Pages

Thursday, February 23, 2017

চাকুরী নিয়ে একটি হিসাব ও সংশয়

আমার এক বন্ধু আনুমানিক তিন বছর ঢাকায় থাকার পর তার পোস্টিং ঢাকার বাইরে। তার সন্তানরা পাবলিক পরীক্ষা দিবে। বাবা মার নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন। বোন স্বামী মারা যাওয়ার পর তার দেখাশোনা করতে হয়। একমাত্র ভাইও অসুস্থ। চরম সংকটে ঢাকা থেকে বের হয়ে আসা। বন্ধুদের ভাইবার গ্রুপে একটি মর্মস্পর্শী পোষ্ট পাওয়ার পর আমি গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত হলাম। বন্ধুটি আবার আমার মতই উপ-সচিব সমতুল্য হয়ে স্থবির ভাবে চাকুরীরত। বেতন স্থবির। পদোন্নতি স্থবির।এখন তার চাকুরী ছাড়াও সহজ। আবেদন করলে বড়জোর তিনমাস। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে পে কমিশনের সমস্ত বেতন বৃদ্ধি ও সুবিধাদি লেগেছে। আমার অপর বন্ধু অনেক আগেই অবসর নিয়েছে। সে এই ম্যাসেজের উত্তরে জানাল বাইরে দশগুণ পরিশ্রমের চাকুরী করে একই অর্জন। বাইরের কঠিন অবস্থার ইংগিত দিয়ে নিরুৎসাহিত করল। চাকুরীর সময় অতিক্রান্ত না করা পর্যন্ত চাকুরী ধরে রাখার উপদেশ দিল।
একবার কোন একজন সিনিয়র বলেছিল চাকুরীর মজা শেষ বয়সে। জুস খাওয়ার টাইম মূলত: তখনই শুরু হয়। কিন্তু সমস্যা হল উপ-সচিব সম পর্যায়ে মূলত জুস খাওয়া হয় না বরং রগড়া খাওয়া হয়। তবে এই পর্যায়ে পরিশ্রম বেশী করার কারণে স্বাস্থ্য ভাল থাকার সম্ভাবনা বেশী। পরিশ্রম স্বাস্থ্য ভাল রাখে। এটা পরীক্ষিত সত্য। তাই সিভিলে গিয়ে পরিশ্রম করলে সময় খারাপ কাটবে না। তবে আমরা অনেকে ক্যাডেট কলেজ থেকে অদ্যাবধি এমন একটা স্বাস্থ্যকর জীবনে জড়িত যে এটা বেশ অভ্যাসের কারণে সহজ ও সাবলীল। তাই নতুনভাবে নতুন চাকুরীতে নিজেকে নিয়োগ করাটা ৪৫-৫০ বছরের জন্য কষ্টকর। তাহলে কি করনীয় থাকতে পারে। বাড়ী করে ভাড়া খাওয়া আর এখন পেনশন বেচতে না পাড়ার কারণে ৫০% পেনশন নেয়া। আরও কিছু সঞ্চয় থাকলে স্ত্রীর নামে মাসিক সঞ্চয় পত্র ক্রয় করে সেখান থেকে সংসার চালনা করা। অল্প কিছু টাকা লটারীর মত শেয়ার বাজারে খাটিয়ে যদি লাইগ্যা যায়করে সেটা দিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করা। সকালে বিকালে হাটা। বাজার করা। ভাড়া বাড়িঘর ঠিক করার কাজ তদারকি করা। মনের খোঁড়াক মেটানোর জন্য নিজের পছন্দমত সমাজ ও মানুষের জন্য কোন কাজ করা ইত্যাদি। চাকুরী ছাড়ার সহজ হিসাব কোন জটিলতা নেই।
আমি আমার অবস্থানে প্রতিমাসে ১০/১২ জন বিজিবির সদস্য আমার হাত দিয়ে পেনশনের টাকা নেয়। বিজিবির প্রতিটি সদস্য ৫৯ বছরে সাধারণত: রিটায়ারমেন্টে যায়। আমি তাদের সাথে কথা বলে একটা বিষয় পরিষ্কার ধারনা পাই। তাদের থাকার জন্য বাড়ী করেছে। আয়ের জন্য জমি, ব্যবসা বা কিছু একটা গুছানো আছে। ছেলে মেয়ের পড়াশোনা শেষে চাকুরী করছে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। তাদের সন্তানও হয়েছে। এদের সন্তানদের চাকুরী সাধারণত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও প্রফেসার এ ধরনের। এদের অনেকেই প্রাইভেট ভাবেই ছেলে মেয়েদের ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছে। আরও আনন্দের বিষয় হল এদের অনেকেই সন্তানদের বিদেশে পড়াচ্ছে। বিজিবি, পুলিশ ও অন্যান্য সরকারী চাকুরীরতদের এই ৫৯ বছরের পেনশনে যাওয়ার সফলতা দৃশ্যমান। তবে মজার বিষয় দেখলাম এদের সবাই বাড়ীতে গেলে কি করবে এর উত্তরে বলে, হজ্ব করব আর আল্লাহ বিল্লাহ করব। এটাই তাদের উত্তর।
“You are the best person of Bangladesh” এ ধরনের গর্ব নিয়ে আমি ও আমার বন্ধুদের ক্যাডেট কলেজ থেকে যাত্রা শুরু। অতঃপর প্রতিরক্ষা বাহিনীর চাকুরী জীবনে ৫০ বছর শেষ করে আরও ১০টি বছর নতুন চাকুরীর সন্ধানে জীবন শুরু। ভাবলে দু:খ লাগতে পারে অন্যদের মত বেতন নিয়ে ৫৯ বছর চাকুরী শেষ করতে পারলে মন্দ হত না। তবে আমার কাছে মনে হয় ৫০ বছরে যাওয়াটা আনন্দদায়ক বৈকি। আমি সামর্থ্য থাকতে থাকতে অন্য একটি পরিবেশের জন্য নিজেকে তৈরি করছি। এটা একটা ভাল দিক। এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে আরও আগে এই পর্ব শেষ করা যায়। আমি বলব ব্যবস্থা না করতে পারলে ৫০ বছর পর যাওয়াটাও মন্দ নয়। এর মধ্যে বন্ধুদের ও জুনিয়রদের অগ্রসরমান পদোন্নতি আর মাঝে মাঝে তাদের কাছ থেকে তাচ্ছল্য ব্যবহার কিঞ্চিত পীড়া দিতে পারে। তবে এর জন্য দু:খ করার কিছু নেই। প্রতিটি মানুষ তার ভাগ্যের জন্য দায়ী।
২০১৬ সালের জুলাইয়ের বেতন বৃদ্ধির পর পর আর ২০১৭ সালের জুলাইয়ের পর পেনশন সম্পূর্ণ বিক্রির অপশনটা উঠে যাচ্ছে। ২০১৭ জুলাইয়ের পর আমাদের মত উপ-সচিব সমপর্যায়ের ব্যক্তিরা পেনশনে গেলে আনুমানিক হিসাবে মাসিক আয়ের চিত্রটা যেমন হতে পারে তা হল:
ক। পেনশন হিসাবে আনুমানিক মাসে ৩৫০০০ টাকা প্রাপ্তি।
খ। এককালীন ৮০ লক্ষ টাকা প্রাপ্তি। এটা হতে মাসিক সঞ্চয়পত্র অন্য কোন মাধ্যম হতে ৭০,০০০ টাকা পাওয়া সম্ভব।
গ। সর্বসাকুল্যে এখন রিটায়ার করলে ১,০৫,০০০ টাকা হতে পারে। এতে নিজের বাড়ী থাকলে ও ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচের চাপ কম থাকলে ঢাকার বাইরে চলা সম্ভব। ঢাকায় কোন না কোন চাকুরী বা ইনকামের প্রয়োজন পড়বে।
চাকুরীতে ৫০ বছর পর্যন্ত কষ্ট করে চাকুরী করলে এখনকার প্রেক্ষাপটে ইনকাম ট্যাক্স বাদে বেতন ৮০,০০০ টাকা আর বাড়ী ভাড়া ৩০,০০০ টাকা। কিছু লোকের সুবিধা ও গাড়ীর সুবিধায় আরও সাশ্রয় ৫০০০ টাকা। সর্বসাকুল্যে মাসিক অর্জন ১,১৫,০০০ টাকা। তাই চাকুরী ছেড়ে পেনশন নেওয়া অপেক্ষা চাকুরী করে যাওয়ার মধ্যে কিছুটা আর্থিক লাভ আছে। তাই যেন তেন একটা চাকুরী ৫০,০০০ টাকার উপরে হলে ঢাকায় থাকার উপযোগী ব্যবস্থায় যাওয়া যাবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এত কমে চাকুরী করাটা কি ঠিক হবে। আমাদের এক বন্ধু বলল মাসিক পেনশন আর পেনশনের লাভের টাকায় কষ্ট করে চলব। যদি চাকুরী পাই তবে এই কন্ডিশনে চাকুরী করব তা হল, “যে কাজ আমাকে দিবেন করে দিব। কিন্তু সপ্তাহে দুইদিন ছুটি নিব। আর আমার খেয়াল খুশী মত আসা যাওয়া করবএই শর্তে চাকুরী পেলে বেতন কম হলেও চাকুরী করবনয়ত করব না। তবে পারিবারিক ভয়ানক সমস্যায় চাকুরী ছেড়ে দেয়াটা খারাপ অপশন নয়। আমি আমার চাকুরী জীবনে ঢাকায় পোস্টিং পাইনি। তবে চাকুরী একদম শেষের দুইবছর ঢাকায় আসার ইচ্ছে করছি। সন্তানদের নিয়ে শেষ প্রান্তে ঢাকায় ঢোকতে চাচ্ছি। কারণ সন্তানদের একবার ঢাকায় নিলে এদের নিয়ে আর মফস্বলে সপরিবারে থাকতে পারব না। তাই আমাদের ফাইনাল ডেসটিনেশন ঢাকায় চিন্তা করলে চাকুরীর মাঝে ঢাকায় ঢোকা যাবে না। ঢাকায় ঢোকতে হবে চাকুরীর শেষ পর্যায়ে যেন ঢাকা থেকে আর বের হতে না হয়।

পরিশেষে বলব, আমরা আমাদের ৬০% আয়ুষ্কাল হয়তবা শেষ করেছি। তাই পরিবারের ভাল চিন্তা করে চাকুরী করলে কতটুকু আর্থিক লাভ আর ছাড়লে কতটুকু আর্থিক লস তা চিন্তা না করে পারিবারিক চাহিদাটা হবে সবার আগে। চাকুরী ছাড়লে পারিবারিক লাভ বেশী হলে সেই অপশনটাই হবে আমাদের কাম্য। কারণ কোন কারণে পারিবারিক বন্ধন ও নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি হলে সেই ক্ষতিটা আর পোষানো যাবে না। পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের সকলকে ভাল রাখবেন এটাই হোক আমাদের শেষ চাওয়া।

Thursday, February 16, 2017

অদ্ভুত নেশা ফেইসবুক

আমার কম্পিউটারের আগ্রহ দেখা দেয় ১৯৯২ সালের দিকে। তারপর ১৯৯৮ সালে ব্যক্তিগত কম্পিউটার কিনতে সমর্থ হই। আমি মিশনে থাকাকালীন ২০০২ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহ পাই ও ব্যবহার শুরু করি। তখন ইয়াহুতে চ্যাটে বড় ছোট সবাই বেশ হুমড়ি খেয়ে পড়ত। কেন যেন ইয়াহু চ্যাটে আমার তেমন মজা লাগত না। তখন অনেকে বলত অনেক দেশের অনেক মানুষের সাথে ভাবের আদান প্রদান করা যায়। যা আগের দিনের পত্র মিতালীর মত। ২০০৬ সালে মূলত আমি ফেসবুক একাউন্ট খুলি। মাঝে মাঝে ফেসবুক একাউন্ট চেক করতাম। এ্যালবামে ছবি রাখতাম। বেশ ভালই লাগছিল। কিন্তু এটা ছাড়া চলবে না এ অবস্থায় পরিনি। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের জন্য গ্রুপ মেইল বেশ কাজে দিচ্ছিল। অতঃপর ২০১২ সালে মিশনে গিয়ে ভাইবারের দেখা পাই। ভাইবার এসএমএস এর মত ম্যাসেজ আসতে থাকে। সাথে সাথে সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে। তথাপিও মোবাইলে ফেইসবুক চালু করা হয়নি। প্রয়োজনে মাঝে মাঝে ল্যাপটপে বসলে মাসে একবার দুইবার ফেইসবুকে ঢু মারি। পুরানো বন্ধুবান্ধবদের চেহারা স্বাস্থ্যের পরিবর্তন দেখতে পাই। স্পেশালি যারা নতুন নতুন দেশ ঘোরার সামর্থ্য অর্জন করেছে তাদের ফেইসবুকে আনাগোনাটা অনেক বেশী। অনেকে আবার কত বেশী সুখী এটা প্রমাণের জন্য প্রতিনিয়ত খাওয়া দাওয়া থেকে কাপড় চোপড় সব ছবি ফেইসবুকে দিতে থাকে।
ফেসবুক আমার কাছে কখনও আকর্ষণীয় মনে হয়নি। কিন্তু ২০১৫ সালের প্রথম থেকে আমার সহধর্মীনীর ফেসবুক রোগে পায়। এর মধ্যে আমার ছেলেরা তাদের মাকে কিনে দেয় উইন্ডোজ মাইক্রোসফট ফোন। এটা দিয়ে মজার এক ঝামেলা হল। আমি এ্যান্ড্রয়েট ব্যবহার করি। তাই উইন্ডোজ ফোন আমার কাছে তেমন সুবিধাজনক মনে হয়নি। কিন্তু সব সময় স্ত্রীর কাছ থেকে একটা চাপ এই ছবি দাও। এটা করে দাও। দুই ছেলে মায়ের ফেসবুক কর্মকাণ্ডে সহায়তা মোটেই করেনা। সেই চাপটা আসে আমার উপর। উপায়ন্তর না দেখে পুনরায় তাকে এ্যান্ডরয়েড ফোন দিলাম। এবার ফেইসবুকে উত্তম সহায়তা দিতে শুরু করলাম। আর সহধর্মীনীর রাতের সিরিয়াল শেষ করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পুনরায় ফেসবুক পর্ব। এটা হয়ত প্রতিটি ঘরের চিত্র। ফেসবুক ভাল কি মন্দ এই বিতর্ক বহু দিনের। নতুন বির্তকে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অনেকদিন আমার পরিবার ফেইসবুকে না থাকায় স্বস্তিতে ছিলাম। তবে যোগাযোগ মাধ্যম হিসাবে নিলে অন্যায় নেই। আমাদের ছোটবেলায় আমরা অনেক অনেক উপন্যাস পড়তাম। আজও অনেককে দেখি অনেক অনেক বই পড়েন। একজন বলেই বসল আপনারা মোবাইলে কিভাবে পড়েন, আমি বুঝিনা। তাকে বললাম কয়েকদিন মোবাইলে পড়তে থাক। তারপর আর বই হাতে নিতে ইচ্ছে করবে না। টেলিফোন যখন বাসায় আসল তখন ভাই বোনেরা লাইন ধরত কার পরে কে বন্ধুদের সাথে কথা বলবে। মাঝে অনেক রাত পর্যন্ত কথা চলত অনেকের। মোবাইল আসার পর কথার যোগাযোগটা আরো বেড়ে গেল। অতঃপর ইন্টারনেট চ্যাট। তারপর ফেইসবুক।
ফেসবুক এক পর্যায়ে সরকারী সংস্থাগুলো নাগরিক সেবার ফীডব্যাক নিতে ফেইবুক ব্যবহার শুরু করল।
আমি ডিসেম্বর ২০১৬ সালে ভারতে বিএসএফ একাডেমীতে একটা ট্রেনিং এ গিয়েছিলাম। প্রথম বিষয় হল কেউ কোন ক্যামেরা নেয়নি। সবারই ভরসা হল মোবাইল ফোনের ক্যামেরা। এর পর আর একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম। সবাই দুইলাইন লিখে লিখে ছবি ফেইসবুকে দিয়ে দিচ্ছে। সাথে সাথে লাইক পেয়ে যাচ্ছে এবং আরো উৎসাহে আরো পেজে ছবি দিচ্ছে। আমার একজন সহকর্মী বলল ছবি তুলে সাথে সাথে ফেইসবুকে দিয়ে দেন। মোবাইল নষ্ট হতে পারে। হারাতে পারে। ফেইসবুকে দিলে তা হারাবে না। আইডিয়াটা বেশ ভাল। অতঃপর: সবার ফেইসবুকে আপলোড করা শুরু। আমার স্ত্রী বলেছিল ভাইবারে ছবি দাও। আমি আমার ফেইসবুকে আপলোড করব। এভাবে ভাইবার ফেইসবুক করতে করতে আমার মনে ভয় হল তবে কি ছবি প্রিন্ট করে এ্যালবাম রাখার চর্চাটি হারিয়ে যাবে।

দীর্ঘদিন ফেসবুকের নেশা নিয়ে ঘরে ঘরে কম্প্লেইন। একসময় দিন/রাত উপন্যাস পড়া নিয়ে এই সমস্যা ছিল। টিভি ভিসিআর সিরিয়াল নিয়ে একই সমস্যা। মূলত: যুগের পরিবর্তন। টেকনোলজির পরিবর্তন। আমি ইন্টারনেটে পড়ি ও লিখি তাই হয়তবা সময় কিভাবে কেটে যায় আমি টের পাই না। তাই যাদের হাতে অনেক সময় আছে তাদের জন্য ফেইবুক নি:সন্দেহে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগের সময়োপযোগী উত্তম মাধ্যম। আমার স্ত্রী ফেইসবুক ব্যবহারের কারণে আমি পরিবারের অনেক সদস্য ও অনেক বিষয়ে আপডেট থাকি। তাই বলা যায় ফেইসবুক একটি ভাল নেশা।  

Thursday, February 9, 2017

রোগীর ডাক্তারি ফি সহজেই ক্যাশলেস করা যায়

২০১৭ সালের শুরুতে যখন লেখাটা লিখছি তখন পৃথিবীর অনেক দেশ ক্যাশলেস হওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ক্যাশলেস আন্দোলনে আছে। ক্যাশলেস সমাজে দুনীতি কম হয়। মূলত: ক্যাশ লেনদেন প্রমাণ করেছে দুনীতি নগদ টাকায় বেশী হয়। আমি বিভিন্ন জেলায় চাকুরীর সুবাদে থেকেছি সেসব জেলার অনেক ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়েছি। দুই একজন বাদে সমস্ত ডাক্তারই তাদের ডাক্তারি ফিটা নিজ হাতে রোগীর কাছ থেকে গ্রহণ করেন। এই বিষয়টা আমার কাছে বেশ খটকা লাগে। কারণ টাকায় অনেক জীবাণু থাকে। ডাক্তাররা বার বার টাকা ধরে এত ঘন ঘন হাত ধুতে পারেন না। আমরা শিক্ষিত সচেতন অনেকেই আজকাল টাকা নাড়াচাড়া করলেই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেই। ডাক্তাররা প্রত্যেকেই একজন করে সহকারী রাখছেন, আয়া ও রিসিপসনিষ্ট রাখছেন। তবে কেন ক্যাশ টাকা হতে নিচ্ছেন। আমি যদিও কোন ডাক্তারকে এর উত্তর জিজ্ঞাসা করিনি তবে আমার মনে হয় উত্তরটা সকলের জানা। মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্ট ও ডাক্তার নিজেদের মধ্যে হিসাবের জটিলতায় না গিয়ে নিজেই টাকাটা নিয়ে নিচ্ছেন। মাসের শেষে ডাক্তার সাহেব এ্যাসিসটেন্ট ও অন্যান্যদের বেতন দিয়ে দিচ্ছেন। বিষয়টা অত্যন্ত ভাল একটি বিষয়।
তবে আমার কাছে ডাক্তারদের জন্য ক্যাশলেস ব্যবস্থাপনার একটি পদ্ধতি আমার চিন্তা ও ভাবনার এসেছে। আমার ডাক্তার বন্ধুদের জন্য আমার ক্যাশলেস ধারনাটা তুলে ধরছি।
প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হল দুইটি কারেন্ট একাউন্ট করতে হবে। একটি একাউন্ট হবে ডাক্তার সাহেবের জন্য অপরটি হবে মেডিক্যাল এসিসটেন্টের জন্য। মেডিক্যাল এসিসটেন্টের জন্য একটি ডেভিড কার্ড নিতে হবে। ডাক্তার সাহেব নিজের জন্য পয়েন্ট অব সেইল(পিওএস) মেশিন নিবেন। ডাক্তার সাহেব তার চেম্বারে সাইন পোস্টিং রাখবেন এখানে ডেবিট, ক্রেডিট, ভিসা ও মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে ডাক্তারি ফি গ্রহণ করা হয়। ডাক্তার সাহেব যাদের পেমেন্ট নিবেন তাদের কার্ড সোয়াইপ করে পেমেন্ট নিবেন। এখন যারা নগদ দিতে চান তাদের টাকা মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট নগদ নিবেন। মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট তার ডেভিড কার্ডটি সোয়াইপ করে ডাক্তার সাহেবের একাউন্টে পেমেন্ট করে দিবে। মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট নগদ নিবে আর কারেন্ট একাউন্ট থেকে ওডি করে টাকাটা ডাক্তার সাহেবের একাউন্টে ডেভিড কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করে নিবে। ওডি করে তার একাউন্ট থেকে পেমেন্ট করায় মেডিক্যাল সহকারী তার একাউন্টে নগদ টাকার হিসাব মিলানো ও টাকা প্রতিদিন একাউন্টে জমা করার তাগিদ অনুভব করবে। এতে মেডিক্যাল এসিসট্যান্টের সমস্ত হিসাব নিকাশ ব্যাংকিং চ্যানেলে হওয়ায় হিসাবে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। ডাক্তার সাহেব কোন হিসাব মেডিক্যাল এসিসট্যান্টকে জিঞ্জাসা না করেই পেয়ে যাবেন। বিপরীতে মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট পিওএস মেশিনের স্লিপ মিলিয়ে পেয়ে যাবেন কত টাকা নগদ হল। সে টাকা বাড়ী যাওয়ার সময় ব্যাংকে জমা করলেই হল। এখন অনেক ব্যাংকই নৈশ অফিস করে। যদি মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট চায় কয়েকদিনের টাকা মিলিয়ে একবারে জমা দিতে তাও পারবে। টাকা জমা দেয়াটা হল তার দায়বদ্ধতা। কারন তার একাউন্ট হতে ডাক্তারী ফি এর টাকা সাথে সাথে বিয়োগ হয়ে ডাক্তার সাহেবের একাউন্টে যোগ হয়ে গেছে।
আমাদের দেশের ডাক্তার সাহেবরা বিনা রেজিস্টার রক্ষনাবেক্ষনে ইলেক্ট্রনিক ট্রানজেকশনের মাধ্যমে তার সমস্ত হিসাব পেয়ে যাবেন। প্রতিদিন কয়টি রোগী দেখছেন। মাসে কয়টি দেখেছেন। বছরে কতজন দেখেছেন। সব হিসাব ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকেই পেয়ে যাবেন। অনলাইনে ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট দেখতে পাবেন। রিসিপসনিস্ট, আয়া, মেডিক্যাল এসিসট্যান্ট ও চেম্বারের ভাড়া প্রতি মাসে চেকের মাধ্যমে দিতে পারবেন। এমনকি চেম্বারের খরচও চেকের মাধ্যমে মেডিক্যাল এসিসট্যান্টকে দিলে সব হিসাব অতি সহজে ইলেক্ট্রনিক্যালী রের্কড হয়ে যাবে।
এতে একজন ডাক্তার সাহেবের সমস্ত হিসাব নিকাশ অত্যন্ত নিজেই নির্ভুল ভাবে রাখতে পারবেন। নিজের আয় ব্যয়ের উপর স্বচ্ছ ধারনা থাকবে। এতে হয়তবা ব্যাংক ফি কিছুটা দিতে হবে। কিছুটা ফি দিয়ে হলেও ডাক্তার সাহেবরা তাদের কাজে নিয়োজিত লোকদের সাথে হিসাব নিকাশে জড়ানোর মোটেই প্রয়োজন হচ্ছে না। নিজেই নিজের আয় ব্যয়ের উপর স্বচ্ছ ধারনা পাচ্ছেন। সেই সাথে ট্রানজিশনের সময় দেখে কখন রোগী বেশী। কখন কম। কখন বেশী সময় চেম্বারে থাকতে হবে। তারও একটি ফোরকাস্ট পাওয়া যাবে। ইনকাম ট্যাক্স ও অন্যান্য আয় ও ব্যয়ের বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকার কারণে ইনকাম ট্যাক্সের পরিদর্শকরা অযাচিত সমস্যা করতে পারবে না।

আমি ডাক্তার হলে এই ক্যাশলেস পদ্ধতিতে চলে যেতাম। আমার বন্ধু ডাক্তাররা এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে আশা করছি তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে আরো একটি আর্টিক্যাল লিখতে পারব। আমার ধারনা প্রগতিশীল ডাক্তারদের এটা পছন্দ হবে।

Friday, February 3, 2017

বন্ধু যখন বস

সৃষ্টিকর্তা যাকে যে কোন সময় রাজা বা ফকির বানাতে পারেন। তাই যে কোন সময় আমার বন্ধুদের অনেকে রাজা হবে এবং আমরা অনেকে ফকির থাকব এটাই হল জাগতিক নিয়ম। আবার আমাদের মাঝে কিছু ফকির আবার পুনরায় রাজা হবে এবং কিছু রাজা পুনরায় ফকির হবে। রাজা থেকে ফকির ও নিন্দিত হওয়ার ঘটনা আমাদের বন্ধুদের মাঝে এর মধ্যেই ঘটে গেছে। আমার এর আগের একটা লেখনী ছিল চাকুরীতে জুনিয়র র‍্যাংকে সিনিয়র বস। বন্ধু যখন বসআমার এই লেখাটির প্লট অনেক আগেই মনে মনে ছিল। চিন্তায় ছিল। লেখাটি তখনই বাজারজাত করব যেদিন আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ভিআইপি হবে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার দীর্ঘ দিনের রুমমেট বাংলাদেশের একজন ভিআইপি মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। আমার জন্য অনেক অনেক গর্বের বিষয়।
আমি আমার চাকুরী জীবনে একাধিকার আমার বন্ধুদের ঊর্ধ্বতন পদবীতে বস হিসাবে পেয়েছি। প্রথমত: বন্ধু যখন বসমোটেই সুখকর অনুভূতি বা উপভোগ্য বিষয় নয়। প্রথমত এটা থেকে মুক্ত থাকাটা সবচেয়ে নিরাপদ। একান্তই পারা না গেলে বেটার টু এনজয়এই ফর্মুলায় যেতে হবে। এটা র‍্যাংকে সিনিয়র ও চাকুরীতে জুনিয়র বসের সাথে চাকুরী করার থেকে অধিক পরিমাণ কষ্টকর ও চ্যালেঞ্জিং। প্রথম সমস্যা হল, কখন ভিআইপি মাইন্ড করে এই টেনশনে থাকতে হয়। কোন কিছু বিভ্রাট হলে বন্ধু বসের আচরণ ও দৃষ্টিতে প্রথম যে অনুভূতি পাওয়া যায় তা হল বন্ধু বলেই আমার সাথে এ ধরনের কাজ করতে পারল। সবাই যুগ যুগ থেকে এরই আর্বতে চলে আসছে। আগামী দিনগুলোতে এগুলো চলবে। কোথাও কোন ছন্দপতন হয়নি।
ধারনা হতে পারে আমি কোন হীনমন্যতায় ভুগছি। মোটেই না। হীনমন্যতা ভোগার কোন কারণ নেই। আমার মত র‍্যাংকে অনেকেই বন্ধুকে বস হিসাবে পায় নাই। আমার সৌভাগ্য আমি একাধিকবার পেয়েছি। ভবিষতে আরো পাব। এই লেখার পর আমার বন্ধুরা আমার বস হলে আমাকে হয়ত আরো সাইজ হতে হবে। ভয় নেই পিওএল বা পার্ট অব লাইফ। আমরা আমাদের অবস্থার জন্য দায়ী আর কেউ নয়। মজার বিষয় হল বন্ধুদের একজন হয়ত সবচেয়ে উপরে উঠবে। বাকীরা সিঁড়ির বিভিন্ন ধাপে থেকে যাবে। যারা উপরে আছে তাদেরও মাঝে মাঝে নীচে তাকাতে হবে ও নীচে পতিতদের খোজ নিতে হবে। নীচে ধাপে যারা আছে তাদের উপরে তাকিয়ে উপরের বন্ধুদের সন্মানটুকু জানাতে হবে।
আমি আমার অভিঞ্জতায় আমার কয়েকজন বন্ধু বসের সাথে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে চাকুরীর পদ্ধতিগুলো তুলে ধরছি:
১। দেশের একজন উপ সচিব সমকক্ষ র্মযাদার কর্মকর্তা হিসাবে দেশ ও প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত কাজটুকু সম্পূর্ণ করা। এটা করলেই বন্ধু বা জুনিয়র বসের সাথে বিরোধের ৬০ ভাগ কমে যাবে।
২। অফিসিয়াল প্রটোকলে বসকে বন্ধু বা জুনিয়র ভাবলেই বিপদ। চোখ কান বন্ধ রেখে মনে করতে হবে তিনি আমার বন্ধু নয় বা জুনিয়র নয়। তিনি বস। তার যেটুকু সন্মানটুকু প্রাপ্ত প্রয়োজনে তার চেয়ে বেশী সন্মানটা দেয়া জরুরী।
৩। বস প্রায়শই বিভিন্ন রকম অসম্পূর্ণ বা অসংলগ্ন কাজের জন্য বকা বকির সেশন করতে পারেন। তখন জুনিয়রের সামনে একই কাতারে পাতলুন উন্মুক্ত হতে পারে। বেতন নেয়ার বদলে এই পাতলুন টুকু উন্মুক্ত হওয়াটা স্বাভাবিক ধরে নিতে হবে। সিভিলেও অল্পবয়সী বস বেশী বয়সীদের কথার ম্যার প্যাচে পাতলুন খুলে। এটা চলছে এটা চলবে। বিচলিত হলে চলবে না। তবে মাত্রা অতিক্রম করলে চিন্তার বিষয়।
৪। অন্যদের সামনে বা ফরমাল সিচুয়েশনে বাংলার পরির্বতে ইংরেজি You  অনেক বেশী নিরাপদ। নাম না ধরে ডেকে অনারেবল কমান্ডারবা কমান্ডারএবং রেসপেক্টেড জেনারেলবা জেনারেলবলাটা নিরাপদ।
৫। যারা একটু মোডি বা ভাবে থাকে সেসব বন্ধু বসদের সাথে আরো ফরমাল বা সর্তক হওয়ার প্রয়োজন আছে। অন্যথায় সম্পর্ক দূর্বলতার দিকে যেতে পারে।
৬। পরিবার নিয়ে গাড়ীর সামনে বসা, সাথে বসা ও পিছে বসা নিয়ে জটিলতা হয়। সবচেয়ে ভাল হয় আলাদা গাড়ীতে যাওয়া।
৭। পত্নীদের ফরমাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বন্ধুদের স্ত্রীদের বন্ধু হিসাবে এই সময়টুকুতে ভুলে যাওয়াটা উত্তম অন্যথায় বন্ধু বস পত্নীদের মনে তকলিফ হতে পারে। কারণ স্ত্রীরা অত ফরমাল বা উদার হতে পারে না। তাই সেসব অনুষ্ঠানে সর্তকতা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন।

পরিশেষে বলব। আজ আমাদের মত উপসচিবদের জন্য সামাজিক স্ট্যাটাস শুধু কয়েকটা দিনের ব্যাপার। শীগ্রই আমরা অবসরে যাব। পুনরায় যার যার মত অন্য কাজে বা জবে ব্যস্ত হয়ে যাব। আমাদের অবসর কালীন জীবনে বন্ধুদের প্রয়োজন আরো বেশী হবে। তখন পুনরায় বসরা বন্ধুতে রূপান্তর হবেতাই সকলের সহযোগীতায় সাময়িক চ্যালেঞ্জগুলি কখনোই অপ্রীতিকর হবে না। আর অপ্রীতিকর হলে এখন কিছু বলব না। আজকের বস অবসর নিয়ে যেদিন আমার কাতারে আসবেন সেইদিন সাইজ করার ইচ্ছে রেখে আজকের সব কিছু ভুলে যাব ও আনন্দে থাকব। এখন নিজের স্বাস্থ্য ও সন্তানদের উন্নতির জন্য যুদ্ধটাই সবচেয়ে বড়। কোন “বন্ধু বস” কতটুকু ইজ্জত খসাল এটার দেখার ও বোঝার সময় আসলেই আমাদের কারো নেই।

Thursday, February 2, 2017

ডেস্কটপ ও ল্যাপটপের বিকল্প অল ইন ওয়ান পিসি


অনেক আগে থেকেই বাজারে অল ইন ওয়ান পিসি বিদ্যমান ছিল। আমি সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ব্যবহারের পর এটি সম্পর্কে লিখতে আগ্রহী হলাম। বাংলাদেশের বাজারে অনেক কোম্পানির অল ইন ওয়ান কম্পিউটার বিদ্যমান। অল ইন ওয়ান মূলত ডেস্কটপ ও ল্যাপটপের মাঝামাঝি অবস্থানে আছে। দাম ল্যাপটপের সমগোত্রীয় ও ডেস্কটপ হতে বেশী। যারা ডেস্কটপের বড় বড় সিপিইউ,তার ও অন্যান্য এক্সেসরিজের এ্যারেজমেন্ট বিরক্ত। আবার ল্যাপটপ ছোট ছোট লাগছে। তাদের জন্য অল ইন ওয়ান একটি চমৎকার বিকল্প। স্মার্ট ফোনের স্মার্ট ব্যবহারে দিনকে দিন আমাদের মাঝে ল্যাপটপের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। আমরা ল্যাপটপ আর কোলে ব্যবহার করি না। তার কারণ স্মার্ট ফোন ও ট্যাবলেট এর কারণে ল্যাপ বা কোলে রেখে পিসি ব্যবহারের দিন শেষ। ল্যাপটপের সর্বদা একটা ডিসপ্লের সাইজ লিমিটেশন আছে। আবার ডেস্কটপের সিপিইউ ও আনুষাংগিক একটা বড় সড় লাগেজ। যারা আমার মত ঘন ঘন স্থান ত্যাগ করেন তার শুধুমাত্র স্মার্ট ফোনের পাশাপাশি অল ইন ওয়ান পিসি রাখলেই সব কাজ করতে পারবেন। আমি সাধারণত কোন স্থানে তিনদিনের বেশী থাকলে ল্যাপটপ নেয়ার তাগিদ অনুভব করতাম। তার একমাত্র কারণ আমরা ব্রাউজিং এর কাজ আজকাল মোবাইলেই করে ফেলি। ভাইবার, টুইটার, আনুষঙ্গিক অ্যাপ ও ফেইস বুক ইত্যাদিও আমরা মোবাইলে করে ফেলি। তবে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের কি কাজ বাকী থাকল। সেটা হল সেই কাজগুলি যা কিনা বড় স্ক্রিনে করতে হয়। লেখালেখি বা টাইপিং।প্রেজেন্টেশন তৈরি। ভিডিও দেখা। টিভি কার্ডের মাধ্যমে প্রয়োজনে টিভি দেখা। আমরা মোবাইল বা ট্যাবে যে কাজগুলি করতে না পারি তা আমরা অল ইন ওয়ান পিসিতে করতে পারছি।
আমি আমার এক স্থান থেকে অপর স্থানে সাময়িক ডিউটিতে যাওয়ার সময় অল ইন ওয়ান পিসিটি কাগজের বাক্সে ভরে ল্যাপটপের মত করে নিয়ে চললাম। আমার নতুন স্থানের রেস্ট হাউজের রুমে রিডিং টেবিলের উপর এটি স্থাপন করলাম। বেশ ভাল লাগল। অল ইন ওয়ানের উপযোগী ব্যাগ কিনে নিলে বা বানিয়ে নিলে এটা ল্যাপটপ বহন করার মতই সহজ। শুধুমাত্র এ্যাডাপটারটা খুলে নিলেই হল।তারপর ব্যাগে নিয়ে সহজেই ক্যারি করা যায়। কীবোর্ড ও মাউস আলাদা। ইনপুট ডিভাইস দুইটি আবার ওয়্যারলেস। এতে টেবিলে তারের ছড়াছড়ি নেই। ল্যাপটপের কীবোর্ড ছোট ও টাচ বাটন যথেষ্ট ইউজার ফ্রেন্ডলি নয়। অল ইন ওয়ান পিসিতে বড় সাইজ কীবোর্ড ও মাউস দিয়ে অনেক সাবলীল ভাবে কাজ করা যায়। ল্যাপটপ ও ডেক্সটপের মাঝে অল ইন ওয়ান পিসি একটা চমৎকার কম্বিনেশন।
এ ধরনের পিসিতে ল্যাপটপের মত চার্জার আছে। ল্যাপটপের মতোই ডিসি সকেট দিয়ে লাগাতে হয়। ইউনিভার্সাল চার্জার। ১০০-২৪০ ভোল্ট এসি ইনপুট। আউটপুট ২.৩৭ এ্যাম্পিয়ার ১৯ ভোল্ট ডিসি। এটা ল্যাপটপের মত ৪/৫ ঘণ্টা ব্যাকআপ না দিলেও ডেস্কটপের ইউপিএস মত ৩০ মিনিট ব্যাকআপ দেয়। এটা ফাইল সেভ করার জন্য যথেষ্ট। এভাবে পাওয়ার ব্যাকআপ থাকায় সবচেয়ে বড় লাভ হল ডেস্কটপের মত কোথাও নিবে কোন ইউপিএস সাথে নিতে হচ্ছে না।
অনেক ল্যাপটপে টাচ স্ক্রিন নাই। অল ইন ওয়ান একটু বেশী বাজেটে গেলে টাচ স্ক্রীন পাওয়া যায়। টাচ স্ক্রিন বাচ্চাদের জন্য বেশ মজাদার হবে। তবে হাই কনফিগারের গেমিং পিসি হিসাবে এটা ভাল হবে না। যারা অফিশিয়াল কাজ টাচ স্ক্রিন মোবাইলের বাইরে করতে হয় তাদের জন্য অল ইন ওয়ান বেশ কাজের। যারা বেশী বেশী ঘোরাঘুরি করেন তাদের জন্যও এটা বেশ ভাল একটি ব্যবস্থা।
বর্তমানে এগুলোর দাম ল্যাপটপ থেকে কিছুটা কম। ছোট নোটবুক বা নেট পিসি হতে বেশী দামী। অনেকগুলোতে ডিভিডিরম আছে। অনেকগুলোতে নাই। আজকাল ইন্টারনেটের ক্লাউড স্টোরেজ, পেন ড্রাইভ ও মোবাইল ড্রাইভ ব্যবহারের কারণে ডিভিডি ড্রাইভ কেনার প্রয়োজন নেই। এছাড়া নানা রকম ক্লাউড স্টোরেজ থাকার কারণে এখন আর অত বেশী পরিমাণে স্টোরেজের প্রয়োজন হয় না। অল ইন ওয়ান তাই মধ্যম দামের টাচ স্ক্রিন, ডিভিডি ড্রাইভ ছাড়া ও মাঝারী মানের স্টোরেজের হলেই ভাল।

পরিশেষে বলব অল ইন ওয়ান পিসি আমাদের ল্যাপটপ ও ডেস্কটপের দারুন বিকল্প হতে পারে যা আমাদের পিসি ব্যবহারে স্বস্তি দিবে।