Pages

Thursday, December 10, 2015

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ব্রাশ-লেস ডিসি সিলিং ফ্যান

৮০ ওয়াটের এসি সিলিং ফ্যান আমরা সর্বদা বেশী ব্যবহার করছি। ৮০ ওয়াটের জায়গায় যদি আমরা ২০ ওয়াটের সিলিং ফ্যানের আইডিয়া দেই। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিচারে তা হবে অতুলনীয় ভাবনা । ৬০ ওয়াট বিদ্যুৎ বেচে যাচ্ছে। আর দিনে দশ ঘণ্টায় ৬০০ ওয়াট আর আবাসিক বিদ্যুতের বিল হিসাবে দিনে সাশ্রয় ৬x০.৫=৩ টাকা। মাসে সাশ্রয় ৩ x৩০=৯০ টাকা। ১২ মাসে ৭২০ টাকা। ফ্যানের ১০ বছর আয়ুতে সাশ্রয় পায় ১০x৭২০ = ৭২০০ টাকা। সাধারণ ফ্যানের দাম ২৪০০ টাকা আর ডিসি ফ্যানের দাম ৩৪০০ টাকা পার্থক্য ১০০০ টাকা। দশ বছর আয়ুষ্কালে বিদ্যুৎ সাশ্রয় সরাসরি ৭২০০ টাকা। আমরা ২০ ওয়াটের বিএলডিসি ফ্যান ব্যবহারে নিশ্চয়ই উৎসাহিত হব। একটাই সমস্যা আছে। তা হল বাতাস এসি ফ্যান থেকে কম। BLDC ফ্যানের এফিসিয়েন্সী একই শক্তির সাধারণ ব্রাশ ফ্যানের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ % বেশী হবে। একই হর্স পাওয়ারের ব্রাশ ফ্যান ও ব্রাশ লেস মটরের বিদ্যুৎ ব্যবহারও ১৫-২০% বেশী। তাই ব্রাশ না থাকার কারণে ব্রাশের ঘর্ষণ, তাপ ও ঘর্ষণ জনিত বাধা অতিক্রমের কারণে ব্রাশ-লেস মটরের কার্যক্ষমতা বেশী। আমরা স্বাভাবিক ভাবে বুঝতে পারি একটা মটর দুইপাশে স্প্রিং এর চাপে কার্বন ব্রাশ ঘষে মটর চলে আর ঘর্ষণ ছাড়া কেবলমাত্র চুম্বকীয় শক্তিতে ঘুরতে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে ঘর্ষনমুক্ত মটর কম শক্তি খরচ করে বেশী ঘূর্ণন শক্তি উৎপাদন করতে পারবে।
বাজারে এখন চায়নার তৈরি ডিসি সিলিং ফ্যান পাওয়া যায়। এ ফ্যানগুলো কিছুটা আস্তে ঘুরে। তবে তা তেমন একটা সমস্যা নয়। গা ঠাণ্ডা করার জন্য যতটুকু বাতাস প্রয়োজন তা পাওয়া যায়। তবে ১২ ভোল্টের ও ১২ ওয়াটের ডিসি টেবিল ফ্যানগুলো বেশ কার্যকরী। একজনের ব্যবহারের জন্য অতুলনীয়। এ ফ্যানগুলো ১২ ভোল্টের এসি  থেকে ডিসি এডাপটার দিয়ে চালাতে যায়। সাধারণ একটা এসি টেবিল ফ্যান সাধারণত ৫০/৬০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে আর সেখানে বিএলিডসি মটর ১২ ওয়াট ব্যবহারে অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়।
আমি আমার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য বিএলডিসি ফ্যান আইপিএস এর ১২ ভোল্ট সেকেন্ডারি ব্যাটারি থেকে সংযোগ নিয়ে চালিয়ে ছিলাম। ফলাফল সন্তোষজনক। আমাদের দেশের গ্রামের প্রান্তিক জনগণ যাদের ইনকাম যথেষ্ট নয়। যাদের মাসিক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা বিদ্যুৎ বিলই অনেক বেশী মনে হয়। যাদের বাসস্থানের চারিদিকে অনেক অনেক গাছগাছালি দ্বারা পূর্ণ ও বাসস্থানটি তুলনামুলক ভাবে শীতল তারা এ ধরনের ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ হালকা গরম এলাকায় যেখানে ঘূর্ণিঝড়ের মত বাতাস প্রয়োজন নেই সেখানে ডিসি সিলিং ফ্যান গুলো অনেক বেশী কার্যকরী। কারো সোলার সিস্টেম বা আইপিএস এ ১২ ভোল্টের ব্যাটারি মজুদ থাকলে তাতে ১২ ভোল্ট ডিসির বিএলডিসি ফ্যান ব্যবহার করা যাবে। অন্যথায় ১২ ভোল্টের ২০/২৫ ওয়াটের এ্যাডাপটার ব্যবহার করে এ ধরনের ফ্যান চালনা করা যায়। ফ্যানগুলি একবার টিকে গেলে সহজে নষ্ট হয় না। তবে একটা বড় সমস্যা হল এ ফ্যানগুলি নষ্ট হলে জটিল সার্কিটের কারণে রিপিয়ার সহজ নয়। তবে এখনও ব্যাপকভাবে ফ্যানগুলি চালু হয়নি। সীমিত আকারে সোলার সিস্টেমের সাথে ব্যবহার হচ্ছে। আরো কিছুদিন পর বিএলডিসি ফ্যান ব্যাপকভাবে ব্যবহার হলে এর দাম কমে আসবে। ব্যবহার বাড়লে এর সার্কিটের প্রাপ্যতা বেড়ে যাবে। তখন নষ্ট হলে সহজে রিপিয়ার হবে। রিপিয়ারের ক্ষেত্রে সাধারণত সার্কিট নষ্ট হলে তা বদলাতে হবে। বিএলডিসি মটরের কয়েল ফিক্সড থাকে ও কোন ব্রাশ থাকে না। ফলে ফ্যানের কয়েল সহজে নষ্ট হয় না। রেগুলেট করার জন্য ফ্যানের ভিতরে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিট নষ্ট হতে পারে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী আলোক ব্যবস্থায় ইনক্যান্ডসেন্ট লাইটের ব্যবহার কমেছে, তারপর এসেছে সিএফএল লাইট তার থেকেও বেশী আয়ু নিয়ে এসেছে এলইডি লাইট। টিভির সিআরটি মনিটর প্রতিস্থাপিত হয়ে এসেছে এলইডি মনিটর। এলইডি মনিটর অনেক অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এখন সময় এসেছে পাখা বা এসির বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পালা। এসিতে ইনভার্টর সিস্টেম এসিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে। এখন আমাদের ফ্যানের ঘূর্ণনের প্রক্রিয়ার বিদ্যুৎ সাশ্রয় ব্যবস্থাটাই কেবল বাকী। বিএলডিসি মটর দিয়ে এটা আপাতত চালু হয়েছে। ডিসি ডিভাইসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসি বিদ্যুতে এই প্রক্রিয়ার ব্যবহার কেবল সময়ের ব্যাপার। আমরা উৎসাহী হলে সিলিং ফ্যানের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রক্রিয়ায় ব্যবহার আমার মত আপনারাও শুরু করতে পারেন। এখন বিএলডিসি সিলিং ফ্যান আস্তে ঘুরলেও আর বেশীদিন বাকী নেই, যখন বিএলডিসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যানগুলো বাসা বাড়ীতে ঝড়ের মত ঘুরতে থাকবে।

No comments:

Post a Comment