আমি আমার জীবনের ৩৫টি বছর ঢাকার বাইরে জীবন যাপন
করার পর ২০১৭ সালে মে মাসে চাকুরী জীবনে প্রথম বারের মত ঢাকায় পোস্টিং হয়ে আসলাম। ৩৫ বছর ধরেছি আমার
ক্যাডেট কলেজের জীবন সহ। ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারণে সেই ক্লাস সেভেন থেকেই ঢাকার
বাইরে। যদি আমার বাবা চাকুরী জীবনের শেষে ঢাকায় একটা বাসস্থান করতে সক্ষম
হয়েছিলেন। সেই বাসায় আমার আর বাবা মার
থাকা হয়নি। বাবা রিটায়ারের পর মাকে নিয়ে গ্রাম মুখী হলেন আমি আমি দেশপ্রেমিক সৈনিক
হিসাবে গ্রাম,উপজেলা আর মফস্বল
শহরে জীবন কাটিয়ে দিয়েছি।মন্দ কাটেনি। গত একমাস হল (জুন ২০১৭) সপরিবারে
তল্পিতল্পাসহ ঢাকায় এসেছি।মন ভাল নেই। ঢাকায় সবার মন ভাল হয়। আমার আর আমার
পরিবারের মন ভাল নেই। মনে হয় দীর্ঘদিন ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকাকে এক আজব শহর মনে হয়।
ছোট্ট শহর কুষ্টিয়া সাড়ে চার বছর ছোট একটি পরিছন্ন শহরে থেকে মনটা আজ বেজার। ফিরে
যাব। সম্ভব নয়। বড় ছেলের কলেজের ইংলিশ ভার্সনের ভাল সুবিধা নাই।তাই ঢাকায় বদলী
আশীর্বাদ স্বরূপ। এছাড়া চাকুরীর শেষে অনেকের মত আমাকেও হয়ত বা ইমোশন ফেলে দিয়ে
ঢাকার বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। ঢাকার বাস্তবতা হল অনেক লোকের অপরিকল্পিত বসবাস।
ছোট শহরে বড় শান্তি আর বড় শহরে ছোট শান্তি এটাই নিয়ম। ছোট শহরে ছোট ব্যস্ততা আর বড়
শহরে বড় ব্যস্ততা।
সে যাই হোক ঢাকায় আসার এক মাসের মধ্যেই আমার
পরিবারের সদস্যরা প্রথমে আক্রান্ত হল পেটের পীড়ার। আর এটা আক্রান্তের প্রাথমিক
কারণ মনে হয়েছে তারা ঢাকার বাইরে থাকার কারণে বেশীরভাগ সময়েই কীটনাশক মুক্ত শাক
সবজি ও ফল খেয়েছে। এমনকি পুকুরের মাছ রাসায়নিক খাবার ছাড়া প্রাকৃতিক খাবারে উৎপাদন করা হয়েছে। এই কারণে নামী দামি চেইন শপের শাক সবজি ও
ফল খেয়েও তারা অসুস্থ হয়ে পরে। এই অভিঞ্জতা হয়ত তাদের হবে না যারা ঘন ঘন ঢাকায়
পরিবার নিয়ে থাকেন বা ঘন ঘন আসা যাওয়া করেন। আমি বার ঘাটে ঘুরে ঘুরে খাওয়া মানুষ।
আমার আবার পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হতে হয়নি। আমার ধারনায় যা আসল আর তা হল আমি যতটুকু
রাসায়নিক ভাবে উৎপাদিত খাবারে অভ্যস্ত আমার পরিবার তেমন ভাবে
অভ্যস্ত হয়নি। তাই বড় শহরের পানি ও খাদ্য তাদের স্বস্তি দেয়নি। আমার স্ত্রী হঠাত
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছিল। কুষ্টিয়া শহরটাকে কেমন আপন শহর মনে হত। ঢাকাটা আপন মনে হয়
না। আমি তাকে বললাম থাকতে থাক আপন মনে হতে পারে।
ছোট্ট শহরের লোকগুলি সহজে চেনা যায়। দোকানদাররা
খাতির করে কথা বলে। সবাই সহযোগিতা করে। সন্মান করে। অনেক সময় পছন্দের জিনিষ না
পাওয়া গেলে তারা ঢাকা থেকে আনিয়ে দিত। এদের আন্তরিকতা অনেক। আমি বললাম ধীরে ধীরে
ঢাকায় পরিচিত হবে। আন্তরিক লোকজনও পাবে।সময় লাগবে। যারা ঢাকায় জন্মের পর থেকে আছে
সে আবার ঢাকার বাইরে থাকতে চাইবে না। সবই হয়ত অভ্যাস।
একবার আমার একজন বন্ধুর একটা কথা আজো মনে ধরে
আছে। হয়তবা কারো কোটেশন হতে পারে।সেটা হল বড় পরিসরে দাসত্ব করার চেয়ে ছোট পরিসরে
রাজত্ব করা উত্তম। আমি আজও এত এত মানুষের এই বড় শহরে কষ্টকর ও অপরিচ্ছন্ন
প্রাকৃতিক জীবনে কেন মানুষ থাকে তার কারণ মনে হয় অনেকটা বাধ্যগত। কারো জীবিকার
তাগিদে। কারো পড়াশোনার তাগিদে। কারো চিকিৎসার তাগিদে। আধুনিক
প্রযুক্তির উন্নয়নে পড়াশোনার বিস্তার ছোট শহর মুখী হতে পারে। চিকিৎসার সুযোগ ছোট শহরে আরো ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করতে পারে।
রোজগার ও জীবিকা আউট সোর্সিং ও যোগাযোগ কাঠামোর উন্নয়ন সাপেক্ষে হতে পারে।
হয়তবা আর বেশী দুরে নয় যখন মফস্বলের সুখী
মানুষগুলি তাদের শহরগুলো আরও শিক্ষা বান্ধব, চিকিৎসা বান্ধব ও
প্রযুক্তি বান্ধব করে তুলবে এবং আমার মত সহজ সরল মানুষগুলি অপরিচ্ছন্ন ও বিষাক্ত
বায়ুর বড় শহরগুলোতে বসবাসকে না বলতে পারব। বাংলাদেশে আবার এমন শহরও আছে যেমন
রাজশাহী শহর যেটা বায়ুর বিষাক্ততা কমিয়ে পৃথিবীর পরিবেশ বান্ধব এক নম্বর শহর
হয়েছে। আমাদের একটি শহর পারলেও নিশ্চয়ই ঢাকা আরো বসবাস যোগ্য করা যাবে। আর সেটা
তখনই সম্ভব হবে যখন ঢাকা মুখী মানুষ কমে আসবে। আমরা পরিচ্ছন্ন ঢাকার অপেক্ষায়
থাকলাম।