আমি একটা সরকারী ক্যাম্পাসে চাকুরী কালীন সময়ে দেখলাম। ক্যাম্পাসে প্রচুর ফল ধরে
কিন্তু সেই ফল গাছের উচ্চতা বেশী হওয়ায় ফল পাড়ার জন্য শ্রমিক পাওয়া যায় না। একটা জামগাছ সাধারণত ৫০
হতে ৮০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় দেখা যায়। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় হল গাছে হাইট ১৮-২০ ফুটের অধিক হলেই সে সব গাছে ফল হারবেস্ট করার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ
দেখা যায়। বড় বড় গাছের ফল বড় হলে হারবেস্ট করা যায়। কিন্তু ছোট ও নরম ফল, গাছ থেকে পারা বা হারভেস্ট করা অত্যন্ত দূরহ কাজ। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের
মত মধ্যম আয়ের দেশেও পল্ট্রি মুরগী, পল্ট্রি
ডিম, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছ ইত্যাদির মূল্যমান কম হওয়ায় মানুষ
এই সবের উপর নির্ভরশীল হয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ করে মানুষ বেচে আছে। খাবারের প্রাচুর্য্যতার
কারণে মানুষ ওভার ওয়েট হয়ে যাচ্ছে। সচ্ছল পরিবারের বাচ্চারা ধীরে ধীরে ওবিসিটি রোগে আক্রান্ত
হচ্ছে। এর থেকে মুক্তির উপায় আমাদের বের করতে হবে।
আমাদের শর্করা ও ফ্যাট কমিয়ে অনেক ফল খেতে হবে। তাহলে উপায়। ফলের মধ্যে কলা স্বল্পমূল্যে
পাওয়া যায় ও ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। কলা শক্তির আধার ও ফাইবার আছে। তবে ডায়াবেটিস ও ওভার ওয়েটের
জন্য ভাল খাবার নয়। তাই টক জাতীয় অপ্রচলিত ফলের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে জামের মৌসুমে
জাম পাওয়া যায় তবে অধিক পরিমাণে নয়। অপ্রচলিত ও মূল্য বেশী। জাম চাষের গাছ বড় হয়। ফল হয় ছোট। গাছ থেকে পাড়তে অনেক অসুবিধা। এ কারণে এই উপকারী ফলটি
তেমন উৎপাদন হচ্ছে না। আর যা উৎপাদন হচ্ছে তার আবার অর্ধেকের বেশী অপচয় হয়ে
যায় গাছ থেকে পাড়তে গিয়ে। সম্পূর্ণ না পাকলে এ ফল খাওয়া যায় না। আবার সম্পূর্ণ পাকা ফল
ঝাঁকি দিয়ে পারা যায় না। ফল উপর থেকে পড়ে নষ্ট হয়। ঝাকি দিয়ে জালে ফেললেও
নষ্ট হয়। জামের থোকা থেকে ব্যাগ নিয়ে দেখে দেখে পেরে নেয়াটা সবচেয়ে
ভাল ব্যবস্থা। কিন্তু এত উপরে নরম ডাল সেটাই বিপদ।
তাহলে উপায় কি? সহজ উপায় হল জাম গাছটি ছোট
বানিয়ে ফেলুন। আমি জাম চাষ নিয়ে পড়তে গিয়ে ইন্টারনেটে এক মজার তথ্য
পাই। আর তা হল জাম গাছ প্রতি বছর কেটে ও ছেঁটে ১৮ থেকে ২০ ফুটের মধ্যে রাখলে ১০/১২ ফুট উঁচু এলুমিনিয়ামের ইলেকট্রিক কাজ করার মই বা কাঠের মই
ব্যবহার করে সহজেই গাছ থেকে হারভেস্ট করা যাবে।
একটা ওয়েবসাইট:
http://m.thehindu.com/sci-tech/a-short-variety-jamun-cultivation-fetches-good-rewards/article6104923.ece থেকে জাম চাষ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ
তথ্য পাওয়া যায়। তার মধ্যে জাম গাছের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি প্রধান
কাজ।
“The farmer,
through constant pruning for many years, has been successful in controlling the
height of the trees to 18-20 feet.
“I tried to
control the height of the tree by pruning them regularly because harvesting the
fruits was proving to be difficult due to the height of the trees. The branches
needed to be shaken well for the ripe fruits to fall down.
“While doing
so either the branches broke or the fruits got damaged while falling on the
ground and did not fetch a good price,” says Mr. Jayakumar.
The farmer
purchased about 80 seedlings from a nursery in Andhra Pradesh and planted them
at a spacing of 24 feet (8m X 8m). The trees were irrigated through drip lines.
After four
years, flowering started and fruits set and yield was about 2 kg from each
tree. Gradually the yield increased and at the age of eight years 40- 50 kg of
fruits per tree were harvested. Now the trees are in the11th year of planting
and the farmer is able to harvest 60 kg of fruits from each tree.”
জাম ছাড়াও আরো অনেক গাছ হারভেস্টিং ও অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছোট রাখাই সমীচীন। মাঝে মাঝে দেখা যায় বড়ুই
বা কুল গাছ একদম গোঁড়া থেকেই কেটে ফেলা হয়। পরে নতুন গজানো ডাল পালায় নতুন ফল ধরে। জমির চাষ করা পেয়ারা গাছও
ছেঁটে রাখতে দেখা যায়। অনেকে আবার আম গাছও ছোট করে রাখেন বিশেষ করে আম্রপালি
আম গাছ ছোট করে রাখতে দেখা যায়।
আমি কুষ্টিয়ার মিরপুর বিজিবিতে চাকুরী কালীন সময়ে ২০১৬ সালে সেখানকার কৃষি অফিসারের
পরামর্শে বেশ কিছু জাম গাছ ৫/৬ ফুট উচ্চতায় কেটে
দেই। পরবর্তীতে সেসব গাছের ডালপালা হলে সবোর্চ্চ হাইট ১৮-২০ ফুটে সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেই। এমনকি আমরা যেসব আম গাছে
ভাল মানের আম নেই সেই সব গাছ দুই তিন ফুট রেখে কেটে ফেলার পরিকল্পনা নেই। সেসব
কাটা গাছে আমরা নতুন আমের কুশি বের হলে তাতে ভাল জাতের কলম দেয়ার ব্যবস্থা করি। গাছের একেক ডালে একেক ধরনের
আম এবং একেক সময়ের আম চাষ করে একই গাছে মজাদার এক বৈচিত্র্য আনা যায়।
পরিশেষে বলব ফলন বাড়াতে ও ফল আহরণের ঝামেলা কমাতে সমস্ত ফলের গাছ ১৮-২০ ফুটের মধ্যে রাখুন। এটাই হবে একটা লাভজনক প্রক্রিয়া।