Pages

Tuesday, June 3, 2014

মুল্যবান সোলার বিদ্যুতের অমুল্য ব্যবহার

আমাদের চারিদিক সোলারের যে ধরনের সিস্টেম বিদ্যমান তা যেন ১২ ভোল্টের আর্বতে আর্বতিত। ব্যাটারি যা সংযুক্ত রয়েছে তা হল ১২ ভোল্ট। প্যানেল যা সংযুক্ত আছে তা হল ১২ ভোল্ট। অধিকাংশ সামগ্রী এসি ২২০ ভোল্ট থেকে এ্যাডাপটারের মাধ্যমে চললেও তা মূলত: চলে ডিসি ভোল্টে। যে কোন ডিভাইস ডিসি ব্যাটারি থেকে এসিতে কনভার্ট এবং পুনরায়  এসি এ্যাডাপটারের মাধ্যমে ডিসিতে চালানো হলে কনভারসনে লস হয়। একটি সাউন্ড সিস্টেম ২২০ ভোল্ট এসিতে চলে। ধরি এর ওয়াট ১০০ । এখন এই সাউন্ড সিস্টেম যদি ডিসি ১২ ভোল্ট থেকে চালাতে হয় তবে ডিসি ব্যাটারি সাথে ২২০ ভোল্ট এসি বানানোর ইনভার্টর লাগাতে হবে। এতে মনে করি ১০% হিসাবে ১০ ওয়াট বিদ্যুৎ নষ্ট হল। পুনরায় এসি ৯০ ভোল্ট থেকে সাউন্ড সিস্টেমের আভ্যন্তরীণ ট্রান্সফরমার বা এসএমপিএস(সুইচ মোড পাওয়ার সাপ্লাই) সার্কিটের মাধ্যমে চালানোর জন্য এসি ২২০ ভোল্ট থেকে ১২ ভোল্ট ডিসিতে কনভারসন করতে খরচ হবে ১০% অর্থাৎ ৯ ওয়াট। সর্বমোট কনভার্সনে লস হল ১০+০৯=১৯ ওয়াট। এখন সাউন্ড সিস্টেম  যদি ২৪ ঘণ্টা চলে তবে ১২ টাকা কিলোওয়াট হিসাবে দিন ও রাতের সোলার ও ব্যাটারি হতে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ এর জন্য প্রতি ঘণ্টায় গড় খরচ হবে ওয়াট প্রতি .০১২ টাকা। তাহলে ১৯ ওয়াটের এক বছরের খরচ=১৯ ১৯ওয়াটx.০১২ টাকা ওয়াট প্রতি মুল্য x২৪ ঘন্টা x৩০ দিন x১২ মাস =১৯৬৯.৯২ টাকা। তাহলে দেখা যাচ্ছে সাউন্ড সিস্টেম  সরাসরি এসিতে না চালিয়ে সোলারের ১২ ভোল্টের ব্যাটারি থেকে চালালে বছরে ১৯৭০ টাকা আনুমানিক লস থেকে আপনি বাচতে পারেন। মূলত যে ডিভাইস যে ধরনের বিদ্যুতে চলে সে  ধরনের বিদ্যুতে চালালে আপনি কনভার্সন লস থেকে বাচতে পারবেন। যে কোন  ডিসি থেকে এফিশিয়েন্ট ইনভার্টারে এসি করলে বা ডিসি করলে অত্যন্ত কার্যকরী সিস্টেমেও কমপক্ষে ১০% পাওয়ার লস হবে। এফিশিয়েন্ট ইনভার্টার না হলে এ লস ৩০% পর্যন্ত হতে পারে। সোলার সিস্টেমে দিনের বেলায় ব্যাটারি চার্জ করে। চার্জকৃত ব্যাটারি  থেকে কোন লাইট জ্বালালে আর তা যদি পাওয়ারের পরিবর্তনে ১০ ওয়াট লস হয় তাতে বৎসরে গিয়ে ১০ওয়াটে=১০  ওয়াট x.০১৮ টাকা ওয়াট প্রতি খরচx ২৪ ঘণ্টাx৩০ দিন x ১২ বছর =১৫৫৫.২  বা প্রতি ওয়াটে বাৎসরিক লস ১২৯.৬ টাকা হবে।
এখন যে কোন সোলার সিস্টেমে বিদ্যুৎ যত কম কনভারসন করা যায় ততই ভাল কারণ কনভারসনে ক্রমাগত যে পাওয়ার লস হবে তার মূল্য অবশ্যই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। এধরনের কনভারসন লস যত কম হবে সিস্টেম তত এফিশিয়েন্ট হবে।
এখন আমরা একটি প্রজেক্টের বিষয়ে তুলনায় যাই:
প্রজেক্টের মুল কম্পোনেন্টগুলো নিন্মরুপ:
(ক)২০০ ওয়াট সোলার প্যানেল
(খ) ১২০ এ এইচ ব্যাটারি
(গ)চার্জ কন্ট্রোলার
(ঘ) ২০০  ওয়াট ইনভার্টর।
এর থেকে আমরা নিন্মবর্নিত ডিভাইসগুলো চালাব।
(১) ১৪ ওয়াট ১২ ভোল্টের একটি টেবিল ফ্যান।
(২) ১০০ ওয়াট ২১ ইঞ্চি সিআরটি রঙ্গিন টিভি।
(৩) ২০ ওয়াটের দুইটি ৪ ফুট এলইডি টিউব-লাইট।
এখন আমরা কানেকশনগুলি নিন্মবনিত ভাবে দেই:
(ক) ১৪ ওয়াটের ফ্যান ব্যাটারির ১২ ভোল্ট থেকে সরাসরি চলবে সুতরাং কোন ওয়াটের লস নাই।
(খ) ২০০ ওয়াটের ইনভার্টের ১০% হিসাবে ২০ ওয়াট লস।
(গ) ২০ ওয়াটের এলইডি ড্রাইভারলেছ টিউব-লাইট ইনভার্টারের ভিতর থেকে বের করা ২২০ ভোল্ট ডিসি থেকে সরাসরি চলায় কোন পাওয়ার লস নাই।
(ঘ) ২১ ইঞ্চি টিভি ইনভার্টারের ১০০ ওয়াট আউটপুট থেকে এসি ২২০ ভোল্টে চলায় কোন পাওয়ার লস নাই।
তবে এই সিস্টেমে একটাই লস আর তা হল ইনভার্টারের ২০ ওয়াট লস।
এখন ড্রাইভারলেছ এলইডি ও সিআরটি রঙিন টিভি চালাতে হলে ইনভার্টর সংযোগের প্রয়োজন হবেই আর তাতে এই পাওয়ার লস ধরতেই হবে।
আলোচিত সিস্টেমে বিদ্যুৎ কমানোর একটা ব্যবস্থা আছে তা হল, সিআরটি টিভির পরিবর্তে এলইডি টিভি ব্যবহার করা। এলইডি টিভি সাধারণত: যত ইঞ্চি তত ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে থাকে। ২১ ইঞ্চি সিআরটি খরচ করল ১০০ ওয়াট। ২৫ ইঞ্চি এলইডি টিভি খরচ করবে ২৫ ওয়াট। আপনি এলইডি টিভি ব্যবহারে সরাসরি  ১০০-২৫ ওয়াট=৭৫ ওয়াট বিদ্যুৎ বাচাতে পারবেন। আর একটা সিআরটি টিভি আয়ু ১০ বছর ধরলে আপনার প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে টিভি চালালে ১০ বছরে আপনার এলইডি টিভিতে সাশ্রয় =৭৫ ওয়াট x.০১৮ টাকা ওয়াট প্রতি x১০ ঘণ্টা প্রতিদিনx৩০ দিন x১২ মাস x১০ বছর=৪৮,৬০০ টাকা। অথচ আপনি ১২,০০০টাকার সিআরটি টিভির বদলে ২৫,০০০ টাকা দিয়ে  এলইডি ২৫ ইঞ্চি টিভি কিনলে দশ বছরে ৪৮,৬০০-২৫,০০০=২৩,৬০০ টাকা সেভ করতে পারবেন।
এখন শুধুমাত্র এনার্জি এফিশিয়েন্ট এলইডি টিভি ব্যবহার করে একটি ডিসি টেবিল-ফ্যান, দুইটি ড্রাইভার লেস এলইডি ২০ ওয়াট ৪ ফুট টিউব-লাইট এবং একটি এলইডি ২৫ ইঞ্চি টিভি চালাতে আপনার প্রয়োজন হবে ৮০ এএইচ ব্যাটারি,১৩৫ ওয়াট সোলার প্যানেল ও ১০০ ওয়াট ইনভার্টর। দেখা যাচ্ছে সিআরটির স্থানে এলইডি টিভি যোগ করায় আমরা সিস্টেমটি ২৬,০০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬,০০০ টাকায় অর্থাৎ ১০,০০০ টাকা কমাতে পারছি। কারণ ব্যাটারি,প্যানেলে ও ইনভার্টারের খরচ কমে যাবে। যা দ্বারা সিআরটি টিভির বদলে সাশ্রয়-কৃত ১০,০০০ টাকা ও অল্প কিছু যোগ করে সিস্টেমে নতুন এলইডি টিভি যোগ করাটাই উত্তম
আমরা যে ডিভাইসই সোলার সিস্টেমে যোগ করি না কেন আমাদের প্রথমেই নীচের পদ্ধতি অবলম্বন করে হিসাব করতে হবে:
(১) লোডের এফিশেন্সি ও ব্যবহার ঠিক রেখে কিভাবে ওয়াট কমানো যায় এটা সবার আগে চিন্তা করতে হবে।
(২) যতটুকু সম্ভব কম পরিমাণ ডিভাইস চালাতে ডিসি/এসি পাওয়ার কনভারসন করতে হবে ।
(৩) সরাসরি ব্যাটারি থেকে বেশীরভাগ ডিভাইস চালাতে হবে।
(৪) এসি ২২০ ভোল্ট ব্যবহার না করে  ইনভার্টর সার্কিট থেকে হাই ভোল্ট ডিসি পাওয়ার বের বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট চালানোটাই ভাল হবে। ডিসিতে চালানোই ভাল পদ্ধতি কারণ এতে পাওয়ার লস এসিতে কনভার্ট করার লস থেকে কম হবে। বর্তমানে অধিকাংশ ডিভাইস এসএমপিএস এর কারণে ৮০-২৪০ ভোল্ট ডিসি/এসিতে চলবে। এছাড়া ডিসি থেকে ডিসি বুষ্টার সার্কিটের মাধ্যমেও ১২ ভোল্ট ডিসি থেকে ১১০-২২০ ভোল্ট ডিসি কনভারসন করে ব্যবহার করা যাবে। কেবলমাত্র কিছুসংখ্যক ইনডাকশন কয়েলের ডিভাইস ব্যতীত অন্যান্য সকল কিছুতেই  হা‌ই ভোল্ট ডিসি পাওয়ার ব্যবহার করা যাবে।
(৫) কোন সংযোগ বেশী দুরে নিতে হলে ২২০ ভোল্ট এসি/ডিসিতে কনভার্ট করে দুরে নেয়া যাবে।
(৬) সোলার প্যানেল ব্যাটারি ব্যাংক থেকে কাছাকাছি (২৫ ফুটের মধ্যে) সেট করতে না পারলে ২৪ ভোল্ট বা ৪৮ ভোল্টের সিস্টেম করে নিলেই চলবে। কারণ ১২ ভোল্ট সোলার পাওয়ারের প্যানেল থেকে ২৪ ভোল্ট সোলার পাওয়ারে প্রায় চারগুণ বেশী দূরে ব্যাটারি ব্যাংক সংযোগ দেয়া যায়। ৪৮ ভোল্ট সোলার পাওয়ারের প্যানেল  ২৪ ভোল্ট থেকে আরও প্রায় চারগুণ বেশী দূরে ব্যাটারি ব্যাংক সংযোগ দেয়া যাবে।
(৭) হাই ভোল্টের ডিসি বের করার জন্য কার্বন কোরের এসি ইনভার্টারের ভিতর থেকে ডিসি পাওয়ার বের করে নিলেই চলবে।  একটু অভিজ্ঞ মেকানিকরা তা পারবে । ২২০ ভোল্ট এসি/ডিসি এর মধ্যে পাওয়ার লসের পার্থক্য  বেশী নয়। তবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশী ওয়াটের ইনভার্টরে ওয়াটের অপচয় বেশী হবে।


(৮) ওয়াটের অপচয় কমানোর জন্য সিস্টেমকে ডিসিতে রেখে লোড অনুযায়ী একটি একটি করে একাধিক মডিউল অন/অফ করে নিয়ে একধরনের লোড ম্যানেজমেন্ট করা যেতে পারে। যা কিনা বাংলাদেশের সোলারিক কোম্পানির সিস্টেমে এ ধরনের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায় ( www.solar-ic.com)সোলারিক কোম্পানি ডিসি ২২০ ভোল্ট বিতরণের ব্যবস্থা চালু করেছে যার নাম তারা দিয়েছে “ন্যানো গ্রিড”।
(৮) সিস্টেমের লোড অনুযায়ী একাধিক ইনভার্টারের মডিউল অন/অফ  করে ওয়াটের অপচয় কমানো যায়। তার জন্য এসির পরিবর্তে ডিসি ব্যবহার করা ভাল। কারণ ডিসি সিস্টেমে সহজেই লোড অনুযায়ী সমান্তরাল ভাবে ক্যাপাসিটি বাড়ানো বা কমানো যাবে।
(৯) এক সংগে ১০টি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি ব্যবহার করে সিরিজ কানেকশন দিয়ে ১২০ ভোল্ট তৈরি করে  তা দিয়ে এসএমপিএস সার্কিট সম্বলিত ডিভাইস ও সিএফএল বাতি জ্বালানো যায়। এতে খরচ ও রক্ষণাবেক্ষণের চাপ বেশী হওয়ায় তেমন কার্যকর নয়। তার চেয়ে ১২,২৪ বা ৪৮ ভোল্টকে যে কোন পদ্ধতিতে ১২৫-২২০ ভোল্ট ডিসি করে নিলেই ভাল হয়। এতে সিস্টেম কম ব্যাটারি দিয়ে ম্যানেজেবল ব্যবস্থার মধ্যে থাকবে।
 (১০) সোলার প্যানেলে পাতা পড়া, ছায়া পড়া ও ধুলাবালিতে ঢেকে গেলে সোলার প্যানেলের আউটপুট ভোল্টেজের অনেক পরিবর্তন হয়। এ সমস্যা সমাধান করা যায় অপটিমাইজার ব্যবহার করে। বিস্তারিত:www.solaredge.com ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। সোলার প্যানেলের সাথে অপটিমাইজার সার্কিট থাকবে যা কিনা সোলারের বিদ্যুৎ পূর্ণ শক্তিতে কাজ করার জন্য সহায়তা করবে।

 (১১) সোলারের বিদ্যুৎকে প্রায়ই ব্যবহার উপযোগী এসিতে নিতে হয়। এখন মাইক্রো ইনভার্টার সার্কিটের সাহায্যে প্যানেলের মধ্য থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি এসিতে পাওয়া যাবে। এতে সরাসরি এসি সাপ্লাই করতে অনেক-বেশী সুবিধা হবে। সোলারের বিদ্যুৎ দিয়ে ক্ষুদ্র আকারের গ্রিড তৈরি করে তা দ্বারা বাড়ী বাড়ী সৌরবিদ্যুৎ বিতরণ সহজ হবে।


সোলার সিস্টেমের উপর এখন অনেক অনেক দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে। সোলার সিস্টেম ডিজাইন করার সময় সবসময় কম ওয়াট ব্যবহার যেন হয় সেভাবে ডিজাইন করা প্রয়োজন। অহেতুক ওয়াটের অপচয় না করে কম ওয়াটের এ্যাফিশিয়েন্ট সিস্টেম করাটা অত্যন্ত প্রয়োজন।

1 comment: