Pages

Thursday, July 28, 2016

বাগানের উৎপাদিত দ্রব্যের আহরণ জনিত অপচয়

আমি একটা সরকারী ক্যাম্পাসে চাকুরী কালীন সময়ে দেখলাম। ক্যাম্পাসে প্রচুর ফল ধরে কিন্তু সেই ফল গাছের উচ্চতা বেশী হওয়ায় ফল পাড়ার জন্য শ্রমিক পাওয়া যায় না। একটা জামগাছ সাধারণত ৫০ হতে ৮০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় দেখা যায়। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় হল গাছে হাইট ১৮-২০ ফুটের অধিক হলেই সে সব গাছে ফল হারবেস্ট করার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ দেখা যায়। বড় বড় গাছের ফল বড় হলে হারবেস্ট করা যায়। কিন্তু ছোট ও নরম ফল, গাছ থেকে পারা বা হারভেস্ট করা অত্যন্ত দূরহ কাজ। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মত মধ্যম আয়ের দেশেও পল্ট্রি মুরগী, পল্ট্রি ডিম, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছ ইত্যাদির মূল্যমান কম হওয়ায় মানুষ এই সবের উপর নির্ভরশীল হয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ করে মানুষ বেচে আছে। খাবারের প্রাচুর্য্যতার কারণে মানুষ ওভার ওয়েট হয়ে যাচ্ছে। সচ্ছল পরিবারের বাচ্চারা ধীরে ধীরে ওবিসিটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর থেকে মুক্তির উপায় আমাদের বের করতে হবে।
আমাদের শর্করা ও ফ্যাট কমিয়ে অনেক ফল খেতে হবে। তাহলে উপায়। ফলের মধ্যে কলা স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায় ও ব্যাপক উৎপাদন হচ্ছে। কলা শক্তির আধার ও ফাইবার আছে। তবে ডায়াবেটিস ও ওভার ওয়েটের জন্য ভাল খাবার নয়। তাই টক জাতীয় অপ্রচলিত ফলের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে জামের মৌসুমে জাম পাওয়া যায় তবে অধিক পরিমাণে নয়। অপ্রচলিত ও মূল্য বেশী। জাম চাষের গাছ বড় হয়। ফল হয় ছোট। গাছ থেকে পাড়তে অনেক অসুবিধা। এ কারণে এই উপকারী ফলটি তেমন উৎপাদন হচ্ছে না। আর যা উৎপাদন হচ্ছে তার আবার অর্ধেকের বেশী অপচয় হয়ে যায় গাছ থেকে পাড়তে গিয়ে। সম্পূর্ণ না পাকলে এ ফল খাওয়া যায় না। আবার সম্পূর্ণ পাকা ফল ঝাঁকি দিয়ে পারা যায় না। ফল উপর থেকে পড়ে নষ্ট হয়। ঝাকি দিয়ে জালে ফেললেও নষ্ট হয়। জামের থোকা থেকে ব্যাগ নিয়ে দেখে দেখে পেরে নেয়াটা সবচেয়ে ভাল ব্যবস্থা। কিন্তু এত উপরে নরম ডাল সেটাই বিপদ।

তাহলে উপায় কি? সহজ উপায় হল জাম গাছটি ছোট বানিয়ে ফেলুন। আমি জাম চাষ নিয়ে পড়তে গিয়ে ইন্টারনেটে এক মজার তথ্য পাই। আর তা হল জাম গাছ প্রতি বছর কেটে ও ছেঁটে ১৮ থেকে ২০ ফুটের মধ্যে রাখলে ১০/১২ ফুট উঁচু এলুমিনিয়ামের  ইলেকট্রিক কাজ করার মই বা কাঠের মই ব্যবহার করে সহজেই গাছ থেকে হারভেস্ট করা যাবে।


একটা ওয়েবসাইট:
http://m.thehindu.com/sci-tech/a-short-variety-jamun-cultivation-fetches-good-rewards/article6104923.ece  থেকে  জাম চাষ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তার মধ্যে জাম গাছের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি প্রধান কাজ।
“The farmer, through constant pruning for many years, has been successful in controlling the height of the trees to 18-20 feet.
“I tried to control the height of the tree by pruning them regularly because harvesting the fruits was proving to be difficult due to the height of the trees. The branches needed to be shaken well for the ripe fruits to fall down.
“While doing so either the branches broke or the fruits got damaged while falling on the ground and did not fetch a good price,” says Mr. Jayakumar.
The farmer purchased about 80 seedlings from a nursery in Andhra Pradesh and planted them at a spacing of 24 feet (8m X 8m). The trees were irrigated through drip lines.
After four years, flowering started and fruits set and yield was about 2 kg from each tree. Gradually the yield increased and at the age of eight years 40- 50 kg of fruits per tree were harvested. Now the trees are in the11th year of planting and the farmer is able to harvest 60 kg of fruits from each tree.”

জাম ছাড়াও আরো অনেক গাছ হারভেস্টিং ও অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছোট রাখাই সমীচীন। মাঝে মাঝে দেখা যায় বড়ুই বা কুল গাছ একদম গোঁড়া থেকেই কেটে ফেলা হয়। পরে নতুন গজানো ডাল পালায় নতুন ফল ধরে। জমির চাষ করা পেয়ারা গাছও ছেঁটে রাখতে দেখা যায়। অনেকে আবার আম গাছও ছোট করে রাখেন বিশেষ করে আম্রপালি আম গাছ ছোট করে রাখতে দেখা যায়।
আমি কুষ্টিয়ার মিরপুর বিজিবিতে চাকুরী কালীন সময়ে ২০১৬ সালে সেখানকার কৃষি অফিসারের পরামর্শে বেশ কিছু জাম গাছ ৫/৬ ফুট উচ্চতায় কেটে দেই। পরবর্তীতে সেসব গাছের ডালপালা হলে সবোর্চ্চ হাইট ১৮-২০ ফুটে সীমাবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেই। এমনকি আমরা যেসব আম গাছে ভাল মানের আম নেই সেই সব গাছ দুই তিন ফুট রেখে কেটে ফেলার পরিকল্পনা নেই।  সেসব কাটা গাছে আমরা নতুন আমের কুশি বের হলে তাতে ভাল জাতের কলম দেয়ার ব্যবস্থা করি। গাছের একেক ডালে একেক ধরনের আম এবং একেক সময়ের আম চাষ করে একই গাছে মজাদার এক বৈচিত্র্য আনা যায়।
পরিশেষে বলব ফলন বাড়াতে ও ফল আহরণের ঝামেলা কমাতে সমস্ত ফলের গাছ ১৮-২০ ফুটের মধ্যে রাখুন। এটাই হবে একটা লাভজনক প্রক্রিয়া।

Thursday, July 21, 2016

মোবাইলের অটোমেটিক্যালি রেকর্ডিং

আমি একদিন আমার সহকর্মী নতুন চাকুরীর ইয়ং অফিসারের সাথে আমাদের অধীনস্থ কয়েকজনের মিথ্যা বলা নিয়ে কথা বলছিলাম।আমি সেই ইয়ং কর্মকর্তাকে আফসোসের সাথে জানালাম, অনেককে দেখি সাধারণ ভুল ভ্রান্তিতে মিথ্যা বলে ভুল ভ্রান্তি ঢাকার চেষ্টা করে। এই প্রসঙ্গে আমার নবাগত সহকর্মী কর্মকর্তা আমার কথার সাপোর্ট করে একটা ঘটনা বলল। সে কয়েকদিন আগে তার অধীনস্থকে একটি কাজ করতে বলেছিল। পরে কাজটি পর্যবেক্ষণ করে কিছু ভুল পায়। তখন আমার এই সহকর্মীটি সেই ব্যক্তির কাছে জানতে চায় আমি আপনাকে মোবাইলে যেভাবে কাজটি বলেছি আপনি সেই ভাবে কাজটি করেননি। আমি আপনাকে মোবাইলে দুইবার কাজটির বর্ণনা দিয়েছি আপনি কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি বাদ দিয়েছেন। যেমন গেইট বানাননি। বেলুন দিয়ে সাজানো হয়নি। তখন সেই ব্যক্তি বলল আপনি তা বলেননি। তখন ইয়ং কর্মকর্তা বলল, ঠিক আছে আপনি এগুলো এখুনি ব্যবস্থা করে ফেলুন। সেই ইয়ং অফিসার বলল, অতঃপর আমি সেই ব্যক্তির সাথে কথোপকথনের আমার মোবাইলের রেকর্ডটি শুনলাম। সেখানে পরিষ্কার ভাবে তার সাথে অনুষ্ঠানের জন্য গেইট তৈরি ও বেলুন লাগানোর কথা বলেছি। অথচ সে অস্বীকার করল। আমার একবার মনে হল তাকে ডেকে আমার মোবাইলের রেকর্ডটি শুনাই। পরে মনে হল আর ঝামেলা না করে একে দিয়ে ভুল কাজগুলো আদায় করে নেই।

আমি গালে হাত দিয়ে আমার সামনে বসা ইয়ং অফিসারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার ২৫ বছর চাকুরী শেষ আর এক বছর চাকুরীর কর্মকর্তার কাছে এটা কি জানলাম। আমি পুনরায় তার কাছে জানতে চাইলাম তুমি কি মোবাইলে সব কথা রেকর্ড কর। সে বলল, জী স্যার। কিভাবে? গুগল প্লে স্টোরে এ ধরনের অ্যাপস আছে। আপনার মোবাইলে কোন কলে আসলে বা আপনি কল করলে অটোমেটিক রেকর্ড হবে। আপনার কথা বলায় কোন ডিস্টার্ব হবে না। আপনি প্রয়োজনে পুনরায় শুনতে পারেন বা মাঝে মাঝে মুছে মোবাইলের মেমোরি খালী করে রাখবেন। আমি হতাশ হয়ে বললাম আমি তোমাকে মাঝে মাঝে ঝেড়ে বকাঝকা দিয়েছি সেগুলোও কি তুমি রেকর্ড করেছ। সবই রেকর্ড হয়েছে স্যার, কিন্তু আপনি তো আমাকে ভালর জন্য আমি বড় ভাই হিসাবে আমি মনে করি। আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম। মনে হল এখন সম্পর্ক ভাল তাই বড় ভাই কোন কারণে ঝামেলা হলে এই ব্যক্তি তো রেকর্ড করা কথা দিয়ে জায়গা মত বসিয়ে দিবে। তার পর তাকে আমার অফিসিয়াল এ্যনরয়েড মোবাইলে সফটওয়্যারটি দিতে বললাম। সেই কর্মকর্তা জানালো এটাতে তার বেশ কিছু লাভ হচ্ছে। যেমন উপরস্থ কর্মকর্তাদের কারো কোন নির্দেশনা সঠিক ভাবে বুঝতে না পাড়লে রেকর্ডটি শুনে নিলেই হল পুনরায় নির্দেশনা প্রদানকারী কর্মকর্তাকে কল করার প্রয়োজন হয় না।
আমার মোবাইলে দেয়ার পর দেখলাম ভালই কাজ করছে। একটাই ঝামেলা তা হল মাঝে মাঝে মুছে দিতে হয়। নয়ত মোবাইলের স্টোরেজ মেমোরি ভর্তি করে মোবাইলকে স্লো করে দিবে।
এখন আর্মি, নেভী, এয়ারফোর্স ও বিজিবি প্রায় সবস্থানেই নারীরা কর্মরত। তাদের প্রায়শই অকুপেশনাল হেজার্ড ফেস করতে হয়। সেসমস্ত হেজার্ড থেকে বাচতে তারা মোবাইল রেকর্ডিং অ্যাপসটি ব্যবহার করতে পারে। তাদেরকে ডিস্টার্ব করলে এটা কাজে দিতে পারে। আসলে এর অনেক ভাল দিক আছে। মন্দ দিক হল ট্রাষ্ট। ধীরে ধীরে ট্রাস্টের সংকট দেখা দিবে। যা কিনা কর্ম পরিবেশ ভাল থাকবে না। আন্তরিকতা নষ্ট হবে।
আমার মোবাইলের অ্যাপসটি দিয়ে আমার একটা লাভ হয়েছে আর তা হল মোবাইলে অধীনস্থদের কাউকে আর বকা দেই না। অনেক ঠাণ্ডা ভাবে চিন্তা করে করে শক্ত শক্ত কথা বলি। যেন সেসব কথা ফাঁস হলে সন্মান হানি না হয়। তাই তো বলা যায়, ভাবিয়া বলিও কথা, বলিয়া ভাবিও না। । এমনিতেই অনেকে অফিসিয়াল ফোনে সর্তকতার সাথে কথা বলেন । কারণ মোবাইলের সার্ভারেও কথা রেকর্ড করা যায়।
 আগের মত রাগও করি না। রাগ হলে মনে করি আমার বকা গালিগালাজ রেকর্ড করে জায়গা মত ছেড়ে দিবে। এত সহজ ব্যবস্থা হাতে হাতে থাকতে নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণের এটা একটা ভাল ব্যবস্থা। ক্রোধ কখনোই ভাল না। অনেক সময় অনেকে ভুল করে সাধারণত বলে থাকে মোবাইলে কথা বুঝতে পারিনি তাই ভুল হয়েছে। পুনরায় যখন জানতে চাওয়া হয়, না বুঝে থাকলে পুনরায় কেন পরিষ্কার ভাবে বুঝে নেননি। তখন আর কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। যারা মোবাইলে কম বুঝে তাদের সর্তক করার জন্য মোবাইল রেকর্ডিং উত্তম একটি ব্যবস্থা।
আর যাই হোক আমি ট্রাস্ট নষ্ট হওয়ার পর এই ব্যবস্থাটি ভাল। তা বলব না। তবে আমার কাছে মনে হয় যারা প্রতিনিয়ত অকুপেশনাল হেজার্ড ফেস করেন  তারা কল রেকর্ডিং পদ্ধতিটি গ্রহণ করেত পারেন। পরিশেষ আমি বলব আমরা সব সময় সচেতন হয়ে প্রযুক্তির ভাল দিকটাই ব্যবহার করব সেটাই হবে সকলের কাম্য

Thursday, July 14, 2016

নদী ভাঙ্গন এলাকায় প্রি-ফ্রেবরিকেটেড স্থাপনার উত্তম ব্যবহার


নির্মাণের দুই বছরের মধ্যেই কমিউনিটি ক্লিনিক নদী গর্ভে। এ ধরনের খবর আমরা মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখি। তখন দু:খ লাগে নদী ভাঙ্গবে জেনে কেন এ ধরনের পরিকল্পনা ও স্থাপনা তৈরি। নদী ভাঙ্গনের নিকটবর্তী এলাকায় সাধারণত মানুষ পাকা বাড়ীঘর তৈরি করে না। তারা সাধারণত টিন দিয়ে অস্থায়ী বাড়িঘর তৈরী করে। ব্যক্তি মালিকানার কোন পাকা বাড়ী ঘর সাধারণত দুই বছরে নদীতে যায় না। ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ২০/৩০ বছর পর নদী গর্ভে যায়। এদিকে নদীতে বাড়িঘর যাচ্ছে অন্যদিকে চর পড়ছে। তবে যারা নির্মাণ করেছেন তারা সর্তক হলে নদী থেকে যথেষ্ট দুরে নির্মাণ করলে ১৬ লক্ষ টাকায় নির্মিত দুইতলা কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের দুই বছরের মধ্যে নদী গর্ভে যেত না।
কুষ্টিয়ায় চাকুরীর সুবাদে দৌলতপুর চর এলাকা দেখার সুযোগ হয়। চর চিলমারী ও চিলমারী এলাকায় বিজিবি ক্যাম্প আর স্কুল ছাড়া পাকা স্থাপনা নাই। ওখানকার লোকজন টিনের ঘরবাড়ী তৈরি করে থাকে। কারণ বন্যা এলে উই স্থান ছেড়ে তারা চলে আসে। আবার পদ্মা নদী ভাঙ্গনেও কোন সমস্যা নেই।
নদী ভাঙ্গন এলাকায় জেনে শুনে পাকা স্থাপনা করা ভুল বলব না এটা হল অপরাধ। নদী ভাঙ্গন এলাকায় সরকারী সমস্ত স্থাপনা অস্থায়ী টিন শেডে তৈরি হতে পারে । আর ভাঙ্গন ও বন্যা দুইটির ভয় থাকলে সেসব স্থাপনা হবে কংক্রিটের খুঁটির উপর মাচা করে।
সরকারী স্থাপনা সুন্দর ছিমছাম ও হাইজেনিক করতে হলে চমৎকার একটা ব্যবস্থা আছে আর তা হল প্রি-ফেব্রিকেটেড(প্রিফেব) বাসস্থান। জাতি সংঘের শান্তি রক্ষী মিশনে দেখেছি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে প্রিফেব সিস্টেমে। প্রিফেবের স্যান্ডউইচ প্যানেল অত্যন্ত সুন্দর ও হাইজেনিক। স্যান্ডউইচ প্যানেলের মেশিন ফার্নিশ রং সুন্দর ও দীর্ঘদিন টেকসই হয়। সাধারণত জাতিসংঘে প্রিফ্রেব হাউজের আয়ুষ্কাল দশ বছর ধরা হয়। বাস্তবে এগুলি ২০/২৫ বছরও টিকে যায়।


নদী ভাঙ্গন এলাকায় কম খরচে সরকারী স্থাপনা প্রিফ্রেব হাউজ তৈরি করা যায়। এই প্রিফেব হাউজগুলি নদী ভাঙ্গন শুরু হলে ভাঙ্গন এলাকা থেকে ভিতরের দিকে স্থানান্তর করা যায়। এতে পুরাতন স্থাপনা ধ্বংস হয়ে নতুন স্থাপনা পুনরায় তৈরি করার বিশাল একটা ক্ষয়ক্ষতি থেকে সরকারী সংস্থা গুলো রক্ষা পাবে। শুধুমাত্র ভাঙ্গনের আগে প্রিফ্রেবগুলো খুলে স্থানান্তর করে নিলেই চলবে। এমন কি বেশী পুরাতন হলে সেগুলো নিলামে বিক্রয় করে নতুন করে তৈরি করে নিলেই চলবে। তবে প্রিফেবগুলো দালান হতে গরম বেশী লাগতে পারে। তার জন্য এসি বা ফ্যানের ব্যবস্থা রাখলে ভাল হবে।
বাংলাদেশে এখন বেশ কিছু সংস্থা প্রিফেব বাসস্থান তৈরি শুরু করেছে। যদি প্রিফ্রেব বাসস্থানের সরকারী চাহিদা তৈরি হয় তাহলে বাংলাদেশে স্যান্ডউইচ প্যানেলের ব্যাপক বাজার তৈরি হবে। আর বাজার বড় হলে এর  মূল্যও কমে আসবে। স্যান্ডউইচ প্যানেলে সাধারণত টিন শেড ঘর থেকে আনুমানিক দ্বিগুণ দাম পড়বে ধারনা করা যায় আর দালান থেকে ৩৫-৪০% খরচ কম পড়বে। প্রিফেব হাউজের স্থানান্তরিত করতে পারার গুনটির জন্য এটাকে দীর্ঘ মেয়াদি আরো সাশ্রয়ী বলা যাবে। দুর্গম এলাকায় ইট বালি বহন করে স্থাপনা তৈরি করার খরচ থেকে কম খরচে ও দ্রুত করা যায়। একটা ২০০০ মিটার স্থাপনা টিন দিয়ে করতে যাবে দুইমাস। ইটের গাঁথুনি ও কংক্রিট দিয়ে তৈরি করতে করতে লাগবে ছয় মাস। অথচ একমাসের কম সময়ে প্রিফ্রেব হাউজ তৈরি করা যাবে।

যে কোন স্থানে দ্রুত মান সম্পন্ন সরকারী স্থাপনা তৈরি করতে প্রিফেব হাউজের তুলনা মেলা ভার। জাতি সংঘের মোতায়েন এলাকায় প্রথম তারা স্থাপন করে শক্ত প্লাস্টিকের বড় বড় তাঁবু। এর ফ্রেমগুলো এলুমিনিয়ামের, এর পর তারা স্থাপন করে প্রিফ্রেব হাউজ। তারপর আরো বেশী দীর্ঘ মেয়াদি হলে তারা স্থাপন করে পাকা দালান। তাদের এ ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ সরকার চর, নদী ভাঙ্গন এলাকায় এ ধরনের ব্যবস্থায় যেতে পারেন। এতে সরকারী অর্থ অপচয় কম হবে। আমাদেরও দেখতে হবে না দুই বছরের মধ্যে সরকারী স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন। আমরা সকলে সচেতন হলে সবার ও দেশের অনেক উন্নতি হবে।

Thursday, July 7, 2016

“লেট হয়ে গেল”এ এক অদ্ভুত টেনশন

আমার মাথায় সব সময় একটা ঘড়ি চলতে থাকে। হাতে আমি ঘড়ি পড়ি না। কিন্তু মাথার এ ঘড়িটা বড়ই যাতনা করে। একদম ছোট থেকেই আমার এ অভ্যাসটা আমাকে মানুষিক যাতনা দিচ্ছে। অভ্যাসটা হল যদি লেট হয়। আমার এ অভ্যাসটা চাকুরীর এ বয়সে মোটেই শোভনীয় নয়। দীর্ঘ ২৫ বছর চাকুরীতে অনেক হিসাব কিতাবের উর্ধ্বে চলে এসেছি। কারণ এখন চাকুরীতে হারানোরও কিছু নেই পাওয়ারও কিছু নেই। তবুও একটা অভ্যাস। সেটা হল কোথাও যেতে হলে অনেক আগে প্রস্তুত হয়ে বসে থাকা আর তা হল। যদি লেট হয়”, যদি লেট হয় আমার কারণে আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের মাঝেও সংক্রামিত হয়েছে। একদিন আমার স্ত্রী একটা প্রোগ্রামে ১১টায় যাবে। আমি ১০টায় তাকে তাড়া দিচ্ছি এই রেডি হচ্ছ না কেন। আমার স্ত্রী স্বাভাবিকভাবেই রেগে আগুন। আমার সময় হলেই আমি রেডি হব। যেহেতু শাড়ী পড়ছি না আমার তাড়া নেই। তারপর তাকে দেখলাম যথা সময়ে হাজির হতে। তবে আমার পরিবারের সদস্যরা ধীরে ধীরে আমার আবেশে আবিষ্ট হয়ে এখন কোথাও যাওয়ার এক ঘণ্টা আগেই প্রস্তুত হয়ে বসে থাকে। মাঝে মাঝে এমন হয় আমি নিজে কোন সমাবেশে সবচেয়ে সিনিয়র, অথচ আমি নিজেই পাঁচ-দশ মিনিট আগে গিয়ে হাজির হচ্ছি। আমার লেট হওয়ার অহেতুক টেনশনটা অত্যন্ত বিরক্তিকর।
আমি অফিসে যাওয়ার জন্য আধঘণ্টা/একঘণ্টা আগে রেডি হয়ে বসে থাকি। বসে বসে টিভি দেখি নয়ত ক্লার্কদের আসার আগেই অফিসে হাজির হয়ে ইন্টারনেটে পত্রিকা পড়তে থাকি। অফিসে আগে এসে লাভ হয় না। সাধারণত অনেক বস নিজের সময় মত আসেন আর নিজের সময় মত দেরি করে অফিস ছাড়েন। এতে আমাকে যে বিপদে পড়তে হয় তা হল অভ্যাসগত ভাবে আগে অফিসে আসা আর অন্যের ইচ্ছায় দেরীতে ফেরা। অফিস থেকে ফিরতেও আরেক বিপদ এখানেও ঘড়ির অফিস শেষের টাইমটা মাথায় ঘুরতে থাকে। মাথার ভিতর হাতুড়ি পেটাতে থাকে টাইম শেষ, টাইম শেষ। কিন্তু বসের তো আর টাইম শেষ হয় না। তাই লেট হওয়ার ভয়ে আগে আসা সময় শেষের পরে যাওয়া একটা যাতনার সৃষ্টি করে।
লেট যেন না হয়এ ধরনের মানসিক টেনশনে আরো কিছু কাজ আমার করতে হয়। সমস্ত পোশাক পরিচ্ছদ পূর্বে সাজিয়ে রাখা। চশমা, মোবাইল, নোটবুক, ল্যাপটপ সব এক জায়গায় আগের রাতে গুছিয়ে রাখা। এতে একটা আরাম হয়। সকলে রিলাক্স ও ফুরফুরে থাকা যায়। তার পর ঢিলা ঢালা ভাবে রেডি হয়ে টাইমের আগে গন্তব্যে হাজির হওয়া যায়। আবার কোথাও গাড়ীতে গেলে আর এক সমস্যা হয়। ড্রাইভারকে যেই টাইম দেই তার কমপক্ষে পাঁচ দশ মিনিট আগে আমার প্রস্তুত হওয়া চাই। আমি প্রস্তুত না অথচ ড্রাইভার হাজির হয়েছে, এটা আমাকে একটা অস্বস্থিতে ফেলে, অথচ তার কোন প্রয়োজন নেই। কর্তা ব্যক্তি হিসাবে কর্তার জন্য চালক বসে অপেক্ষা করবে এটাই স্বাভাবিক। অথচ এই স্বাভাবিকতাই আমি আমার জন্য স্বস্থিদায়ক কখনোই করতে পারিনি। তাই ড্রাইভারের কাছে লেট হওয়ার চিন্তাটাও প্রায়শই অদ্ভুতভাবে চাপ সৃষ্টি করে। আমার মত অদ্ভুত রোগে অনেকেই আক্রান্ত। তবে এতে মাঝে মাঝে তাড়াহুড়ো বা হুরোহুরি না করার কারণে ধীর স্থির ভাবে সমস্ত কাজ করা যায়। আগে থেকে কাপড় চোপড় সবকিছু গুছিয়ে রাখার মানসিক চাপ অনুভব করার কারণে পরে রিলাক্স থাকা যায়।
একবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবিতে চাকুরীর সময় হুট হাট করে সীমান্তে রাত্রিযাপনের জন্য যেতে হত। গরু চোরাকারবারীরা বিএসএফ এর গুলি খেত আর তা সামাল দিতে বর্ডারে যেতে হত। প্রায়শই সীমান্তে রাত্রিযাপনের জন্য আধ ঘণ্টা এক ঘণ্টার নোটিশে চলে যেতাম। তখন একটা মানসিক চাপ কাজ করত। এই মানসিক চাপ কমানোর জন্য আমি একটা কাজ করলাম। আর তা হল সর্বদা বাইরে যাওয়ার জন্য একটা ব্যাগ প্রস্তুত রাখা। এটা করার জন্য টুথপেষ্ট, টুথব্রাশ ও অন্যান্য কাপড় আলাদাভাবে প্রস্তুত থাকত, এতে হঠাত করে রাত্রিযাপনের নির্দেশে কখনোই আতংকিত হতাম না। এখনো কখনো বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে দুই একদিন আগে আমার ব্যাগ গুছানো হয়ে যায়। যদিও ব্যাগ গুছাতে আধ ঘণ্টার বেশী লাগার প্রয়োজন নেই তবুও গুছিয়ে ফেলি তার কারণ শেষ মুহূর্তে গুছাতে গিয়ে যদি লেইট হই। যদি কোন কিছু বাদ পরে। শেষ মুহূর্তে যদি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যথা সময়ে হাতের কাছে না পাই। ইত্যাদি ইত্যাদি অপ্রয়োজনীয় ভাবনা।

আমি অন্যদের সাথে তুলনা করে আমার এ ধরনের টেনশনের জন্য নিজেকে ধিক্কার দিতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে এ টেনশনটাকে শক্তিতে রূপান্তর করে নিজে অনেক লাভবান হচ্ছি। আগে ভাগে প্রস্তুত থাকার কারণে যে কোন কাজ নির্ঝন্জাটে করা যায়। এতে সময়ের ভাল ব্যবহার হয়। যেমন কোন একটা কাজে যাব। কিছু আগেই পোশাক পরে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যে সময়টা হাতে থাকল তা পত্রিকা পড়ে, টিভি দেখে বা কম্পিউটারে কাজ করা যায়। সময় হওয়ার আগে আগে ধীরে ধীরে রওয়ানা দেয়া যায়। আমার মত যাদের লেট হওয়ার টেনশনকাজ করে তারা আগে ভাগে রেডি হয়ে টেনশন দুর করে অন্য কোন উপকারী ও রিলাক্স কাজ করে হাতে থাকা সময়টি কাটাতে পারেন। আরাম পাবেন। ইন্টারনেটে এক মটিভেটরের একটা লেখা পড়ে ছিলাম। যদি অলসতা কাটাতে চান, প্রথম কাজ হল জুতা পড়ে ফেলা। তাহলে আপনি যে কোন স্থানে যেতে প্রস্তুত। অলসতা কেটে যাবে। বেশী রিলাক্স পোশাক পড়লে মানুষ বাসা থেকে কম বের হয় এবং বেশী মোটা হয়। তাই বাসা ও বাইরে যাওয়া যায় এমন পোশাক মানুষকে বেশী সচল রাখে ও অতিরিক্ত ওজন ঝরাতে কার্যকরী। এগুলো মূলত কিছু লোকের ভাবনার কথা। এগুলো কারো জন্য কার্যকর কিনা হলফ করে বলা যায় না। লেট হওয়ার ভয়রোগটা সারাতে আরো অনেকের অনেক পদ্ধতি থাকতে পারে। আমার পদ্ধতি সবাইকে জানালাম। অনেকের সাথে আমার পদ্ধতি মিলে যেতে পারে। পরিশেষে বলব আমরা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে স্ট্রেস বা টেনশন মুক্ত জীবন যাপন করার চেষ্টা করব। এতে আমরা আরো বেশী ভাল থাকব।