স্টারলিংক বা স্টারলাইন এধরনের একটি নাম ঢাকা-চট্রগ্রাম বা ঢাকা-লাকসাম রুটে আমরা অনেকেই পরিবহন কোম্পানির নাম শুনেছিলাম। এখনও থাকতে পারে আমি নিশ্চিত নই। "স্টারলিংক" হয়ত আজ থেকে পাচ বছর পর দেশের আনাচে কানাচে ও প্রতিটি কোনায় এ নাম শোনা যাবে এটা হলফ করে বলা যায়। ইন্টানেটের ব্যবহার সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য লাইফলাইন বলা যায়। এখন পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ ইন্টানেট ব্যবহার করে। বাকী অর্ধেকের অর্ধেক হয়তবা শারীরিক অক্ষমতা ও অর্থিক অক্ষমতার কারনে ব্যবহার করে না। বাকী চার ভাগের এক ভাগ মানুষ অপ্রাপ্যতা বা অপ্রতুল অবস্থার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। পৃথিবী এখন বিশাল জনগোষ্ঠী বিদ্যুত সুবিধার বাইরে। তবে বিদ্যুত ও পানির ক্ষেত্রে প্রাপ্যতার সীমাবদ্ধতা সরাসরি অর্থের সাথে জড়িত। অার্থিক অবস্থা ভাল তবে বড় বা ছোট সোলার প্যানেল বা জেনারেটর কিনলে কাজ হয়ে যাচ্ছে। রানিং ওয়াটার করার জন্য বোরিং করে উপরের ট্যাংকে পানি তুলে দিলেই হল। বিদ্যুৎ আর পানি যে কোন স্থানে উৎপাদন করা যায় শুধু প্রয়োজন আর্থিক সামর্থ্যতা। মানুষের মোটামুটি অর্থিক সামর্থ্যতা থাকলে তা আয়ত্বে আনা যায়। এখন গ্রামে গ্রামে ওয়াশার পানির সাপ্লাই নাই কিন্তু ঘরে ঘরে মটর চলছে। টাকা থাকলে স্যাটেলাইট ডিশ ও ইন্টারনেট পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সাধারন কৃষকের পক্ষে বা প্রান্তিক মানুষের পক্ষে স্যাটেলাইট ডিশ বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা অনেক অনেক খরচের বিষয়। সে তুলনায় শহর এলাকায় ক্যাবল টিভি ও ইন্টারনেট অনেক অনেক বেশী সাশ্রয়ী ও ব্যাপক ব্যবহৃত। মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট দেয়া গেলেও তা যথেস্ট পরিমানে সাশ্রয়ী নয়। গ্রামের কৃষক স্বল্প খরচে ইউটিউব দেখতে পারবে তা কিন্তু বলা যায় না। আবার সব জায়গায় একই গতির ইন্টারনেট পাওয়াও যায় না। একবার ফেসবুকে একজনের একটা পোস্ট দেখেছিলাম। সে বলল, ছুটিতে বাড়ী যাচ্ছি। ভাবলাম, ইউটিউব দেখব। বেশী করে জিবি কিনলাম সাত দিন মেয়াদের। কিন্তু বিধিবাম, ফেইস বুকই সহজে ব্যবহার করতে পারছি না এত স্লো নেট। আর ইউটিউব তো অনেক অনেক দূরের ব্যাপার। তার জিবি কেনাটাই লস। গ্রামে মাঝে মাঝে আত্মীয় স্বজনের সাথে কথা হয়। বলি এটার ছবি পাঠাও ওটার ছবি পাঠাও। একটা সুন্দর উত্তর পাই। বলে আচ্ছা অাপনাকে পরে দিব। এমবি কিনে নেই তারপর ছবি পাঠাচ্ছি। আমি তখন বলি, অাচ্ছা এখনই আমি এমবি পাঠাচ্ছি। ছবি দাও। আমরা যারা শহরে ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করি তাদের জন্য ওয়াই ফাই ও আনলিমিটেড ইন্টারনেট মাসিক খরচের বিষয়। কিন্তু মোবাইল ইন্টারনেটে আনলিমিটেড বা মাসিক ইন্টারনেট অনেক অনেক খরচের ব্যাপার। তাই গ্রামের মানুষের কাছে এমবি কেনা অনেক আগ্রহের ও বিলাসিতার বিষয়। অপটিক্যাল লাইনের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট মোবাইল ইন্টানেট হতে সাশ্রয়ী। মোবাইল ইন্টারনেট আবার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট হতে সাশ্রয়ী। এখন আসুন প্রাপ্যতার হিসাব করি। স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পৃথিবীর বেশীর ভাগ এলাকায় পাওয়া সম্ভব। তবে মোবাইল ইন্টারনেট হতে প্রায় দশগুন দাম গুনতে হতো। এক জিবি যদি মোবাইল ইন্টারনেটে ১০০ টাকা হয় তবে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটে তা ১০০০ টাকা গুনতে হবে। অপরদিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আবার নির্ভর করছে অপটিক্যাল লাইনের উপর। যার ফলে সকল স্থানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পাওয়া যায় না। মোবাইল আবার তার চেয়ে বেশী কাভারেজে আছে। এখন যেটা সাশ্রয়ী সে মাধ্যম সব স্থানে দিতে গেলে আবার লাভজনক হবে না। ঘনবসতি স্থানে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে বেশী লাভজনক ও সাশ্রয়ী। গ্রামের বিস্তৃীর্ণ এলাকার জন্য অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক লাভজনক নয়। একটা বিষয় দেখেছি যে কোন অবস্থায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেটই রিমোট বা প্রান্তিক এলাকার জন্য ভাল। এখন যদি আপনাকে ১০০এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট ১০ টাকায় প্রতি জিবি দেয়া হয় তবে কতই না মজা হতো। স্টারলিংক কোম্পানী সারা পৃথিবীতে ব্রডব্যান্ড থেকেও সাশ্রয়ী ইন্টারনেট দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর জন্য তারা আগামী পাচ বছরে ১২০০০ মাইক্রো স্যাটেলাইট লঞ্চ করবে। যার প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে গত ২৫ মে ২০১৯ এক সাথে ৬০ স্যাটেলাইট লঞ্চ করার মধ্য দিয়ে।
তারা ৪০০ থেকে ৫০০ কি:মি: দূরত্বের মধ্যে কয়েক হাজার স্যাটেলাইট রাখবে। তারপর ১২০০০ কিলোমিটার দুরে আরো কিছু স্যাটেলাইট দিবে। ১২০০০ কি:মি: বাইরে আরো কিছু স্যাটেলাইট বসাবে। স্যাটেলাইট থেকে গ্রাউন্ডে সংযোগ পাবে ভি ও কিইউ ইত্যাদি ব্যান্ডের মাধ্যমে। স্যাটেলাইট থেকে স্যাটেলাইট সংযোগ পাবে লেজার বীম এর মাধ্যমে। যতটুকু জানা যায় মহাকাশে প্রায় সাড়ে চার হাজার স্যাটেলাইট আছে। সেখানে আরো ১২০০০ স্যাটেলাইট পাঠালে মহাশূন্যে বিপুল পরিমান স্যাটেলাইট জমা হবে। তবে ছোট আকারের মাইক্রো স্যাটেলাইট ও সেগুলো আবার মেয়াদ শেষে ধ্বংশ কারার ব্যবস্থা থাকবে। মহাকাশ পরিচ্ছন্ন রাখারও উপায় উদ্ভাবিত হয়েছে। তাই মহাকাশ পরিছন্ন রাখা নিয়ে শংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। বার হাজার স্যাটেলাইট পাঠানো চারটিখানি বিষয় নয়। অনেক খরচের বিষয়। সেই খরচ কমিয়ে এনেছে স্টারলিংকের স্পেস এক্স কোম্পানী। তারা পূন:ব্যবহারযোগ্য রকেট বানিয়েছে। একটা রকেটের প্রথম পার্ট ১২ বার পুন:ব্যবহারের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। স্পেস এক্স স্টার লিংকের মাধ্যমে ৩০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর দ্বারা স্পেক এক্স মংগলগ্রহে মানুষের বসতি গড়ার সুদূর চিন্তা করে রেখেছে। সে যাই হোক পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যেখানে যে অবস্থায় থাকুক না কেন সস্তায় ইন্টারনেট পাবে সেটা যদি সত্যি করা যায় তাহলে একটা তথ্য প্রযুক্তির নতুন যুগের সূচনা হবে। মানুষ আরো বেশী একে অপরের সাথে কানেক্টেড হবে। আরো বেশী মানুষের উন্নতি হবে। আশা করি ইলন মাস্কের স্টারলিংক নতুন তথ্য প্রবাহের সভ্যতার উন্নয়ন ঘটাবে। সেই যুগের শুরুটা হয়েছে বাকীটা শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার।