ছোটবেলায় পড়েছি আরবে যুদ্ধ বিগ্রহ হত। মেয়ে শিশুদের জ্যান্ত পুতে ফেলা হত। শুনেছি
বর্গীদের কথা। ১ম বিশ্বযুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্ব। অনেক অনেক যুদ্ধ। একেকটা যুদ্ধ আর শত
সহস্র মানুষের মৃত্যু। শিশু ও নারীর চরম দুর্গতি। মানুষ বিঞ্জানে এগিয়েছে। ঞ্জানে এগিয়েছে।
মানুষ নিজেদের গ্লোবাল সিটিজেন হিসাবে ভাবছে। মানুষে মানুষে সম্পর্ক বাড়ছে। এক দেশের
মানুষ অন্য দেশের মানুষকে জানছে।ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা সমস্ত খবরাখবর মূহুর্তের
মধ্যে সারা পৃথিবীকে জানাতে পারি। আমাদের সমস্ত অনাচার অত্যাচার আমরা জানাতে পারি।
মুহূর্তের মধ্যে তা প্রচারিত হয়ে যায়। তবু কেন মনে হয় মানুষ সভ্য হয়নি এখনও অসভ্য রয়ে
গেছে।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহ হতে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত
বাংলাদেশের প্রতিবেশী মায়ানমার হতে ভেসে আসা লাশ, আহত ও শরণার্থী আমাদের স্মরণ করিয়ে
দেয় পৃথিবীর মানুষ সভ্য হয়নি।
আমরা অসভ্য মানুষেরা মিলে মিশে থাকতে শিখিনি। মানুষের জীবনের প্রথম শিক্ষা শুরু
হয় তার পরিবার হতে। প্রতি শিশুর পিতামাতা সন্তানের প্রথম শিক্ষক। কোন সন্তানের পিতামাতা
সন্তানকে বিপথগামী করতে পারে না। তবও মানুষ কেন বিপথগামী হয়। কোন পিতামাতা চায় না তার
সন্তানরা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুক। মিলিশিয়া হউক বা জঙ্গি হউক। তারপরেও হচ্ছে।
কেন হচ্ছে এটা নিয়ে গবেষনা কেউ করে না। যত গবেষণা দমন পীড়নে।
আমরা আজও আমাদের মানুষিকতাকে উদার করতে পারিনি। বর্ণবাদ চলে যায়নি। ঘুপটি মেরে
লুকিয়ে আছে। জাতিগত বিদ্বেষ যায়নি। ধর্মীয় বিদ্বেষ যায়নি। কুৎসিত মানুষিকতার কিছু নেতা
তা জিউয়ে রেখেছে। দুর্বল ও কুৎসিত মানুষিকতার নেতৃত্বে মানুষ আজ অসহায়। মায়ানমার ৭৫
বছর ধরে ৮/১০টি শক্তিশালী মিলিশিয়া গ্রুপের সাথে যুদ্ধরত। একাধিকার তারা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে
নির্মূল অভিযান পরিচালনা করছে। এই দেশটির অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ। যারা অহিংসা ও জীব হত্যা
মহাপাপ এই মন্ত্রে বিশ্বাসী। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে তারাই বর্বর আচরণ করছে। তারা দোহাই
দিচ্ছে আরকান রোহিংগা স্যালভেজ আর্মি সরকারী বাহিনীকে আক্রমণ করেছে। তার কারণে অপরাধী
রোহিংগাদের না ধরতে পেরে নির্বিচারে অনেক নিরীহ নারী ও পুরুষ হত্যা করেছে। ৫০০ রোহিংগা
মিলিশিয়ার জন্য তারা ৫০০০ থেকে ৫০০০০ বাহিনী নিয়োগ করতে পারত। অন্তত যাচাই বাছাই করে
তারা নিরীহদের উপর অত্যাচার না করে রাষ্ট্র বিরোধী রোহিংগাদের গ্রেপ্তার করে আইনের
আওতায় আনতে পারত। সরকারী বাহিনী প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে সহস্রাধিক রোহিংগার বাড়িঘর পুড়িয়ে
দিল। অগণিত নারী ও শিশুকে হত্যা করল। এতে কিন্তু রাস্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড স্তিমিত না
হয়ে আরও বেড়ে যাবে। যে মানুষগুলি বেচে আছে তারা কোনদিন তাদের রাষ্ট্রকে তার রাষ্ট্র
ভাবতে শিখবে না। সে সর্বদা সরকার রাষ্ট্রকে তার প্রতিপক্ষ মনে করবে।যে সন্তান তার বাবাকে
হারিয়েছে সে কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখবে। যে নারী রাষ্ট্রীয় সৈন্য দ্বারা
ধর্ষিত হয়েছে সে রাষ্ট্রকে ভালবাসতে পারবে না। তার সন্তানকে রাষ্ট্র বিরোধী কাজে নির্ধিদ্বায়
অনুমতি দিবে।
আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ হয়ে চিন্তা করতে পারলাম অস্ত্র দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন
স্তিমিত করা যায় না। এ ধরনের আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন ডায়ালগ। সেই অবহেলিত অঞ্চলের আর্থিক
ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন। প্রয়োজন ব্যাপক কর্মসংস্থান। ধর্মীয় উদারতা। বৌদ্ধ ধর্ম
উদার নয় একথা মানতে কেউ চাইবে না। অথচ রোহিংগা মুসলিমদের প্রতি তাদের আচরণ অত্যন্ত
ন্যক্কারজনক।
একজন দেশনেত্রীর শান্তি পুরষ্কার পাওয়ার পর তার দেশের মানবতার বিপর্যয় অত্যন্ত
মর্ম পীড়াদায়ক। আফ্রিকায়, মধ্য প্রাচ্যের নানা দলের নানা ধরনের যুদ্ধ অব্যাহত। আজ আমরা
মুহূর্তের মধ্যে পরস্পরকে জানতে পারছি। বুঝতে পারছি। যোগাযোগ করতে পারছি। তবু কেন সংঘর্ষে
লিপ্ত। তুমি আমার একজন মেরেছ আমি তোমার দশজন মারব। তুমি আমার দশজন মেরেছ। আমি তোমার
একশ জন মারব। এই খেলা কোথায় শেষ হবে আমরা জানিনা। পৃথিবী থেকে এই ধরনের প্রতিহিংসা
কবে যাবে আমরা জানি না।
এক সময় মানুষ সমাজতন্ত্রের কথা বলত। আজ বলে না। কারণ আমরা সবাই ভাল থাকি তা চাই
না। আমরা প্রত্যেকে চাই আমাদের খেদমত করার
লোক থাকুক। আমরা সবাই নেতৃত্ব চাই। অথচ ভালবাসা দিয়ে ভালবাসার অর্জন আমরা চাই না। পৃথিবীর
সমস্ত মহামানবরা শান্তির কথা বলেছেন। হানাহানির বিপক্ষে ছিলেন। মানুষ মনে হয় জেনেটিক্যালী
হিংস্র। তাই অনেক শিক্ষা দীক্ষার পরও মানুষ প্রতিহিংসা পরায়ণ। মানুষ মানুষকে সহ্য করতে
পারবে না। এখন পর্যন্ত ৩য় বিশ্বযুদ্ধ হয়নি। অনেকের ধারনা প্রযুক্তি এত বেশী অগ্রগামী
যে মানব সভ্যতা মূহুর্তে ধ্বংস হতে পারে। আমার ধারনা ছিল মানুষের আন্ত যোগাযোগ বাড়ছে।
যে কোন খবর মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যায়। তবে কেন মানবতা লঙ্ঘনে ধিক্কার
উচ্চারিত হয়না। লাশের সারি আসলেও ধিক্কার হয় না। দু:খজনক। পৃথিবীতে কখনও মানুষ হানাহানি
মুক্ত থাকতে পারবে তা আমার বিশ্বাস হয় না। অতীতেও হানাহানি ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। গ্লোবাল
সিটিজেনের আইডিয়া ও সকল মানুষের জন্য বেসিক ইনকাম সবই বৃথা। পৃথিবীর মানুষের বিবেক
জাগ্রত করাই এখন সময়ের দাবী।