Pages

Thursday, July 30, 2015

বাসাবাড়ীর পর্দা ঝুলানোর সার্বজনীন পদ্ধতি

চাকুরীর প্রথম বেতন থেকে নিজের রুমের জন্য পর্দা বানাই। অফিসার মেসের আমার নির্ধারিত রুমের জন্য পর্দা লেগেছিল ১৩টি। পর্দা বানানোর পর টেইলার পর্দায় হুক লাগানো অনান্য কিছু কারিগরী কাজ করতে হয়। ২৪ বছর চাকুরী জীবনে (২০১৫ সাল পযন্ত) প্রায় ১৩ টি পোষ্টিং পাই। প্রতিটি পোষ্টিং এর পর বাসা সাজানোতে সর্বদাই একটা ঝামেলায় থাকতে হয়। আর তা হল। একেক বাসার পর্দার সিস্টেম একেক রকম। পুরাতন বাসা গুলোতো কাঠের গোলাকার লাঠি থাকে। যাতে কিনা বড় বড় প্লাষ্টিকের রিং ব্যবহার করতে হয়। আবার কোন কোন বাসায় এ্যালুমিনিয়ামের পাইপ থাকে। সেখানে আবার চিকন অথাত পুনে এক ইন্ঞি ব্যাসের রিং ব্যবহার করতে হয়। সবচেয়ে কমন সিস্টেম হল এ্যালুমিনিয়ামের রেইল সিস্টেম। সমস্যাটা হল এসব সিস্টেম একেক বাসায় একেক রকম। এতে প্রতিটি পোষ্টিং এর সময় প্রতিবারই বিভিন্ন হুক কিনতে হয়। একেক ধরনের হুক একেক বাসায় একেক রকম সিস্টেমে ব্যবহার করতে হয়। তদুপরি পুর্বে কেনা বিভিন্ন হুক সবসময় সংরক্ষন করা যায় না। ২০০৮ সালে ময়মনসিংহ সেনানিবাসে পোষ্টিং হলে বাসার লিভিংরুমে  নতুন পর্দা লাগানোর জন্য পর্দার দোকানে যাই। পর্দার দোকানে গিয়ে পর্দার একটা সিস্টেম আমার কাছে বেশ ভাল লাগে। পর্দায় হুকের বদলে তারা কাপড়ের লেস ব্যবহার করেছে। ভিতরে বকরম দিয়ে বেল্টের আকারের লেস গুলো পর্দা ঝুলানোর জন্য তৈরী করা হয়েছে। এপর্দাগুলোর লেসগুলোর ভিতর দিয়ে এ্যালুমিনিয়ামের হাফ ইঞ্চি পাইপ ঢুকিয়ে ঝুলানো হয়। এর নাম পর্দাওয়ালা দিয়েছে নিমা সিস্টেম। নিমা সিস্টেমটি ভাল কারন এতে কোন হুক নাই। তাই খোলা জোড়ায় কোন ঝামেলা নাই। পর্দা ধোয়ার সময় হুক খোলার ঝামেলার মধ্যে পড়তে হবে না। আমার কাছে নিমা সিস্টেমটি বেশ পছন্দ হল। মেয়েদের নিমার লেসদুটো কাধে যেভাবে থাকে একইভাবে ঝুলে থাকে বলে এর নাম নিমা সিস্টেম। এখন এই নিমা সিস্টেম কিন্তু এ্যালুমিনিয়ামের রেলের সাথে ব্যবহার করা যাবে না। এ্যালুমিনিয়ামের রেলের সাথে ব্যবহার করতে হলে এর সাথে ছোট একটু ইঞ্জিনিয়ারিং করতে হবে তা হলো নিমার লেসটাকে একপাশে কেটে দিয়ে তাতে ভেলকো লাগাতে হবে। এভাবে পর্দায় আর লেসে ভেলকো লাগালে নিমা সিস্টেম এ পর্দাগুলো তখন যেকোন স্থানে লাগানো যাবে। যে কেউ লাগাতে পারবে। দর্জি লাগবে না। কোন হুক ব্যবহার না করার কারনে পর্দার স্টিক/পাইপ/রেলের কাঠামোর জন্য হুক বদলের প্রয়োজন পড়ছে না। ধাতুর হুক না থাকার কারনে পর্দায় হুকের মরিচায় পর্দার কাপড় নষ্ট হয় না। ভেলকো দিয়ে আটকানোর কারনে যখন তখন ঝটপট পর্দা খোলা যায়। যে কেউ পর্দা খুলতে ও লাগাতে পারে। কোন স্পেশালিষ্টের প্রয়োজন পড়ে না।


বদলীর চাকুরী বা বাসা বদলে পর্দা লাগানো ও খোলায় কোন রকম মডিফিকেশন বা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন পড়বে না। বেশ সহজ ব্যবস্থা। বর্তমানে যে কোন পর্দার টেইলাররা নিমা সিস্টেমের মত লেসের একদিকে কেটে ভেলকো লাগিয়েই এটা তৈরী করতে পারবে। তৈরীটা বেশ সহজ। আমি আমার পুরাতন পর্দা একইভাবে মডিফাই করে নিয়েছিলাম। এর জন্য প্রতি দশটা পর্দায় সম্ভবত একটা করে পর্দা কেটে মডিফাই করার বাড়তি কাপড়ের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। কারন প্রতিটি পর্দা ৫/৬ টি নিমার মত লেস তৈরী করতে বেশ কাপড় প্রয়োজন। যদি পুরানো পর্দা কমাতে না চান সেক্ষেত্রে কাপড়ের রং মিলিয়ে কাপড় কিনে লেস বানালেই চলবে। আমি বেশ কয়েকদিন সময় নিয়ে আমার বাসার অনুমানিক ৪০ টি পর্দায় ভেলকো দিয়ে নিমা সিস্টেম করেছিলাম যাতে অন্য কোথাও পোস্টিং এ গেলে পর্দা নিয়ে আর চিন্তা করতে না হয়। এর পর আমি ছয় মাসের জন্য চাপাইনবাবগঞ্জ, পরে পুনরায় ময়মনসিংহ এবং বর্তমানে কুষ্টিয়ায় এরুপ তিনটি পোষ্টিং এ আমি নিশ্চিন্তে কোন রকম সমস্যা ছাড়াই পর্দা লাগানো ও খোলার কর্মযঞ্জটি করেছি। পরে আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানেই টেইলাররা ভেলকো দিয়ে আমার আইডিয়াটি সবার জন্য চালু করে দিয়েছে। কুষ্টিয়ার টেইলার কোথাও পর্দা বানালেই আমি দেখতে পাই আমার সেই নিমা সিস্টেমের মত করে লেসের সাথে ভেলকো লাগিয়ে অনান্য পর্দা বানিয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যাদের ঘন ঘন বাসা বদল করতে হয় তারা পর্দায় এ ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। এতে শান্তি পাবেন।



No comments:

Post a Comment