোবার ঘরের দেয়াল ঘড়িটাই মূলত বেশী দেখা হয়। সমস্যা হল, বিছানায় শোয়ার পর সময় জানতে হলে মোবাইলটা নিয়ে দেখতে হয়। অনেক সময় মোবাইলে চার্জ কম থাকলে চার্জে রাখলে তা বালিশের অবস্থান থেকে একটু দূরে রাখতে হয়। তখন সময় দেখতে হলে বিছানা থেকে উঠে দেখতে হয়। অন্যথায় লাইট জ্বালিয়ে দেয়াল ঘড়ি দেখতে হয়। যেহেতু হাতঘড়ি ব্যবহারের অভ্যাস ত্যাগ করেছি তাই বিছানায় শুয়ে অন্ধকারে ঘড়ি দেখার ইচ্ছেটাকে দমন করা যায়না। আবার অনেক সময় সকালে উঠতে গেলে ঘড়ি দেখার ইচ্ছে করে সবচেয়ে বেশী। কিন্তু ৪/৫টার আলো আধারিতে দেয়াল ঘড়ির সময় বুঝা যায় না।

রাতে বিছানায় থেকে ঘড়ি দেখার সমস্যার সমাধান করার জন্য আমি দীর্ঘদিন যাবত লাইট জ্বালা এলইডি ঘড়ি কেনার ইচ্ছে ছিল। আজ থেকে চার বছর আগে এলইডি লাইটের ঘড়িটি কেনার চিন্তা করলাম। তখন ঘড়িটির দাম যতটুকু মনে আছে তিন হাজার টাকা ছিল। ক্রয় করতে সাহস হয়নি। কারণ সাধারণ দেয়াল ঘড়ি ২০০/৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর পাঁচটি রুমে পাঁচটি ঘড়ি রাখতে খরচ ১০০০ বা ১২০০ টাকা আর সেখানে একটি ঘড়ি ৩০০০ টাকা। খরচটা বেশী মনে হল। গত বছর একবার দাম জানতে চাইলাম ১২০০ টাকা জানাল। না কিনে ফেরত আসলাম। মনে হল ১০০০ টাকার মধ্যে আসলে ক্রয় করব। এভাবে কিনব কিনব করে আর কেনা হচ্ছিল না। অবশেষে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে  একদিন কুষ্টিয়ার ঘড়ির দোকানে লাল এলইডি,র ছোট আকারের  ঘড়িটির দাম জানতে চাইলাম। আমাকে জানাল ৬৫০ টাকা। আমি ঠিক আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি পুনরায় জানতে চাইলাম, ৬৫০ টাকা? মনে মনে আমি চীনদেশকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না। চীনাদের বদৌলতে আমরা এত কম দামে ইলেক্ট্রনিক দ্রব্যাদি পাচ্ছি। আমি যেটা কিনেছি সেটার উপর ক্যাসিও লেখা। আনুমানিক এক ফুট লম্বা এবং তিন ইঞ্চি প্রস্থ। এ্যাডাপটারের মাধ্যমে চলে। ডিসি ৯ ভোল্ট ইনপুট। এতে ঘণ্টা, মিনিট বড়(১.৫ ইঞ্চি) সাইজের ডিসপ্লে আছে। এছাড়া ছোট আকারে প্রায় এক ইঞ্চি প্রস্থে আছে আরো ডিসপ্লে যা ১০/১২ ফুট দূর থেকে ৬/৬ চোখের পাওয়ারে পড়া যায়। সেগুলো হল তারিখ, মাস, সাল একদিকে। অন্যদিকে সপ্তাহের কততম দিন এবং তাপমাত্রা।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে তারিখ ও বার জানতে ইচ্ছে করলে অন্ধকারে জ্বল জ্বল করে প্রদর্শিত এলইডি ঘড়ি থেকে জানা যাচ্ছে। ঘরে ব্যবহৃত এসিতে যদি তাপমাত্রার ডিসপ্লে না থাকে, তবে ঘড়ির তাপমাত্রা থেকে তা জানা যাচ্ছে।

এ ঘড়িতে এলার্ম দেয়া যায়। বেশ জোরে শব্দ করে এলার্ম বাজে। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় মিউজিক বাজানোর জন্য সেট করা যায়। একটা স্মার্ট অপশন আমার ভাল লেগেছে। তা হল রাত দশটার পর এলার্ম ছাড়া ঘণ্টায় ঘণ্টায় মিউজিক বাজবে না। এভাবে ঘড়িটি নি:শব্দে চলবে সকাল ৬টা পর্যন্ত যেন রাতে শব্দ দূষণ না হয়। আবার সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টার মিউজিক বাজতে থাকবে। অবশ্য প্রয়োজনে এ মিউজিক দিনের বেলাও বন্ধ রাখা যায়। আমি ঘণ্টায় ঘণ্টায় মিউজিকটি চালু রেখেছি বাচ্চাদের সচেতনতার জন্য। ঘড়িটি বিদ্যুৎ চলে গেলে সমস্যা নেই। এর ভিতর থাকা বোতামের মত ছোট রিচার্জেবল ব্যাটারি ঘড়িকে চালু রাখে। তাই বিদ্যুৎ গিয়ে আবার বিদ্যুৎ আসলে এলইডি ডিসপ্লে না হলেও ঘড়ির সময় চলমান থাকে। ঘড়িটির ডানদিকে টাচ বাটনের মাধ্যমে সময়, এলার্ম ও অন্যান্য অ্যাপস চালানো যায়। সময় এ্যাডজাষ্ট করা যায়। বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘড়ির ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যায়। এর জন্য আপনি ঘড়িটিকে আইপিএস যদি থাকে তাতে সংযোগ দিতে পারেন। আর বাসার কম্পিউটারে যদি ইউপিএস থাকে তাতে সংযোগ দেয়া যায়। ঘড়িটি আমি ছয় মাস যাবত ব্যবহার করছি। যদি দুই বছরও ব্যবহার করা যায় তাতেও ৬৫০ টাকা মূল্যের হিসাবে যথেষ্ট। আশা করি এলইডি ঘড়ির এই আলোচনাটি আপনাদের কাজে লাগবে।

Thursday, July 9, 2015

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সাদৃশ্যপূর্ন সাশ্রয়ী হাইব্রিড মাইক্রো-গ্রিড সিস্টেম

যেকোনো দেশ তার নাগরিকদের বিদ্যুতের মত বেসিক রাইট প্রদানে চেষ্টা করে। বাংলাদেশে এখনও হয়তবা ৩০-৩৫% শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। আমরা বিদ্যুৎ মুক্ত মানুষদের কিস্তিতে সোলার প্যানেল ধরিয়ে দিয়েছি। সোলার প্যানেলের মিটি মিটি আলোতে সবাই অপেক্ষায় থাকে কবে বিদ্যুৎ আসবে । স্বাভাবিকভাবে সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ কেরোসিন বাতিকে দূরীভূত করেছে। পরিচ্ছন্ন ধুয়া বিহীন ও উজ্জ্বল আলো গ্রামের সাধারণ মানুষের হাতের নাগাল হয়েছে। তার পর সোলার ব্যবহার কারী মানুষের বাতির পর আগ্রহ বাড়ে টিভি দেখা। ফ্যান চালানো। তার পরের আগ্রহ ঘরে ঘরে লাইট থাকা। বাথরুমে লাইট থাকা। চাহিদা ক্রমেই বর্ধিত হতে থাকে। ব্যক্তিগত সোলার সিস্টেমের পর যে কারো আগ্রহ হবে এর সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আরো একটি বড় আকারে যাওয়া। তখন চলে আসে মাইক্রো-গ্রিড সিস্টেম। এতে সামর্থবান গ্রাহকরা আরো একটু বেশী পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশের একটি সংস্থা ইডকল বিদ্যুৎ খাতে কম সুদে লোণ দিচ্ছে। এতে মাইক্রো ক্রেডিট প্রদানকারীরা উপকৃত হচ্ছে। যেমন: গ্রামীণ শক্তি তারা ইডকলের লোণের মাধ্যমে গ্রাহকদের ক্ষুদ্রঋণের আওতায় সোলার প্যানেল দিচ্ছে। প্রতিটি গ্রাহক সোলার লাইটের জন্য ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত সোলার প্যানেলের ক্ষমতা অনুযায়ী সোলার প্যানেলের কিস্তি দিচ্ছে। এ কিস্তি হয়তবা তিন বছর নাগাদ দিতে হচ্ছে। যদিও গ্রাহক সোলার প্যানেলের মালিক হচ্ছে তবুও গ্রাহকের কয়েক বছর পর পুনরায় ব্যাটারি কেনা। অন্যান্য যন্ত্রাংশের মেরামতের মত কর্মকাণ্ড চলমান থাকবে। সোলার হোম সিস্টেমে গ্রাহকরা নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ ও ব্যবহারের মধ্যে সীমিত থাকছে। তাদের ব্যবহার প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। ঝড় বৃষ্টির দিনে সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়। অপরদিকে যখন যত প্রয়োজন সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ বাড়ানো কমানো ও সেই সাথে প্রয়োজন মাফিক বিল দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারে স্বাধীনতা অর্জন মাইক্রো-গ্রিডেই সম্ভব। মাইক্রো-গ্রিড সিস্টেম আর সাধারণ গ্রিড সিস্টেমের মধ্যে তেমন পার্থক্য নাই। বরং হাইব্রিড সোলার মাইক্রো-গ্রিডে জেনারেটর যোগ করে সাধারণ গ্রিড সিস্টেম থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের গ্রিড করা যায়। সোলার হোম সিস্টেমে সাধারণত বিদ্যুৎ ঘাটতি হয় আবার সিস্টেম প্রয়োজন অপেক্ষা বড় করলে কখনও কখনও বেশী বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অপচয় হবে। অন্যথায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করে চাহিদায় ঘাটতি হবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গ্রামে গঞ্জে অত্যন্ত কম খরচে এলুমিনিয়ামের তার ও মিটার সংযোগ দিয়ে কয়েকটি লাইট, ফ্যান ও মোবাইল ফোন চার্জিং ইত্যাদি ব্যবহার করে সংযোগ দিচ্ছে। এতে হয়ত বা সর্ব সাকুলে মাসে ১০০/২০০ টাকা বিল আসে।
পল্লী বিদ্যুৎ এর এই ধরনের ভৌত কাঠামো তৈরি করে এখন পর্যন্ত যে সব গ্রামে বিদ্যুৎ নাই সে সমস্ত গ্রামে অতি মূল্যবান বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায়। যেমন: একটি পরিবারে দুইটি ৭ ওয়াট এলইডি লাইটের সংযোগ (৭x২=১৪x৬ঘন্টা=৮৪ওয়াট)+দুইটি ডিসি ফ্যান(২০x২=৪০x১৫ ঘণ্টা =৬০০ ওয়াট, মোবাইল চার্জিং ১০ ওয়াট, ২১ ইঞ্চি এলইডি টিভি=২১x১০ ঘণ্টা =২১০ ওয়াট। তাহলে প্রতিদিন একটা পরিবারের ধরে নেই বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে ৮৪+৬০০+২১০=৮৯৪ ওয়াট বা এক কিলো ওয়াট। মাসে হবে ৩০ কিলোওয়াট।
এখন আমরা ২ লিটার ডিজেল ঘণ্টায় ব্যবহার করে এরূপ ৩০ কিলোওয়াটের জেনারেটর শ্যালো ইঞ্জিনে চালালে দৈনিক খরচ ২ লিটার x ২৪ ঘণ্টা x ৬৫ টাকা (প্রতি লিটার ডিজেলের দাম) =৩১২০ টাকা। আর তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা x২০কিলোওয়াট =৪৮০ কিলোওয়াট আওয়ার। তাই গ্রাহক প্রতি পনের থেকে বিশ টাকা ইউনিট নিতে পারলে মাইক্রো-গ্রিডের খরচ উঠে যাবে। স্বাভাবিকভাবে এটা শহরের বিদ্যুৎ এর প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু গ্রামের কয়েকটি লাইট ফ্যানের কাছে এ খরচ অনেক বেশী বলা যাবে না। এতে প্রায় নিশ্চিত হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ এর ব্যবহার। মাসে ৩০ কিলোওয়াট যাদের বিদ্যুৎ ব্যবহার তাদের অনধিক ৪৫০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। এতে সে যা ব্যবহার করছে তা সোলার প্যানেলের লক্ষ টাকা খরচ করেও পারবে না। অথচ মাইক্রো-গ্রিড করে সকলে অত্যন্ত কম খরচে অনেক বেশী সুবিধা পাবে। মাইক্রো-গ্রিড যদি আমরা পল্লী বিদ্যুৎ এর মত পিলার, তার ও মিটার ব্যবহার করি তবে পুনরায় তেমন কোন খরচ না করেই পল্লী বিদ্যুৎ এর সাথে বা পিডিবি সিস্টেমে সংযোগ দেয়া যাবে। এতে গ্রাহকের ও সরকারের উভয় পক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগ মিটার ব্যবহার ও সঞ্চালন লাইন টানায় নতুন করে খরচ করতে হবে না। শুধু মাত্র হাই ভোল্টেজ লাইন টেনে নিয়ে স্থানে স্থানে ট্রান্সফরমার দিয়ে বৈদ্যুতিক সিস্টেম চালু করলেই হবে। গ্রাহকের নতুন করে সংযোগ লাইন আর মিটার লাগানোর প্রয়োজন পড়বে না। পুরো ব্যবস্থাপনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে পারেন। সিস্টেমটি সরকারীভাবে তৈরি করে এর পরিচালনা বেসামরিক ব্যক্তিদের দ্বারা চালু করা যেতে পারে।


আমরা এখন মাইক্রো-গ্রিডের সম্পূর্ণ বিষয়টি বোঝার জন্য একটি মডেল নিয়ে আলোচনা করব। আমরা একটি ৮ থেকে ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতার মাইক্রো-গ্রিড অফ-গ্রিড এলাকায় তৈরি করব। যে গ্রামটি বেছে নেয়া হয়েছে সে গ্রামটির বাড়ী ঘর একটি রাস্তার দুপাশে আড়াআড়ি ভাবে রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য মনে করি অর্ধ কিলোমিটার। প্রতি ৫০ গজ দূরে দূরে ১০ টি ইলেকট্রিক পিলার স্থাপনে ৫০০ গজে খরচ ১ লক্ষ টাকা। বিতরণের জন্য মোটা এলুমিনিয়াম ৫০০ গজ তারে খরচ ৫০,০০০ টাকা। ৫ কয়েল প্রতি কয়েল দশ হাজার টাকা করে মূল্যমান। ৫০ বাড়ীতে লাইন টানতে ২০ গজ করে আনুমানিক ১০ কয়েল ৩০,০০০ টাকা। ৫০ টি বৈদ্যুতিক মিটার ৫০,০০০ টাকা। লেবার খরচ, যাতায়ত ও আনুষঙ্গিক খরচ ২০,০০০ টাকা। সর্বমোট খরচ ৩লক্ষ টাকা। শ্যালো ইন্জ্ঞিনের ৩০ কেভি জেনারেটরের মূল্য ১ লক্ষ টাকা , সোলার প্যানেল ৮,০০০x৫৫=৪.৪ লক্ষ টাকা( গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০x৫০=২০০০ ওয়াট । সর্বমোট:১০ কিলো ওয়াট)। ব্যাটারি ১২ টি ১.২ লক্ষ টাকা। ইনভার্টর ও আনুষঙ্গিক ২ লক্ষ। সর্বমোট খরচ: ২.৫+১+৪.৪+১.২+২=১১.১ লক্ষ টাকা। অপরদিকে বাংলাদেশের কিছু সংস্থার ন্যানো গ্রিড সিস্টেম ৩ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে  ৮ লক্ষ টাকায় সম্পন্ন করছে। তারা ব্যবহার করেছে স্পেশাল টাইপ আইটেম যা কিনা পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুৎ বা পিডিবি সাপ্লাই লাইনে ব্যবহার করা যাবে না। নতুন ভাবে সবকিছু কিনতে হবে। আর এখানে উল্লেখিত সিস্টেম সম্পূর্ণ ভাবেই পিডিবি বা পল্লী বিদ্যুৎ এর বিতরণ ব্যবস্থায় ধরনে তৈরি থাকবে। এতে ভৌত কাঠামোর কোন পরিবর্তন করতে হবে না। প্রয়োজনে পিডিবি বা পল্লী-বিদ্যুতের বিশেষজ্ঞ দ্বারা রাস্তার লোকেশন, জাতীয় গ্রিডের অবস্থান ও সাব জোনের অবস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় বিদ্যুৎ লাইন তৈরি করা হবে। একবার বিদ্যুৎ লাইনের ভৌত কাঠামো তৈরি করা গেলে তা যে কোন সরকারী/বেসরকারি সংস্থার কাছে ভাড়া দিয়ে সরকার কিছুটা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত সোলার হোম সিস্টেম থেকে আরো অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ১কিলোওয়াট দৈনিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ২৫০ ওয়াট প্যানেল, ১৫০ এএইচ এর দুইটি ব্যাটারি দিয়ে এককালীন খরচ প্রায় ৫০০০০ টাকার কাছাকাছি চলে আসবে। আর তিন বছরে সুদে আসলে ৮০০০০ টাকার কাছাকাছি সোলার বিক্রেতারা হিসাব করে বসবে। এটা কিস্তিতে দিয়ে তিন বছরের জন্য প্রতি মাসে আনুমানিক ২৩০০ টাকার কিস্তি দিতে হবে। তবে সুবিধা একটা আছে তা হল তিন বছর পর সোলার সিস্টেমটা নিজের হয়ে যাবে তখন আর কোন খরচ করতে হবে না। এটা তিন বছর ধরে ভালই চাপযুক্ত রাখবে। আর একই বিদ্যুৎ যদি মাসে ৪৫০ টাকায় প্রতিদিন এক কিলোওয়াট হিসাবে কেনা যায় তবে তা অনেক বেশী সাশ্রয়ী। কারণ ৮০,০০০ টাকা ব্যাংকে রাখলেও পরিবার সষ্ণয় হিসাবে পাওয়া যাবে ৮০০ টাকা। অথচ ১ কিলোওয়াট দৈনিক ব্যবহারে আমরা বিল দিব মাত্র ৪৫০ টাকা ৩৫০ টাকা সেভ ও ৮০,০০০ টাকা মূলধন খরচ করতে হল না। সোলার প্যানেলের দাম ৫৫/৬০ টাকা ওয়াট প্রতি খরচ চলে এসেছে। ব্যাটারির দামটা বেশী হলেও দীর্ঘস্থায়ী ও উন্নত ব্যাটারি বাজারে শীঘ্রই চলে আসবে। এসব পরিবর্তনের পর সোলার হোম সিস্টেম থেকে মাইক্রো-গ্রিড বা ন্যানো-গ্রিড লাভজনক হবে। সোলার হোম সিস্টেমে দুই/তিন দিন একটানা বর্ষা হলে সিস্টেম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ন্যানো বা মাইক্রো গ্রিড সিস্টেমে এ ধরনের কোন সমস্যা নেই। স্ট্যান্ড বাই জেনারেটর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ প্রবাহ চালু থাকবে। সোলার হোম সিস্টেম সেখানেই সফল হবে যেখানে এক কিলোমিটারের মধ্যে ২০ টির উপরে বাড়ী ঘর আছে। তা না থাকলেও ৩/৪টি বাড়ী একসাথে করেও গ্রিড সিস্টেম করা যাবে। সেক্ষেত্রে জেনারেটর হয়তবা ব্যবহার করা যাবে না। শুধুমাত্র সোলার ও ব্যাটারি ব্যাংকের সিস্টেম দিয়ে করতে হবে। আমরা অফ গ্রিড স্থানে সেলার হোম সিস্টেমের সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি একসাথে করে উন্নতমানের সোলার গ্রিড সিস্টেম চালু করতে পারি যা কিনা ভবিষ্যতের সাধারণ বিদ্যুৎ সংযোগের পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে অত্যন্ত কার্যকরী হবে। এতে সাধারণ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ভৌত কাঠামো তৈরি হবে। এ ধরনের ভৌত কাঠামো তৈরিতে সরকারী ভাবে বিনিয়োগ হলে বিদ্যুতায়নে সরকার অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে পারবে। পরিশেষে আমরা আশা করছি আমাদের দেশ বিদ্যুতে ও সবুজ শক্তি ব্যবহারে অগ্রগামী হবে।

Thursday, July 2, 2015

মাল্টি-সোর্স চেঞ্জওভার অটো ইলেকট্রিক সুইচের ব্যবহার

গ্রাম অঞ্চলে বা পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন যারা আছেন। যারা জেনারেটর রেখেছেন। তাদের প্রতিদিনই একাধিকার জেনারেটর চালাতে হয়। ঝড় বৃষ্টির দিনে প্রায়শই গাছপালা পড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। তখন বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। পল্লী বিদ্যুৎ এর লাইনগুলো গ্রামের ভিতর দিয়ে সাধারণত টানা হয়। এসব পিলার বা লাইনের চারিদিকে অনেক গাছগাছালি থাকে। এসব গাছগাছালি প্রায়শই বিদ্যুৎ লাইনে পড়ে লাইন ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট করে থাকে। যদিও প্রতিনিয়ত লাইনের কাছের গাছগাছালির বর্ধিত ডালপালা কেটে রাখার ব্যবস্থা আছে। তবু কখনো কখনো দুই একটি বর্ধিত গাছ ও ডালপালা ঝড় বৃষ্টিতে সমস্যার সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বর্তমান আর্থিক সংগতিতে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জেনারেটর চালানোর সামর্থ্যটা রয়েছে। কোন কোন স্থাপনায় বা প্রতিষ্ঠানে দিনে কম শক্তির জেনারেটর বা রাতে বেশী শক্তির জেনারেটর চালানো হয়। একবার সরবরাহ বিদ্যুৎ, একবার জেনারেটরের বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিভিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমাদের থাকতে হয়। বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎ চালনার জন্য চেঞ্জওভার সুইচ ও কাট-আউট ইত্যাদির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সোর্সের পরিবর্তন করে নিতে হয়। পূর্বে ও বর্তমানে আমাদের দেশে চেঞ্জওভার ও কাট-আউট বেশ জনপ্রিয় ব্যবস্থার সিস্টেম চালু আছে। যদি জেনারেটর লাইন চালু থাকে তবে জেনারেটর লাইনে চেঞ্জওভার দিয়ে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় আবার পুনরায় সরবরাহের বিদ্যুৎ আসলে জেনারেটর সরবরাহ থেকে চেঞ্জওভার ঘুরিয়ে বা কাট-আউট বদলিয়ে সংযোগ পরিবর্তন করে সরবরাহের বিদ্যুৎ-এ আনা হয়। এরূপ ভাবে একবার সরবরাহ লাইন এবং একবার জেনারেটর লাইন এ ধরনের আবর্তে সিস্টেমটি চলতে থাকে। যদি আইপিএস থাকে তাতে অবশ্য লাইন বদলাবদলির চাপ কমে যায়। সমস্যা হয় যদি আইপিএস ও জেনারেটর দুটি থাকে তবে আইপিএসকে সরবরাহ লাইন অথবা জেনারেটর লাইন এ দুটি অপশনে রাখতে হয়। আবার জেনারেটর কম শক্তির হলে আইপিএস বা জেনারেটর এ ধরনের অপশনে ঠিক করে নিতে হয়। আমরা যে অপশনে থাকি না কেন আমাদেরকে চেঞ্জওভার বা কাট-আউটে  পাওয়ার লাইনের সোর্স বদল করে দেয়ার প্রয়োজন পরে। চেঞ্জওভার হউক বা কাট-আউট হোক আমাদের সশরীরে যে কোন সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সাথে করতে হবে। অন্যথায় অন্ধকারে ও ফ্যান ছাড়া গরমে কাটাতে হবে। যদি যথেষ্ট শক্তি সম্পন্ন (অর্থাৎ বেশী ব্যাক আপের) আইপিএস না হয় তবে জেনারেটর নির্ভরশীল হলেও চেঞ্জওভার বদলের কষ্টকর কাজটি করতে হবে। হয়ত কোন কাজে ব্যস্ত, পড়াশোনায় ব্যস্ত বা ঘুমিয়ে আছেন তখন সরবরাহের বিদ্যুৎ গেল এবং আপনার সংস্থার বা কমিউনিটির জেনারেটর চালু হল। ঠিক তখন, আপনাকে কষ্ট করে সময় অসময়ে চেঞ্জওভারটি ঘুরাতে হবে বা কাট-আউটটি বদলী করতে হবে। এ ধরনের সময় ও অসময়ে এ ধরনের কাজগুলো বিরক্তিকর। আর এ ধরনের বিরক্তির কাজ থেকে পরিবর্তনের একটা সহজ ব্যবস্থা হয়তবা স্থানীয় ভাবে অনেক ম্যাকানিক রিলে দিয়ে সার্কিট করে দেয়। তবে এ ধরনের সার্কিট সাধারণত যথেষ্ট পরিমাণে টেকসই হয় না। কারণ নির্দিষ্ট এ্যাম্পিয়ারের মান সম্পন্ন রিলে অনেক সময় পাওয়া যায় না। সাধারণত জাহাজের পুরাতন রিলে ম্যাকানিকরা ব্যবহার করে। এতে রিলের কন্ট্রাক্ট পয়েন্টগুলো স্পার্কে দ্রুত ক্ষয়ে গিয়ে কার্যকারিতা হারায়।সাধারণত এয়ার টাইট রিলে ভাল। এগুলো সুইচিং এর সময় স্পার্কে কন্ট্রাক্ট পয়েন্টগুলো কম ক্ষয় হয়।
বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর লাইন তারপর বিদ্যুৎ আসলে পুনরায় বদল। এ ব্যবস্থায় বর্তমানে কিছু অটো সুইচ পাওয়া যায়। এ ধরনের অটো সুইচ চাইনিজ/ ভারতীয় হতে পারে। এ মুহূর্তে আমার জানা মতে বাংলাদেশের কোন কোম্পানির (জুন ২০১৫) সন্ধান পাইনি যারা এ ধরনের সুইচ বানায়।
খুব কম স্থাপনাই আছে যারা কিনা তাদের সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ লোডই জেনারেটরে দিতে পারে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সুইচ-বোর্ডে লোড ভাগ বাটোয়ারা করে দিতে হয়। আইপিএসও বাড়তি তার টেনে এটা করা হয়। যেমন এক রুমের তিনটি লাইট ও দুটি ফ্যানের মধ্যে, একটি লাইট ও একটি ফ্যানের লোড জেনারেটরে বা আইপিএস এ দেয়া হয়। এতে চেঞ্জওভার বা কাট আউট সহজ অপশন হিসাবে ব্যবহার করা যায়। দুইটি কাট-আউটের একটি কাট-আউট হল জেনারেটর লাইন এবং অপরটি হল সরবরাহের লাইন। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর লাইনে কাট আউট দিয়ে লাইন পৃথক করে জ্বালানো যায়।

এধরনের ব্যবস্থাই আমরা অটোমেটিক করে নিলে অনেকটা ঝামেলা মুক্ত থাকতে পারব। যখন যে বিদ্যুৎ সোর্স আসবে সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ সোর্স পরিবর্তিত হয়ে বাসস্থানের লাইনে সরবরাহ হতে থাকবে। এ ধরনের অটো সুইচে জেনারেটর লাইন ইন্ডিকেট করা থাকে সে অনুযায়ী সংযোগ দিতে হবে। আবার মেইন পাওয়ার লাইন ইন্ডিকেট করা থাকে। আউটপুট লাইন হতে সাধারণত বাসস্থানের লোড দেয়া হয়। অনেক অটো সুইচে জেনারেটর স্টপ লাইন থাকে। যা কিনা মেইন বিদ্যুৎ আসলে ছোট খাট জেনারেটর বন্ধ করতে কাজে লাগে।
আবার একাধিক সোর্স থাকলে তাও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে এবং অটো সুইচ দিয়ে। মনে করুন আপনার প্রতিষ্ঠানে ২৫ কেভি জেনারেটর দিনে চলে আর রাতে ৫০ কেভি জেনারেটর চলে। কখনো কখনো যে কোন একটি জেনারেটর নষ্ট হয়ে গেলে আপনাকে রাতে বা দিনে যে কোন একটি জেনারেটর দিয়ে কাজ চালাতে হবে। এজন্য আপনাকে মাল্টিপল এন্ট্রি করতে হবে আর তা করা যাবে অতিরিক্ত একটি অটো সুইচ ব্যবহার করে। একটি অটো সুইচে দুইটি জেনারেটরের লাইন দিতে হবে এবং সেখান আউটপুট এনে সর্বশেষ অটো সুইচের ইনপুটে জেনারেটরের লাইনে দিতে হবে। এতে আগের জেনারেটরগুলো থেকে যে কোন চলমান জেনারেটরের প্রথম অটো-সুইচের মাধ্যমে কেবলমাত্র একটি ইনপুট সর্বশেষ অটো সুইচে আসবে তা মেইন সাপ্লাইয়ের অনুপস্থিতি হলেই লোডের বা আউটপুটের লাইনের মাধ্যমে ঘরের লাইট, ফ্যান ইত্যাদিতে সরবরাহ পাবে। আইপিএস থাকলে অটো সুইচের আউটপুট থেকে সরবরাহ দিলে ভাল হয়।


এ ধরনের ব্যবস্থাপনায় আশাকরি আপনারা আনইন্টারাপ্টেড বিদ্যুৎ পাবেন। কখন কোন সোর্স থেকে বিদ্যুৎ আসবে বা যাবে টেরই পাওয়া যাবে না। আর মধ্য রাতে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর গরমে ঘেমে ঘুম ভেঙ্গে আর চেঞ্জওভার বদলী করার প্রয়োজন হবে না। আসা করি এ তথ্য অনেকের কাজে লাগবে।