Pages

Thursday, September 28, 2017

মানুষরা কবে ভাল ছিল

ছোটবেলায় পড়েছি আরবে যুদ্ধ বিগ্রহ হত। মেয়ে শিশুদের জ্যান্ত পুতে ফেলা হত। শুনেছি বর্গীদের কথা। ১ম বিশ্বযুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্ব। অনেক অনেক যুদ্ধ। একেকটা যুদ্ধ আর শত সহস্র মানুষের মৃত্যু। শিশু ও নারীর চরম দুর্গতি। মানুষ বিঞ্জানে এগিয়েছে। ঞ্জানে এগিয়েছে। মানুষ নিজেদের গ্লোবাল সিটিজেন হিসাবে ভাবছে। মানুষে মানুষে সম্পর্ক বাড়ছে। এক দেশের মানুষ অন্য দেশের মানুষকে জানছে।ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা সমস্ত খবরাখবর মূহুর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীকে জানাতে পারি। আমাদের সমস্ত অনাচার অত্যাচার আমরা জানাতে পারি। মুহূর্তের মধ্যে তা প্রচারিত হয়ে যায়। তবু কেন মনে হয় মানুষ সভ্য হয়নি এখনও অসভ্য রয়ে গেছে।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ হতে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিবেশী মায়ানমার হতে ভেসে আসা লাশ, আহত ও শরণার্থী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় পৃথিবীর মানুষ সভ্য হয়নি।
আমরা অসভ্য মানুষেরা মিলে মিশে থাকতে শিখিনি। মানুষের জীবনের প্রথম শিক্ষা শুরু হয় তার পরিবার হতে। প্রতি শিশুর পিতামাতা সন্তানের প্রথম শিক্ষক। কোন সন্তানের পিতামাতা সন্তানকে বিপথগামী করতে পারে না। তবও মানুষ কেন বিপথগামী হয়। কোন পিতামাতা চায় না তার সন্তানরা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুক। মিলিশিয়া হউক বা জঙ্গি হউক। তারপরেও হচ্ছে। কেন হচ্ছে এটা নিয়ে গবেষনা কেউ করে না। যত গবেষণা দমন পীড়নে।
আমরা আজও আমাদের মানুষিকতাকে উদার করতে পারিনি। বর্ণবাদ চলে যায়নি। ঘুপটি মেরে লুকিয়ে আছে। জাতিগত বিদ্বেষ যায়নি। ধর্মীয় বিদ্বেষ যায়নি। কুৎসিত মানুষিকতার কিছু নেতা তা জিউয়ে রেখেছে। দুর্বল ও কুৎসিত মানুষিকতার নেতৃত্বে মানুষ আজ অসহায়। মায়ানমার ৭৫ বছর ধরে ৮/১০টি শক্তিশালী মিলিশিয়া গ্রুপের সাথে যুদ্ধরত। একাধিকার তারা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল অভিযান পরিচালনা করছে। এই দেশটির অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ। যারা অহিংসা ও জীব হত্যা মহাপাপ এই মন্ত্রে বিশ্বাসী। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে তারাই বর্বর আচরণ করছে। তারা দোহাই দিচ্ছে আরকান রোহিংগা স্যালভেজ আর্মি সরকারী বাহিনীকে আক্রমণ করেছে। তার কারণে অপরাধী রোহিংগাদের না ধরতে পেরে নির্বিচারে অনেক নিরীহ নারী ও পুরুষ হত্যা করেছে। ৫০০ রোহিংগা মিলিশিয়ার জন্য তারা ৫০০০ থেকে ৫০০০০ বাহিনী নিয়োগ করতে পারত। অন্তত যাচাই বাছাই করে তারা নিরীহদের উপর অত্যাচার না করে রাষ্ট্র বিরোধী রোহিংগাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে পারত। সরকারী বাহিনী প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে সহস্রাধিক রোহিংগার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিল। অগণিত নারী ও শিশুকে হত্যা করল। এতে কিন্তু রাস্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড স্তিমিত না হয়ে আরও বেড়ে যাবে। যে মানুষগুলি বেচে আছে তারা কোনদিন তাদের রাষ্ট্রকে তার রাষ্ট্র ভাবতে শিখবে না। সে সর্বদা সরকার রাষ্ট্রকে তার প্রতিপক্ষ মনে করবে।যে সন্তান তার বাবাকে হারিয়েছে সে কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখবে। যে নারী রাষ্ট্রীয় সৈন্য দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে সে রাষ্ট্রকে ভালবাসতে পারবে না। তার সন্তানকে রাষ্ট্র বিরোধী কাজে নির্ধিদ্বায় অনুমতি দিবে।
আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ হয়ে চিন্তা করতে পারলাম অস্ত্র দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন স্তিমিত করা যায় না। এ ধরনের আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন ডায়ালগ। সেই অবহেলিত অঞ্চলের আর্থিক ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন। প্রয়োজন ব্যাপক কর্মসংস্থান। ধর্মীয় উদারতা। বৌদ্ধ ধর্ম উদার নয় একথা মানতে কেউ চাইবে না। অথচ রোহিংগা মুসলিমদের প্রতি তাদের আচরণ অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।
একজন দেশনেত্রীর শান্তি পুরষ্কার পাওয়ার পর তার দেশের মানবতার বিপর্যয় অত্যন্ত মর্ম পীড়াদায়ক। আফ্রিকায়, মধ্য প্রাচ্যের নানা দলের নানা ধরনের যুদ্ধ অব্যাহত। আজ আমরা মুহূর্তের মধ্যে পরস্পরকে জানতে পারছি। বুঝতে পারছি। যোগাযোগ করতে পারছি। তবু কেন সংঘর্ষে লিপ্ত। তুমি আমার একজন মেরেছ আমি তোমার দশজন মারব। তুমি আমার দশজন মেরেছ। আমি তোমার একশ জন মারব। এই খেলা কোথায় শেষ হবে আমরা জানিনা। পৃথিবী থেকে এই ধরনের প্রতিহিংসা কবে যাবে আমরা জানি না।

এক সময় মানুষ সমাজতন্ত্রের কথা বলত। আজ বলে না। কারণ আমরা সবাই ভাল থাকি তা চাই না। আমরা প্রত্যেকে  চাই আমাদের খেদমত করার লোক থাকুক। আমরা সবাই নেতৃত্ব চাই। অথচ ভালবাসা দিয়ে ভালবাসার অর্জন আমরা চাই না। পৃথিবীর সমস্ত মহামানবরা শান্তির কথা বলেছেন। হানাহানির বিপক্ষে ছিলেন। মানুষ মনে হয় জেনেটিক্যালী হিংস্র। তাই অনেক শিক্ষা দীক্ষার পরও মানুষ প্রতিহিংসা পরায়ণ। মানুষ মানুষকে সহ্য করতে পারবে না। এখন পর্যন্ত ৩য় বিশ্বযুদ্ধ হয়নি। অনেকের ধারনা প্রযুক্তি এত বেশী অগ্রগামী যে মানব সভ্যতা মূহুর্তে ধ্বংস হতে পারে। আমার ধারনা ছিল মানুষের আন্ত যোগাযোগ বাড়ছে। যে কোন খবর মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যায়। তবে কেন মানবতা লঙ্ঘনে ধিক্কার উচ্চারিত হয়না। লাশের সারি আসলেও ধিক্কার হয় না। দু:খজনক। পৃথিবীতে কখনও মানুষ হানাহানি মুক্ত থাকতে পারবে তা আমার বিশ্বাস হয় না। অতীতেও হানাহানি ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। গ্লোবাল সিটিজেনের আইডিয়া ও সকল মানুষের জন্য বেসিক ইনকাম সবই বৃথা। পৃথিবীর মানুষের বিবেক জাগ্রত করাই এখন সময়ের দাবী।

Thursday, September 21, 2017

এখনই সময় মায়ানমারের রোহিংগাদের নির্যাতনের ইতিহাস লেখা

আন্তর্জাতিক ওয়্যার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ওয়্যার ক্রাইম যারা করেছে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছে। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের যুদ্ধ অপরাধীদেরও বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল। মায়ানমারের জান্তাদের জন্য কোন না কোন সময় আসবে যখন তাদেরকেও বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। এটা এই যুগে খুবই সহজ। কারন তথ্য প্রযুক্তি মানুষকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। তথ্য প্রমানদি আজ সংরক্ষন ও বিতরন সহজ। আন্তর্জাতিক মানব অধিকার সংস্থাগুলো রোহিংগাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গনহত্যার শিকার কারা কারা হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করতে পরে। কোন পরিবার কাকে কাকে হারিয়েছে তার তথ্য ও তালিকা লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে রোহিংগাদের আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ছবি পেলে তা দিয়ে তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করা অতীব জরুরী। রোহিংগাদের যাদের মোবাইলে বা অন্য কোন আলামত ও প্রমাণাদি আছে তা এখনই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। ২০১৭ সালে বিঞ্জানের উন্নতির এই যুগে সব অত্যাচার ও মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের সংরক্ষণের সুযোগ থাকতে তা অবশ্যই কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে রোহিংগা জেনোসাইটের ওয়েব সাইট তৈরি করা প্রয়োজন যেখানে নিহত,আহত ও মানবতা বিরোধী ঘটনা প্রতিনিয়ত আপডেট করা হবে। এভাবে কুখ্যাত ও ধিক্কৃত জান্তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে দাড় করানো সহজ হবে।
আমার এই আইডিয়া বাস্তবায়নের কিছু চিন্তা আমি করেছি তা নীচে দিলাম:
১। একটি শক্তিশালী ওয়েবসাইট তৈরি করা। এটি মায়ানমার রাষ্ট্রীয়ভাবে হ্যাকিং করার চেষ্টা চালাবে বলে ধারনা করা যায়। এটির হোস্টিং বাংলাদেশসহ একাধিক দেশে রাখতে হবে।
২। বিভিন্ন মানব অধিকার সংস্থা দ্বারা ফান্ড রেইজ করতে হবে।
৩। বিভিন্ন মানব অধিকার সংস্থার সমন্বয়ে রোহিংগা নির্যাতনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার জন্য স্থায়ী কমিটি মানব অধিকার সংস্থা সমূহ হতে করা যেতে পারে। এর মধ্যে শিক্ষিত ও আইটি জানা রোহিংগা  সদস্যের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের মাসহারা প্রদান করা যেতে পারে। নিরাপত্তার জন্য তাদের অন্য দেশে রাখতে হবে ও প্রয়োজনে তাদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে। তারা মায়ানমারের গোয়েন্দা সংস্থার টার্গেটে পরিণত হবে। আবার রোহিংগা সদস্য না রাখলে ইতিহাস লেখা বা তথ্য ভাণ্ডার তৈরি অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে।
৪। বাংলাদেশ ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে অবস্থানরত সকল রোহিংগা শরণার্থীদের ইন্টার্ভিউ নিতে হবে ও তাদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করতে হবে। তাদের তথ্যাদি রেকর্ড করে তা থেকে নিহত,আহত ও তাদের উপর অত্যাচারের বিবরণের ডাটা বেজ বানাতে হবে।
৫। রোহিংগাদের বাড়িঘর পুড়ানো, ব্যবহার্য সামগ্রী পুড়ানো, লুট করে নেয়া ও হারানো জমির পরিমাণ সবই তাদের ইন্টার্ভিউ করে রেকর্ড করতে হবে। তা থেকে পরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে মায়ানমার সরকারকে রোহিংগাদের ক্ষতিপূরন আদায়ে আন্তর্জাতিক মহল পরবর্তীতে চাপ সৃস্টি করতে পারবে।
৬। যে সব নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে তাদের বিবরণ লিপিবন্ধ করতে হবে। গোপনীয়তার সাথে রাখতে হবে। তাদের কাছ থেকে ধর্ষণের স্থান, সময়, ধর্ষকের বর্ণনা, ধর্ষকের পোশাক, নাম ও যে পোষাকে ধর্ষিত ছিল তার ডিএনএ তথ্য সংগ্রহের জন্য দিতে হবে। যারা তথ্য দিতে অনিচ্ছুক তাদেরকে নারী মোটিভেটর দিয়ে তথ্য নিতে হবে। মেডিক্যাল রিপোর্ট সংযুক্ত করতে হবে।
৭। যেসব নারী সন্তানসম্ভবা এবং যারা ধর্ষণের কারণে গর্ভবতী হয়েছে তাদের সন্তানদের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে।এতে আন্তর্জাতিক আদালতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম গ্রহণ করা সহজ হবে।
পৃথিবীর কোন ধর্ম মানুষের প্রতি সহিংসতা মেনে নেয়নি। বিশ্ব মানবতা কখনো তা সাপোর্ট করে না। আজ থেকে শত বছর পড়ে হলেও মায়ানমারের এই মানবতার ধ্বংসলীলার বিচার হতেই হবে। কোন সুস্থ মানুষ মায়ানমারের এই অবিচার মেনে নিতে পারে না। মায়ানমারের সামরিক জান্তারা গলা ফাটাচ্ছে রোহিংগাদের মিলিশিয়া গ্রুপ একাজ করেছে। অপর পক্ষে মায়ানমারের সরকার রোহিংগা মিলিশিয়া অর্থাৎ আরাকান রোহিংগা স্যালভেজ আর্মি (আরসা) কি করেছে তাও তাদের লিপিবদ্ধ রাখতে হবে। আরসা নিরপরাধ মানুষের উপর জুলুম করলে তার রেকর্ডও রাখতে হবে। তাদেরও মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিচার করতে হবে। তবে মায়ানমার সরকার আরসা সদস্যদের নিয়ে বিচারের প্রহসন করে গণহারে মৃত্যুদণ্ড দেয়াটাও গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়।

মানুষকে অবস্থানগত কারণে কোন দেশের নাগরিক বলা যেতে পারে। তবে মানবিকতার প্রশ্নে মানুষ হউক গ্লোবাল সিটিজেন। আর কোন মানবিক বিপর্যয় নয়। তার জন্য প্রয়োজন সোচ্চার হওয়া। রোহিংগার নির্যাতনের ইতিহাস লেখার মধ্য দিয়েই তা সম্ভব ও শুরুটা এখান থেকেই করা যায়।

Thursday, September 14, 2017

শরণার্থী ক্যাম্প নয় মানব উন্নয়ন ক্যাম্প

যুগ যুগ ধরে চলে আসা শরণার্থী ক্যাম্প আমাদের পরিচিত একটি শব্দ। শরণার্থী বলতে আমরা যা বুঝি তা হল অন্য দেশ থেকে অত্যাচারিত বা যুদ্ধে লিপ্ত দেশ হতে প্রতিবেশী দেশে নিরাপদ আশ্রয় নেয়া। ১৯৭২ সালে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল পাকিস্তানী হানাদারদের হাত হতে বাচার জন্য। কুমিল্লার ব্রাহ্মণ পাড়া উপজেলার চৌব্বাস নামক গ্রামে আমার দাদা ও নানা বাড়ী। আমার নানা স্কুল মাস্টার ছিলেন। তিনি শরণার্থী হয়ে আগরতলা গিয়েছিলেন সেখানে ডায়রিয়া হয়ে মারা যান। তার মৃতদেহ শূন্য লাইন ক্রস করে বাংলাদেশে কবর দেয়া হয়। কারণ পাকিস্তানী আর্মির উপস্থিতির কারণে আমার মামারা গ্রামে এনে কবর দিতে পারেনি।নানীর কাছে শরণার্থী শিবিরের তাঁবুর জীবনের কষ্টকর গল্প শুনেছি। কিভাবে চাল আটা মিলিয়ে সিদ্ধ করে ঘাটি খেতেন। আর হাজারে হাজারে লোক কলেরা বা ডাইরিয়ার মারা গিয়েছে। ভারতীয়রা অনেক সাহায্য করেছিল। পানি খেত পুকুর থেকে ও নদী থেকে নিয়ে। সুপেয় পানির অভাবে তারা অনেকেই মারা গিয়েছিল। আশে পাশে কুড়ানো কচু শাক, শুটকি ভর্তা ইত্যাদি খাবার ছিল তাদের নিত্য দিনের মেনু। প্রায় তিন মাস শরণার্থী শিবিরে ডিসেম্বর মাসে তারা নিজের ভিটায় ফেরত আসতে পেরেছিল। অত্যন্ত করুন ছিল সেই দিনগুলো।
আমাদের ৯ মাসের যুদ্ধে আমরা ৩০ লক্ষ বাঙ্গালী হারিয়েছি। আমাদের প্রতিবেশী মায়ানমার বছরের পর বছর রোহিংগা নিধন করে যাচ্ছে। আর রোহিংগারা বানের পানির মত বাংলাদেশে এসে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে। কোন কোন রোহিংগারা আশ্রয় নিয়ে বছরের পর বছর বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে পাকাপোক্ত হয়ে গেছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ব্যাপক হারে রোহিংগা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এই দুই বছরেই ৫ লক্ষ রোহিংগা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে রয়েছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে রোহিংগা ছড়িয়ে আছে। তেমনি অনেক অনেকে  শরণার্থী ক্যাম্প ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবী জুড়ে।
লক্ষ লক্ষ মানুষ শরণার্থী ক্যাম্পে আছে। শরণার্থীরা হয়ত অল্প কিছুদিনের জন্য থাকার কথা। কিন্তু মাসের পর মাস তারা আটকা পড়ে থাকে। ক্যাম্পে জন্ম হয় বড় হয়। বিয়ে করে। আবার বাচ্চা জন্ম হয়। সাইক্যাল ঘুরতে থাকে আর সংখ্যা বাড়তে থাকে। অপুষ্টি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও মানবেতর জীবন নিয়ে তারা ধুকে ধুকে বাচতে থাকে, এই আশায়, হয়ত কোন একদিন নিজের ভিটে মাটি ফেরত পাবে।
আমার মনে হল কেন আমরা “শরণার্থী শিবির” বা “রিফিউজি ক্যাম্প” কেন মানব উন্নয়ন শিবির বা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্প বলি না।
রিফিউজিরা ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হতে পারে। তারা প্রতিভা বিহীন নয়। তাদেরকে রিফিউজি ক্যাম্পের খয়রাতির উপর রাখা ঠিক নয়। তাদের মাঝে যে ডাক্তার তাকে ডাক্তারি করাতে হবে। তাদের মাঝে যে টিচার সে বাচ্চাদের পড়াবে। মিস্ত্রীরা ঘর বানাবে। মহিলা যারা ভাল রাঁধে তারা ক্যাম্পের খাবার রান্না করবে। যারা দর্জির কাজ জানে তারা কাপড় বানাবে। যারা গাড়ী চালাতে জানে তারা গাড়ী চালাবে। শরণার্থীদের যারা যেই কাজ জানে তাকে তার উপকরণ দিতে হবে। এমনকি যে ভাল ছবি আকে তাকে ছবি আকার উপকরণ দিতে হবে। যুদ্ধের ভয়াবহতার ছবি সে আঁকবে। অন্যরা তা কিনে নিবে। যারা কোন কাজে দক্ষতা নেই তারা স্বাভাবিক মজুরী করবে। জমিতে কাজ করবে। এতে শরণার্থীরা আশ্রিত দেশের অর্থনীতিতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবে। তারা তাদের স্বস্থির জন্য তাদের আয়কৃত টাকা দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্য ক্রয় করতে পারবে। জাতিসংঘসহ যে কোন সাহায্য সংস্থা এই কাজগুলি করতে পারবে।
এখন প্রশ্ন হল আশ্রিত দেশের নিরাপত্তা কি এতে বিঘ্নিত হতে। এরা কি সাধারণ জনস্রোতে মিশে যাবে। এই আশংকা একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না। কিন্তু আধুনিক যুগে এটা কোন সমস্যা নয়। শরণার্থীদের বায়োমেট্রিক্স নিবন্ধন করতে হবে। আধুনিক যুগের বায়োমেট্রিক্স সাধারণ ও সুবিধাজনক ব্যবস্থা। এটা করতে পারলে প্রয়োজনে শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সহজ হবে।

শরণার্থী কামাই বা রোজগার করবে তার ভোগ্যপণ্য ও জীবন মানের উন্নয়নের পর তার কিছু টাকা বেচে থাকবে। তা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক একাউন্ট  করে সঞ্চয় করানো যাবে। শরণার্থী বিপদে/আপদে ও সন্তানের শিক্ষায় সেই টাকা খরচ করতে পারবে। যখন শরণার্থী নিজ দেশে ফেরত যাবে তখন তার আশ্রিত দেশ সেই টাকা তাঁর দেশে পাঠাতে পারবে। এভাবে শরণার্থীদের জন্য মানব উন্নয়ন শিবিরের মাধ্যমে কল্যাণ করা যায়। মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলি অনেক কাজ করেন। তারা শুধু তাদের কর্মপন্থা বদল করে শরণার্থীর জীবনধারণের মোকাবেলাটা মানবীয় করতে পারবেন। তারা মানবীয় উন্নয়নগুলো করতে পারবেন। সকল মেয়েদের সেলাই ও অন্যান্য অনেক কাজে দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া যায়। যাতে তারা যৌনকর্মীর মত ঘৃণ্য পেশায় না যায়। আমার এই আইডিয়াটা নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বে যারা আছেন তারা ভেবে দেখতে পারেন। আমরা সাধারণ মানুষরা তাদের সেলাই মেশিন ও অন্যান্য আয় বর্ধক উপকরণ যাকাত হিসাবে প্রদান করতে পারি। আমার এই ধারনা বা আইডিয়াটা যদি কারো মনে ধরে বা কোন সাহায্য সংস্থা তা বাস্তবায়ন করে তবে আমার ভীষণ আনন্দ হবে।

Thursday, September 7, 2017

ফেইসবুক চালানো ও এমবি কেনা

আমরা যারা শহর উপার্জন করি তাদের উপর গ্রামের কিছু সংখ্যক আত্মীয় মুখাপেক্ষী থাকে। কিছুদিন আগেও ঘরবাড়ী মেরামত ও কাপড়চোপড়ের ডিমান্ড ছিল। এখন চাহিদাটা হল পড়াশোনায় সহায়তা। আমার এরূপ আত্মীয় তার সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আর্থিক সাহায্য চাইল। তাদের প্রায়শই আমি সাহায্য দেই। আমি এই ধরনের সাহায্য গ্রামের অন্য আত্মীয় দ্বারা ভেরীফাই করি। এইরূপ ভেরীফাই করতে গিয়ে আমার অন্য আত্মীয়কে জিঞ্জাসা করলাম। কিছুদিন আগে অমুকের ছেলে মেয়ের কলেজে ভর্তির বাবদ টাকা দিলাম। এখন আবার বই কেনার টাকা চাইছে। এরা কি টিউশনি করতে পারে না? গ্রামে কি টিউশনি নাই? আমার আত্মীয় জানাল গ্রামে একটা দুইটা টিউশনি এরা করে টাকা কম। আর একটা সমস্যা হল এরা একাধিক আইডি ব্যবহার করে ফেইসবুক চালায়। একাধিক আইডিটা কি। ফেক আইডি আর কি। অর্থাৎ কাল্পনিক তথ্য দিয়ে আইডি তৈরি করা। এরা এমবি কেনার পিছনে টাকা পয়সা খরচ করে। এদের সহযোগিতা করার প্রয়োজন নেই।
ফেইক আইডি দিয়ে ফেইসবুক চালায় আর এমবি কিনে। শব্দগুলি আমাদের অনেকের জন্য নতুন ও মজাদার।
বেশ কয়েক বছর আগে পত্রিকায় পড়ে ছিলাম উন্নত দেশগুলোতে চাকুরীজীবী কর্মীরা এত বেশী ফেইসবুকে সময় অতিবাহিত করে যে তাদের কর্পোরেট বসরা অফিসিয়াল কানেকশনে ফেইসবুক বন্ধ করা বা অফিস টাইমে ফেইবুক বন্ধ করার মত উদ্যোগ গ্রহণ করে। এখন আমাদের বাংলাদেশে স্মার্ট ফোনের বদৌলতে গ্রামের ছেলে মেয়ের হাতে হাতে ফেইসবুক চর্চা হচ্ছে। না হয়ে উপায় নেই। স্কুল কলেজের টিচাররা ফেইসবুকে পরীক্ষার রুটিন দিচ্ছেন। বিভিন্ন বিষয়ে মতামত নিচ্ছেন। সামাজিক ভাবে ফেইসবুক অনেক বেশী গ্রহণীয় মাধ্যম। সরকারী কর্মকর্তারা ফেইসবুকে মাধ্যমে গ্রাহক সেবা দিচ্ছেন। আমার মনে আছে আশির দশকে চিঠি লেখালেখি মজাদার একটি কাজ ছিল। অনেক সুন্দর সুন্দর চিঠি আমরা লিখতাম। পেন ফ্রেন্ড করার জন্য চিঠি লিখতাম। যাকে বলা হল পত্র মিতালী। তখনও চিঠির ঠিকানাকে অন্যের বা পরিচিত দোকানের ব্যবহার করত অনেকটা ফেক আইডির মত। এমনকি ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে বিদেশে বিভিন্ন পেন ফ্রেন্ড পত্রিকা থেকে ঠিকানা নিয়ে চিঠি লেখা হত। এসব চিঠি লিখতেও রাত জাগতে হত। আমাকে আজ যে ফেইসবুক নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেছে তাকেও ছোটবেলায় দেখেছি পত্র মিতালীর পত্র নিয়ে রাত জাগতে। আজকাল যেমন পত্রিকায় দেখা যায় ফেইসবুক ফ্রেন্ড মেয়ে বা ছেলে বাংলাদেশে চলে এসেছে। তখনও পত্র মিতালী বন্ধু অনেক সময় চলে আসত। আবার প্লেনের টিকিট পাঠানোর কাহিনীও আছে। আমি বিদেশে পেন ফ্রেন্ড পত্রিকা থেকে ঠিকানা নিয়ে হয়ত দশটি চিঠি লিখলাম। একটি বা দুইটি যোগাযোগ হল। তখন মনে আছে, পিয়ন চাচা বলত, এইভাবে অনাত্মীয়দের কাছে চিঠি দিয়ে কেন টাকা নষ্ট করছি। বয়সের ধর্ম। উত্তর নাই।
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি যখন কম্পিউটার চালু হল যা এখনকার তুলনায় অতীব ধীর গতির কম্পিউটার। তার পর ধীরে ধীরে ইন্টারনেট আসল। সেসময় চালু হল ইয়াহু চ্যাট এবং আরও অনেক চ্যাট চ্যানেল। তখন ছেলে বুড়ো রাতের পর রাত জেগে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ও চ্যাটিং করে। মিনিট প্রতি ইন্টারনেট খরচ ১/২ টাকা। কোন ডাটা প্যাকেজ সিস্টেম নাই। আনলিমিটেড ইন্টারনেট ছিল। তাও মাসে ৫০০০/৬০০০ টাকা। যা এখনকার মূল্য মানে বিশ/পঁচিশ হাজার টাকার নীচে নয়। পেন ফ্রেন্ড ও চ্যাটের যুগের পর আমরা এখন মাল্টিমিডিয়া ইন্টারএ্যাকিটভ ফেইসবুকের যুগে এসেছি।                   
যুগ যুগ ধরে অনেক কাজ বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন কালের জ্যৈষ্ঠরা ভাল চোখে দেখত না:       
১। কম বয়সে চা খাওয়া ও সিগারেট খাওয়া।
২। আড্ডা মারা ও কার্ড খেলা।
৩। সিনেমা দেখা ও অধিক সময় টিভি দেখা।
৪। বিপরীত লিঙ্গের সাথে পেন ফ্রেন্ড করা।
৫। বিপরীত লিঙ্গের সাথে ফোনালাপ।
৬। বিপরীত লিঙ্গের সাথে চেটিং করা।
৭। ফেইক আইডি খুলে বিপরীত লিঙ্গের সাথে প্রেম প্রেম খেলা।
উপরের সবগুলো ঘটনাই কিন্তু যুবা বয়সের মজাদার কাজ। এগুলো প্রবীণ ও নবীনের মধ্যে দ্বন্ধ। অথচ কাজগুলি নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় স্রেফ বিনোদন হিসাবে নিলে খারাপ বলা যাবে না। বেশী মাত্রায় আসক্ত হলে সময় নষ্ট ও অর্থ নষ্টের কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত বা নেশাগ্রস্ত হয়ে কাজগুলি করলে তা পড়াশোনার ক্ষতির কারণ বইকি।
আমরা যারা শহরে থাকি অধিকাংশই ক্যাবল লাইনের আনলিমিটেড ইন্টারনেট রাউটার দিয়ে মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও কম্পিউটারে ব্যবহার করি। ইন্টারনেট না থাকলে পাঁচ বছরের শিশুরাও অধৈর্য্য হয়ে যায়। ইচ্ছামাফিক রাইম বা কার্টুন দেখতে পারছে না। এখন সবাই টিভি থেকেও সরে যাচ্ছে। মোবাইলে নজর বেশী। মোবাইলে সব হচ্ছে যেমন: ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ইউটিউব ও টিভি। আবার মোবাইল যে কোন স্থানে প্রাইভেসী মেইনটেইন করে ব্যবহার করা যায়।

আজকের যুগে মাদকের ব্যাপক আগ্রাসন থেকে ফেইসবুক রক্ষাকবচ বৈকি। ফেইসবুক পড়াশোনার কিছুটা ক্ষতি করলেও মাদকের আসক্তি আরও বেশী ক্ষতি করে। তাই আমি ২০১৭ সালে পয়তাল্লিশোর্ধ্ব বয়সে ফেইসবুক ব্যবহারকে অপরাধ হিসাবে দেখি না। মাদকের আগ্রাসন রোধে মানুষে মানুষে প্রেম ভালবাসা বাড়াতে ফেইসবুক অপূর্ব মাধ্যম।মানুষের মধ্যে ভালবাসা বাড়লে মানুষ বেচে থাকার আনন্দ খুজে পাবে। আত্মহত্যার প্রবনতা কমবে। অপকারী চিন্তা কমবে। মাদকমুক্ত হবে সমাজ। আর অনেক টাকা খরচ করে মেগাবাইট ইন্টারনেট না কিনে স্কুলের ও কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা যেন সস্তায় বা বিনামূল্যে গিগাবাইট পেতে পারে সকলের সেই চেষ্টাই করা উচিত। এতে ফেইসবুকের পাশাপাশি একসময় দক্ষ আইটি জনশক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটবে।