Pages

Wednesday, June 27, 2018

কেমন বন্দী বন্দী লাগে


ক্যাডেট কলেজ ও বিএমএ সহ ৩৪ বছর ঢাকার বাইরে কাটা‌নোর পর আমি খু্ব আনন্দিত হলাম। রাজধানী‌তে আমি বদলী এসেছি। ২০১৭ সালের জুন মাসে ফ্যামিলিসহ ঢাকায় আসার চার মাস পর অক্টোবরে আমার স্ত্রীর কাছে ঢাকায় থাকার অনুভূতি জানতে চাইলাম। আমা‌কে অবাক ক‌রে দি‌য়ে স্ত্রী উত্তর দিল, ঢাকায় কেমন বন্দী বন্দী লাগছে। আমি সত্যি উত্তরে বিস্মিত হয়ে উত্তর দিলাম, বড় শহরে এসেছ। বাইরে যাওয়ার গাড়ী আছে। বিশাল ক্যাম্পাসে হাঁটার জায়গা আছে। তব‌ে বন্দী লাগবে কেন? স্ত্রী বলল, বাইরে যেতে মন চায়; সেজন্য অনেকদিনই বাইরে গেলাম। এখন আর বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না। কারণ বাইরে যাওয়ার চিন্তা হলেই মনে হয় ট্র্যাফিক জ্যামে বন্দী দশা
এই ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম থেকেই আমারও এই বন্দী ভাবনার রোগটা এসেছে। স্ত্রীর এই রোগ শোনার পর আমারও মনে হল আসলেই তো ঢাকার বাইরে ছোট ছোট শহরগুলোতে এত বন্দী বন্দী লাগত না। যেটায় ঢাকায় লাগছে। ৩৪ বছর ঢাকার বাইরে থেকে নিজেকে অ্যালিয়ন মনে হচ্ছে।
আমি আমার স্ত্রীর ঢাকা নি‌য়ে বন্দিত্বের বেশ অনুসন্ধান করলাম। আমি ফেইস বুক ও ইউটিউবে আরো কিছু মানুষের এ ধরনের অনভু‌তি জানলাম। তা জানার পর মনে হল, এই ধরনের অনুভূতি প্রতিনিয়ত প্রাপ্ত ট্রাফিক জ্যামের ট্রমা থেকে হ‌য়ে‌ছে। এটা দূর করার কোন ব্যবস্থা আছে কি? জটিল চিন্তা সন্দেহ নেই। আমি বিশেষজ্ঞ নই তবে আমার অনুভূতি থেকে উত্তরণের একটা রি‌মে‌ডি মনে হয় আছে। অনেকের হয়ত পছন্দ হবে না। তা হল হাঁটা। আমি ছোট ছোট কিছু শহরে চলাচলে একটা কাজ করতাম তা হল জ্যামে পড়লেই রিক্সা থেকে নেমে যাওয়া। ময়মনসিংহ শহরে রিক্সার বেশ জ্যাম বাঁধে। সেখানে রিক্সা থেকে নেমে পড়ার কাজ‌টি করতাম। কিছু টাকা হয়ত বেশী খরচ হল তবে সময় তো বাঁচল। এটা কম কিসে। এভাবে হাঁট‌তে হাঁট‌তে এমন অভ্যাস হ‌য়ে গিয়েছিল; প্রায়ই হেটেই  বাজা‌রে চলে যেতাম। ফেরার সময় বেশী বাজার থাকলে রিক্সায় চলে আসতাম।
ঢাকায় হাঁটাহা‌টি হয়ত করা যাবে, যদি অফিসটা কাছে থা‌কে। মার্কেটটা কাছে থা‌কে। অন্যথায় পরিবহন ছাড়া যাতায়াত সম্ভব নয়। শহরের বন্দী রোগ থেকে বাঁচানোর জন্য পৃথিবীর স্মার্ট সিটির পরিকল্পনায় প্রাইভেট গাড়ীমুক্ত রাখার পক্ষ‌ে মত দেয়া হচ্ছে। স্মার্ট সিটিতে ৫০০ গজ গুন ৫০০ গজ অথবা এক বর্গ ‌কি‌লোমিটার জায়গা বা কিছু সংখ্যক বাড়ী ঘর, দোকানপাট ও অফিস আদালত নি‌য়ে ক্লাস্টার তৈরি করা হয়। এই  ক্লাস্টারের মধ্যে সবাই হাঁটবে বা সাইক্যাল চালাবে। ইলেকট্রিক ছোট ছোট গাড়ীর মতন পড থাকবে কিন্তু কোন প্রাইভেট কার বা অন্য গাড়ী থাকবে না। প্রাইভেট কার থাকবে ক্লাস্টারের বাইরের অংশে এক সিটি হ‌তে অন্য সিটির মধ্যে প্রাইভেট কার ব্যবহার হবে। তবে এক এলাকা বা ক্লাস্টার হ‌তে অন্য এলাকায় যে‌তে গাড়ী ব্যাবহার চলতে পারে কিন্তু নিজ ক্লাস্টারের এলাকার মধ্যে কার বা গাড়ী নয়।
ঢাকা শহর‌কে আধুনিক করার জন্য শহরকে  ক্লাস্টার ভাগ কর‌তে হবে। গাড়ী রাখ‌তে হবে ক্লাস্টারের বাইরে। ক্লাস্টারে মধ্যে শুধু হাঁটা আর সাইক্যাল চালা‌নো যাবে। তবেই  শহরের সবাই সুস্থ থাকবে। ফিট থাকবে। নিজেদের বন্দী থাকার মত ট্রমা‌টিক অবস্থা মনে হবে না।
আবার অনেক সিটিতে এরূপ আছে, সমস্ত গাড়ী চলবে আণ্ডার গ্রাউন্ড বা ফ্লাইওভার দি‌য়ে। নিজের দালানের সামনে, স্কুলের সামনে বা অফিসের সামনের রাস্তা থাকবে হাঁটা ও সাইক্যাল চালা‌নোর জন্য। শহর‌কে গাড়ীমুক্ত কর‌তে পারলেই  শহর‌কে স্বাস্থ্যকর ও স্মার্ট বলা যাবে। ট্রাফিক জ্যাম থাকবে না। মানুষের শ্রমঘণ্টার অপচয় হ্রাস পাবে। তাই আর বেশী দেরী না ক‌রে ঢাকার বাইরে নতুন শহর ক‌রে যানবাহনমুক্ত স্মার্ট সিটি করা প্রয়োজন। আর ঢাকাকে প্রাইভেট গাড়ীমুক্ত ক্লাস্টারে ভাগ করা প্রয়োজন আর এভাবে দূর করা যাবে আমাদের বন্দী বন্দী ভাবনা।


Thursday, June 21, 2018

প্রসঙ্গ তসলিমা নাসরিন ও তার দেশে ফেরত আসা

তসলিমা নাস‌রিন‌কে দেশে ফেরত আনা নিয়ে অনেকে মাঝে মাঝে ফেইস বুক লেখনী‌তে তৎপর। আমা‌দের মাঝে অনেকে খারাপ কথা বলেন। অনেকে ভাল কথা বলেন। আমরা সাধারণত ভাল‌কে শুনি। ইতিবাচক চিন্তা সমাজ‌কে শান্তি দেয়। সকল মানুষের ধর্মকর্ম একটা অধিকার। কারো বিশ্বাসে ভিন্নতা থাক‌তে পা‌রে। তার মানে এই  নয় যে, কেউ কারো বিশ্বাস‌কে অমর্যাদা করার অধিকার দেয়া হ‌য়ে‌ছে। গান্ধীজী স্বাধীনতা এনেছেন অহিংস নীতির উপর ভিত্তি ক‌রে। অধিকাংশ নেতা স্বাধীনতা এনেছেন রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দি‌য়ে। সেজন্য গান্ধীজী কি ভুল করেছেন? তসলিমা নাস‌রিন সমাজের কি পরিবর্তন চান? অহিংস নীতি মাধ্যমে চান? না কতট‌ুকু রক্তক্ষরণ চান। সেটা তিনি নিজেও পরিষ্কার নন। সৈয়দ ওয়া‌লিওল্লাহ তার "লাল সালু" উপন্যাসে বলেছেন "শস্যের চে‌য়ে টুপির সংখ্যা বেশী"। ধর্মের চেয়ে ধর্মের আগাছা বেশী। কেউ তা‌কে বি‌রোধ করেনি। তিনি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে গঠনশীল ও প্রগতিশীল বিপ্লব করেছেন। আমি তসলিমা নাস‌রি‌নের অধিকাংশ বই পড়েছি। এগু‌লো মানব কল্যাণমূলক বা মানব সেবামূলক লেখা নয়। যুক্তির অভাব ও বিদ্বেষ ছড়া‌নোর চিন্তা মাত্র। আপনি কারো বিশ্বাস‌কে কটূক্তি ক‌রে, সে স্থানে থাকাটা আপনার নিরাপত্তার জন্যই উচিৎ নয়। দেশ‌কে তিনি কতটুকু ভালবাসেন আমি জানি না। তবে দুবাই‌য়ে যে পরিচ্ছন্নতা কর্মী‌টি দেশের জন্য রে‌মি‌টেন্স পাঠায়। সে দেশ‌কে ভালবাসে। সে আশা ক‌রে বাংলাদেশটা এমন উন্নত হবে যা‌তে তার পরিবারটা ভাল থাকবে। ডিউটি শেষে ইমু নি‌য়ে সে তার পরিবারের সাথে যোগা‌যো‌গে ব্যস্ত হয়। দেশের বাইরে থেকে প্রতিটা বিষয়‌ে কটূক্তি করা ছাড়া কখনও গঠনমূলক কথা তসলিমা নাস‌রিন বলেননি। দেশের বাইরের মায়া কান্নার কি দাম আছে বলুন। আগে তিনি প্রমাণ করুন মানুষ‌ের বিশ্বাস‌কে অবজ্ঞা করা ছাড়া অন্য কোন  ভাল কাজ তিনি করেছেন কি? তিনি জরায়ুর স্বাধীনতা চান। কিন্তু সুস্থ যৌন জীবনের উপায় বাতলান‌নি। সমাধান ছাড়া আন্দোলন। তিনি নির্লজ্জতায় এত উঁচুতে আছেন। তা‌কে গ্লোবাল সিটিজেন হিসাবে মানায়। বাংলাদেশী নয়।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার তিনি ও তারা অনুসারীরা দেশে জরায়ুর স্বাধীনতা এনজয় করেছেন। তখন কিন্তু কেউ ব্যস্ত হয়নি। ব্যস্ত হ‌য়ে‌ছে  তখনই যখন তিনি ধর্মীয় অনুভূতিকে কটাক্ষ করেছেন। কেউ আস্তিক বা নাস্তিক এটা ব্যক্তিগত বিষয়। এটা নি‌য়ে কেউ ব্যস্ত নয়। ব্যস্ত তখনই  হতে হয় যখন আপনি অন্যের আস্তিকতা নি‌য়ে কটাক্ষ করবেন।
কয়েকদিন আগে শোনা গেল তার কণ্ঠে শব্দ নাই। আমার স্ত্রী বলল, তসলিমা নাসরিন শয়তানটার স্বর দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। আমি জানতে চাইলাম কোথায় পাইলা। সে জানাল ফেইস বুকে। আমি বললাম, তুমি তাকে শয়তান বললে। সে তো নারীদের স্বাধীনতা ও মুক্তির কথা বলে। আমার স্ত্রী পুনরায় ক্ষেপে গিয়ে বলল। যে নবী রসুলকে নিয়ে বাজে কথা বলে সে শয়তানের দোসর। আমি বুঝলাম তাকে সাধারণ মানুষ প্রগতিশীল ভাবতে পারছে না। তাকে একজন ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী মানুষ হিসাবেই মনে করছে।
তিনি শ্রদ্ধেয়া থাকতেন যদি না মানুষের বিশ্বাসের জায়গাটিতে আঘাত না করতেন। তিনি ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত না করে নারী জাগরণ নিয়ে সচেতন করতে পারতেন। নারীদের সাজুগুজু, জামা কাপড় ও অলংকার নিয়ে মানসিকতা নিয়ে ব্যস্ত না থেকে পুরুষের সাথে মর্যাদার সাথে সমান ভাবে কাজে এগিয়ে আসার তাগিদ দিতে পারতেন। নারী পুরুষের আস্থার জায়গাটি উন্নত করতে পারতেন। তিনি অনেক বাস্তব ও সত্য কথা বলেছেন। সন্দেহ নেই। তার পর ধর্ম নিয়ে বাজে কথা বলে বিশাল দুধের গামলায় একফোঁটা চানা ঢেলে দিয়েছেন।
পরিশেষে বলব, তসলিমা নাসরিন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন তার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। ক্ষমাটা চেয়ে দেশে আসার চিন্তা করতে পারেন। তার আগে নয়। কারণ মানুষ যে ধর্মেরই হোক মানুষের বিশ্বাসকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলার জন্য তাকে সকল ধর্মের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়াটা অপরিহার্য। 

Thursday, June 14, 2018

ছোট পরিসর থেকে বড় পরিসরে পথচলা


একটা মানুষের উন্নতির পিলার‌টি যদি ধী‌রে ধী‌রে ধাপে ধাপে এগিয়ে যায় তবে তা অনেক শক্তিশালী হয়। গায়ক ও শিল্পীরা যারা নিয়মিত গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চর্চা করেন তারা মনে করেন বড় একটা পরিসরে উঠে গেলে হয়ত রাতারাতি বিখ্যাত হ‌য়ে যাবেন। তেমনি লেখক ও কবিরা মনে করেন তিনি বোধ হয় বড় শহর বা রাজধানী‌তে আসলে রাতারাতি খ্যাতি অর্জন করবেন। গ্রাম গঞ্জ থেকে উঠে এসে রাতারাতি অনেকে বিখ্যাত হ‌য়ে‌ছেন পরিসংখ্যানটা আমার জানা নাই। তবে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার ফর্মুলাটা আমার কাছে অনেক বেশী টেকসই মনে হয়।
একজন গায়ক তার নিজ পরিসরে ধী‌রে ধী‌রে অনুশীলন কর‌তে থাকবে। তারপর ইউনিয়ন হ‌তে উপজেলা। উপজেলা হ‌তে জেলা। অতঃপর বিভাগীয় ও দেশ পর্যায়ে এগিয়ে যে‌তে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক ধারা।
অনেক লেখকের কাছে শুনি, আমি যদি ঢাকা থাক‌তে পারতাম; তবে আমার বই অতি দ্রুত বিক্রি হত। আমি অতি দ্রুত নাম করা লেখক হ‌তে পারতাম। এটা হয়তবা ইমোশনাল চিন্তা। বাস্তবতা অন্য রকম। বড় শহর নবাগতদের জন্য অথৈ সাগরের মত। কূলের সন্ধান মিলে না ও গভীরতার সন্ধান মিলে না। তখন খড়কুটা যা পায় তাই সেই  নবাগতরা আঁকড়ে ধর‌তে চায়। সেই  খড়কুটা হল রাজধানী বা বড় শহরের বিদ্যমান দালাল বা প্রতারকরা। তারা উৎ পে‌তে থা‌কে ছোট শহর থেকে উঠে আসা গায়ক, শিল্পী, কবি ও লেখক‌দের সাথে কিভাবে বাণিজ্য করা যায়। গায়ক বা শিল্পী হ‌তে গি‌য়ে অনেক ছেলে মে‌য়ে ভণ্ড বা প্রতারক‌দের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত হ‌য়ে‌ছে। তার পরিসংখ্যান বিপুল ও বিশাল।
লেখকরা ঢাকার প্রকাশনীর যত নাম তত দাম দি‌য়ে টাকা খরচ ক‌রে। আশা বিখ্যাত হবে। আশার গু‌ড়েবা‌লি। প্রকাশক ছাপা‌নোর পুরো টাকা সহ লাভটা তুলে নি‌য়ে নবাগত লেখক‌কে কিছু বই হা‌তে ধরিয়ে দেয়। লেখক আশায় থা‌কে তার বই বেস্ট সেলার হবে। সে বিখ্যাত হবে। সেই  শুভ দিন‌টি আসে না। ধার কর্জ ক‌রে প্রকাশক‌কে দেয়া টাকা আর ফেরত আসে না। বইও প্রচারিত বা পরিবেশিত হয় না।
তাই ধাপে ধাপে কবি, লেখক, গায়ক ও শিল্পী‌দের অনুশীলন ক‌রে ধী‌রে ধী‌রে উঠে আস‌তে হবে। ধী‌রে ধী‌রে অনুশীলন ক‌রে দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে আসলে সফলতা পাওয়া যাবে। হঠাৎ উঠে আসা এক দুইজন লেখক অনুসরণীয় হ‌তে পা‌রে না।  একজন কবি বা লেখক তার পরিচিত মহলে যদি একশত বই বিক্রি কর‌তে না পারেন,  তবে তিনি কিভাবে আশা করেন; বিরাট পরিসরে তার বই বেস্ট সেলার হবে। তার প্রথম বইটি রাজধানী নয় বরং উপজেলাতে প্রকাশিত হ‌তে পা‌রে। সেখানে ৫০০ কপি বিক্রি হ‌য়ে যাবে। একটু প্রচেষ্টায় প্রয়োজন হবে। তারপর জেলায় প্রচেস্টা চালাতে হবে। এভাবে শুরুটা ছোট থেকে শুরু ক‌রে বড় পরিসরে আগা‌তে হবে। তাই সমস্ত উন্নয়ন শুরু কর‌তে হবে ঘর থেকে, ধী‌রে ধী‌রে ও দৃঢ়তার সাথে। লক্ষ্য অটুট রাখ‌তে হবে, বিশ্বাস অটুট থাক‌তে হবে। তবেই ছোট পর্যায় থেকে প্রতারক‌দের এড়িয়ে সফল হ‌তে হ‌তে উপ‌রে উঠা সহজ হবে।
প্রতিটি লেখক, শিল্পী ও কবির অবলম্বন বা আগ্রহ হওয়া প্র‌য়োজন অনুশীলন বা‌ চর্চা। শিল্পীরা তা‌দের চর্চা উন্নত করতে হবে ও নিয়মিত ক‌রে যে‌তে হবে। এটা অত্যন্ত প্র‌য়োজন। তার প্রতিভার বিকাশ নিজের এলাকার আনা‌চে কানাচে পৌ‌ছে দি‌তে হবে। তারপর যে‌তে হবে বড় পরিসরে। সব শি‌ল্পী, লেখক কবি ও সা‌হি‌ত্যিক  সবারই একই কথা যদি রাজধানী‌তে যে‌তে পারতাম, তবে অনেক বড় হ‌তে পারতাম। এটা সত্য রাজধানীর অনেক নবাগতই এক লাফে বিখ্যাত হ‌য়ে‌ছে। সংখ্যাটা হা‌তে গোনা। তাই সবার এক লাফে বিখ্যাত হওয়া বাতুলতা মাত্র। বিখ্যাত হওয়াটা কোন সহজ ধান্ধা নয়। শিল্প ও সাহিত্য‌কে ভালবাসার কারণে যারা অনুশীলনরত থাকবে তারাই ধী‌রে ধী‌রে টেকসই উন্নয়নের পথে আগাবে। তা‌দের উত্তোরণ ক্ষণস্থায়ী ও ভঙ্গুর হবে না।


Thursday, June 7, 2018

উন্নয়নের পথে আগা‌তে হবে নিজেদের জো‌রে


আমা‌দের এলাকায় এটা নাই ওটা নাই। আমরা খাইতে পারি না। আমরা উপার্জন কর‌তে পারিনা।‌ আজ থেকে তিন চার বছর আগে যে কোন সমস্যায় আমারও মনে হত "সরকার এটা কর‌তে পারত" বা "এটা দি‌তে পারত"। এটা এখন আর তা মাথায় আসে না। আমার চিন্তা একটু পরিবর্তিত হ‌য়ে‌ছে।  আমার মনে হয় কোন সমস্যায় আমরা কি কর‌তে পারতাম বা কি করছি? সেটা আগে চিন্তা করতে হবে।

সরকারের করাটা আমলাতান্ত্রিক নিয়মে আবদ্ধ। সেটা এমন একটা প্রক্রিয়া যা স্বচ্ছতা ও জবাবদী‌হিতা পালন কর‌তে গি‌য়ে বিলম্বিত। কোন সরকারী কর্মকর্তা চাইলেই কোন কাজ কোন সৎ ও উদ্যমী মানুষ‌কে দিয়ে করা‌তে পারবে না। তা‌কে অবশ্য যথাযথ প্রক্রিয়া ও নিয়মের মধ্য দি‌য়ে যে‌তে হবে। অন্যথায় চাকুরীচু‌ত্যিসহ অন্যান্য বিপর্যয় আস‌তে পা‌রে। তাই সরকারের উপর নির্ভরশীলতা হল সিস্টেমের জটিলতার উপর নির্ভরশীলতা।
সারা পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষের সমস্যা হল সামাজিক ও স্থানীয়। তাই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় নেতৃত্বের উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী। এই  জন্য আমরা মাঝে মাঝে পত্রিকায় দেখি অমুক গ্রামের স্থানীয় মানুষরা এক কি‌লো মিটার ভাসমান সাঁকো তৈরি করেছে। অমুক গ্রামের যুবক/যুবতীরা বয়স্ক শিক্ষায় এগিয়ে এসেছে। অমুক প্রবাসী নিজের টাকায় একটা পাকা ব্রিজ তৈরি ক‌রে দিয়েছে। এরূপ অনেক অনেক সমস্যার সমাধান আমলাতান্ত্রিক সিস্টেমের বাইরে সমাধান করা যায়। আমা‌দের গ্রামের বাড়ীর সামনে একটা নদী ছিল। ছোট বেলা থেকে দেখতাম নদী পার হওয়ার জন্য একটা বাণিজ্য চলত। বাজার কমিটি গুদারা ঘাট বা খেয়া নৌকা পরিচালনা করত। তা‌দের টার্গেট ছিল একটা ব্রিজ করা। আমার আজও মনে আছে তারা প্রথমে বাঁশের সাঁকো বানায় যা দি‌য়ে মানুষ পার হয়। নৌকাও ছিল। তা দি‌য়ে মালামাল ও মটর সাইকেল পার করত। তারপর প্রশস্ত ক‌রে বাঁশের মাচা ক‌রে ব্রিজ বানাল। তার উপর দি‌য়ে মটর সাইক্যাল ও রিক্সা পারাপার শুরু হল। নৌকা পারাপার উঠে যে‌তে থাকল। এরপর একসময় দেখলাম কাঠ দি‌য়ে ব্রিজ হ‌য়ে গেল। তার উপর দি‌য়ে দিব্যি রিক্সা ও মটর সাইক্যাল পার হ‌তে লাগল। ১৯৯০ থেকে সেই  কাঠের ব্রিজ চালু হল। তার পর থেকে নিয়মিত চাঁদা দি‌য়ে মেরামত চল‌তে থাকল। ১৯৯৬ সালে এল‌জিইডির ব্রিজ করার পূর্ব পর্যন্ত। এটা এই  জন্য বললাম, সরকারী সেতু না হওয়ার আগ পর্যন্ত সংগ্রামী মানুষ পিছিয়ে ছিল না। তারা মানুষকে পারাপারের জন্য ফান্ড তৈরি করা ও ধাপে ধাপে নৌকা থেকে কাঠের ব্রিজ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন ক‌রে গেছে। আমি নিশ্চিত সরকারী ব্রিজ না হলে  সকলে মিলে এত দিনে লোহার ব্রিজ তৈরি ক‌রে ফেলত। তাই স্থানীয় সমস্যা স্থানীয় যুবকরাই সমাধানের পথে এগিয়ে নেয়। তারা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যায়। এখানে যুব সমাজের শক্তি অসাধারণ। সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে নেতৃত্বে বিকাশ লাভ ক‌রে। কিছু উদ্যমী যুবক নেতৃত্ব দি‌য়ে সমাজের সমস্যার সমাধানগু‌লো ক‌রে ফেলে।

গ্রামে গঞ্জের স্কুল কলেজে ছেলেমেয়েদের কখ‌নো নির্ভরশীলতা শেখা‌নো যাবে না। গ্রামের স্কুলের ছেলেমেয়েরা বলল, স্যার আমা‌দের পানি পেরিয়ে স্কুলে আস‌তে হয়। শিক্ষকরা যদি বলে অপেক্ষা কর, একটু কষ্ট কর, সরকার ব্রিজ করবে। তা নয়। শিক্ষকের উচিত হবে ছাত্র‌দের নি‌য়ে সমস্যা‌টি দেখা। ছাত্র‌দের কাছে সমাধান চাওয়া। ব্রিজ হ‌তে পা‌রে বা নৌকা থাক‌তে পা‌রে। যাই সমাধান হোক, শিক্ষক স্থানীয় মানুষ‌দের নি‌য়ে সাঁকো তৈরির ব্যবস্থা কর‌তে পা‌রে। শিক্ষকরাই ছাত্র‌দের নেতৃত্ব‌ের গুণাবলী দি‌তে পা‌রে। পরিশেষে বলব, সমস্যা সমাধানে নির্ভরশীলতা নয় বরং এগিয়ে যে‌তে হবে বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে। তবেই সফলতা মিলবে। সরকার বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি নির্ভরশীলতা শুধু পিছনে টানবে। তাই যে কোন কাজে আগে প্র‌য়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। তার পর প্র‌য়োজনে অন্য সাহায্যের আশা করা যাবে। মহান সৃষ্টিকর্তাও কর্ম নি‌য়ে এক পা দি‌তে বলেন; বাকীটা তিনি এগিয়ে নেন। তাই স্থানীয় জনশক্তি তা‌দের সীমিত সম্পদ নি‌য়ে  এগিয়ে যে‌তে হবে। তবেই উন্নতি।